হৃদয়ের অনুভূতি পর্ব -০৩

#হৃদয়ের_অনুভূতি
#পর্বঃ০৩
#লেখকঃআয়ান_আহম্মেদ_শুভ

* রাতের দিকে হঠাৎ করেই রাজের কল আসে। আমি কলটা পিক করতেই রাজ বলতে লাগলো……

— হ্যালো, আয়ান….

— হ্যাঁ, বল…..

— একটা খবর আছে ভাই তোর জন্য।

— এই কোনো কথা বলতে গেলে এতো নাটক কেনো করিস তুই? আর তোর খবর আমি জানি। আর আমার মুড এখন ওফ সো তুই আমার বাসার ছাদে চলে আয়‌। আর শোন তিনটা আনিস কেমন। আজ কেনো জানি নেশা হচ্ছে না আমার…..

— আরে মামা আমি এখন‌ যা বলবো তা শুনে তোর নেশা উড়ে যাবে।

— কি কথা?……

— নেহা আর রিহান‌ দেখা করতে এসেছে একটা কফি শপে। তুই তারাতাড়ি চলে আয়। আমি এড্রেসটা বলছি…….

রাজের কথা শুনে আয়ান নিজের হাত মুঠো বন্দি করে নেয়। আচমকাই আয়ানের চোখ জোড়া রক্ত বর্ণ ধারণ করে। আয়ান‌ দাঁতে দাঁত চেপে বলে….

— কিহহহ?… নেহা আর‌ রিহান!… তারাতাড়ি মেসেজ কর আমি এখনি আসছি।

* নেহা আর রিহান এখন এই সময় কেনো দেখা করবে? তবে কি আমি এতো কিছু করার পরেও নেহাকে আটকাতে পারবো না? নেহা কি সত্যিই সারা জীবন আমায় ঘৃণা করে যাবে? নো, নেভার আমি হারতে শিখিনি। নেহা আগেও আমার ছিলো আর ফিউচারেও আমার থাকবে।

✒️ আয়ান তার বাইক নিয়ে বেরিয়ে পরে রাজের দেয়া এড্রেস অনুযায়ি। আয়ান যদিও নেহাকে মন থেকে ভালোবাসে কিন্তু আয়ানের একটাই দোষ সে নেহার পাশে ২য় কাউকে সহ্য করতে পারে না। আর এই জন্যই নেহার যখন আয়ানের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় তারপরও আয়ান বার বার নেহার কাছে ভালোবাসা পেতে ছুঁটে আসে। আর আয়ান যখন জানতে পারে নেহা আর রিহানের বিয়ে ঠিক হয়েছে। তখনই আয়ান নেহার উপর বেশ রেগে যায় এবং একটা ভূল সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে। “আসলে রাগের মাথায় আমরা সবাই অনেক সিদ্ধান্ত নেই। যার ফল কখনোই ভালো হয় না”…..

* আমি খুব দ্রুত পৌঁছে যাই কফি শপে। বাইক থেকে নামতেই দেখতে পেলাম রাজকে। আমি রাজের কাছে জানতে চাইলাম…..

— নেহা কোথায়?…

— ঐ যে সাত নাম্বার টেবিলে বসে আছে।

— আচ্ছা তুই এখানে দাঁড়া, আমি ভিতরে যাচ্ছি।

— আরে না ভিতরে এমনি গেলে হবে না। ওরা তোকে দেখে ফেললে আবারও ঝামেলা হতে পারে। তুই বরং মুখ ঢেঁকে যা। তা হলে কেউ তোকে চিনতে পারবে না।

— আচ্ছা ঠিক বলেছিস। আমি এখন যাই ভিতরে……

* আমি ব্লেজারটা দিয়ে চেহারাটা ভালো করে ঢেকে নিলাম। যাতে করে রিহান‌ বা নেহা কেউই আমায় চিনতে না পারে। আমি ঠিক ওদের পিছনের টেবিলে গিয়ে বসলাম। আমি টেবিলে বসতেই ওদের কথা শুনতে পেলাম। রিহান নেহাকে বলছে………

— দেখো নেহা আমি জানি তুমি আয়ানকে ভালোবাসো আর আমার সাথে যাস্ট ভালোবাসার অভিনয় করেছো। এখন তো আয়ান তোমার শরীর ছুঁয়েছে। আর মন তো অনেক আগেই। তাই আমার মতে তোমার উচিৎ তোমাদের মাঝে যা ভূল বোঝাবুঝি আছে তা মিটিয়ে নাও।

— সম্ভব না। ও যা যা করেছে আমার সাথে তারপর ওকে আমি আর নিজের সাথে জড়াতে চাই না।

— তাহলে কি চাও তুমি?….

— আমি বললাম তো তুমি আমাকে বিয়ে করে ফেলো। আমি সত্যিই আয়ানকে ভূলে, ওর দেওয়া আঘাতকে ভূলে নতুন করে বাঁচতে চাই।

— ঠিক আছে। আমি তোমাকে মেনে নিতে পারি তবে আমার কিছু শর্ত আছে। যা তোমাকে পূরণ করতে হবে……

— কি শর্ত?…. বলো আমি তোমার সব শর্ত মেনে নিবো। তারপরও আমি আয়ানের থেকে মুক্তি চাই।

— ভালো করে ভেবে বলো যা বলবো তাই করতে হবে কিন্তু……

— হ্যাঁ, বলো তুমি…….

আয়ান পিছনের টেবিলে বসে সব শুনতে পেলো। নেহা আয়ানের থেকে মুক্তি পেতে চায়। কথাটা আয়ানের কানে যেতেই আয়ান টেবিলের উপর রাখা একটা গ্লাস নিজের হাতে নিয়ে মুষ্ঠি বন্ধ করে নেয়। সজোরে চেপে ধরে গ্লাসটা। গ্লাসটা আয়ানের হাতের চাপ নিতে না পেরে ভেঙ্গে যায়। গ্লাসের টুকরোর আঘাতে আয়ানের হাত থেকে টপটপ করে রক্ত বেরিয়ে পরতে লাগলো মাটিতে। আয়ানের ঐ দিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। আয়ানের কানে শুধু নেহার বলা একটা কথা বেজে চলেছে ” আমি মুক্তি চাই”….

— আচ্ছা নেহা আমার শর্ত হলো আমি তোমাকে বিয়ের আগেই চাই। মানে আমি ফিজিক্যাল রিলেশন করতে চাই তোমার সাথে তাও বিয়ের আগে।

রিহানের কথাটা শুনে নেহা অবাক হয়ে গেলো। নেহার হাত, পা ঠান্ডা হয়ে যায় রিহানের কথায়। নেহা রিহানের দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। নিজের কানকে আজ বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে তার। রিহানকে খুব ভালো একজন মানুষ মনে করেছিলো সে। কিন্তু দিন শেষে রিহানাও এক। রিহান নেহার এই নিশ্চুপ নিরবতা দেখে খানেক টা বিরক্ত নিয়ে বলল……….

— এইভাবে তাকিয়ে আছো কেনো? আমার শর্তে রাজি তুমি?………

রিহানের কথায় নেহা ভাবনার জগৎ থেকে বেরিয়ে এলো। ফ্যাকাসে ঠোঁট জোড়ার কোনে একটু বাঁকা হাসি উঁকি দিলো তার। নেহা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে রিহানাকে বলল……

— একটা কথা সত্যি যে আমি আয়ানকে ভূলতে তোমার কাছে এসেছি। আমি ভেবেছি তুমি আর যাই হও!.. অন্ততপক্ষে আয়ানের মতো না। আমাকে বুঝবে তুমি। বিশ্বাস করো এই জন্যই আমি তোমাকে বিয়ের করতে চেয়েছি। চেয়েছি জীবনের বাকিটা পথ তোমার হাত ধরে নিজের হাসিটা খুঁজে নিবো। কিন্তু আমি আবার ভূল প্রমানিত হলাম। আয়ান আর তোমার মধ্যে বিন্দুমাত্র পার্থক্য নেই। আয়ান আমার ইচ্ছের বিরুদ্ধে গিয়ে আমাকে ধর্ষণ করলো। আর তুমি আমার নিজের ইচ্ছায় ধর্ষণ করতে চাও। আচ্ছা বলতে পারো আমার দেহটার মূল্য আমার মনের থেকে ও কেনো এতো বেশি? বলতে পারো কেনো সবাই এই দেহটাকে চায়? একটিবারের জন্যেও মনটাকে কেনো কেউ খোঁজে না….. জানো রিহান তুমি বিয়ের পরেও কিন্তু আমাকে পাবে। তবে কেনো বিয়ের আগে আমাকে চাও? হ্যাঁ, তুমিও চাও আয়ানের মতো ভোগ করতে। হাহাহাহা, কতটা বোকা আমি!… সত্যিই বোকা। এই শহরে মানুষ চিনতে পরলাম না এখনো। বুঝতে পারিনি এই শহরে ভালোবাসা মানে শুধু দেহের বিনিময়। মনের মিলের খুব একটা প্রয়োজন নেই এখানে…….

নেহার কথা গুলো শুনে রিহান বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। রিহান নেহার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল……

— যদি আমার শর্ত মেনে নিতে পারো তবে এই সম্পর্ক সামনের দিকে এগিয়ে যাবে। অন্যথায় এখানেই শেষ…..

নেহা একটা তাচ্ছিল্য কর হাসি দিয়ে বলে….

— হাহাহাহা, তুমি ভাবলে কি করে এর পরেও আমি তোমাকে খুঁজবো?……

— হ্যাঁ, সেটাই তো!… এখন আবার মাঠে নামবে। নতুন করে আরেকজন খু্ঁজবে। তারপর তার সাথেও একি ভাবে নষ্টামি কর……..

* রিহান সম্পূর্ণ কথা বলার আগেই পিছনের টেবিল থেকে আয়ান উঠে দাঁড়ালো। আয়ানের অবস্থা মোটেও সুখকর নয়। এই পৃথিবীতে একমাত্র আয়ান নেহাকে অপমান করার ক্ষমতা রাখে। অন্যকেউ নেহাকে বাজে কথা বলবে!… আয়ান তা মোটেও সহ্য করবে না। আয়ান পিছনে থাকা চেয়ারটা পা দিয়ে ফেলে দিলো। চেয়ার পরে যাওআর শব্দে রিহান পিছন ফিরে তাকালো। আয়ান নিজের মুখের উপর থাকা ব্লেজারটা খুলে ফেলে দিলো আর রিহানের উপর হামলা করে বসলো। নেহা ভিশন রকম চমকে উঠে আয়ানকে দেখে। সে কখনও ভাবেনি আয়ান এখানেও চলে আসবে। যাই হোক আয়ান রিহানের শার্টের কলার চেপে ধরে চিৎকার করে বলতে লাগলো…….

— এতোক্ষণ ধরে তোর কথা গুলো সহ্য করেছি কিন্তু আর না। নেহাকে নিয়ে বাজে কথা বলার অধিকার তোকে কে দিয়েছে? ওকে ছোট ক‌রে কথা বলে তুই বড় ভূল করে ফেলেছিস………

* আয়ান রিহানের গায়ে হাত তুললো। ইচ্ছে মতো মারতে থাকলো। যত রাগ ছিলো সব তার উপর শোধ তুলে নিলো। মারধরের এক পর্যায়ে নেহা আয়ানকে থামিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলো। কিন্তু আয়ান নেহাকে ঝাড়ি দিয়ে সরিয়ে নিলো। নেহা আবারও আয়ানকে থামাতে এগিয়ে আসলো এবং সে সফল হলো। নেহা আয়ানের দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে……

— স্টপ আয়ান, যাস্ট স্টপ ইট….. এই ভাবে কেউ কাউকে মারে? মরে যাবে তো……

আয়ানের চোখ রক্ত বর্ণ হয়ে আছে। আয়ান নেহার চোখ বরাবর তাকিয়ে বলে…….

— চুপ…. একদম চুপ। যেই ছেলে তোকে বার বার অপমান করে। তোকে বাজে কথা বলে তার প্রতি তুই এতো সদয় কেনো? কেনো এতো কিছু হয়ে যাওয়ার পরও তুই রিহানের পক্ষে আছিস?… ওর মতো একটা নিচ…….

— চুপ করে যাও আয়ান…. কাকে নিচ বলছো তুমি? রিহানকে!… ওর আর তোমার মধ্যে বিন্দুমাত্র পার্থক্য নেই। তুমি যা যা করেছো ও তাই তাই চাই। নিচ যদি রিহান হয় তবে তুমিও তাই।

— হ্যাঁ আমি নিচ। কিন্তু কেনো নিচ তা কি‌ জানিস? তুই রিহানকে ভালোবাসতে চেয়েছিস। এমনকি বিয়েও। কিন্তু আমাকে কেনো তারিয়ে দিয়েছিস? আচ্ছা একটা সত্যিই কথা বল নেহা, বুকে হাত রেখে বল…. তুই আমায় ভালোবাসিস না। শুধু বলে দে এই কথাটা। বিশ্বাস কর আমি আর কখনও তোর কাছে ভালোবাসা চাইবো না।

* নেহা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। কি বলবে সে? সত্যিই তো এটাই যে নেহা আয়ানকে ভালোবাসে। কিন্তু আয়ানের কিছু অতিতের জন্য তাকে সে চায় না। যাই হোক আয়ান আবারও বলতে লাগলো……

— হুম, নেহা এমন করে নিরব হয়ে থেকো। তোমার এই নিরবতার মানে আমি বুঝি….

— আয়ান তোমার হাতে কি হয়েছে? রক্ত বের হচ্ছে তো…..

— ডোন্ট টাচ মি….. রিহানকে গিয়ে এই সহানুভূতি দেখাও। কাজে লাগবে…..

— হু…..

— যতবার ভাবি তোর সাথে ভালো ব্যবহার করবো ততবার তুই আমার ইগোকে হাট করিস। আমার থেকে মুক্তি পেতে চাস তাই না। দিচ্ছি তোকে মুক্তি…….

* আয়ান কথা শেষ করতেই নেহার বাহু সজোরে চেপে ধরলো। নেহা সম্পূর্ণ বোকা হয়ে গেলো। শুধু বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে আয়ানের দিকে। আয়ান নেহার চুলের পিছনে হাত নিয়ে যায় এবং নেহার ঠোঁট জোড়া নিজের ঠোঁটের সাথে এক করে নেয়। নেহা যাস্ট চোখ বন্ধ করে আছে। কিছু সময় পরে আয়ান নেহাকে নিজের থেকে মুক্ত করে দিলো। নেহা একদম চুপ করে আছে। আয়ান বাঁকা হাসি দিয়ে বলল…….

— তুমি বেবি আমার থেকে যতই দূরে থাকতে চাও না কেনো আমি দিবো না দূরে থাকতে। ভালোবাসাতে না হোক ঘৃণাতেই সই।

✒️ আয়ান নেহাকে একা রেখে চলে গেলো। নেহাও কফি শপ থেকে বেরিয়ে এলো। আয়ান নিজের বাইক নিয়ে ছুটে চলল নাইট ক্লাবের দিকে। আসলে আয়ানের মতো একটা ছেলে এখানে যাবে এটাতো নতুন কিছু না। আয়ান বাইক চালাচ্ছে আর রাজ পিছনে বসে আছে। কিছু দূর যেতেই আচমকা আয়ান বাইকটা হার্ড ব্রেক করে। আয়ান বাইকটা থামিয়ে ছলছল চোখে একটা বিকট চিৎকার করে উঠল। আয়ান………………….

#চলবে………………..

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here