হিয়ার মাঝে পর্ব -২৩

#হিয়ার_মাঝে
#পর্বঃ২৩
#আর্শিয়া_ইসলাম_উর্মি

৫০,
সময়টা সূর্যাস্তের৷ লাঞ্চ সেরেই পতেঙ্গা সী-বীচের তীর ঘেষে দাড়িয়ে আছে রাদ, রায়া, ইহসাস, নাতাশা, হিয়া, তাইবা। সূ্র্যাস্তের দৃশ্য উপভোগ করছে সবাই। পতেঙ্গা সী-বীচ কর্ণফুলী নদী আর সমুদ্রের মোহনায় অবস্থিত। এখানের সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্তের দৃশ্য খুবই মনোরম। পতেঙ্গা সী-বীচ টা ৫কিলোমিটার দৈর্ঘের একটি বীচ। সন্ধ্যার সময় খুব সুন্দর শীতল পরিবেশ থাকে, শান্ত বাতাস বয়ে চলে। হিয়া দাড়িয়ে দাড়িয়ে শান্ত বাতাসে হাত ছড়িয়ে চোখ বন্ধ করে পরিবেশ টা উপভোগ করছে। সমুদ্র দেখা তার কাছে নতুন নয়, এর আগেও দেখেছে, তবে সেটা বিদেশের মাটিতে। নিজের দেশের কাদা মাটির গন্ধেও শান্তি। সেই শান্তি টাই উপভোগ করছে হিয়া। তখনই ইহসাস হিয়ার পাশে এসে দাড়ায়। সাইডে দাড়িয়ে বলে,

“এই নিন আপনার আইসক্রিম।”

হিয়া ইহসাসের কন্ঠস্বরে চোখ মেলে তাকায়। ইহসাস আইসক্রিম হাতে দাড়িয়ে আছে। সে বোন দুলাভাইকে দেখার চেষ্টা করে। কিন্তু রাদ আর রায়া তাদের থেকে যথেষ্ট দূরে অবস্থান করছে। কোনো একটা দোকানীর থেকে কিছু একটা কিনতে ব্যস্ত তারা। নাতাশা আর তাইবা কোথায় দেখতে পেলো না হিয়া। সে চোখ বন্ধ করে দাড়িয়ে ছিলো বলে কি সবাইকে হাওয়া হয়ে যেতে হবে! তার যে ইহসাসের সাথে কথা বলতে বড্ড অসস্তি হয়। এটা কেনো হয়, জানেনা হিয়া। হাত বারিয়ে আইসক্রিম টা নেয় হিয়া। ইহসাস একটা কোণ আইসক্রিম এনেছে। উপর থেকে কাগজ সরিয়ে আইসক্রিমে কাম’ড় দিতে দিতে বলে,

“আইসক্রিম কই পেলেন?”

“শহর থেকে অনেক বিক্রেতাই আসে আইসক্রিম, বিভিন্ন রকম কোমল পানীয় নিয়ে৷ তাদের থেকে কিনেছি।”

“বাকি সবার জন্য নিয়েছেন?”

“হ্যাঁ।”

“নাতাশা আর তাইবা আপু কোথায়?”

“ওরা আছে আশেপাশে কোথাও।”

“মানুষই ক’জন। সবার খোজ রাখবেন না? যদি হারিয়ে যায়!”

“হারাবেনা, এতো ভয় পাওয়ার কিছু নেই।”

হিয়া কথা বাড়ায় না। সে আইসক্রিম খেতে খেতে সূর্যাস্ত দেখতে ব্যস্ত হয়ে পরে। গোধুলীর আলোয় সূর্যটাকে গোল একটা থালার মতো লাগছে দূর আকাশে। মনে হচ্ছে পানির ভিতর আগুন দিয়ে গোল থালা পু”ড়িয়ে কেউ ডু”বিয়ে দিচ্ছে। হিয়া আরেকদফা মুগ্ধ হয়। ইহসাস বুকে হাত বেধে হিয়ার সেই মুগ্ধতা দেখছে। হিয়া ড্রেস পাল্টে এসেছে। গাড়ো খয়েরী রঙের ফ্লাফি স্কার্ট আর সাদা টপস পরে উপরে কটি চাপিয়েছে খয়েরী। রঙ টায় ভীষণ মানিয়েছে হিয়াকে। ইহসাসের চোখে মুগ্ধতা উপচে পরছে। এই মেয়ে টা তাকে পাগল বানিয়ে ছাড়বে। হিয়া আইসক্রিম খাওয়া শেষে রাদ আর রায়ার কাছে যাওয়ার জন্য পাশ ফিরে পা বাড়াতেই ইহসাসকে তার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখতে পায় হিয়া। এভাবে নিষ্পলক ইহসাস এতোক্ষণ তার দিকে তাকিয়ে ছিলো নাকি! থাকলে তো কি রকম একটা অসস্তিকর ব্যাপার। হিয়া চোখ নামিয়ে পানিভেজা বালুর দিকে তাকিয়ে ইহসাসকে জিগাসা করে,

“আপনি কি আমার দিকে এতোক্ষণ এভাবেই তাকিয়ে ছিলেন নাকি!”

“তোমাকে ছোয়ার নেই তো, আমার সাধ্য৷ দেখতে পাওয়া, সেই তো পরম ভাগ্য।”

হিয়ার কথার উত্তরে ইহসাস গুনগুনিয়ে লাইন দুটো বলে বসে। এরপর হিয়ার পাশ কা”টিয়ে সে বীচের কোলঘেষে হাটতে থাকে। জোয়ারের ঢেউ এসে ইহসাসের পা ভিজিয়ে দিয়ে যায়। আসার জুতো জোড়া খুলে সে আগেই খুলে রিসোর্টেই ফেলে এসেছে। পায়ে দিয়ে এসেছে স্যান্ডেল। হিয়া ‘থ’ মে’রে দাড়িয়ে ইহসাসের যাওয়ার পানে তাকিয়ে আছে। এটা কি বলে গেলো ইহসাস! তখুনিই নাতাশা হিয়ার পাশে এসে দাড়ায়। হিয়াকে মূর্তির মতো দাড়িয়ে থাকতে দেখে নাতাশা হিয়ার কাঁধে হাত রেখে বলে উঠে,

“এই হিয়া? এভাবে দাড়িয়ে আছো? কি হয়েছে?”

হিয়ার হুশ ফেরে। সে নিজেকে স্বাভাবিক করে নাতাশার দিকে তাকিয়ে হাসার চেষ্টা করে। এরপর বলে,

“কিছু না আপু, এমনিই দাড়িয়ে পানি আর প্রকৃতির খেলা দেখছিলাম।”

“কি সব বলছো হিয়া? পানি আর প্রকৃতির খেলা মানে?”

“ও কিছু না। তুমি কোথায় গিয়েছিলে?”

৫১,
“আমি তো ঐদিকে একটু কিছু খাবার খোজার চেষ্টা করছিলাম। হাটতে হাটতে অনেকটা দূরে চলে গিয়েছিলাম। খেয়াল করিনি সেটা।”

“কি খাবার খুজতে গেলে না? তাছাড়া রেস্টুরেন্ট থেকেই তো খেয়ে আসলে বলে কিছু খাবেনা বললে তো আসার পর!”

“এখানে কাদামাটির ছোটো ছোটো কাকড়া ভাজা পাওয়া যায়। যার উপর শশা আর পেয়াজ ছড়িয়ে দেওয়া থাকে। খেতেও অনেক টেস্ট। দেখছো তো সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত হয়ে আসছে। পেলাম না কোথাও।”

নাতাশার কথা ফুরোতেই তাইবা এসে নাতাশার পাশে দাড়ায়। তার হাতে ফোন, ঠোটের কোণে হাসি লেপ্টে আছে। হিয়া তা দেখে জিগাসা করে,

“কি ব্যাপার আপু? এতো খুশি খুশি লাগছে যে!”

হিয়ার প্রশ্নে তাইবা বললো,

“বেস্টফ্রেন্ড ফোন দিয়েছিলো। একটা গুড নিউজ দিলো। সেজন্য একটু হ্যাপি হ্যাপি লাগছে।”

“কি গুড নিউজ? আমাদেরও বলো। আমরাও একটু আনন্দ ভাগ করে নেই।”

হিয়া প্রশ্ন করলো। তাইবা হিয়ার দিকে দুকদম এগিয়ে হিয়ার গালে হাত দিয়ে বললো,

“নাতাশা ঠিকই বলে, তুমি খুব মিষ্টি মেয়ে হিয়া। তোমার মিষ্টতা জুড়ে থাকুক তোমার সঙ্গে।”

হিয়া তাইবার কথার আগামাথা বুঝলো না। সে তো প্রশ্ন করলো, তার উত্তর না দিয়ে কি সব বলছে তাইবা! নাতাশা অবাক নয়নে তাইবাকে দেখছে। সে তাইবাকে বলে,

“কি ব্যাপার তাইবা আপু? হঠাৎ হিয়ার প্রশংসা করছো যে!”

তাইবা ঠোটে হাসি বজায় রেখে বললো,

“দেখছোনা নাতাশা! হিয়া আমায় সেভাবে চিনেই না। অথচ আমার আনন্দ ভাগাভাগি করে বেশি আনন্দ টা বেশি করতে চাইছে। আনন্দ ভাগাভাগিতে যে বাড়ে, জানোই তো। কিন্তু দুঃখিত আমি। এখন আনন্দটা ভাগ করতে পারছিনা। তবে ইনশা আল্লাহ অবশ্যই বাড়ি ফিরে বলবো।”

তাইবার কথা ফুরোতেই ইহসাস উপস্থিত হয় ওদের কাছে। সাথে রাদ আর রায়া। রাদ ওদেরকে দেখে বলে,

“কি গল্প করছিস তোরা?”

“কিছু না ভাইয়া এমনিই কথা বলছি।”

নাতাশা বললো কথাটা। রায়া এবার বলে,

“সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত হলো। আমাদের রিসোর্টে ফেরা উচিত।”

“হ্যাঁ ভাবী ঠিক কথা বলেছে একদম। সবাই চলো। ”

ইহসাস বললো। এরপর নিজেই সিড়ি ভে’ঙে উপরের দিকে হাটা ধরে। তার পিছনে পিছনে নাতাশা, তাইবা আর হিয়া বকবক করতে করতে হাটছে। রাদ নিশ্চুপ, সাথে রায়াও। ঠান্ডা বাতাসে রায়ার হালকা শীত শীত অনুভব হচ্ছে। সে শাড়ির আচলটা গায়ে জড়িয়ে নেয় ভালো মতো। রাদ অন্যদিকে তাকিয়ে হাটতে হাটতেই রায়া এক হাত আকড়ে ধরে। আঙুলের ফাঁকে পাচটা আঙুল দিয়ে হাত পেচিয়ে ধরে। রায়া একটু চমকে যায়। চমকে রাদের দিকে তাকায়। রাদ আপন মনে এপাশ ওপাশ চোখ ঘুরিয়ে হাঁটছে। রায়াকে তার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে রাদ রায়ার কানের কাছে মুখ নিয়ে সামনের দিকে তাকিয়ে ফিসফিস করে বলে,

“আমাকে দেখার অনেক সময় আছে, কিন্তু এই হাতটা ধরে রাখার সময়টা হয়তো জীবনে নাও পেতে পারি। সামনের দিকে তাকাও। সাবধানে হাটো।”

রায়া চোখ নামিয়ে নেয়। রাদের একহাতে ফোনের ফ্লাশ লাইট জ্বা’লিয়ে রেখেছে। সেই আলো আর রাস্তায় থাকা নিয়ন বাতির আলোয় হাটছে সে।
এদিকে ইহসাস আগে আগে পকেটে হাত গুজে হাটছে। মনে হিয়ার সাথে হাতে হাত আকড়ে হাঁটার তীব্র ইচ্ছে জাগছে তার। কিন্তু কিছু করার নেই। সবার মাঝে হিয়ার হাত টা ধরার অধিকার তার নেই। ইহসাস ভেবেই নেয়, এখান থেকে ফিরে ব্যবসায় হাত দিবে আগে। নিজে সাবলম্বী হয়ে পরিবারকে বুঝিয়ে হিয়াকে বিয়ে করার কথা বলবে। কিন্তু তার আগে হিয়াী মতামত জানার চেষ্টা করবে সে। ইহসাস এসব ভাবতেই ভাবতেই হাটতে থাকে। নাতাশা কাকড়া ভাজা না পেয়ে কয়েকটা ছোটো ছোটো কোল্ড ড্রিংকসের বোতল কিনে নিয়েছিলো। হিয়া আর সে সেই কোল্ড ড্রিংকস বোতলের মুখে চুমুক দিয়ে খেতে খেতে হাটছে। অবশেষে কিছু টা হাটার পর তারা রিসোর্টে পৌছে যায়।
সবাই যে যার মনে ফ্রেশ হয়ে দুমদাম শুয়ে পরে। রাতে অন্তত তারা কেউ খেতে পারবেনা। রাদ ফ্রেশ হয়ে সবাইকে খাওয়ার জন্য ডাকলেও কেউ খেতে সম্মতি দেয়নি। রাদ রুমে ফিরে আসে। রুমে ঢুকেই দেখে রায়া চুল আচরে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। রাদ বিছানায় বসে, একটুপর রায়া এসে কিছু না বলেই একপাশে শুয়ে পরে। গায়ে পাতলা চাদর টেনে দেয়। রাদও নিজের হাতের ঘড়ি খুলে বেড সাইড টেবিলে রেখে রায়ার পাশ শুয়ে পরে। রায়া ওপর দিকে মুখ ফিরে শুয়ে আছে। রাদ রায়ার দিকেই মুখ দিয়ে শুয়ে পরে। পেছন থেকেই রায়ার পেটের উপর হাত রাখে। রায়াকে নিজের কাছাকাছি আনে। রায়ার পিঠটা এসে রাদের বুকের সাথে লেপ্টে পরে। রাদ রায়ার চুলের মাঝে মুখ গুজে ঘুমিয়ে পরার চেষ্টা করে। রায়া কিছু বলেনা। তার স্বামীই তাকে ছুয়েছে। পরপুরুষ নয় যে বাধা দিবে। রায়া চোখ বন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টা করে। কিন্তু তার চোখে ঘুম নয়, অশ্রু ধরা দেয়।

৫১,
পরেরদিন ভোর সকালবেলায়। ইহসাস সবার আগে ঘুম থেকে উঠেছে। সবাই আগে থেকেই ভেবেছিলো ভোরবেলা সূর্যোদয় দেখবে। সেই অনুযায়ীই ইহসাস ভোরে উঠার জন্য এলার্ম দিয়ে ঘুমিয়েছিলো। ভোরে উঠার অভ্যাস তার খুবই কম। ইহসাস রুম থেকে বের হয়ে প্রথমে রাদদের রুমে নক করে। রাদ দুমিনিট পরই দরজা খুলে দেয়। দরজা খুলে ইহসাসকে দেখেই বলে,

“এত্তো সকালে ডাকিস কেনো?”

“তো কি সূর্যদয় কি আবার সন্ধ্যায় দেখবা? নাকি আগামীকাল ভোরে।”

ইহসাসের উত্তরে রাদ মাথা চুকলায়। এরপর ক্ষীণ স্বরে বলে,

“ওহহ মনে ছিলো না। তোরা বের হ, নাতাশাকে ডাক দে। আমরা আসতেছি।”

রাদ কথাটা বলেই রুমে দরজা ভেজিয়ে দেয়। ইহসাস ভাইয়ের কথামতো নাতাশাদের ডাকতে যায়। কিন্তু গিয়ে দেখে ওদের রুমের দরজা বাইরে থেকেই লক করা। ওদের ডেকেও পায়না। ইহসাস বুঝতে পারে গতকালের মতোই এরা আজকেও আগে আগে চলে গেছে। সে ফিরে এসে ফির রাদদের রুমেই নক করে। রায়া তখন সবে ফ্রেশ হয়ে বেরিয়েছে। সে ইহসাসকে ভেতরে ডাকে। ইহসাস ভেতরে যায় না। বলে,

“আমি রিসোর্টের সামনে দাড়াচ্ছি। তোমরা আসো।”

রায়া সম্মতি দেয়। রাদ ফ্রেশ হয়ে বেরুতেই ওরা সী বীচের উদ্দেশ্যে হাটা ধরে। ভোরের স্নিগ্ধ পরিবেশ, মৃদু বাতাস, পরিবেশ টা মনোরম করে তুলেছে। ইহসাসের মনের ভেতরে অন্য রকমই শান্তি অনুভব হয়। রাদ গতকালের মতোই আজও সুযোগ পেয়ে রায়ার হাতের কাজে আঙুল পেচিয়ে ধরেছে। রাদ হাঁটতে হাঁটতে ইহসাসকে প্রশ্ন করে,

“নাতাশা রা কই? ওদের না ডাকতে বললাম!”

“শাঁকচুন্নি রা আগেই গেছে চলে। তাড়াতাড়ি পা চালাও।আমরাও যাই।”

ইহসাস উত্তর দেয়। ওরা দ্রুত পা চালায়। এরপর সী বীচে যেতেই তাদের সন্দেহই ঠিক হয়। নাতাশা, হিয়া এবং তাইবা সমুদ্রের তীড় ঘেষে দাড়িয়ে সূর্যোদয় দেখছে। সূর্য সবে তার আলো ছড়াতে শুরু করেছে। রাদ, রায়া আর ইহসাস গিয়েও তাদের সাথে যুক্ত হয়। ইহসাস গিয়ে নাতাশার চুল টেনে ধরে বলে,

” নাটাশা, আসার আগে ডাকিসনি কেনো?”

নাতাশা কিছু টা রে’গে যায়। সে ইহসাসের পিঠে দুম করে কি’ল বসিয়ে উত্তর দেয়,

“হিয়া রাতে ঘুমোয়নি, উত্তেজনার চোটে। আমাদেরও ঘুমাতে দেয়নি। ভোর হতেই সেজন্য বেরিয়েছি। তোদের ডাকতেও দেয়নি৷ কিন্তু আসার আগে রিসিপশনে বলে এসেছি তো।”

ইহসাস পিঠে হাত দিয়ে ডলতে ডলতে বলে,

” নরমালই কথা বলতে পারিস না? এভাবে মে’রে উত্তর দিতে হয়?”

“তুই আমার নামটা সুন্দর করে বলতে পারিস না? কেঁচো একটা। এক কি’লেই বে’কে গেছিস! মোচরামুচরি করছিস।”

নাতাশা ভেঙিয়ে কথাটা বলে। ইহসাস কিছু বলে না আর। সেও দুম করে নাতাশার পিঠে একটা কি’ল দেয়। নাতাশাও আহ বলে পিঠে হাত দিয়ে মুচরে যায়। ইহসাস এবার বলে,

“নে তুইও এবার কেঁচো হলি। কেঁচোর বোন মানুষ কি করে হয়! সেজন্য কেঁচোই বানালাম।”

নাতাশা কাঁদো কাঁদো মুখে রাদের দিকে তাকিয়ে বলে,

“ভাইয়া দেখলে! ছোটো ভাইয়া আমায় মা’রলো। তুমি কিছু বলছো না কেনো?”

রাদ, রায়া আর তাইবা এতোক্ষণ ওদের ভাইবোনের মা’রপি’ট দেখছিলো। নাতাশা রাদকে প্রশ্ন করতেই সে নড়চড়ে দাড়ায়। বুকে হাত বেধে সমুদ্রের দিকে দৃষ্টি ফেলে বলে,

৫২,
“তোদের ভাইবোনের ব্যাপার, তোরা দেখ। একটুপরই তোরা দুজন মিলে যাবি। যতো দোষ তখন আমার হবে, আমি শাসন করেছি।”

নাতাশা রাদের উত্তরে চুপসে যায়। সে দুহাত গোল করে ইহসাসের গলার দিকে চে”পে ধরার জন্য তেড়ে যায়। ইহসাস দৌড় লাগায় বীচের কোলঘেষে। নাতাশা পিছনে পিছনে যায় না। সে হিয়ার পাশে এসে দাড়ায়। হিয়া ওদের ঝ’গড়া ঝাটির মাঝে ছিলো না। সে ওদের চিল্লাচিল্লি শুনে খানিকটা দূরে সরে এসে প্রকৃতিতে বিলীন হয়ে পরেছে। কি সুন্দর সূর্য তার লাল আভা ছড়িয়ে পৃথিবী আলোকিত করছে৷ সবাই সেই দৃশ্য দেখতে ব্যস্ত হয়ে পরে।

কিছুসময় পর সী বীচে জনসমাগম সরোবর ময় হয়ে যায়। বেলা বাড়ার সাথে বিক্রেতা রা আসে। গতকাল নাতাশা যা খেতে পারেনি। আজ সেটাই আগে নজরে পরার পর কেনে। সবাই একসাথে কাকড়া ভাজা খায়৷৷ এরপর সী-বীচে থাকা ফুডকোর্ট থেকে খাবার কিনে ব্রেকফাস্ট করে নেয়। বীচের ধার দিয়ে অনেক ফুডকোর্ট রয়েছে। তাতে বিভিন্ন রকমের ফাস্টফুড পাওয়া যায়। সী বীচে থাকা সী-বাইকে করে সবাই সী-বীচে ঘোরে। এরপর স্পিডবোটেউঠে সমুদ্র বন্দরে যাতায়াত কৃত জাহাজ দেখে। স্পিডবোটে উঠার ভাড়া জনপ্রতি ৫০টাকা। এরপর তাড়া সী বীচের ধার দিয়ে হাটতে থাকে। পুরো বীচেই কংক্রিটের দেয়াল আর বড়ো বড়ো পাথরের খন্ড ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে বীচের ভাঙন ঠেকাতে। হিয়ারা হাটতে হাটতেই ঘোড়া দেখতে পায়। নাতাশা আর হিয়া জিদ করে ঘোড়াতে উঠবে। কিন্তু রাদ মানা করে, ভয় পাবে তারা। যদি পরে যায়। কিন্তু হিয়ার জিদের কাছে হার মেনে তাদের উঠতে দেয়। হিয়া আর নাতাশা ঘোড়ায় উঠে ঘুরছে। তাইবা, ইহসাস, রাদ আর রায়া একপাশে দাড়িয়ে থেকে তাদের দেখছে। একটুপর ওরা ঘোড়া থেকে নেমে রাদদের কাছে আসলে রাদ বলে,

“চল এবার রিসোর্টে ফেরা যাক। এমনিতেও ১২ঃ৩০এ চেক আউট করার নিয়ম। এরপর তো রাঙ্গামাটির দিকেও যাবি বলেছিলি!”

“তার আগে একটা জায়গায় যাবো ভাইয়া। রাঙ্গামাটির দূরত্ব এখান থেকে বেশি দূর নয়। চারঘন্টা মতো লাগবে সময়। তাই বিকেলে বের হলে আমরা রাতে পৌছাবো। তখন দেখার মতো কিছুই থাকবেনা। গিয়ে হোটেলেই উঠতে হবে।”

নাতাশা রাদের কথার উত্তর দেয়। ইহসাস তা শুনে বলে,

“তাহলে কোথায় যাবি বলছিস?”

“আগে আমরা এই সী-বীচের মার্কেট টায় তো ঢুকবো। বার্মিজ মার্কেটে ঢুকবো আগে। এরপর রিসোর্টে গিয়ে চেক আউট করবো।”

ইহসাস বললো,

“তুই যে বলেছিলি, আনোয়ারা পারকি চরে ঘুরবি?”

“পতেঙ্গার মতোই ওটাও একই রকম সমুদ্র সৈকত। আপাতত ওটা পরে ভাববো। ফেরার সময় ঘোরা যায়, ঘুরে ফিরবো। এখানে ঘুরতেই দুপুর বারোটা বাজিয়ে ফেলেছি, ওখানে যাবো কখন!”

নাতাশার কথার উত্তরে রাদ বললো,

“ওকে, আপাতত রিসোর্টে তো ফের। লান্চ করে একেবারেই বের হবো। এরপর মার্কেটে ঘুরে রাঙামাটির দিকে রওনা হবো।”

ওরা সবাই রিসোর্টের দিকে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই তাইবা বলে উঠলো,

“একটু লেট করবে! দরকার ছিলো একটা।”

সবাই অবাক হয়। এখন আবার কি দরকার তাইবার। রায়া প্রশ্ন করে,

“কিসের দরকার তাইবা?”

“একজন আসবে, এসেই গেছে প্রায়। ১০মিনিটের মতো লাগবে বললো।”

“কে আসবে?”

নাতাশা অবাক হয়ে প্রশ্ন করে। তাইবা উত্তর দেয়,

“একটু ওয়েট করো। আসলেই দেখতে পাবে।”

তাইবার কথা অনুযায়ী সবাই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে কে আসবে দেখার জন্য।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here