হিয়ার মাঝে পর্ব ৭

#হিয়ার_মাঝে
৭.
#WriterঃMousumi_Akter

খাটের নিচে খাবারের প্লেট পেয়ে মা আমার চুল ধরে কতগুলো গালিগালাজ করলো।আমার জন্যই নাকি সংসারে উন্নতি হচ্ছে না।আমার মা এসে সাংসার টা খেয়ে গেছে আর আমাকে রেখে গিয়েছে খাওয়ার জন্য।আমি নাকি রোজ রান্নার উপর থেকে খাবার চুরি করে খাই।তাছাড়া আমি নাকি খাই অনেক বেশী।আমার জন্য ভাতের চাল অনেক বেশী লাগে।দুনিয়ার যত গুলো খারাপ কথা বলা যায় সব ই বললো।

এমন সময় নিরব এসে বলে,আন্টি খাবার টা মৃথিলা নয় আমি খেয়েছিলাম।আমার খুব ক্ষুদা পেয়েছিলো তাই মৃথিলাকে খাবার দিতে বলেছিলাম আর আমি নিজেই প্লেট টা খাটের নিচে রেখেছিলাম।কিন্তু আপনারা তার জন্য মৃথিলাকে বকাবকি করছেন কেনো?আর কথায় কথায় ওর গায়ে হাত দেন কেনো আন্টি?আপনি না মা।দুইটা মেয়ের মাঝে একটা মেয়েকে এমন বকাবকি করাটা কি ঠিক।আর যায় হোক কাউকে খাওয়ার খোটা দেওয়া ঠিক নয় আন্টি।তাহলে একটা মানুষের খাবার আর ভেতরে যেতে চাই না।

বাবা নিরব এমন অভ্যাস ওর আছে।বাসার আত্মীয় আসলে সবার আগে চুরি করে খাবার খাওয়াটা ওর অভ্যাস এ পরিণত হয়েছে।বাবা নিরব একটা অনুরোধ করবো তুমি আমার ছেলের মতো ওই মেয়েটার হয়ে প্লিজ কিছু বলো না।ও মানুষের সামনে এমন ভাল সেজে থাকে।কিন্তু ও কতটা খারাপ সেটা আমরা জানি।ও ভাল হলে কি আর ওর সাথে এমন করতাম।ও যে ওর মায়ের মতো হয়েছে।মা গজ গজ করতে করতে বাইরে চলে গেলো।

আমি নিরবের সামনে দাঁড়িয়ে কাঁদছি। নিরব আমাকে বুঝিয়ে যাচ্ছে কেঁদো না একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে।আর কেঁদে লাভ কি?এটা কি নতুন কিছু তোমার জন্য।তোমার জায়গা আমি হলে ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বসে থাকতাম।আমি আরো জোরে হু হু করে কেঁদে দিলাম।নিরব অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে থেকে বলে আরো বেশী কাঁদছো কেনো?কারো কাঁন্না আমি সহ্য করতে পারিনা।কেমন একটা লাগে।আমি নিরব কে বললাম আগামি কাল আমার এক্সাম আমি এখনো কিছুই পড়ি নি।সকাল ৯ টায় এক্সাম।মা বলে দিয়েছে তার কাপ ভেঙে ফেলা হয়েছে তাই এ বছরে আর পরীক্ষার ফিস দিবে না আমাকে।আর পরীক্ষাও দিতে দিবে না।নিরব বলে কোনো সাজেশন আছে পরীক্ষার জন্য।থাকলে সেগুলা পড়ো। আর পরীক্ষা দিবে তুমি।ডোন্ট ওরি আমি আছি।

না আমাকে কলেজেই যেতে দেই না কিভাবে পাবো সাজেশন। পাশের ফ্ল্যাটের সুপ্তির কাছে পাওয়া যাবে।ও আমাকে যাবতীয় হেল্প করে।এক্সাম এর আগের দিন আপু আপুর ফ্রেন্ড দের নিয়ে আসে প্রতি বছর আর সারারাত গান বাজনা চালায়,আর আমাকে ডেকে এটা সেটা কাজ করায় যার ফলে আমি ভাল ভাবে পড়তে পারি না।

-তুমি চিন্তা করো না সাজেশন আমি এনে দিচ্ছি।ফোন করো সুপ্তিকে।

– আমার ফোন নেই।

-ফোন নাম্বার আছে সুপ্তির।

-হুম আছে।

নিরব সুপ্তির সাথে দেখা করতে গেলো।

সুপ্তি নিরব কে দেখে বললো জীবনে প্রথমবার দেখলাম ওই অসহায় মেয়েটার জন্য কেউ সাজেশন নিতে এসছে কেউ তার পাশে দাঁড়িয়েছে।আপনি কে জানিনা তবে ওর পিঠ টা একটু দেখবেন মার খেতে খেতে কোনো অস্তিত্ব আছে কিনা।জানিনা ওদের ফ্যামিলির সব আত্মীয় রা কেমন নিষ্টুর।

সুপ্তি যেনো ইচ্ছা করেই নিরব কে কথা গুলো বলছিলো।কারণ সুপ্তি চাইছিলো কেউ একজন অন্তত আমার পাশে থাকুক।

-নিরব সুপ্তিকে বলে, অনেক ভালবাসেন তাইনা বন্দুকে।

-আপনি কে প্লিজ বলবেন?

-ওর বাবার বন্ধুর ছেলে।

-যদি পারেন অন্তত মেয়েটাকে বাঁচানোর চেষ্টা করবেন যেনো ওই অমানুষ দের সাথে মিশে অমানুষ এর মতো আচরণ করবেন না।আপনি আবার ওর সরলতার সুযোগ নিয়ে ওকে আরো শাস্তি দিবেন না তো।আই মিন আপনি ওই নব আপুর দলের লোক না।আচ্ছা আপনি নব আপুর বয়ফ্রেন্ড নাতো আবার।

-নিরব একটু ঝুঁকে বলে না আমি আপনার মিথু আপুর হবু বয়ফ্রেন্ড।মিথু আপু থাকতে নব আপুর নাম বলছেন কেনো।বি পজিটিভ, পজিটিভ কিছু ভাবেন না হবু শালিকা।

-মানে

-মানে আপনি যে আমার শুভাকাঙ্ক্ষী সেটা দেখেই বুঝছি।এতদিন ধরে হবু বউটার পাশে ছিলেন সেই দিক দিয়ে শুভাকাঙ্ক্ষী।

-আপনি মজা নিচ্ছেন তাইনা।

-মোটেও মজা নিচ্ছি না মিস মৃথিলার বেষ্ট ফ্রেন্ড মিস সুপ্তি।আমি এখানে কিছু মানুষ কে মজা দিতে এসছি।আর আপনার ফ্রেন্ড কে এই নরক থেকে বাঁচাতেই আমি এসছি।আর চিন্তা করার দরকার নেই।

-তাহলে কাল মিথুকে নিয়ে এখান থেকে পালিয়ে যান।ওর এত কষ্ট আর মেনে নেওয় যাচ্ছে না।

-মিস সুপ্তি ধৈর্য ধরুণ।আমি মৃথিলাকে কোন রাইটে বলবো আমার সাথে পালিয়ে চলো।তার জন্য মৃথিলার আমাকে চেনাজানা লাগবে।তাছাড়া অতীতের কিছু হিসাব আছে সেগুলো মেটাতে হবে।না হলে,মৃথিলা জীবনে পূর্ণ তৃপ্তি পাবে না।মৃথিলার অনেক কিছু ফিরে পাবার আছে।আর আমি যা করবো ধীরে ধীরে বুঝে শুনে করবো।হুট করে আমি অধিকার দেখাতে গেলে সেটা কেউ ভাল চোখে দেখবে না।যে কেউ বলবে ছেলেটা খারাপ উদ্দেশ্য উদ্দেশ্য এসছে।মেয়েটাকে পাম পটি দিয়ে নিয়ে বেঁচে দিবে।

-সরি ভাইয়া! আমি ভুল বুঝেছি আপনাকে।

-নো প্রব্লেম আপু।যাও পড়তে বসো।

আজ রান্না আগে আগে হয়ে গিয়েছে বলে আপু আর আপুর ফ্রেন্ড রা তাদের এত্তগুলা ড্রেস আমাকে দিয়ে গেলো ক্লিন করতে।এইদিকে আমাকে পড়তে বসতেই হবে।না হলে কি করবো কাল।দুঃখে কেঁদেই দিলাম আমি।নিরব আমার কাছে এসে বলে মৃথিলা যাও তুমি যা করার আমি করছি।আমি নিরব কে বললাম না আমি করছি আপনি য্যান।

নিরব আমাকে বলে এখন নিরব ক্যা কেলমা দেখবে তুমি।বলেই,,,

ড্রেস গুলো নিরব সব ব্লেড দিয়ে কেটে দিলো।একটা ড্রেস ও ভাল রাখলো না।আর আপুর ফ্রেন্ড দের দামি দামি সব ড্রেস নিরব বিশ্রিভাবে কেটে পানিতে ভিজিয়ে ছাদে শুকাতে দিলো।এইদিকে ভয়ে আমার প্রাণ যায় যায় একটা অবস্থা। তবে আজ আর খুব বেশী ভয় পাচ্ছি না কেনো যেনো মনে হচ্ছে নিরব আমার সামনে ঢাল হয়ে এসে দাঁড়াবে।নিরব আমাকে পড়ার সুযোগ করে দিয়ে আপু আর আপুর ফ্রেন্ড দের সাথে গল্প করতে লেগে গেলো।এইদিকে নিরব ওর একটা এক্সট্রা ফোন আমাকে দিয়ে গেলো।বার বার টেক্সট করছে আমার পড়াতে কোনো অসুবিধা হচ্ছে না কিনা।অন্যবার আপু আর তার ফ্রেন্ড রা লাউডলি গান বাজনা বাজায় কিন্তু এবার আর তা করছে না।আমার মুখের কোনে অজান্তে একটা হাসি এলো।আপন কেউ থাকলে বুঝি এতটাই ভাল লাগে।আমার ও আপণ কেউ আছে ভাবতেই কেমন একটা লাগছে আমার।এই মানুষ টা অল্প সময়ে মনের মাঝে খানিক টা জায়গা করে নিয়েছে।

আমি পড়ার ফাঁকে সুপ্তিকে একটা মেসেজ করলাম।

-হাই আপু।

-কে আপনি।

-আমি শাকচুন্নি।

-কোন গাছের চুন্নি আপনি।

-আপনাদের বাড়ির পেছনের হিজল গাছের।

-এই কে আপনি। ব্লক দিবো কিন্তু।

-আরে কুত্তি আমি মিথু।

– মিথু তুই।এটা সত্যি তুই।ফোন কোথায় পেলি মিথু।

-এটা নিরবের ফোন।আমাকে দিছে ইউজ করতে।আমার ফোন নেই তাই।দিয়ে বললো লুকিয়ে লুকিয়ে ইউজ করতে।মা আর আপু যেনো না দেখে।পরীক্ষার সময় বিভিন্ন আপডেট জানতে নাকি ফোনের প্রয়োজন আছে।

-কিরে মিথু ব্যাপার কি?ডাল মে কুচ কালা হে।

-ডাল আবার কালা হবে ক্যান সুপ্তি।

-এই শোন কথা ঘুরাস না।কি ব্যাপার কি।নিরব ভাইয়ার দেখছি ভালোই টান আছে তোর উপর।এত হ্যান্ডসাম একটা ছেলে এমনি এমনি তো আর কাউকে ফোন গিফট করে না।

-আরে না না সেসব ব্যাপার না।

-সেসব ছাড়া কি শুনি।নিজের বেড রুম শেয়ার করছে,রান্না করা থেকে বাঁচিয়ে দিচ্ছে, আবার পড়ার সুযোগ করে দিচ্ছে।তোর চোখে উনার সর্বনাশ হয়ে গিয়েছে রে মিথু এতে কোনো ভুল নেই।

-আচ্ছা রাখি এখন।পড়া রেডি করে আবার সকালের রান্না শেষ করে ঘুমোবো।না হলে পরীক্ষা দিতে পারবো না।

মিথু তোর এই কষ্ট আমার সত্যি আর সহ্য হয় নারে।কোথায় এর শেষ।

সবাই ঘুমিয়ে গেলে নিরব এসে আমার রুমে বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে সুয়ে বলে দেখি কত টুকু রেডি হয়েছে পড়া।নিরব আমাকে বিভিন্ন জায়গা থেকে পড়া ধরলো গড় গড় করে সব বলে দিলাম।নিরব যেনো অবাক হয়ে গেলো আমার পড়া শুনে।

নিরব আমাকে বলে,আচ্ছা সারা বছর তো কিছুই পড়ো না তাহলে পড়া রেডি হয় কিভাবে।
আমি উঠে দাঁড়িয়ে বললাম এই যে লুকিয়ে চুরিয়ে একটু সময় পেলেই পড়ি আর সুপ্তির থেকে হেল্প নি।

লেখাপড়ার খরচ দেওয়ার সময় ওরা বকে না।

হুম অনেক বকে।আমি বৃত্তি টাকা পেয়েছি, উপবৃত্তি পেয়েছি আর বাসা থেকে টুক টাক যা দেই তাই জমিয়ে জমিয়ে রাখি।।।

কথা বলতে বলতে নিরব আমার জামার পেছনের চেন টেনে খুলে ফেললো।ভয়ে আমার বুক কেঁপে উঠলো উনি কি করতে চাইছেন কি।

চলবে,,,

(আজকের পর্রবের ভাল লাগা অংশ টুকু জানাবেন কমেন্টে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here