হিয়ার মাঝে পর্ব ৫২+৫৩+৫৪

#হিয়ার_মাঝে
৫২.
#WriterঃMousumi_Akter

মনের মাঝে প্রচন্ড ঝড় বয়ে যাচ্ছে মৃথিলার।মনে হচ্ছে কোথাও কিছু হয়েছে।কি হয়েছে বুজতে পারছে না।প্রচন্ড অশান্তি নিয়ে বার বার ফোনে ট্রাই করে যাচ্ছে নিরবের ফোনে।ফোন রিং হয় কিন্তু কেউ ফোন তোলে না।অশান্তিতে পায়চারী করতে করতে বারান্দায় এসে দাঁড়ালাম।মা বলছে চিন্তা করিস না মা।সব ঠিক আছে হয়তো ও গাড়িতে ফোন সাইলেন্ট মুডে।মায়ের কথায় মন শান্ত হলো না আমার।কি করবো আমি বুঝতে পারছি না।অজানা ভয়ের আশংকায় বুকের মাঝে তোলপাড় হয়ে যাচ্ছে।বারান্দায় ফোন হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি।পাশের ফ্লাটের আন্টি আমাকে ডেকে বললো মৃথিলা এসো আমাদের রুমে এসো মা।মন খারাপ করে আছো ক্যানো?স্বভাব সুলভ একটা হাসি দিয়ে বললাম না আন্টি ঠিক আছি।আন্টির জোরাজোরি তে আন্টি দের রুমে প্রবেশ করলাম।আঙ্কেল টিভি তে নিউজ দেখছিলেন।হঠাত দেখি ব্রেকিং নিউজ দেখাচ্ছে বাস এক্সিডেন্ট এ মারা গিয়েছে একটা ছেলে যার পরনে কালো শার্ট কালো গেঞ্জি।মুখ টা ক্লিয়ার বোঝা যাচ্ছে।আর কয়েক জন আইসিইউ তে আছে।নিউজ টা দেখেই আমার মাথা ফাঁকা হয়ে গেলো নিরব তো কালো ড্রেস পরেই বেরিয়েছিল।ছিঃএসব আমি কি ভাবছি আমার নিরব হবে কেনো?নিরব যে গাড়িতে গেছিলো সেই গাড়িটায় এক্সিডেন্ট করেছে।মাথার মাঝে আচমকা ঘুরে উঠলো।মা ও এগিয়ে এলো।মা তো হাউ মাউ কাঁন্নায় ভেঙে পড়লো।আমি নিরবের ফোনে ফোন দিয়েই যাচ্ছি।আমার বিশ্বাস ওর কিছু হয় নি।ওর প্রতি আমার কোনো বিশ্বাস আজ ও ভাঙে নি।

বেশ কতগুলো কলের পর কল টা রিসিভ হলো।কেউ একজন দ্রুত বললো কে বলছেন দ্রুত আসুন হসপিটালে।যার ফোন সে এক্সিডেন্ট এ মারায়া গিয়েছে।বলেই ফোন টা কেটে দিলো।

কথাটা শুনেই মনে হলো আকাশের মেঘে মেঘে গর্জন হচ্ছে,সমুদ্রের ঢেউ প্রচন্ড তান্ডব করছে,প্রচন্ড ভূমিকম্পন হচ্ছে।মাথার মাঝে ফ্যাকাশে হয়ে গেলো।আমার চারপাশের পৃথিবী ঘুরছে।কোন কিছু যেনো স্হির নেই।

নিরব নেই এটা ভাবাও অসম্ভব।নিরব নেই এটা আমি ভাবতেও পারবো না।এই ফোন কল কে আমি বিশ্বাস করতে পারলাম না।চোখের সামনে শুধু নিরবের স্মৃতি গুলো ভাসছে।মায়ের মুখের দিকে তাকানোর অবস্থা নেই।সদ্য স্বামি হারিয়ে একমাত্র ছেলের এই অবস্থা। সেন্সলেস হয়ে পড়ে গেলাম সেখানেই।রিফাত,রিক ভাইয়া,সুপ্তি,মুনতাহা আপু সবাই খবর পেয়ে চলে এসছে।ওরা আমাকে সেন্সলেস অবস্থায় হসপিটাল নিয়ে গেলো সাথে মা কেও।মা কে সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা কারো জানা নেই।আমার মাথায় পানি দিতে দিতে হসপিটালে পৌছাতে পৌছাতে জ্ঞান ফিরে এলো আমার।

পাগলের মতো ছুটছিলাম আমি।সাইডের মানুষ বলছে এই বাচ্চা মেয়েটার হজবেন্ড মারা গিয়েছে।কথা টা শুনে আমি আরো স্তব্ধ হয়ে গেলাম।হসপিটাল জুড়ে এক্সিডেন্ট এর রুগি।

সব জায়গা খোজাখুজি করলাম কোথাও নিরব নেই।আহত যে রুগি গুলা ছিলো সেখানে কোথাও নিরব নেই।প্রতিটা রুগি কে চেক করে দেখলাম কোথাও নেই নিরব।প্রতিটা মানুষ আমাকে দেখে বুঝছিলো আমি স্বাভাবিক অবস্হায় নেই।ডাক্তার রা আমার পিছ পিছ ঘুরছিলো ম্যাডাম আপনি কোন রুগিকে খুজছেন।কারো কথার কোনো উত্তর দিলাম না।আহত রুগিদের মাঝে কোথাও নিরব কে না পেয়ে হসপিটালের ফ্লোরে বসে পড়লাম।চোখ বন্ধ করে জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছিলাম।আমার দম আটকে আসছিলো।

কোথায় আছো তুমি নিরব। কোথায় গেলে পাবো তোমায়।যেখানেয় পায় যেনো সুস্থ পায়।

একজন ডাক্তার বললো ম্যাডাম একজন নিহত আপনি উনাকে দেখতে পারেন।ডাক্তার কে জোরে ধাক্কা দিয়ে চিৎকার দিয়ে বললাম,না ডাক্তার আমাকে কোনো লাশের কাছে নিবেন না।আমার নিরব আমাকে রেখে যেতে পারে না।আমার সুস্থ জীবীত নিরব কেই চাই। আমার নিরব কে চাই মানেই চাই ডাক্তার।

“ডাক্তার একটা দীর্ঘঃনিঃশ্বাস ছেড়ে বললেন সরি ম্যাডাম।এই সরি শব্দটা বলা আমাদের জন্য অনেক কষ্টের।একজন ডাক্তার যখন কোনো রুগিকে তার পরিবারের হাতে তুলে দিতে পারে না সেই ডাক্তার কত দিন যাবত ডিপ্রেশন এ ভোগে আপনাদের আইডিয়া নেই।কিন্তু আমরা হৃদয় হীন।প্রতিনিয়ত এটা দেখতে দেখতে আমরা অভ্যস্ত। নিয়তির বিধান মেনে নিতেই হবে ম্যাডাম।”

“না ডাক্তার প্লিজ না।আপনি না ডাক্তার।আপনি মানুষের জীবন বাঁচান।আরে কিসের ডাক্তার আপনি।মানুষ বাঁচাতে পারবেন না তাহলে কেনো ডাক্তার হলেন।”

“আমি জানি আপনার মনের অবস্থা ভাল নেই।সব উপরওয়ালার হাতে। ”

“তাহলে উপরওয়ালাকে বলেন আমাকে নিয়ে নিরব কে ফিরিয়ে দিতে।আপনি জানেন ডাক্তার ছোট বেলায় আমার মা মারা গিয়েছে,আমার বাবা আমাকে অনেক অত্যাচার করেছে।সৎ মায়ের অত্যাচারের দাগ এখনো আমার শরীরে আছে।আমার ছোট বেলা খুব কষ্টে কেটেছে।ভালবাসা নামক কিছু আমার জীবনে ছিলো না।এই অসহায় এতিম মেয়েটার জীবনে ও এসছিলো।ও না আসলে আমি বানের জলে ভেষে আসা খড় কোটার মতো স্রোতে ভেষে যেতাম।কাঁদছিলাম আমি খুঁব কাঁদছিলাম কাঁদতে কাঁদতে ডাক্তার কে বলছিলাম।।ডাক্তার আমার হজবেন্ড ছাড়া আমার জীবনে আর কেউ।আমি প্রেগন্যান্ট ডাক্তার ওর সন্তানের মা হতে চলেছি।ওর কিছু হলে আমি বাঁচবো না।আমার জীবনে একমাত্র ও ছাড়া কেউ কোনদিন ভালবাসে নি।ডাক্তার প্লিজ আপনি না ডাক্তার।আমার সন্তানের বাবাকে ফিরিয়ে দিন ডাক্তার।ডাক্তার এর কলার ধরে চিৎকার করছিলাম।ডাক্তার সহ আশে পাশের অনেক মানুষ জড় হয়ে কাঁদছিলো আমার কাঁন্না দেখে।নিরবের মায়ের কি হবে ডাক্তার। মায়ের যে ওই একমাত্র সন্তান ছেলে ছাড়া আর কেউ নেই।”

রিফাত ভাইয়া, সুপ্তি আমাকে ধরে নিয়ে গেলো।স্ট্রেচারে রাখা সাদা কাপড়ে ঢাকা রাখা আছে একটা লাশ।যেটা দেখার সহ্য ক্ষমতা আমার ছিলো না।চোখ বন্ধ করে তাকিয়ে আছি আমি।রিফাত ভাইয়া বলছেন প্লিজ বোন চোখ টা খোলো।নিজ চোখে দেখো।সাদা কাপড় টা মুখে থেকে সরাতেই হাউ মাউ করে কেঁদে উঠলাম।মুখ টা কি বিশ্রি ভাবে থোতলানো।স্ট্রেচার জোরে ধাক্কা মেরে বললাম এটা আমার নিরব না।কিছুতেই না।ওর মুখ স্পষ্ট না থাকলেও আমি সিওর এটা আমার নিরব হতে পারে না।রিফাত ভাইয়া আমার কাঁধে হাত দিয়ে বলেন মিথু বাস্তবতা যে মেনে নিতেই হবে।আমি ভাইয়াকে জোরে ধাক্কা দিয়ে বললাম কিসের বাস্তবতা।এটা নিরব না কিছুতেই না।আমি নিরবের হাত পায়ের গড়ণ চিনি।আমার নিরব কোথায় তাহলে?

ডাক্তার বললেন,ডিএনএ টেস্ট করলেই বোঝা যাবে।

আমি ডাক্তার কে বললাম,কোনো ডিএন এ টেস্ট চায় না।আমার নিরবকে আমি চিনি এটা নিরব না।

এমন সময় হসপিটালে নিরবের ফুফু আর কাকারা এসে আমাকে বললো অলক্ষুণে মেয়ে বাপের সংসার খেয়েছে।তারা সবাই জেলে।আমার ভাই এর সংসারে এসে আমার ভাই টাকে খেয়েছে দু’দিন হতে পারলো না।এখন আমার ভাতিজা কেও খেয়েছে।সব ই তো শেষ করলি এখন এখানে এসে কি নাটক করছিস।তুই তো ঠিক ই দুই দিন পর আরেক টা জামাই ধরে নিয়ে সংসার করবি। আমরা কি আর আমাদের নিরব কে ফেরত পাবো।

ডাক্তার সাহেব রেগে গিয়ে বলেন বেরোন আপনারা এখান থেকে।ছিঃ ছিঃ আপনাদের মেন্টালিটি এত বাজে। একটা এক্সিডেন্ট এর জন্য আপনারা একজন মানুষ কে হ্যারাসমেন্ট করছেন।সমাজের সব থেকে বড় সমস্যা আপনারাই।আপনাদের জন্য ই সমাজের মানুষের আজ এই অবস্থা।

অন্য দিকে মাকে সেলাইন দেওয়া হয়েছে।মা অসুস্থ।

এমম সময় একজন ডাক্তার এসে বললো স্যার আই সি ইউ তে একজন প্রেসেন্ট অবস্থা ভালো না উনিও এক্সিডেন্ট এর প্রেসেন্ট।৪৮ ঘন্টায় জ্ঞান না ফিরলে উনাকে আর বাঁচানো যাবে বা।প্রচুর ব্লাডের প্রয়োজন।উনার কোনো আত্মীয় খুজে পেলাম না।কথাটা শুনে চমকে গেলাম আমি।ডাক্তার কে বললাম প্লিজ আমাকে আই সি ইউ তে নিয়ে চলুন।
#হিয়ার_মাঝে
৫৩.
#WriterঃMousumi_Akter

আই সি ইউ এর দিকে পা বাড়ানোর শক্তি ছিলো না আমার।দু,মিনিটের পথ আমার কাছে কয়েক’শ মাইলের দূরত্ব মনে হচ্ছিলো।পৃথিবীর সব ভর যেনো আমার শরীরে এত ভারী শরীর নিয়ে হাঁটা সম্ভব ছিলো না আমার জন্য।বুকের মাঝে অসহ্য যন্ত্রণা হচ্ছিলো চিৎকার দিয়ে বলতে হচ্ছিলো আল্লাহ ওকে ঠিক রেখো তুমি।ও ছাড়া কেউ নেই আমার।নিমিষেই আমার ভেতরের সব হাসি,আনন্দ মিলিয়ে যায়।বুক ফাটা আর্তনাদ নিয়ে নিরব কে খুজছিলাম আমি।ভেতরের চিৎকার বাইরে বেরোচ্ছিলো না।আমার সেই শক্তি ছিলো না চিৎকার করবো।সুপ্তি আর রিফাত ভাইয়ার কাধে ভর দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলাম।আমার হার্টবিট কয়েক’শ কিঃমি গতি বেগে চলছিলো।

নাকে অক্সিজেন,ব্লাড চলছে অচেতন ভাবে পড়ে আছে বিভিন্ন মেডিকেল যন্ত্রপাতির মাঝে।মুখ টা দেখেই বুকটা আঁতকে উঠলো আমার।হাসি,খুশি,সেই মুখ টা মলিন ভাবে পড়ে আছে চিকিৎসারত অবস্থায়।

চারদিকে ডাক্তার রা বলছে এত সুন্দর একটা ছেলে আগে দেখিনি।ছেলেটা কে বাঁচানো সম্ভব নয়।শরীরের সব ব্লাড বেরিয়ে গিয়েছে।খুব বাজে ভাবে আঘাত খেয়েছে মাথায়।লাইফ রিস্ক এ আছে।এনি টাইম প্রাণ বেরিয়ে যাবে এমন কন্ডিশনে আছে।বেঁচে থাকার চান্স ১% বাকি ৯৯% এ কোনো চান্স নেই।উনার রিলেটিভ দের কি পাওয়া গিয়েছে।শেষ দেখা টা হয়তো উনার ফ্যামিলির সাথে হলো না।উনাদের কথা গুলো শুনে আমার মাথা যেনো আরো ফাঁকা হয়ে যাচ্ছিলো।কি বলছেন উনারা এগুলা।উনাদের গবেষণা করা রুগিটির দিকে তাকিয়ে চোখ দিয়ে অশ্রু ছেড়ে দিলাম।নিরব কে নিয়েই এত কথা হচ্ছে।

নিরব দেখেই একটা চিৎকার দিলাম মা তোমার ছেলে।মা যেনো সব৷ কিছু এক ঝাড়ি দিয়ে ফেলে ছুটে চলে আসলো।এক মায়ের কাছে সন্তানের এমন অবস্থা সহ্য করার ক্ষমতা কতটা নির্মম সেটা নিরবের মাকে না দেখলে বোঝা যেতো না।মা আমাকে জড়িয়ে ধরে শুধু বলছিলো মিথু একদিন নিরব কে বলেছিলাম আমার বৌমা ভাল নেই তাকে আমার কাছে এনে দে।আজ আমি তোকে বলছি আমার ছেলে ভাল নেই আমার ছেলেকে আমার বুকে ফিরিয়ে দে মা।নিরব আমার একটা মাত্র ছেলে।নিরবের কিছু হলে আমি থাকতে পারবো না।ওর বাবার অনুপস্হিতিতে নিরব কে নিয়ে বেঁচে ছিলাম।নিরবের কিছু হলে আমিও মরে যাবো।

মাকে কি বলবো জানিনা।নিজের ভেতরের যন্ত্রণা শুধু চোখের পানি হয়ে পড়ছিলো। মাকে জড়িয়ে ধরে হাউ মাউ করে কাঁদছিলাম।”মা তোমার ছেলের কিছু হলে আমার কি হবে।তোমার ছেলেকে আমি ভীষণ ভালবাসি মা।তোমার ছেলের জানাই হলো না মৃথিলা তাকে কতটা ভালবাসতো।মা তোমার ছেলে সব সময় আমাকে নিয়ে মেতে থাকতো,সব সময় আমাকে বুঝিয়েছে সে আমার পাশে আছে। কিন্তু আমি তো কখনো সেভাবে প্রকাশ ই করতে পারিনি।মা আমি এখন কি করবো বলো।তোমার ছেলেকে বলো মৃথিলা তাকে ভালবাসে মা।তোমার ছেলের সন্তান এর কি হবে মা।ডাক্তার রা এগুলা কি বলছে মা।সবাই কে এগুলা বলতে নিষেধ করো।আমি আর নিতে পারছি না মা।মা ডাক্তার রা বলছে তোমার ছেলে নাকি লাইফ সাপোর্ট এ আছে।ওর নাকি সারভাইভ এর চান্স নেই।আমার সাথে সব সময় এমন কেনো হয় মা।কেনো আমার প্রিয়জন রা বেঈমানি করে আমার সাথে।যে আমাকে ভীষণ ভালবাসে সেই আমাকে একা করে দেওয়ার কথা ভাবে।প্রথমে তো আমার মা আমাকে ধোকা দিয়েছে তারপর তোমার ছেলে।তোমার ছেলে আমার সাথে এমন করতে পারে না মা।তোমার ছেলে আমাকে ধোকা দিতে পারে না মা।আমি এভাবে কাঁদছি তোমার ছেলে চুপ হয়ে আছে কেনো?নিরব আমার জীবনের সব মা।ওর কিছু হলে আমি ও ওর সাথে চলে যাবো।

মা কে ছেড়ে দিয়ে ফ্লোরে বসে পড়লাম। হাত পা ছোড়াছুড়ি করছি আর কাঁদছি।মানুষ জন ভর্তি হসপিটালে।চারদিকে এক্সিডেন্ট এর রুগি।বাকিরা কিছুটা আহত হলেও ঠিক ই আছে।মারা গিয়েছে একটা ছেলে।আর নিরব এর অবস্থা ভাল না।

একজন ডাক্তার আমাকে বলেন,মা ছেলেটা কি তোমার হজবেন্ড আর তুমি কি বললে তুমি প্রেগন্যান্ট।

ডাক্তার এর কথা শুনে আরো জোরে কেঁদে দিয়ে বললাম,হ্যাঁ উনি আমার সব কিছু।শুধু স্বামি না আমার জীবনের বেঁচে থাকার কারণ।

ডাক্তার আমাকে বললেন,আমাকে চিনবে না তুমি মা। আমি তোমাকে চিনি আজ থেকে প্রায় ৫ বছর আগে কোর্টে দেখেছিলাম তোমাকে।তোমার মায়ের মৃত্যুর কেস নিয়ে গেছিলে।সেদিন কেস টা তুমি জিতেছিলে।ভাগ্য কেনো বার বার তোমার সাথেই এমন করে।নিরব ওর নাম তাইনা।ওর মতো কেয়ারিং হজবেন্ড এ যুগে পাওয়া যায় না।একটা মানুষ এতটা ভালবাসতে পারে কিভাবে নিরব কে না দেখলে বুঝতাম না।

প্লিজ ডাক্তার নিরব কে ফিরিয়ে দিন।ও ছাড়া আমার কেউ নেই।বলুন ডাক্তার ও ঠিক হয়ে যাবে প্লিজ বলুন।।

জন্ম মৃত্যুর মালিক একজন মা।তাকিয়ে দেখো ওদিকে।

যে ছেলেটি মারা গিয়েছে ওর একটা মেয়ে পাপ্পা বলে কাঁদছে।মাম্মি পাপ্পার কাছে যাবো।মাম্মি তুমি কথা বলছো না কেনো?ও মাম্মি পাপ্পার কি হয়েছে।পাপ্পা নাকি মারা গিয়েছে।মাম্মি পাপ্পাকে উঠতে বলো।

মেয়েটা তার বাবার হাত ধরে টানছে, পাপ্পা আই লাভ ইউ পাপ্পা।পাপ্পা আই লাভ ইউ পাপ্পা।উঠে এসো পাপ্পা তুমি ঘুমোচ্ছো তাই মাম্মি কাঁদছে।মাম্মি কাঁদলে আমার ভীষণ কষ্ট হয়।

ওই মুহুর্তে কারো কষ্ট ই কম ছিলো না।মেয়েটির পাপ্পা ডাক শুনে নিজের পেটে হাত দিলাম।নিরবের সন্তান আমার পেটে।ও পৃথিবীতে আসার আগেই ওর পাপ্পার ওকে নিয়ে কত স্বপ্ন।নিজেকে সামলাতে না পেরে কখন সেন্সলেস হয়ে গেলাম জানিনা।

রিফাত ভাইয়া,রিক ভাইয়া মামা সবাই নিরবের জন্য দৌড়াদৌড়ি করছে।মা আর আমার পাশে মুনতাহা আপু,সুপ্তি,সুপ্তির আম্মু,অন্যান্য আত্মীয়রা আছেই।সেন্স ফিরতেই নিরবের কথা মনে পড়লো।

ডাক্তার এসে জানিয়ে দিলেন আই এম সরি আমাদের আর কিছুই করার নেই।উনার কন্ডিশন ভালো না।দেখতে চাইলে যে কেউ একজন যান।মা নিজেই আমাকে পাঠালো।বিষন্ন মন নিয়ে এলো মেলো খোলা চুলে আধপাগল অবস্থা আমার চোখের কাজল লেপ্টে কয়েক বছরের রুগি লাগছে।নিরবের বেডের পাশে আমি গিয়ে বসলাম।এক ভাবে তাকিয়ে আছি আমি নিরবের দিকে।চোখের পাতা দুটাও যেনো গভীর ঘুমের দেশে পাড়ি জমিয়েছে।নাকের ভেতরে রক্ত জমে আছে।হাত পা বিভিন্ন জায়গা কেটে ছুলে একাকার অবস্থা যেটা আমার সহ্য ক্ষমতার বাইরে ছিলো।মনে হচ্ছে হৃদপিন্ড টা এক্ষুণি বের হয়ে আসবে বা ফেটে চৌচির হয়ে যাবে এক্ষুণি।

নিরবের হাত ধরে কাঁদতে কাঁদতে বললাম,তুমি জানোনা আমার তুমি ছাড়া কেউ নেই।সবাই বলছে তুমি নাকি আর উঠবে না কিন্তু আমি জানি তুমি উঠবে।তোমাকে উঠতেই হবে নিরব।আমার জন্য আমাদের বেবির জন্য তোমাকে উঠতে হবে।নিরবের হাত শক্ত ভাবে চেপে ধরে রেখেছিলাম আমি।বাট ও ওর হাত গুলো এড়িয়ে দিচ্ছিলো।চিৎকার দিয়ে বললাম,আমার হাত কেনো ছেড়ে দিচ্ছো।তোমাকে ধরতেই হবে আমার হাত।তুমি কি ছাড়ার জন্য আমার হাত ধরেছিলে।নিরব প্লিজ ওঠো।তোমায় ছাড়া আমি কিভাবে বেঁচে থাকবো বলো।নিরবের হাত পেটে চেপে ধরে বললাম,তোমার অনাগত সন্তান তুমি ছাড়া কিভাবে বড় হবে নিরব।নিরব প্লিজ আমার হাত ধরো তুমি।আমি তোমাকে এভাবে দেখে সহ্য করতে পারছি না।হার্টফেল হবে আমার। প্রচন্ড শ্বাসকষ্ট শুরু হয়ে গেলো আমার।

এমন সময় ঢাকা মেডিকেল কলেজের প্রফেসর ডাক্তার বিহান প্রবেশ করলেন নিরবের রুমে।ডাক্তার বিহান আমাকে শান্ত্বনা দিলেন মিস মৃথিলা আল্লাহর কাছে প্রার্থণা করূন সব ঠিক হয়ে যাবে।আপনার ভালবাসার জোর টা অনেক।তাকিয়ে দেখুন ওদিকে ওনার হার্টবিট প্রচুর রেসপন্স করছে।এমন অবস্থার রুগি বাঁচে না।কিন্তু যার আয়ু আছে তাকে কে মারবে মিস মৃথিলা।প্লিজ ডোন্ট বি আপসেট।আপনি ইমিডিয়েটলি টাকার ব্যবস্থা করূন।এক্ষুণি অপারেশন করাতে হবে।

নিরবের কপালে চুমু দিয়ে বললাম,নিরব মৃথিলা টাকার জন্য তোমার কিছু হতে দিবে না।

হুট করেই টাকা কোথায় পাবো।রিফাত ভাইয়ারা আর মামাদের কাছে যে টাকা ছিলো ওরা সাথে সাথে আমাকে দিয়ে দিলো।ওদের থেকে নিয়ে দশ লাখ টাকা জমা করে দিলাম।কারণ আই সি ইউ রুমের বিল হাইয়ার ট্রিটমেন্ট সাথে মেডিসিম দিয়ে অনেক টাকার ব্যাপার ছিলো।একভাবে সাত দিন আই সি ইউ তে নিরব।

আত্মীয় যা ছিলো সবার থেকে কম বেশী হেল্প নিয়েছি নিজেদের কাছে যা ছিলো সব শেষ করএছি।

গত সাত দিন শুধু প্রার্থনা করেছি নিরব যেনো সুস্হ হয়ে যায়।আজ ওর জ্ঞান ফিরেছে কিন্তু কথা বলতে পারছে না।জ্ঞান ফিরলেও কথা বলার মতো অবস্হায় নেই।নিরবের অপারেশন আজ।প্রচুর টাকার প্রয়োজন।টাকা পাওয়ার মতো কোনো জায়গা আর ছিলো না।সারাদিন চিন্তা করে বাড়িতে এসে নিরবের দেওয়া সব উপহার গুলো বের করলাম।মা আর আমার অনেক গহনআ ছিলো সব বিক্রি করে দিলাম।গহনা বিক্রি করে অনেক গুলো টাকা পেলাম।সেই টাকা দিয়ে ওটিতে পাঠালাম নিরব কে।

ওটির বাইরে মাথা নিচু করে চোখের পানি ফেলছি আমি।
#হিয়ার_মাঝে
৫৪.
#WriterঃMousumi_Akter

হসপিটালের করিডর এ ওটির সামনে মাথা নিচু করে চোখে টুপ্টাপ চোখের পানি ফেলে যাচ্ছি শুধু।কখনো ভাবিনি সারাজীবন পাশে থাকা মানুষ টাকে এভাবে ওটিতে পাঠিয়ে বাইরে অপেক্ষা করতে হবে সে ফিরবে নাকি ফিরবে না।নিরব কিভাবে সহ্য করছে এত কষ্ট।ও তো অনেক ব্যাথা পেয়েছে।সমস্ত শরীরে ক্ষত বিক্ষত হয়েছে।ওর এই যন্ত্রণা গুলো ভাবতে গেলে বুকের মাঝে ভারী হয়ে আসছে। চোখের পানি সবাইকে দেখাতে পারছি কিন্ত হৃদয়ের যন্ত্রণা তো কাউকে দেখাতে পারছি না।

নিরব একটা গহনা আমার গলায় পরিয়ে দিয়ে বলেছিলো কখনো খুলোনা এটা।কিন্তু সেটাও আজ বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছি।

আমার কাছে আমার স্বামি আমার বড় অলংকার। আমার গহনা আমার স্বামি।গহনা দিয়ে কি হবে যদি আমার স্বামি না ঠিক থাকে।শুধু নাক ফুক টায় রেখে দিলাম।কাছে আর কোনো গহনা নেই।এই নাক ফুল টা দেওয়ার দিনের কথা খুব মনে পড়ছে।তখন আপুদের লুকিয়ে কত কি করতো নিরব আমার জন্য।কি হচ্ছে ওটির ভেতরে কিছুই জানা নেই আমার।গত কয়েক দিন দু’পা আমার এক জায়গা হয় নি।হাঁটাহাটিঁ দৌড়াদৌড়ি করেছি শুধু টাকার জন্য।নিরবের নিজের আত্মীয়রা কেউ একটা টাকা দিয়েও হেলপ করে নি সহাই দেখিয়েছে অজুহাত।কিন্ত রিফাত ভাইয়া আর আমার মামাবাড়ির সম্পুর্ন সাপোর্ট পেয়েছি।আজ তারা না থাকলে কিছুই করতে পারতাম না।

হঠাত করে আমার পাশে এসে বসলো রিফাত ভাইয়া।।
“মৃথিলা জানো নিরব আর তোমাকে ভাল রাখবো বলে জীবনে অনেক গুলো দিন কষ্ট পেয়েছি।আল্লাহ সেটা বৃথা যেতে দিবেনা না।তুমি অধৈর্য হয়ো না।”

রিফাত ভাইয়া দীর্ঘ একটা নিঃশ্বাস নিলেন।সাইডে দাঁড়িয়ে নানা কাঁদছেন।কারো মুখে কোনো কথা নেই সবাই গভীর চিন্তায় আছে।

ওটির লাইট অফ হলো নিরব কে বাইরে আনা হলো।ডাক্তারের মুখে হাসি।নিরব আউট অফ ডেঞ্জার।তবে সুস্থ হতে অনেক সময় লাগবে।কথা শুনে মনে হকে এক ঝাঁক পাখি মনের আকাশ দিয়ে ডানা মেলে উড়লো পাখি গুলো সুখ পাখি ছিলো।

নিরব কে কেবিনে শিফট করানো হলো।মা তার ছেলেকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে।এভাবে দুইমাস নিরব কে হসপিটাল রাখতে হবে।আপাতত কোনো কথা বলতে পারবে না নিরব।কবে কথা বলতে পারবে এটা সিওর কেউ জানে না।তবে সেবাযত্ন আর উন্নত চিকিৎসা নিরব কে সুস্থ করে তুলবে।

উপরওয়ালার কাছে অনেক বড় থ্যাংক্স দিলাম।কেননা।আমাকে একটা সুযোগ দিয়েছে নিরব কে ভাল করার।কেবিন থেকে সবাই বেরিয়ে গেলে নিরবের হাত ধরে বসে অঝরে চোখের পানি ফেলছি আমি।

নিরব আমার কথা তুমি শুনতে পাবে না জানি।আমার কাছে আল্লাহর দেওয়া বেষ্ট গিফট ছিলে তুমি।তোমাকে ফিরে পেয়েছি আরেকবার এটা আমার জীবনের সর্বোশ্রেষ্ট গিফট। জানো নিরব তোমার আত্মীয় রা কি বলছে আমি নাকি তোমাকে এ অসুস্থ অবস্থায় রেখে অন্য কারো সাথে ভেগে যাবো।আজ তোমার অনুপস্হিতিতি আমার পায়ের নিচের মাটি নরম করে দিয়েছে।স্বামীর দূর্বলতা থাকলে মেয়েদের বুঝি এমন ই কঠিন পরিস্হিতি সহ্য করতে হয়।নিরবের কপালে চুমু দিয়ে বেরিয়ে গেলাম আমি।

আজ রাস্তা দিয়ে একা হাঁটছি জীবন আমাকে অনেক কঠিন জায়গা এনে দাঁড় করিয়েছে।কিভাবে কি করবো আমি।এক আমার ভার্সিটি,দুই আমি প্রেগন্যান্ট, তিন ব্যাংকের দেনা, চার আমার জীবনের সব টুকু ভালবাসা নিরব।

কতবার মানুষের কাছে হাত পাতা যায়।যে যা পেরেছে সাধ্য মতো চেষ্টা করেছে।আর তো মানুষের কাছে হাতা পাতা যায় না।ব্যাংক বাড়িটা নিয়ে নিলো আমাদের হাতে তুলে দিলো সামান্য কিছু টাকা।সুদ আর আসল হিসাব করে ব্যাংক তাদের টাকার জন্য বাড়ি নিলাম করে আমাদের সামান্য কিছু টাকা দিয়ে দিলো।বাড়িটাও থাকলো না আমাদের।

রিফাত ভাইয়ারা বলেছিলো তাদের বাসায় উঠতে কিন্তু আমি উঠি নি।সুপ্তি ও অনেক অনুরোধ করেছিলো কিন্তু আত্মসম্মান আমাকে বাঁধা দিচ্ছিলো।আমি জীবনে অনেক কঠিন সময় পার করেছি তাই বিশ্বাস আছে আবার ও আমি পারবো।আমাকে পারতেই হবে সব।জীবন যুদ্ধে নেমে পড়লাম আরেক বার আমি।

আমি মাত্র ইন্টার পাশ একটা মেয়ে গ্রাজুয়েশন এখনো কম্পিলিট হয় নি।কোথায় পাবো চাকরি?কে দিবে দিবে চাকরি।চাকরির বাজার এতটাও সোজা নয়।রিক ভাইয়ার যোগাযোগ এ আমার রেজাল্ট আর ভার্সিটির কোয়ালিফিকেশন ভালো থাকায় একটা প্রাইভেট কোম্পানি তে জব নিলাম।রোজ ৮-৫ টা অফিস।ভার্সিটি তে আমার সুনাম থাকায় ভিসি স্যার আমাকে সব ধরনের সুবিধা দিলেন।ক্লাস অফ দিলাম ভার্সিটির।নতুন একটা বাসা নিলাম ভাড়ার সেখানে গিয়েই উঠলাম।সকালে রান্নাকরে মা আর নিরবের জন্য হসপিটালে খাবার দিয়ে আসতাম তারপর অফিস যেতাম।নিরব কিছুই খেতে পারতো না।খাবার স্যালাইন চলতো।স্যুপ খাওয়ানো হতো।হসপিটাল থেকে অফিস আবার রাতে মাঝে মধ্য বই খুলতাম।সারারাত নিরবের পাশে বসে থাকতাম মাকে বাসায় পাঠিয়ে দিতাম।নিরবের পাশে বসে থাকতে থাকতে ওর বুকে মাথা দিয়ে কত যে ঘুনিয়ে গিয়েছি।

জীবন আমাকে কোথায় নিয়ে গেছিলো।ওই মুহুর্তে আমার জীবন কে খুব কাছ থেকে দেখেছিলাম আমি।আমার সন্তান আর আমার স্বামি দুজন ই আমার উপর নির্ভর করছিলো।

সব থেকে কষ্ট পেতাম নিরবের যে আত্মীয় রা বিপদে পাশে থাকে নি তারা জঘন্য অপবাদ দিয়েছে আমি নাকি সাদা চামড়া বিক্রি করে টাকা আনছি।চাকরি কি এত সোজা এ যামানায়।তারা হয়তো জানে না যোগ্যতা ঠিক থাকলে চাকরি খোজা লাগে না চাকরি নিজেই খুজে নেয়।কারো কোনো কথা আর গায়ে মাখলাম না।যে যা বলতো শরীরের উপর মানিয়ে নিতাম।একদিন এর উত্তর অবশ্যই দিবো সবাই কে।

দু’মাস কেটে গিয়েছে নিরব কে বাসায় নিয়ে এসছি।নিরব কোমায় যাওয়ার মতো ছিলো এতদিন।

মা খাবার মাখিয়ে আমার গালে তুলে খাইয়ে দিচ্ছে আর বলছে মৃথিলা আমার ছেলেকে এত ভালবাসিস কেনো তুই মা।তুই যেটা করছিস আর কোনো মেয়ে হলেই হয়তো পারতো না।চেহারার কি অবস্থা দেখেছিস।চোখের নিচে কালি পড়ে গিয়েছে।চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে বললাম মা তোমার ছেলে যেদিন বলবে আমি ঠিক হয়ে গেছি মৃথিলা সেদিন আমি আমার সাজবো মা।আবার সুন্দরী হয়ে যাবো মা।আজ কত দিন ওর মুখে শুনি না তোমাকে অনেক সুন্দর লাগছে মিথু।

সেদিন ছিল শুক্রবার নিরব কে গোসল করিয়ে দিচ্ছি আমি।ওর মাথায় শ্যাম্পু করিয়ে দিচ্ছি।হঠাত সাবানেদ ফেনা নিয়ে ওয়ালে লেখা শুরু করলো” ভালবাসি মিথু”
লেখাটা দেখে আমার চোখ অশ্রুসিক্ত হলো।নিরব মানে আমার নিরব আজ তিন মাস পর বলছে ও আমাকে ভালবাসে।নিরবের চোখের দিকে তাকিয়ে দেখি ওর চোখ দিয়ে অশ্রু ঝরছে।ওর মাথাটা বুকের সাথে শক্ত ভাবে জড়িয়ে ধরে বললাম তুমি ধীরে ধীরে সুস্হ হয়ে যাচ্ছো নিরব।সেদিন আমি অনেক খুশি হবো যেদিন এই মুখ ফুটে আবার বলবে ভালবাসি জানপাখি।আম্মুর নিষ্পাপ নিষ্পাপ ছেলের দুষ্টুমি ভীষণ মিস করছি।

আমার ভার্সিটির এক্সাম শেষ করেই বিসিএস এপ্লাই করে ফেললাম।আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করলাম আমি যেনো চান্স পেয়ে যায়।নিরবের স্বপ্ন আমি যেনো অনেক বড় কিছু হতে পারি।

কেটে গেছে আরো কত গুলা দিন।হঠাত ঘুমের মাঝে নিরব চোখ বন্ধ করে আম্মু আম্মু বলে ডাকছে।আমি যেনো নিজের চোখ কে বিলিভ করতে পারছিলাম না।আমি মাকে ডাকলাম।মা এগিয়ে এসে বললো কি হয়েছে মিথু।আমি নিরবের দিকে ইশারা দিতেই মা অবাক হয়ে যায়।মায়ের চোখে আনন্দ অশ্রু ছিলো।

মা নিরবের মুখ ধরে ডাকতেই নিরব শান্ত ভাবে চোখের পাতা মেলে বলে আম্মু মৃথিলা কোথায়?মৃথিলা কে অনেক দিন দেখি না মনে হচ্ছে না।আম্মু একটা মৃথিলাকে আমার হাত টা ধরতে বলবে।মা বললো তাকিয়ে দেখ ওদিকে। নিরব তাকিয়ে দেখে ওর হাত আমি ধরে আছি।

মা রুম ত্যাগ করে চলে গেলেন।নিরব এক ঝটকায় বিছানা থেকে উঠে পড়লো।ও আসলে দেখছিলো ওর শারীরিক ফিটনেস ঠিক আছে কিনা।আমিও উঠে গিয়ে নিরবের পাশে দাঁড়ালাম।আমার মুখে ছিলো প্রশান্তির হাসি।

নিরব এক নজরে আমার দিকে তাকিয়ে ছিলো।দুজন দুজনের দিকে এমন গতিতে এগিয়ে গেলাম যেনো বিরাট কোনো হিমালয় থাকলেও সেটা ভেঙে যেতো।নিরব কে শক্ত ভাবে জড়িয়ে ধরে বললাম আমার নিরব।নরব আমাকে জড়িয়ে ধরে ভীষণ কাঁদলো।মৃথিলা আই লাভ ইউ।

ওর বলা আই লাভ ইউ শুনে পৃথিবীর সব কষ্ট মিলিয়ে গেলো কোথায় জানিনা।সেদিন সারাটা রাত দুজন দুজন কে আলিঙ্গন করেই ছিলাম।

মা নিরব কে সব টা খুলে বললো,নিরবের চোখে মুখে কষ্টের ছাপ।নিরব আমাকে ডেকে বললো,আমার জন্য তুমি এত কিছু করেছো মিথু।আমি তোমাকে আর পাঁচ জনের মতো ধন্যবাদ দিবো না বা কোনো ফরমালিটিস ও করবো না।আমার বুকের মাঝে আগলে রাখবো জানপাখি।তোমাকে আর কষ্ট করতে হবে না।এখন থেকে তুমি আমি মিলেই সব করবো।এক সাথে হাঁটবো জীবনের বাকি রাস্তা।জানি অনেক টা কষ্ট হবে।তবে কথা দিলাম তোমাকে কষ্টে রাখবো না।

এতদিনে প্রেগ্ন্যাসির লক্ষন স্পষ্ট এবং ক্লিয়ার বোঝা যাচ্ছে।সাত মাসের প্রেগন্যান্ট এখন আমি।

নিরব আমার কপালে চুমু দিয়ে বলে ইচ্ছা ছিলো এই পুরো সময় টা তোমাকে সময় দিবো কিন্তু পারি নি।সরি পুচকু তোর মাম্মির খেয়াল রাখতে পারি নি।

আমি নিরব কে বললাম পুচকু বলছে এখন থেকে খেয়াল রাখলেই হবে পাপ্পা।

অনেক দিন পর দুজনে প্রাণ খুলে হাসলাম।

চলবে,,
রিয়্যাক্ট দিবেন কমেন্ট করবেন।তাহলে সবার কাছে গল্প পৌছাবে।নিরব পাঠক দের কাছেও অনুরোধ কিছুদিন পাশে থেকে অন্তত রিয়্যাক্ট দিন গল্পে তাহলে পেজ রিচ ঠিক থাকবে।বৃষ্টি স্নাত সন্ধা ও আজ সন্ধ্যার আগেই দিবো। আর আজ সন্ধ্যা সাড়ে সাত টায় লাইভে আসতে পারি।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here