হৃদমাঝারে পর্ব -০৪

#হৃদমাঝারে
#জান্নাতুল_নাঈমা
(৪)

আকাশ জুড়ে ঘন কালো মেঘের ছড়াছড়ি। যেকোনো সময় আকাশের বুক ছিঁড়ে বৃষ্টি নামবে। বাইরে জোরে বাতাস বইছে। বাতাসের তালে গা ভাসিয়ে দু একটা পাতা উড়ে বেড়াচ্ছে। এতে যেনো তারা খুব আনন্দ পাচ্ছে। খুব সুক্ষ্মভাবে তা পর্যবেক্ষণ করছে শুভ্রতা। মনে মনে চাইছে সেও যদি এভাবে গা ভাসিয়ে উড়ে যেতে পারতো! কিন্ত নাহ সেসব কিছুই সম্ভব না। একটু আগেই নিজের বাসা থেকে চলে এসেছে। আসলে সেটা কি নিজের বাসা ছিলো? উঁহু সে আঠারো বছরের অতিথি ছিলো। মেয়াদ ফুরিয়ে যাওয়ার পর আরেক গন্তব্যে পা দিয়েছে। এখানেও সে অতিথি কারণ মেয়েদের নিজস্ব কোনো বাড়ি নেই। বিয়ের আগে বলা হয় ‘বাপের বাড়ি’ বিয়ের পর ‘শ্বশুর বাড়ি!’
দরজা খোলার আওয়াজে ভাবনার ছেদ ঘটে শুভ্রতার। ও বাসা থেকে এসে শ্বশুর শ্বাশুড়ির সাথে দেখা করে রুমে এসেছিলো। মেঘ এসেই কোনো একটা কাজ আছে বলে বেরিয়েছে। হয়তো মেঘ এসেছে। শুভ্রতার পেছন ফিরে দেখতে ইচ্ছে হলো না। লোকটার ব্যবহার খুব অদ্ভুত লাগে। যত কম দেখবে ততো কম কৌতুহল হবে। আকাশ পাতাল ভাবার মাঝে কাঁধে কারো হাতের ছোঁয়া ফেলো। পেছন ফিরে দেখে মেঘের মা দাঁড়িয়ে আছে।
শুভ্রতা কিঞ্চিৎ হাসি ফুটিয়ে বলে,,’আপনি? আমাকে ডাকতে পারতেন। আমিই যেতাম!’
শুভ্রতার কথায় মেঘের মা মন ভুলানো হাসি দিয়ে বলে,,
‘আমি এমনি এসেছি। আমার মেয়েটা কি করছে তা দেখার জন্য!’

‘আসুন। বসুন না।’ শুভ্রতা উনাকে নিয়ে খাটে বসতে বসতে বলে।
“এই আসুন বসুন না বলে মাও তো ডাকতে পারো।’
শুভ্রতা মেঘের মায়ের কথায় মাথা দুলিয়ে বলে,,’আচ্ছা। আসলে প্রথম প্রথম তো একটু আনইজি লাগছে।’
‘হ্যাঁ। আমি বুঝতেই পারছি। বাসার জন্য মন খারাপ করছে নিশ্চয়ই। আমিও যখন বিয়ে করে এই বাসায় প্রথম এসেছি। আমারও খুব কষ্ট হতো। ছটফট করতাম কখন নিজের বাসায় যাবো। কিন্ত সময়ের সাথে সাথে এখন সব মানিয়ে গেছে। কতোগুলো দিন হয়ে গেলো নিজের বাপের বাড়ি দেখি না। সংসারের চাপে আর যাওয়া হয়ে উঠে না।’
মেঘের মায়ের কথার বিপরীতে শুভ্রতা আর কিছু বললো না। চুপ করে রইলো। উনি বলছেন বলুক,হয়তো অনেকদিনের জমানো কথা আজ বলতে চাইছেন। এরপর শুভ্রতার মা মেঘের ছোট বেলার কাহিনী বললেন,শুভ্রতা খুব মন দিয়ে শুনলো সবটা। একমাত্র ছেলে অনেক আদরেই বড় হয়েছে।
‘মা!মা! কই তুমি?’ মেঘ তার মাকে ডাকতে ডাকতে বাড়িতে প্রবেশ করে। তা শুনে মেঘের মা হেসে বলে,,
‘দেখেছ ছেলের কান্ড। ও সবসময় এইরকম দরজা থেকে হাক ছাড়তে ছাড়তে ডুকে। আচ্ছা চলো দেখে আসি।’ কথা বলে মেঘের মা বাইরের দিকে গেলো। শুভ্রতাও পিছু পিছু গেলো।

‘কি বলছিস কি? কাল সকালেই ঢাকা যাবি মানে?’
‘মা আমার অফিসের কাজ পড়ে গেছে। বুঝো না প্রাইভেট কোম্পানি যখন বলবে গাধার মতো ছুটে যেতে হবে!’ মেঘের কথায় মেঘের মা-বাবার মন খারাপ হয়ে গেলো। ছেলের বিয়ের দুদিন না যেতেই চলে যাবে। মেঘ অনেক পরিশ্রমের পর মা-বাবাকে মানালো। রাতে কারো ঠিক মতো খাওয়াই হলো না।।
‘আপনি কিসের চাকরি করেন?’ শুভ্রতার কথায় মেঘ ওর দিকে ফিরে বলে,,’সেকি নিজের বর কি করে সেটাও জানো না?’
‘জানলে নিশ্চয়ই জিজ্ঞাস করতাম না!’
‘আমি প্রাইভেট অফিসে জব করি। ম্যানেজার পদে। আমার আন্ডারে ১৫ জন আছে।’
‘আচ্ছা।’ সেরাতে দুজনের মাঝে আর কোনো কথাই হলো না। ঘুমিয়ে গেলো দুজনে।
________________
বাস ঢাকার উদ্দেশ্য রওনা দিয়েছে অনেকক্ষণ হলো। কিন্ত ভোর ৪:০০ টায় কেনো টিকেট কাটলো এটাতেই শুভ্রতার মেজাজ খারাপ হচ্ছে। প্রচন্ড ঘুম পাচ্ছে। তাই সিটে হেলান দিয়ে শুয়ে পড়লো। ঘুম ভাঙ্গতেই নিজেকে মেঘের বাহুডোরে আবিষ্কার করে হকচকিয়ে গেলো শুভ্রতা। ঘুমের ঘোরে মেঘের এতো কাছে এসেছে ভাবতেই শ্বাস বন্ধ হওয়ার উপক্রম। এভাবে কি প্রতিদিন রাতেই হয়? কই ঘুম থেকে উঠে তো নিজেকে ঠিক ভাবেই পায়। তবে কি আজ বাসের সিটের কারণ? উত্তর মিলে না শুভ্রতার। মেঘের কাছ থেকে সরে এসে বাইরে মনোনিবেশ করে। পুরোটা সময় শুভ্রতার সকল কান্ড শান্তভাবে দেখলো মেঘ। কিছুই বললো না।

সাততলা একটা বিল্ডিংয়ের সামনে এসে সিএনজি থামলো। শুভ্রতা পুরো বিল্ডিংয়ে চোখ বুলিয়ে নিলো।
‘এসো।’ মেঘ একহাতে ব্যাগ অন্যহাতে শুভ্রতার হাত মুঠোয় নিয়ে ভেতরের দিকে অগ্রসর হলো। লিফট দিয়ে চতুর্থ তলায় গিয়ে ফ্ল্যাটের ভেতর ডুকলো দুজনে। দুটো বেডরুম,একটা ড্রয়িংরুম আর কিচেন নিয়ে বাসাটা।
‘পছন্দ হয়েছে বাসা?’
মেঘের কথায় শুভ্রতা মাথা দুলিয়ে বলে,,’বেশ ভালোই।’
‘আচ্ছা ওদিকে ওয়াশরুম তুমি ফ্রেশ হয়ে এসো। আমি এদিকটা গুছাচ্ছি। আর আলমারিতে তোমার ড্রেস আছে।’ মেঘের কথায় শুভ্রতা দেখিয়ে দেওয়া রুমে চলে গেলো।

বেরিয়ে এসে দেখে মেঘ খাবার নিয়ে বসে আছে। দেখেই বুঝা যাচ্ছে বাইরে থেকে আনিয়েছে। নিজেও ফ্রেশ হয়ে নিয়েছে। ‘এসো খেয়ে নিবে!’ কথাটা বলে মেঘ খাবার বেড়ে শুভ্রতাকে দিয়ে নিজেও খেয়ে নেয়।
‘শুনো বুয়া এসে টুকিটাকি কাজ করে দিয়ে যাবে,তুমি শুধু রান্নাটা করবে। আর তোমার যেভাবে ভালো লাগে ঘর সাজিয়ে নিয়ো। কিছুর প্রয়োজন হলে আমাকে বলবে আমি এনে দেবো। বাসায় কিছু নেই। আমি একটু বাজারে যাচ্ছি। দরজা আটকে দিয়ে রেস্ট নাও।’
মেঘের কথায় শুভ্রতা না চাইতেও বলে ফেলে,,’কখন আসবেন?’
‘বাজার শেষ করেই চলে আসবো। সাবধানে থেকো। প্রয়োজন পড়লে কল দিও। আসছি।’ মেঘ বিদায় নিয়ে চলে গেলে শুভ্রতা দরজা লাগিয়ে রুমে গিয়ে শুয়ে পড়লো। ক্লান্তিতে ঘুম এসে ভীড় করলো।

#চলবে?

(ভূল-ত্রুটি ক্ষমা করবেন। ধন্যবাদ)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here