হৃদয়ের শুভ্রতা পর্ব ১৫+১৬

পর্ব ১৫+১৬
#হৃদয়ের_শুভ্রতা🌸🌸

পর্ব-১৫

#ফাবিহা_নওশীন

🌿🌿
রোজ ভার্সিটির ক্যাম্পাসে গাল ফুলিয়ে বসে আছে।অরিত্র ওর পাশে এসে বসলো।ওর মুখের মানচিত্র দেখে কাহিনী আন্দাজ করতে পেরেছে।বেচারি চিপস খেতে না পারায় ফাটা প্যাকেটের মতো চুপসে আছে।

—-কি হলো?মুখ এমন পেচার মতো করে রেখেছো কেন?

রোজ অরিত্রের কথা শুনে বিরবির করে বলছে,
—-তুই পেচা,,ব্যাটা উল্লুক,কালো হাতির ডিম আমাকে চিপস খেতে দিলোনা।বাড়িতে পাপা দেয়না আর এখানে ইনি,,

অরিত্র অন্য দিকে তাকিয়ে হেসে মুখ আবার গম্ভীর করে বললো,
—–বিরবির করে কি বলছো?

রোজ টেডি স্মাইল দিয়ে বললো,
—–কিছুই না।আমি তো ক্লাসের পড়া আওড়াচ্ছিলাম।আমি কত্ত ভালো স্টুডেন্ট।সারাক্ষণ শুধু পড়া আর পড়া।

অরিত্র বললো,
—–হুম পড়া আর চিপস খাওয়া।

—–এরে চিপসের কথা আবার মনে করিয়ে দিলো।আহা কি সুন্দর চিপসগুলো আমাকে ডাকছে।(অসহায় ফেস করে মনে মনে)

অরিত্র রোজের সামনে একটা চিপসের প্যাকেট এগিয়ে দিলো।রোজ চিপসের প্যাকেট দেখে ভাবলো অরিত্র ওর জন্য এনেছে।রোজ হাত বাড়াতেই অরিত্র ছু মেরে সরিয়ে নিয়ে বললো,
—–কি ব্যাপার আমার চিপস তুমি কেন ধরছো?তোমার তো নিষেধ খাওয়া।

রোজ অরিত্রের কথা শুনে কাদো কাদো ফেস করে বললো,
—–এটা কার জন্য?

অরিত্র বললো ওয়েট।তারপর প্যাকেট খোলে একটা চিপস মুখে দিয়ে বললো,
—–আমার জন্য।

—–আপনি আমাকে দেখিয়ে দেখিয়ে চিপস খাচ্ছেন?ভালো হবেনা।আল্লাহ সইবেনা এই মাসুম বাচ্চার উপর এতবড় অবিচার।আপনার পেট খারাপ হবে।কম করে ১০০বার ওয়াশরুম টু বেডরুম করবেন।আপনি অনেক খারাপ।

অরিত্র ফিক করে হেসে দিলো।তারপর রোজের দিকে চিপসের প্যাকেট এগিয়ে দিয়ে বললো,
—–তোমার জন্য।

রোজ চিপসের প্যাকেট পেয়ে অরিত্রের দিকে চেয়ে মোহনীয় হাসি দিলো।অরিত্র মনে মনে বলছে,
—–এভাবে হেসোনা বুকে বড় লাগে।

—–আপনি কত্ত ভালো।হাও সুইট।

—–কয়েক সেকেন্ড আগেই তো বললে আমি খারাপ।

রোজ জোরপূর্বক হেসে বললো,
—-ওইটা তো এমনি বলেছি।

—–আমার গোলাপ ফুলের চিপস এতো পছন্দ যে মিনিটের মধ্যে ভালো মানুষ খারাপ হয়ে যাবে খারাপ মানুষ ভালো হয়ে যাবে।

—–মাই নেম ইজ রোজ।নট গোলাপ ফুল।

—–একি তো রোজ অর্থ গোলাপ ফুল।

—–হুম বাট ফুল তোমার শাশুড়ীর নাম।হিহি।

অরিত্র অবাক হয়ে বললো,
—–তোমার মাম্মার নাম ফুল?

—–হুম।মাম্মার নাম তানহা তবে পাপা ভালোবেসে ফুল ডাকে।তাই তো আমার নাম রোজ রেখেছে।

—–তুমি তোমার পাপাকে অনেক ভয় পাও?সে কি কঠোর মানুষ?তোমাকে অনেক শাসনে রাখে?

—–উহু।পাপা আমার বেস্ট ফ্রেন্ড।আমি তার কলিজার টুকরো।তার প্রিন্সেস।পাপার সেকেন্ড লাভ।

—–সেকেন্ড লাভ?

—-হুম ফার্স্ট লাভ মাম্মা।পাপা মাম্মাকে অনেক ভালোবাসে।ভাইয়া আর আমার চেয়েও বেশি।তাদের লাভ স্টোরি জাস্ট ওয়াও।পুরাই ইউনিক।
তবে সেটা অন্য দিন বলবো।কারণ এখন বলতে গেলে একটা ক্লাসও করা হবেনা।সারাদিন পাড় হয়ে যাবে।
(এক নাগাড়ে বলে জোরে শ্বাস নিলো।)

অরিত্র হেসে দিলো।
—–ওরে আমার চঞ্চলপাখি।সারাজীবন এমনি থেকো।আমি অল্প কথা বলি।বাচাল মানুষ আমার পছন্দ না।কিন্তু তোমার কথা শুনলে আমার শুনতেই ইচ্ছে করে।কান পেতে রাখি।ইচ্ছে হয় কথা যেনো না থামে।তোমার কথায় আমি বিরক্তি না মুগ্ধতা খোজে পাই।অপার মুগ্ধতা।

রোজ অরিত্রের কথায় কিছুটা লজ্জা পেয়ে গেলো।অরিত্র রোজের হাত ধরে হাতে ঠোঁট ছোয়ালো।রোজ আচমকা আক্রমণে কেপে উঠে।এই প্রথম কোনো ছেলের সংস্পর্শে এসেছে।সারা শরীর বেয়ে শীতল শিহরণ বয়ে গেলো।রোজ চোখ বড়বড় করে আসেপাশে তাকালো।চারপাশে অনেক মানুষ।

অরিত্র মুচকি হেসে বললো,
—–ডোন্ট ওরি,,সবাই সবার কাজে ব্যস্ত।কারো দিকে কারো তাকানোর সময় নেই।

রোজ লজ্জা মিশ্রত হাসি দিলো।চিপস খাওয়ার চেষ্টা করছে কিন্তু পারছেনা।

“এভাবেই হাসতে থাকো সারাজীবন
চাঁদমুখে কখনো যেনো লাগেনা গ্রহণ।”

হৃদ শাওয়ার নিচ্ছে আর শুভ্রার দেওয়া ভিডিও ইমাজিন করছে।কয়েকদিন মাত্র টাইম।এর মধ্যে নিজেকে প্রিপেয়ার্ড করতে হবে।কিন্তু কিছু একটা ব্রেইন থেকে মিসিং হয়ে গেছে।তাড়াতাড়ি শাওয়ার শেষ করে তোয়ালে দিয়ে শরীর মুছে গলায় তোয়ালে জড়িয়ে ফোন হাতে নিলো।
শরীর আর চুল বেয়ে পানি পড়ছে সেদিকে খেয়াল নেই।ভিডিও দেখে মিসিং স্টেপ ব্রেইনে সেট করে নিলো।তারপর পরের ভিডিও দেখছে।ফাইনার স্টেপ।যেখানে শুভ্রা আর ইশান র‍্যাম শোতে হাটছে।সেখানে ইশান শুভ্রার কোমড়ে,কখনো কাধে হাত রাখছে।শুভ্রাও ইশানের কাধে হাত দিয়ে বিভিন্ন এংগেলে দাড়াচ্ছে।

হৃদের বিরক্ত লাগছে এসব দেখতে।হৃস ফোন রেখে দিয়ে বলছে,
—-নিজের হবু বউকে কেউ বারবার ছুয়ে দিচ্ছে আর সে ভিডিও দেখে আমি শিখবো ইম্পসিবল।শুভ্রাকে বলবো আমাকে যেনো প্র‍্যাকটিক্যালি শিখায়।

যেমন ভাবা তেমন কাজ।শুভ্রার রুমে গিয়ে দেখে শুভ্রা চোখ বন্ধ করে কানে হেডফোন লাগিয়ে গান শুনছে।হৃদ বিরক্ত হয়ে বিরবির করে বললো,
—-এই মেয়ের একটাই কাজ গান শোনা।

—–শুভ্রা!

শুভ্রার কানে হেডফোন থাকার কারনে কিছুই শুনতে পাচ্ছেনা।হৃদ শুভ্রার কান থেকে হেডফোন খোলে নিলো।শুভ্রা চমকে চোখ খোলে আর হৃদকে দেখে আরো চমকে যায়।
—–তুমি??

—–কাকে আশা করেছিলি তুই?
যাইহোক গুরুত্বপূর্ণ কথা শোন আমি ভিডিও দেখে শিখতে পারছিনা।

শুভ্রা ভ্রু কুচকে বললো,
—–এই গুরুত্বপূর্ণ কথা বলার জন্য এই হালে এসেছো?

হৃদ অবাক হয়ে বললো,
—–কোন হালে?

—–লুক এট ইউরসেল্ফ।

হৃদ নিজের দিকে তাকিয়ে দুচোখ বন্ধ করে বললো,
—–শিট!মাই গড!!
তারপর ভেজা চুল ঝাকিয়ে বললো,
সো হোয়াট?তুমি তো আমার বউই।
আমি ফ্রেশ হয়ে নিচ্ছি ১০মিনিট লাগবে।তুমি আমার রুমে চলে এসো।

হৃদ আয়নার নিজের চুল সেট করছে।শুভ্রা হৃদের বেডে বসে বসে আড়চোখে হৃদকে স্ক্যান করছে।হৃদের হয়ে যেতেই শুভ্রা চোখ সামনে রেখে চুপ করে রইলো।হৃদ বিছানায় বসে কুশন কোলে নিয়ে শুভ্রার কানে ফিসফিস করে বললো,
—–স্ক্যান করবে তো সামনাসামনি করো,আড়চোখে কেন?
আর তোমার রুমেই স্ক্যান করতে পারতে,সুবিধা হতো।পুরো বডি দৃশ্যমান ছিলো।

শুভ্রা হৃদের পিঠে মেরে বললো,
—-একদম অসভ্যের মতো কথা বলবা না।

—–আর তুমি লুচুর মতো আই মিন লুচির মতো আমাকে স্ক্যান করবা তাতে কিছুনা।

—–তুমি আমাকে লুচু বললা?স্ক্যান করলে করেছি তাতে কি?হবু বরকে করেছি বাইরের কাউকে তো নয়।

—–তাই নাকি?

হৃদ বিছানায় শুয়ে পড়ে শুভ্রার হাত ধরে টান দিয়ে বুকে ফেলে দেয়।তারপর দুহাতে শুভ্রাকে ঝাপটে ধরে যাতে উঠে যেতে না পারে।
—–হৃদ কি করছো?তুমি কি আমাকে এ কাজের জন্য ডেকেছো?

—–উহু।তবে এটা ফ্রি।ফ্রিতে তোকে রোমান্স শিখাচ্ছি।

—–বাড়ির কেউ দেখলে রোমান্স শিখানো হাড়ে হাড়ে টের পাবে।

—-দেখুক,দেখলে বড়োজোর আমাদের বিয়ে দিয়ে দিবে।তাতে আরো ভালো হবে।রোমান্সের লাইসেন্স পেয়ে যাবো।

শুভ্রা কাদো কাদো হয়ে বললো,
—–প্লিজ,ছাড়ো।

—–এমন ছটফট করিস কেন?থাকনা একটু চুপ করে।হৃদয় নামক ব্যক্তির হৃদয়ের আওয়াজ শোন।নিশ্বাসের আওয়াজ শোন কান পেতে।

শুভ্রা হৃদের বুকে কান পেতে হৃদের হৃদপিণ্ডের শব্দ,নিশ্বাসের শব্দ শুনছে।কেমন অদ্ভুৎ তালের সৃষ্টি করছে।শুভ্রা তালের সাথে তাল মিলিয়ে স্বপ্ন বুনছে।রঙ্গিন স্বপ্ন যেখানে হাজারো প্রজাপতি ডানা মেলে উড়ছে।

দেখতে দেখতে শো এর দিন চলে এলো।হৃদ জীবনের প্রথম এতো নার্ভাস ফিল করছে।জীবনে যা কখনো করেনি,করার কথা ভাবেনি আজ শুভ্রার জন্য তাই করতে হচ্ছে।হৃদের টেনশনের একমাত্র কারণ যদি কোনো গড়বড় হয়ে যায় আর বায়াররা কন্ট্রাক ক্যান্সেল করে দেয়?তবে মাম্মার কাছে মুখ দেখাতে পারবেনা।এত ভরসা করে ওর উপর দায়িত্ব দিয়েছে।

হৃদ রেডি হয়ে ট্রায়াল কেবিনেটের সামনে দাড়িয়ে আছে শুভ্রার দেখা নেই।কি এতো রেডি হচ্ছে খোদাই জানে।
হৃদ বারবার শুভ্রাকে দেখার জন্য দরজার দিকে স্থির দৃষ্টিতে চেয়ে আছে।
অবশেষে অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে শুভ্রা বেড়িয়ে এলো।লং ডিজাইনিং গ্রাউন যেটা মাটিতে বিছিয়ে আছে।চুলে ছোট ছোট আর্টিফিশিয়াল ফ্লাওয়ার,ঠোঁটে গাঢ় লাল লিপস্টিক,চোখে মেকাপের সাথে গাঢ় কাজল।কানে স্টোনের এয়ারিং,গলায় ডায়মন্ডের একটা নেকলেস,দুহাতে প্লাটিনাম আর স্টোনের ব্রেসলেট।হৃদ শুভ্রাকে দেখে কয়েক সেকেন্ডের জন্য স্তব্ধ হয়ে গেলো।তারপর অপলক দৃষ্টিতে ওর দিকে চেয়ে আছে।পলক ফেলতেও ভুলে গেছে।পলক ফেললে এই সুন্দর মুহূর্তের কিছু অংশ হারিয়ে যাবে।

হৃদ আস্তে আস্তে হেটে শুভ্রার সামনে গিয়ে দাড়ালো।শুভ্রা হৃদের মুগ্ধ করা দৃষ্টি দেখে লজ্জায় লাল হয়ে যাচ্ছে।দৃষ্টি নত করে হাতের সাথে হাত ঘষছে।

হৃদ বললো,
—–এখন তো আমার শো রেখে কাজি অফিসে যেতে ইচ্ছে করছে।

হৃদের এমন কথা শুনে শুভ্রা চোখ তুলে হৃদের দিকে চেয়ে হেসে ফেললো।

—–হাসবি না,,আমি শো নিয়ে এমনিতেই নার্ভাস আর এখন তোকে দেখে আরো নার্ভাস লাগছে।কি করি বলতো?এসির মধ্যেও দরদর করে ঘামছি।

শুভ্রা হৃদের কাধে হাত রেখে বললো,
—–রিলেক্স,এভ্রিথিং উইল বি ওকে।আমি আছি।ভরসা রাখো।

শুভ্রা নিজের হাত হৃদের দিকে বাড়িয়ে দিলো।
—–আমার হাত ধরো।এ চারদিন অনেক পরিশ্রম করেছে আর এর রেজাল্ট পাবেই।ডোন্ট বি নার্ভাস।
হৃদ শক্ত করে শুভ্রার হাত ধরলো।

হৃদ আর শুভ্রার বাসার সবাই এসেছে পাশাপাশি ওদের বন্ধুরা।রোজ অরিত্রকে ইনভাইট করেনি।শো-তে এসে আপসোস হচ্ছে।অরিত্রকে জানানো উচিত ছিলো।শুভ্রা আর হৃদ ওদের বাবা-মায়ের কাছ থেকে দোয়া নিয়ে এলো।পাশাপাশি বাকি কাপলদের বেস্ট লাক উইশ করছে।

অবশেষে একে একে সবাই র‍্যাম্পে ওয়াক করেছে।সবাই মিলে নিজেদের তৈরি অত্যাধুনিক পোশাক প্রেজেন্ট করেছে।সবার পারফর্মেন্স পারফেক্ট হয়েছে।
তবে “হৃদ আর শুভ্রা”কে বেস্ট পারফর্মার হিসেবে ডিক্লেয়ার করা হয়েছে।
বায়াররা পোশাক নিয়ে যথেষ্ট সন্তুষ্ট।তারা সন্তুষ্টি নিয়ে কন্ট্রাক্ট সাইন করেছে।

হৃদ ১০মিনিট যাবত শুভ্রাকে জড়িয়ে ধরে রেখেছে।
” শুভ্রা থ্যাঙ্কিউ সো মাচ”

——ওয়েলকাম মি.
তোমার ধইন্যাপাতা দেওয়া শেষ হয়েছে?

হৃদ বাকা হেসে বললো,
—–হুম তবে কিচমিচ দেওয়া বাকি আছে।

শুভ্রা কথা বলার জন্য মুখ খোলার আগেই হৃদ শুভ্রার গালে আলতো করে ঠোঁট ছোয়ালো।
তারপর আবারো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।
কয়দিনের জন্য ধরছে কে জানে!!!🔥🔥

পর্ব-১৬

#ফাবিহা_নওশীন

🍀🍀
কোম্পানি থেকে পার্টি থ্রো করা হয়েছে।সবাই ফ্রেশ হয়ে নিয়েছে।এই পার্টির জন্য হৃদ শুভ্রাকে ছেড়েছে নয়তো শুভ্রার মনে হচ্ছিলো হৃদ ওকে আজীবনের জন্য ধরে রাখতো।

🎶🎶
Tere elava koi bhi khawahish
nahi hai baki dil mein
Kadam uthaun jaha bhi jaun
Tujhi se jaun milne..

হালকা আলোয় গানের তালে তালে শুভ্রা হৃদ ড্রান্স করছে।সবার চোখ ওদের উপরে।শুভ্রার মাম্মা পাপা,হৃদের মাম্মা পাপা ওদের একসাথে দেখে অনেক খুশি।
শুভ্রা হৃদের দুকাধে হাত রেখেছে,হৃদ শুভ্রার কোমড়ে হাত রেখে শুভ্রার দিকে অপলক চেয়ে আছে।শুভ্রা চোখ নামিয়ে রেখেছে।আরচোখে কিছুক্ষণ পর পর হৃদকে দেখছে।
🎶🎶
Tere liye mera safar
Tere bine mein jaun kidhar.
Tumse zayda mein na janu
Tumse khudko mein pachano
Tumko bas mein apna manu
Mahiya….
Vaaste…❤❤❤

হৃদকে একদম মাখনের মতো কিউট লাগছে শুভ্রার কাছে।শুভ্রা মনে মনে হাসছে।মাখন নরম হয় কিন্তু কিউট!!হাও ফানি শুভ্রা।
শুভ্রা আবারো হৃদের দিকে তাকালো।গানের লাইনগুলো অনুভব করার চেষ্টায় রত দুজন।

রোজ একা একা বোর হচ্ছে।ওর আসেপাশে কতশত কিউট ছেলেরা ঘুরছে কেউ কেউ ড্রান্স করতে চাইছে।ওর পাপা মাম্মা বারবার বলছে চাইলেই ড্রান্স করতে পারে দে ডোন্ট মাইন্ড।অন্য সময় হলে রোজ ড্রান্স করতো কিন্তু এখন ইচ্ছে করে না।অরিত্র ছাড়া কাউকে চায়না,না কারো ছোয়া চায়।অরিত্রকে মিস করছে কিন্তু পাপার পাশে বসা তাই ফোন করতে পারছেনা।

শুভ্রা ফিসফিস করে হৃদকে বললো,
—–চোখ বন্ধ করো।

হৃদ ফিসফিস করে বললো,
—–কেনো?

—–আহা বন্ধ করোনা।

—–ওকে।

হৃদ চোখ বন্ধ করতেই শুভ্রা হৃদের গালে চুমু খেলো।হৃদ চোখ বন্ধ করেই মুচকি হাসলো।শুভ্রা হৃদ চোখ খোলার আগেই হৃদের বুকে মুখ লুকালো।হৃদের বুকে মাথা রেখেই স্লো ড্রান্স করছে।

অনুষ্ঠান শেষ করে বাড়ি ফিরতে ফিরতে রাত ১টা বেজে গেছে।রোজ ফ্রেশ হয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিয়েছে।ঘুমে ওর চোখ ভেঙে যাচ্ছে।সারাদিনের ক্লান্তি ওকে ছেয়ে ফেলেছে।রোজ ফোন অন করে দেখলো অরিত্র অনেকবার ফোন করেছে। রোজের আপাতত অরিত্রকে ফোন করে কথা বলার মতো এনার্জি নেই।রোজ ফোন রেখে কয়েক সেকেন্ডের মাথায় ঘুমের দেশে তলিয়ে গেলো।

~পরের দিন সকালবেলা~
রোজ ভার্সিটিতে ঢুকতেই অরিত্র কোথা থেকে এসে রোজকে একটা ফাকা ক্লাসরুমে নিয়ে গেলো।তারপর দেয়ালের সাথে চেপে ধরে রক্তচক্ষু নিয়ে বললো,
—–গতকাল কোথায় ছিলে?তোমাকে কতবার ফোন করেছি ফোন চেক করেছো?চেক করলে অবশ্যই দেখেছো?

রোজ আমতা আমতা করে বললো,
—–ফ্যামিলির সবাই অফিস পার্টিতে গিয়েছিলাম।

অরিত্র রোজকে ছেড়ে দিয়ে তাচ্ছিল্যের সুরে বললো,
—–আরে বাহ! ইনি তো পার্টি করছিলেন।
তারপর কিছুটা কঠিন কন্ঠে বললো,
—-আমি এইদিকে টেনশনে মারা যাচ্ছি আর তুমি পার্টি করছো?
তুমি জানো তোমাকে ভার্সিটিতে না পেয়ে ফোন করেছি কতবার?বারবার ফোন করার পরও ফোন তুলছিলে না তাই আমার প্রচন্ড টেনশন হচ্ছিলো।এছাড়া জানতে পারি তোমার পাপা রোদ্দুর স্যারও আসেনি।এটা জেনে আমার টেনশন আরো বেড়ে গেলো। পাশাপাশি ভয় হতে লাগলো।কোনো বিপদ হলোনা তো।
তারপর তোমাদের বাড়ির সামনে গিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা দাড়িয়ে ছিলাম।খোজ নিয়ে জানতে পারি বাড়িতে কেউ নেই।আমাকে টেনশনে ফেলে কি করে পার্টি করছিলে?

—–আমাদের কোম্পানির একটা ইম্পর্ট্যান্ট শো ছিলো।আর এর উপলক্ষে কোম্পানি থেকে পার্টি থ্রো করে।যেহেতু আমাদের কোম্পানি,আমাদের ভিক্টোরি।আমাদের তো সেখানে উপস্থিত হওয়া বাধ্যতামূলক।তাই ভার্সিটি আসতে পারিনি।

—–ওকে ফাইন।বাট একটা ফোন করে তো ইনফর্ম করতে পাড়তে।

—–আসলে সবকিছু হুট করে হয়ে যাওয়ায় তোমাকে জানাতে পারিনি।বাসায় ফিরে অনেক টায়ার্ড ছিলাম।ফর দিস রিজন ভেবেছিলাম ভার্সিটি এসে তোমাকে সব বলবো।কিন্তু তুমি যে এত টেনশন করবে বুঝতে পারিনি।

অরিত্র ভয়েস কিছুটা মোলায়েম করে বললো,
—–রোজ দেখো আমি তোমার ব্যাপারে অনেক সেন্সেটিভ।অল্প কয়েকদিন হলেও মনে হয় তোমার সাথে আমার জনম জনমের সম্পর্ক।হ্যা আমার এটাই মনে হয়।
তাই তোমার জন্য সবসময় অস্থির হয়ে পড়ি।নেক্সট টাইম এমন করোনা প্লিজ।আমাকে সময় করে একটু জানাবে।

রোজ অবাক হয়ে অরিত্রকে দেখছে।অরিত্র যে ওর জন্য এতটা অস্থির হয়ে পড়বে বুঝতে পারেনি।
—–আচ্ছা আর এমন ভুল হবেনা।আ’ম সরি তোমাকে টেনশনে ফেলার জন্য।

অরিত্র রোজের কাছে এসে ওর গালে হাত রেখে বললো,
—–গতকাল আমার কিভাবে গিয়েছে কত যন্ত্রণার মধ্যে দিয়ে গেছে আমিই জানি।

রোজ অরিত্রের কথার প্রতিউত্তরে অরিত্রকে জড়িয়ে ধরলো।অরিত্র মোটেও এর জন্য প্রস্তুত ছিলো না।
—–অরিত্র আমাকে সারাজীবন এভাবে ভালোবাসবে তো?

—–অবশ্যই আমার জান পাখি।

এভাবে কেটে গেছে কয়েক মাস।শুভ্রা আর হৃদের ফ্যামিলি ডিসিশন নিয়েছে শুভ্রার ফাইনাল পরীক্ষা শেষ হওয়ার এক সপ্তাহ পর ওদের বিয়ে।

বিয়ের তারিখ ফিক্সড করার পর রোজ শুভ্রার কোনো হেলদোল না দেখে বললো,
—–শুভ্রাপু তুমি খুশি নও?

শুভ্রা হেসে বললো,
—–কেন হবো না?আমার সাত বছরের অপেক্ষার অবসান হতে চলেছে।সাতটা বছর।
শুভ্রা রোজের গাল টিপে নিজের রুমে চলে গেলো।

পরীক্ষা শেষ।শুভ্রা ফ্রেন্ডদের বিয়ের কার্ড দিচ্ছে।
শুভ্রার এক ফ্রেন্ড অনি বললো,
—–শুভ্রা তুই হৃদকে বিয়ে করছিস যে কিনা তোকে ডাম্প করেছিলো।

শুভ্রার অনির কথা শুনে গা জ্বলে গেলো।শুভ্রা চোয়াল শক্ত করে বললো,
—–শাট আপ অনি।বিয়েতে যাওয়ার ইচ্ছে না হলে যাবিনা।আই ডোন্ট কেয়ার।আমাকে হৃদ ডাম্প করেনি।আর হ্যা আরেকটা কথা আমি হৃদকে বিয়ে করতে যাচ্ছিনা হৃদ আমাকে বিয়ে করছে।গট ইট?ষ্টুপিড কোথাকার।

শুভ্রা হনহন করে হেটে চলে গেলো।পেছনে থেকে অনি বললো,
কার রাগ কার উপর ঝাড়লো?

শুভ্রার রাগ এখনো কমেনি।শুভ্রা অন্ধকারে বারান্দার রেলিঙ ধরে দাড়িয়ে আছে।কয়েকদিন পর বিয়ে।বিয়ের কেনাকাটা এখনো বাকি।তবে বিয়ের ড্রেস মামনি আর রোজ মিলে সিলেক্ট করে নিয়েছে।
হৃদ পেছনে থেকে শুভ্রাকে জড়িয়ে নিয়ে খোলা চুলে নাক ডুবিয়ে ঘ্রাণ নিচ্ছে।শুভ্রা একটু নড়েচড়ে উঠলো কিন্তু কোনো শব্দ করলোনা।শুভ্রার কোনো শব্দ না পেয়ে হৃদ শুভ্রাকে ইচ্ছে করে আরেকটু জোরে চেপে ধরলো।
হটাৎ এভাবে চাপ পড়ায় শুভ্রা আউচ করে উঠলো।
শুভ্রা বললো,
—–কি হলো এটা?তুমি ইচ্ছে করেই এমন করেছো তাই না?

—–হুম।

—-আবার হুম বলছো?

—–চুপ করে আছো কেন?আমার পরীর মন খারাপ?

—–উহু।

—–তবে?

শুভ্রা উত্তর দিলো।
—–কঠিন সময়ের প্রস্তুতি নিচ্ছি।

হৃদ অবাক হয়ে বললো,
—–মানে?

শুভ্রা প্রতিউত্তরে কোনো জবাব না দিয়ে ঘুরে হৃদকে জড়িয়ে ধরে বললো,
—–এখন তোমার না জানলেও চলবে।

🌼হলুদ সন্ধ্যা🌼

হৃদ অরিত্রকেউ বিয়েতে ইনভাইট করেছে।অরিত্র পাঞ্জাবি পড়ে এসেছে।রোজ কলাপাতা রঙের লেহেঙ্গা পড়েছে।
অরিত্র শুরু থেকেই রোজকে খোজছে।
রোজকে কয়েকবার ফোনও করা হয়ে গেছে।কিন্তু ফোন অফ।অরিত্র একা একা বসে বোর হচ্ছে।

রোজ লেহেঙ্গার ওড়না ঠিক করতে করতে সমবয়সী কতগুলো মেয়ের সাথে আসছে।অরিত্র দূর থেকে রোজকে দেখে দাড়িয়ে যায়।মনে হচ্ছে ওর কয়েকটা হার্টবিট মিস হয়ে গেলো।মুগ্ধ নয়নে রোজকে দেখছে।
রোজ এসেই আশেপাশে কাউকে খোজছে।অরিত্র রোজের পেছনে দাড়িয়ে বললো,
—–ম্যাডাম কি আমাকে খোজছেন?

অরিত্রের কন্ঠ পেয়ে রোজ মুচকি হেসে পেছনে ঘুরলো।অরিত্রকে দেখে মনে মনে আরেকবার ক্রাশ খেলো।
—–ইয়েস হ্যান্ডসাম।

অরিত্র হালকা হেসে বললো,
—–ইউ আর লুকিং সো বিউটিফুল।

—–থ্যাঙ্কিউ।ভাইয়ার সাথে মিট করেছো?

—–না।

—-চলো মিট করিয়ে দেই।

—–তোমার পাপার সাথে মিট করিয়ে দেও।এই চান্সে আমরাও বিয়ে করে ফেলি।(চোখ মেরে)

—–ইশশ আইছে।

রোজ অরিত্রকে হৃদের কাছে নিয়ে গেলো হৃদ অরিত্রকে দেখে এগিয়ে এসে হ্যান্ডশেক করলো।
—–কি খবর ব্রো?

—-আ’ম গুড।বাট আপনার বিয়ে দেখে আমারও বিয়ে করতে ইচ্ছে করছে।

রোজ অরিত্রকে কনুই দিয়ে ধাক্কা মারলো।
—–মাগো!!

হৃদ ওদের কান্ড দেখে হেসে ফেললো।
—–ডোন্ট ওরি।টাইমলি সব হবে।

শুভ্রা হলুদের শাড়ি পড়ে রেডি হলুদের জন্য।শুভ্রার মাম্মা আর মামনি(হৃদের মা) শুভ্রার রুমে এসেছে।
শুভ্রার মাম্মা কপালে চুমু খেয়ে বললো,
—–আমার মেয়েটা কত বড় হয়ে গেছে।

শুভ্রার মামনি শুভ্রার গালে হাত রেখে বললো,
—–মাশাল্লাহ,,আমাদের শুভ্রাকে কত সুন্দর লাগছে।কারো খারাপ নজর না লাগুক।

শুভ্রার মাম্মার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে।
শুভ্রা সেটা দেখে বললো,
—–মামনি মাম্মাকে কাদতে মানা করো।কি হচ্ছে এসব?আমি কি পরের বাড়ি যাচ্ছি?এখানেই আছি,আগের মতোই থাকবো।হোয়াই সি ইজ ক্রায়িং?

শুভ্রার মাম্মা চোখ মুছে বললো,
—–তুই বুঝবিনা কেন কাদছি?

শুভ্রাকে স্টেজে নিয়ে গেলো।একজায়গায় দুজনের হলুদ প্রোগ্রাম হচ্ছে তবে আলাদা স্টেজে।

অরিত্র রোজকে হলুদ লাগিয়ে দিলো।রোজ সেটা দেখে বললো,
—–কি করলে এটা? আমার সাজের বারোটা বাজিয়ে দিয়েছো।
তারপর আয়না বের করে মুছতে লাগলো।

অরিত্র কানের কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বললো,
—–বিয়ের কনের হলুদ লাগালে তাড়াতাড়ি বিয়ে হয়ে যাবে টিভিতে দেখোনা।
রোজ অরিত্রের কথা শুনে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো।রোজের ফেস দেখে অরিত্র হেসে ফেললো।

হলুদের প্রোগ্রাম শেষ।শুভ্রা ফ্রেশ হয়ে বারান্দায় গিয়ে দাড়ালো।রাত দুটো বাজে।পরিস্কার আকাশ।শুভ্রা আকাশের দিকে চেয়ে বলছে,
“শুভ্রা তোর এত বছরের স্বপ্ন পূরণ হতে যাচ্ছে।ছোট থেকে কত স্বপ্ন দেখেছি হৃদের বউ হবো।সে স্বপ্ন পূরণ হতে যাচ্ছে।ফাইনালি আগামীকাল…।
আমার সাতবছরের অপেক্ষার অবসান হতে যাচ্ছে।”

শুভ্রা রহস্যময় হাসি দিলো।

চলবে….

(সবাইকে বিয়ের দাওয়াত দিলাম।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here