হবে কি আমার পর্ব -১৯

#হবে-কি-আমার(২)
#writer_Ruhi-mondal
#পর্ব-19

ঝোড়ো হাওয়া তালে ছাদের টবে রাখা গাছ গুলির পাতা এদিক ওদিক দুলে চলেছে, সেই হাওয়ার দরুন তিশার কপালের কাছে কুচো চুল গুলো বারবার তাকে এই মধ্যরাতে বিরক্ত করছে, তার থেকে বেশি বিরক্তিবোধ করছে ঘুম থেকে উঠে তাকে ছাঁদে আসতে হয়েছে বলে কিন্তু যার জন্য এসেছে সে চুপচাপ এক কোনায় দাঁড়িয়ে আছে বেশকিছুক্ষণ ধরে। ব্যাপারটা তিশার রাগ হতে হতে হঠাৎ মনে কোথাও একটু সুক্ষ্ম ব্যাথা অনুভব করলো যেন, সে যেটা ভাবছে সেটা সত্যি হলে তার রাগ করাটা নিতান্তই বোকামি হবে। তিশা দুপা এগিয়ে অনুরাগের সামনে গিয়ে দাড়ালো। তিশা ঘুমিয়ে ছিল অনুরাগ তাকে ফোন করে বাড়ির ছাদে আসতে বলেছে ঘুম ঘুম চোখে গুটিগুটি পায়ে রুম থেকে চুপিসারে ছাদে এসেছে তিশা ভাগ্যে ভালো মা ঘুমিয়ে আছে আর বাবা নাইট ডিউটিতে গিয়েছে। অনুরাগ মাঝেমধ্যে এমন করে থাকে আজ ও সেটাই করলো ছাদের পাইপ পেয়ে সে অলরেডি হাজির ছিল ছাদে। তিশা সামনে গিয়ে দাঁড়াতে অনুরাগ তাকে টেনে নিচে বসিয়ে তিশার কোলে মাথা রেখে গুটিসুটি হয়ে শুয়ে পড়ে। তিশা অবাক হলো না বরং চিন্তিত হয়ে পড়লো অনুরাগ কে এমন দেখে, ডান হাত বাড়িয়ে অনুরাগের ঝাংরা চুলে বিলি কেটে দিতে লাগলো, ক্ষীণ প্রহর কেটে যায় নিভৃতে খুব গোপনে.. নিরবতা কাটিয়ে তিশা অত্যন্ত আবেগ মিশ্রিত কন্ঠে বলল,
__’মা’র কথা মনে বলছে তা-ই না?’
অনুরাগ নড়েচড়ে উঠলো। দুহাতে তিশার কোমড় জড়িয়ে ধরলো, কিছুসময় নিয়ে জোড়ালো কণ্ঠে বলল,
__’ হৃদ আমার মা আমাকে রেখে কেন চলে গেল? আমার মা’র কথা খুব মনে পড়ছে!’
তিশার চোখ থেকে টুপটাপ করে ঝড়ে পড়তে লাগলো অশ্রু, অনুরাগ ও তার পেটের কাছে জামার অংশ ভিজিয়ে ফেলেছে চোখের জলে, কিছুক্ষণ পর অনুরাগ নিজেকে সামলে উঠে বসলো, অতঃপর তিশার দিকে তাকিয়ে দেখলো মেয়েটা তার থেকে বেশি কাঁদছে, অনুরাগ অশ্রুসিক্ত নয়নে মুচকি হাসল.. নালিশের সুরে বলল,
__’ আমি এলাম তোর কাছে ব্যাথা দূর করতে আর তুই নিজেই সমুদ্র সৈকত করে ফেলছিস। আমার পুলিশ শ্বশুরমশাই যদি জানতে পারেন আমার জন্য উনার মেয়ে কেঁদেছে তাহলে তো নির্ঘাত আমাকে লকাপে রাখার বন্দবস্ত করবে। প্লিজ কাঁদিস না!’

তিশার অনুরাগের এহেন কথায় কান্না সামান্য কমলো। মেয়েটা অনুরাগের একটু কষ্টের কথা শুনলেই কেঁদে ভাসিয়ে দেয়,আর অনুরাগ সেটা জানে তবুও নিজের মন হালকা করতে তার এই কাদুনে মেয়েটাকে একপলক দেখা চাই। অনুরাগ হাত বাড়িয়ে তিশার চোখের জল মুছে দিল,তিশা অশ্রুসিক্ত চোখে বলল,
__’তোর খুব কষ্ট হয় তাইনা মার জন্য?’

অনুরাগ ব্যাথাতুর হেসে তিশাকে বুকে জড়িয়ে বলল,
__’হয়। কিন্তু তোর কাছে থাকলে খুব একটা কষ্ট হয় না,তোর সিগ্ধ মুখেই আমি সুখ, শান্তি, ভালো থাকা, ভালোবাসা সব খুঁজে পাই। তাই তো তোকে এত জ্বালাই, মাঝরাতে নিজের কষ্ট ভুলতে,তোর কাছে ছুটে আসি। এখন যে ব্যাথাটা একটু আগে হচ্ছি তা এই মুহূর্তে থেকে আর হচ্ছে না, তাই প্লিজ তুই কেঁদে আমাকে আর কষ্ট দিস না, প্রেমিকার কান্না একজন প্রকৃত প্রেমিকের হৃদয়ে লাগে সে কথা বুঝিস না কেন পাগলি। ভালোবাসি তো তোকে!’

তিশা চুপ করল, অনুরাগের সামান্য কষ্ট সে সহ্য করতে পারে না। কিন্তু এখন হালকা লাগছে ছেলেটা তার প্রেমে বদ্ধ পাগল, তাকে ছাড়া ছেলেটা অগোছালো হয়ে পরে,সে থাকবে সারাজীবন এই মা হারা ছেলেটির কাছে, জীবনসঙ্গী হিসেবে থাকবে সে সুখে দুঃখে,হাতে হাত রেখে চলবে সে তার মনে ধ্রীর প্রতিক্ষা করলো সে।

অনুরাগ বুকের দিকে মাথা ঝুঁকিয়ে দেখল তিশা চুপ করে আছে বুকে লেপ্টে আছে, অনুরাগ ডান হাতে তিশা গাল স্পর্শ করে কপালে অধর ছোঁয়াল,তিশা ক্ষীণ লাজুক হাসল, অতঃপর অনুরাগ মিনমিনে গলায় বলল,
__’ রাত হয়েছে গিয়ে শুয়ে পড়, আমি আসি।’
তিশা সরলো না কিছুক্ষণ ওভাবেই দাঁড়িয়ে রইল।
_____

আকাশে আজ অর্ধ চন্দ্রিমা দৃশ্যমান, কয়েকটা তারাও সমাগম আছে,মাঝেমাঝে গুচ্ছ গুচ্ছ কালো মেঘ ভেসে যাচ্ছে চাঁদের গা ঘেঁষে,হালকা শীত শীত ভাব ছড়িয়ে আছে প্রকৃতিতে। গ্রামে এক ছোট মাঠের ধারের সরু রাস্তা দিয়ে ধীর গতিতে এগিয়ে চলছে অরিন্দম..তার শক্তপোক্ত হাতের আঙুলের মাঝে অনুর কমল আঙ্গুল আঁকড়ে ধরে রেখেছে সে, অনু ঘুমে ঢুলু ঢুলু,, সামান্য মাথা ব্যাথা ও হচ্ছে তার, তবুও সঙ্গী হয়ে সে পাশে থাকবে মধ্যে রাত হলেও। ঘড়িতে তখন হয়তো রাত এক’টার কাছাকাছি অরিন্দমের রুমের মধ্যে গুমোট অনুভব হচ্ছিলো সেইজন্য সে একটু বাহিরে হাঁটাচলা করবে বলে বেরিয়ে আসছিল কিন্তু অনু তাকে একা ছাড়েনি জেদ ধরল তার সাথেই আসবে অরিন্দম একবার ভাবলো শুয়ে পরবে আবার ভাবলো একটু ফ্রেশএয়ার চাই তার, তাই সে আর দিরুক্তি করলো না,অনুকে নিয়ে বেরিয়ে পড়লো মাঝরাতে। অনু হাঁটতে হাঁটতে অরিন্দম কে বলল,
__’ আচ্ছা আপনার কোনো গার্লফ্রেন্ড ছিল?’
অনুর হঠাৎ এহেন প্রশ্নে অরিন্দম সরু চোখে তাকিয়ে বলল,
__’কেন বলতো?’
__’আরে বলুন না!’
__’হুমম ছি….পুরো কথা শেষ হওয়া আগেই অনু তেতে উঠে বলল,
__’কি আপনার গার্লফ্রেন্ড ছিল!’
অরিন্দম বোকার মত তাকিয়ে বলল,
__’ আমি কখন বললাম ছিল
অনু এক হাত উঁচু তুলে তর্জনী আঙ্গুল দেখিয়ে বলল,
__’এই তো বললেন..’
__’আমাকে পুরোটা বলতে দিয়েছ?তার আগেই রিয়েক্ট,আরে বাবা আমার কোন গার্লফ্রেন্ড ছিল না। আমার জীবনে তুমিই প্রথম নারী আর তুমিই শেষ নারী!’

অনু জ্বিভ কামড়ে মাথা চুলকালো, অরিন্দম গভীর দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো এতক্ষণে। সে তার মুখপানে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে রইল, হালকা চাঁদের মনকাড়া আলোয় তার মায়াবতী কে অপরুপা সুন্দরী লাগছে, চিকচিক করছে তার ঘন কালো কেশ, ডাগর ডাগর আঁখিতে তার মুখপানে বোকাবোকা চাউনিতে মাদ্যকতা ছড়াছে তার প্রেয়সী,তাকিয়ে আছে তার নয়ন পানে,সেই চাউনিতে তীব্র ঝড় তান্ডব তুলছে তার প্রেমিক পুরুষের বুকের গহীন কোনে,অন্য জগতে হারিয়ে দিচ্ছে এই সাজানো-গোছানো হৃদয়টাকে। এলোমেলো হচ্ছে গুছিয়ে রাখা সংকল্প গুলো। ভেসে যাচ্ছে অতল সমুদ্রে, কিন্তু সে কুলকিনারা চায় না, না চায় তরী,সে ভাসতে চায় সেই সমুদ্রে প্রেয়সী কে নিয়ে। হঠাৎ অরিন্দমের কি হলো সে নিজেও জানে না ডান হাত বাড়িয়ে অনু’র ডান গালে হাত রাখে, ক্ষীণ প্রহর চেয়ে রয় সেই মায়াবী মুখপানে, আঁখিতে আঁখি মেলাতেই ঘায়েল হয়ে যায় সে, ঝুঁকে গিয়ে কপালে কপাল ছোঁয়াল, অতীব মোলায়েম কন্ঠে বলল,
__’ তুমি এত সুন্দরী কেন বউ?’

অনু বার কয়েক পলক ফেলল, বুকের বাপাশের যন্ত্রটা দ্রিমদ্রিম শব্দ যেন নিজ কানে শ্রবন হতে লাগলো তার, শরীর অবশ হয়ে যাচ্ছে ক্রমে, অরিন্দমের মুখে সে প্রশংসা আগে শুনেছে কি মনে বলছে না তার, আবার অরিন্দম তাকে আজ বারংবার অবাক করে দিচ্ছে, কথায় কাজে সে বারংবার লজ্জা বোধ করছে, এখনও অরিন্দমের কথায় অনু ক্ষীণ লজ্জা বোধ করলো, নতজানু হয়ে মৃদু হেসে বলল,
__’জানি না!’
অরিন্দম দুর্বোধ্য হাসলো,সে মেয়েটার কাছে নিজে থেকে আসলেই মেয়েটা কেমন জড়োসড়ো হয়ে যায়, কেমন লজ্জা কম্পমান হতে থাকে তার সর্বাঙ্গ,সে ওষ্ঠদ্বয় বারংবার কামড়ে ধরে,যা অরিন্দমকে নির্লজ্জ বানাতে উস্কানি বাড়ায়। অরিন্দম বাঁহাত অনুর হাত থেকে সরালো,অনু বন্ধন মুক্ত হাতের দিকে তাকালো। মৃদু মৃদু বৃষ্টি পড়তে লাগলো, হঠাৎ গাছের পাতা গুলো সশব্দে দুলতে শুরু করে,ঝড়ো হাওয়া শিউলি গাছের কয়েকটা ফুল ঝড়ে পড়তে লাগলো গায়ে মাথায়, বাতাসের তালে তার ওড়না এক প্রান্ত উড়তে থাকে। অরিন্দম বাঁহাতে অনুর কোমড় জড়িয়ে নিজের সাথে মেশালো,অনু চমকালো, দুহাত অরিন্দমের প্রশস্ত বুকে রাখলো, ভড়কানো স্বরে অরিন্দম কে কিছু বলতে নিল, কিন্তু সেটা হলো না, অরিন্দম তার আগেই তার ভেজা কোমল অধরে গভীর স্পর্শ করলো।

#চলবে

[

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here