হাওয়ায় ভাসা উড়ো চিঠি পর্ব -০২

#হাওয়ায়_ভাসা_উড়ো_চিঠি (২)

খুব ভোরে জেগে উঠে লেখা। চোখ মেলতেই দেখতে পায় উন্মেষ শুয়ে আসে পাশে। কয়েক সেকেন্ড থমকে থেকে চোখ বড় বড় হয়ে যায়। তবে কি গত রাতে মিথ্যে বলল উষা? উন্মেষ এর ঘুম ভীষণ পাতলা। একটু তেই জেগে উঠেছে। লেখাকে হতচকিয়ে যেতে দেখে চোখ কুচকায়,”কি হলো?”

“তুমি এখানে!”

“তাহলে কোথায় থাকব?”

“তুমি তো আবৃত্তির কাছে ছিলে। তাঁর মানে ওকে ফেলে রেখে আবার চলে এসেছ!”

“আমি কারো কাছেই ছিলাম না। কাল রাতের প্রথম থেকেই আমি এখানে।”

“তবে উষা যে বলল…”

“আমি বলতে বলেছি তাই বলেছে।”

“তুমি কি আমার কোনো কথা শুনবে না? আমি কত শখ করে ওকে রেখে এলাম। আর তুমি কি না যাও নি একবার! মেয়েটা কি ভাবল।”

“সবে পাঁচটা বাজে। কাল অনেক রাত অবধি জেগেছো। এখন ঘুমাও।”

শব্দ করে কেঁদে উঠল লেখা। উন্মেষ জানালার পর্দা মেলে দিতে দিতে বলল,” আবার কি হলো বাবা?”

“তুমি এমন টা কেন করলে। আমি ওকে জেগে থাকতে বলে ম রা র মতো ঘুমিয়েছি। আমার খুব গিল্টি ফিল হচ্ছে।”

“আহা তুমি সব সময় কাঁদো কেন বলো তো। কান্নায় তোমায় মানায় না একদম। জানো তো খুব ই বিদঘুটে আর পেত্নি লাগে।”

“সরো তুমি।”

অভিমানে কথা হারিয়ে ফেলে লেখা। উন্মেষ পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে। ঘাড়ে নাক ডুবিয়ে গন্ধ শুকে।
“এত আদর সোহাগের দরকার নেই আমার। কেমন ভালোবাসো আমায়,আমি তা বুঝে গেছি।”

“হুম।”

“এমনটা না করলে ও পারতে তুমি। অন্তত দেখা করে আসতে।”

“পরে দেখা করব।”

“কাল রাত তো ফিরে আসবে না আর।”

“এসব বাদ দিবে তুমি। সারাক্ষণ একই কথা বলো শুধু। একটু আদর করতে ও দাও না।”

এবার যেন চুপ হয়ে গেল লেখা। উন্মেষ এর ভালোবাসায় বরাবর ই সিক্ত হয় সে। তবে আজকাল যেন আরো বেশি করে আদর করতে চায় ছেলেটা। কেন এমন করে? ওর হাতে সময় নেই বলে নাকি অন্য কোনো কারণে।

গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন আবৃত্তি। উষা এসে ডেকে গেছে কয়েক বার। কিন্তু সাড়া দেয় নি। এই নিয়ে চটেছেন দিতিয়া। আবৃত্তির ঘরের কাছে এসে চেঁচামেচি করলেন। “বাড়িতে সবাই একটা নিয়ম মেনে চলে। মানছি নতুন এসেছে সে। তাই বলে সকাল দশটায় ও ঘুম ভাঙবে না। বাড়িটাকে কি সার্কাস পেয়েছে!”

ভদ্র মহিলার চিৎকারে ও ঘুম ভাঙে নি আবৃত্তির। সকাল সকাল এই চেঁচামেচি ভালো লাগছে না আলমাস সাহেব এর। তিনি বিড়বিড় করতে করতে বেরিয়ে এলেন। গার্ডেনে বসে কাজ করছিল উন্মেষ। বাবা কে দেখেই ল্যাপটপ বন্ধ করে দিল। “কিছু বলবে বাবা?”

“তোমার মা যা শুরু করেছে এতে করে বাড়িতে থাকা যাচ্ছে না আর। একটা মেয়ে নতুন এসেছে। কাল এত ধকল কুলিয়ে আজ না হয় একটু বেশিই ঘুমাচ্ছে তাই বলে চেঁচাবে?”

“মা তো ওমন ই বাবা। তাছাড়া বেলা তো অনেকটা হয়েছে।”

“তুমি ও তোমার মায়ের মতো কথা বলছ দেখছি। তাহলে বিয়ে করলে কেন!”

“তুমি সেটা জানো বাবা।”

“সব সময় অন্যের উপর দোষ চাপাবে না তো। আগে নিজেকে গুরুত্ব দাও। তুমি মেরুদন্ড হীন প্রানী তে পরিণত হতে চলেছে উন্মেষ। অসুস্থতায় না হয় লেখা অবুঝ হয়ে গিয়েছিল তবে তুমি তো বুঝদার সুস্থ মানুষ। যাকে বিয়ে করলে সে ও নিশ্চয়ই চাইবে স্বামীর ভালোবাসা।”

“দুঃখিত বাবা। তবে আমি নিরুপায়।”

“অসহায়ের মুখোশ খুলে বেরিয়ে আসো। না হলে পস্তাতে হবে। যা হয়েছে তা নিয়ে নেতিবাচক প্রভাব খাঁটিও না। আমি আসছি,আজ তোমার অফিসে না গেলে ও চলবে।”

বুক চিরে বেরিয়ে আসা দীর্ঘশ্বাস লুকিয়ে ভেতরে এল উন্মেষ। সবে কপাট খুলে বেরিয়েছে আব‍ৃত্তি। হাই তুলে অগোছালো শাড়ির আঁচল ফেলে গৃহিনীদের মতো হাত খোঁপা করতে লাগল। উন্মেষ নজর ঘুরিয়ে চলে যেতেই আবৃত্তির খেয়াল হলো। দ্রুত নিজেকে ঠিক ঠাক করে মাথায় ঘোমটা টানল সে। সোজা রান্না ঘরে গিয়ে বলল,”আন্টি আমি আসলে বুঝতে পারি নি এতটা বেলা হয়ে গেছে।”

“কলি,ওকে বলে দে বাসী কাপড় ছেড়ে গোসল করে আসতে।”

“কিন্তু আন্টি..”

“মুখে মুখে কথা বলা আমার পছন্দ না। সেটা যদি কেউ না জেনে থাকে তাহলে এখনি জেনে রাখুক। রোজ এসব ঝামেলা পোহাতে পারব না আমি।”

ছোট মুখে চলে আসে আবৃত্তি। নিজের ঘরে গিয়ে শাওয়ার নিয়ে ফিরে আসে। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে কেমন বিধ্বস্ত দেখায়। স্বামীর স্পর্শ তো বহু দূর দেখা অবধি মিলে নি অথচ ওর গোসল ফরজ হয়ে গেল! এই পৃথিবীতে যা ঘটে তা কেবল লোক দেখানো। মূল ঘটনা তো আড়ালেই থেকে যায়।

বিকালটা বড়ো অধৈর্য অবস্থায় কেঁটেছে আবৃত্তির। দুপুরের দিকে খাবারের টেবিলে কিছু মানুষকে দেখলে ও পরে আর কারো দেখাই পাওয়া গেল না। অবশ্য শেষ বেলায় এসে লেখার ঘর থেকে উন্মেষকে বের হতে দেখেছে। বিষয়টা অস্বাভাবিক নয় তবে আবৃত্তির বুকে কেন যেন ব্যথা লেগেছে! কেমন যেন একটা নিদারুণ যন্ত্রণা। সন্ধ্যায় লেখা এসে বসল পাশে। আবৃত্তি হাঁটুতে মুখ গুজে, “কি হলো তোর। মন খারাপ?”

“বাবা আমার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছে আপু।”

“জানি। আমার সাথে ও কথা বলছে না। চিন্তা করিস না। সময় গেলেই ঠিক হয়ে যাবে। তাছাড়া আমি আছিই বা আর কদিন। তুই তো বাবার এক মাত্র মেয়ে। কত সময় অভিমান করে থাকবে?”

“এমনটা বলিস না আপু। আমি চাই না তোর কিছু হোক।”

“যা হবার তা তো হবেই আবৃত্তি। তবে তুই যে আমার কথাটা রেখেছিস এতে আমি ভীষণ খুশি। এখন তো আমি ম রে ও শান্তি পাব। জানিস উন্মেষ উপরে উপরে যতটা গোছালো ভেতরে ভেতরে ততটাই অগোছালো। ওকে যত্নে রাখিস বোন। আমার দিন তো ফুরিয়েই এসেছে। আর বোনের উপর অভিমান রাখিস না। বিশ্বাস কর তুই ছাড়া আমি কাউকে ভরসা করতে পারতাম না।”

“আপু প্লিজ আর বলিস না। আমার ভেতরটা ধুকপুক করছে।”

আবৃত্তি লেখার হাতটা ওর বুকে রাখল। সত্যিই কেমন যেন লাফাচ্ছে হৃদপিন্ড। লেখা উতলা হয়ে পড়ল।
“তোর কি খারাপ লাগছে। ডাক্তার ডাকব। উন্মেষ, উন্মেষ।”

“ঠিক আছি রে আপু। তুই চুপ করে বোস একটু।”

“তাহলে হৃদপিন্ড ওমন করে লাফায় কেন? না না কিছু ঠিক নেই। তুই যেতে দেয় আমায়।”

দু হাতে লেখাকে জড়িয়ে ধরল আবৃত্তি। গলার নিকটে মুখ রেখে বলল,”সব ঠিক আছে। আমার প্রয়োজন তোকে। তুই প্লিজ মাথায় বিলি কেঁটে দে। দেখবি সব ঠিক হয়ে যাবে।”

লেখার কোলে মাথা রাখলো আবৃত্তি। বেশ জোরে নিশ্বাস নিয়ে চোখ বুঝল সে। উন্মেষ দরজার কাছে এসে থমকায়। লেখার চোখ পড়তেই লেখা বলে, “একটু বিলি কেঁটে দাও তো ওকে। আমার কাজ আছে একটু।”

গভীর ধ্যানে চলে যাওয়াতে আবৃত্তির কোনো হেলদোল নেই। উন্মেষ ব্যস্ত হয়ে বলে, “আমি কেন?”

“তাহলে কে দিবে। নুরুল চাচা কে ডেকে বলব ওর মাথায় বিলি কেঁটে দাও।”

“আশ্চর্য!”

“তুমি একটু বসো আমি আসছি এই মাত্র। জাস্ট একটু।”

উন্মেষকে বসিয়ে দিয়ে চলে গেল লেখা। হাঁটতে কষ্ট হলে ও বেশ গতিতেই চলল সে। বিপাকে পড়েছে উন্মেষ। আবৃত্তি বোধহয় এতক্ষণে ঘুমিয়ে জল। বুকের উপরে কখনোই আঁচল ঠিক থাকে না মেয়েটির। এখনো এলোমেলো হয়ে আছে। এক রাশ বিরক্তি নিয়ে আঁচল টেনে দিল উন্মেষ। উষা এখানেই আসছিল। ভাইয়া আর নতুন ভাবির একান্ত মুহূর্ত দেখে থমকে গেল। বাহিরে এসে দরজায় নক করল। নড়েচড়ে উঠল উন্মেষ।
“আসব ভাইয়া?”

“আয়। অনুমতি নেওয়ার কি দরকার।”

“না এমনি। আবৃত্তি আপুর জন্য কিছু শাড়ি পাঠিয়েছে মা। বিকেলে শপিং এ গিয়েছিল না সেখান থেকেই এনেছে। ”

“ও তুই রাখ ওখানে।”

শাড়ি গুলো রাখল উষা। আড়চোখে তাকাতেই দেখল আবৃত্তির মেদহীন পেট এর এক অংশ বেরিয়ে আছে। যা বুঝার বুঝে গেল সে। দ্রুত কাবাডে শাড়ি গুলো রেখে চলে এল। একটা কল আসাতে সাইট হয়ে কথা বলছিল উন্মেষ। পেছন ঘুরে উষা কে বলবে এখানে থাকতে ওমনি দেখল উষা নেই। ঝামেলার মাঝে থেকে আরো বেশি করে উদ্বিগ্ন হয়ে যাচ্ছে সে। আবৃত্তির মাথায় বালিশ রেখে দিয়ে কক্ষ থেকে প্রস্থান করল দ্রুত বেগে।

চলবে…..
কলমে~ফাতেমা তুজ নৌশি

***তুলনামূলক ভিন্ন প্লটে লিখার চেষ্টা করি আমি। কিন্তু শুরুতেই সমালোচনার জন্য বিভিন্ন গ্রুপে গল্পটা দেওয়া অফ করে দিয়েছি। শুধু আমার পেজেই আসবে।***

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here