হলুদ খাম, পর্ব:৫

#হলুদ_খাম
লেখিকাঃ #তানজীমা_ইসলাম_রিয়া

__________________[৫]__________________

ভোররাতে সেই যে ঘুম ভেঙে উঠে বসল তনু, তারপর আর ঘুম আসেনি তার দুচোখে। যদিও বেডে শুয়ে অনেকক্ষণ এপাশ ওপাশ করেছে সে। কিন্ত বেহায়া ঘুম আর এলোই না!

ফজরের আযান দিতেই ফ্রেশ হয়ে ওজু করে নামাজ পড়ে নিলো তনু। মাথায় ওড়না বাধা অবস্থায় সায়নের ব্যালকনিতে এসে দাড়ালো। আকাশ এখনও পরিষ্কার হয়ে ওঠেনি, চারিদিকে আবছা আলো আর ঠান্ডা হাওয়া বইছে।

সায়নের ব্যালকনি ভর্তি নানান রকমের অর্কিডে, সেগুলোর বেশিরভাগেরই নাম জানেনা তনু। সে তো দেশি অনেক ফুলেরও নাম জানেনা।

ব্যালকনির দেয়ালে হেলান দিয়ে তনু মেঝেতে বসল। প্রকৃতির নরম আলোয় তার মেহেন্দি রাঙা হাত সামনে নিয়ে দেখল, হাত জোড়ায় যেন রক্তিম আভা ফুটে উঠেছে! রক্তলাল রঙ দেখে তনুর চোখ জোড়া ঝলসে যাওয়ার উপক্রম!!

পুব আকাশে সূর্য উঁকি দিচ্ছে, তনু ব্যালকনি থেকে উঠে রুমে এসে দেখল, স্নেহার এখনও ঘুম ভাঙেনি। তনু ওড়নাটা মাথায় দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে এলো। উদ্দেশ্য সায়নের সাথে মেহেন্দি আর চিরকুটের ব্যাপারে কথা বলা। তাকে জানতেই হবে সায়নের মনে ঠিক কি চলছে। সায়নও কি তার প্রতি একই অনুভূতি অনুভব করে!!?

পা টিপে টিপে সিড়ির মুখে এসে নিচে উঁকি মেরে দেখল, ছেলে গুলো এলোমেলোভাবে হাত পা যে যার ওপরে ছড়িয়ে বেঘোরে ঘুমোচ্ছে। কিন্ত তাদের মধ্যে কোনটা সায়ন তা ঠিক বুঝতে পারছেনা তনু।

ধীর পায়ে সিড়ি বেয়ে নেমে শেষ ধাপে এসে দাড়ালো সে। শুয়ে থাকা ছেলে গুলোর মুখ একবার দেখে নিয়ে বিড়বিড়িয়ে বলল,

” নাহ, এদের মধ্যে সায়ন ভাইয়া নেই। তাহলে কোথায় সে!?

রান্নাঘর থেকে থালাবাসন ধোয়ার শব্দ পেয়ে তনুর সম্বিৎ ফিরল। নিশ্চয়ই কেউ উঠেছে! এখন বেরিয়ে যদি দেখে তনু নিচে নেমে ছেলেদের দেখছে, তাহলে মান সম্মান আর কিচ্ছু থাকবে না। তনু একমুহূর্ত দেরি না করে একরকম ছুটে গিয়ে সায়নের ঘরে ঢুকে পড়ল।

____________________________________
|
|
|
|
|
বেলা গড়িয়ে দুপুর নেমেছে, সায়নের রুমের ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে তনু তার ভেজা চুল গুলো তোয়ালে দিয়ে মুছছে। মাত্রই গোসল করে বেরিয়েছে সে। পরনে তার জলপাই আর হলুদ মিশ্রিত রঙের লেহেংগা। এটা সে স্নেহার হলুদে পরার জন্যই অর্ডার দিয়ে বানিয়েছে।

আজ দুপুরে স্নেহার গায়ে হলুদ, সকাল না হতেই দাওয়াতি মেহমানরা এসে হাজির হয়েছে। অথচ সায়নকে কোথাও দেখা যাচ্ছে না!

তোয়ালে নেড়ে দিয়ে ঘরে ঢুকল তনু, স্নেহাকে সাজাতে পার্লার থেকে মেয়েরা এসেছে। রাইসা আর রুশাও তাদের কাছ থেকে সেজে নিচ্ছে। রাইসা তনুর থেকে বয়সে বড়, রুশা আবার তনুর বয়সী। ভাইবোনদের মধ্যে স্নেহাই সবার বড় আর রোহান সবার ছোট।

রাইসার সাজ কমপ্লিট করে তনুকে সাজাতে লাগল। তনুও লক্ষী মেয়ের মতো সেজে নিচ্ছে। রুশা নীল আর হলুদ মিশ্রিত রঙের শাড়ি পড়েছে আজ। শাড়ির আচল এতোটা উঠিয়েছে যে তার পেটের প্রায় সবটাই দেখা যাচ্ছে। অবশ্য এতে কে কি বলল তাতে কোনো যায় আসে না তার।

স্নেহার সাজ কমপ্লিট হতেই তাকে নিয়ে নিচে নেমে এলো সবাই। বাড়ির ভেতর বাগানের অপজিটে হলুদের স্টেজ সাজানো হয়েছে। স্নেহাকে বসিয়ে তার সাথে কিছুক্ষণ ফটোশুট করে উঠে এলো তনু।

সায়নকে খুজে বেড়াচ্ছে সে, অথচ সায়নের কোনো হদিসই পাচ্ছেনা। কোথায় হারালো মহাশয়! হটাৎ রুশার কন্ঠঃ পেয়ে চমকে পেছনে ফিরল তনু। রুশা হাত উঁচিয়ে ডাকছে,

” সায়ন ভাইয়া! স্নেহা আপু তোমাকে ডাকছে।

রুশার দৃষ্টি অনুসরণ করে সামনে তাকাতেই সায়নকে দেখে থমকে গেলো তনু। কাচা হলুদ রঙের পাঞ্জাবি আর সাদা পায়জামা পরেছে সায়ন। তার ধবধবে ফর্সা ত্বকে দারুন মানিয়েছে রংটা! যেন এই হলুদ রঙ শুধু তার জন্যই তৈরি হয়েছে!!

তনুর দিকে একবার তাকিয়ে দ্রুত পায়ে স্টেজের দিকে এগিয়ে গেলো সায়ন। কিন্ত তনুর কোনো নড়নচড়ন নেই। রাইসা এসে হলুদের ডালাটা তনুর দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,

” তনু! এটা স্টেজে নিয়ে যা তো।

তনু সম্বিৎ ফিরে বলল,” হ্যাঁ যাচ্ছি আপু।

বলেই দ্রুত পায়ে হলুদের ডালাটা নিয়ে স্নেহার সামনে রাখল সে। সায়নের সাথে চোখাচোখি হতেই তনু মিষ্টি হেসে দৃষ্টি নামিয়ে নিল। কিন্ত সায়নের মধ্যে কোনো ভাবান্তর ঘটল না, সে দিব্যি সেলফি তুলতে ব্যস্ত।

ওদিকে রাইসার ফোন নিয়ে রুশাও বিভিন্ন পোজে ছবি তুলছে। তনুর একটু মন খারাপ লাগছে, সে এখনও ছোট বলে বাবা ফোন কিনে দেয়নি। আচ্ছা, মায়ের ফোনটা নিয়ে এলেই তো হয়।

যেই ভাবা সেই কাজ, তনু ফোন আনতে যেই বের হবে ঠিক তখনই একটা সুদর্শন ছেলের সাথে ধাক্কা লেগে যাওয়ার মতো অবস্থা হল। যদিও তনু ধাক্কা খাওয়ার আগেই নিজেকে সামলে নিয়েছে। ছেলেটা স্মিত হেসে বলল,

“স্যরি, মিস আপনি ঠিক আছেন!?

” ইটস ওকে ভাইয়া, আমি ঠিক আছি।

ছেলেটা তনুকে ভালভাবে দেখে বলল, ” আরে! তুমি তনু না!?

” জ্বি ভাইয়া। কিন্ত আপনি আমাকে কিভাবে চেনেন?

” তোমাকে আবার চিনবো না! বাই দ্যা ওয়ে আমি জুবায়ের, সায়নের ফ্রেন্ড!!

তনু এবার বুঝলো জুবায়ের কিভাবে তাকে চেনে, স্মিত হেসে বলল, ” ও আচ্ছা, আমি নিজের পরিচয় আর কি দিবো। জানেন নিশ্চয়ই আমি সায়ন ভাইয়ার কাজিন।

জুবায়ের হেসে বলল, ” শুধুই কি কাজিন হও!

তনু ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করল, ” মানে! ঠিক বুঝলাম না।

জুবায়ের আর কিছু বলার আগেই সায়ন এসে তার পিঠ চাপড়ে দিয়ে বলল,

” তোর এতক্ষণে আসার সময় হল!? ক’টা বাজে খেয়াল আছে!?

” আরে ঠিক সময়ই তো এসে উঠেছি, আসার সাথেসাথেই তনুর সাথেও দেখা হয়ে গেলো।

সায়ন তনুর দিকে তাকিয়ে বলল, ” তা তোদের দেখাদেখি শেষ হলে চল, আপুকে হলুদ মাখাতে হবে তো।

তনু বলে উঠল, ” আপনারা যান, আমি আসছি।

তনু যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই সায়ন তার হাতের কবজি ধরে বলল, ” তুই আবার কোথায় যাচ্ছিস রে!?

” আম্মুর ফোন আনতে।

সায়ন বুঝল তনু সেলফি তুলবে তাই ফোন আনতে যাচ্ছে, নিজের ফোনটা তনুর দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল, ” কোথাও যেতে হবে না, আমার ফোন নে।

সায়নের কথা শুনে শুধু তনু না, জুবায়ের আর রুশাও বেশ অবাক হয়ে গেছে। সায়ন যে কি না নিজের ফোন কাউকে টাচ করতেও দেয় না, সে তার ফোন তনুকে দিচ্ছে!!! তনু অবাক হলেও খুশিতে গদগদ হয়ে বলল,

” থ্যাংকস ভাইয়া।
____________________________________
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
একে একে সবাই স্নেহাকে হলুদ মাখিয়ে যাচ্ছে, সাথে চলছে ফটোশুট। জুবায়ের তার সাথে নিয়ে আসা ডিএসএলআর ক্যামেরা দিয়েও ছবি তুলছে।

সায়নের ফোন পেয়ে তনুকে আর পায় কে, সে ছবি তুলতে তুলতে ভাবলো ফোনটা একটু চেক করবে। তনু প্রথমেই কল লিস্ট চেক করল, কিন্ত সেখানে বহুদূর পর্যন্ত শুধু ডেকোরেশন, ফুলের দোকান, আব্বু, বাবুর্চি, কমিউনিটি সেন্টার, আম্মু, ইকবাল ভাই, আপু এসব নামের ভিড়!

কল লিস্ট থেকে বেরিয়ে তনু ফেসবুকে গিয়ে ঢুকল, সায়নের ফ্রেন্ডলিস্ট ভর্তি হাজার হাজার ছেলেমেয়ে দিয়ে। তাদের মধ্যে সবাই সায়নের ফ্যামিলি মেম্বার, ফ্রেন্ডস, ছোট ভাই আর বড়ভাই।

কিন্ত মেয়ে ফ্রেন্ডসদের দেখেই মন খারাপ হয়ে গেছে তনুর। মেয়েগুলো কত্ত সুন্দর দেখতে! এদের মধ্যেই কেউ হয়তো সায়নের গার্লফ্রেন্ড!!

তনু একবার ভাবলো মেসেঞ্জারে ঢুকবে কি না, কিন্ত আরেকজনের চ্যাটলিস্ট দেখা তো ঠিক না!! পরক্ষণেই ভাবলো, আরেকজন আবার কে!? আমি তো সায়ন ভাইয়ার আপনজন!! তাহলে আমি দেখতেই পারি!!!

সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে মেসেঞ্জারে ট্যাপ করল সে, ট্যাপ করেই তনু চোখমুখ খিচে ধরল। না জানি কত মেয়ের টেক্সট ভেসে উঠবে চোখের সামনে! অনেকগুলো না হলেও যদি সায়নের গার্লফ্রেন্ডের টেক্সট দেখতে পায় তখন!!? তখন কি করে সহ্য করবে সে!!!?

কি আর করবে, তখন কুরচি ফুলের টব দিয়ে সায়নের মাথা ফাটিয়ে দেবে তনু। তারপর সেই হলুদ খাম গুলো ছিড়েখুঁড়ে সায়নের গালে পুরে দেবে!!!

আস্তে আস্তে চোখ মেলে তাকাতেই আরেক দফা মন খারাপ হয়ে গেছে তার। চ্যাটলিস্টে ছেলেমেয়ে সবারই টেক্সট উঠে আছে। কাপা কাপা হাতে ওপরে উঠে থাকা একটা মেয়ের টেক্সট এ ট্যাপ করল তনু।

মেয়েটার সাথে ফ্রেন্ডলি কথাবার্তা ছাড়া অন্য ধরনের কোনো কথাবার্তা নেই। একে একে সবগুলো মেয়ের চ্যাট চেক করেও সন্দেহজনক কিছুই না পেয়ে তনুর এবার অনুশোচনা হতে লাগল। কেনো যে সে এসব দেখতে গেলো!

পরক্ষণেই মনে হল সে তো এখনও গ্যালারিই চেক করেনি, কে জানে তাতে হয়তো সায়ন ভাইয়ার গার্লফ্রেন্ডের ছবি আছে! সাথেসাথেই গ্যালারিতে ট্যাপ করল তনু, গ্যালারি ওপেন করতেই তার চোখ জোড়া ছানাবড়া হয়ে গেলো!!

বেশিরভাগ ছবিতেই শুধু তনুকে দেখা যাচ্ছে, ছোটবেলায় তোলা ছবি থেকে শুরু করে হাজার হাজার ছবি। তনুর দুষ্টুমি ভরা চাহনি, হাস্যজ্বল চেহারা, শাড়ি পরে মন খারাপ করে বসে থাকা!

তনুর এরকম হাজারো ছবি রয়েছে সায়নের গ্যালারিতে। তবে বেশিরভাগই তনুর অগোচরে তোলা, যেসব ছবি তনু আগে কখনো দেখেনি!!

ফোল্ডারের দিকে চোখ পড়তেই তনুর প্রশস্ত হাসিটা আরও প্রশস্ত হয়ে উঠল। ফোল্ডারের নাম লেখা “কুরচিফুল”!

তনু মুচকি হেসে ফোনস্ক্রিন অফ করে সামনে তাকালো, তাকিয়ে দেখলো সায়ন বেশ হেসে হেসেই মেহমানদের আপ্যায়ন করতে ব্যস্ত।

তনু নিজের লজ্জা রাঙা মুখটা কোথায় লুকাবে বুঝতে পারছেনা। আচ্ছা এখন যদি সায়ন ভাইয়া তার সামনে এসে দাড়ায় তখন কি করবে সে!? তনু নির্ঘাত লজ্জায় মরেই যাবে!!!

রুশার ডাক পেয়ে ফিরে তাকালো সায়ন, রুশা ঢং করে বলল,” ভাইয়া, তুমি সবার সাথে পিক তুলছো আমার সাথে তো তুললা না। আসো তোমার সাথে পিক তুলবো।

সায়ন স্বাভাবিকভাবেই রুশার সাথে পিক তুলতে লাগল। রুশা হুট করে এক কাজ করে বসল। সায়নের হাত জড়িয়ে ধরে একেবারে গা ঘেঁষে দাড়ালো সে। সায়নের একটু অস্বস্তি লাগছে, কিন্ত কিছু বলতেও পারছে না। রুশা ফোনে কয়েকটা ছবি তুলে জুবায়েরকে ডাক দিল,

” জুবায়ের ভাইয়া! আমাদের দুজনের একসাথে সুন্দর করে ছবি তুলে দেন তো।

রুশার কথা শুনে চমকে উঠল সায়ন, জুবায়ের অবাক হলেও হেসে বলল, ” স্যরি আপু, আমার ক্যামেরায় চার্জ শেষ!

রুশার মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো, ফটোগ্রাফার ছেলে দুটোকে ডাকলো কিন্ত গানবাজনার শব্দে বোধহয় তারা শুনতে পাচ্ছেনা। তারা স্নেহার ফটোশুট করতে ব্যস্ত। সায়ন আলতোভাবে নিজের হাতটা রুশার হাত থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলল,

” আচ্ছা রুশা আমি যাই, আমার অনেক কাজ আছে।

রুশা সাথেসাথে সায়নের হাত জড়িয়ে ধরে বলল,” না না, ওয়েট আমি অন্য কাউকে ডাকছি।

সায়নের মেজাজ বিগড়ে যাওয়ার উপক্রম হচ্ছে, রুশা এদিক ওদিক তাকিয়ে তনুকে ডেকে বলল,

” এই তনু! এদিকে আয় তো!! আমাদের দুজনের ফুল ছবি তুলে দে!!!

রুশা আর সায়নকে দেখে বেশ অবাক হল তনু, দুজন এভাবে গা ঘেঁষে ছবি তুলবে নাকি!? আবারও রুশার কর্কশ কন্ঠঃ কানে আসতেই তনু উঠে সেদিকে এগিয়ে গেলো।

তনু মলিন মুখ করে তাকিয়ে আছে সায়ন আর রুশার হাতের দিকে। তনুর মলিন মুখখানা দেখে সায়ন আর নিজেকে সামলাতে পারলো না। রুশার হাত থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে বলল,

” সেলফি তো তুলেছিস! আবার ফুল ছবি দিয়ে কি করবি!?

বলেই গটগট করে সেখান থেকে চলে গেলো সায়ন, তনু অবাক হলেও মনেমনে খুশি হল। এদিকে রুশার ভিষণ রাগ হচ্ছে, সায়ন তার সাথে ছবি না তুলেই চলে গেলো!! বিড়বিড়িয়ে বলল,

” উফফ! সায়ন তুমি এত্তো রগচটা!! তোমাকে আমি কিভাবে সামলাবো কে জানে!!!

_____________________________________
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নেমেছে, স্নেহার হলুদের প্রোগ্রাম শেষ। অনুষ্ঠানে আসা মেহমানরা চলে গেছে, বাড়ির মানুষজনেরাও ভিষণ ক্লান্ত। তনু সায়নের রুমে বসে গোসলে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে।

স্নেহা গোসল করতে ঢুকেছে সেই কখন, এখনও বের হয়নি। রুশা পাশে বসে ফোনে তোলা ছবি গুলো দেখছে। ঘুরেফিরে সায়নের সাথে তোলা সেলফি গুলো দেখছে সে।

তনুর কেনো জানি রুশার হাবভাব ভালো লাগছে না, আসা থেকেই সায়নের সাথে চিপকে থাকে মেয়েটা। সায়নের স্পষ্ট বিরক্তিও তাকে নড়াতে পারেনা, যাকে এককথায় বলে ছ্যাচড়া!

রুশাকে ছ্যাচড়া নাম দিয়ে তনু মনেমনে একটা পৈশাচিক হাসি দিল। কিন্ত পরক্ষণেই মন খারাপ হয়ে গেলো তার। সে তো সায়নের ফোন থেকে ছবি তুলেছে, অতএব তার কাছে এখন ছবি গুলো নেই যে একটু দেখবে। এর মাঝেই রুশা বলে উঠল,

” ইশ! সায়ন কতো জোশ দেখতে তাই না!! লম্বা চওড়া, ফর্সা!! দারুন হ্যান্ডসাম!!!

সাথেসাথেই তনুর গা পিত্তি জ্বলে উঠলো, রুশাকে মনেমনে অশ্রাব্য গালি দিল সে। কিন্ত মুখে বলল,

” আচ্ছা তুই সায়ন ভাইয়াকে সায়ন বলিস কেন!? সে তো তোর অনেক সিনিয়র!!

” সিনিয়র হয়েছে তো কি হয়েছে!? ও তোদের ভাইয়া কিন্ত আমার

বাকিটা না বলেই রুশা লজ্জায় মুখ লুকিয়ে ফেললো, রুশার এমন লজ্জা পাওয়া দেখে রুশার লাজলজ্জাহীন শরীরে তেলাপোকা ছেড়ে দিতে মন চাচ্ছে তনুর! বিড়বিড় করে বলল,

” আহা! লজ্জাবতী কন্যা!! পেট বের করে যখন সবার সামনে ঘুরে বেড়াচ্ছিলি তখন কোথায় ছিলো তোর এই লজ্জা!!!? লাজলজ্জাহীন শাকচুন্নি কোথাকার!!!!

স্নেহা গোসল করে বের হতেই তনুর আগে রুশা ছুটে গেল গোসলে। তনুর মেজাজ আরও খারাপ হয়ে গেলো। কিন্ত কিছু করার নেই, বিয়ে বাড়ি বলে কথা। সব ওয়াশরুম বুক!!

স্নেহা চুল মুছতে মুছতে বলল, ” আচ্ছা ছোট কাকি এসেছিলো নাকি রে!?

তনু এদিক ওদিক মাথা নাড়িয়ে বলল, ” না তো আপু।

স্নেহা তোয়ালে রেখে চুল আচড়াতে আঁচড়াতে বলল,” তখন যে বললাম আমাকে এক গ্লাস শরবত বানিয়ে দিতে!! মাথাটা খুব ধরেছে!!! কারও কোনো খেয়াল নেই দেখছি!!!

তনু বলে উঠল, ” ছোট মামি হয়তো ভুলে গেছে, আচ্ছা তুমি বসো আমি শরবত বানিয়ে আনছি আপু।

স্নেহা স্মিত হেসে বলল, ” থাক তোকে যেতে হবে না, এমনিতেও আম্মুর সাথে একটু দরকার আছে। আমি নিচে গিয়ে শরবতটাও নিয়ে আসি। তুই কি খাবি শরবত!?

তনু হ্যাঁ জানাতেই স্নেহা দ্রুত পায়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো। তনু এখনও লেহেঙ্গা খোলেনি, মুখ থেকে মেকাপও তোলেনি। ভেবেছিলো একেবারে গোসলের সময় ধুয়ে ফেলবে। কিন্ত রুশা যে গোসল করতে ঢুকেছে, কখন বের হবে আল্লাহ মালুম!

হাত মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হবে ভেবে উঠে দাড়ালো তনু, ঘর থেকে বের হতে যাবে তার আগেই সায়ন এসে দাড়ালো তার সামনে। হুট করে সায়নকে দেখামাত্রই তনুর হার্টবিট থেমে গেলো। সায়নকে এতো কাছে দেখে শ্বাস নিতেও ভুলে গেছে সে! খেয়াল করে দেখল, সায়নের চোখেমুখে দুষ্টুমি খেলা করছে।

তনু বুঝতে পারছেনা সায়ন হটাৎ করে এসে তার দিকে এভাবে তাকিয়ে আছে কেন!? সে কি জেনে গেছে যে তার ফোন চেক করেছে তনু!! তাহলে তো তাকে আস্তো রাখবে না সায়ন!!! তনু একটু সাহস নিয়ে কাপা কাপা গলায় বলল,

” কি হয়েছে ভাইয়া!? কি’কিছু বলবেন!?

” বলবো না, করবো।

সাথেসাথেই তনু চমকে উঠে তাকালো, কি করবে সায়ন!? তনুর ভাবনায় ছেদ ঘটিয়ে তনুকে আচমকা জড়িয়ে ধরল সায়ন!! এতো শক্ত করে জড়িয়ে ধরেছে যে মনে হচ্ছে যেন একটু ছাড়লেই তনুকে হারিয়ে ফেলবে সে।

তনু কি করবে ভেবে পাচ্ছেনা, মনেমনে ভাবছে,” আচ্ছা সায়ন ভাইয়া কি আমাকে প্রোপোজ করতে এসেছে!? তাহলে তখন কি উত্তর দেবো আমি!!? ইশ!! আমি তো লজ্জায় মরেই যাবো!!!

তনু খেয়াল করল দরজার সামনে দিয়ে বারবার জুবায়ের হেটে বেড়াচ্ছে। তার হাবভাব দেখে মনে হচ্ছে সে হয়তো বাইরে দাঁড়িয়ে পাহারা দিচ্ছে। হুট করেই গালে নরম স্পর্শ পেয়ে জমে বরফ হয়ে গেছে তনু।

সায়ন তার ডান গালে চুমু খেয়েছে! পরপরই তনুর বাম গালে চুমু খেলো সায়ন!! তনুর কান গরম হয়ে উঠেছে, কিন্ত সায়নের সেদিকে হুস নেই। তনুর কপালে চুমু খেয়ে ঘেমে থাকা নাকেও ঠোঁট ছোয়ালো সে!!!

মুহুর্তেই তনুর সারা শরীর কেপে উঠল, অদ্ভুত উত্তেজনায় সায়নের পিঠ খামছে ধরল তনু। সায়ন সলজ্জ হেসে তনুর কানেকানে বলল,

” ভালবাসি প্রেয়সী!

_______________________________________
|
|
|
|
|
|
|
[চলবে]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here