হৃদমাঝারে রাখবো পর্ব -০৬

#হৃদমাঝারে_রাখবো
#লেখকঃRabi_Al_Islam
#পর্বঃ৬
তোমাকে বলেছি আহানের সাথে আর কথা বলবেনা। তারপরও কেন কথা বললে ওর সাথে?

‘ আমি আপনার কথা শুনতে বাধ্য নই। আপনি আমার উপর অধিকার খাটাতে আসবেন না।

‘ আমি যা বলবো তা শুনতেই তুমি বাধ্য

‘ বাধ্য নই। আপনার আর কিছু বলার না থাকলে চলে যেতে পারেন

‘ অনেক কিছুই বলার আছে৷ আমার কাছ থেকে আমি জাস্ট কারনটা জানতে চাই। ঠিক কী কারনে তুমি আমার উপর রেগে আছো

‘ আজবো তো! আপনার উপর আমি রাগ করতে যাবো কেন? আপনি কী আমার গার্ডিয়ান নাকি যে রাগ করবো আমি। যেখানে আপনি আমার কেও না সেখানে রাগ করার তো প্রশ্নই আসেনা৷

‘ তাহলে হঠাৎ কী এমন হলো যে আমার সাথে এরকম করছো। আগে তো ঠিকই কথা বলতে আমার সাথে। আমি মানছি আমার ভুল হয়েছে৷ আর কখনও এমন করবো না৷ তাও প্লিজ আমার থেকে দূরে যেওনা৷ আমি থাকতে পারবো না তোমাকে ছাড়া৷ তুমি কথা বলা অফ করার পর আমি কতটা যন্ত্রণায় ছিলাম তা একমাত্র আমি জানি৷ আমি থাকতে পারবো না তোমাকে ছাড়া

‘ সেটা আপনার ব্যাপার আপনি কী করবেন৷ আপনি যদি ভেবে থাকেন আমি আপনার উপর রাগ করে এমন করছি তাহলে ভুল ভাবছেন৷ আমি আমার লাইফটা নতুন ভাবে শুরু করতে চাই

‘ একসময় তুমি যখন বলতে, কান্না করলে মা’থা ব্যাথা করে তখন বুঝিনি৷ এখন বুঝতে পারছি কান্না করলে ঠিক কতটা যন্ত্রণা হয়

‘ বুঝতে পারলে ভালো। এখন আর কারও জন্য কান্না করা লাগেনা। কারও জন্য আর পরিবারের সাথে খা’রাপ ব্যবহার করিনা৷ বুঝতে শিখেছি,পরিবারকে সময় দিতে শিখেছি৷ তাই ভালোও আছি এখন। কারও জন্য আর মন খারাপ হয়না এখন। একাই ভালো আছি অনেক

‘ কিন্তু আমি ভালো নেই তোমাকে ছাড়া। আমি প্রতিটা মুহূর্তে তোমাকে অনুভব করি। প্লিজ এমন করো না। আমি যখন তোমার উপর একবার রাগ করেছিলাম তখন কিন্তু আমি তোমাকে ছেড়ে যাইনি৷ ঠিকই তোমার সাথে কথা বলেছি। তাহলে এখন তুমি কেন আমাকে ছেড়ে যাচ্ছো? সবকিছু থেকে আমাকে ব্লক করে রেখেছো।

‘ আপনি তখন কথা বলা অফ করছিলেন তখন তো আমি কিছু বলিনি। এখন আমি অফ করছি৷ আর কখনও আপনার সাথে কথা বলবো না৷ আপনি যখন আমায় ব্লক দিয়েছিলেন তখন তো আমি কিছু বলিনি

‘ তুমি এখন আমাকে ছেড়ে যাচ্ছো৷ অথচ আমি কখনও এমনটা কল্পনাও করিনি আমি সেই আগের ফিহাকে দেখতে চাই

‘ তা আর সম্ভব না৷

ফিহা চলে যেতে চাইলে আদ্রিব ওকে বাঁধা দিলো৷ ফিহার রাগ বেড়ে গেলো আরও৷ আদ্রিবকে বললো, আমার পথ ছাড়ো

‘ না ছাড়বো না৷ তুমি আমাকে কারনটা বলবে৷ ঠিক কি কারনে আমার উপর রেগে আছো?

‘ আজব তো! তোকে কতবার বলবো আমি তোর উপর রেগে নেই৷ তুই কি আমার কথা বুঝতে পারছিস না৷ তুই তোর মত থাকবি আমি আমার মত৷

‘ আমি তোমার মায়াতে সীমাবদ্ধ। তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবো না

‘ সেটা তোর ব্যার্থতা৷ আমি তোকে ছাড়া খুব ভালো থাকবো৷

ফিহা চলে যেতে চাইলে আদ্রিব ওর হাত ধরলো তখন ফিহা রাগের মাথায় আদ্রিবকে থা’প্প’ড় মে’রে বসে৷ আদ্রিব বোকার মত দাঁড়িয়ে আছে। ফিহা আদ্রিবকে আরও অনেক কিছু বলে অপমান করলো৷ আদ্রিব চুপ করে সব শুনে গেলো। আদ্রিবের চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়তে লাগলো

****

ফিহার এমন আচরন রাইসা কিছুতেই মেনে নিতে পারেনি৷ র আদ্রিবের এমন অবস্থা দেখে রাইসার নিজেরই অনেক খারাপ লাগলো৷ রাইসা স্পষ্ট দেখতে পেলো আদ্রিবের চোখে পানি৷ কিন্তু তাতে ফিহার কিছুই যায় আসেনা৷ আদ্রিব যেনো একটা মূ’র্তির মত দাঁড়িয়ে ফিহার সব কথা শুনে গেলো৷

রাইসা ফিহাকে বললো, এটা কি ঠিক করলি তুই? এরকম ব্যবহার না করলেও পারতি তুই

‘ তোর এত খা’রাপ লাগলে তুই গিয়ে ওর সাথে প্রেম কর না৷ আমি যা করেছি ঠিক করিনি কিন্তু ওকে বারবার নিষেধ করার পরও আমার সাথে কথা বলতে আসে এটা কি ঠিক?

‘ হয়তো তুই তাকে কখনই ভালোইবাসিসনি তাই তার সিচুয়েশনটা বুঝতে পারছিস না৷ যদি সত্যিই ভালোবেসে থাকতি তাহলে এরকমটা করতে পারতিস না৷ আমার চোখে তোর মত কোনো মেয়েকে এতটা পরিবর্তন হতে দেখিনি।

‘ হ্যা আমি অনেকটা পরিবর্তন হয়ে গেছি৷ আগে অল্পতেই কান্না করতাম। এখন করিনা৷ আগে আবেগের বশবর্তী হয়ে কারও মায়ায় পড়েছিলাম৷ কিন্তু এখন সেই আবেটা কেঁটে গেছে। এখন আর কারও জন্য খারাপ লাগেনা৷ নিজেই নিজেকে নিয়ে ভাবি।

‘ আদ্রিব ভাইয়া তো তোকে ভালোবাসে। আর এটা কিন্তু তোর কারনেই হয়েছে৷ তুই তাকে ভালোবাসতে বাধ্য করেছিস। এখন যদি তুই তাকে কোন যুক্তিসঙ্গত কারন না দেখিয়ে ছেড়ে যাস তাহলে সেটা কিভাবে মেনে নিবে

‘ আমার ইচ্ছে ছেড়েছি৷ আমার লাইফ আমি যা ইচ্ছে করবো৷ ও আমাকে ভুলতে পারলো কিনা তা আমার দেখার বিষয় না৷

******

কিয়াম আদ্রিবকে বললো, বলেছিলাম এখন ফিহার সাথে কথা বলতে যাস না৷ ফিহা আর সেই আগের ফিহা নাইরে৷

আদ্রিব কিয়ামকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে লাগলো৷ আদ্রিবকে এমন ভেঙে পড়তে দেখে ওর ফ্রেন্ডদের সবার চোখেই পানি এসে পড়েছে৷ একটা ছেলে কতটা কষ্ট পেলে এভাবে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে পারে তা হয়তো কারও জানা নেই। আদ্রিব ফিহাকে ঠিক কতটা ভালোবেসে ফেলেছে তা হয়তো চিন্তারও বাহিরে৷ আদ্রিবকে কখনও মন খারাপ করতেও কেও দেখেনি৷ সবসময় হাসি- খুশি থাকতো। আর সেই আদ্রিব কিনা এভাবে কান্না করছে৷ ফিহা বুঝলোই না আদ্রিবের ভালোবাসা৷

******

২ দিন পর

রাইসা আদ্রিবের সাথে কথা বলতে আসলো৷ রাইসা আদ্রিবের সাথে কথা বলতে আসতো না কখনই৷ কিন্তু আদ্রিবকে দেখে রাইসা ভাবলো তাকে বলা দরকার৷ রাইসা আদ্রিবকে বললো, ভাইয়া আপনার সাথে কিছু কথা ছিলো

‘ হ্যা বলো,

‘ ভাইয়া আমি আপনার সিচুয়েশনটা বুঝতে পারছি৷ আমার নিজেরই অনেক খারাপ লাগছে৷ সেই সাথে অবাকও হচ্ছি এটা ভেবে যে, ফিহা এতটা পরিবর্তন কিভাবে হতে পারলো৷ ওর ফ্রেন্ড হয়ে এটা আমারও জানা নেই৷ আমি ওকে অনেক বুঝিয়েছি কিন্তু আমি ব্যার্থ৷ আপনার জন্য অনেক খারাপ লাগছে ভাইয়া৷ ছোটবোন হয়ে একটা কথা বলছি ভাইয়া, ফিহাকে ভুলে যান ভাইয়া৷ আপনি ভালো কাউকে পাবেন ভাইয়া৷ ফিহা আর কখনও আপনার সাথে কথা বলবেনা৷ আপনি যত যাই করবেন ফিহা আপনার সাথে এমনই ব্যবহার করবে৷ আপনি হয়তো এটা নিতে পারবেন না ভাইয়া। প্লিজ ভাইয়া আবার নতুন ভাবে সব কিছু শুরু করেন৷ কারও জন্য নিজেকে এভাবে শেষ করবেন না।

‘ আমি জানিনা আমি ফিহাকে কতটা ভালোবাসি৷ কিন্তু এটা অবশ্যই বলতে পারি আমি ওকে কোনদিন ভুলতে পারবো না৷ আমি যাই করিনা কেন সবসময় ওর কথা মনে পড়ে। ওর বলা কথা গুলো আমার হৃদয়ে তীড়ের মত আঘাত করে৷ হয়তো আর কখনও ওর সামনে যাওয়ার সাহস আমার থাকবেনা। তবে আমি সবসময় ওর জন্য অপেক্ষা করবো। আমি জানি ফিহা আমাকে ভালোবাসে৷ আমি ওর চোখে আমার প্রতি ভালোবাসা দেখেছি। এটা এত সহজে শেষ হবার নয়

চলবে—-

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here