হৃদয়ের অনুভূতি পর্ব -০১

— আয়ান ভাইয়া,‌ দরজা বন্ধ করেছেন কেনো? আর আপনি এতো রাতে আমার রুমেই বা কি জন্য এসেছেন? প্লিজ দরজার বন্ধ করিয়েন না। আমার মান-সম্মানের কথাটা চিন্তা করুন। প্লিজ…..

কথাটা শেষ করতে করতে দরজার কাছে চলে আসে নেহা। আয়ান দরজাটা বন্ধ করে নেহার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। নেহা রাগি লুক নিয়ে আবারও চিৎকার করে বলতে লাগলো……

— আয়ান ভাইয়া আমি আপনাকে কিছু বলছি……

— ওহহহ, হ্যাঁ বলো কি বলছিলে?…

— দরজাটা খুলুন এখনি…..

এই বলে নেহা দরজা খুলতে চেষ্টা করতেই আয়ান নেহার হাত চেপে ধরলো। আয়ানের এমন অৎভূত আচরণের সাথে অপরিচিত নেহা। নেহা মনের মধ্যে অজানা ভয় নিয়ে কাঁপা কাঁপা গলায় বললো…..

— আয়ান ভাইয়া আমার হাত ধরলেন কেনো?

— তোমাকে আপন করতে ধরেছি……

— মমানে?……

— মানেটা কি বুঝতে পারছো না তুমি?….

— আয়না ভাইয়া আমি আপনাকে আগেই বলেছি, আমার পক্ষে আপনাকে ভালোবাসা সম্ভব না। তা ছাড়া আমায় বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। আপনি বুঝার চেষ্টা করুন…….

— আয়ান চৌধুরীকে নাকচ করে দেয়ার সাহস আজ পর্যন্ত কেউ করে নাই। তুমিই প্রথম কোনো নারী যে কিনা আমাকে প্রত্যাখান করেছে। আমার ইগো হাট করেছো তুমি। তাই আজ আমি তোমার এমন অবস্থা করবো যা তুমি কখনও স্বপ্নেও কল্পনা করোনি।

* আয়ানের কথা গুলো নেহার মাথার উপর দিয়ে চলে গেলো। আয়ান কথা শেষ করতেই নেহার কোমর ধরে স্লাট করে কোলে তুলে নিলো। নেহা আয়ানের কথা শুনে একটা ঘোরের মধ্যে চলে গেল। আয়ান নেহাকে কোলে করে নিয়ে যায় বিছানার উপর। বিছানার উপর ধপাস করে ফেলে দেয়। নেহা কোমর ধরে চিৎকার করে উঠলো। আয়ান নেহার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলে…….

— এইটুকুতেই চিৎকার করছো? এটাতো একটা ট্রেলার মাত্র। সিন এখনও বাকি আছে বেবি…..

✒️ আয়ান নিজের শার্টটা খুলে ফ্লোরের দিকে ছুঁড়ে দিলো। ঝাঁপিয়ে পরলো নেহার উপর। নেহার করার মতো আর কিচ্ছু নেই। নেহা আয়ানকে বাঁধা দিচ্ছে আর চিন্তা করছে… এখন যা কিছু হচ্ছে তাকি সত্যিই!?… আয়ান ভাইয়া এতোটা নিচে নামতে পারে? সে তো আমায় ভালোবাসতো, এটাকি তার ভালোবাসা? নেহা আয়ানের দিকে ছলছল চোখে তাকিয়ে সহ্য করছে আয়ানের অত্যাচার। নেহার চোখ জোড়া স্পষ্ট প্রকাশ করছে আয়ানের প্রতি তীব্র ঘৃণা। তবুও আয়ান কোনো কিছুর তোয়াক্কা করছে না। আয়ান পশুর মতো আচরন করছে নেহার সাথে। আয়ানের এমন আচরন সত্যি মেনে নেওয়া নেহার পক্ষে ভিশন কষ্ট কর। আয়ান নেহার ঘাড়ে, গলায়, গভীর চুম্বন করতে থাকে। আয়ানের স্পর্শ নেহাকে বার বার মনে করিয়ে দিচ্ছে যে সে একজন নারী। আয়ান নেহার ঠোঁট জোড়া নিজের ঠোঁটের সাথে এক করে নিলো। নেহা প্রান পণ চেষ্টা করছে আয়ানের হাত থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে। কিন্তু বার বার সে পরাস্ত হচ্ছে আয়ানের শক্তির কাছে। আয়ান একে একে নেহার শরীরের সমস্ত কাপড় খুলে ফেলে এবং নিজের ইচ্ছে মত ভোগ করে নেয়। সে আদায় করে নেয় নেহার সান্নিধ্য। আজ নিজেকে পৃথিবীর সব থেকে অসহায় একজন মানুষ মনে হচ্ছে নেহার। নেহার আর্ত্যনাদ শোনার মতো কেউ নেই। একটা পর্যায় নেহা নিজেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার বৃথা চেষ্টা করা ছেড়ে দিলো। বাধ্য হয়ে নিজেকে তুলে দিলো এক ঘৃণ্য ব্যক্তির কাছে। প্রায় ঘন্টা খানেক পরে শেষ হয় আয়ানের অত্যাচার। আয়ান‌ নিজের ইচ্ছে পূরণ করে ছেড়ে দেয় নেহাকে। আয়ান নিজের কাজ শেষ করে নেহার কানের কাছে গিয়ে বললো……

— হাহাহাহা কি হলো নেহা? সব অহংকার শেষ করে দিলাম তো। কিচ্ছু করতে পারলে না তুমি। আহারে ভিশন আফসোস হচ্ছে আমার তোমার জন্য। এখন তোমাকে এই অবস্থায় যদি রিহান দেখে কি হবে? তোমার প্রতি যা ভালোবাসা ওর ছিলো সব দরজা দিয়ে পালাবে। তবে যাই বলো অনেক সুখ আমায় দিয়েছো তুমি। সমস্যা নাই, তুমি চাইলে আমি তোমায় বিয়ে করতে পারি। আফটার অল এমন সুখ আজ পর্যন্ত কেউ আমায় দিতে পারে নাই…….

“আয়ানের কথা শেষ হওয়ার আগেই নেহা অনেকটা কষ্ট করে বিছানা থেকে উঠে সজোরে একটা থাপ্পর মারলো আয়ানকে আর বললো”……

— ঠাসসসসস…….. তুই কি মানুষ? নাকি মানুষ রূপে একটা পশু!…. এতোটা নির্মম তোর ভালোবাসা। ছিঃ লজ্জা করছে এই ভেবে যে বরাবর আমি তোর মতো একটা জানোয়ারকে সম্মান করে এসেছি। আসলে তুই……

আয়ান নেহার মুখ চেপে ধরলো। আয়ানের চোখ জোড়া রক্ত বর্ণ ধারণ করলো। আয়ান নেহার মুখর কাছে নিজের মুখ নিয়ে গিয়ে বললো……..

— হ্যাঁ আমি পশু, কিন্তু এই পশুটা তুই আমাকে বানাইছিস। হাজার বার বলেছি আমি তোকে ভালবাসি কিন্তু তুই আমাকে এড়িয়ে গেছিস। রিহানের সাথে রিলেশন করছিস। বিশ্বাস কর সহ্য করতে পারি নাই আমি। তোকে অন্যের হতে দেখার পর আমার কতটা কষ্ট হয়েছে তা তুই বুঝবি না। আমি তোকে সেই সব ফিরিয়ে দিবো যা তুই আমাকে দিয়েছিস। যাস্ট ওয়েট এন্ড সি…..

বিছানায় ধাক্কা মেরে ফেলে দিলো নেহাকে। নিজের শার্টটা ফ্লোর থেকে তুলে পরে নিলো আয়ান। নেহা বিছানায় বসে কাঁন্না করছে। আয়ান নেহার দিকে এগিয়ে গিয়ে বললো…….

— এমন ভাবে নগ্ন শরীর দেখাতে খুব ভালো লাগছে তোমার?

আয়ানের কথা শুনে নেহা চোখ বড় করে তাকিয়ে রইল আয়ানের দিকে। আয়ান বাঁকা হাসি ঠোঁটের কোণে এঁকে বললো…..

— যাও ফ্রেশ হয়ে নাও, আরো কিছু সারপ্রাইজ তোমার জন্য অপেক্ষা করছে।

আয়ান রুম থেকে বেল্কনির দিকে চলে যায়। নেহা বিছানা থেকে উঠতে পারছে না। পুরো শরীরে অসার হয়ে আসছে। অসহ্য যন্ত্রণা হচ্ছে তার। নেহা অনেক কষ্ট করে বিছানার থেকে উঠে দাঁড়ালো। খুব ভালো করে অনুভব করছে আয়ানের আঘাত গুলো। নেহার চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে। যাই হোক নেহা কোনো মতে ওয়াসরুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়। ওয়াসরুমের কলটা অন করে নিজেকে আর‌ সামলাতে পারলো না সে। চিৎকার করে দুচোখে জলে ছেড়ে দিলো। আয়ান করা প্রতিটা আঘাত তার হৃদয়ে কাঁপিয়ে তুলেছে। আজ বড্ড অসহায় বোধ করছে নিজেকে। এই মুখ কি করে সবাইকে দেখাবে সে?… কি করে রিহানের সামনে যাবে সে? রিহানাকে আজ নিজের অনইচ্ছেতেই ঠকিয়েছে সে। আচ্ছা রিহানকি আমার সব কিছু মেনে নিবে? আমাকে কি রিহান বুঝবে?….. কথা গুলো ভাবতেই নেহার বুকটা আতকে উঠলো। যাই হোক শাওয়ারটা অন করে সমস্ত শরীরে হাত বোলাচ্ছে নেহা। উপলব্ধি করছে আয়ানের অত্যাচারের কথা। তার সমস্ত শরীর আজ আয়ানের দেওয়া ক্ষত গুলো বহন‌ করছে। নেহা ভালো করে পরিষ্কার করছে নিজেকে। কিন্তু আফসোস আজ তার চরিত্রে যে দাগ আয়ান লাগিয়েছে। তা কখনোই মুছে ফেলা যাবে না।

* নেহা আরও কিছুক্ষণ শাওয়ার নিয়ে বেরিয়ে এলো। ওয়াসরুম থেকে বেরিয়ে নেহা চমকে গেলো আয়ানকে দেখে। আয়ান সোফায় বসে ড্রিংক করছে। নেহা মাথাটা নীচু করে দাঁড়িয়ে আছে। আয়ান নেহার দিকে তাকিয়ে বললো……

— এভাবে দাঁড়িয়ে আছো কেনো বেবি? যাও অপেন দ্যা ডোর…….

নেহা নিশ্চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। আয়ান নেহাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে একটা রাক্ষুসে হাসি দিয়ে বলল……..

— আহহহ দাঁড়িয়ে আছো যে!… সারপ্রাইজ চাই না তোমার? ওকে আমি আসছি দুজন মিলে একসাথে সারপ্রাইজ উপভোগ করবো। কিন্তু তার আগে…..

আয়ান কথা গুলো বলতে বলতে নেহার কাছে চলে যায় আর নেহার খোলা চুল গুলো শক্ত করে ধরে। নিজের ঠোঁট জোড়ার সাথে নেহার ঠোঁট জোড়া এক করে নেয়। নেহা এবার কোনো বাধা দিলো না। আয়ান এইবার নেহার হাত ধরে টেনে নিয়ে গেলো দরজার কাছে। দরজার কাছে গিয়ে দরজাটা খুলে দিলো। দরজা খুলতেই নেহার মাথার উপর যেনো আকাশ ভেঙ্গে পরলো। কি দেখছে সে? নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না নেহা। নেহা দেখতে পেলো তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে তার ভালোবাসার মানুষ রিহান। রিহান অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে নেহা আর আয়ানের দিকে। আয়ান নিজের ইচ্ছা মত সিগারেট ফুঁকেছে। যাই হোক নেহা কাঁপা গলায় রিহানকে বললো…….

— ররিহান তততুমি?….

— হ্যাঁ, আমি। কেনো ভূল সময় চলে এসেছি‌ বুঝি?….

— না রিহান। তুমি একদম ঠিক সময় এসেছো। বিশ্বাস করো তুমিই যা দেখছো তা সত্যি না। আমি তোমাকে ভালোবাসি আর আমাদের সম্পর্ক নষ্ট করতে আয়ান ভাইয়া এমন করেছে। তুমি আমায় বিশ্বাস করো……

— শাট আপ, বিশ্বাস তাও তোমাকে আমি করবো কখনও না। তুমি একটা নির্লজ্জ, চরিত্রহীন মেয়ে…..

— হ্যাঁ, আমি মেনে নিচ্ছি সব কিন্তু আমি তোমায় ভালোবাসি।

— ভালোবাসা!.. হ্যাঁ অন্যের সাথে এক বিছানায় থেকে এখন বলছো ভালোবাসো!… প্রয়োজন নেই আমরা এমন ভালোবাসা।

— তার মানে…….

নেহাকে থামিয়ে দিয়ে আয়ান পিছন‌ থেকে বললো…..

— তার মানে রিহান তুমি এই বিয়েটা ভেঙ্গে দিচ্ছো। তাই তো?

— হ্যাঁ, এমন একজন মানুষের সাথে সারা জীবন কাটানো যায় না।

— একদমই তাই

— অকে নেহা আমি আসছি আর একটা অনুরোধ করছি আর কখনও কোনো ছেলের সাথে প্রতারণা করো না। আয়ানের সাথে সুখে থেকো। আসছি……

* রিহান চলে যায়। নেহা হাঁটু গেড়ে বসে কাঁদতে থাকে। এক নিমিষেই আয়ান তার থেকে তার ভালোবাসার মানুষটিকে কেড়ে নিলো। নেহার সুখ কেড়ে নিলো। নেহার সব চেয়ে বেশী দামী তার সম্মানটাও আজ আয়ান নিয়ে নিলো। নেহার কষ্টটা আজ আকাশ সমান। আর তার বহিঃপ্রকাশ চোখের বাঁধ ভাঙ্গা জল।

যাই হোক আয়ান নেহাকে কাঁদতে দেখে ওর পাশে বসলো আর নেহাকে উদ্দেশ্য করে বললো……..

— ভালোবাসার মানুষ ছেড়ে চলে গেলে ঠিক এমন কষ্টটাই হয়। আশা করি বোঝাতে পেরেছি…..

— তুই একটা মানুষ? এতো নিচে নামতে পারলি তুই? একটাবার আমার সম্মানের কথা চিন্তা করলি না তুই? ছিঃ!.. তোর সাথে কথা বলতে লজ্জা করছে আমার।

— বলিও না কথা। আমি খারাপ তাই তো!.. ঠিক আছে আমি খারাপ। আমি অনেক মেয়ের সাথে ফিজিক্যালি এ টাচ হয়েছি। হুম আমি খারাপ বাট আমাকে খারাপ বলার আগে নিজের দিকে তাকিয়ে দেখো। আর হ্যাঁ এই খারাপ ছেলেটার সাথে বাকি জীবন কাটাতে হবে তোমায়….

— অসম্ভব। আমি মরে যাবো তবুও তোর এই ইচ্ছে কোনো দিন পূরন হবে না।

— আহহহ তাই নাকি? আমি তোমাকে মরতে দিলে তো মরবে তাই না বেপ্পি

✒️ আয়ান বাঁকা হাসি দিয়ে বেরিয়ে যায় নেহার বাড়ি থেকে। আজ আয়ান ভিশন খুশি। কারন আজ তার ইচ্ছে পূরণ হয়েছে। আজ সে নেহাকে আঘাত করতে পেরেছে। মনের আনন্দে নাচতে ইচ্ছে করলেও নিজেকে সামলে নিলো সে। আয়ান ভাবছে আচ্ছা নেহা আমার সাথে যা যা করেছে তার জন্য কি এইটুকু শাস্তি?.. না, না আরও শাস্তি দিতে হবে ওকে। ওর জীবনকে নরক বানিয়ে দিতে হবে। আয়ান চৌধুরীকে কষ্ট দেয়া…..

ঐ দিকে নেহার কাঁন্না থামছে না। নিজের সম্মান হারিয়ে আজ শূন্য সে। খুব ভালো ছিলো সেই দিন গুলো যখন তার সাথে আয়ানের পরিচয় হয়নি। এক বিয়ের অনুষ্ঠানে আয়ানের সাথে নেহার পরিচয়। সেখান থেকেই আয়ান তার পিছু নিয়েছে। প্রথমে নেহার ভার্সিটি, তারপর তার মন, এবং শেষমেষ তার বিছানায়। নেহা আয়ানকে ভালোবাসতো তবে যেদিন থেকে নেহা আয়ানের কিছু অপ্রিয় সত্যি জানতে পারলো তারপর থেকে সম্পর্ক শেষ। কিন্তু আয়ান এই সম্পর্ক শেষ হতে দেয় নাই। বার বার ফিরে এসেও যখন নেহাকে আটকাতে পারেনি‌। তখন আর কি? যা যা করলো তা তো দেখলেনই। আয়ান বেশ ধনী পরিবারের ছেলে। আয়ানের বাবা একজন বিজনেস টাইফুন। পরিবারে আয়ান তার মা বাবার ভিশন প্রিয়। এক মাত্র সন্তান সে। নিজের ইচ্ছা মত যখন যা খুশি তাই করে আয়ান। অন্য দিকে নেহা খুব সাধারণ একটা মেয়ে। নেহা বেশ সিস্টেমেটিক একটা মেয়ে। নেহার বাবাও বিজনেস করে আর মা একজন টিচার। যাই হোক নেহা নিজের রুমে বসে‌ কাঁন্না করছে এমন সময় তার রুমে চলে আসে………………………

#চলবে……………………..

#হৃদয়ের_অনুভূতি
#পর্বঃসূচনা
#লেখকঃআয়ান_আহম্মেদ_শুভ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here