হিয়ার মাঝে পর্ব ৬

#হিয়ার_মাঝে
৬.
#WriterঃMousumi_Akter

ঘরভর্তি কয়েকজন সুন্দরী রমনীর আগমণ তাদের পূর্ণ দৃষ্টি নিরবের দিকে।কিন্তু নিরব একবার ও তাদের দিকে চক্ষু নিক্ষেপ করলো না।নিরব যেনো বার বার আমার দিকেই তাকাচ্ছিলো।আমি মা আর আপুর থেকে ব্যাগ গুলো নিয়ে রুমে রাখলাম।মা আর আপু আমাকে বেশ সুস্থ দেখে অবাক হয়ে গেলো।ওদের ভাবনা ছিলো বাড়িতে এসে দেখবে আমি পেটে পেইনে ফ্লোরে গড়াগড়ি খাচ্ছি আর একটা কাজ ও গোছানো হয় নি সেটা দেখে আমাকে ভীষণ বকাঝকা করবে। কিন্তু এই প্রথমবার হয়তো তাদের মনের এই ইচ্ছেটা পূরণ হলো না।যেটা দেখে মা যেনো আরো বেশী বিরক্ত হলো।মায়ের চোখে মুখে রাগ আর বিরক্তি দেখেই বোঝা যাচ্ছে।মা ডায়নিং এ গিয়ে দেখে বিভিন্ন রকমের খাবার রেডি মা আমাকে বলে আজ কি হাতে মেশিন লাগিয়েছিলি নাকি।এত গুলা রান্না কিভাবে করলি এই অসুস্থ শরীর নিয়ে।এর আগে তো কোনদিন করতে পারিস নি।আর তোকে তো দিব্বি সুস্থ লাগছে ব্যাপার কি।সত্যি করে বল সব কিছু কেমন যেনো সন্দেহর লাগছে।আমি মাথা নিচু করে বললাম মা আজ আমার শরীর টা ভাল লাগছিলো তাই পেরেছি।

মা মুড দেখিয়ে উনার রুমে প্রবেশ করলো।বসার রুমে আপু আর আপুর ফ্রেন্ড রা বসে আছে আর বলাবলি করছে নব ছেলেটা কে রে?আমার বাবার বন্ধুর ছেলে।উফফফ নব এই ঢাকা সিটিতে এমন হ্যান্ডসাম ছেলে একটাও দেখি নি।কি হট!আরেক টি মেয়ে বলে ওঠে, নব এমন হ্যান্ডসাম ছেলে ঘরে থাকতে তুই বাইরে ছেলে খুজিস কেনো?আমি পুরাই ফিদা উনার জন্য।আপুর আরেক টা ফ্রেন্ড বলে এমন সুন্দর ছেলে না জানি কত গুলো গার্লফ্রেন্ড আছে।আরে গফ আছে তাতে কি? নব পটিয়ে বিয়ে করে নে নইলে আমাদের উপর দায়িত্ব ছেড়ে দে। এমন ছেলের ৯৯ নাম্বার গফ হওয়া ও সৌভাগ্যর ব্যাপার।আপু বলে এই থাম থাম তোরা উনি যে কাউকে পাত্তা দিবে না।খুব ই মুড উনার।আমি তো অনেক আগে থেকেই ক্রাশড উনার উপর শুধু ভয়ে বলতে পারি না।তবে এইবার আর ছাড়াছাড়ি নেই।আপুর ফ্রেন্ড বলে উনাকে ডাক না আমাদের সাথে বসে একটু আড্ডা দিক।আমেরিকা থেকে এসছে ইস কত্ত হ্যান্ডসাম।আপু আমাকে বলে এই মিথু যা নিরব ভাইয়া কে ডাক তো। আমি মাথা নেড়ে সম্মতি দিয়ে দিলাম।

আমি নিরবের রুমে গিয়ে দরজায় টোকা দিতেই নিরব বলে ভেতরে এসো মৃথিলা।

আমি অবাক হয়ে গেলাম, ভেতরে প্রবেশ করে বললাম আপনি বুঝলেন কিভাবে ওটা আমি ই ছিলাম।উনি একটু কেশে নড়ে চড়ে বসে বললেন এটুকু যদি না বুঝি তাহলে আর তোমাকে চেনার মাঝে কিসের বিশেষত্ত্ব রইলো বলো।উনার প্রতিটি কথা যেনো আমাকে দিন দিন মুগ্ধ করছে।খাটে বসে ফোন স্ক্রল করতে করতে বলেন একটু আমার পাশে বসে হেল্প করো তো।আমি বললাম কি হেল্প, উনি আমার হাত চেপে ধরে আমাকে উনার পাশে বসিয়ে বলেন দেখো তো কোন কোন ড্রেস সুন্দর, কালার গুলা চয়েজ করো তো।আমি উনার দিকে তাকিয়ে বললাম গার্লফ্রেন্ড কে দিবেন,উনি ফোন এর থেকে চোখ সরিয়ে চোখ টা আমার দিকে দিয়ে বলেন বুঝলে কিভাবে।আমি বললাম না মানে মেয়েদের ড্রেস পছন্দ করছেন তো তাই বুঝলাম আরকি।
গফ কিনা জানিনা তবে হবু বউ সে আমার।আমি উনার ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখি হবু বউ নামে একটা ফোল্ডার।আমি ফোনের দিকে চোখ ইশারা দিয়ে বললাম হবু বউ কে দেখতে চাই।দেখবে দেখবে একটু ওয়েট করো আম্মু আসুক আগে।

উনার গফ,হবু বউ এই কথা গুলো যেনো আমার খুব একটা ভাল লাগলো না।কেনো যেনো মনে হচ্ছিলো উনার গফ থাকা উচিত নয়। উনার জীবনে কোনো মেয়ে থাকাটাও উচিত নয়।উনার মনে হয় সিঙ্গেল থাকাটাই ভালো।

আমি নিরব কে বললাম,আচ্ছা মানুষের বিয়ে করতেই হবে কেনো?না করলে কি হয়।কেনো বিয়ে করাই লাগবে শুনি।

উনি ভ্রু কুচকে এমন ভাবে তাকালেন কপালে কয়েক টা ভাজ পড়ে গেলো।আমার দিকে তাকিয়ে বলে কে আবার বিয়ে করছে শুনি।

এই যে আপনি বিয়ে করবেন, আপনার হবু বউ আছে তাই বললাম আর কি।শুনুন আপুর ফ্রেন্ডরা আর আপু আপনাকে ডাকছে।

উনি আমাকে বলেন,আগে ড্রেস আর কালার গুলো চয়েজ করে দাও তো।আমি মনের মতো কিছু কালার আর ড্রেস চয়েজ করে দিলাম।

নিরবের হাত আর পায়ের আঙুল ফ্রেশ সাদা কিন্তু নিরব অতিরিক্ত ফর্সা হওয়ায় আঙুলের মাঝে হালকা লাল লাল দেখা যায়।এ বাসায় এসেছে ধরে তাকে কখনো কালো প্যান্ট আর কালো ড্রেস ছাড়া কিছুই দেখি নি পরা।উনার মনে হয় কালো খুব ই ফেভারিট কালার।কালো একটা জিন্স পরা পায়ের গোড়ালির উপরে ভাজ করা, কালো শার্ট এর হাতা গোটানো।হাতে কালো ব্রান্ডের ফিতার ঘড়ি,চুল গুলো স্টাইলিশ করে কাটা।মুখে হালকা হালকা দাঁড়ি,গোফ, ঠোট দুটো মাঝে গোলাপি চারপাশ হালকা কালোর আবরণ।সব কিছু মিলিয়ে যে কোনো মেয়ের প্রথম পছন্দ হবে নিরব।

নিরব বসার ঘরে যেতেই আপুর ফ্রেন্ড বলে ওঠে হাই হ্যান্ড সাম।

নিরব বিনদ্র কন্ঠে বলে আসসালামু আলাইকুম।

নিরবের মুখে সালাম জিনিস টা আপুর ফ্রেন্ড দের বোধহয় ভাল লাগে নি।ওরা বাধ্য হয়েই সালামের উত্তর দিলো।আপুর ফ্রেন্ড রা নিরব এর সাথে জমিয়ে আড্ডা দেওয়া শুরু করলো।আপু আমাকে ইশারা করল নাস্তা আনার জন্য।আপুর ফ্রেন্ড রা যেনো চোখ ই সরাচ্ছে না নিরব এর দিক থেকে।আপুর একটা ফ্রেন্ড নিরব কে বলে আপনার কি গার্লফ্রেন্ড আছে, নিরব নরমাল উত্তর দেই সেটা খুব ই পারসোনাল কাউকে বলা যাবে না।

আমি কফি নিয়ে আসতেই আপুর একটা ফ্রেন্ড পা বাড়িয়ে দিতেই আমি পড়ে গেলাম কফির ট্রে ফ্লোরে পড়ে সব গুলো কাপ ভেঙে গেলো আর নিরব সাথে সাথে আমার কোমর ধরে ফেললো।আপুর ফ্রেন্ড উত্তেজিত হয়ে বলে নব তোদের এই কাজের মেয়েটা একটুও কাজের না।ওকে বিদাই দিয়ে নতুন কাজের লোক রাখ।

আপুর আরেক টা ফ্রেন্ড আমাকে বলে এই সব কাজের মেয়েরা এমন ই বাড়িতে ভাল হ্যান্ডসাম ছেলে দেখলে তাদের গায়ের উপর ঢলে পড়বে, শরীর দেখাবে এসব করে মাথা নষ্ট করে দেই।

আমি নিরবের থেকে নিজেকে সরিয়ে আপুর দিকে তাকিয়ে সরি বলি।আপু আমাকে বলে কাজের লোক হওয়ার ও যোগ্যতা তোর নেই দেখছি মিথু।এই দামি কাপ গুলোর দাম কত জানিস তোকে বেঁচলেও তার দাম উঠবে না।তোকে আম্মু এ বাড়িতে কেনো রেখেছে শুনি।উটকো ঝামেলা একটা।আম্মুর শখের কাপ গুলো এভাবে ভেঙে ফেললি।নাকি কাজ করতে হচ্ছে বলে ইচ্ছা করে ভেঙে ফেললি।আপুর ফ্রেন্ড এসে আমাকে ধাক্কা মেরে বলে তোর মাইনে কাটা এই বছরের।এই এক বছর এই বাড়িতে গায়ে খেটে এই কাপের দাম শোধ করবি।কষ্ট বুক ফেটে যাচ্ছিলো আমার।নিজের বাড়িতে কোনো মেয়ে এতটা অবহেলা আর অপমান নিয়ে থাকতে পারে না।

নিরব এর চোখ রাগে লাল হয়ে গিয়েছে।রক্তজবার ন্যায় হয়ে আছে।নিরব সোফা থেকে উঠে ফোন পকেটে রেখে বুকে হাত বেঁধে দাঁড়ায়।

আপুর ফ্রেন্ড এর দিকে তাকিয়ে বলে আপনি আজ কাজে যান নি আপনার মাইনে কাটা যাবে না।

আমার মাইনে,আমি কি কাজের মানুষ নাকি।

কাজের মানুষ না আপনি, তাহলে আপনার খাওয়া পরা কিভাবে আসে।

আমার বাবা দেন।

আপনি যদি আপনার বাড়িতে কাজের মানুষ না হন তাহলে মৃথিলাকে কোন লজিকে কাজের মানুষ ভাবলেন।নিজের বাড়িতে নিজের কাজ করাকে কাজের মানুষ বলে না ওকে।আর বললেন শরীর দেখিয়ে মাথা নষ্ট করে।আপনার পোশাক আর ওর পোশাক ভাল ভাবে দেখুন কার শরীর দেখা যাচ্ছে।

দেখুন ওর পোশাক দেখেই ভেবেছি ও এ বাড়িতে কাজ করে।

পোশাক দেখে কিছুই বিচার করা ঠিক নয়।

আপুর ফ্রেন্ড লজ্জা পেয়ে চুপ হয়ে গেলো।

আমি কাপ গুলো পরিস্কার করে সবাই কে ডায়নিং এ ডাকলাম।সবার খাওয়া শেষ হলে মা আমাকে খেতে বললো।কিন্তু আমার শরীর খারাপ থাকায় খাবার খেতে হচ্ছিলো না।কিছুক্ষণ পরেই আপু আমার খাটের নিচ থেকে খাবারের প্লেট দেখে চেচিয়ে মা কে ডেকে আনলো আর বললো দেখলে তখন কেনো খাইনি।ও এভাবেই রান্নার উপর থেকে খাবার চুরি করে খায়।

চলবে,,

(গল্পের ভুল ত্রুটি তুলে ধরবেন।আর যারা আছেন স্টোরি পড়েন লাইক কমেন্ট করেন না তাদের কাছে অনুরোধ লাইক কমেন্ট করবেন)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here