হিয়ার মাঝে পর্ব ৫

#হিয়ার_মাঝে
৫.
#WriterঃMousumi_Akter

পেটে প্রচন্ড পেইন নিয়ে পেট চেপে ধরে ফ্লোরে গড়াগড়ি করছি ভীষণ যন্ত্রণায়।পুরা ঘর ঝাড়ু দিয়ে মুছতে হবে যেটা আমার পক্ষে সম্ভব হচ্ছিলো না।এইদিকে আবার নবনিতা আপুর কয়েকজন ফ্রেন্ড আসবে মা আর আপু বাজার করতে গিয়েছে বাইরে।তাদের জন্য রান্না করতে হবে।আমার চোখ মুখে কষ্টের অবয়ব স্পষ্ট ফুটে উঠেছে।ঘর মোছা না হলে রোজকার রুটিন অনুযায়ী জঘন্ন গালি গালাজ শুনতে হবে আমাকে।হয়তো মারতে মারতে আমাকে মেরেই ফেলবে।মা আর আপুকে অনেক হাতে পায়ে ধরে বলেছি আজ আমি আর পারছি না। মায়ের কাছে অনেক কাকুতি মিনতি করেছি যে মা আমি অসুস্থ উঠতে পারছি না।কিন্তু কোনো কাজ হয় নি।

এইদিকে আবার নিরব আমাকে ডাকছে তার ব্লাক কফি চাই।আমি খুব কষ্টে রান্নাঘরে গেলাম ব্যাথায় খুব কোকাচ্ছি।বেশ অনেকক্ষণ হয়ে গিয়েছে কিন্তু আমি কফি নিয়ে যেতে পারিনি।রান্নাঘরের ফ্লোরে পেট চেপে ধরে বসে আছি আর চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে।নিরব ডাকাডাকি করছে মৃথিলা আমার মাথা ব্যাথা করছে প্লিজ একটু দ্রুত আনো কফি।এরই মাঝে রান্নাঘরের দিকে কারো পায়ের আওয়াজ ভেসে আসছে।ভয়ে আমার পরান চমকিয়ে গেলো মা আর আপু হলে আজ আমাকে মেরেই ফেলবে।এখনো ঘর মোছা হয় নি এই নিয়ে এক গাদা কথা শুনতে হবে।তাকিয়ে দেখি কালো ট্রাউজার আর কালো গেঞ্জি পরে ফর্সা ধবধবে পা নিয়ে প্রবেশ করলো নিরব।নিরব কে দেখেই আমি দ্রুত উঠার চেষ্টা করলাম কফি বানানোর জন্য।গ্যাসে পানি গরম ফুটছে। নিরব আমার কাছে এসে একটু ঝুকে বসে বললো এত ব্যাস্ত হয়ে উঠতে হবে না আমার হাত ধরো, আস্তে করে উঠে আসে।কি সমস্যা অসুস্থ তুমি।আমি পেটে হাত দিয়ে বললাম দাঁড়ান আমি কফি বানিয়ে দিচ্ছি।নিরব বললো কফির জন্য এত ব্যাস্ত হতে হবে না।

-আমি তবুও ওঠার চেষ্টা করলাম।

-ওয়েট!কফি না খেলে আমি মারা যাবো না।তোমার কি হয়েছে আগে সেটা বলো।

-আমি লজ্জায় নিরব কে বলতে পারলাম না।একটা মেয়ে চাইলেই যে কাউকে এই লজ্জার কথা বলতে পারে না।আমি চুপ হয়ে আছি কিছুই বলতে পারছি না নিরব কে।

-আমার পেটে হাত দেখে নিরব বলে কি হয়েছে পেটে পেইন।

_হুম

_তোমার মা আর আপু জানে এই অসুস্থতার কথা।

_হুম জানে।

_জেনেও তোমাকে এতগুলা কাজের অর্ডার দিয়ে গেলো।অদ্ভুত মানুষ উনারা।তাছাড়া এত বড় বাড়িতে কাজের মানুষ নেই কেনো?

_আমি একজন বাড়তি মানুষ থাকতে কাজের মানুষ কেনো লাগবে।আর আমি অসুস্থ হলে আমাকে আরো বেশী বেশী কাজ দেওয়া হয় যাতে আমি কষ্ট পাই বেশী।আমি কষ্ট পেলেই তাদের শান্তি লাগে।

-একটা গ্যাসের ওষুধ খেয়ে নাও।মেবি গ্যাস্ট্রিক সমস্যা।

উনি আমার চোখ মুখে খুব বেশী কষ্ট দেখতে পেলেন।আমি যে সহ্য করতে পারছি না সেটা উনি ক্লিয়ার বুঝে গেলেন।আমি না বলতেই উনি বুঝে গেলেন আমার সমস্যা।নিরব আমাকে ওর কাছ থেকে একটা নাপা ওষুধ খাইয়ে দিয়ে বললো একটু রেস্ট করো।

-আমি নিরব কে বললাম ঘর না মুছে রাখলে আমাকে আমাকে খুব মারবে মা।রসুন,পেয়াজ বেটে রাখতে হবে মা আর আপু বাজার থেকে আসলেই রান্না চড়িয়ে দিতে হবে।

-তুমি এই শরীর নিয়ে কিভাবে ঘর মুছবে আর কিভাবে রান্না করবে।

-আমি উনার দিকে তাকিয়ে কেঁদে দিয়ে বললাম আমার তো মা নেই তাই আমার কষ্ট বোঝার কেউ নেই।আজ যদি মা বেঁচে থাকতো তা হলে নিশ্চয় আপুর মতো আমার জীবনেও সুখ,শান্তি আরাম,আয়েস অসুস্হতা বোঝার কেউ নেই।এই পৃথিবীতে আমি একা ভীষণ একা।আমার আপন বলতে কেউ নেই।আমার কষ্ট বোঝার কেউ নেই। হয়তো কপালে এটাই ছিলো আমার।

-নিরব আমার হাত ধরে এনে আমার বিছানায় সুইয়ে দিয়ে বলেন তুমি শুধু চুপ করে সুয়ে থাকো।

-না না আমি সুয়ে থাকলে অনেক অশান্তি বাড়বে।

-আহা! মেহো না।

নিরব নিজে কাপড় ভিজিয়ে ভিজিয়ে পুরা ফ্লোর মুছতে লেগে গেলো।আমি তো দেখেই অবাক হয়ে গেলাম।নিরব ফ্লোর মুছে দিচ্ছে।আমি তড়িঘড়ি করে উঠতে উঠতে বললাম আরে এ কি করছেন।ছিঃছিঃ উঠুন নিরব ভাইয়া।আপনি বিদেশ থেকে বড় হয়েছেন এগুলা কি কখনো করেছেন।নিরব আমাকে বলে চুপচাপ সুয়ে থাকো বিদেশ থেকে বড় হলে কি কোনো কাজ করা যায় না।নিরব সব পারে আগে আগে দেখো হোতা হে কিয়া।নিরব পুরা ঘর মুছে চকচকে করে ফেললো।ঘেমে গায়ের সাথে গেঞ্জি টা একদমে লেপ্টে গিয়েছে।কপালে আর নাকে ফোটা ফোটা ঘাম বৃষ্টির ফোটার ন্যায় ফুটে আছে।ফর্সা গাল টা একবারে লাল হয়ে গিয়েছে।ঘর মুছে আমার পাশে এসে বসলেন।আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম উনার দিকে আল্লাহ কি উনাকে পাঠিয়েছেন আমার জন্য।আমাকে কষ্ট থেকে দূর করতেই কি উনার আগমণ।আমি খাটে সুয়ে আছি নিরব আমার পাশে বেডে সুয়ে আমার ওড়না দিয়ে মুখের ঘাম মুছতে মুছতে বলে তোমার গায়ের গন্ধ তো ভারী মিষ্টি। কথাটা বলার মাঝে উনার চোখে আমি অন্যরকম কিছু একটা দেখছিলাম।ভাবনার লেশ কাটিয়ে নিরব একটা দুষ্টি হাসি দিয়ে বলে ওড়না তে তো ঘামের গন্ধ হয়ে গেলো এক্ষুণি যেনো বমি করে দিও না।আমার শরীরে কিন্ত অন্যদের মতো বিশ্রি গন্ধ হয় না খুব একটা ঘামলেও।যাও তুমি গোসল করে এসো।

-আমি বললাম কিন্তু রান্না।

-রান্না হয়ে গিয়েছে।

-হয়ে গিয়েছে।

-হুম।

-কিভাবে

-ট্যাংট্যানান।

নিরব মায়ের ফোনে একটা ফোন দিয়ে বললো কুরিয়ারে ওর একটা জিনিস এসছে সেটা নিয়ে আসতে।কুরিয়ার টা আম্মু যেখানে গিয়েছে সেখান থেকে আরো এক ঘন্টার পথ।নিরব মা কে বলে আন্টি আমি আজকে বাজার করে সবাইকে খাওয়াবো আপনি প্লিজ আমার জিনিস টা এনে দিন ইটস ভেরি ইমপরটেন্ট।বাজার আমি করবো কোনভাবেই না করতে পারবেন না রান্নার মানুষ তো বাড়িতে আছেই।ফোনের ওপাস থেকে মা কি বললো জানিনা ফোন টা কেটে দিয়ে নিরব গোসলে গেলো আর আমিও গোসলে গেলাম।

গোসল সেরে এসে দেখি একটা ছেলে কয়েক টা টিফিন বক্স ভরে খাবার এনেছে আর নিরব সেগুলা ডায়নিং এ সাজাচ্ছে।আমি মাথায় ওড়না পেচিয়ে এসে নিরবের দিকে তাকিয়ে বললাম এসব কি।নিরব আমাকে বললো খাবার হোম ডেলিভারি দিয়ে গেলো।আমি রান্না করতে পারি না।আর তুমি অসুস্থ তাই তোমাকে যাতে কষ্ট করে রান্না করতে না হয় তাই খাবার অর্ডার দিয়েছিলাম।আমি চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইলাম ছেলেটার মাথায় কত বুদ্ধি।আমি নিরব কে বললাম মা বুঝে গেলে আমাকে আস্ত রাখবে না।উনি আমার গাল ধরে বলেন কিচ্ছু বুঝবে না আমি সামলে নিবো।ডায়নিং টেবিলে পোলাও,চিংড়ি,ইলিশ,রুই,মাংস,ডাল,সবজি,চাটনি,সালাদ সব ই রেডি।

এতদিনে আমার একটা নির্দিষ্ট রুম হয়েছে।রুমের চারদিকে চোখ বুলিয়ে নিলাম।নিরব আমার টেবিলে বই খাতা গুলো সুন্দর ভাবে সাজিয়ে গুছিয়ে রেখেছে।আলমারিতে রাখার মতো আমার তেমন জামা কাপড় নেই আপুর ড্রেস গুলোই বরাবর আমাকে পরতে হয়।নিরব কে না বলতেই আমার অনেক অসুবিধার কথা বুঝে যায়।এটা কিভাবে সম্ভব নিজেই জানিনা।নিরব একটা প্লেটে ভাত,মাংস,মাছ এনে আমাকে দিয়ে বলে খেয়ে নাও তোমার আদরের বোন আসতে আসতে।আমি বললাম না না আমি এখন খাবো না।সবার খাওয়া হোক তারপরেই খাবো। কিন্তু নিরব ভাইয়া একটা চিন্তা হচ্ছে মা এসে রান্নার ব্যাপার টা বুঝে গেলে যে কি হবে।নিরব বলে কি হবে কিছুই না।আজ আর তুমি একা না, ভয় পেও না।তোমাকে কিছু বললে সেটা আমি বুঝে নিবো।

আচ্ছা নিরব ভাইয়া ওই রুমে আপনার কষ্ট হচ্ছে না থাকতে।আমার জন্য নিজের আরাম আয়েজ কেনো নষ্ট করলেন।

একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে নিরব বলে তুমি যে ১৬ টা বছর ধরে কষ্ট করছো।তার জায়গা এ কষ্ট কিছুই না।আমার এখন এক এবং একমাত্র উদ্দেশ্য তোমাকে তোমার অধিকার পাইয়ে দেওয়া,এই নির্যাতন থেকে বাঁচানো।

আপনি কেনো শুধু শুধু আমার জন্য এত কিছু করবেন।মা,আপু এদের সাথে আপনার খুব ভাল রিলেশন সেটা নষ্ট হয়ে যাবে।আমার জন্য কেনো আপনার রিলেশন আপনি নষ্ট করবেন।

-আমি যা করছি আমার জন্য করছি।

-মানে

গকোনো এক কবি বলেছেন

প্রেমিকার হাসিতে প্রেমিকের মুখে হাসি ফোটে…
প্রেমিকার কষ্টে প্রেমিকের বুকে রক্তক্ষরণ হয়।

উনার কথার তো কিছুই বুঝলাম না আমি।

এমন সময় মা আর আপুর সাথে আপুর ফ্রেন্ডরা বাড়িতে প্রবেশ করলো।আপুর আটা ময়দা মাখা বান্ধবীরা নিরব কে দেখেই টাস্কি খেয়ে গেলো।

চলবে,,,,,

(স্টোরি টা কেমন হচ্ছে,প্লিজ জানাবেন)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here