হিয়ার মাঝে পর্ব ৪

#হিয়ার_মাঝে
৪.
#WriterঃMousumi_Akter

বাইরে সাদা কাপড় পরে জানালার ওপাশে কিছু একটা দাঁড়িয়ে আছে ভয়ানক সাউন্ড ও করছে। যে সাউন্ড গুলাতে ভৌতিক সব আওয়াজ হচ্ছিলো।ভয়ে আমার বুক কাঁপছিলো।।প্রায় রাতেই এই ভূত টা আসে।একা ঘুমোতে খুব ভয় করে খুব।

আমার নাম ধরে ধরে ডাকছে মিথু এই মিথু তোকে নিতে এসেছি।আয় মিথু আয়।আমি এই বাড়ির পেছনের হিজল গাছে থাকি।আজ তোকে নিয়ে আমরা রান্না করে খাবো।তোর কচি কচি রান খেতে খুব মজা লাগবে।আমি ফ্লোরে সুয়ে থরথর করে কাঁপছি।জানালার পাশে থাকা ভূত টা আমাকে ডেকেই যাচ্ছে।আমি বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার করছি।আমার চিৎকার শুনে নিরব বেরিয়ে আসে ওর রুম থেকে।নিরব বেরিয়ে এসে দেখে আমার ঘরের বাইরে দুজনে হাসাহাসি করছে। নিরব খেয়াল করে দেখে নবনিতা আর সাথে অন্য একটি মেয়ে। নবনিতার পাশের মেয়েটির গায়ে সাদা কাপড় পরা চোখে কাজল লেপ্টে দেওয়া একদম ভূতের মতো সেজেছে আর ওরা ইউটিউব থেকে ভৌতিক টোন চালু করেছে।নিরব দ্রুত এসে আমার রুমে প্রবেশ করে লাইট অন করতে গিয়ে দেখে রুমে কোনো লাইট নেই। নিরব সাথে সাথে ফোনের টর্চ চালু করে। আমি নিরব কে দেখেই ছুটে এসে নিরব কে খুব শক্ত ভাবে জড়িয়ে ধরে বলি প্লিজ বাঁচান আমায়।ভয়ে আমার বুক থর থর করে কাঁপছে।সেকেন্ডে কয়েক বার করে লাফাচ্ছে।নিরব বুঝতে পারে আমার প্রচন্ড ভয় করছে।নিরব আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলে কোনো ভয় নেই আমি আছি তো।তাকিয়ে দেখো ভূত নেই। কোথায় ভূত চলো তোও দেখি।আজ ভূত ও ভয় পাবে আমার সাথে চলো।আমি নিরবের বুকে মাথা গুজে চোখ বন্ধ করে আছি।বুকের স্পন্দন কমে নি একটুও।আমি কাঁপতে কাঁপতে বলি প্রায় রাতেই এই ভূতে আমাকে ভয় দেখাই।আমার খুব ভয় করে।নিরব আমার ভয় দেখে আমার হাত শক্ত করে চেপে ধরে বলে এসো আমার সাথে বাইরে এসো।প্রায় রাতে কোথা থেকে আসে দেখে আসি।

তার আগেই নিরব নবনিতা কে বলেছিলো এখানেই দাঁড়িয়ে থাকবে কোথাও যাবে না।

নিরব বাইরে এসে নবনিতা আপুর পাশে থাকা মেয়েটার গালে ঠাসসসস করে একটা থাপ্পড় দিয়ে বলে ননসেন্স মেয়ে।ভূত সাজার খুব শখ তাইনা।এই বিল্ডিং থেকে বাইরে ফেলে দিবো ধরে আমার হাতের আরেক টা থাপ্পড় খেলে এমনিতেই মরে ভূত হবে।তুমি কি কোনো মেয়ের মাঝে পড়ো নাকি।একটা মেয়েকে এইভাবে ভয় দেখাচ্ছো আজ যদি ওর কিছু হয়ে যেতো কে তার দায় ভার নিতো।রোজ রাতে এই ফালতু কাজ করার জন্য কে টাকা দেই তোমাকে।

-ইয়ে ভাইয়া আমরা আসলে মজা করছিলাম।

-মজা এটা কোন ধরনের মজা।তোমাকে আমি পরে দেখে নিবো।আর নবনিতা ছোট বোন ভয়ে চিল্লাচ্ছে আর তুমি মজা নিচ্ছো।তোমাকে এত টাও খারাপ জানতাম না।

রাগে নিরবের চোখ মুখ ছুটে যাচ্ছে।

নিরব রুমে উকি দিয়ে বলে রুমে লাইট নেই ক্যানো?

নবনিতা তুমি কিছু জানো না রুমে লাইট নেই,

আমি আসলে মিথুকে ভয় দেখানোর জন্য লাইট টা খুলে রেখেছিলাম।

মৃথিলাকে সরি বলো জাস্ট নাও সরি বলো।আপু বলে ইম্পসিবল বলেই বেরিয়ে গেলো রুম থেকে।

-নিরব রুমে ঢুকে বলে এইখানে ঘুমিয়েছো ক্যানো আজ।

-আমি রোজ ই এখানে ঘুমোই।

-হোয়াট তুমি এখানে ঘুমোও মানে।এইটা একটা থাকার জায়গা হলো। গরু ও থাকতে পারবে না এখানে।তাছাড়া খাট নেই এখানে, খাট কই?

-আমি খাটে ঘুমোই না।বুঝতে শেখার পর এ বাড়িতে আমার জন্য কোনো খাট নেই।আমি এখানেই ঘুমোই এই ফ্লোরে।

-ওহ মাই গড! খাট ছাড়া ঘুমোও কিভাবে।এভাবে ঘুমোনো যায়।

-এটাই অনেক বেশী আমার জন্য।মা যে আমাক এতিম খানায় রাখে নি সেটাই অনেক আমার জন্য।

-তোমার বই খাতা কই।একি বই গুলা নিচে কেনো?কোথায় বসে বই পড়ো তুমি।চেয়ার টেবিল নেই।

-নাহ!এই রুমে লাইট অন করতে দেই না আপু, মা কেউ ই।তারা চাই না আমি লেখাপড়া করি।মাঝ রাতে মা,আর আপু ঘুমিয়ে গেলে বাইরের লাইটের আলোতে চুরি করে বই পড়ি।অনেক গালি,মার অপমান সহ্য করে বই পড়ি।না কখনো প্রাইভেট পেয়েছি,না পেয়েছি স্কুলে যাবার সুযোগ।যতটুকু লেখাপড়া করেছি নিজের শরীর আর মনের সাথে যুদ্ধ করে।পাশের ফ্ল্যাটে একটা মেয়ে আছে সুপ্তি নাম।ওর হেল্প এ এতুটু পেরেছি।আজ সুপ্তি না থাকলে আমি কিছুই পেতাম না।বাদ দেন না আমার মতো কপাল পোড়ার কথা যত শুনবেন যতই ফুরাবে না বাদ দিন প্লিজ।

-তোমার ফর্সা গাল এমন লাল হয়ে আছে কেনো?এগুলা কি সব মশার কামড়।তোমার বাপ নিজের মেয়ের সাথেও বাটপারি করে।বাটপার আশরাফ আসুক সব কিছুর কইফত আমাকে দেওয়া লাগবে।

-দোহাই লাগে প্লিজ আমার জন্য আপনি কাউকে কিছু বলবেন না।সবাই আমার ই দোষ দিবে।সবাই ভাববে আমি আপনাকে শিখিয়ে দিয়েছি।এরপর আপনি বিদেশ চকে যাবেন এরা আমার সাথে কি করবে ভেবে দেখেছেন।

-আমি জাহান্নামে গেলেও তোমাকে নিয়ে যাবো।নিরব কোনো মিশনে নামলে সেটা সাকসেস করে তবেই শান্ত হয়।এখানে ঘুমোতে হবে না চলো ছাদে যায়।তোমার সাথে একটা গল্প বলবো।

কি গল্প বলুন,,

“একটা রাজকুমার ছিলো যে তার রাজকুমারীর থেকে অনেক দূরে ছিলো।রাজকুমার জানতো না তার রাজকুমারী কতটা কষ্টে থাকে।হঠাত একদিন একজন তাকে খবর দেই তোমার রাজকুমারীর দেশে যাও সে অনেক নির্যাতনে আছে।রাজকুমার তখন ও জানতো না ওই রাজকুমারী কে সে ভালবেসে ফেলবে।রাজকুমারীর সাথে দেখা হওয়ার পর তার কষ্ট দেখে তাকে ভালবেসে ফেলে।আর রাজকুমারী কে তার কষ্টের জীবন থেকে নিয়ে একটা সুখের জীবন দেই।”

-এমন রাজকুমার কখনো আমার জীবনে আসবে না।

-হয়তো এসেছে তুমি নিজেই জানোনা।

সারারাত দুজনে গল্প করেই কাটিয়ে দিলাম

পরের দিন নিরব মা, কে বলে,,
আন্টি আমাকে থাকার জন্য যে রুম টা দিয়েছেন ওখানে নেটওয়ার্ক পাচ্ছে না।আমার খুব ই সমস্যা হচ্ছে।আমাকে যে রুমে ভাল নেটওয়ার্ক পায় সে রুম টাই দিতে হবে।না হলে আন্টি আমি ভেরি সরি এখানে থাকতে পারবো না।মা বলে তোমার যে রুম টা পছন্দ সেটাই নাও না।নিরব বলে ওকে আন্টি আমি চেক দিয়ে দেখি।নিরব সব রুমে গিয়ে গিয়ে চেক দিয়ে বলে আন্টি কর্নারে ওই রুম টা কার আমার ওই রুম টাই লাগবে।মা বলে বাবা নিরব ও রুমে তুমি থাকতে পারবে না,প্রচন্ড গরম ওখানে কেউ ঘুমোতে পারে না।আন্টি মৃথিলা কিভাবে ঘুমোয় তাহলে?ওর সাথে তো তুমি বা নবনিতার তুলনা নয়, ওর সব কিছুতে অভ্যাস আছে।

ওহ ভেরি গুড আন্টি।বলছিলাম আমার দুইটা রুম ই প্রয়োজন দিনের বেলা আমাকে যে রুম টা দিয়েছেন ওইখানে থাকবো আর রাতে এই রুমে থাকবো।এই রুম এ আজ ই খাট,আর একটা আলমারি কিনে এনে দিন,সাথে এসি। মা বলে ঠিক আছে বাবা যা যা লাগে সব ই আনিয়ে দিচ্ছি তোমাকে বলে দেওয়া লাগবে না।তোমার যেখানে সুবিধা হবে সেখানেই থাকবে।

মা আমাকে বলে মৃথিলা তুই তাহলে আমার বা নবর রুমের ফ্লোরে ঘুমোস।নিরব মা এর কানে ফিস ফিস করে বলে আন্টি আপনাদের রুমে কত দামি দামি জিনিস থাকে ও নিয়ে যেতে পারে।সেদিন না নবনিতার নূপূর নিয়ে নিলো।এক কাজ করুন আমাকে যে রুম টা দিয়েছেন ওটাই মৃথিলা থাকবে রাতে আর আমি দিনে থাকবো।মৃথিলা তোমার বই গুলা নিয়ে আমার রুমে রাখো আর ড্রেস গুলা নিয়ে আমার আলমারি তে রাখো।

আমি অবাক হয়ে গেলাম নিরব কিভাবে কায়দা করে আমাকে খাটে ঘুমোনোর ব্যবস্থা করে দিলো।

পরের দিন নিরব ফোনে কথা বলছে ওর মায়ের সাথে,,

-নিরব বৌমা পছন্দ হয়েছে।

-আম্মু ইউ আর গ্রেট আম্মু। ইউ আর রিয়েলি গ্রেট।

-হঠাত আম্মুকে এত বাহবা দেওয়া হচ্ছে কারণ টা কি?

-আম্মু আমি ভাবতেই পারিনি বাংলাদেশের মেয়েরা এতটা সুন্দর হয়।

-কেনো তখন তো যেতেই চাইছিলি না।

-আম্মু না আসলে যে ভীষণ সর্বনাশ হয়ে যেতো।আমি আর কখনো ইউএস ফিরবো না আম্মু।তোমরা কবে আসছো সেটা বলো আগে।

এইতো দু’মাস বাদেই ফিরবো।

চলবে,,

(স্টোরি টা কেমন হচ্ছে জানাবেন প্লিজ)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here