হৃদয়ের শুভ্রতা পর্ব ১

#হৃদয়ের_শুভ্রতা🌸🌸

(সূচনা পর্ব)

#ফাবিহা_নওশীন

🌿🌿
“ও মাগো,আমার কোমড়টা গেলো।”

শুভ্রা ভ্রু কুচকে বিরক্তি নিয়ে মেঝে থেকে উঠে দাড়িয়ে দেখে একটা ছেলে ব্লাক শর্ট প্যান্ট,এস কালার টিশার্ট,ব্রাউন হেয়ার,ফর্সা গায়ের রং,শরীরের দৃশ্যমান জায়গাগুলো লোমহীন,ফর্সা মুখে চাপদাড়ি।মনে হচ্ছে একদম ফরেইনার।চেহেরায় বাঙালী একটা ভাব আছে।তাই শুভ্রার কাছে একে ফরেইনার মনে হচ্ছে না।নয়তো গেটাব আস্ত ফরেইনার।

শুভ্রা ফোনে কথা বলতে বলতে বাড়িতে ঢুকছিলো আর তখনই ধাক্কা খায়।

শুভ্রা চেচিয়ে বলে,
—-ওই মিয়া,কে আপনি?আমার বাড়িতে এসে আমাকেই ধাক্কা দিচ্ছেন?

উত্তরে ছেলেটা কিছুই বলছেনা চুইংগাম চিবুচ্ছে।যেনো চুইংগাম চিবানোটাই তার গুরুত্বপূর্ণ কাজ।আর সামনে আজাইরা জিনিস দাড়িয়ে আছে।ছেলেটা ঘুরে সামনের দিকে যাচ্ছে।
শুভ্রা বিরক্ত হয়ে বললো,
—-ওই হ্যালো!দাড়ান,দাড়ান!

ছেলেটা দাড়িয়ে গেলো।
শুভ্রা সামনে গিয়ে বললো,এই যে এডিটিউটের দোকান।কথা বলছেন না কেন?বোবা নাকি?

ছেলেটা ভ্রু কুচকে শুভ্রাকে চোখ বুলিয়ে দেখে নিলো।শুভ্রা লং একটা স্কার্ট পড়া।গলায় স্কাপ ঝুলানো।কাধে লেডিস ব্যাগ,ব্রাউন স্টেইট করা পিঠ পর্যন্ত চুলগুলো ছাড়া,ভ্রু যুগল নাড়িয়ে নাড়িয়ে কথা বলছে,বাম হাতে ফোন।ফোনে কারো কন্ঠ ভেসে আসছে।সেদিকে শুভ্রার খেয়াল হতেই ছেলেটির দিকে বিরক্তি নিয়ে শেষ বার চেয়ে ফোন কানে তুলে নিলো।
তারপর কথা বলতে বলতে নিজের রুমের দিকে পা বাড়ালো।

ছেলেটি মুচকি হেসে নিজের রুমের দিকে ভয়ে ভয়ে যাচ্ছে।কেননা সেখানে আরেক বিপদ হয়তো উৎ পেতে আছে।

চলুন ঘুরে আসা যাক ফ্ল্যাশব্যাকে।
এ হচ্ছে রাইসান হৃদয় ওরফে হৃদ।৭বছর পর লন্ডন থেকে পড়া শেষ করে দেশে ফিরেছে গতকাল।সে লন্ডন থেকে ফ্যাশন ডিজাইনে ডিগ্রি নিয়ে ফিরেছে।কিন্তু সে সম্পর্কে শুভ্রা অজ্ঞাত।কেননা সে এ বাড়ির কোনো কিছু কিংবা কারো খোজ রাখেনা।সে তার নিজের দুনিয়ায় ব্যস্ত থাকে।যদিও কেউ যেচে ওকে জানায়নি সারপ্রাইজ দেবে তাই।

হৃদ ঘুম থেকে উঠে ফুলের রুমে হাজির।ফুল বিছানায় বসে ফোনে কিছু একটা করছিলো।হৃদ মায়ের কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে পরলো তারপর বললো,
—-মাম্মা কতদিন তোমার কোলে মাথা রাখিনা।কতদিন তোমার আদর পাইনি।

ফুল আহ্লাদী কন্ঠে বললো,
—-আহারে,,আমার বুড়ো খোকা মায়ের আদর খেতে এসেছে।

হৃদ নাক ফুলিয়ে বললো,
—-মাম্মা আ’ম নট বুড়ো খোকা এট অল।আ’ম দ্যা হটেস্ট হ্যান্ডসাম বয় হৃদ সন অফ বিউটিফুল ইয়াং লেডি।

ফুল হৃদের মাথায় গাট্টি মেরে বললো,
—-পাম দেওয়া হচ্ছে মাম্মাকে।৪৮বছরে ইয়াং।

হৃদ উঠে বসে বললো,
—-এজ ডাজনট ম্যাটার।তুমি সত্যিই এখনো ইয়াং আছো মাম্মা।ছোট থেকে একি দেখছি।

রোদের প্রবেশ রুমে।রোদকে দেখে বললো,
—-পাপাকে জিজ্ঞেস করে দেখো?

রোদ ভ্রু কুচকে বললো,
—-কি নিয়ে কথা হচ্ছে?

—-পাপা লুক,,আমি আর মাম্মা একসাথে দাড়ালে মনে হয় আমরা মা ছেলে?মনে হয়না আমার বড় বোন?সত্যি করে বলো।

রোদ মুচকি হেসে বললো,ঠিক তাই।তোর মাম্মা তো দিন দিন ইয়াং হচ্ছে।আর সুন্দর হচ্ছে।

ফুল মুখ বাকিয়ে বললো,
—-ছেলের সামনে ফ্লার্ট করতে লজ্জা করে না?

হৃদ উঠে দাড়িয়ে রোদের সামনে দাড়ালো।রোদ হৃদের কাধে হাত রেখে বললো,
—-কে ছেলে?হৃদ আমার ছেলে নয়।ওই আর ফেন্ড।

ফুল ভেংচি কাটলো।হৃদ ফুলকে টেনে রোদের পাশে দাড় করালো।তারপর বললো,
—-পারফেক্ট ফ্যামিলি।

রোজ দরজার সামনে কোমড়ে হাত দিয়ে দাড়িয়ে আছে।রোজ,ফুল আর রোদের ভালোবাসার গোলাপ।রোজ ওদের ১৮বছর বয়সী মেয়ে।এইচএসসি পরীক্ষা শেষ করে বেকার সময় কাটাচ্ছে।উহু ঠিক বেকার না।রোজও মায়ের মতো সৃজনশীল প্রতিভাবান।এটুকু বয়সেই মায়ের সাথে কাজ করছে।কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছাড়াই উন্নতমানের ডিজাইন তৈরি করছে।ও ফুলের পথেই হাটছে।ফুলের ওয়ার্ক শপে বর্তমানে কাজ শিখছে।
রোজ দাত খিটমিট করতে করতে বললো,
—-আমি কে?

হৃদ রোজকে রাগানোর জন্য বললো,
—-তুই ক্যামেরাওমেন।আমাদের পেছনে পেছনে ঘুরবি আর পিকচার তুলে দিবি।

রোজ চোখ বড়বড় করে বললো,কিহ?
এতবড় অপমান?

—-তুই কোন ভিয়াইপি পার্সোন?তোকে তো পাপা রেললাইনে কুড়িয়ে পেয়ে নিয়ে এসেছে।তাই তোকে ক্যামেরাওমেনের পদবী দিলাম।

রোজ রুম কাপিয়ে চিতকার দিলো।
—-পাপায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়া!!!

হৃদ কানে হাত দিলো।রোদ হৃদকে বললো,
—-আমার প্রিন্সেসকে রাগিয়ে ঠিক করিস নি।এবার ঠেলা বুঝ।

রোজ পুরো বাড়িতে হৃদের পেছনে পেছনে দৌড়াচ্ছে।হৃদ পরিশেষে কিচেনে ফ্রিজের পিছনে লুকিয়ে ছিলো।সেখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে চুইংগাম চিবানোতে ব্যস্ত ছিলো।অনেকক্ষণ যাবত রোজের সাড়াশব্দ না পেয়ে আস্তে আস্তে বেরিয়ে পা টিপে টিপে হেটে রোজকে খোজছিলো আর তখনই ধাক্কা।আর ধাক্কা লাগে শুভ্রার সাথে।শুভ্রা ভার্সিটি থেকে ফোনে কথা বলতে বলতে বাড়িতে ঢুকতে গিয়েই ধাক্কা খায়।শুভ্রা অনার্স ফাইনাল ইয়ারের ম্যাথম্যাটিকসের স্টুডেন্ট।পড়াশোনার পাশাপাশি একটা ড্রান্স স্কুল চালায়।ও আর ওর দুই ফ্রেন্ড মিলেই ড্রান্স স্কুল চালু করেছে।মোটামুটি ভালো স্টুডেন্ট আছে।শুভ্রা ক্ল্যাসিক্যাল ড্রান্সার।ড্রান্স ওর প্যাশন।ও ড্রান্স স্কুল থেকে কোনো টাকা নেয়না।টাকার ওর অভাব নেই।শখের বশেই কাজটা শুরু করে আর এখন এই কাজ ওর লাইফে পরিণত হয়েছে।গরিব বাচ্চাদের ফ্রিতে ড্রান্স শিখায়।

কালের বিবর্তনে এ বাড়ির অনেক কিছু পরিবর্তন হয়ে গেছে।রোদের বাবাই গত হয়েছেন ৪বছর,ফুলের বাবাইও অসুস্থ থাকে প্রায়শই।তুহিন আমেরিকায় বিখ্যাত হার্ট সার্জন।১০বছরের ছেলে,স্ত্রী নিয়ে আমেরিকায় থাকে।রোদ এখনো ভার্সিটিতেই আছে।ফুল নিজের বিজনেস সামলায় সাথে রোদও।রাহাত ওর বাবা,কাকাইয়ের বিজনেস সামলায়।শাওরিন হাউজওয়াইফ।এই হলো এই পরিবার।

শুভ্রা কানে হেডফোন লাগিয়ে ল্যাপটপে ভিডিও চ্যাটিংয়ে বিজি,ড্রান্স ক্লাস নিয়ে সিডিউল তৈরি করছে রুমির সাথে।শাওরিন হটাৎ করে এসে শুভ্রার কান থেকে হেডফোন সরিয়ে,ল্যাপটপ বন্ধ করে শুভ্রার হাত ধরে টানতে টানতে খাবার টেবিলে নিয়ে যাচ্ছে।

—-মাম্মা প্লিজ ছাড়ো।আমি খাবোনা।

শাওরিন ধমকিয়ে বললো,একদম চুপ।রাতে না খেয়ে কেউ ঘুমায়?আর সারাদিন কানে কি হেডফোন লাগিয়ে রাখিস।

শাওরিন শুভ্রাকে টেনে চেয়ারে বসিয়ে দিলো।শুভ্রা কিছু বলতে যাবে তখনই শাওরিনের ধমক খেয়ে চুপ হয়ে গেলো।
—-সারাক্ষন কানে হেডফোন,হাতে ল্যাপটপ নয়তো ফোন।খাওয়ার কথা শুনলেই মাথায় বাজ পড়ে।

শুভ্রা গাল ফুলিয়ে খাওয়া শুরু করলো।
খেতে খেতে হটাৎ বরাবর চোখ গেলো।শুভ্রা চমকে উঠে।শুভ্রার চোখ কপালে।শুভ্রা মুখের খাবার তাড়াতাড়ি শেষ করে বললো,
—-এই বোবা ছেলে এখানে কেন?(হৃদকে উদ্দেশ্য করে)

সবাই খাবার রেখে বিস্ময় নিয়ে শুভ্রার দিকে চেয়ে আছে।শুভ্রা কিছুই বুঝতে পারছেনা তাই ফিসফিস করে রাহাতকে জিজ্ঞেস করলো,
—-পাপা সবাই এভাবে চেয়ে আছে কেন?আমি কি বলেছি?

রাহাত কিছুটা জোরে বললো,
—-মামনি ও বোবা না।

শুভ্রা অবাক হয়ে বললো,
—-কিহ!!কথা বলতে পারে??হোয়াটএভার এই এডিটিউটের দোকান এখানে কেন?
জানো পাপা এই ছেলে বিকেলে আমাকে ফেলে দিয়েছে।আর তারপর একবারও সরি বলেনি।আমি বারবার এটা সেটা জিজ্ঞেস করলাম তাও এন্সার দেয়নি।তাই ভেবেছি বোবা।কিন্তু এখন প্রশ্ন হলো এই ছেলে কে?এখানে কেন?

সবাই মুখ চেপে হাসছে।আর হৃদ কারো দিকে না তাকিয়ে নিশ্চিন্তমনে খাচ্ছে।রোদ শুভ্রাকে বললো,
—-ভালো করে দেখ চিনতে পারিস কিনা?

শুভ্রা হৃদকে বললো,
—-এই যে মিস্টার উঠে দাড়ান তো।সোজা হয়ে দাড়াবেন।

হৃদ অবাক হয়ে রোদের দিকে তাকালো।রোদ হৃদের দিকে একবার তাকিয়ে বললো,
—-ও দাড়াবে কেন?

—-বাবাই তুমিই তো বললে ভালো করে দেখতে।না দাড়ালে কি করে দেখবো?

রোদ শুভ্রার কথা শুনে হেসে দিলো।
—-আরে ওর ফেইস দেখতে বলেছি।

শুভ্রা খুটিয়ে খুটিয়ে দেখে হতাশ হয়ে বললো,
—-কোনো মডেল,এক্টর, প্লেয়ার, ড্রান্সার,সিংগার কারো সাথে কোনো মিল পেলাম না।সরি।তোমরা কেউ বললে বলো না বললে নাই।আই হেভ নো প্রব্লেম।এন্ড আই হেভ নো ইন্টারেস্ট এবাউট হিম।
শুভ্রা মুখে খাবার তুলে নিলো।

রোজ উত্তেজনা চেপে রাখতে না পেরে দ্রুত বললো,
—-আপু!!!

শুভ্রা রোজের দিকে জিজ্ঞাসুক দৃষ্টিতে তাকালো।রোজ বললো,
—-হি ইজ রাইসান হৃদয়।হৃদ ভাইয়া।গতকাল রাতে এসেছে।তোমাকে কেউ জানায়নি।

হৃদ ভ্রুক্ষেপহীনভাবে খেয়ে চলেছে।শুভ্রা একবার হৃদের দিকে তাকিয়ে কাশতে শুরু করলো।ওর খাবার গলায় আটকে গেছে।তালুতে উঠে গেছে।সবাই ওর জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়লো।মাথায়,পিঠে হাত বুলাচ্ছে।আর শুভ্রা পানির গ্লাসের দিকে চেয়ে আছে।শুভ্রা গ্লাসের দিকে হাত বাড়াতেই হৃদ উঠে দাড়িয়ে ওর হাতে গ্লাস দিয়ে নিজের রুমের দিকে পা বাড়ালো।শুভ্রা তাড়াতাড়ি পানি খেয়ে নিজেকে শান্ত করছে।

.
.

শুভ্রা কানে হেডফোন লাগিয়ে বসে আছে।নিজেকে কিছুতেই শান্ত করতে পারছেনা।কি করে শান্ত করবে,হৃদ এতবছর পর ওর সামনে।চোখের সামনে ভেসে উঠছে ৭বছর আগের ঘটনা।

শুভ্রা তখন দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী।সকালে স্কুল ড্রেস পড়ে ডাইনিংয়ে বসে নাস্তা করছে আর তখনই হৃদ স্যুট কোট পড়ে ফর্মাল ড্রেসে বড় একটা লাগেজ নিয়ে নামছে।ওর পিছনে রোদ,ফুল,রোজ,রাহাত আর শাওরিন।শুভ্রা বুঝতে পারছেনা এরা কি করছে।আর হৃদ এভাবে কোথায় যাচ্ছে।শুভ্রা খেয়াল করে দেখলো সবার মুখ ভার আর ফুল চোখের পানি মুছছে।শুভ্রা ডাইনিং ছেড়ে এগিয়ে গেলো ওদের দিকে।

হৃদের কাছে গিয়ে বললো,
—-হৃদ ভাইয়া কোথাও যাচ্ছো তুমি?

হৃদ শুভ্রার কথা শুনেও না শোনার ভান করে বললো,
—-পাপা গাড়ি রেডি?আমার ফ্লাইটের দেরি হয়ে যাচ্ছে।

শুভ্রা ফ্লাইটের কথা শুনে কাদো কাদো হয়ে বললো,
—-ফ্লাইট!!!কিসের ফ্লাইট?

কেউ কোনো উত্তর দিচ্ছেনা।শুভ্রা চিতকার করে বললো,
—-কিসের ফ্লাইট?আমি কিছু জিজ্ঞেস করছি।পাপা এন্সার মি।

রাহাত শুভ্রার কাছে এসে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,
—-শুভ্রা রিলেক্স।তোমার হৃদ ভাইয়া লন্ডন যাচ্ছে।পড়াশোনা করতে।পড়া শেষ করে খুব শীঘ্রই চলে আসবে।

লন্ডনের কথা শুনে শুভ্রা স্তব্ধ হয়ে গেলো।ওর বুকের ভিতরে মোচড় দিয়ে উঠে।তারপর কাদতে কাদতে হৃদকে জড়িয়ে ধরে বললো,
—-তুমি কোথাও যাবেনা।আমি তোমাকে কোথাও যেতে দেবোনা।আমাকে ছেড়ে যেওনা।

হৃদ অস্বস্তিতে পড়ে গেলো।হুট করে এভাবে সবার সামনে জড়িয়ে ধরায়।হৃদ শুভ্রাকে বারবার ছাড়ানোর চেষ্টা করছে।শুভ্রা ছাড়ছেনা।
—-হৃদ ভাইয়া আমাকে ছেড়ে যেওনা,আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবোনা।প্লিজ।আমি মরে যাবো।তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবোনা।

হৃদ অনেক চেষ্টা করে শুভ্রাকে ছাড়িয়ে ওর মাম্মাকে বলে পাশের একটা রুমে নিয়ে গেলো।

হৃদ শুভ্রার দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে বললো,
—-কি করছিস এসব?লাজ লজ্জা খেয়ে ফেলেছিস?

শুভ্রা এসব কানে না নিয়েই কাদতে কাদতে বললো,
—-তুমি কেন যাচ্ছো?আমি কি করেছি?আমার সাথে এমন কেন করছো?

হৃদ বিরক্তি নিয়ে বললো,
—-আমি পড়তে যাচ্ছি।পড়তে।আমি কি তোর মতো?আমার লাইফ,ক্যারিয়ার নিয়ে চিন্তা আছে,তোর মতো বেয়ারা না।

—-ঠিক আছে আমাকেও সাথে নিয়ে চলো।

—-তোকে কেন নেবো?যাতে তুই আমাকে জ্বালাতে পারিস?পড়াশোনা না করতে পারি?

—-আমি আর কোনোদিন তোমাকে বিরক্ত করবোনা,জ্বালাবোনা।তবুও আমাকে ছেড়ে যেওনা।তুমি জানো আমি তোমাকে ছাড়া এক মুহুর্ত থাকতে পারবোনা।আমি তোমাকে ছাড়া কখনো কোথাও থাকিনি।

—-এখন থেকে থাকবি।আমি কি সারাজীবন তোর সাথে থাকবো?আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে।আমি যাচ্ছি।একদম নেকামি করবিনা।

হৃদ দরজার সামনে যেতেই শুভ্রা হৃদের পা জড়িয়ে ধরলো।কাদতে কাদতে হেচকি তুলে বললো,
—-যেওনা,আমার অনেক কষ্ট হচ্ছে হৃদ ভাইয়া।আমার দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।তুমি চলে গেলে আমি দম বন্ধ হয়ে মরে যাবো।প্লিজ যেওনা।আমাকে নিয়ে যাও।

—-উফফফ শুভ্রা আমার পা ছাড়।তোর এই ঢংয়ের জন্য আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে।পা ছাড় নয়তো খুব খারাপ হয়ে যাবে।

—-না আমি ছাড়বোনা।আমি আর কখনো তোমাকে বিরক্ত করবোনা।তোমাকে আর বারবার ভালোবাসি ভালোবাসি বলবোনা।আমি আর উল্টো পাল্টা কাজ করবো না,তোমার সব কথা শুনবো।তবুও দোহাই লাগে এভাবে যেওনা।তোমার কি আমার জন্য একটুও কষ্ট হচ্ছে না?

হৃদ জোরে টেনে পা সরিয়ে বললো,
—-তুই একটা অসহ্যকর মেয়ে।তোর জন্য আমার কেন কষ্ট হবে?যত্তসব ফালতু।আমার জীবনটা জ্বালিয়ে শেষ করে দিলো।

হৃদ দ্রুত পায়ে বেরিয়ে গেলো।শুভ্রা ওভাবেই মেঝেতেই বসে রইলো।চোখের পানি শুখিয়ে গেছে।অনুভুতিরা শূণ্যে উড়ে যাচ্ছে।নিজেকে ফাকা লাগছে।যাকে জীবনের সবকিছু মেনে এসেছে।নিজের কথা না ভেবে সবসময় তার কথা ভেবেছে।যার নামে পুরো জীবন লিখে দিয়েছে তার কাছে শুধু অসহ্যকরই থেকে গেলো।

ওই দিনের পর শুভ্রা সাতদিন রুম থেকে বের হয়নি।তারপর যখন বের হয়েছে একদম অন্যরকম শুভ্রা হয়ে বের হয়েছে।যে শুধু নিজের লাইফ নিয়ে ভাবে।হৃদের সব চিহ্ন রুম থেকে সরিয়ে ফেলেছে।ওই দিনের পর হৃদের নামও উচ্চারণ করে নি কোনোদিন।

শুভ্রার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে।
হেডফোনে গান ভেসে আসছে।

💕💕💕
I’m so lonely broken angel
I’m so lonely listen to my heart

You,you are the one
I miss you so much,
Now that You’re gone
Don’t,Don’t be afraid
I Will be by your side,
Leading the way.

I’m so lonely broken angel
I’m so lonely listen to my heart
One and only,broken angel
Come and save me before
I fall Apart 💔💔💔

শুভ্রা হেডফোন ছুড়ে ফেলে দিলো।ওর চোখ লাল হয়ে গেছে।রক্ত বর্ন চোখ বেয়ে পানি পড়ছে।চিতকার করে বলছে,
“আই হেইট ইউ মি.হৃদ।আই জাস্ট হেইট ইউ।এই শুভ্রার লাইফে তোমার কোনো জায়গা নেই।”

চলবে…🔥🔥

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here