হৃদয়ে লুকোনো প্রেম পর্ব -শেষ

#হৃদয়ে_লুকোনো_প্রেম ♥️
#অন্তিম_পাতা
#আরাদ্ধা_মেহেনাজ♥️

গুনে গুনে ৩৫ মিনিট পর অরিদ্ধি তৈরি হয়ে রুম থেকে বের হয়।কান্না করার জন্য চোখ ফুলে আছে।ইয়াশ অরিদ্ধির দিকে এক নজর তাকিয়ে মোবাইল এর দিকে তাকিয়ে বললো,
গাড়িতে গিয়ে বস।

আম্মু আব্বু কোথায়?

উনারা ও গাড়িতে আছেন।অরিদ্ধি কিছুক্ষণ ইয়াশের দিকে তাকিয়ে মিন মিনে গলায় জিজ্ঞেস করলো,
কেমন লাগছে আমাকে?

মোবাইল এর দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করেই ইয়াশ বলে উঠলো,
শেওড়া গাছের পেত্নির মতো।

ইয়াশের কথা শুনে অরিদ্ধি আর কিছু না বলে মাথা নিচু করে চলে যেতে নিলে পেছন থেকে ইয়াশ বলে উঠলো,
এই ভাবে কান্না কাটি করে চোখ গুলো না ফুলালে আরো বেশি সুন্দর লাগতো এই পুঁচকিকে।

অরিদ্ধি প্রতি উত্তরে কিছু না বলে চলে গেল। মুচকি হেসে ইয়াশ ও চললো তার পিছু পিছু।
.
.
ইয়াশদের বাড়িতে এসে মন টা আরো এক ধাপ খারাপ হয়ে গেল অরিদ্ধির। বেশ জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজন করা হয়েছে।চার দিকে বিভিন্ন রঙের লাইটিং দেখে মন ভালো হয়ে যাওয়ার বদলে খারাপ হয়ে গেল। এই আয়োজন যে তার জন্য না।অন্য কারো জন্য।
ভাবতেই বুকের ভেতর মোচড় দিয়ে উঠে।

ইয়াশের মায়ের রুমে গিয়ে বিছানার এক কোণে বসে থাকে অরিদ্ধি। বিয়ে বাড়ির হইচই এর শব্দ তাকে ছুঁতে পারেনা। তার মস্তিষ্ক জুড়ে বিচরণ করছে ইয়াশ। শুধুই ইয়াশ।

বেশ কিছুক্ষণ চুপ করে বসে আছে অরিদ্ধি। হঠাৎ ইয়াশের মায়ের রুমে আত্মীয় স্বজনরা হুড়মুড় করে ঢুকে নতুন বউ খুঁজতে লাগলো। দরজার কাছ থেকে উচ্চ শব্দে ইয়াশ বলে উঠলো,,
ঐ যে কোলে বালিশ নিয়ে বসে আছে গোলাপি রঙের লেহাঙ্গা পরে সেই হচ্ছে আমাদের কনে।

ইয়াশের কথা কর্ণ কুহরে যেতেই মৃদু কেঁপে উঠলো অরিদ্ধি। দ্রুত দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো দরজার কাছে দাঁড়িয়ে থাকা ইয়াশের দিকে।অরিদ্ধির যেনো বিশ্বাস হচ্ছে না ইয়াশের বলা কথা গুলো।

ইয়াশের ট্রেতে খাবার সাজিয়ে অরিদ্ধির জন্য নিয়ে আসেন। তার সবার উদ্দেশ্যে বলেন,
মেয়েটা বিয়ের চিন্তায় দুই দিন ধরে খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে।ওকে এখন একটু খাবার খাওয়ার জন্য একা ছাড়লে খুশি হতাম।
ইয়াশের মায়ের কথা শুনে এক এক করে সবাই চলে যেতে লাগলেন।

রিদ্ধি খাবার গুলো সব খেয়ে নে।

কীসের খাবার খাবো খালা মনি? আমার তো এখন ও ঘোর কাটছে না।

ঘোরের মধ্যে খা।দ্রুত খেয়ে শেষ কর।সিফা আমাকে সব বলেছে তোর কান্ডের কথা। এমন পাগলামি কেউ করে?

ইয়াশের মায়ের ডাক পড়লো।ইয়াশের বাবা ডাকছেন। তিনি রিদ্ধিকে খাবার গুলো শেষ করে নেওয়ার তাড়া দিয়ে চলে গেলেন।
ইয়াশ এত সময় মায়ের যাওয়ার অপেক্ষা করছিলো।
মা চলে যেতেই রুমে ঢুকে সে দরজা বন্ধ করে দিলো।

অরিদ্ধি ইয়াশের দিকে তাকিয়ে বললো,,
শুধু শুধু আমাকে এত কষ্ট দিলেন কেন?

আমি মোটেও তোকে কষ্ট দিই নি রিদ্ধি। তোর বোকামির জন্য তুই কষ্ট পেয়েছিস।

আমি কী করে জানবো যে আপনার হৃদয়ে আমার জন্য লুকোনো প্রেম আছে? আপনি কি আমাকে কিছু জানিয়েছেন?

সব কথা বলতে হয় কেন রে রিদ্ধি?প্রেমটা তো হৃদয়ে লুকিয়ে রাখা ছিল। খুঁজে নিতে পারিস নি?

আমি এত কঠিন কথা বুঝি না।

সে কেন বুঝবি? তুই তো শুধু ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কান্নাই করতে পারিস।

এবার কিন্তু খুব খারাপ হয়ে যাবে।

ইয়াশ অরিদ্ধির কাছে এগিয়ে গিয়ে অরিদ্ধির কানের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে ফিস ফিস করে বললো,,
তুই বড্ড বেশি বোকা রিদ্ধি। বিয়ের কার্ড টা দেখলে এত কষ্ট পেতি না।

অরিদ্ধি শান্ত চোখে ইয়াশের দিকে তাকালো।
এমন করে তাকাবি না প্লিজ।তোর এই শান্ত চাহনির প্রেমেই পড়ে ছিলাম আমি। না হলে তোর মতো একটা বোকা মেয়ের প্রেমে এই ইয়াশ কখনো পড়তোই না।

আমি বোকা হলে বিয়ে করছো কেন আমাকে?

এর কারণ শুনবি?

হুম অবশ্যই শুনবো।

ভালোবাসি তাই।
ইয়াশের ভালোবাসি কথাটা শোনার জন্য কতটা না আগ্রহী ছিল অরিদ্ধি।আজ তার অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে ভালোবাসি কথাটা বলেই দিলো।
অতি আবেগে আপ্লুত হয়ে খাবার গলায় আটকে ফেললো অরিদ্ধি।
ইয়াশ দ্রুত পানির গ্লাস এগিয়ে দিল।অরিদ্ধি পানি গিলে জোরে জোরে নিঃশ্বাস ছাড়লো।
তুমি আমাকে মেরে ফেলার সন্ধি আটছো তাই না?

ইয়াশ মুচকি হেসে বললো,,
সবে তো শুরু রিদ্ধি। তোর এই ইয়াশ ভাইয়া ভালোবাসার সাগরে তোকে ডুবিয়ে মারবে।

এতে যদি শান্তি মিলে তাহলে একবার নয় বারবার আমি সেই সাগরে ডুবে মরতে চাই।

জন্ম কিন্তু একবারই রিদ্ধি। বারবার না।খেয়ে নে। হলুদের অনুষ্ঠান শুরু করতে হবে।
বলেই ইয়াশ রুমের দরজা খুলে বেরিয়ে গেল।অরিদ্ধির কাছে এই সব স্বপ্ন মনে হচ্ছে। সিরিয়াসলি রিদ্ধি?তোর বিয়ে সত্যিই তোর ভালোবাসার মানুষটির সাথেই হচ্ছে।
তুই তো অনেক ভাগ্যবান রে। নিজেকেই নিজে কথা গুলো বলে লজ্জা পেলো অরিদ্ধি।
.
.
হলুদের পর্ব শেষ হতে হতে বেশ রাত হয়ে যায়।
এত মানুষের হাত থেকে হলুদ মাখতে মাখতে অরিদ্ধির অবস্থা নাজেহাল। ইয়াশ অরিদ্ধির কানে কানে বললো,,
কিরে রিদ্ধু বিয়ে করার শখ মিটে গেছে নাকি?

আমার আজ কেন জানি খুব ঘুম পাচ্ছে।

আমার রুম ফাঁকা আছে। গিয়ে ঘুমিয়ে পড় যা।

তাহলে তুমি কোথায় ঘুমাবে?

আমি ঘুমাবো না রিদ্ধি। আমার ঘুম পাচ্ছে না।

অরিদ্ধি আর কিছু না বলে চলে গেল।ইয়াশের রুমে এসে মনে মনে বলতে লাগলো,,
আগামীকাল রাত থেকেই এই রুম আমার হয়ে যাবে ইয়েএএ।
অরিদ্ধি ওয়াস রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে এসে ঘুমিয়ে পড়লো।ইয়াশ ছাদের এক কোনায় বসে আকাশের চাঁদ দেখতে ব্যস্ত।পূর্নিমার আলোয় আলোকিত চারপাশ। দুই এক জন ছাড়া সবাই নিচে ঘুমানোর জায়গা করতে ব্যস্ত।
কাঁধে কারো হাতের স্পর্শ পেয়ে পাশ ফিরে তাকায় ইয়াশ।ইমা ইয়াশের দিকে তাকিয়ে আছে।

কিছু বলবি ইমা?

নতুন জীবনের জন্য শুভকামনা।

থেংক ইউ।

অরিদ্ধি মেয়েটা এখন ও অনেক ছোট। বাচ্চা একটা মেয়ে।এত তাড়াতাড়ি বিয়ে টা না করলে কী হতো না ইয়াশ?

হয় তো হতো। কিন্তু বাবা মায়ের জন্য করতে হচ্ছে।

আচ্ছা বাদ দে। ঘুমিয়ে পড় যা। অনেক রাত হয়ে গেছে। আগামীকাল অনেক ধকল সামলাতে হবে। না ঘুমালে খারাপ লাগবে।

আচ্ছা যাচ্ছি। তুই ও ঘুমিয়ে পড়িস।

হুম। ছোট করে উত্তর দিল ইমা।

ইয়াশ চলে গেল।ইয়াশের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেললো ইমা। তার পর দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো আকাশের চাঁদের দিকে।মনে মনে বললো,,,
আমার হৃদয়ের এক কোণে লুকিয়ে রাখবো তোকে। আমার হৃদয়ের লুকোনো প্রেম হয়ে থেকে যাবি শেষ পর্যন্ত। ভালো থাকিস তোর রিদ্ধির সাথে। আমি না হয় আমার একতরফা ভালোবাসা নিয়েই বেঁচে থাকবো।

কলেজ লাইফের বেস্ট ফ্রেন্ড ইয়াশ আর ইমা। ভালো ফ্রেন্ডশিপ থেকে কখন যে একটু একটু ভালোবেসে ফেললো ইয়াশ কে। কিন্তু কখনো মুখ ফুটে বলা হয়নি যদি ফ্রেন্ডশিপটা ভেঙ্গে যায় সেই ভয়ে।
.
.
বেশ ধুম ধাম করে ইয়াশ আর অরিদ্ধির বিয়ের পর্ব চুকে গেল।
বাসর ঘরে বসে ডান হাতের নখ কামড়াচ্ছে অরিদ্ধি। অজানা অনুভূতির সৃষ্টি হয়েছে মনের ভেতর।ভয়ে বুক ধড়ফড় করছে।

প্রায় অনেকক্ষণ বসে থাকার পর ইয়াশ আসলো রুমে।
অরিদ্ধির কাছে এগিয়ে এসে বসলো।অরিদ্ধির ডান হাতটা হাতের মুঠোয় নিয়ে একটা খাম ধরিয়ে দিয়ে বললো এই গুলো আপনার মহোরানা বেগম।

ইয়াশের কথায় কেন জানি লজ্জা পেল অরিদ্ধি।ইয়াশ অরিদ্ধির কপালে ঠোঁট ছুঁয়ে দিয়ে বললো,,ওয়াস রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসো।

ইয়াসের মুখে তুমি ডাক শুনে হা করে তাকিয়ে রইল অরিদ্ধি। কী বললা?

ফ্রেশ হয়ে আসতে।

তুমি করে বলছো বাহ।

বউকে তো আর তুই করে বলতে পারি না।যাও যাও ফ্রেশ হয়ে এসে ঘুমিয়ে পড়ো।

অরিদ্ধি চুপ করে চলে গেল ফ্রেশ হতে। বিয়ের ভারি পোশাক বদলে হাফ সিল্ক এর একটা বেগুনি রঙের শাড়ি পড়ে নিলো।

ইয়াশ হাত ধরে টান দিয়ে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে বললো ঘুমিয়ে পড়ো বউ।

তুমি আমাকে ভালোবাসতেন কখনো বলোনি কেন?

তুমি কখনো জানতে চেয়ে ছিলে?

আমি তো বুঝতেই পারিনি কখনো যে তুমি করে আমাকে ভালোবাসতে।

এখন তো পারলে।

অরিদ্ধিকে বুকের মাঝে জড়িয়ে ধরে কপালে চুমু এঁকে দিয়ে বললো তুমি আমার হৃদয়ে লুকোনো প্রেম রিদ্ধু।ভালোবাসি তোমায়।

আমি ও ভীষণ ভালোবাসি।

,,,,,,সমাপ্ত,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here