হৃদয়সিন্ধুর_পাড়ে পর্ব শেষ

#হৃদয়সিন্ধুর_পাড়ে💕
অন্তিম পর্ব
#কায়ানাত_আফরিন

৪১
আড়মুড়িয়ে কারও কোমল স্পর্শে ঘুম ভেঙ্গে গেলো মৌনির। নিভ্রর বাহু জরিয়ে ঘুমিয়ে গিয়েছিলো সে। নিভ্রর সাথে চোখাচোখি হতেও নিভ্রর ঠোঁটের কোণে দেখলো এক স্মিত হাসি। সেই হাসি আরও প্রসার করে নিভ্র বলে উঠলো,

–”গুড মর্নিং মৌনিপরী !”

নিভ্রর মৌনিপরী নামটা প্রতিবারের মতই মৌনির হৃদস্পন্দর বন্ধ করে দেয়। এত ঘোরলাগানো কেন এই নামটা? নাকি নিভ্রর কন্ঠেই এই নামটা এত মাদকময় লাগে?তার উত্তর হাজার চেষ্টায়ও মৌনি খুঁজে পেলো না। নিভ্র বাহু আরও গভীরভাবে জরিয়ে বলে ওঠে ,

–”গুড মর্নিং ডাক্তার সাহেব ওরফে নিভ্র ভাই !”

নিভ্র শরীর কাপিয়ে হেসে উঠলো। মৌনি এখন আর আগের মতো নিভ্র ভাই ডাকেনা কিন্ত নিভ্রর কাছে মৌনির নিভ্রভাই ডাকফ এই সম্বোধনটি খুব প্রিয়। কেননা মৌনির নিভ্রভাই ডাকার মধ্যে যেই ভালোবাসা আর পাগলামিটা আছে তা অন্য কোনো ডাকে নেই। এমনকি ডাক্তারসাহেব ডাকটিতেও না।

আকাবাকা পথ দিয়ে বাস এগিয়ে চলছে কক্সবাজারের ট্যুরিস্ট এরিয়ার দিকে। বাসের সব যাত্রী এখন গভীর ঘুমের তলদেশে। আর ঘুমাবেই না কেন ; সারাটারাত মৌনি আর নিভ্রর বন্ধুবান্ধবরা যে বাসটাকে পুরো মাতিয়ে রেখেছিলো। আর সেই হৈ হুল্লোড়ের মধ্যেই নিভ্রর বাহু জরিয়ে দিব্যি ঘুমিয়েছিলো মৌনি। তাই এখন সকালের আলো ফুটতে না ফুটতেই মৌনির ঘুম ভেঙে যায়।
বাহিরে প্রচুর কুয়াশার দাপটে গাড়ির কাচগুলো কেমন যেন ভিজে স্যাতস্যাতে হয়ে আছে। সেও যেন এক নতুন সৌন্দর্য।এই কুয়াশায় বাসটি একেবারেই ধীরগতিতে চলছে। একটু অসাবধানতা মানেই বিশাল এক এক্সিডেন্ট। মৌনি নিভ্রকে প্রশ্ন করলো,

–”আর কতক্ষণ লাগবে আমাদের পৌঁছাতে?”

–”সর্বজোড় ১০ মিনিট!”

–”সত্যি ! জানেন আমি না খুব এক্সাইটেড হয়ে গিয়েছি। আপনি আগে বললে একটু মেন্টালি প্রিপেয়ার্ড হয়ে আসতাম কিন্ত আপনি আমারে কোথায় বললেন?বাস কাউন্টারের সামনে।”

–”হুট করে সবকিছু হওয়াতেও আলাদা এক আনন্দ আছে। যদি এমন হয় এখানে হুট করে আমাদের বিয়ে হয়ে গেলো?”
নিভ্রর চোখে-মুখে দুষ্টুমির হাসি। মৌনি ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললো,

–”তাহলে কি হবে ! হুট করে বিয়ে করে লুট করে ফেলবো আপনার মানিব্যাগের টাকা। তারপর সারাদিন ফ্রেন্ডসদের সাথে ইন্জয় করবো। ”

–”আর রাতে আমার সাথে।”
নিভ্রর কথা শুনে এলোপাথারি কিল ঘুষি মারতে থাকলো মৌনি। ক্ষিপ্ত গলায় বলে উঠলো,

–”দিন দিন অসভ্য হয়ে যাচ্ছেন আপনি !”

–”তোমার সমস্যা হলে অন্য কারও সাথে অসভ্যতামি করবো নাকি?”

–”আপনার মুখে সেফ্টিপিন আটকে দেবো আমি আবারও অন্য মেয়ের কথা বললে। আমি কিছু বললেই শুধু অন্য মেয়ে অন্য মেয়ে করে।”

এবার মুখ ফুলিয়ে অন্যপাশে মুখ ফিরিয়ে নেয় মৌনি। ওর রাগ দেখে নিভ্র হাসতে হাসতে কুপোকাত। একটা স্বাভাবিক ভঙ্গিমায় বাসের স্টাফদের দেয়া পাতলা চাদরটি নিজের আর মৌনির শরীর ঢেকে নিলো নিভ্র।মৌনি এখনও জানালার দিকে তাকিয়ে আছে। নিভ্র এবার বললো,

–”আমার দিকে তাকাও।”

মৌনি নিরন্তর।

–”আমার দিকে একবার তাকাও তো !”

মৌনি এভাবে নীরব থাকাতে নিভ্র মৌনির গলায় মুখ গুজে দিলো। নিভ্রর তৎক্ষণাৎ ভঙ্গিমায় মৌনির রাগ হাওয়ায় মিলিয়ে মনে বিরাজ করলো অস্বস্তি। নিভ্রর এলোমেলো নিঃশ্বাস বিক্ষিপ্তভাবে মৌনির চুল ভেদ করে গলায় আছড়ে পড়ছে। নিভ্র এবার বললো ,

–”তোমার কি মনে হয় আমি সত্যই এত সুইট একটা মৌনিপরীকে ছেড়ে অন্য মেয়ের কাছে যাবো? আমি তো তোমায় ক্ষেপানোর জন্য দুষ্টুমি করছিলাম তুমি তা বুঝতে পারো না।”

–”আপনার মুখে অন্য মেয়ের কথা শুনলে কষ্ট হয় তো।”

–”আচ্ছা সরি ! আর বলবো না। এখন আর রাগ করে থেকো না। নাহলে টমেটো ভেবে কুটুস করে কামড় দিয়ে ফেলবো।”

একথা বলেই নিভ্র নিজেদের গায়ে কম্বলটি আরও গভীরভাবে আগলে নেয়। মৌনি কেঁপে উঠলো কিছুটা। জানালার ফাঁক দিয়ে আবছা কুয়াশা বাসকে শীতল করে রেখেছে। এমতাবস্থায় নিভ্রর শরীরের উষ্ণতার সংস্পর্শে মৌনির যেন নিজের হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলার মতো অবস্থা। নিভ্র এত মাদকময় কেনো? সবকিছুতেই কেমন যেন এক নেশা ধরিয়ে দেয়!

৪২.
সাড়ে সাতটার দিকে বাস নেমে গেলো কক্সবাজারের ”কলাতলী” নামের জায়গাটিতে। এই স্থানটিকে কেন্দ্র করেই মূলত যত হোটেল রয়েছে। কিন্তু সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিলো কোনো হোটেলে উঠবে না। নিভ্র এক্ষেত্রেও একটা চমৎকার ঘটিয়ে দিলো। সবার উদ্দেশ্য একজন নেতার মতো করে বললো ,

–”আমি জানতাম এইটা নিয়ে একটা ঝামেলা সবার মধ্যে হবেই। তাই আমি আগেই সব ব্যবস্থা করে এসেছি।”

–”মানে?” [সবাই]

–”আমি ঢাকায় থাকতেই রিসোর্ট বুক করে রেখেছিলাম। কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভ রোড দিয়ে যেতে হবে। নাম ”মারমেইড বীচ রিসোর্ট” । যেই সৌন্দর্য ! একে একে সব অজ্ঞান হয়ে যাবে।”

রোদেলা খুশিতে গদগদ হয়ে বলে উঠলো,
–”সত্যি ভাইয়া ! You are totally stunning. আমরা এতক্ষণ ঝগড়া করছিলাম আর তুমি আগেই সব ব্যবস্থা করে ফেলেছো। আমি তো খুব excited!”

মৌনিও নিভ্রর দূরদর্শিতা দেখে অবাক না হয়ে পারলো না। সবার কথা শেষ হয়ার পর মৌনি বললো ,

–”কতক্ষণ লাগবে যেতে?”

–”এখান থেকে almost ১৪ কি.মি দূরে। জীপ দিয়ে যেতে কতক্ষণ লাগবে বলতে পারছি না।”

———————–
এখন ৭:৪৫। মেরিন ড্রাইভ রোড দিয়ে দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে জীপটি। গন্তব্য ”মারমেইড বীচ রিসোর্ট” । একপাশে পাহাড় আর একপাশে সমুদ্রের বিশাল জলরাশির অপার্থিব সৌন্দর্য রয়েছে এই জায়গাটিতে। উত্তেজনায় নিভ্রর হাত চেপে ধরলো মৌনি। কুয়াশার আবরণ সবাইকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে রেখেছে। মৌনি ঘোর লাগা কন্ঠে বললো,

–”সবকিছু এতটা সুন্দর লাগছে কেনো ডাক্তারসাহেব?একপাশে পাহাড় আর একপাশে বিস্তীর্ন সমুদ্ররাশি; মাঝখান দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি আমরা। কুয়াশার মৃদু ঘ্রাণ পাগল করে দিচ্ছে আমাকে।”

নিভ্র মিষ্টি হাসে। আসলে সৌন্দর্যটাই এমন। পাহাড় আর সমুদ্র যারা দুটোকেই ভালোবাসে তাদের জন্য বেস্ট জায়গা এটা। রাত্রি,রোদেলা,সোহান,তুর্য,নিশু,লিজা সবাই বিস্ময় চোখে প্রকৃতি উপভোগ করে চলছে। তুর্য নীরবতা কাটিয়ে এবার বললো,

–”একটা গান না হলে কি হয়?কি বলো সবাই?”

রোদেলা বললো,
”ঠিক বলেছো ভাইয়া। তুমি একটা খালি গলায় গান শুরু তো।”

–”শুধু আমি কেন?সবাই একসাথে গাবো।”

–”তবে ”স্রোতস্বিনী” গানটা গাই? জায়গাটার সাথে গানটা খাপে খাপ মিলে যাবে।”
নিশুর কথায় সম্মতি জানালো সবাই। নিভ্র একপলক তাকালো মৌনির দিকে। মৌনির চোখেমুখে আনন্দের ছাপ। নিভ্রর সাথে চোখাচোখি হতেই থমকে যায় মৌনি। নিভ্র মায়াবী চোখদুটো গহীন দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। সবাই এবার গান গাওয়া শুরু করলো,


পাহাড় চূড়ায় বেয়ে আকাশ তো ছুতে দেখিনি
স্রোতস্বিনীর হাওয়ায় পাড়িঁ দাও সমুদ্দুর
আচড়েঁ পড়েঁ সে ঢেউ আমার বুকে দুরন্ত বেগে
নাকি কাঁদিয়ে আমাকে সেই চোখের জলে ভেজো
তৃষ্ণার্ত হৃদয় এ শুধুই আমি মরিচিকার মত!………..

গানের পুরোটা সময় নভ্র তাকিয়ে ছিলো মৌনির দিকে। এক মিনিটের জন্যও পলক ফেললোনা সে। চারিদিকে প্রকৃতির মধুময় সুবাসের সাথে নিভ্রর প্রখর চাহিনী অন্যদুনিয়ায় নিয়ে যাচ্ছে মৌনিকে। নিজেকে বিলিয়ে ফেলতে ইচ্ছে করছে নিভ্রর মধ্যে। সবাই আবার সর তুলে বললো,

তবে তাই যদি হয় করি নাকোঁ ভয়
জানি আঁধার রাত ঘনিয়ে হবে সূর্যোদয়
আমি ভেবে নিলাম তুমি সেই লাল গোলাপ
যারে নিরন্তর পাহারা দেয় এক কাটার বাগান!

৪২.
সারাটারাত জার্নি করার কারনে সবাই বেশ ক্লান্ত আজ। সারাটা দুপুর পড়ে পড়ে বিশ্রাম নিয়েছে সবাই রিসোর্টে। নিভ্র যেইভাবে রিসোর্টটার কথা বলেছিলো ; তার থেকেও বহুগুণে সুন্দর এই রিসোর্টটা। স্নিগ্ধ ছায়াময় পরিবেশে কেমন যেন একটা গ্রামীণ গ্রামীণ ভাব। কোলাহলময় জীবন থেকে যদি কেউ দুদিনের জন্য সময় নিয়ে এখানে আসে তবে তার সকল টেনশন কেটে যাবে। নিরিবিলিতে সমুদ্রপাড়ে থাকার জন্য এরকম একটা জায়গাকে মৌনি আসলেই prefer করবে।

কিন্ত এখন মুখ ফুলিয়ে রিসোর্টের রুমে বসে আছে মৌনি। ওর খুব ইচ্ছে ছিলো সমুদ্রপাড়ে বসে সানসেট দেখবে l ঠিক যেমন আগে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা বীচে দেখেছিলো। কিন্ত বিকেলের দিকে মৌনিকে ফেলে সবাই উধাও হয়ে গিয়েছে। ওর সাথে আছে শুধু রোদেলা। দুঃখে কাদতে মন চাচ্ছে ওর।নিভ্র কিভাবে পারলো ওকে এভাবে ফেলে চলে যেতে।
সন্ধ্যে ঘনিয়ে রাত হয়ে এলো তবুও কারও আসার নামগন্ধ নেই। এদিকে রোদেলাও কিছু বলছে না। মৌনি স্থির করলো নিভ্রর আসলে একটা কথাও বলবে না । তখনই দরজা খুলে প্রবেশ করলো রাত্রি আর নিভ্রর সাঙ্গপাঙ্গরা। সবক’টা দাঁত কেলিয়ে হাসছে। মৌনি ক্ষীপ্ত সুরে বললো,

–”এখানে কি চাই?”

রাত্রি বললো,
–”তোকে। চল আমাদের সাথে।”

–”যাবো না। একলা একলা ঘুরাঘুরি করে এখন মনে পড়লো আমার কথা। আর তোমাদের সুদর্শন নিভ্রটা কই? তারে বলে দিবা জীবনেও যেন আমার চোখের সামনে না আসে। আসলেই তার খবর আছে।”

–”ভাইয়ার আর আসবেও না। আমি তো একটু আগে দেখলাম ভাইয়া একটা সুন্দরী মেয়ের সাথে কথা বলছে। অনেক হেসে হেসে কথা বলছিলো।”
রাত্রি বিদ্রুপ স্বরে বললেও মৌনি তা বুঝতে পারেনি। তাই চিল্লিয়ে বললো,

–”কি? অন্য মেয়ের সাথে কথা বলতেছে?”

–”শুধু কথা বলেনি। কথার মাঝে হাসিতে লুটপুট খাচ্ছিলো।” [সোহান]

মৌনি ক্ষেপে গিয়ে বলে,
–”নিয়ে চলেন তো ভাইয়া তার কাছে।”

–”ওকে।”

সোহানের পিছু পিছু মৌনি দ্রুত পায়ে এগিয়ে চললো নিভ্রর কাছে। বাকিরাও সবাই পিছু পিছু আসছে মিটমিটিয়ে হেসে। রিসোর্ট থেকে দু’তিন মিনিট হাটার পরই পা থামিয়ে দিলো মৌনি। সামনের দিকে স্তব্ধ হয়ে সে তাকিয়ে আছে। ওর চোখের সামনে রয়েছে বিশাল সমুদ্ররাশি। রাতের এই বিবর্ণ প্রহরে সবকিছু কেমন যেন অপরূপ লাগছে। নিভ্র একপাশে দাঁড়িয়ে আছে মুচকি হেসে। রাত্রি মৌনির কানের কাছে গিয়ে বললো,

–”তোর সাথে প্রাঙ্ক করছিলাম আমরা । ভাইয়া কোনো মেয়ের সাথে ছিলো না। বরংচ সে তো তোর জন্য ওয়েট করছিলো। এবার আমরা গেলাম। দুজনে মিলে সমুদ্রবিলাস কর।”

বলেই নীরবে প্রস্থান করে সবাই। মৌনি এবার বালুতে পা ফেলে এগিয়ে আসতে থাকলো নিভ্রর দিকে। নিভ্রর চুলগুলো বাতাসের দোলায় কপালে এলোমেলো হয়ে পড়ে আছে। সাদা টিশার্ট গায়ে জড়ানোতে মনে হচ্ছে এ যেন কোনো রাজ্যের এক ”শুভ্র রাজকুমার”

মৌনি মলিন কন্ঠে বলে উঠলো,
–”কথা বলবোনা আপনার সাথে। আমি ভেবেছিলাম আপনার সাথে সৈকতে বসে সানসেট দেখবো তা আর হলো কই? আপনি তো লাপাত্তা হয়ে গিয়েছিলেন।”

–”এইযে এখন সমুদ্রের নিশি সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবে আমার সাথে। তাইতো সন্ধ্যে বেলা ইচ্ছে করে তোমার সামনে আসিনি। কি মৌনিপরী? প্রস্তুত তো !”

নিভ্রর জড়ানো কন্ঠ। মৌনি লজ্জায় প্রতিউত্তর দিলো,

–”হুম।”

নিস্তব্ধ সময়টিকে মাতিয়ে রেখেছে সমুদ্রের উথাল-পাতাল গর্জন। দূর দূর মৌনি শুধু দেখতে পারছে আকাশ আর পানি। তারাগুলো আকাশে স্ফটিকের মতো জ্বলজ্বল করছে। নিভ্র আর মৌনি বালু ওপর শুয়ে আছে পাশাপাশি। শরীরে দুজনের বালু লেগে গেলেও এই নিয়ে যেনো কারও কোনো দ্বিধা নেই। নিভ্র এবার খেয়াল করলো মৌনিকে। মৌনির চোখে-মুখে বিস্ময়। নিভ্র এবার বললো,

–”কেমন লাগছে ম্যাডাম?”

–”বলে বোঝাতে পারবো না। সেই রাতের কথা মনে আছে যখন আমরা ট্রাকে চড়ে কুমিল্লায় গিয়েছিলাম?সেটার অন্য এক অভিজ্ঞতা ছিলো আর এটা তার থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন এক অভিজ্ঞতা। আপনি এত ভালো কেন?”

–”এই না সকালে বললে আমি খুব অসভ্য? হুট করে ভালো হলাম কি-করে !”

–”এইযে আমার এত সুন্দর একটা সময় কাটাচ্ছেন। আপনার সাথে থাকলে সবকিছু নতুনভাবে উপভোগ করা শুরু করি আমি।”

নিভ্রর ঠোঁটে কিঞ্চিত হাসি। অপার নয়নে তাকিয়ে আছে সে নিশি আকাশের দিকে।মৌনি আচমকা নিভ্রর থুতনিতে নিজের ঠোঁট স্পর্শ করে বুকে মাথা এলিয়ে দিলো। তাই নিভ্র দুষ্টু হেসে বলে,

–”এটা কি হলো মৌনিপরী?”

–”কি হলো জানেন না !” [বুকে মুখ লুকিয়ে]

–”জানি তো। আমায় পাগল করার জন্য এসব করছো তুমি। বাই দ্য ওয়ে গিফ্টটা কিন্ত অস্থির ছিলো। জাস্ট থুতনির দুই ইঞ্চি ওপরে তোমার ঠোঁটের…………”

–”আহা ! থামেন তো!”

–”আচ্ছা থামলাম।”
বলেই মুখ টিপে হাসলো নিভ্র। সময়টা যেন খুবই সুন্দর কাটছে দুজনের। তখন নিভ্র আবার বললো,

–”পা ভিজাবে সমুদ্রে?”

মৌনি আনমনে কিছু একটা ভাবতে থাকে। তারপর দুষ্টু কন্ঠে বললো,

–”প্রস্তাবটা লোভনীয়! মিস করা যাবে না।”

–”প্রস্তাব আবার লোভনীয় হয় বুঝি?”

–”হয় তো? আপনি যেমন লোভনীয় আপনার প্রস্তাবটাও তেমন লোভনীয়।”

–”তো চলো ! তোমার লোভনীয় প্রস্তাব অনুযায়ী কাজ করি।”

দুজনে এবার উঠে চলে গেলো সৈকতের তীর ঘেষে। আচমকা পানির স্পর্শ পেয়ে শিউরে উঠলো মৌনি। ঠান্ডা জলের প্রবাহে অনেক সুখ সুখ অনুভব হচ্ছে ওর। উত্তজনায় খামচে ধরলো মৌনি নিভ্রর হাত। নিভ্র মিহি গলায় বললো,

–”অনুভূতিটা কেমন?”

–”ভাষা প্রকাশ করে যাবে না।”

মৌনি হারিয়ে গিয়েছে উচ্ছাসে। নিভ্র বুঝতে পারলো এটাই ওর শ্রেষ্ঠ সময়। মৌনির দিকে মুখ করে হাটুগেড়ে বসে পড়লো নিভ্র। ঠোঁটযুগল হালকা ভিজিয়ে বললো,

–”মৌনি?”

নিভ্রর দিকে তাকাতেই মৌনি অবাক হয়ে যায়। নিভ্র এবার পকেট থেকে একটা রিং বের করে মৌনির উদ্দেশ্যে এগিয়ে দিলো। সবকিছু কেমন যেন লাগছে নিস্তব্ধ। টেউয়ের শব্দ ছাড়া আর কিছুই শোনা যাচ্ছনা। এমতাবস্থায় নিভ্র বলে ওঠে……….

–”মৌনি !ভালোবাসি তোমাকে। কিন্ত অন্য সবার মত তা ব্যক্ত করতে পারিনা। পারিনা সবার মতো তা প্রকাশ করতে। তবুও আমি তোমাতে মাতোয়ারা হয়ে থাকতে চাই। তোমার বাচ্চামিগুলো , আদর করে নিভ্র ভাই ডাকগুলো সবগুলো স্থায়ী রাখতে চাই। তাই আজ এই সিন্ধুর পাড়ে তোমার কাছে নিঃসংকোচভাবে বলছি, বিয়ে করবে আমায়?”

মৌনির চোখজোড়া ছলছল করে উঠলো। এ যে সুখের কান্না। কেননা নিভ্র চাইছে ওদের এই প্রেমের সম্পর্ককে নতুন একটি পরিচয় দিতে। খুশি গলায় তাই মৌনি বললো.

–”হ্যাঁ।”

ঠোঁটে স্মিত হাসি ফুটিয়ে তুললো নিভ্র। ওর অনামিকা আঙুলে আংটি পরিয়ে দিতেই খুশিতে নিভ্রকে জরিয়ে ধরলো মৌনি। নিভ্র যে কক্সবাজারে এভাবে ওকে সারপ্রাইজ দেবে মৌনি তা কল্পনাও করতে পারেনি।

নিভ্রর পায়ের ওপর নিজের পায়ের ভর রেখে মৌনি মিশে আছে তার বুকের সাথে। সমুদ্রের উদাসীন ঢেউগুলো দুজনের হাটু বরাবর আছড়ে পড়ছে। তার চোখে মুখে মৌনি দেখতে পারছে একরাশ মুগ্ধতার হাসি। আচ্ছা……….নিভ্র এতো সুন্দর কেন? সাহিত্যিকরা তো বলে সৌন্দর্য নাকি শুধুমাত্র মেয়েদের জন্য। তাহলে সে কেন এক পাহাড় সৌন্দর্য নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে?

—-কি ভাবছো?

নিভ্রর কথা ধ্যান ভাঙ্গে মৌনির। তার বুকে নিজের মুখ ডুবিয়ে বলে উঠে…..

—-আপনার সৌন্দর্য নিয়ে গবেষণা করছি ডাক্তারসাহেব।আপনার এই সুদর্শন চেহারা দেখে মাঝে মাঝে আমার প্রচুর হিংসে হয়।

নিভ্র সশব্দে হেসে ওঠে। তারপর মৌনির কানে নেশাতুর কন্ঠে বলে ওঠে……..

—-আমাদের বিয়ের পর তোমার সাথে একেবারে মিশে আমার সৌন্দর্য তোমাতে বিলিয়ে দেবো নে। তখন আর হিংসে করতে হবে না। বুঝেছো মৌনিপরী?”

তার ফিসফিসানো কন্ঠ শুনে লজ্জায় গুটিয়ে নেয় মৌনি। রাতের আকাশে চলছে শততারার খেলা। দক্ষিণা হাওয়ার সাথে সমুদ্রের ঢেউয়ের স্পর্শে ক্রমাগত মাতোয়ারা হয়ে পড়ছে দুজনে।
নিভ্র ঘোরলাগা কন্ঠে মৌনির কানে ফিসফিয়ে বলে উঠলো,

–”তোমার শুভাকাঙ্খী হিসেবে থাকবো সবসময়। থাকবো তোমার হৃদয়ের সিন্ধু পাড় হিসেবে।”❤

—————–সমাপ্ত——————–

বি:দ্র: যারা এতদিন আগ্রহ নিয়ে গল্পটি পড়ছিলেন তাদের জন্য অনেক অনেক ভালোবাসা থাকলো। আমি চেষ্টা করছি অনেক ইনফরমেশন কালেক্ট করে গল্পটা ফুটিয়ে তুলতে। জানিনা কতটুকু পেরেছি। যদি ভালো লেগে থাকে অবশ্যই জানাবেন আর খারাপ লেগে থাকলেও জানাবেন। তবেই আমি লেখালেির হাতটি একটু আপগ্রেড করতে পারবো। আল্লাহ হাফেজ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here