হৃদয়ে লুকোনো প্রেম পর্ব -০২

#হৃদয়ে_লুকোনো_প্রেম ♥️
#পার্ট_২♥️
#আরাদ্ধা_মেহেনাজ♥️

ইয়াশদের বাড়িতে বেশ জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। পরিবারের একমাত্র ছেলের বিয়ে বলে কথা। দেখার মত আয়োজন না করলে কী হয়? হলুদের অনুষ্ঠানে সকল কাজিনরা চলে আসলে ও অরিদ্ধি বিয়েতে যেতে নারাজ।শত চেষ্টা করেও মা বাবা রাজি করাতে পারেনি তাকে।
ইয়াশের বিয়েটা সে কখনোই মেনে নিতে পারবে না। মানুষ টাকে যে সে সত্যিই খুব ভালোবাসে। নিজের ভালোবাসার মানুষের বিয়ে অন্য কারো সাথে হবে তা সে সহ্য করতে পারবে না।

রিদ্ধি কী হয়েছে তোর?যাবি না কেন?
অরিদ্ধি মাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিলো।

মিসেস সিফা মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে জিজ্ঞেস করতে লাগলেন,,
কী হয়েছে মা? আম্মু কে বল।এই ভাবে কান্না করলে কী হবে?মাকে বলতে হবে তো নাকি?

আম্মু,ও আম্মু আমি ইয়াশ ভাইয়া কে ভীষণ ভালোবাসি। আমি পারবো না উনাকে ছাড়া থাকতে। মরেই যাবো।

মিসেস সিফা কী বলবেন কিছু বুঝতে পারছেন না।ইয়াশের বারন করে দেওয়ার জন্য কিছু বলতেও পারছেন না। আবার মেয়ের এমন কান্না কাটি ও সহ্য করতে পারছেন না তিনি।

আচ্ছা এই ব্যাপার। আমি তো আগেই আন্দাজ করতে পেরেছি যে তুই হয়তো মনে মনে ইয়াশ কে পছন্দ করিস।

অরিদ্ধি শুধু কান্না করতে লাগলো।কোনো কথাই শুনতে রাজি না সে।

আচ্ছা মা কান্না করিস না। তৈরি হয়ে নে তো।তোর খালামনি সেই কখন থেকে ফোন করে যাচ্ছে। না গেলে খারাপ দেখাবে বিষয় টা।

আমি যাবো না। আমার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে।

ও রকম একটু কষ্ট হয়।এতে কিছু হয় না।ইয়াশ একটা লেহাঙ্গা পাঠিয়েছে পড়ে তৈরি হয়ে নে।

তুমি আমার সাথে মজা নিচ্ছো?
কত বার বলছি আমি যাবো না। আমার ভালো লাগছে না।

এখন কিন্তু মাইর দিবো রিদ্ধি।

দাও এখনো দিচ্ছো না কেন?মেরে ফেলো না আমাকে।মরে যাই আমি। ভালো লাগে না আমার এত কষ্ট সহ্য করতে। তোমরা কেউ আমাকে বুঝো না।

মেয়ের এমন কথা শুনে রেগে গেলেন মিসেস সিফা।ঠাস করে এক চড় লাগিয়ে দিলেন অরিদ্ধির গালে।

তোকে আমি এই সব উল্টা পাল্টা কথা বলতে বলেছি? তোকে যা বলেছি তাই কর। আমার কথা না শুনলে তোর ভাগ্যে যে কী আছে তা তুই ভাবতেও পারছিস না।অরিদ্ধিকে বকাঝকা করে মিসেস সিফা রেগে বের হয়ে গেলেন।
রাগে দুঃখে রুমের দরজা বন্ধ করে লাইট অফ করে উপুড় হয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লো অরিদ্ধি।আজ যা হবার হবে তবু ও সে ইয়াশের হলুদে যাবে না। একদম না।
বেশ কিছুক্ষণ পরে মিসেস সিফা অরিদ্ধির রুমের সামনে এসে দেখেন দরজা বন্ধ। মিসেস সিফার বুকের ভেতর মোচড় দিয়ে উঠলো। মেয়েটা বড্ড যেদি।উল্টা পাল্টা কিছু করে ফেলে নাই তো। মিসেস সিফা দরজা ধাক্কা দিতে লাগলেন।
অরিদ্ধি ও জেদ করে আর দরজা খুলে না।সে চুপ করে শুয়েই রইলো।

এত বার দরজা ধাক্কা দেওয়ার পর ও অরিদ্ধির কোনো সাড়া শব্দ না পেয়ে ভয় পেয়ে যান মিসেস সিফা।
তিনি দ্রুত তার রুমে গিয়ে ড্রেসিং টেবিলের উপর থেকে মোবাইল টা হাতে নিয়ে অরিদ্ধির বাবাকে ফোন করলেন।

জয়নাল সাহেব তখনও বাজারে ছিলেন।ইয়াশদের বাড়িতে যাওয়ার সময় নিয়ে যাওয়ার জন্য কিছু কেনাকাটা করতে গিয়ে ছিলেন। মিসেস সিফার কাছ থেকে অরিদ্ধির কথা শুনে কেনাকাটা বাদ দিয়ে তিনি দ্রুত বাড়ি ফিরে আসেন।

জয়নাল সাহেব ও কিছুক্ষণ অরিদ্ধিকে ডাকা ডাকি করেন। কিন্তু অরিদ্ধির কোনো সাড়া পেলেন না।
মিসেস সিফা কিছু বুঝতে না পেরে ইয়াশ কে ফোন করে আরিদ্ধির কথা জানান।অরিদ্ধির কথা শুনতেই ইয়াশ বিয়ে বাড়ির সব কিছু ছেড়ে চলে আসে।

না জানি মেয়েটা কী করেছে?আর কেউ জানুক আর না জানুক ইয়াশ খুব ভালো করেই জানে অরিদ্ধি তাকে খুব ভালো বাসে। শুধু ভয়ে কখনো প্রকাশ করতে পারেনি।

ইয়াশ আসার পর ও অরিদ্ধি দরজা খোলে না। উপায় না পেয়ে দরজা ভাঙার সিদ্ধান্ত নেন তারা। জয়নাল সাহেব আর ইয়াশ মিলে দরজা ভেঙ্গে ভেতরে ঢুকে দেখন চার দিকে অন্ধকার। রুমের লাইট অফ। জয়নাল সাহেব রুমের লাইট অন করতেই বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে থাকা অরিদ্ধি কে দেখে বুক কেঁপে উঠে ইয়াশের।

ইয়াশ দ্রুত অরিদ্ধির কাছে চলে যায়।অরিদ্ধির কাঁধ ধরে সোজা করে শুইয়ে দেয়।অরিদ্ধি চোখ মেলে তাকায়।ইয়াশ অরিদ্ধির হাত ধরে টান মেরে শোয়া থেকে উঠিয়ে রেগে ঠাস করে এক চড় লাগিয়ে দিলো অরিদ্ধির গালে।
অরিদ্ধি বোকার মতো ছলছল চোখে ইয়াশের দিকে তাকিয়ে আছে।
ইয়াশ রেগে গিয়ে বলতে শুরু করে দিল,,

পাগল তুই রিদ্ধি?সবাই কে কেমন টেনশনে ফেলে দিয়েছিলি তোর কোনো ধারণা আছে?খালু খালামনি কতটা ভয় পেয়ে গিয়েছিল জানিস তুই?

অরিদ্ধি বসা থেকে উঠে মা বাবার সামনেই ইয়াশ কে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিলো।
অরিদ্ধির এহেন কান্ডে হতভম্ব হয়ে গেলো সবাই।অরিদ্ধি কান্না করতে করতে বলতে শুরু করল,
তুমি বিয়েটা করো না প্লিজ। আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবো না। মরেই যাবো। আমার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। আমি পারবো না তোমার সাথে অন্য কাউকে দেখতে।

ইয়াশ অরিদ্ধি কে নিজের কাছ থেকে ছাড়িয়ে ধমক দিয়ে বললো,
মাথা খারাপ হয়ে গেছে তোর? পাগল হয়ে গেছিস তুই?বোধ বুদ্ধি লোপ পেয়েছে? কোথায় কী বলতে হয় জানিস না তুই?

অরিদ্ধি মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে নীরবে চোখের জল ফেলতে লাগলো। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে জয়নাল সাহেব এবং মিসেস সিফা অরিদ্ধির রুম থেকে বের হয়ে চলে যান। মেয়েটা দিন দিন শুধু ছেলে মানুষি করছে।বড় হচ্ছে না ছোট হচ্ছে বোঝা দায়।
এই মেয়েকে নিয়ে কী করবেন গালে হাত রেখে ভাবছেন মিসেস সিফা।

ইয়াশ দুই হাত দিয়ে মাথা চেপে ধরে বিছানায় বসে পড়লো। মিসেস সিফার কাছ থেকে অরিদ্ধির কথা শুনে তার তো জান যায় যায় অবস্থা। মেয়েটা এত বাচ্চামি কেন করে?

রুম জুড়ে পিনপতন নীরবতা।অরিদ্ধি মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে শব্দ ছাড়া চোখের পানি ফেলছে।ফ্যানের বাতাসে চুল গুলো উড়ছে।অরিদ্ধির ডান হাত ধরে টান মেরে নিজের পাশে বসিয়ে দেয় ইয়াশ। চুপ করে কিছুক্ষণ অরিদ্ধির মুখের দিকে তাকিয়ে রইল। দেখেই বোঝা যাচ্ছে কেঁদেছে অনেক।যার জন্য চোখ গুলো ফুলে আছে।মুখটা ফ্যাকাসে।

ইয়াশ অরিদ্ধির মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললো,,
পুচঁকি একটা মেয়ের এত আবেগ আসে কোথা থেকে বল তো আমাকে?

অরিদ্ধি চোখের পানি মুছে নাক টেনে টেনে বললো,
আবেগ না। আমি সত্যি তোমাকে ভীষণ ভালোবাসি।প্লিজ তুমি বিয়েটা করো না।

ইয়াশ ফোঁস করে একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে বললো,
তুই বিয়ের কার্ড টা খুলে দেখেছিলি রিদ্ধি?

অরিদ্ধি মাথা নেড়ে উত্তর দিলো,
“না”

তুই সত্যি একটা বোকা। বিয়ের কার্ড টা খুলে দেখলে কি এত কান্না করতে হতো পাগলী।মনে মনে কথাটা বললেও মুখে কিছু বললো না ইয়াশ।
কান্না যখন করতেছে তখন আরো একটু কান্না কর।

ইয়াশের ফোনে কল আসলে সে রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে কেউ বলে উঠে,

কিরে কোথায় তুই?এই দিকে সব আত্নীয় স্বজন তোর জন্য অপেক্ষা করে বসে আছে। হলুদের অনুষ্ঠান করবি না নাকি?

তুই অপেক্ষা কর। আমি রিদ্ধি কে সাথে করে নিয়ে আসতেছি। মেয়েটা একটু বেশিই পাগলামি করতেছে।

ছোট তো।তাই হয়তো এমন করছে।সময় দে ঠিক হয়ে যাবে।

হুম। আচ্ছা তুই ঐ দিকে সামাল দে। আমি আধ ঘন্টার মধ্যে রিদ্ধিকে নিয়ে আসছি।
বলেই ইয়াশ কল কেটে দিয়ে মোবাইল পকেটে পুরে অরিদ্ধির দিকে তাকিয়ে শান্ত কন্ঠে বললো,
রিদ্ধি যা ফ্রেশ হয়ে আমি যে ড্রেসটা দিয়েছি তা পড়ে চট জলদি তৈরি হয়ে নে। তোকে ১০ মিনিট সময় দিলাম।

আমি যাবো না। আমার ভালো লাগছে না। তোমার বিয়ে তুমি যাও। আমার জন্য ভাবতে হবে না।

একটা চড়ে তোর হয়নি তাই না?আরো কয়েকটা লাগবে?

আমি যাবো না।

ঠাস করে দিবো দুটো।দিন দিন অসভ্য হচ্ছিস?যেতে বলেছি না?দ্রুত যা।তোর মতো এতো আজাইরা সময় নেই আমার হাতে।

অরিদ্ধি কিছু না বলে বিছানার উপর রাখা প্যাকেটটা হাতে নিয়ে ওয়াস রুমে চলে গেল।

চলবে,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here