হিয়ার মাঝে পর্ব ৩১+৩২+৩৩

#হিয়ার_মাঝে
৩১.
#WriterঃMousumi_Akter

নিরবে কাউকে ভালবাসার মতো কষ্ট বোধহয় এই পৃথিবীতে আর কোনো কিছুতে নেই।আমরা অজান্তেই এমন কিছু মানুষ কে ভালবেসে ফেলি যা প্রকাশ করাটাও অন্যায় আবার ভুলে যাওয়াটাও অসম্ভব।মুনতাহা আপুর মনের মাঝে ধীরে ধীরে একটু একটু করে জন্ম নিয়েছিলো নিরবের প্রতি ভালবাসা।যে ভালবাসা নিরবের কাছে প্রকাশ করলেও জোর করেনি কখনো মুনতাহা আপু।মনের মাঝে তীব্র এক যন্ত্রণা বহণ করে চলেছে না পারছে সহ্য করতে না পারছে কাউকে বলতে।মুনতাহা আপু মানুষ টা এতই বেশী ভাল যে কিনা নিরবের জীবনে কেউ আছে বলে আর নিরব কে বিরক্ত করে নি।নিরবের প্রতি ভালবাসা টা যত্ন করে রেখেছে মনের মাঝে।হয়তো তার ভালবাসা টা প্রকাশ পেতো যদি না আমি নিরবের জীবনে থাকতাম।ছোট্ট বেলা থেকে নিজের ফুপিকে না পাওয়ার যন্ত্রণা তাকে কুড়ে কুড়ে খেয়েছে।নিজের একটা বোন ছিলো যে এক্সিডেন্ট এ মারা গিয়েছে।এত সব হারানোর মাঝে আমাকে খুজে পেয়ে মুনতাহা আপু আমাকে এক নিমিষেই যতটা ভালবেসে ফেলেছে সেই ভালবাসার কাছে নিরবের প্রতি তার ভালবাসা নিজের ভেতরে চাপা দিয়ে রেখেছে।ফুলের টপে রং বেরঙের ফুলের দিকে তাকিয়ে চোখের পানি ফেলছে মুনতাহা আপু।এমন সময় রিক ভাইয়া পেছন থেকে এসে বলে আকাশে বৃষ্টি নেই বলে কি চোখ দিয়ে বৃষ্টি ঝরাচ্ছিস মুনতাহা।মুনতাহা আপু চোখের কোনার পানি মুছে রিক কে বলে কখন এলেন ভাইয়া।রিক বলে এলাম বলেই কি তোর আকাশে মেঘ জমেছে।আরে না ভাইয়া মিথুর কথা ভাবছি ভীষণ কষ্ট হচ্ছে ওর জন্য।তোর তো সবার জন্যই কষ্ট হয় শুধু আমি ছাড়া।ভাইয়া প্লিজ।রিক মুনতাহা আপুর মামাতো ভাই।রিক দের বাসা মাগুরাতে কিন্তু ফ্যামিলি ঢাকাতেই থাকে।রিক এর এক মাত্র পছন্দের মানুষ টি মুন তাহা যার জন্যই বার বার নড়াইলে ছুটে আসা তার।রিক বললো আমাকে মিথুর সাথে কথা বলিয়ে দে প্লিজ।

মুনতাহা আপু আমাকে ফোন দিলো।ফোনটা রিসিভ করতেই আপু বললো,,

মিথু কেমন আছিস রে

আমি দেখলাম আপু চোখে পানি।আমি আপুকে বললাম কাঁদছো কেনো আপু?

মিথু ভীষণ কষ্ট হচ্ছে তোর জন্য।

এভাবে কেঁদো না প্লিজ আমার লক্ষি আপু।

নিরবের কাছে শুনলাম কিছুটা ঝামেলা হয়েছে বাসায়।ফাইনালি বিয়েটা ঠিক ঠাক হলো মিথু।খুব ইচ্ছা ছিলো কাছে থেকে এসে দেখবো তোর বিয়ে কিন্তু যাওয়া তো হবে না মনে হচ্ছে।

এমন সময় পাশ থেকে রিক ভাইয়া বলে হ্যালো মিথু বুড়ি।আমি তোমার রিক ভাইয়া।

রিক ভাইয়া নিজেই নিজের পরিচয় দিয়ে দিলো।আরেক টা ভালবাসা যুক্ত হলো আমার জীবনে।রিক ভাইয়ার সাথে ফোনে কিছুক্ষণ গল্প করলাম।

এরপর আপুকে বললাম আপু নিরব বলেছে ঢাকায় একটা ফ্ল্যাট ভাড়া করবে তোমাদের জন্য।মামার অপারেশন সাথে আমার বিয়ে।তোমাদের তো এই মুহুর্তে আসল পরিচয় দেওয়া যাবে না।নিরব ওর অন্য কোনো রিলেটিভ বা কিছু বলে পরিচয় করিয়ে দিবে।

আপু বললো আরে না মিথু আলাদা ফ্ল্যাট ভাড়া করা লাগবে না।এই যে রিক ভাইয়াদের বাসা ঢাকাতেই।ভাইয়ারা মাগুরা তে থাকে না এখন।আমরা ওখানেই উঠবো।

আপু তাহলে অনেক ভাল হবে,নিরব ওর ফ্রেন্ড এর পরিবার বলে পরিচয় করাতে পারবে।তাহলে চলে এসো আপু কাল গায়ে হলুদের আগেই চলে এসো।

রিক ভাইয়া বললো আসবো মানে, আমাদের মিষ্টি বোনের গায়ে হলুদ আমরা এসে নাচবো গাইবো তোকে মাথায় করে নিয়ে নাচবো।

ফোন টা কেটে দেখি আমার পেছনে সাপ আর নেউলের যুদ্ধ শুরু হয়েছে।

এতক্ষণ ঝগড়া করেও তাদের ঝগড়া থামে নি।

সুপ্তি বলছে ডাকপিওনের পেশা তে জোস মানিয়েছে।

“রিফাত ভাইয়া সুপ্তির আপদমস্তক দেখে নিয়ে বললো,,
আল্লাহ ই জানে মিনিপ্যাক গুলা এত ঝগড়ুটে হয় কেনো?”

“কি বললেন আপনি আমি মিনিপ্যাক?”

“ক্যানো খারাপ কি বলেছি।বড় গুলার থেকে মিনিপ্যাক গুলা চলে বেশী বর্তমান।মিনিপ্যাক ই তো দেশ কাঁপাচ্ছে বর্তমান।সেই দিক থেকে মিনি প্যাক গুলার দাম বেশী।”

“আচ্ছা আমাকে কি মহা বলদ পেয়েছেন আপনি।আমাকে যে শর্ট বলতে চেয়েছেন সেটা কি বুঝি নি।”

“যাক বাবা একটা জিনিস ঠিক ঠাক ভাবে৷ বুঝতে সক্ষম হয়েছেন।”

“আপনি আমাকে মিনিপ্যাক বললেন কেনো?”

“আরে বাবা লিলিপুট বললে ঝগড়া করতে আবার বাটুল বললেও ঝগড়া করতে।তার জন্য উন্নত ভাষায় বলেছি মিনিপ্যাক।মানে ভাল কোম্পানির প্যাক তুমি।”

“বার বার প্যাক প্যাক করে কি বুঝাচ্ছেন। বুঝতে পেরেছি গতজন্মে হাঁস হয়ে জন্মেছিলেন আর প্যাক প্যাক করে শামুক খেয়ে বেড়িয়েছেন।”

“রিফাত ভাইয়ার গা ঘিন ঘিন করে উঠলো শামুক খাওয়ার কথা শুনে।”

“রিফাত ভাইয়া সুপ্তিকে রাগাতে বলে উহু তোমার ভুল হচ্ছে।গত জন্মে তুমি আমার তিন নম্বর বিবি ছিলে আহা তোমার আমার আর তোমার সতীনদের নিয়ে কি সুখের সংসার টাই না ছিলো আমার।আদর করে বউ বলে ডাক দিলে কিভাবে ছুটে এসে বলতে ওগো ময়নার বাপ আমার একটা বাবু চাই।কি লজ্জার কথা বাবু চাইতে। মানে আমাকে ডিরেক্ট সোহাগ রাতের প্রপোজ দিতে।”

এমন সময় নিরব এসে বলে ,,,,

লুইচ্চা বেলকনি থেকে দেখছিলাম কিভাবে আমার পুচকু শালি টার সাথে লুতুপুতুর চেষ্টা করছিলি।যতই চেষ্টা করিস ও কিন্তু পাত্তা দিবে না তোকে।সুপ্তি ও কিন্তু একটা বাপ্পারাজ।এই নিয়ে যত গুলো স্যাকা খেয়েছে মেরুদন্ড সোজা আছে কিভাবে বুঝলাম না।

রিফাত ভাইয়া বললো এতগুলা স্যাকা খেয়ে যা হয়ে তার থেকে দ্বিগুন হয়েছে বিয়াইনসাহেবার টোটকাতে।বাবাহ রে মেয়ে তো গোল মরিচ।

সুপ্তি বলে উঠলো আশে পাশে ঝাল থাকলে আপনাকে না খাইয়ে ছাড়তাম না সত্যি।

নিরব সুপ্তির হাতে একটা আইসক্রিম দিয়ে বলে শালিকা এটা খাও আর মাথা ঠান্ডা করো।

আমি এতক্ষণ তাদের এই সব কাহিনী দেখছিলাম আর হাসছিলাম।নিরব আমার একটু কাছে এসে কানে কানে ফিস ফিস করে বলে মাই ডিয়ার জান কেমন আছেন?

না বা হ্যাঁ কিছুই বললাম না ওর চোখের দিকে তাকিয়ে চোখে মুখে লাজুকতা নিয়ে নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে হালকা হেসে দিলাম।

নিরব আমার হাসি দেখে ক্লিয়ার হয়ে গেলো আমি খারাপ নেই তবে তাকে মিস করেছি খুব।

নিরব আমার চোখের তারার দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হেসে যাচ্ছে।ওর হাসিতে যেনো শুভ্রতা ভরা।

এইভাবে বার বার ঠোঁট কামড়ে হেসে হেসে কি আমাকে পাবনা ভর্তি করতে চাও হুম।

আমি এবার ও লজ্জা পেলাম ওর কথায়।

নিরব এর চোখে মুখে কি মারাত্মক স্নিগ্ধতা।নিরব ও হাসতে ওর দাঁত গুলো অসম্ভব সুন্দর। হাসলে ওর সৌন্দর্য বহু গুন বেড়ে যায়।

নিরব আমাকে চুপ থাকতে দেখে আমার ঘাড়ের উপর দিয়ে এক হাত দিয়ে গালের সাথে গাল মিশিয়ে সুপ্তি আর রিফাত কে আড়াল করে গালে একটা আলতো চুমু দিয়ে বলে এইভাবে লজ্জা পেলে কিন্তু জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছা করে।কিন্তু এটা পাব্লিক প্লেস তাই পারলাম না।আমি ওর বুকে ছোট্ট একটা কিল দিয়ে বললাম এইসব কি বলা হচ্ছে শুনি।

কেনো লজ্জা পাচ্ছো?এখন ই এত লজ্জা তাহলে বাসর ঘরে কি করবে।

বাসর ঘর শুনেই চোখ কপালে উঠে গেলো হায় হায় বলে কি?আমি উনার দিকে হা হয়ে তাকিয়ে রইলাম।

নিরব আমাকে বলে রিল্যাক্স। টেনশনে প্রেসার হাই করো না।মৃথিলা আমি তোমাকে বিয়ে করছি কিন্তু শুধু মাত্র সংসার,বাচ্চা,শারিরীক চাহিদা এগুলোর জন্য না।আমি তোমাকে বিয়ে করছি ভালবেসে বুকে আগলে ধরে রাখার জন্য।আমি তোমাকে বিয়ে করছি একটা সুন্দর জীবন দেওয়ার জন্য।যে জীবনে কেউ মানে কেউ মানে আমিও তোমাকে অবহেলা করতে পারবো না।এই সমাজে মাথা তুলে বাঁচবে তুমি।আর একটা বিশেষ কারণ কি জানো তুমি আমার একান্তই নিজের মানুষ।

সবার ই একটা নিজের মানুষ থাকা প্রয়োজন;
যার উপর অধিকার খাটিয়ে বলা যায় ”এই মানুষটা আমার”
যার কাছে বিনা বাঁধায় তোমার ভালো লাগা,খারাপ লাগা এমনকি মন খারাপ সবটা মন খুলে বলে দিয়ে লম্বা করে একটা শান্তির নিশ্বাস নেওয়া যায়।
খুব কম মানুষ-ই তাদের জীবনে এমন একটা মানুষ পায়।কিন্তু আমি আমার জীবনে সেই চমৎকার মানুষ টাকে পেয়ে গিয়েছি। সেটা হলো তুমি মানে শুধুই তুমি।

নিরবের কথার উত্তর দেওয়ার মতো ভাষা আমার কাছে নেই।ওর কথা শুনলে মনের মাঝে আনন্দের এক উথাল পাথাল ঝড় ওঠে,আনন্দে চোখ প্লাবিত হয়ে আসে।

নিরব কে বললাম প্রতিটি মেয়েই যেনো আপনার মতো একজন করে ভালবাসার মানুষ খুজে পাই।তাহলে এই পৃথিবীতে আর ভালবাসার অভাব থাকবে না।কোনো মেয়ে বলতে পারবে না পৃথিবীতে আজ ভালবাসা বলে কিছুই নেই।এই পৃথিবীতে আজ ও ভালবাসার মানুষ বেঁচে আছে সেটা আপনাকে না দেখলে বুঝতাম ই না।

নিরব আমার কথা শুনে সুপ্ত এক হাসি দিলো।

এমন সময়ে নবনিতা আপু আসলো।ইদানিং আপুকে চুপ চাপ দেখা যায় মুখে কোনো কথা নেই।কি জানি মনে মনে কি চলছে তার।

সুপ্তি আপুকে দেখে আমাকে আর নিরব কে ইশারা করে।আমি আপুকে বললাম কিছু বলবে আপু।আপু বললো আমি বললেই কি আমার কথা থাকবে। নিরব আপুর উপস্হিতিতে বিরক্ত হয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে আছে।আমি বললাম বলো কি বলবে।

বলছিলাম মিথু তোর বিয়ের আগে চল না আমরা ঘুরে আসি কোথাও থেকে।পাহাড় বা সমুদ্র থেকে।আমি আপুকে বললাম এটা তো খুশির সংবাদ চলো আমরা ঘুরে আসি।আমি নিরব কে বললাম আপনি কি বলেন চলুন আমরা ঘুরে আসি।

নিরব আপুর দিকে তাকিয়ে বলে সত্যি করে বলো তো নবনিতা কি প্লান করছো বাপ বেটি আর মা মিলে।পাহাড়ে নিয়ে কি মিথুকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে মেরে ফেলার প্লান করছো নাকি।কাল গায়ে হলুদ আর আজ ঘুরতে যাওয়ার কথা বলছো।

আপু বললো নিরব ভাইয়া আমি আর আগের মতো নেই।

হ্যা আগের মতো নেই একটু খোলস বদলেছো তাই আরকি।শোনো বিয়ের আগে কোথাও যাচ্ছি না।বিয়ে টা ঠিক ঠাক ভাবে হোক তারপর মৃথিলা আর আমি হানিমুনে যাবো।তোমাদের সাথে কোথাও যাওয়ার ইচ্ছা নেই।যেতে চাইলে মা বাবার সাথে যাও।

আপু আমাকে বলে মিথু নিরব ভাইয়াকে বুঝিয়ে বল না প্লিজ।

আমি আপুকে বললাম আচ্ছা আপু ওর রাগ কমলে ও ঠিক ই যাবে।এখন ও একটু রেগে আছে তো।আমরা বিয়ের পরেই যাবো ঘুরতে।

সুপ্তি আপুকে দেখে মুখ ভেংচি দিয়ে আদিক্ষেতা বলে চলে গেলো।
#হিয়ার_মাঝে
৩২.
#WriterঃMousumi_Akter

মৃথিলা বাংলা সিরিয়াল বা সিনেমার হিরোইন দের মতো টিপিক্যাল ক্যারেক্টর আমি লাইক করি না।কিসের এত উদরতা তোমার।কি চাও কি তুমি?আজ তুমি আমার মেজাজ চরম পর্যায়ে পৌছে দিয়েছো।আমাকে এক আকাশ কষ্ট দিয়ে নিজের সাথে আমাকেও মারতে চাও তাইনা।তুমি চাওনা আমি বেঁচে থাকি।আমি ভাল থাকি তোমার সাথে আই থিংক তুমি সেটা চাইছো না।কারণ তোমার কিছু হলে আমি নিজেই বাঁচতে পারবো না।তোমার সাথেই জড়িয়ে আছে আমার ভাল থাকা।নিজেকে সাপের গর্তে এগিয়ে দিয়ে বলছো কামড় দিস না।সাপ কি সুযোগ পেলে ছাড়বে।তুমি কোন দিক বিবেচনা করে নবনিতার সাথে ঘুরতে যাওয়ার জন্য নেচে উঠলে।আমি জাস্ট ভাবতে পারছি না।জাস্ট অসহ্য লাগছিলো যে তুমি এত কিছুর পরেও শিক্ষা পেলে না।কি এমন হতো মুখের উপর না করে দিলে।খারাপ ভাবলে ভাবতে, খারাপ মানুষের কাছে ভাল হওয়ার কি প্রয়োজন।

এই প্রথম বার নিরব আমাকে এভাবে বকাবকি করছে।নিরব কখনো আমার উপর রাগ দেখাই না।এক নিঃশ্বাস এ খানিক টা বকবক করে নিলো।রাগে নিরব আগুন হয়ে আছে।হয়তো এক্ষুণি কিছু একটা করে বসবে।মাথা নিচু করে বললাম আপু হয়।কথা টা মুখ থেকে বেরোনোর সাথে সাথে নিরব আমার দুই হাত শক্ত করে ধরে ওয়ালের সাথে চেপে ধরে বললো,, আপু মাই ফুট।কিসের আপু হ্যাঁ।ও কি আপু কথাটার মানে বোঝে।আপু কি জিনিস সেটা কি তার মাঝে আছে।এই দুনিয়ায় এতটা ভাল হলে ওইসব আপুদের পায়ের নিচে পড়ে পিষে মারা যাবে তুমি।নিরবের এমন ধমক শুনে চোখ বন্ধ করে ফুপিয়ে কেঁদে উঠলাম।

নিরব আমাকে কাঁদতে দেখেই আমার হাত টা সাথে সাথে ছেড়ে দিয়ে বলে ওহ শিট বলেই ওয়ালের সাথে নিজের হাত খুব জোরে একটা ঘুষি মারলো।ওয়ালে ঘুষি মারাতে ওয়ালে লেগে থাকা পেরেক উনার হাতে খানিক টা ঢুকে গেলো।কিন্তু সেদিকে উনার কোনো খেয়াল নেই।দুই হাত দিয়ে আমার মুখ ধরে বলে কি হলো জান পাখি কাঁদছো কেনো?আ আ আমি সরি রিয়েলি সরি।আমি তোমাকে বকতে পারি না।কিন্তু প্রচন্ড টেনশন আমাকে উত্তেজিত করে ফেলছিলো।সরি রিয়েলি সরি।আর কখনো বকবো না জান পাখি।আই প্রমিজ।

আমি উনার দিকে তাকিয়ে ভ্যা ভ্যা করে এবার আহলাদে জোরেই কেঁদে দিলাম।

নিরব আমাকে ওর বুকের সাথে শক্ত করে চেপে ধরে জোরে জোরে কয়েক টা শ্বাস নিয়ে বলে তুমি কেনো বোঝনা তুমি ছাড়া আমি অসহায়।তুমি কি বোঝনা তোমার কিছু হলে আমার পক্ষে বেঁচে থাকাটাই অসম্ভব হয়ে পড়বে।তুমি ভুলেও নবনিতা বা ওর মা বাবা কারো সংস্পর্শে যেও না।তুমি কি বোঝ না যারা তোমাকে দু চোখে দেখতে পারে না তারা তোমাকে কেনো অনুরোধ করছে।তোমার ক্ষতি চাই ওরা।আর আমি সেটা কখনো হতে দিবো না।ওরা তোমার ক্ষতি চাই।তোমার ক্ষতি হবে ভেবেই আমার মাথা আগুন হয়ে গেছিলো।তুমি নবনিতার কোনো কথা যদি আর শোনো এভাবেই আমি বকা দিবো আর সেটা তোমাকে শুনতে হবে কিন্তু কাঁদতে পারবে না।ওই কাঁন্নায় যে আমার ভীষণ দূর্বলতা।তোমার চোখের কাজল আমি চোখের পানি দিয়ে নষ্ট করতে দিবো না।এই চোখে শুধু আমি থাকবো তোমার খুশি হয়ে।

কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললাম আপনি বকা দিতেও জানেন।

হুম জানি আদর শাসন সব জানি আমি।

রিফাত দের বাসায় এসেই নিরব আমাকে এই রকম মারাত্মক একটা শাসন করলো।

ঘটনাচক্রে রিফাত মুনতাহা আপুর মামাতো ভাই সেটা জানতাম না।আপুরা যে ঢাকায় এসছে সেটা রিফাত দের ই বাসায়।রিক আর রিফাত দুই ভাই।মুনতাহা আপুর দুই মামাতো ভাই।মুনতাহা আপুদের সাথে দেখা করতে এসেই এই বিশাল সারপ্রাইজ টা পেলাম।রিফাত ভাইয়া তো ভীষণ খুশি আমি তার কাজিন হই এই সম্পর্ক টা জানতে পেরে।আমরা জাস্ট অবাক হয়ে গেলাম এইভাবে সম্পর্ক গুলো আরো গভীর হবে ভাবতে পারিনি।আরো বিশাল এক খুশি হাতের মুঠোতে পেয়ে গেলাম।

রিফাত ভাইয়াদের বাসাতেই এসে এই ভীষণ বকা ঝকা টা খেলাম।আজ আমাদের হলুদ সন্ধ্যা। গায়ে হলুদের পর রাতে মেহেন্দী অনুষ্টান সেই সাথে গান বাজনা বিনোদনের ব্যাবস্থা করা হয়েছে।নিরবের বাবা একটা কমিউনিটি সেন্টার ভাড়া করেছেন।গায়ে হলুদের অনুষ্টান বাসাতেই হবে। নিরবের বাবা আর আমার বাবা বন্ধু থাকায় তাদের ফ্ল্যাট ও পাশাপাশি। কথা হয় যে দুজনের গায়ে হলুদ এক ই সাথে হবে।এই প্লান টা সুপ্তি,রিফাত,রিক আর মুনতাহা আপুর।

দুপুরেই শুরু হলো হলুদের অনুষ্টান।নিরব দের সব আত্মীয় ও চলে এসছে।সবার মাঝে এক বিশাল আনন্দ বিয়ে বলে কথা।

প্রিয় মানুষ টার সাথে একসাথে গায়ে হলুদ এর থেকে আনন্দ আর সুখ পৃথিবীতে হতে পারে না।আমার জীবনে এত সুখ এত আনন্দ পাবো কখনো ভাবতে পারি নি।নিরবের কিছু কাজিন এসছে জেরিন,মেধা আরো কয়েক জন।মেয়েরা সবাই মাথায় ব হলুদের গহনা সাথে গায়ে হলুদের গহনা পরেছে।ছেলেরা সবাই ব্লু পাঞ্জাবী পরেছে।নিরবের গায়ে সাদা ছেন্ডো গেঞ্জি গলায় তোয়ালে লুঙ্গি পরা আমার পাশেই চৌকিতে দাঁড়িয়ে আছে।দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে প্রশান্তির হাসি দিচ্ছি।যে হাসিতে রাশ রাশ মুগ্ধতা স্নিগ্ধতা আর ভাললাগা।আমার ভেতর থেকে ভাল লাগাময় এক হাসি আসছে। হাতে পায়ে আলতা পরে হলুদের শাড়ি আর কাঁচা ফুলের গহনা পরে দাঁড়িয়ে আছি।নিরবের চোখ সরছেই না আমার দিক থেকে।রিফাত আর রিক ভাইয়া সাথে নিরবের অন্য ফ্রেন্ড আরো কাজিন রা আছে তারা ফটো তুলছে।

মা আমার গায়ে হলুদ লাগালো না।এমন কি সে আসলো ও না।বাবা দায় এড়াতে যত টুকু না করলে নয় ততটুকুই করছেন।যেটা করছেন সেটা খুশি মনে নয়।মানুষের সামনে হেসে হেসে বলছেন ওর মা নেই তাতে কি হইছে আমি কি ওকে খারাপ পাত্রের হাতে দিচ্ছি নাকি।মা আমার গালে হলুদ না লাগালে কি হয়েছে আমার পরম মমতাময়ী মামি আমার গালে আমার মায়ের মতো করেই হলুদ লাগিয়ে দিলেন।এমন কি আমাকে বললেন একটু মন খারাপ করবি না আমি তোর মা।জন্ম দেই নি মানুষ করি নি কারণ সে সুযোগ আমি পাই নি মা।তবে যত দিন বেঁচে থাকবো আমার স্নেহে তোকে বেঁধে রাখবো।মামির কথা শুনে আনন্দে চোখে পানি চলে আসলো।নিরবের মা আমার গালে হলুদ লাগিয়ে দিয়ে বললো আমার বৌমা না তুই আমার মেয়ে হবি।আর আমি কিন্তু তুমি টুমি বলে তোকে পর পর ভাবতে পারবো না মা।আমার জীবনের এই একটা ইচ্ছা যদি পূরণ করতে না পারতাম সারাটাজীবন মনের মাঝে আক্ষেপ থেকে যেতো মা মৃথিলা।তোর মাকে দেওয়া কথা রাখতে না পারলে নিজেকে ক্ষমা করতে পারতাম না।সেই ছোট্ট বেলায় আমার নিরব তোকে নিয়ে খেলা করতো।খুব আদর করতাম তোকে আমি।

শ্বাশুড়ি এমন হলে সেই মেয়ের মতো ভাগ্যবতি পৃথিবীতে আর কেউ হতে পারে না।আমার চারদিকে আমার ভালবাসার মানুষ গুলো দাঁড়িয়ে আছে।সুপ্তির মা এসে আমার মুখে হলুদ লাগিয়ে বলে আমি জানতাম মা একদিন অনেক সুখি হবি তুই।অনেক অনেক সুখি হবি মা তুই দেখে নিস।

নানা, আর মামা চেয়ারে বসে আছে আমাকে প্রাণ ভরে দেখছে তারা।নিরবের বন্ধুর ফ্যামিলর লোক হিসাবে তারা এখানে এসছেন।মুনতাহা আপুর দিকে লক্ষ্য করলাম।আপু যে নিরবে নিরব কে ভালবাসতো সেটা জানতাম।আপুর কি কষ্ট হচ্ছে এটা ভেবে মন খারাপ হতেই তাকিয়ে দেখি রিক ভাইয়া মুনতাহা আপুর গালে আবির লাগিয়ে দিচ্ছে।মুনতাহা আপুও এইক ভাইয়ার গালে আবির লাগিয়ে দিলো দুজনের মুখের সুন্দর হাসি দেখলাম।

নিরব লজ্জার মাথা খেয়ে ওর মুখের হলুদ আমার মুখে লাগিয়ে দিলো।গালের সাথে গালের আলতো পরশ দিয়ে হলুদ ছুইয়ে দিয়ে কানের কাছে এসে বলে হ্যাপি হলুদ ছোঁয়া মিসেস নিরব।পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ নারীকে তার বিয়ের শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। আমার জীবনে আগমনের শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। চারদিক থেকে সবাই হাতে তালি দিয়ে উঠলো আমি লজ্জায় কিছু বলতেই পারলাম না।

রিফাত ভাইয়া আস্ত ফাজিল সুপ্তি কে বলছে যদি উচু হয়ে দেখতে কষ্ট হয় আমার ঘাড়ে উঠতে পারো আমি মাইন্ড করবো না।অসহায় মানুষ কে হেল্প করতে আমি ভালবাসি।

আমাকে কি দেখে অসহায় লাগছে।

এই যে উঁচু হয়ে বেশী কিছু দেখতে পারছো না।তাই খুব অসহায় লাগছে তোমাকে।

এত মানুষের মাঝে আমাকে উঁচু করতে পারবেন।মুখে বড় বড় কথা খালি তাইনা।সুপ্তির মুখের কথা শেষ না হ মতেই কোলে তুলে নিলো সুপ্তি কে রিফাত ভাই।

চারদিক থেকে সবাই এটা নিয়ে বিভিন্ন হৈ চৈ শুরু হলো।সুপ্তি পা ঝাড়ি দিতে দিতে রিফাত কে খামচে ধরলে রিফাত নামিয়ে দিয়ে বললো আল্লাহ এটা কি হাতি কোলে নিয়েছিলাম।আমার জান বেরিয়ে যাচ্ছিলো।এই কি খাও তুমি এত ওজন কেনো?কম হলেও ১০৫ কেজি ৩০ গ্রাম হবে ওজন।

সুপ্তি বলে দেখুন আমি মাত্র ৪৭ কেজি একটুও আজে বাজে কথা বলবেন না।আমি হাতি, আমি হাতি হলে আপনি একতা দুম্বা।

রিফাত ভাইয়া বলে এভাবে দুম্বা টুম্বা বলো না।ছেলে আমি খারাপ না।বিয়ে হলে জামাই হিসাবে খারাপ পাইবা না।জোর গলায় বলতে পারবা জিতছি।ট্রফি আমার ঘরেই।

সুপ্তি মুখ ঘুরিয়ে বলে ন্যাকা।

ওদের ঝগড়া দেখে সবাই অনেক হাসাহাসি করলো।

এমন সময় হলুদে আমার শরীর জ্বলে পুড়ে যাচ্ছিলো।আমার চোখ মুখ লাল হয়ে আসছিল।খুব অস্বাভাবিক লাগছিলো আমার।শরীর জ্বলা পোড়া সাথে চুলকানি।আসহ্য যন্ত্রনা সহ্য করতে পারছিলাম না।নিরব আমাকে বলে কি হলো এমন করছো কেনো?নিরব কে কিছু বললেই অনেক ইনকুয়ারি শুরু করে দিবে।গিয়েও আপু বা মায়ের সাথে ঝামেলা করবে।বললাম এলার্জি হলুদে আমার এলার্জি আছে।
#হিয়ার_মাঝে
৩৩.
#WriterঃMousumi_Akter

হলুদের অনুষ্টান চলাকালীন সময়ে আমার চোখ মুখ কেমন একটা ফুলে ফুলে উঠলো। মুখ ফুলে উঠলো।মন চাইতেছে কেঁদে ভাষিয়ে দেই কিন্তু নিরব আবার চোখের পানি দেখে উত্তেজিত হয়ে পরবে।ওকে শান্ত রাখতেই আমার চুপ থাকা।নিরব খুব উদিগ্ন হয়ে উঠলো আমাকে দেখে। নিরবের এক ডাক্তার বন্ধুকে কল দিয়ে আমার দ্রুত ট্রিটমেন্ট করালো।ওষুধ খেয়ে আমার চোখ মুখের ফোলা ফোলা ভাব কিছু টা কমে গেলো।

হঠাত রিফাত ভাইয়ার তীব্র ইচ্ছা জাগ্রত হলো সে নবনিতা আপুকে হলুদ লাগাবে।আপু তো কিছুতেই লাগাবে না হলুদ।রিফাত ভাইয়া এক প্রকার জোর জবরদস্হি করেই আপুকে হলুদ লাগিয়ে দিলো।বিষয় টা নিয়ে আপু ভীষণ বিরক্ত হয়ে পড়লো আপু কিছুতেই হলুদ লাগাবে না।রিফাত ভাইয়া হলুদ লাগিয়ে তবেই ক্ষ্যান্ত হলো।আপু এটা নিয়ে বিরক্ত প্রকাশ করেও কোনো প্রকার কোনো লাভ হলো না।

এই বিষয় টা নিয়ে সুপ্তির খুব জ্বলন হচ্ছিলো।সুপ্তি দেখি রাগি রাগি চোখে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে।বিয়ে বাড়িতে সবার আনন্দ উৎসব এর মাঝে মেতে আছে।হঠাত রিফাত খেয়াল করে সুপ্তি রিফাতের সাথে কথা বলছে না এমন কি তাকাচ্ছেও না।পুরাটা ইগনোর করছে।সুপ্তির দিকে তাকিয়ে রিফাত বলে কি জ্বলন কাঠি আমাকে নবনিতার পাশে দেখে জ্বলছে কেনো?আই মিন সামথিং সামথিং ব্যাপার আমার প্রতি তোমার।সুপ্তি রেগে বলে নাথিং যান ওই নবনিতার কাছেই যান।আপনার বন্ধুর না হওয়া এক্স।কি সোহাগ করে হলুদ লাগানো হচ্ছিলো ঢং।তাতে আমার কি?আমাকে বলা হচ্ছে কি জন্য শুনি।রিফাত ভাইয়া বলে আহা!শোনো না নিরব আমাকে বললো হলুদে কাহিনী আছে মৃথিলার হলুদে এলার্জি নেই তবুও জ্বলাপোড়া চুলকানি হচ্ছে।তাই নিরব আমাকে বললো আমি যেনো মজার ছলে হলুদ লাগিয়ে আসি।ইস কি অবস্থা নবনিতার ও সেই চুলকানি শুরু হলো।যত করবে চালাকি তত বুঝবে জ্বালাকি।অথচ এই দিকে মনুষ রাগ করে গাল ফুলিয়ে বসে আছে।মানুষ তো আর জানে না তার ঝগড়া ভাল লাগে কিন্তু রাগ নয়।রাগ ও ভাল লাগে বাট মুখ ভার নয়।সুপ্তি একটা মুখ ঝাঁকানি দিয়ে চলে গেলো,,,,,,,

সন্ধ্যায় মেহেদী লাগানো অনুষ্টান চলছে।মুনতাহা আপু আমার হাতে মেহেদী লাগিয়ে দিচ্ছে।আপু সুন্দর ডিজাইন দিয়ে হাতের মাঝে নিরব লিখে দিলো।আমার এই হাতের অধিকারী আর দখলদার মানুষ এখন শুধুই নিরব।আমার পাশে নিরব ও বসে আছে।মুনতাহা আপু নিরবের হাতে ও আমার নাম লিখে দিলো।এত মানুষের ভীড়ে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে নিরব আমার দিকে।আমি নিরব কে বলছি কি সম্যসা কি এভাবে তাকিয়ে আছেন যে।নিরব মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে বলে বিয়ের আগের মূহুর্তের মিথুকে দেখছি। আমি প্রতি সেকেন্ডে সেকেন্ডে তাকে দেখি কিন্তু যতবার ই দেখেছি ততবার ই আমার সর্বনাশ হয়েছে। এই যে আম্মুর নিষ্পাপ ছেলেটাকে তোমার প্রেমে পড়তে বার বার বাধ্য করো।আমি বললাম কাল রাতে একবারে দেইখেন।নিরব বলে পাগল নাকি এত টাইম না দেখে থাকা ইম্পসিবল।আর কি ব্যাপার কি এত বাসর ঘর বাসর ঘর করছো স্পেশাল প্রেম ভালবাসা দিবা নাকি।আমি ওর কথা টা শুনেই লজ্জা পেয়ে গেলাম যান তো দূষ্টু একটা।

নবনিতা আপুর মুখের অবস্থা একদম বিশ্রি হয়ে আছে।আমার মুখেও হয়েছিলো কিন্তু নিরব বার বার আইস লাগিয়ে টাইমলি ওষুধ দিয়ে কমিয়ে ফেলেছে।আমাকে আর নিরব কে ঘিরে চারদিকে বসে আছে সবাই।।রিফাত ভাইয়া বলে মিথু তোমার বান্ধবী নামক বোন সুপ্তি মনে হয় আমার প্রেমে পড়েছে।মুনতাহা আপু বলে রিফাত আমার তো মনে হচ্ছে তুই প্রেমে পড়েছিস।রিফাত ভাইয়া সুপ্তি কে বলে গান আর নাচ করতেই হবে।সুপ্তি তখন বলে নাচতে আমি পারি আমি এসব বিশ্রি মানুষের সামনে নাচ দেখাবো না।বলেই নবনিতা আপুকে ডেকে বলে নবনিতা আপু রিফাত তোমাকে কিছু একটা বলবে এই থিংক সি লাভড উইথ ইউ।নবনিতা আপু এসে বলে কি ব্যাপার সুপ্তি আম খাচ্ছো তুমি আমাকে দিচ্ছো আঁটি জোর করে দিলে দেখবা আমার ই হয়ে যাবে।

মুনতাহা আপুর জন্য ভীষণ কষ্ট হচ্ছে, আপুর কি অনেক কষ্ট হচ্ছে নিরবের জন্য।কিভাবে প্রশ্ন টা করি।সব প্রশ্নের মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিলো এমন সময় রিক ভাইয়া এসে মুনতাহা আপুর হাতে রিক নাম টা লিখে দিলো আর বললো এই নাম টা যেনো হাত থেকে মনে স্হান পাই।এইদিকে সুপ্তি আর রিফাতের মাঝেও একটা ব্যাপার ঘটে গিয়েছে।সুপ্তি আর রিফাত যে ঝগড়া করতে করতে মনে মনে অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছে সেটা দেখেই বোঝা যাচ্ছে।

আমার গায়ে হলুদের রাতেই আমার তথকথিত বাবা আমাকে ডেকে বলেন,তোমার বিয়েতে আমার প্রায় দশ লক্ষ টাকা খরচ হচ্ছে এই টাকা গুলো কে দিবে।আমি উনার দিকে অবাক করা চোখে তাকিয়ে রইলাম। এনি কি বাবা নাকি অন্য কিছু।বাবারা এমন হয় উনাকে না দেখলে জানতেই পারতাম না।শুধু এখানেই শেষ তা নয়।মা বলে দিলেন আমি যেনো বিয়ের পর এ বাড়িতে আর না আসি।তার মেয়ের ভালবাসা নাকি আমি কেড়ে নিয়েছি।বাবা বললেন নিরবের বন্ধুর ফ্যামিলি থেকে যারা এসছেন সত্যি করে বলো তারা কে।আমি বললাম কেনো?বাবা বলেন তোমার মায়ের সাথে উনার ছবি দেখেছিলাম আমার তো মনে হচ্ছে উনি সে।মা রাগান্বিত হয়ে বলে কি বললে ওই ফ্যামিলির কেউ এ বাড়িতে প্রবেশ করবে না।মিহু তোর সাহস হয় কি করে ওদের এ বাড়িতে আনার।আমি কিছুক্ষন মায়ের দিকে তাকিয়ে থেকে বললাম মা তোমার স্বামিকে প্রশ্ন করো উনি কেনো আমার মাকে বিয়েছিলো।ওই মানুষ টার বুক থেকে তার মেয়েকে কেড়ে নিয়েছিলো।বাবা আপনার ই সামনে আপনার ওয়াইফ আমাকে বলছে আমি যেনো আর এ বাড়িতে না আসি আপনি চুপ চাপ দাঁড়িয়ে শুনছেন।আর এ বাড়িতে আমাকে আসতে নিষেধ করছেন বাড়িটা কি আপনাদের।বাবা বলের তাহলে কার?আমি বললাম আমার মায়ের টাক নিয়ে যে এত সব ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান রাজ্য করে সব নিজের নামে করেছেন তার সাক্ষী সৃষ্টি কর্তা আছেন।একদিন আমাদের আবার দেখা হবে কিন্তু সে দিন টা থাকবে আমার।বাবা আমাকে বলেন এখনো সময় আছে তুই বিয়ে টা না করে দে, তহলেই নবনিতার সাথে নিরবের বিয়ে টা হবে।নবনিতা আপু এসে বলে সারাজীবন তুই যা যা পাস নি তার রিভেঞ্জ কি তুই একবারে নিয়ে নিলি মিথু।সারাজীবন যা পেয়েছি তার সব তোকে দিয়ে দিবো কিন্তু তুই আমাকে শুধু নিরব এনে নে।নিরব আমার প্রথম ভালবাসা মিথু নিরব কে ছাড়া আপনি বাঁচবো না।আমি হেসে দিয়ে বললাম সেদিনের আমি আর আজকের আমি এক না আপু।আঘাতে আঘাতে আমজ আজ শক্ত হয়েছি। আমি আজ শুধুই মিথু না।আমি আজ নিরবের মিথু।তাই নিরব কে কারো সাথে শেয়ার করার কথা ভুলেও ভাবতে পারবো না।

বাবাকে নিঃশব্দে দশ লাখ টাকার চেক এ সাইন করে দিয়ে দিলাম।আর বলে দিলাম আপনার সব ঋণ কিন্তু আমার কাছে নেই।

অবশেষে আমার আর নিরবের বিয়ে সম্পূর্ণ হলো।এই বিশেষ দিন টা আমার জীবনের সব সুখ শান্তি হাতের মুঠোতে এনে দিলো।কবুল বলার সাথেই মনে হলো নিরবের সমস্ত সত্তার প্রতি আমার অধিকার সবার আগে।আমার জীবনের সব থেকে প্রিয় মানুষ টা যে মানুষ টা সব সুখ আমায় এনে দিয়েছে সেই মানুষ টা আজ থেকে শুধুই আমার।

নিরবের বাড়িতে পৌছানোর পর গাড়ির সামনে অনেক মানুষের ভীড়। সবাই আমাকে দেখে অনেক খুশি আবার কেউ কেউ খুশি না।দুনিয়াতে বিচিত্র মানুষের অভাব নেই।

হাজারো ফুলের সুবাসে সজ্জিত আমার আর নিরবের বাসর ঘর।নিরবের রুম টা অসম্ভব সুন্দর ভাবে সাজানো আজ।রাত দশ টা বাজে বাসর ঘরে নিরবের জন্য অপেক্ষা করছি আমি।বুকের মাঝে ধুক পুক সাউন্ড হচ্ছে।ভয়,লজ্জা আর জড়তা নিয়ে বাসর ঘরে বসে আছি আমি।এমন সময়ে আমার চেনা মানুষ টার উপস্হিতি অনুভব করতে পারলাম।উনার এই চিরচেনা পারফিউম টা আমার নাকে ভেষে আসলো। সমস্ত শরীর শিউরে উঠলো আমার।নিরব রুমে প্রবেশ করে দরজা টা লাগিয়ে দিলো।সেরওয়ানি তে নিরব কে অসম্ভব সুন্দর লাগছে।নিরব এর দিকে আড়চোখে তাকাচ্ছি আমি।সেরওয়ানি খুলতে খুলতে নিরব বলে মিসেস নিরব এতটা ভয় পেয়ে আছেন কেনো? আমি কি হিংস্রপ্রাণী এভাবে মাথা নিচু করে থাকলে তো আমাকে ভীষণ অপরাধী মনে হচ্ছে ম্যাডাম।নিরব আমাকে হুট করেই কোলে তুলে নিয়ে বলে আমার চোখে চোখ রাখো আগে। যদি আমার চোখের দিকে না তাকাও এইভাবে কোলে নিয়ে বাড়ির সবার সামনে নিয়ে কিস করবো তাও লিপ কিস ইমরাণ হাশমির মতো।আমার কথা না শুনলে কিন্তু এমন ই করবো।এই মানুষ টা কি পাগল বোঝে না তাকে দেখলে ভীষণ লজ্জা লাগে।আমি এবার ড্যাব ড্যাব করে নিরবের দিকে তাকিয়ে পড়লাম। নিরবের চোখে, মুখে কি প্রশান্তি ছায়া।ও হয়তো এই দিন টার জন্য ওয়েট করছিলো।আমি বললাম কি হলো নামান বলছি আপনাকে সালাম করতে হবে।

সালাম করতে হবে না ম্যাডাম আমি আপনাকে অনেকে অনেক আশির্বাদ করছি স্বামি সন্তান নিয়ে সুখি হও।

স্বামি তো আছে সন্তান তো নেই।

সন্তান চাই!এক্ষুনি বাচ্চা।তুমি নিজেই এক বাচ্চা।টেনশনে আছি বাল্যবিবাহ কেসে ফেসে না যায়।

দেখুন মোটেও আমি বাল্য না।আমার বিয়ের সঠিক বয়স ই হয়েছে।

তাই না বিয়ের পর কি কি হয় জানো।

জানি ফুলসজ্জা।

তুমিও ফুলসজ্জা করতে চাও।

অবশ্যই চাই।।

ইস রে বলে কি এই মেয়ে তো আমাকে দিয়ে মহা অনর্থ করিয়ে ছাড়বে।নিরব আমার কানে কানে কিছু বলে বললো এটাকে ফুলসজজ্জা বলে।

আমি এক লাফ দিয়ে নিরবের কোল থেকে নেমে বললাম জীবনেও না। আমি এসব পারবো না।আমার দ্বারা সম্ভব না।অসভ্য ফাজিল একটা লোক।এই সব কোথায় শিখেছেন শুনি।

বাহ রে!আমার বউ সরকারি ভাবে রেজিস্ট্রি করা বউ আমি যা খুশি তাই করবো তাতে তোমার কি?এখন আমি এসব ই করবো তাতে একটু অসভ্য হতে হলে হবো।

দে দেখুন আমি কিন্তু রুমের বাইরে চলে যাবো।

আমাকে উপেক্ষা করে বাইরে কেনো এক পা ও বাড়াতে পারবে না। বলেই,,
আমার হাতে একটা রিং পরিয়ে দিয়ে হাতে একটা চুমু দিয়ে বলে ভালবাসি পাগলি ভীষণ ভালবাসি।এত সময় দুষ্টুমি করছিলান।এই ভালবাসার জন্য তো তোমাকে কাছে চাওয়ার এত আকুলতা ছিলো আমার।

এখন এই ভারী ভারী শাড়ি গহনা খুলে রাখো তো।বলেই নিরব আমার কানের দুল,গলার ভারী ভারী গহনা, চুড়ি সব খুলে দিলো।বললো যাও ওয়াশ রুমে গিয়ে শাড়ি চেঞ্জ করে এসো।আমি ওয়াশ রুমে গিয়ে শাড়ি খুলছি এমন সময় ওয়াশ রুমের ওয়ালে ছায়ার মতো কিছু একটা দেখে ভূত বলে চিৎকার দিয়ে উঠলাম।নিরব দ্রুত ওয়াশ রুমে প্রবেশ করলো আমি নিরব দেখেই জড়িয়ে ধরলাম। ভয়ে থর থর করে কাঁপছি।
নিরবের বুকের সাথে খুব শক্ত ভাবে লেপ্টে থাকলাম।

নিরব বলে কি হয়েছে মৃথিলা এমন করছো কেনো?

ভূত!

ভূত টা আমিই ছিলাম ইচ্ছা করেই উকি দিচ্ছিলাম আমার ছায়া ই পড়ছিলো।বাট ভাবতে পারি নি এইভাবে বউ এসে জড়িয়ে ধরবে।ভাবছি রোজ ভূত হবো আর বউ জড়িয়ে ধরবে শুনেছি বউ জড়িয়ে ধরলে নাকি হার্ট ভাল থাকে।

মানুষ টা ফাজিল কল্পনা করা যায়।

এইদিকে শাড়ি ও পরতে পারছি না নিরবের সামনে।

নিরব আমাকে চমকে দিয়ে নিজের আমার শাড়ির খুলে দিলো আর একটা প্লাজু আর ওয়ান পিছ এগিয়ে দিয়ে বললো নাও এটা পরে নাও আমি তোমার দিকে তাকিয়ে কিছুই দেখি নি।আমি চোখ অফ করে আছি তুমি পরে নাও।

হঠাত যদি চোখ খুলে দেখেন।

ওকে আমি উল্টা দিকে ঘুরে তাকালাম হ্যাপি।

নিরব অন্য দিকে ঘুরে তাকালে চেঞ্জ করে নিলাম।।
আহা কি ফ্রেশ লাগছে এত সময় ভারী ড্রেসে কেমন যেনো লাগছিলো আমার।

নিরব আমাকে কোলে তুলে নিয়ে রুমের লাইট অফ করে দিয়ে আমাকে বুকের সাথে শক্ত ভাবে জড়িয়ে ধরে সুয়ে থেকে বলে,মৃথিলা অন্য মানুষের কাছে বাসর ঘর আমার বাসর ঘর ভিন্ন।আমি আমার জান পাখিটাকে এইভাবে সারাজীবন বুকের সাথে আগলে রাখতে চাই।আর আমার ছোট্ট কিছু চাওয়া আছে রাখবে।

হুম রাখবো।

আমি রোজ বাসায় আসলে খোলা চুলে ছুটে এসে দরজা খুলে দিবে।আমি সব ক্লান্তু দূরে সরিয়ে দিয়ে কপালের ঘাম মুছে তোমার কপালে ঠোঁট ছুইয়ে দশ মিনিট জড়িয়ে ধরে রাখবো।এই অত্যাচার টুকু মেনে নিতে হবে কিন্তু।

আমি নিরবের বুকের মাঝে আরো গুটিসুটি মেরে রইলাম।ওর হার্টবিট এর সাউন্ড শুনছিলাম।

নিরব আমাকে বলে তোমাকে হাইয়ার এডুকেটেড হতে হবে।তোমাকে লয়ার হতে হবে।নারীবাদী হবে, যাতে ফিউচারে তুমি বা তোমার মায়ের সাথে যা হয়েছে এমন আর কোনো মেয়ের সাথে না হয়।মেয়েদের আইডল হতে হবে তোমায়। তোমাকে দেখিয়ে দিতে হবে মৃথিলা।আমি সেদিন তোমায় শরীর স্পর্শ করে সেই ভালবাসা দিবো যেটা সামি স্ত্রীর মাঝে হয়ে থাকে।আমি চাই না তোমাকে এসব সাংসারিক ঝমেলায় রেখে তোমার জীবনের উদ্দেশ্য অপূর্ণ রাখতে।আমাকে তুমি কথা দাও মৃথিলা তুমি এক এবং একমাত্র ফোকাস লেখাপড়া তে দিবে।একদিন লয়ার হবে, না লয়ার এর পাশাপাশি তোমাকে জজ হিসাবে দেখতে চাই আমি।

আমি ফিসফিস করে বললাম এক আমাকে নিয়ে আর কত স্বপ্ন আপনার বলুন তো।।

আমার যত স্বপ্ন সব তোমার উপর চাপিয়ে দিবো আর তুমি পূরান করবে সেটা।আর দিন শেষে ক্লান্ত হয়ে বাসায় ফিরে দেখবে এক সাগর ভালবাসা নিয়ে অপেক্ষা করছি আমি।

নিরবের বুকে মাথা রেখেই সব কষ্ট হাওয়ায় উড়িয়ে দিয়ে কাটিয়ে দিলাম রাত টা।

চলবে,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here