হবে কি আমার পর্ব -১৮

#হবে-কি-আমার(২)
#writer_Ruhi-mondal
#পর্ব_18

ব্যাস্ততম মধ্যাহ্ন বেলা, অলকা দেবী ব্যাস্ত হাতে রান্না ঘরে বিভিন্ন পদের রান্না সারতে ব্যাস্ত,আজ তার দুই জামাই প্রথম শ্বশুর বাড়িতে এসেছে যত্নের কোনো ত্রুটি রাখবেন না তিনি। তনুশ্রী’রা এসেছে প্রায় আধা ঘন্টা হলো,অলকা দেবীর সাথে দেখা করে তারা যে যার বরাদ্দ করা রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে জল মিষ্টি খাচ্ছে, তনুশ্রী আর অনু যে রুমে থাকত সেখানে মৃন্ময় আর তনুশ্রী আছে, তার পাশে সর্ব শেষ রুমটাতে অনুদের থাকতে দেওয়া হয়েছে ওখান থেকে বাগানের বাতাস ফুলের ঘ্রাণ বেশি আসে অনু বরাবরই এই রুমটা পছন্দের কিন্তু তাকে একাকে এখানে থাকতে দেননি অলকা দেবী কারন সে সুযোগ পেলেই জানালা টপকে বাহিরে পালাত। তনুশ্রী মায়ের সাথে সাহায্য জন্য গিয়েছিল কিন্তু তিনি তাকে একটু বিশ্রাম নিতে বলেছেন, তাছাড়া তিশা সকাল থেকেই ওনার সাথেই ছিল,অনু আসতে তার সাথে দেখা করে সবেমাত্র চলে গিয়েছে।
__
অরিন্দম একটু শুয়ে পড়েছে লাগেজ টেনে এনে বেশ ক্লান্ত সে। কে জানে অনু রাজ্যের জামাকাপড় এনে ভারী করেছে ব্যাগটাকে বেচারার হাত লাল হয়ে উঠেছে, অনু মুখ মলিন করে অরিন্দমের হাতে জেল লাগিয়ে আবার রান্নাঘরে দিকে গুটিগুটি পায়ে গিয়ে উঁকি দিল। আসার পর থেকে অলকা দেবী তার সাথে কথা বলেননি, সে মামির সাথে কথা বলতে গিয়েছিল কিন্তু তিনি ব্যস্ততা দেখিয়ে চলে গিয়েছে। অনু বুঝতে পারছে মামী তার উপর এখনো রেগে আছে কিন্তু তারই বা দোষ কোথায়? সে কি আদেও এমন কিছু ভেবেছিল,যা হয়েছে তা পরিস্থিতি স্বীকার সে। অনু রান্না ঘরের দরজার চৌকাঠ বেরিয়ে দাঁড়ালো, অলকা দেবী তখন বেসিনে হাত ধুচ্ছিল,অনু কান্নাভেজা কণ্ঠে বলল,

_’মামী তুমি আমার সাথে কথা বলবে না? এতদিন কথা না বলে কি করে আছো তুমি? তোমার একটু ও মায়া হয় না আমার ওপর?’

অলকা দেবী হাত ধুতে ধুতে থেমে গেলেন, অনুর কথায় বুক উপচে কান্না আসছে উনার শুধুমাত্র উনি জানেন উনি কিভাবে আছেন অনুর সাথে কথা না বলে। মেয়েটাকে তিনি চোখে হারাতেন তাকে চোখের সামনে না দেখে, কথা না বলে উনি গুমড়ে গুমড়ে আছেন, তনুশ্রীর কাছ থেকে কথার ছলে অনুর কথা জানতেন, কিন্তু তিনি ধরা দিতেন না। অনুরাগ কে ডেকে অনুকে ফোন করিয়ে ফোন লাউড স্পিকারে দিয়ে তার কন্ঠ শুনে দিন পার করেছেন, মেয়েটার ওপর তিনি আর রেগে নেই। নিজের ওপর রেগে আছেন তিনি, একটু সময় নিয়ে ভেবে ঠান্ডা মাথায় কাজ করে মেয়েটাকে বিয়ে না দিলেই পারতেন। উনার কেমন যেন অপরাধবোধ কাজ করছে নিজের মধ্যে কিন্তু তিনি কি করতেন অনুরাগের সাথে খারাপ কথা তিনি মেনে নিতে পারেননি, যেখানে তিনি দুই মেয়ের সাথে অনুরাগ কে ও নিজের ছেলের মত ভেবে এসেছেন আর ভাববেন নাই বা কেন? অনুরাগ সকল দিক থেকে সর্বদা বড়ো দাদার মত অনুর দায়িত্ব কর্তব্য পালন করে আসছে বিগত কয়েক বছর ধরে। অনু মাঝে-মধ্যেই পাগলামো করে বসতো স্কুলের মারামারি করত তখন অনুরাগ এক বছর সিনিয়র ক্লাসে ছিল তখনও সে অনুকে সামলাতো,যখন ক্লাস ইলেভেনের তিনজনে একসাথে পড়া শুরু করলো তখন সকল দিক থেকে অনুরাগ অনুকে সাপোর্ট করতো। একদিন ক্লাসরুমে অনু অসুস্থ হয়ে পড়েছিল তখন বড় দাদার মতো তাকে আঁকড়ে ধরে রিস্কা চেপে ডাক্তার দেখিয়ে বাড়িতে নিয়ে এসেছিল,অলকা দেবীর সাথে অনু সেবা করতে ব্যাস্ত হয়ে পড়েছিল নির্ঘুম রাত কাটিয়ে ছিল সে ও। মহেশ বাবু :চট কলে’ কাজ করেন উনাকে মিলে যেতেই হত আর তিনি একেবারেই সহজসরল মানুষ ছলচাতুরি দুনিয়ায় তিনি বারবার ঠোকে যায় লোকের কাছে। সেই জন্য অলকা দেবীকে শক্তভাবে সমস্ত কিছুর সামলাতে হয় আর তার সঙ্গী হয় এই অনুরাগ। তনুশ্রী বরাবরই বোন কে ভালোবাসে কিন্তু পড়াশোনার ক্ষেত্রে সে সব সময় সিরিয়াস তাই তাকে বাড়ির কোনো বিষয়ে অলকা দেবী জড়াতেন না। অনুরাগের সাথে অনুকে নিয়ে এমন বাজে কথা তিনি সেদিন মেনে নিতে পারেননি মস্তিষ্ক শূন্য হয়ে গিয়েছিল উনার। মাথা গরম করে তিনি অনুর বিয়ে দিয়ে দেন, কিন্তু এখন নিজের সিদ্ধান্তে ভুল মনে হচ্ছে প্রচুর।

অনু পিছনে দাঁড়িয়ে এবার হঠাৎ শব্দ করে কেঁদে ওঠে তার কান্না অলকা দেবীর ধ্যান ভাঙ্গে তিনি পিছনে ঘুরে দাঁড়াতেই অনু দৌড়ে গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে ওঠে, অলকা দেবীর চোখে ও জল, তিনি অনুর মাথায় হাত বুলিয়ে স্মিত হেসে বললেন,
__’কাঁদে না! আমি রাগ করে নেই! সময় পাইনি তাই কথা বলা হয়নি!’
__’একদিন ও সময় ছিল না ফোনে কথা বলার?’

অলকা দেবী শ্বাস ফেলে বললেন,
_’নালিশ করা তুই কখনো ভুলবি না বল! আচ্ছা ভুল হয়েছে আর এমন হবে না! তুই বলতো তুই সুখে আছিস তো?’

অনু অলকা দেবীকে ছেড়ে দাঁড়িয়ে হাতের মুঠো করে চোখের জল মুছতে থাকে অলকা দেবী তা গম্ভীর দৃষ্টিতে দেখে মেয়েটা এখন ও সেই ছোটদের মতো হাত মুঠো করে কান্না করে। অনু জোড়ালো কণ্ঠে বলল,
__’খুব সুখে আছি! উনি খুব ভালো!’

অলকা দেবী তৃপ্তি শ্বাস ফেলে মুচকি হেসে বললেন,
_’তোর শরীর অসুস্থ বোধ হয় আর?’
অনু ভ্রু কুঁচকে বলল,
_’কিসের অসুস্থতা হবে?’
_’কিছু না রুমে যা জামাই কে ডাক, খেতে দেবো!’

অনু মাথা নাড়িয়ে চলে গেল, অলকা দেবী তার যাওয়ার পানে তাকিয়ে চোখের জল মুছলেন, আজ মনটা হালকা লাগছে উনার!

___

অরিন্দম বেঘোরে ঘুমাচ্ছে, দুপুরে খাওয়ার পর সেই যা শুয়েছে এখনও ঘুমিয়ে চলেছে, ঘড়িতে এখন সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা,অনু কয়েকবার তাকে ডেকে কোনো রেসপন্স না পেয়ে হাল ছেড়ে দিয়েছে, তনুশ্রী মৃন্ময়দের বাড়িতে গিয়েছে,অনু একা একা বোর হচ্ছে,কি করবে ভেবে না পেয়ে খাট থেকে নিচে নেমে দাঁড়ালো অতঃপর সে মোবাইল হাতে নিয়ে অনলাইনে অনুরাগ কে টেক্স করে বলল ফ্রি ফায়ার খেলবে, অনুরাগের আর কি সে ও শুরু হয়ে গেল অতঃপর দু’জনে বন্দুক নিয়ে ব্যাস্ত হয়ে পড়লো যুদ্ধ করতে। অরিন্দমের ঘুম ভাঙে দুই যোদ্ধার বন্দুকের শব্দে বিরক্ত বোধ করে সে উঠে বসল, কারণ এটা তার অসহ্য লাগে অনু’কে বার বার বলেছে যে সে যেন এইসব গেম বন্ধ করে এতে ব্রেন পেশার পড়ে কিন্তু অনু শোনার কোন নাম নেয় না। অরিন্দম ওঠে ওয়াশরুমে চলে যায় কিছুক্ষন পর ফ্রেশ হয়ে রুমে এসে দেখে অনু তখন ও ফোনের দিকে তাকিয়ে আছে, অরিন্দম পিছন থেকে গিয়ে অনুকে জড়িয়ে ধরলো,অনু চমকালো বিমূর্ত মত কিছুক্ষণ নিজের কোমড়ের কাছে অরিন্দমের হাতের বাধন দেখলো, অরিন্দম একদিনে নিজে থেকে তার কাছে খুব কম এসেছে, কিন্তু আজ সকাল থেকেই অরিন্দম যেন তার পিছু ছাড়ছে না, ওদিকে গেমে অনুরাগ তাকে ডেকে চলেছে অনু দৃষ্টি সরিয়ে ফোনের ওপর ন্যস্ত করলো, অরিন্দম অনুর কাঁধে থুতনি রেখে বলল,
__’ তোমাকে কতবার বলেছি না এসব গেম প্লে করবে না। ব্রেনে প্রেশার পরে, কথা শোনো না কেন?’
অনু খেলতে ব্যাস্ত কোন দিকে পাত্তা দেওয়ার সময় নেই,সে বিরক্ত হয়ে বলল,
__’ উফ্ চুপ করুন তো এসব আপনি বুঝবেন না।’ সরুন বিরক্ত করবেন না,যান এখন!’
অরিন্দমের হঠাৎ করেই কেমন অদ্ভুত লাগলো কথা গুলো শুনে। সে অনুকে ছেড়ে সজোরে দরজা খুলে বাহিরে চলে গেল। কিন্তু অনু বুঝলো না সে একটু হলেও অরিন্দম কে অবহেলা করেছে,যখন বুঝল তখন প্রায় রাত এক’টার দিকে ঘড়ির কাঁটা পাড়ি জড়িয়েছে। অনু বন্ধ রুমে পায়চারি করে চলেছে , অরিন্দম সেই যা গিয়েছে আর ফেরেনি,অনু ফোন করে চলেছে কিন্তু ওপর পাশে রিসিভ হচ্ছে না। অনু এবার কেঁদেই দিল, অলকা দেবী নিজের রুমে তিনি অরিন্দমের কথা জিজ্ঞাসা করতে অনু মিথ্যা বলেছে সে রুমে কাজ করছে খাবার রুমেই খাবেন,তাই তিনি সব গুছিয়ে শুয়ে পড়েছেন, কিন্তু অনু আর থাকতে পারলো না হুহু করে কেঁদে সে দরজা খুলতে গেল কিন্তু তার আগেই কেউ দরজা খুলে রুমে প্রবেশ করল,অনু থমকে গেল কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়লো তার একান্ত ধার্য করা নিজের মানুষটির বুকে। অরিন্দম বিমূঢ় হয়ে রইল,অনু কাঁদতে কাঁদতে বলল,
__’ একটু না হয় তখন ভুল বলে ফেলেছিলাম, তাই বলে এত কষ্ট দিতে হবে? কখন থেকে ফোন করছি একবার ও কথা বললেন না কেন? আমার কি কষ্ট হয় না?’
__’ আমার হয় না?’
অনু তাকে ছেড়ে সোজা হয়ে দাঁড়ালো, অরিন্দম মলিন মুখে বলল,
__’ তুমি জানো না তোমার একটু ও অবহেলা আমার সহ্য হয় না, তোমার এক সেকেন্ড ও শুধু আমার হক আমি চাই,সেটার ভাগ আমি কাউকে দিতে চাই না। তুমি জানো না তোমার মাইন্ডে শুধু আমি নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত রাখতে চাই, সেখানে ওই সামান্য গেম অ্যানিমি ও সহ্য করতে পারি না। অন্য কিছুতে তুমি ব্যাস্ত থাকলে আমাকে সামান্য ভুললে ও আমার সহ্য হয় না। তোমার সবটা জুড়ে শুধু আমি থাকতে চাই।’

অনু কিংকর্তব্যবিমূঢ় সে ফ্যালফ্যাল নয়নে তাকিয়ে আছে সামনে দাঁড়ানো এই পাগলাটে প্রেমিকটির দিকে,সে জানে অনু শুধু তাকে ঘিরে বাঁচতে চায় তবুও কেমন বাচ্চাদের মত অহেতুক কারনে তার ওপর রাগ করছে। অনু দুহাতে অরিন্দমের দুগালে হাত রেখে বলল,
__’ আমি কতবার বলবো আমার সবটা জুড়ে শুধু আপনি আছেন!’
অরিন্দম অদ্ভুত নয়নে তাকিয়ে থাকলো,অনু পায়ের আঙ্গুলে ভর দিয়ে উঁচু হয়ে অরিন্দমের দুগালে চুমু দিয়ে আঁখি তে আঁখি নিবদ্ধ করে বলল,
__’ ভালোবাসি আপনাকে। যা এজন্মে ভোলার মতো না!’

অরিন্দমের হঠাৎ কিছু মনে হলো তার চোখ ছলছল করে উঠলো সে অনুকে দুহাতে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।

#চলবে

[ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন কেমন হয়েছে জানাবেন]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here