এক সমুদ্র প্রেম পর্ব -১৫+১৬

#এক_সমুদ্র _প্রেম!
লেখনীতে: নুসরাত সুলতানা সেঁজুতি
(১৫)

” ফোন ধরেছিলি কেন?”
পিউ ভ*য়ে ভ*য়ে জানাল,
” এ..এমনি।”
” মিথ্যে বলছিস। ”
ধূসরের অগাধ স্বরে পিউ ছ*টফট করে। এলোমেলো পাতা ফেলে চোখের। কী উত্তর দেবে এখন? সত্যিটা জীবন গেলেও বলতে পারবে না। ধূসর ভাই জানলে ক*বর দিয়ে দেবেন।
ধূসর হাতখানা আরেকটু চে*পে ধরে বলল,
” কী? কথা নেই জ্বিভে?”
পিউ ফের আ*র্তনাদ করে,
” আ লাগছে! আমি সত্যিই এমনি ধরেছিলাম।”
ধূসরের যুক্তি পছন্দ হয় না। হাতের বাধন দৃঢ় করতেই পিউ কাঁ*দোকাঁ*দো স্বরে বলল,
” এখন কী আমার কথাও অবিশ্বাস করছেন ধূসর ভাই?”
” যেখানে তোকেই বিশ্বাস করিনা,সেখানে তোর কথা….”
স্পষ্ট জবাবে পিউয়ের আদল ছোট হয়ে আসে।
” সত্যি বলছি,বিশ্বাস করুন।”
ধূসর ভ্রুঁ উঁচায়,
” তাই? তাহলে প্যাটার্ন জানলি কী করে? ”
পিউয়ের চোখ মারবেলের মতন হয়ে আসে। ধূসর ভাই দেখে নিয়েছেন তবে? আর মিথ্যে বলে লাভ নেই। ঢোক গি*লে আস্তে আস্তে বলল,
” আপনার পাশে বসে দেখেছিলাম কয়েকবার।”
কথাটুকুন উগড়ে দিয়ে পিউ নেত্র বুজে ফেলল। এই অপরাধে এক্ষুনি না ধূসর চ*ড় মে*রে দেয়। অথচ সে কিছু বলল না। পরিবেশ ঠিকঠাক ভেবে পিউ চোখ খোলে। ঈষৎ ঘাড় বাঁকা করে দেখতে চায় ওকে। এর আগেই ধূসর হাতে চা*প দিলো আবার।
পিউ ব্যা*থায় মু*চড়ে ওঠে। ধূসর দন্ত পি*ষে বলল,
” বিয়েতে গিয়ে ছেলেদের সাথে আড্ডা দেয়ার খুব শখ তোর তাই না?”

পিউ চোখ পিটপিট করে বলল ‘ মমানে?’
‘ রোহান কে?’
তাৎক্ষণিক ভাবে তার নিজেরও মনে পড়লোনা রোহান কে। বোকা বোকা কণ্ঠে শুধাল ‘ কে?’

ধূসর চিবুক শ*ক্ত করতেই পিউ অস্থির হয় ।মস্তিষ্কে চাপ দেয়। পরপর সকালের কথা মনে পড়ে। ওমনি ভ*য়ড*র হুরহুর করে উবে গেল। এর মানে ধূসর ভাই জ্ব*লছেন? পিউয়ের ভেতরটা আনন্দে নেঁচে ওঠে। স্ফূর্ত ভাবটা ধামাচা*পা দিয়ে নিষ্পাপ কণ্ঠে বলল,
” কেন ধূসর ভাই? ‘
ধূসর হাত ধরে রেখেই এগিয়ে আসে৷ বুক মিশে যায় তার পিঠের সাথে। শিরশিরে অনুভূতিতে গাঁট হয় পিউ। সমস্ত শরীরে অনুভূতিরা আন্দোলন চালায়। ধূসরের অতুষ্ণ শ্বাস কাঁধে পরে। ধূসর ক*ঠিন অথচ শান্ত কণ্ঠে বলল,
” একটা কথা ভালো করে শুনে নে পিউ,বিয়েতে যাবি, মজা করবি। এর বেশি লাফালে তোর পা ভে*ঙে দেব আমি। তুই আমায় চিনিস না।”

হুম*কি দিল ধূসর। অথচ পিউয়ের মনে উড়ে গেল শত শত রঙীন প্রজাপতি। সে ঠোঁট চে*পে হাসল। অবুঝের ভাণ করে বলল,
” আমি আবার কী করলাম?”
ধূসর জবাব দেয়না। ঝাড়া মে*রে হাতটা ছেড়ে দেয়।
ঘুরে এসে বিছানায় বসে। ফোনের লক আগেভাগে পালটায়। পিউ স্পষ্ট দেখতে পেয়েই মুখ কালো করে। কী এমন আছে ওই ফোনে? সে প্যাটার্ন জেনেছে বলে পাল্টে ফেলতে হলো?
ধূসর বলল,
” যা এখন। আর ভুলেও আমার যেন ধরতে না দেখি।”
পিউ কথাখানা ভেতরে দমিয়ে রাখতে পারেনা। মুখ ফস্কে বলে ফেলল,
” আপনার ফোনে কী আছে ধূসর ভাই? যে আমি ধরলে….. ”
ধূসর তাকালেই পিউ থেমে যায়। ফের চোখ নামায়। ধূসর কিছুক্ষন চেয়েই থেকে সুস্থির স্বরে জানাল,
‘ এমন কিছু,যা তোর দেখা বারন।”
পিউয়ের অন্তঃস্থলের আশপাশ হুহু করে আমাবস্যা ধেঁয়ে গেলো। মাথায় নাড়া দিলো কিছু বি*শ্রী,বিদঘু*টে চিন্তা৷ প্রথমেই ভাবল, ‘ তার মানে আমিই সঠিক?’
ধূসর ভাইয়ের ফোনে নিশ্চয়ই এমন কিছু আছে। নিশ্চয়ই কী,আছেইতো। হয়ত মারিয়ার সঙ্গেই কোনও কিছু। বা অন্য কোনও মেয়ে! নাহলে কেন এত লুকোচুরি? আচ্ছা,কী থাকতে পারে? এমন কিছু যা সে সহ্য করতে পারবেনা?

” রাত হয়েছে,ঘুমাতে যা।”
লহু কণ্ঠে পিউ নড়ে ওঠে। ভাবনা কে*টে যায়। পণ করে,সে দেখেই ছাড়বে ধূসরের ফোনের লুকোনো জিনিস। আজকের মত হাল ছাড়ল তাই। কক্ষের জন্যে পা বাড়াল,হঠাৎ কী ভেবে থামল দরজায়। ঘুরে তাকাতেই দেখল ধূসর এদিকেই চেয়ে। আজ আর দৃষ্টি সরালোনা। পিউ ভণিতা ছাড়াই বলল,
‘ একটা কথা বলব?’
‘ হু।’
পিউ মিটিমিটি হেসে ওঠে হঠাৎ। ধূসর নেত্র সরু করে। পিউ দুপাশে দুলতে দুলতে বলল,
‘ বর্ষা আপুর কাজিন রোহান ভাইয়া অনেক কিউট জানেন? রবিনের চেয়েও বেশি।’
ধূসর হতভম্ব হয়। বিস্ফো*রিত চোখে তাকায়। কিছু বলতে নিলেই পিউ হুটোপুটি করে দৌড়ে পা*লায়। ধূসর সেদিক চেয়ে শ্বাস ফেলে। বুঝতে অসুবিধে হয়না,মেয়েটা তাকে রাগাতে ইচ্ছে করে বলল এমন। ধূসর সূক্ষ্ণ হাসে। তার আন্দাজহীন পিউ,আদৌ জানে? তার ধৈর্যের বাঁধ কত মজবুত? জানলে এমন বোঁকা বোঁকা মজা করত না নিশ্চয়ই।
_______

পুষ্পর কপাল বেঁয়ে দরদর করে ঘাম পরছে। মিনা বেগম লোচন কুঁচকে মেয়েকে দেখছেন। কিছুক্ষন মনোযোগ দিয়ে দেখে সন্দেহী কন্ঠে বললেন,
” কার সাথে কথা বলছিলি?”
পুষ্প আমতা-আমতা করে বলল,
” কার সাথে বলব? ”
” সর সামনে থেকে।”
বিনাবাক্যে সরে দাঁড়াল সে৷ মিনা বেগম দ্রুত পায়ে ভেতরে ঢুকলেন। আশেপাশে তাকালেন৷ পুষ্প পেছন পেছন দোয়া দুরুদ পড়ছে৷ তিনি তাকানো মাত্রই সোজা হয়ে যাচ্ছে চটপট। মিনা বেগম বারান্দায় গেলেন,উঁকি দিলেন। সেখান থেকে নিচ অবধি দেখে ফিরে এলেন কামড়ায়। হঠাৎ চোখ পড়ল টেবিলের ওপর। ফোনে ভিডিও চলছে। ভ্রুঁ গুটিয়ে এগোলেন সেদিকে। ফোনটা হাতে তুললেন। ওমনি ভ্রু শিথিল হয়। ঠোঁট গোল করে বললেন,
” ও নাটক দেখছিলি?”
পেছন থেকে পুষ্প জবাব দিল,
” হ্যাঁ, কেন? তুমি কী ভেবেছিলে? আমি ঘরে কাউকে এনেছি?”
মিনা বেগম থতমত খেলেন। প্রসঙ্গ লোকাতে ধম*ক দিয়ে বললেন,
” বেশি বুঝিস কেন? একবারও বলেছি আমি?”
” বলোনি। কিন্তু উঁকিঝুঁকি তো ঠিকই দিলে। সাথে প্রমাণ করে দিলে আমার প্রতি তোমার বিশ্বাসের ছিটেফোঁটা ও নেই। ‘
পুষ্প দুঃ*খী দুঃ*খী মুখ করল। যেন ক*ষ্ট পেয়েছে ভীষণ। মিনা বেগমের মায়া হয়। নরম স্বরে মেয়েকে বোঝাতে গেলেন
” না মা আমি তো শুধু….”
পুষ্প থামিয়ে দিয়ে বলল,
” কিচ্ছু বলতে হবেনা আম্মু। আমি সব বুঝি। তুমি আমাকে সত্যিই বিশ্বাস করোনা। বাইরে থেকে কী না কী শুনে এভাবে চেক করছো! এক কাজ করো,সবই যখন দেখলে খাটের নীচটা বাকী রাখবে কেন? তাও দেখো। দেখে নাও আমি ওখানে কাউকে লুকিয়ে রেখেছি কী না!’

ইকবালের চোখ কপালে উঠল। মনে মনে হাঁ -হু*তাশ করে বলল,
” এভাবে বলিস না রে, বলিস না। সত্যি যদি খাটের নিচে উঁকি দেয়, আমিও শেষ, তুইও শেষ! ‘

” রা*গ করছিস কেন? মেয়ে বড় হলে মায়েদের একটু আধটু চিন্তা হয় । এখন বুঝবিনা। আগে মা হ, একটা মেয়ে হোক, তারপর বুঝবি। নয় মাস পেটে রেখেছি,দুহাতে মানুষ করেছি, কতরাত ঘুমোতে পারিনি, সেসব তো দেখলিনা। সামান্য কী করলাম তাই জন্যে এভাবে বলছিস পুষ্প?”
মিনা বেগম ফ্যাঁচফ্যাঁচ করে কেঁ*দে আঁচলে নাক চাপতেই পুষ্প দীর্ঘশ্বাস ফেলল। মা একটু বেশিই ইমোশোনাল। কাঁ*দতে দেরি, চোখ থেকে পানি পরতে দেরি নেই।
” আহা মা,কী বললাম এমন? কাঁদছ কেন? আচ্ছা স্যরি! ভুল হয়েছে আমার। ”
মিনা বেগম শান্ত হলেন। চোখ মুছে বললেন
‘ ঠিক আছে। শুয়ে পর,রাত জেগে এসব নাটক -ফাটক দেখার দরকার নেই। শরীর খা*রাপ করবে।’
পুষ্প মাথা দোলায়,
‘ আচ্ছা।’ ‘
মিনা বেগম বেরিয়ে গেলেন। পুষ্প এক লাফে গিয়ে দরজা আটকাল। হাঁপ ছেড়ে বাঁচার মত শ্বাস নিলো। তৎক্ষনাৎ খাটের তলা থেকে বেরিয়ে এলো ইকবাল। নিজেও বুকে হাত দিয়ে শ্বাস ঝেড়ে বলল,
” থ্যাংক্স গড। বাঁচিয়ে দিলে আজ।’
পুষ্প ব্যস্ত কণ্ঠে বলল,
” আর এক মুহুর্ত এখানে থেকোনা,এক্ষুনি যাও ইকবাল। ভবিষ্যতে ভুল করেও এভাবে আমার রুমে এসোনা কিন্তু । ”
ইকবাল ঘোর বিরোধিতা জানিয়ে বলল,
” সেই ভরসা দিতে পারছিনা। ওটা নির্ভর করছে তোমার ওপর। ”
ইঙ্গিত বুঝে পুষ্প অসহায় নেত্রে তাকাল। বলল,
‘ এবার যাও প্লিজ?’
” যাচ্ছি বাবাহ,কেমন করছে দেখো। এত ক*ষ্ট করে এলাম পাত্তাই দিলোনা আমায়।’
” হ্যাঁ, আজ ধরা পরলে পাত্তা ছুটে যেত।’
‘ আচ্ছা, কাল তো চলে যাচ্ছো। দেখা কবে হবে তাহলে? আমি কী ওখানে যাব একবার? বা ধূসরকে বলব আমাকেও সাথে নিতে?’
পুষ্প দুদিকে ঘনঘন মাথা নাড়িয়ে বলল
” না না পাগল না কী? ভাইয়া সন্দেহ করবে৷ মোটেতো চারটেদিন। একটু ধৈর্য ধরে থাকো, দেখবে দেখতে দেখতে চলে গেছে। ‘
” কাল একবার দেখা করা যায়না?’
ইকবালের ব্যকুল স্বরে পুষ্পর খা*রাপ লাগল। একটু ভেবে বলল
‘ যাবে। কাল সকালে মেজো চাচ্চু আমাদের শপিংয়ে নিয়ে যাবেন। ওখানে এসো? ‘
ইকবাল সন্তুষ্ট হয়ে মাথা নাড়ল।
তারপর যেমন ভাবে উঠেছিল তেমন ভাবেই নেমে গেল। পুষ্প আর সেখানে দাঁড়ায়না। ইকবালের পা মাটিতে ঠেকতেই ঝটপট জানলা আটকায়।

পিউ ব্যালকোনিতে দাঁড়িয়ে। গায়ে পাতলা চাদর,হাতে ফোন। সম্পূর্ন মনোনিবেশ দিয়ে,ধূসরের ফেসবুক আইডি ঘাটছে। কোন ছবিতে, কোন মেয়ে, কী রিয়্যাক্ট দিয়েছে, কী কমেন্ট করেছে সব খুঁটেখুঁটে দেখছে। লাভ রিয়াক্ট পেলে সেই মেয়ের আইডিতেও চলে যাচ্ছে সাথে সাথে। ভালো করে দেখছে মেয়েটা সুন্দর কী না। তবে একটা বিষয় অদ্ভূত,মারিয়া নামের কোনো চিহ্নওই নেই ধূসরের আইডিতে। তবে কী মেয়েটা অন্য কোনও নাম দিয়ে আইডি চালাচ্ছে? কাল এলে জেনে নেবে বরং। ও, কাল তো হবেনা। কাল তো ওরা বিয়ে বাড়ি যাবে। আচ্ছা,ফিরে এসে জানবে। এই কদিন ধূসর তো তার কাছাকাছিই থাকবে। উল্টোপাল্টা হওয়ার সুযোগই নেই। অবশ্য,সে রেখেছে না কী সুযোগ? এমন চাল চেলেছে,ধূসর ভাই না গিয়ে পারবেন না।
একই সাথে পিউ আরেকটা বিষয়ে সুনিশ্চিত হলো, ‘ ধূসরের ভেতর তাকে নিয়ে নির্ঘাত অনুভূতি রয়েছে। নাহলে কেন ফোনে ওসব বলতে শুনেই যেতে রাজী হবে? কেনই বা আজকের মত এভাবে সাবধা*ন করবে? নিশ্চয়ই তার পাশে কোনও ছেলে দেখলে ধূসরের রা*গ হয়? হিং*সে লাগে? আর এই জেলাসনেস টা কী ভালোবাসার নয়? ‘
পিউ নিজেকেই শুধাল। উত্তর আসে একবার হ্যাঁ, একবার না। ভালোবাসলে মানুষটা তাকে এত এড়িয়ে চলে কেন? কেন নিজেকে এত লুকিয়ে রাখে? তার কী কাছে আসতে মন চায়না? ইচ্ছে করেনা ওকে একটু ছুঁয়ে দেখতে? একবার চোখের দিক চেয়ে বলতে ‘ ভালোবাসি।’ তারতো ইচ্ছে হয়। খুব ইচ্ছে।
কী করে নিশ্চিত হবে,ধূসর ভাইয়ের মনে কে আছে? রবিনকে নিয়ে রা*গিয়েও লাভ হলোনা। ধূসরটা কী না কী নিজে নিজে বুঝে নিলো। পিউয়ের সেদিনের কথা মনে পড়ে। ধূসর তার চোখ দেখে বলেছিল ‘ তোর মিথ্যা বলার যোগ্যতা নেই।’
আচ্ছা,ধূসর ভাই কি ওর চোখ দেখে মনের কথা বুঝে ফেলেছেন?’
তবে তো ভালোবাসাটাও বোঝারা কথা। না কী বুঝেও ভাণ করেন? যে জেগে থাকে তাকে কী করে ঘুম থেকে তোলা যায়? পিউ হ*তাশ হয়ে গ্রিলে মাথা ঠেকিয়ে সামনে তাকায়।আচমকা বাগান থেকে কাউকে দৌড়ে যেতে দেখে সতর্ক হলো। চোখ ডলে ডলে ভালো করে দেখার চেষ্টা করল। ওর দেখার মধ্যেই লোকটা দেয়াল টপকে বেরিয়ে যায়। পিউয়ের নেত্র আকাশ ছোঁয়। চোর নাকী? ব্যাপারটা বুঝতে বুঝতেই চোর পালিয়েছে। পিউ কাউকে জানানোর জন্যে ঘর থেকে দৌড়ে বের হতে গিয়েও থেমে গেল৷ মনে হলো গায়ের শার্ট টা ভীষণ পরিচিত লাগছে। হঠাৎ খেয়াল পরে,এই শার্ট কদিন আগে ইকবাল ভাইয়ের পড়নে দেখেছিল না?
___

সকাল হলো। পুষ্প পিউ একদম সেজে-গুজে পরিপাটি। প্রথমে মল,তারপর গ্রামের বাড়ি। কী আনন্দ! দুজন একযোগে সিড়ি বেঁয়ে হৈহৈ করে নামল। এই উল্লাসে পিউ ভুলে গেল রাতের কথা। আজ আমজাদ আর আনিস ব্যাতীত বাকীরা বাড়িতেই। অফিসের কিছু প্রোজেক্ট গোছানোর জন্যে তাকে জরুরি যেতে হলো। ধূসর, আফতাব যেতে চাইলেও মানা করলেন। সামান্য কাজ,অল্প সময়, ওদের যেয়ে লাভ নেই।

আফতাব সিকদার সোফায় বসে চা খাচ্ছিলেন। পিউ এসেই বলল,
” আমরা রেডি,চলো।”
ওনার সাথে সাথে আরো ক জোড়া চোখ নি*ক্ষেপ হয় তার দিকে। তন্মধ্যে একটা চাউনী পিউকে এলোমেলো করে দেয়। যতটা স্বতঃস্ফূর্ত হয়ে এলো ততটাই গুটিয়ে যায় ধূসরকে দেখে। ধূসর একবার তাকিয়ে দৃষ্টি ফেরায়,ফোনের দিকে মন দেয়। আফতাব সিকদার দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন,
” আমার শরীরটা কেমন লাগছে যেন। তোমাদের ধূসর নিয়ে যাবে মা।”

পুষ্পর চোয়াল ঝুলে যায়। অন্যদিকে পিউয়ের মুখমন্ডল সোনালী রোদ্দুরের ন্যায় ঝলমলায়। ধূসর ভাই যাবেন মানে,আরো কিছুক্ষন,পাশাপাশি, কাছাকাছি।
পুষ্পর গলা ভ*য়ে শুকিয়ে গেল। ওখানে ইকবাল আসার কথা, যদি ভাইয়াও যায়,তবে তো……!
ধূসর বিনাবাক্যে উঠে দাঁড়ায়। যেন আগে থেকেই জানত। এগোতে নিলেই আফতাব নরম স্বরে বললেন,
” বাবার গাড়িটা নিয়ে যেও৷ এবার অন্তত ইগোটা থামাও। বাবার জিনিস তো তোমারও। ‘

পিউ ভাবল বরাবরের মত ধূসর নাকচ করবে। বাকীরাও তাই ভেবেছে। অথচ ধূসর ছোট করে বলে,
” ঠিক আছে। ”
পিউ হাঁপ ছেড়ে বাঁচে৷ আজও ধূসর যাবে মানে,সি এন জি কনফার্ম। ওইদিনের মতো ভূতের ন্যায় ইকবালের আসার সুযোগ নেই। কিন্তু একটা বিষয় তাকে ভীষণ ভাবায়,যদি ধূসর ভাই, বাইকে কাউকে নাই নিতে চাইবেন,তবে তাকে কেন তুলেছিল সেদিন? ধূসর সামনে সামনে হাঁটা ধরে। পিউ পেছনে কদম ফেলতে ফেলতে চেয়ে থাকে ওর দিকে। ধূসরের চওড়া পিঠ দেখতে দেখতে ভাবে,
” এই লোকটার মধ্যে এক আকাশ রহস্য। কবে সেসব উদঘাটন করতে পারব আমি? কবে?”

_____

পুষ্প ঝটপট ইকবালকে মেসেজ করে দেয়,যেন মলের ধারকাছেও না ঘেঁষে। ইকবাল এলোওনা তাই। অথচ পিউ ছিল মা*রাত্মক হাসিখুশি। ধূসর সাথে আছে যে! পিউ -পুষ্প দুজনেই শাড়ি কিনলো। ভালো মানের জামদানি। পুষ্পরটা গাঢ় গোলাপি। পিউ ভেবেছিল শাড়িটা অন্তত ধূসর ভাই পছন্দ করে দেবেন। সিনেমার হিরোদের মতন দূরে দাঁড়িয়ে চোখ ইশারা করে করে বোঝাবেন কোনটা ভালো লাগছে, কোনটায় না। এবারেও সেই আশায় বালি ঢাললো সে। রসক*ষহীন ধূসরটা কেনাকা*টার সময় সেখানেই রইলোনা। উলটে চলে গেল বাইরে। সাথে রাশভারি স্বরে বলে গেল ‘ এক ঘন্টার মধ্যে শেষ করবি। এক মিনিট দেরি হলে দুটোকেই এখানে রেখে যাব।’
পুষ্প ফটাফট যা সামনে পেল তাই নিল। পিউ বেছে বেছে নীল রঙয়ের শাড়ি কিনেছে। ওইযে, তার ধূসর ভাইয়ের পাঞ্জাবিটাও নীল। সবশেষে, যখন বের হবে পিউ হঠাৎই দাঁড়িয়ে যায়। পুষ্পর দিক চেয়ে চোখ বড় করে বলে,
” আমার তো কিছু অর্নামেন্টস কিনতে হবে আপু। কী করব?”
পুষ্প হাতঘড়ি দেখে বলল,
” এক ঘন্টাতো শেষ হয়নি। আমারও দরকার। চল যাই।”
পিউ মাথা দোলায়। কাপড়ের সাইড ফেলে চলে যায় কসমেটিকস কর্নারে। দুজন মস্ত বড় একটা দোকানে ঢূকল। প্রয়োজনীয় সব কিছু কিনল,টাকা দিয়ে ফিরে এলো। ধূসর গাড়ি ঘেঁষে টানটান হয়ে দাঁড়িয়ে। পিউ আসতে আসতে মুগ্ধতা সমেত দেখতে থাকে।
পরপর বুক ফুলিয়ে শ্বাস ফেলে। মানুষটাকে বেশিক্ষন চোখের সামনে দেখলেই পাগল পাগল লাগে। দুজন কাছে এসে দাঁড়াল। ধূসর পুষ্পর থেকে চোখ সরিয়ে পিউয়ের দিক তাকাল। নাক আর ঠোঁটের মাঝখানের জায়গাটুকুন ঘামে চিকচিক করছে। এই শীতেও ঘামছে মেয়েটা। ধূসর নির্দ্বিধায় বৃদ্ধাঙ্গুল দিয়ে ঘামটুকু মুছিয়ে দেয়। ছোট করে বলে,
” চল।”

পিউ লজ্জ্বা পেয়ে পুষ্পর দিক তাকায়। অথচ সে নিরুদ্বেগ। ব্যাপারটা তার মধ্যে বিশেষ প্রভাবই ফেলেনি যেন।

সারা রাস্তায় ধূসর কথা বলেনি। টুকটাক ফোনেই যা বলার বলেছে। এদিকে পুষ্প- পিউ তারাও চুপচাপ। পুষ্পর মন ভালো নেই। যাওয়ার আগে ইকবালের সাথে দেখা হলোনা বলে। পিউ জানলার দিক চেয়ে চেয়ে গুনগুন করে গান গাইছে। মাঝে মাঝে দেখছে ধূসর কে। সে মানুষটাকে ভ*য় পেলেও ভালোবাসা দ্বিগুন। ধূসর তার ছোট্ট জীবনের বসন্ত। আর পুষ্পর কাছে ধূসর বাঘ৷ একটু বেশিই সমঝে চলে ওকে। মাঝে মাঝে সে নিজেই ভেবে কূল পায়না,কীভাবে ধূসরের চোখ ফাঁকি দিয়ে এত বছর প্রেম করে বেড়াল? যেদিন ধরা পরবে সেদিন যে কী কুরুক্ষেত্র হবে!

নিস্তব্ধ গাড়ির ভেতর পিউ আচমকা চেঁ*চিয়ে ওঠে৷ ধূসর ত্বরিত বেগে পেছনে তাকায়। পুষ্প ভ্রুঁ কুঁচকে শুধাল,
‘ কী হয়েছে?”
পিউ মাথায় হাত দিয়ে বলল,
” আমি চুড়ি কিনতে ভুলে গেছি।’
পুষ্প ধূসরের পানে তাকায়। ধূসর বিরক্তিতে কপাল গুঁছিয়ে সামনে ফেরে। সে নিজেও বিরক্ত হয়। উত্তর না দিয়ে চুপ করে থাকে৷ পিউ কোমল স্বরে অনুরোধ করল,
” ধূসর ভাই,গাড়িটা একটু ঘোরানো যায়না?”
ধূসর নিরুত্তর। পিউ বুঝে গেল জবাব দেয়নি,মানে শুনবেওনা। সে নিজের ভুলো মনের প্রতি অতিষ্ঠতায় ঠোঁট ফুলিয়ে শ্বাস নেয়। তার চুড়ি গুলো সব পুরোনো। এখন এক ডজন না হলেই হচ্ছে না। পরমুহূর্তে ভাবল, আচ্ছা থাক,কিছু একটা দিয়ে ম্যানেজ করে নেবে। একটা বিয়েতে চুড়ি না পরলে কিছু হয়না।
_______

বিকেলে পুরো সিকদার বাড়ি রওনা হয় মিনা বেগমের বাপের বাড়ির উদ্দেশ্যে। এত জন মানুষ মিলে হৈ-হুল্লোড় করে গাড়িতে ওঠে । পিউ আগেভাগে রুবায়দা বেগমের পাশে এসে বসেছে। সে কিছুতেই মায়ের সাথে অন্য গাড়িতে যাবেনা। সারা রাস্তা ধম*কে ধা*মকে নেবে। যুক্তি এটা দেখালেও আসল কথা হলো এই গাড়ির ড্রাইভার ধূসর। আর ধূসর যেখানে,সে নিঃসন্দেহে সেখানে। সাদিফ এসে জানলায় উঁকি দিল। পিউকে শুধাল,
” ভেতরে জায়গা আছে? ”
পিউ সামনে পেছনে দেখে বলল, ” একটা সিট।”
সাদিফ গলা উঁচিয়ে দেখে নেয়। একদম পেছেনের সিট খালি। যেখানে বসার ইচ্ছে, সেখানকার চান্স আদৌ নেই। জবা বেগম ছেলেকে ওখানে দাঁড়ানো দেখেই পাশে বসা পুষ্পকে বললেন,
” তুই বরং ওই গাড়িতে যা পুষ্প। ”
পুষ্প বুঝতে না পেরে বলল,
” কেন মেজো মা?”
“যা না ভালো হবে, পিউও ওখানে আছে। তুইও যা।”
পুষ্প কিছুই বুঝলোনা। তবুও কথা না বাড়িয়ে নেমে আসে। মুরুব্বি মানুষ বলেছে যখন! পিউদের গাড়ির ফাঁকা সিটটাতে উঠে যায়। সাদিফ মাথা চুল্কাল কোথায় বসবে তা নিয়ে। একটু পর ধূসর এসে ড্রাইভিং- সিটে বসে। গাড়ি স্টার্ট দিতে গিয়ে সাদিফের উশখুশানো দেখে বলে,
” কী হয়েছে?”
” না,কিছুনা। আসলে এই গাড়িতে যেতে চাইছিলাম।”
ধূসর একটু চুপ থেকে পাশের সিট ইশারা করল,
“এখানে এসে বোস।
সাদিফ সচেতন কণ্ঠে শুধাল,
” মেজো চাচ্চু বসবেন শুনলাম।”
রুবায়দা বেগম বললেন,
” সে অন্য গাড়িতে বসবে না হয়। তুই বোস তো। ”
সাদিফ উজ্জ্বল পায়ে, গাড়ির দরজা খুলে বসে। ধূসর ভিউ মিরর ঘুরিয়ে দেয়। যেখানে স্পষ্ট ফুঁটে থাকে পিউয়ের বিম্ব। সাদিফকে উঠতে দেখে জবা বেগমের ঠোঁটে হাসি ফুটল। ছেলেমেয়ে দুটোকে কাছাকাছি থাকতে দেয়া উচিত এখন। ওদের মধ্যে যত বন্ডিং ভালো হবে,তত সহজ হবে সম্পর্কটা৷ সাথে সংসারটাও সুখের হবে।

সাদিফ শান্ত,তবে প্রফুল্ল। যাকে ভালো লাগে তার সাথে জমিয়ে ফেলে মুহুর্তে। আর যে চক্ষুশূল তার সাথে জবান বন্ধ। পুরো গাড়িটাতে মেতে ছিল তারা। সে, পিউ, সুমনা বেগম,রিক্ত, আর রুবায়দা বেগম। পুষ্প চ্যাটিংএ ভীষণ ব্যস্ত। লাইনে ইকবাল। মন খারা*প তারও। একটাবার দেখা হলোনা বিধায়।
ধূসর মনোযোগ দিয়ে ড্রাইভ করছিল। মাঝেমধ্যে দেখছিল মিররের দিকে।
একটা সময় রাস্তা ফুরায়। সামনের গাড়িগুলোকে ফলো করতে করতে এসে একটা বাড়ির সামনে থামে ওদের গাড়ি।

মিনা বেগমের পিতা শাহজালাল মজুমদার গ্রামের চেয়্যারম্যান ছিলেন। সে-ই আমলেই গড়ে গেলেন,এই বিশাল, বড় তিনতলা ভবন। এখনও তার যৌলুশ ধরে রেখেছে ছেলেরা। যত্ন- আত্তি একটা ইটেরও কম পরেনা। বাবার শেষ স্মৃতি। এখনও আগের মতোই চকচক করছে দেয়াল গুলো। মিনা বেগমরাও চার ভাই-বোন। তবে দুই ভাই, দুই বোন। তিনিই বড়, সবার মধ্যে। এরপর ভাই রাশিদ, আর মুত্তালিব মজুমদার মিলেমিশে থাকেন এখানে। বর্ষা, সাওন রাশিদের দুই সন্তান। আর মুত্তালিবের দুই মেয়ে, এক মেয়ে। বড় মেয়েটা এস এস সি দিয়েছে,কলেজে ভর্তি হবে এবার। আর ছোটটা পড়ছে সেভেনে।
একমাত্র পিউরা ছাড়া বাকী সবাই বাড়িটায় প্রথম এলো। তাই রাশিদদের পুরো পরিবার মিলে লাইন ধরে দাঁড়িয়ে ছিলেন দরজায়। মিনা বেগম চার বছর আসেননি বাপের বাড়ি। মাঝখানে একবার বর্ষা আর সাওনকে নিয়ে ওদের মা ময়মুনা খাতুন ঘুরে এসেছিলেন। এতদিন পর বাবার বাড়ি এসে চোখ ভিজে ওঠে তার। আবেগে আপ্লুত হন। ভাইকে ধরে কেঁ*দে ফেলেন। রাশিদ আর তিনি পিঠাপিঠি। রাশিদ বোনের মাথায় হাত বুলিয়ে বলেন ” বোঁকা কাঁদছিস কেন? এই যে এলি এক মাসে যেতে দেব না।”
মিনা বেগম হাসলেন। এর মধ্যে ধূসরদের গাড়ি ভেড়ে। সবার শেষে আসায় মনোযোগ সেদিকে ঘুরল সবার। পিউ -পুষ্প দ্রুত নেমেই
মামা- মামির কাছে ছুটে যায়। পিউ গিয়েই জড়িয়ে ধরে মুত্তালিব কে। ছোট মামা তার সবচেয়ে প্রিয়। মুত্তালিব চুঁমু খেলেন ওর কপালে। জিজ্ঞেস করলেন,
” কেমন আছিস?”
পিউ চঞ্চল কণ্ঠে জবাব দেয়
” খুব ভালো মামা।”
” এভাবে ভুলে গেলি পিউ? কত গুলো দিন আসিস না তোরা। আমরা বুঝি পর হয়ে গেছি?”
” ওমন করে বলছো কেন মামী? আমরা বুঝি তোমাদের ভালোবাসিনা?”
পুষ্পর কথায় বর্ষা বলল,
” তার নমুনা তো এই। বিয়ে না হলে আজও আসতিনা।”
মুত্তালিবের দুই মেয়ে শান্তা আর সুপ্তি। একটু পরপর ফিসফিস করছে নিজেদের মধ্যে। সাদিফ গাড়ির পেছনে গিয়ে ফোন উঁচুতে ধরে নেটওয়ার্ক খুঁজছে। গ্রামে আসতে না আসতেই সিম ডাউন। কোনও মানে হয়?
রাশিদ মজুমদারের হঠাৎ ধূসরের দিকে চোখ পড়তেই বললেন,
” ওটা ধূসর না মিনা?”
নাম শুনে ধূসর ফোন পকেটে ভরে তাকাল। হাত উঁচিয়ে সালাম দিলো। মিনা বেগম চওড়া হেসে বলেন,
” হ্যাঁ ভাইজান। আমার ছেলে। ”
পিউ মনে মনে আপত্তি করে বলল,
” উহু,তোমার জামাই।”
রুবায়দা বেগমের বুক ভরে আসে। তিনি হেসে আফতাবের দিক তাকালেন। ছেলেটা তাদের অথচ বড় আপা কোনও দিন ওকে পরের মত দেখেনি। সবার সাথে কখনও বলেওনি এটা আমার জায়ের ছেলে। এতটাও ভালোবাসা যায়? আর এইজন্যেই হয়ত ধূসর যেকোনো ছোট -বড় প্রয়োজনেও তাকে না ডেকে ওর বড় মাকেই ডাকে। রাশিদ হাত লম্বা করে
ডাকলেন ‘ এসো বাবা।’
ধূসর এগিয়ে যায়। রাশিদ ওর দুই কাঁধ ধরে আপাদমস্তক দেখে বলেন,
‘ কত্ত বড় হয়ে গেছো তুমি! সেই বিদেশ যাওয়ার আগে দেখেছি তারপর আর যাওয়াই হয়নি ও বাড়িতে। তুমিতো এইচ- এস -সিতে বোর্ড স্যান্ড করেছিলে তাইনা?”
ধূসর কিছু বলার আগেই,
পিউ লাফিয়ে উঠে বলল,
” হ্যাঁ। ধূসর ভাই খুব ভালো স্টুডেন্ট। ওনার মাথাটা নিউটনের মতো। শুধু ঝাঁকড়া চুল নেই। ”
বোঁকা বোঁকা কথাটায় সবাই হেসে ফেলল।
রাশিদ মজুমদার ভ্রুঁ কুঁচকে বললেন,
” তুমি কেন এসেছো?”
পিউয়ের হাসি মুছে গেল। অবাক হয়ে বলল ‘ কেন মামা, আপুর বিয়ে, আমি আসব না?”
” তোমার না পরীক্ষা? এই সময়ে বিয়েটিয়ে গোল্লায় গেলেও বা! পড়াশুনা তো আগে তাইনা? ”
পিউ চোর ধরার পরার মতন চেহারা বানাল। এই কথাটা এখানেই তুলতে হলো?
সে গত দুদিন যাবত কী সাংঘা*তিক ভ*য়ে ছিল এ নিয়ে। পরীক্ষার ছুঁতোতে সবাই তাকে রেখে না গেলে হয়। আর আসার সাথে সাথেই বড় মামা বলে দিলেন? ময়মুনা খাতুন ওকে কাছে টেনে বললেন,
” আহা এভাবে বলছো কেন? ছোট মানুষ। সবাই আসবে ও বুঝি একা বসে থাকবে বাড়িতে?”

পিউ নিভু কণ্ঠে বলল,
” আমার সব পড়া শেষ মামা। শুধু রিভিশন দিলেই হবে।”
মুত্তালিব বললেন ” হ্যাঁ জানিতো,আমাদের পিউও ভালো ছাত্রী। আচ্ছা,সবাই বাইরে দাঁড়িয়ে থাকবে না কী? ভেতরে চলুন। ”
আমজাদ সিকদার আসেননি। আনিস আর তিনি একেবারে অফিস থেকে ফিরবেন। আগেই ফোন করে রাশিদকে জানিয়েছিলেন আমজাদ। সবাই একে একে ভেতরে গেলেও, রাশিদ দাঁড়িয়ে রইলেন। মিনা বেগম জিজ্ঞেস করলেন,
‘ ভেতরে যাবিনা? অপেক্ষা করছিস কারো জন্যে?”
” হু? হ্যাঁ ওই রোহান রা আসছে তো। ওরা আবার এখানে কোনওদিন আসেনি। চিনবে কী না কে জানে!”

ধূসর যেতে যেতে ‘রোহান’ নামটা শুনে থমকাল। ফিরে তাকাল দরজার দিকে। পরপর তীক্ষ্ণ চাউনিতে দেখল বর্ষার সঙ্গে কথা বলতে বলতে যাওয়া পিউকে। এই রোহানের কথাই শুনেছিল না সেদিন? যাকে পিউয়ের এত্ত পছন্দ, তাকে একবার দেখতে হচ্ছেতো।

সবাই ওপরে গেলেও ধূসর বসে পরল সোফায়। শান্তা দেখে শুধাল,
” ওপরে যাবেন না?”
ধূসর সংক্ষেপে বলল,
” পরে যাব।”
শান্তা আর কিছু বলেনা। বাকীদের ঘর দেখানোর জন্যে তাদের সঙ্গে গেল।
পিউ সিড়ি বেয়ে উঠতে উঠতে পেছন ঘুরে তাকাচ্ছিল। ধূসরের বিষয়টা তার বুঝতে বাকী নেই। হাসল সে, দুষ্টু হাসি। মনে মনে আওড়াল,
” রোহান কে দেখতে চাচ্ছেন ধূসর ভাই? বেশ,দেখুন। তবে খেয়াল রাখবেন,যেন চমকে টমকে আবার চেয়ার উলটে পরে না যান ।”

চলবে,

সেদিন বলেছিলাম,প্র‍্যাকটিস করছি একটা হস্পিটালে। সকাল নয়টায় যাচ্ছি,ফিরছি রাত নয়টায়। এখন আপনারাই বলুনতো, নিয়মিত গল্প কী করে দেব? তাও যতক্ষন মোবাইল হাতে নেই গল্প একটু একটু লিখে শেষ করি,তারপর প্রুফ রিডিং দিয়ে পোস্ট দেই। তিন দিন হোক, বা চারদিন এরকম অবস্থায় দিতে পারছি আমার আল্লাহর কাছে এটাই শুকরিয়া।

এবার গল্প নিয়ে বলি, ধূসরকে রহস্য ময় লাগছে না? জানি লাগছে। তবে সব রহস্য, সব প্রশ্ন, সব জট, খুলব আস্তে আস্তে। আমারতো তাড়াহুড়ো নেই। বেশ লাগছে৷ আপনারাও আনন্দ নিয়ে টেনশন ফ্রি হয়ে পড়ুন। আর রেসপন্স এত কম কেন? রিয়্যাক্ট নয়শ উঠতে কষ্ট হয়ে যায়। এরকম করলে কী করে চলবে? বেশি বেশি লাইক কমেন্ট করবেন তবেই না শত ব্যস্ততায় গল্প লিখতেও উৎসাহ বাড়বে তাইনা?#এক_সমুদ্র_প্রেম!
লেখনীতে: নুসরাত সুলতানা সেঁজুতি
(১৬)

ধূসরের অপেক্ষা ফুরোচ্ছেনা। আর কতক্ষন বসে থাকবে এভাবে? সে বেজায় বির*ক্ত। ফোন টি*পতে টি*পতে অসহ্য লাগছে এখন। তবুও উঠে রুমে গেল না। আগে ছেলেটাকে দেখবে তারপর যাবে। এমন কোন রাজপুত্র, যাকে পিউয়ের এত্ত পছন্দ! সে আরেকবার চকচকে সাদাটে হাতঘড়িটা দেখে নেয়। কমসে কম বিশ মিনিট ধরে বসে আছে এখানে। তার অপেক্ষার অবসান ঘটাতে রাশিদ মজুমদার ঢুকলেন। সাথে আনিসের বয়সী এক ভদ্রলোক। কথা বলতে বলতে আসছিলেন দুজন। পেছনে রয়েছে আরো কজন। ধূসর গলার আওয়াজ শুনে বিদ্যুৎ বেগে তাকাল। ভাবল এই বুঝি অনাকাঙ্ক্ষিত, প্রত্যাশিত মানুষটি এলো। ওকে বসা দেখেই রাশিদ মজুমদার থেমে গেলেন। বললেন,
” কী ব্যাপার বাবা,তুমি রুমে যাওনি?”
ধূসর উঠে দাঁড়াল।
” কিছু দরকার?”
” না,আসলে পরে যাব ভেবেছিলাম। ”
পেছন থেকে নারীটি শুধালেন,
” ছেলেটি কে দুলাভাই?”
” হু? মিনা আপার মেজো জায়ের ছেলে। ”
ধূসর ওনাকে সালাম দিলো। রাশিদ পরিচিত করালেন,
” উনি হলেন পিউয়ের মামীর ছোট বোন,রূম্পা। আর ও ওর স্বামী মুস্তাফিজ রহমান। ”
ধূসর হেসে লোকটির সাথে করমোর্দন সাড়ল। অথচ তার মন, চোখ দুটোই রইল সদর দরজায়। সে রোহানকে খুঁজছে। ছেলেটা কী আসেনি? রাশেদ ওনাদের কাছে ধূসরের প্রসংশা স্বরুপ নানান কথা বললেন। তাদের হয়েও কিছু কথা ওকেও শোনালেন। বিধিবাম! একটাও ধূসরের মস্তিষ্কে গেল না। সে উদগ্রীব হয়ে বাইরে দেখছে। অনেকক্ষন গেলেও দরজা দিয়ে কেউ ঢুকছেনা,আসছেনা। শেষমেষ অধৈর্য হয়ে পরল ধূসর।
অস্থি*রতায় ভেতরটা টইটম্বুর হলো। কৌতুহল চে*পে রাখতে না পেরে জিজ্ঞেস করেই বসল,
” রোহান আসেনি আঙ্কেল?”
রাশেদ মজুমদার ভ্রুঁ গুঁটিয়ে বললেন,
” তুমি রোহান কে চেনো?”
ধূসর চটপট উত্তর দেয়,
” পিউয়ের কাছে শুনেছিলাম। আসেনি?”
” আমিইত রোহান। এই যে আমি, আমি।”
ছোট্ট বাচ্চা কণ্ঠ শুনে ধূসর চোখ নামায়। রূম্পা বেগমের আঙুল ধরে দাঁড়িয়ে সরল চেহারার স্বাস্থ্যবান ছেলেটা হাত উঁচিয়ে বলল ‘ হাই।’
সাথে ফোঁকলা চারটে দাঁত বের করে হাসল। মাথা দুলিয়ে বলল,
” তুমি আমাকে খুঁজছো, কেন? ক্রিকেট খেলবে?”

ধূসর আকাশ ভে*ঙে ধপ করে মাটিতে পড়ল। হতবাক হয়ে বলল,
” ওর নাম রোহান?”
প্রশ্নটাও বেজে বেজে এলো গলায়। রাশিদ বললেন,
” হ্যাঁ। কেন, তুমি কি ভেবেছো?”
ধূসরের ভাবনাচিন্তা হযবরল হয়ে আসে।
” আপনাদের পরিবারে আর কোনও রোহান নেই? বর্ষার খালাতো ভাই?”
রূম্পা বেগম বললেন,
” আমিইত বর্ষার একমাত্র খালা বাবা। আমার এই একটাই ছেলে। তুমি কি অন্য কাউকে খুঁজছিলে?”
ধূসর আহাম্মক বনে থাকল কিছুক্ষন। রাশিদ ওর কাধে হাত রেখে চিন্তিত কণ্ঠে বললেন,
” কিছু হয়েছে?”
তৎক্ষনাৎ ওপর থেকে খিলখিল হাসি ভেসে আসে। ধূসর চোখ তুলে তাকায়। পিউ হাসিতে নুইয়ে পরছে। পাশে অবোধের মতো দাঁড়িয়ে সুপ্তি। ধূসরের বুঝতে বাকী নেই,পিউ তাকে কী মারাত্মক লেভেলের বোঁকা বানিয়েছে। রাশিদ সহ উপস্থত বাকীদের পিউয়ের হাসিটা মাথার ওপর দিয়ে গেল। তিনি শুধালেন,
” হাসছো কেন মা?”
পিউ চটজলদি স্বাভাবিক হলো। হাসিটা ঠোঁট দিয়ে চে*পে দুদিকে মাথা নেড়ে বোঝাল ‘কিছুনা’। তারপর দ্রুত চলে গেল ভেতরে। ধূসর দাঁত চে*পে চোখ বোজে। মনে মনে কষে একটা থা*প্পড় মারে নিজেকে। তার মত ছেলে কী না একটা হাঁটুর বয়সী মেয়ের থেকে ধোঁ*কা খেল? ছি!

***
পিউ হাসতে হাসতে বিছানায় চিৎ হয়ে শুয়ে পরল। হাঁটু দুটো ভাঁজ হয়ে পেট অবধি উঠে এসেছে। একবার ডান কাত হচ্ছে একবার বামে। সুপ্তি নির্বোধের মত দেখল কিছুক্ষন। কৌতুহলে চোখ পিটপিট করে বলল,
” ও পিউপু,হাসছো কেন তুমি?”
পিউ হাসির চোটে কথা বলতে পারছেনা। পেট -পিঠ ব্যা*থায় আঁটশাঁট। চোখ চিকচিক করছে। সুপ্তি শেষ মেষ বিদ্বিষ্ট হলো। ছোট মানুষ হলেও মেজা*জ উঠল তুঙ্গে। পিউ আপুর এই এক রো*গ,হাসি উঠলে আর থামেনা।
ধ্যাত! বলে সে পা ছু*ড়ে ছু*ড়ে বেরিয়ে যায় বাইরে। পিউ তখনও গড়াগড়ি খেয়ে হাসছে। চেষ্টা করছে,চাইছে, স্বভাবিক হতে। অথচ ধূসরের চেহারাটা মনে পড়লেই পেট চি*রেখু*ড়ে হাসি বের হয়। এখানে তার কী দোষ?

****

গায়ে হলুদের প্যান্ডেল বড় করে সাজানো হয়েছে উঠোনে। গ্রামের বাড়ি যখন, আশেপাশে জায়গা জমির অভাব নেই। কাকভোর থেকেই তার তোরজোড় শুরু। মশলা বাটাবাটির আওয়াজে পিউয়ের ঘুম সুবিধের হলোনা। সবাই মিলে আড্ডা দিয়ে রাত করে ঘুমোলেও, উঠে পরেছে এখন। বর্ষার রুমে ঘুমিয়েছিল ওরা। পিউ,পুষ্প,বর্ষা এক ঘরে,এক বিছানায় । পিউ শোয়া থেকে উঠে বসে। দুহাত মেলা আড়মোড়া ভাঙে। হাই তুলতে তুলতে সামনে তাকাতেই দেখল বর্ষা পায়চারি করছে। হাতে ফোন। ব্যস্তভাবে মেসেজ করছে কাউকে। সে দুষ্টু হেসে বলল,
” সকাল অকাল প্রেমলীলা শুরু হু হু,? ”
বর্ষা কপাল কুঁচকে তাকায়। ভুল শুধরে দেয়ার ভঙিতে বলে,
” মোটেওনা। আমি আমার এক বন্ধুর সঙ্গে কথা বলছি।”
” আরে থাক বর্ষাপু,এসব বলে লাভ নেই। আমি কি ছোট আছি এখনো? আর তোমারই তো জামাই,নিয়ে যাব না আমরা। আমার চয়েস আবার অত বাজে না বুঝলে।”
” চ*ড় খাবি। আমি সত্যিই আমার বন্ধুর সাথে কথা বলছি।”
পিউ সন্দেহী কণ্ঠে বলল ” আসলেই? ছেলে না মেয়ে?
” মেয়ে।”
” এত সিরিয়াস মুড নিয়ে মেয়েরা, মেয়েদের সাথে কথা বলে?”
বর্ষা আনন কয়েক ধাপ কালো করে বলল,
” কী করব বল! ওর সাথে কথা হয়েছিল ও আমার বিয়ে, গায়ে হলুদ সবেতে থাকবে। অথচ এখন বলছে আসবে কাল। রা*গ হবেনা আমার?”

পিউ বিজ্ঞের ন্যায় মাথা দুলিয়ে বলল,
” অবশ্যই! কেন হবেনা? এইটুকু পথ, কাল আসবে কেন,আজ আসলে কী হয়?’
” এইটুকু পথ? ও ঢাকা থেকে আসবে পিউ।”
পিউ ভ্রঁরু উঁচিয়ে বলল,
” ওরে বাবাহ!তাহলে তো অনেক পথ।”

পুষ্প ঘুমঘুম কণ্ঠে বলল ‘ সকাল সকাল তোদের ছেলে-মেয়ে বিয়ে দেয়া বন্ধ কর৷ ঘুমোতে দে আমাকে। এমনিতেই রাতে ঘুমোইনি। ”
বর্ষা বলল,
” সারা রাত চ্যাটিং করবি,আর রাতে ম*রার মত ঘুমাবি।”
ওমনি পিউ সচেতন কণ্ঠে শুধাল,
” সারা রাত কার সাথে চ্যাটিং করেছে আপু?”
পুষ্পর ঘুম ছুটে গেল। চোখ বড় বড় করে তাকাল। দুদিকে মাথা নেড়ে বর্ষাকে ইশারা করল মুখ না খুলতে। পিউ পেছনে চাওয়া মাত্রই স্বাভাবিক করে ফেলল নিজেকে। বেচারী কিছুই বুঝল না। আহ্লাদী স্বরে বলল,
” ও বর্ষাপু বলোনা।”
বর্ষা কী বলবে বুঝল না। জোর করে হাসার চেষ্টা করল। এর মধ্যেই পুষ্প ধম*ক দেয়
” তোর জেনে কাজ কী?যা নিচে যা।”
পিউর চেহারায় মেঘ জমে। সচরাচর পুষ্প তার সাথে উঁচু গলায় কথা বলেনা বলে অভিমান হলো। আস্তেধীরে ঘর ছাড়ল। ধম*ক দিয়ে পুষ্পর নিজেরই খা*রাপ লাগল। অনুতাপ করে বলল,
” আহারে! সকাল বেলাই বকলাম। থাক,পরে আদর করে দেব।”
পুষ্প আবার চোখ বন্ধ করে। ঘুমোবে সে। বর্ষা সব শেষে ফোনে মন দেয়। ওপাশের ব্যাক্তিটিকে মেসেজ পাঠায়।
” আমি অতশত জানিনা,বিকেলের মধ্যে তোকে বাড়িতে দেখতে চাই ব্যাস।”

***
পিউ ভাবছে। এক্কেবারে হাবুডু*বু খাচ্ছে ভাবনায়। পুষ্প ধ*মক দিয়ে ঘর থেকে বার করতে পারলেও মাথা থেকে প্ু

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here