হঠাৎ হাওয়া, পর্ব:৭+৮

#হঠাৎ_হাওয়া (৭)

রাত অনেক মায়া বাইরের বেঞ্চিতে বসে আছে। পাশে পুষ্প,মায়া পুষ্পের হাতের মধ্যে হাত নিয়ে বসে আছে, পুষ্পের খুব জ্বর। পুষ্প একা একাই এখানে বসে থাকতে চাচ্ছিলো মায়া নাছোড়বান্দা সবাইকে বিদেয় করতে পারলেও ওকে পারে নি তবে পুষ্প খুব বুঝছে ওর বন্ধুরাও আশেপাশেই আছে কেউ ঘুমুতে যায় নি পুষ্প আনমনে একটু হাসলো, মায়া এতক্ষণ পুষ্পের হাতটা ধরে ছিল, পুষ্পের দিকে তাকিয়ে ওর হাসিতে হেসে বলল,
—হাসছ কেন আপু?
পুষ্প মায়ার দিকে স্নেহের দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
—আমি খুব বিশ্রী একটা মেয়ে তাই না মায়া?
মায়া পুষ্পের থেকে চোখ সরিয়ে নিচের দিকে চেয়ে বলল,
—আমার থেকেও বেশি?
পুষ্প মায়ার চিবুকে হাত রেখে বলল,
—এত ভালো হয়ে কি হবে? একটু বিশ্রীই ভালো।
বলতেই দুজনে হেসে ফেললো। পুষ্প ছোট করে হেসে বলল,
—গান গাইতে পারো মায়া?
—নাহ, নাচতে পারি নাচবো?
বলেই মায়া এক লাফে উঠে দাড়িয়ে কোমড়ে ওড়না পেচিয়ে হাত পা নেড়ে লাফাতে লাগলো
পুষ্প হেসে ফেললো,হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খায় অবস্থা মায়া পুষ্পের দিকে একমনে তাকিয়ে থেকে বলল,
—দেখলে কেমন পারি?
—হ্যা দেখলাম খুব পারো
—এবার তুমি গান শোনাও
—আমি গান পারি তোমাকে কে বলল?
মায়া চোখেমুখে ভাব ফুটিয়ে বলল
—জানো না তো কার সাথে আছো,হেহ
—কে?সবজান্তা সমশের?
মায়া অবাক চোখে চেয়ে বলল,
—সমশের আবার কে?
—কেউ না।
পুষ্প মায়ার হাতটা শক্ত করে ধরে চোখ বন্ধ করে ফেললো, মায়া পেছনে তাকিয়ে দেখলো মিষ্টি এসে দাঁড়িয়ে পেছনে দিহানও আছে,কথা, আবির,ধ্রুব। শুধু একটু তফাতে নিরব দাড়ানো তার পাশেই সেই লোকটা যাকে মায়া দেখতে চায় না।ধ্রুব আঙুল ইশারা করে মায়াকে চুপ থাকতে বললো।মায়া চোখ সরিয়ে পুষ্পের দিকে চাইলো।
পুষ্প চোখ বন্ধ করে গান গাইলো,

সবাই তো সুখী হতে চায়
তবু কেউ সুখী হয়, কেউ হয়না।
জানিনা বলে যা লোকে সত্যি কিনা?
কপালে সবার নাকি সুখ সয় না।।
সবাই তো সুখী হতে চায়

আশায় আশায় তবু এই আমি থাকি,
যদি আসে কোনোদিন সেই সুখপাখি ।।
এই চেয়ে থাকা আর প্রাণে সয় না।।
সবাই তো সুখী হতে চায়

ভালোবেসে সুখী হতে বলো কে না চায়?
রাধা সুখী হয়েছিল সেই শ্যাম রায়। ।
আমিও রাধার মতো ভালোবেসে যাবো,
হয় কিছু পাবো নয় সবই হারাবো
এই চেয়ে থাকা আর প্রাণে সয় না।।

সবাই তো সুখী হতে চায়
তবু কেউ সুখী হয়, কেউ হয়না।
জানিনা বলে যা লোকে সত্যি কিনা?
কপালে সবার নাকি সুখ সয় না।।
সবাই তো সুখী হতে চায়……।

পুষ্পের চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে অনবরত ওর বন্ধুরা স্তব্ধ হয়ে চেয়ে আছে,পুষ্প যে এত ভালো গান করে ওদের জানা ছিলো না!হিমালয় এই প্রথম পুষ্পের কষ্টের গাঢ়ত্ব বুঝতে পারলো আবির আর ধ্রুবও মমতা নিয়ে মেয়েটিকে দেখছে ওরা জানতো পুষ্প বরাবরের জেদী, অহংকারী আর বাচাল একটা মেয়ে।নিরব একমনে চেয়ে আছে এই মুহুর্তে ওর মনে হচ্ছে পৃথিবী আর কোনো মানুষ এত গুরুত্বপূর্ণ না ওর সামনে থাকা মেয়েটি থাকলেই চলবে।নিরব ছোটো করে নিঃশ্বাস ফেলে পুষ্পের সামনে গিয়ে দাড়ালো,পুষ্পের সামনে দুহাটু গেড়ে বসলো। পুষ্প চোখ খুলে দেখলো ওর সামনে সেই প্রতিক্ষিত মানব,নিরব এবার মুখ খুললো এতক্ষণে ও নিরবতা ভাঙলো।পুষ্পের হাত দুহাতের মধ্যে নিয়ে বললো,
—তোমার খুব জ্বর পুষ্প।
পুষ্প মাটির দিকে তাকিয়ে রইলো, মায়া আস্তে সেখান থেকে উঠে দূরে গিয়ে দাড়ালো,দিহান মায়ার পাশে এসে দাঁড়িয়ে বললো
—তোমার সাথে আমার একটু কথা আছে
মায়া দিহানের দিকে না তাকিয়েই বলল
—ট্রাজেডি শেষ এখন ক্লাইম্যাক্স চলছে কথা পরে চুপচাপ দেখে যান।
দিহান হা হয়ে মায়ার দিকে তাকিয়ে রইলো, তারপর নিরব আর পুষ্পের দিকে তাকালো।হিমালয় আড়চোখে দিহান আর মায়াকে দেখছে মায়া এখনো একবারো হিমালয়ের দিকে তাকায়নি।
পুষ্প নিরবের দিকে না তাকিয়ে বললো
—আমার জ্বর সেটা আমি মনে হয় বুঝি।আমি অবুঝ নই
—আমি কখনোই জানতাম না তুমি এতটা অবুঝ।
পুষ্প নিরবের দিকে তাকালো,নিরব পুষ্পের দিকে তাকিয়ে বললো
—তুমি একটা পাগল মেয়ে পুষ্প, তুমি এমন একজন কে ভালোবাসছ যে সম্পূর্ণ তোমার বিপরীত।
—আমি দুঃখিত আমি ভুল করেছি, আমার কোনো অনুভূতি যদি তোমাকে কোনোভাবে হার্ট করে থাকে দেন আই এম রিয়েলি সরি প্লিজ গেট লস্ট।
পুষ্প নিরবের হাত থেকে হাত টা ছাড়িয়ে নিতে চেয়েও পারলো না।নিরব হালকা হেসে বলল,
—আমি হাত ধরেছি ছেড়ে দেব বলে না।
পুষ্প নিরবের দিকে তাকালো,মায়া খুশিতে বাকবাকুম করছে ওর চোখ ছলছল করছে হাত পা কাপছে অদ্ভুত ও এরকম কেন করছে! মায়ার চোখমুখ উজ্জ্বল দেখাচ্ছে।নিরব পুষ্পের চোখের দিকে তাকিয়ে বললো,
—সরাসরি বিয়ে করবে নাকি প্রেম করার ইচ্ছে আছে?
—তুমি কি আমাকে প্রপোজ করছ?
—সেরকম মনে হচ্ছে?
—এটা প্রপোজ?
—না, প্রপোজ করলে ডিনাই করে দেওয়ার চান্স থাকে এখানে তা নেই শুধু দুটো অপশন আছে।কিছুক্ষণ শান্ত চোখে চেয়ে হুট করে পুষ্প নিরবের চুল টেনে ওর বুকে কিল ঘুষি মেরে বলল,
—বেয়াদব, আই হেট ইউ আমাকে এত্ত কষ্ট দিলে তুমি…
আবির কথা দৌড়ে গিয়ে পুষ্প কে থামিয়ে কথা বলছে
—তুই তো খুব দস্যি মেয়ে, এই ভালোবাসা না পেয়ে মরে যাচ্ছিলি এখন ভালোবাসা পেয়ে ওকে মেরে ফেলছিস!
সবাই হেসে ফেললো….।ধ্রুব পুষ্পের কাছে এসে বললো
—এত স্মার্ট একটা ছেলে রেখে তোর চোখে নাকি এই গবেট টাই পড়ল! অদ্ভুত!
সবাই আরেক দফা হেসে নিলো।মিষ্টি সবার দিকে একবার চোখ বুলিয়ে নিলো অদ্ভুত ভালোলাগা ওকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরলো! দিহান মায়ার হাত ধরে টেনে একপাশে নিয়ে গেলো, হিমালয় ব্যাপারটা খেয়াল করলো,
—মায়া শোনো কথা টা খুব ইম্পর্টেন্ট
—আরে কি কথা?
—আমি বুঝলাম না তুমক এদের কি হও?
—এটা জরুরি কথা?
—হ্যা
—কেউ না।
—মানে?
—মানে আমি বিয়ে থেকে পালিয়েছিলাম এরা আমাকে সঙ্গে নিয়েছে
—কি!
—আপনার মানে কি পরে শুনবো এখন ওদিকে চলুন।
দিহান কিছুক্ষণ মুর্তির মত দাঁড়িয়ে থেকে আবার সবার সাথে যোগ দিলো।সবাই বেশ জমজমাট আড্ডা শুরু করেছে, পুষ্প অর্ধেক সুস্থ হয়ে গেছে। হুট করে মায়ার ফোনে একটা কল এলো।সবাই চুপ হয়ে গেলো,মায়া শুধু রাতের বেলায় ফোন অন রাখে বাকিটা সময় অফই রাখে।মায়ার খুব নার্ভাস লাগছে ও কলটা রিসিভ করে বললো
—হ্যালো
ওপাশ থেকে মায়ার বাবা বললেন
—মামনি?
মায়া ঠোট বাকিয়ে ফেললো সবাই মায়ার দিকেই চেয়ে আছে।
—বাবাই
—তুমি এমন কেন মায়া?
মায়া ফুপিয়ে কেদে উঠলো তারপর খুব ছোট্ট করে বলল
—আই এম সরি।
—তুমি কোথায়?
—সিলেটে
—তুমি কেমন আছো মা?
মায়ার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে এলো,মায়া হাউমাউ করে কাদতে কাদতে বললো
—আমি তোমার কাছে যাবো বাবাই এক্ষুনি যাবো তুমি আমাকে নিয়ে যাও বাবাই।
স্পবাই হতভম্ব হয়ে গেলো।হিমালয় শুধু উঠে গিয়ে মায়ার কান থেকে ফোনটা নিয়ে একটু দূরে গিয়ে দাড়ালো।

চলবে….
সামিয়া খান মায়া

#হঠাৎ_হাওয়া (৮)

হিমালয় কিছুক্ষণ ফোনে কথা বলে এসে সবাইকে উদ্দেশ্য করে বললো,
—যদি কাল নাইটে ফিরে যাই তোদের অসুবিধা হবে?
সবাই হিমালয়ের দিকে তাকালো,কারো মুখ দেখে মনে হচ্ছে না আপত্তি আছে।শুধু কথা উঠে দাড়ালো হিমালয়ের সামনে, হিমালয়ের চোখে চোখ রেখে বললো
—তুই বলেছিলি আগামী চারটা দিন পুরোটা সময় তুই আমাদের সাথে থাকবি।
—আমিই বলেছিলাম তবে চারটা দিন সিলেটেই থাকব এরকম কিছু কি বলেছিলাম?আমাদের সাথে যে মায়াও যে আসবে তা কি জানতাম?এখানে এসে আবিরের বিয়ে হয়ে যাবে তা কি ভেবেছিলাম?এনিওয়ে আমি যেহেতু বলেছিলাম আমি তোদের সাথেই থাকব বাট সেটা ঢাকায় ফিরে। তোদের কারো আপত্তি আছে?
কথা চুপ করে গেলো আর কিছুই বললো। ওদিকে মায়া কেদেই চলেছে, দিহান মায়াকে বারবার থামতে বলছে তাতে মায়ার কান্নার বেগ আরো বেড়ে যাচ্ছে, হিমালয় ভ্রু কুচকে মায়াকে এক ধমক দিয়ে বললো
—চুপ আর একটা বাজে সাউন্ড যেন না শুনি, কি আজকে কি ক্রন্দন দিবস নাকি? এই কয়দিন তো একবারো কাদতে শুনলাম না, সমস্যা কি? এখন কি বাবার ফোন পেয়ে আহ্লাদের ঠ্যালায় কাদতেছো নাকি?
মায়া বড় বড় চোখ করে হিমালয়ের দিকে তাকিয়ে ভ্যা করে কেদে ফেললো।হিমালয়ের বন্ধুরা সব মিটিমিটি হাসছে শুধু কঠিন চোখে তাকিয়ে আছে কথা।হিমালয় এবার এগিয়ে গিয়ে মায়ার কবজি ধরে টেনে সেখান থেকে মায়াকে আলাদা নিয়ে এলো।দিহান পিছু পিছু যেতে চাইলে ধ্রুব বাধা দিয়ে বললো,
—বাদ দাও হিমালয় সামলে নেবে।

হিমালয় মায়াকে কর্টেজের অন্যপাশটায় নিয়ে বলল,
—এক্ষুনি থামতে বলেছি কিন্তু, চুপ
মায়ার কোনো ভাবান্তর হলো না
—কি সমস্যা কাদো কেন?
মায়া কাদতে কাদতেই বললো
—আপনি বকেন কেন আমাকে?আপনি জানেন আমার বাবাই কখনোই আমাকে বকে নাই?আপনি সবার সামনে আমায় বকেন!আমার কি প্রেস্টিজ নাই?
হিমালয় হেসে ফেললো,মায়া হিমালয়ের দিকে বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে রইলো,এই লোকটা খুব কম হাসেন অথচ হাসলে কত সুন্দর লাগে তাকে! সে কি জানে!হিমালয় হাসতে হাসতেই বললো
—তোমার বাবা খুব স্মার্ট তাই না?
মায়ার চোখমুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠলো মুহুর্তেই, মায়া সোৎসাহে বললো
—হ্যা খুব স্মার্ট আর খুব ভালো, আপনি বাবাকে কি বললেন?
—তেমন কিছুই না বললাম পরশু দুপুরে আমরা সবাই তোমাদের বাসায় লাঞ্চ করব।
—এই কথা বললেন?!
—হ্যা কেন?
—বাবা জিজ্ঞেস করলো না আপনি কে!?
—করলো তো
—আপনি কি বলেছেন?
—সেটা আমাদের সিক্রেট তোমাকে কেন বলব?
—আমার বাবা সাথে আপনার কিসের সিক্রেট।
হিমালয় হাসলো,
—তাতো বলব না, আর এখন থেকে আর সবার সামনে বকব না।আড়ালে বকব ঠিক আছে?
সরু চোখে তাকিয়ে বললো
—মানে!?
—মানে কি সত্যিই বোঝো নি? বুঝিয়ে বলব?
মায়া কিছুক্ষণ স্ট্যাচু হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো,
হিমালয় মায়াকে পাশ কাটিয়ে যেতে যেতে বললো
—শুনেছি কর্টেজের পেছনের দিকটায় অশরীরী না কি যেন দেখা গেছে, তুমি সঙ্গ দিতে চাইলে থেকে যাও।
মায়া দৌড়ে হিমালয়ের আগে সেখান থেকে বেরিয়ে সবার কাছে গিয়ে দাড়ালো।হিমালয়ের মুখ হাসিখুশি মায়ারও।মিষ্টি হয়তো ওদের দেখে কিছু বুঝতে পারলো।আর পুষ্পও, পুষ্প বুঝে একটু হাসলো পরক্ষনেই কথার দিকে তাকিয়ে কি একটা চিন্তায় পড়ে গেলো।কথা হিমালয়ের পাশে গিয়ে দাড়াতে দাড়াতে বললো,
—তোকে খুব খুশি লাগছে মনে হয়।কি ব্যাপার?
—তুই তো আমাকে খুব ভালো বুঝিস তুই বল কি ব্যাপার?
কথা হিমালয়ের দিকে চেয়ে রইলো,কথা সত্যি বুঝতে পারছে না,
—আমি বুঝলাম না তুই বল
—কিছুদিন যাক সবাইকেই বলব।
দিহান মায়ার পাশে এসে দাড়াতে দাড়াতে বললো
—কি ব্যাপার কান্না থেমে গেলো?
—হ্যা।
— কি করে?
—চলতে চলতে তেল শেষ তাই।
—মানে!
মায়া দিহানের দিকে তাকিয়ে একগাল হেসে বললো
—এত মানে মানে করেন কেন?
—বুঝলে বুঝপাতা না বুঝলে….
—তেজপাতা?
দিহানের কথা শুনে দুজনেই হেসে ফেললো।হিমালয় ওদের দিকে চিকন চোখে তাকিয়ে রইলো।ধ্রুব আর আবির হয়তো বুঝতে পারলো।মিষ্টির হঠাৎ ভয় হলো যদি দিহান মায়ার প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ে! আবির আর মিষ্টি দুজনেই চিন্তিত ভঙ্গিতে চোখাচোখি হতেই চোখ নামিয়ে ফেললো।ধ্রুব দিহান কে ডেকে বললো,
—দিহান ভাই তুমি আমার পাশে এসে বসো, কি এত হাসির কথা বললে আমরাও শুনি।
হিমালয় ধ্রুবর দিকে তাকাতেই ধ্রুব ইশারায় আশ্বস্ত করলো।

ট্রেনের কামরা পুরো জোৎস্নায় মাখামাখি এত্ত গাঢ় জোৎস্না এর আগে মায়া কখনো দেখেনি! মায়া চোখমুখ উজ্জ্বল করে জোৎস্না দেখছে হিমালয় ওর সামনা সামনি বসা হিমালয়ের পাশেই কথা।মিষ্টি পাশ থেকে মায়াকে বলছে,
—মায়া?
—হ্যা বলো,
—ঢাকায় ফিরে তুমি আমার সাথে যোগাযোগ রাখবে তো?
মায়া মিষ্টির দিকে তাকিয়ে বললো,
—সেটা তখন বোঝা যাবে যখন তুমি আমাকে তোমার বৌভাতে ইনভাইট করবে।
মায়া আবিরের দিকে তাকিয়ে বললো
—কি আবির ভাই? আপনি আমাকে ইনভাইট করবেন নাকি পূর্ব অপছন্দতার জের ধরে বাদ রাখবেন।
আবির হিমালয়ের দিকে তাকিয়ে তারপর মায়ার দিকে চেয়ে বললো
—তোমার জন্যে বউ পেলাম আর তুমি বৌভাতে দাওয়াত পাবে না তাই হয় নাকি?
মায়া একটু ভাব নিয়ে বললো
—বাহ! কোথায় বিয়ে করে এতদিনে হানিমুন করে ঘরসংসার করার কথা ছিল আমার! আর আমিই বিয়ের ইনভিটিশনে কোথা থেকে সস্তায় গিফট কিনব সেই টেনশনে অসুস্থহ, হাইরে বদনসিব!
বলেই দাতে জিভ কাটলো মায়া, হিমালয় তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো মায়ার দিকে।তারপর শীতল কন্ঠে বললো
—অসুবিধা নেই আশেপাশে এত ডাক্তার তোমার চিকিৎসার খরচ তো বেচে যাবে।
ধ্রুব একটু গলা খাকারি দিয়ে বললো
—বোঝ না কেন মায়া? তোমার তো এই দুনিয়ার বেস্ট একজন হ্যান্ডসাম ছেলের সাথে পরিচিত হওয়া বাকি ছিলো।
দিহান কথা কেটে বললো
—সেটা কি তুমি?
ধ্রুব উৎসাহ হারিয়ে বললো
—একটু তো ভাব নিতে দে ভাই।
ওমনি সবাই হেসে ফেললো।পুষ্প হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খায় অবস্থা।মায়া পুষ্পকে বললো
— পুষ্প আপু তুমি গান গাও।
—আমি কেন গান গাইব?তার চেয়ে বরং তুই নাচ কর।তুই তো দারুণ নাচিস
ওমনি সবাই আবার হেসে ফেললো।মায়া মুখ গোমড়া করে বললো
—তোমার মন ভালো করার জন্যই তো ওমন করলাম!যার জন্য চুরি করলাম সেই পুলিশ নিয়ে এলো!হুহ ভালো মানুষের আজকাল এক্কেরে দাম নাই।
পুষ্প মিটিমিটি হেসে বললো
—হয়েছে হয়েছে আর ঢং করতে হবে না।
পুষ্প এতক্ষণ নিরবের পাশাপাশি বসেছিলো ঘুরে ওর সামনের সিটে বসে নিরবের চোখে চোখ রাখলো, নিরব একটু ভড়কে গেলো।পুষ্প নিরবের হাত দুটো হাতের মধ্যে নিয়ে একটু হাসলো।
মায়া মুখ ঘুরিয়ে বললো
—দেখো সবাই আমি বললাম গান করতে এই ম্যাডাম রোমান্স শুরু করে দিয়েছে।
হিমালয় মায়াকে বললো
নিরব লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে ফেললো।
—তুমি তো পুষ্পের চেয়েও বাচাল! এত কথা বলো কেন!
পুষ্প রাগী চোখে তাকিয়ে বললো
—আমি বাচাল হিমালয়!?
হিমালয় ওকে অগ্রাহ্য হ
করে বাইরে তাকালো,পুষ্প কটকট করতে করতে বললো,
—অভিশাপ দিলাম আমার চেয়ে বেশি বাচাল মেয়েটাই যেন তোর কপালে জোটে।
কথা অবাক হয়ে তাকালো,হিমালয় জানালার দিক থেকে মায়ার চোখে চোখ রেখে ঠোঁট বাকিয়ে হালকা হাসলো।পুষ্প নিরবের চোখের দিকে তাকিয়ে গান ধরলো….

এই মোম জোছনায় অঙ্গ ভিজিয়ে,
এসো না গল্প করি..

দেখো ওই ঝিলিমিলি চাঁদ,
সারারাত আকাশে সলমা-জরি
এই মোম জোছনায় অঙ্গ ভিজিয়ে,
এসো না গল্প করি।

জাফরানি ওই আলতা ঠোঁটে,
মিষ্টি হাসির গোলাপ ফোটে
মনে হয় বাতাসের ঐ দিলরুবাতে,
সুর মিলিয়ে আলাপ ধরি।
দেখো ওই ঝিলিমিলি চাঁদ,
সারারাত আকাশে সলমা-জরি
এই মন জোছনায় অঙ্গ ভিজিয়ে,
এসো না গল্প করি।

এই রূপসী রাত আর ঐ রূপালী চাঁদ
বলে জেগে থাকো
এ লগন আর কখনো ফিরে পাবে নাকো।
মখমলের ঐ সুজনি ঘাসে,
বসলে না হয় একটু পাশে
মনেহয় মহুয়ারই আতর মেখে,
তোমার কোলে ঘুমিয়ে পড়ি
দেখো ওই ঝিলিমিলি চাঁদ,
সারারাত আকাশে সলমা-জরি

এই মোম জোছনায় অঙ্গ ভিজিয়ে,
এসো না গল্প করি,
ও.. এসো না গল্প করি…।

সবাই মুগ্ধ হয়ে পুষ্পের গান শুনছিলো, আবির আড়চোখে মিষ্টির দিকে গানের ফাকে বারকয়েক নজর দিলেও মিষ্টি আবিরের থেকে চোখ সরিয়ে ফেলে নি।নিরব এখনো বিস্ময় নিয়ে পুষ্পের দিকে তাকিয়ে আছে, ধ্রুব পুষ্পের দিকে তাকিয়ে বললো
—তুই এত্ত ভালো গান করিস কোনোদিন বলিস নি তো!
—তোরা কোনোদিন জানতে চেয়েছিস?
তারপর মায়ার দিকে তাকিয়ে বলল
—এবার মায়া বল কেমন লাগলো?
মায়া খুব মিষ্টি একটা হাসি হেসে বললো
—তুমি যে ধরণের গান করেছো তাতে তো আমার প্রেম প্রেম পাচ্ছে।
সবাই মায়ার দিকে অবাক হয়ে তাকাতেই বললো
—আরে শান্ত থাকো, এরকম হয় আমাদের মনে কেউ নেই কোনো ছবি নেই তবুও বিশেষ কিছু মুহুর্তে মানুষ একটা অবয়ব তৈরি করে নেয় সে চায় তার নিজসঙ্গ জীবনে কেউ সঙ্গ দিক।
সবাই মায়ার দিকেই তাকিয়ে আছে মায়া ঠোঁট টিপে হেসে এক হাতে মুখ ঢেকে বললো
—প্লিজ এবার আমি লজ্জা পাচ্ছি কিন্তু!
হিমালয় বিড়বিড় বললো তবে সবাই শুনলো
—তুমি লজ্জাও পাও!
মায়ার তেড়ে কিছু বলতে আসার আগেই হিমালয় পেছনে হ্যালান দিয়ে চোখ বন্ধ করে ফেললো।

চলবে….
সামিয়া খান মায়া

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here