হৃদয়ের শুভ্রতা পর্ব ২

#হৃদয়ের_শুভ্রতা🌸🌸

(পর্ব-২)

৳#ফাবিহা_নওশীন❤

🍀🍀

শুভ্রা ছাদে বসে আছে।হিরহির করে বাতাস বইছে।দূরের বাড়িগুলোর আলো ভেসে আসছে।আকাশে আবছা আলোয় মুগ্ধতা ফুটে উঠেছে।ছাদ পুরো অন্ধকার।শুভ্রা লাইট অফ করে রেখেছে।আবছা আলো-অন্ধকার আর এই বয়ে যাওয়া হিমেল বাতাস মিলে একসাথে শুভ্রার মনে দোলা দিয়ে যাচ্ছে।

“এই তুই আমার রুমে কি করছিস?আর আলমারিতে হাত দিয়েছিস কেন?”
হৃদ দরজার সামনে দাড়িয়ে কথাগুলো বললো।

শুভ্রা ঘুরে বললো,
—-কি করছি দেখতে পারছোনা?সব তো এলোমেলো করে রেখেছো।গুছিয়ে দিচ্ছি।

হৃদ আলমারি বন্ধ করে বললো,
—-তোকে আমি বলেছি গুছাতে?আর কার পারমিশন নিয়ে আমার আলমারিতে হাত দিয়েছিস?

শুভ্রা ভ্রু কুচকে বললো,
—-ওমা!! পারমিশন কেন নিতে হবে?আমি তোমার ফিউচার ওয়াইফ।বড় হলে বিয়ে হলে এসব তো আমার হয়ে যাবে।তাহলে পারমিশন কেন নিবো?

হৃদের কোমড়ে রাখা হাত পড়ে গেলো।চোখ বড়বড় করে বললো,
—-এই তোকে এসব কে শিখিয়েছে?এটুকু বয়সে এসব কথা কই শিখেছিস?

—-এটুকু বয়স কই?আমার ১২বছর।আমি ক্লাস সেভেনে পড়ি।কবে আরেকটু বড় হবো কবে তোমাকে বিয়ে করবো।

—-থাপড়ে তোর দাত ফেলে দেবো।আরেকবার যদি এসব আজেবাজে কথা বলিস চাপকে তোর পিঠের ছাল তুলে নেবো।নাউ গেট আউট ফ্রম মাই রুম।

শুভ্রা ভ্রু কুচকে বললো,
—-কিন্তু আমার তো গুছানো শেষ হয়নি?

হৃদ চোখ পাকিয়ে শুভ্রার দিকে তাকালো।শুভ্রা ভয় পেয়ে বললো,
—-এত রাগ করার কি হলো?আমি কি এমন বলেছি।সবাই তো বলে আর সবাই জানে বড় হলে আমাদের বিয়ে হবে।আমি তোমার বউ হবো।আমিও তাই জানি।

হৃদ চেচিয়ে বললো,
—–ছাই জানিস তুই।তোর আমার কোনো বিয়ে হবেনা।এসব মাথা থেকে ঝেড়ে ফেল।যা পড়তে যা।

শুভ্রা গাল ফুলিয়ে চলে গেলো।শুভ্রা ছোট থেকেই হৃদ বলতে পাগল ছিলো।হৃদ ওর একমাত্র খেলার সাথী ছিলো।সারাক্ষণ হৃদের আগে পিছে ঘুরে বেড়াতো আর আগে পিছে ঘুরে বেড়ানো ওর অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।আর যখন দাদা,দাদি মজা করে বলতো হৃদের বউ তখন মনে হলো ওদের একদিন বিয়ে হবে।কেননা টিভিতে দেখেছে বিয়ে হলেই বউ হয়।আর আগে পরে বাড়ির সবাইকে বলতে শুনেছে ওদের বিয়ের কথা।ব্যাস হয়ে গেলো।এমনিতেই হৃদ পাগল ছিলো এখন আরো বেশি।

শুভ্রার ওর ছেলেবেলার ছেলেমানুষী গুলো মনে হলে নিজের প্রতি নিজের রাগ হয়।এতটা অবুঝ কিভাবে ছিলো।

হৃদ অবাকের চূড়ায় অবস্থান করছে।যেখান থেকে পড়ে গেলে মরে যাবে।কি আশ্চর্য!!ওর বিশ্বাসই হচ্ছে না এই সেই শুভ্রা।খুটিয়ে খুটিয়ে দেখার পরও হৃদকে চিনতে পারছেনা।কি করে সম্ভব?যেই মেয়ের পুরো ১৫বছর হৃদের ছায়াতলে কেটেছে।যেকিনা হৃদের আশেপাশে না থাকলে দম বন্ধ করে মরে যেতো এমন অবস্থা সে এতো তাড়াতাড়ি কি করে ভুলে যেতে পারে?৭বছরে সব ভুলে গেলো?
হৃদ দরজার দিকে তাকাচ্ছে।ওই ঘটনার পর দু’ঘন্টা কেটে গেছে কিন্তু হৃদ শুভ্রাকে দেখেনি।হৃদের মনে হচ্ছিলো টেবিলের ঘটনার পর শুভ্রা হৃদের রুমে হামলে পড়বে আর ছেলেবেলার মতো ছেলেমানুষী করবে।এত্ত এত্ত আবদার নিয়ে বসবে।কিন্তু না।

হৃদ অতীতে ডুব দিলো।হৃদ নিজের রুমে গিয়ে দেখে শুভ্রা হাত-পা ছড়িয়ে ওর বিছানায় শুয়ে আছে।হৃদ শুভ্রার হাত ধরে এক টেনে বিছানা থেকে উঠিয়ে দাড় করালো।
হটাৎ এভাবে টানায় শুভ্রা চমকে যাওয়ার পাশাপাশি হাতে ব্যথা পেয়ে আহ করে উঠলো।
হৃদ বুঝতে পারলো শুভ্রা ব্যথা পেয়েছে।হৃদ নাক টেনে বললো,
—-বেশ হয়েছে।তুই হাত পা মেলে আমার বিছানায় শুয়ে আছিস কেন?তোর কি নিজের রুম নেই?সারাদিন আমার রুমে কেন পড়ে থাকিস?

—-তাতে কি এমন ক্ষতি হয়েছে?

—-কিছু হয়নি।তুই এখন যা আমার ঘুম পাচ্ছে।আমি এখন ঘুমাবো।

—-তা ঘুমাও কে নিষেধ করেছে?

হৃদের প্রকৃতপক্ষে ঘুম পাচ্ছে তাই কথা না বাড়িয়ে শুয়ে পরলো।শুভ্রাও পাশে শুয়ে পরলো।হৃদ শুভ্রার অস্তিত্ব অনুভব করতেই লাফিয়ে উঠে বসলো।শুভ্রা হৃদের এমন লাফ দেখে উঠে বসে।

—-এই তুই আমার বেডে আমার পাশে কি করছিস?

—-আমার ঘুম পাচ্ছে তাই ঘুমাচ্ছি।

হৃদ বিরক্তি নিয়ে বললো,
—-উফফ শুভ্রা,,তুই আমার পাশে না ঘুমিয়ে নিজের রুমে যা।

শুভ্রা বোকার মতো বললো,
—-এখানে ঘুমালে কি হবে?

হৃদ রেগে গিয়ে বললো,
—-অনেক কিছু।এটুকু কমনসেন্স তোর নেই।তুই একটা ১৩বছর বয়সী মেয়ে আমি ১৬বছর বয়সী ছেলে।আমাদের এভাবে এক রুমে এক বেডে ঘুমানো উচিত না।মানুষ খারাপ বলবে।

—-তুমি চাওনা তাই বলো।আমি চলে যাচ্ছি।
শুভ্রা রাগ দেখিয়ে উঠে চলে গেলো।

হৃদ প্রশান্তির নিশ্বাস ছেড়ে বললো,
—-আল্লাহ বাচিয়েছে।এই পাগল মেয়ে আমাকেও পাগল করে ছাড়বে।প্লিজ গড হেল্প মি।

হৃদ এসব মনে করে হাসছে।অন্যদিনের ঘটনা।
হৃদ সবেমাত্র কলেজে ভর্তি হয়েছে।শুভ্রার টেনশনের শেষ নেই।কলেজে কত সুন্দর সুন্দর মেয়ে যদি কেউ হৃদকে বাগিয়ে নেয়।হৃদের কলেজ থেকে ফিরতে দেরি হলো।হৃদ ফ্রেশ হয়ে বের হতেই শুভ্রা গাল ফুলিয়ে হৃদের কাছে গিয়ে দাড়ালো।হৃদ তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে বললো,
—-কিরে গাল ফুলিয়ে আছিস কেন?তোর আবার কি হলো?

শুভ্রা আরো বেশি গাল ফুলিয়ে বললো,
—-তোমার আসতে এতো দেরি হলো কেন?

হৃদ বললো,
—-আমার কথা রাখ।তুই বল তুই এই টাইমে বাড়িতে কেন?স্কুলে যাস নি?

শুভ্রা বেডে বসতে বসতে বললো,
—-নাহ।ভালো লাগেনা স্কুলে যেতে।

হৃদ ভ্রু কুচকে বললো,
—-সামনে জেএসসি পরীক্ষা আর তোর স্কুলে যেতে ভালো লাগে না?ফাজলামো পেয়েছিস?পরীক্ষায় ডাব্বা মারতে চাস?

—-যেতে ভালো না লাগলে কি করবো?

—-ভালো কেন লাগে না?আগে তো ভালো লাগতো।জ্বর নিয়েও চলে যেতিস।

শুভ্রা ঠোঁট বাকিয়ে বললো,
—-কারণ তুমি তখন ছিলে।তোমার সাথে স্কুলে যেতে ভালো লাগতো।এখন একা একা ভালো লাগে না।কবে যে আমার স্কুল শেষ হবে।আমিও তোমার সাথে কলেজে যাবো।

হৃদ বিরক্তি নিয়ে বললো,
—-তোর ঢং আমি ছুটিয়ে ফেলবো।আর একদিন যদি স্কুল মিস করিস তোর খবর আছে।শুধু স্কুল কেন যদি একদিন প্রাইভেট,ড্রান্স ক্লাস মিস করিস তাহলে তুই দেখবি আমি কি করি।

শুভ্রা ভয়ে ভয়ে বললো,
—-কি করবে?তুমি কি আমাকে মারবে?

হৃদ সন্দেহ নিয়ে শুভ্রার দিকে তাকালো।
—-ব্যাপার কি বলতো?কি কি মিস দিচ্ছিস সত্যি করে বল।

শুভ্রা ঢুক গিলে বললো,
—-আমি ড্রান্স স্কুল ছাড়িয়ে দিয়েছি।

হৃদ চিতকার করে বললো,
—-কিহ!!

শুভ্রা দরজার দিকে তাকাচ্ছে।তার আগেই হৃদ ওর হাত ধরে ফেললো।
—-ড্রান্স স্কুল কেন ছাড়িয়েছিস?তুই কি বাড়িতে বসে বসে রান্নাবান্না করিস?না তোর দু’চারটে বাচ্চাকাচ্চা আছে?এত ব্যস্ততা কিসের তোর?কি করিস সারাদিন বাসায়?

শুভ্রা ভয়ে ভয়ে বললো,
—-শুক্রবার দিন ছাড়া তো তোমাকে দেখাই যায়না।তাই আমি ড্রান্স স্কুল ছেড়ে দিয়েছি।

হৃদ মাথায় হাত দিয়ে বললো,
—-তুই আমাকে দেখার জন্য….
হে মাবুদ এই মেয়ের মাথায় কি ছিটেফোঁটা বুদ্ধি দেওনি?ওই তুই কি পাগল?হাহ?তোকে আমি কি যে করবো?
আমার সামনে থেকে যা নয়তো তোকে আমি খুন করবো।

—-যাচ্ছি।তবুও খুন করোনা।তোমার আমার এখনো বিয়ে হয়নি।

—-তোর আমার কোনোদিন বিয়ে হবেনা।আমাকে কি পাগলে পেয়েছে?আমি তোকে কখনো বিয়ে করবো না।বিয়ের চিন্তা বাদ দিয়ে ভালো করে পড়াশোনা কর অন্তত ভালো ঘরে বিয়ে দেওয়া যাবে।

—আমি তোমাকেই বিয়ে করবো।২০০% শিওর থাকো।
শুভ্রা মুখ ভেংচি দিয়ে চলে গেলো।

.

শুভ্রা ভার্সিটি যাবার জন্য রেডি হয়ে বাইরে এলো।ব্লাক জিন্স,ব্লু লং লেডিস শার্ট।কাধে লেডিস ব্যাগ।চুলগুলো উচু করে ঝুটি করা।গাড়ির জন্য দাড়িয়ে আছে কিন্তু ড্রাইভার আসছেনা।রোজ পেছনে থেকে বললো,
—-শুভ্রাপু ভার্সিটি যাচ্ছো?

—-হ্যা রে ড্রাইভার গাড়ি নিয়ে আসছেনা।এমনিতেই লেট করে ফেলছি।

—–তাহলে আমাদের সাথে চলো।তোমাকে ড্রপ করে দেবো।

—-আমাদের মানে?

—-আমি আর ভাইয়া।আমরা ওয়ার্কশপ যাচ্ছি।তোমাকে যাওয়ার সময় নামিয়ে দেবো।

—-না থাক।তোর ভাইয়ের সাথে তুই যা।

—-কেন?ভাইয়ার সাথে যেতে কি প্রব্লেম?

শুভ্রা দাতে দাত চেপে বললো,
—-অনেক প্রব্লেম।আমি যাবোনা।লিফট দিতে চেয়েছিস সেজন্য থ্যাংকস।

হৃদ চাবি ঘুরাতে ঘুরাতে এসে হাজির।শুভ্রা হৃদকে মনে মনে বললো,
—-লে শয়তানকা নাম লিয়া ওর শয়তান হাজির।আস্ত একটা শয়তান।

হৃদ রোজকে ইশারায় বললো,
—-কি হচ্ছে?

রোজ বললো,
—-শুভ্রাপু গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছে বললাম আমাদের সাথে যেতে কিন্তু যাবেনা।আপু চলো তোমার দেরি হয়ে যাচ্ছে।

শুভ্রা বিরক্তি নিয়ে বললো,
—-কি আশ্চর্য! বাচ্চাদের মতো কি ঘ্যানঘ্যান করছিস।আমি দরকার পড়লে ভার্সিটি হেটে যাবো নয়তো যাবো না তবুও তোর ভাইয়ের গাড়িতে যাবোনা।যা এখান থেকে।

হৃদ ভ্রু কুচকে রোজের হাত ধরে চাবি ঘুরাতে ঘুরাতে ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে গাড়ির দিকে যাচ্ছে।শুভ্রা অবাক হয়ে দেখছে।
—-বদের হাড্ডি।আসলেই একটা বোবা।মুখ খোলে একটু বললে কি হতো শুভ্রা চল আমাদের সাথে।আমি কি যেতাম নাকি?আমি কি সেই অবুঝ, নির্লজ্জ, বেহায়া শুভ্রা আছি।

শুভ্রার গাড়ি চলে এসেছে।শুভ্রা গাড়িতে উঠে বসে অতীতে ডুব দিলো।
হৃদ বই মেলায় যাবে।শুভ্রা তখন নবম শ্রেণির ছাত্রী।শুভ্রার ইচ্ছে বই মেলায় যাওয়ার।আর সেটা যদি হৃদের সাথে হয় কথাই নেই।সারাদিন হৃদের পিছনে ঘ্যানঘ্যান করেছে।
—-হৃদ ভাইয়া আমি যাবো।আমি যাবো প্লিজ।আমাকে নিয়ে যাবে।

হৃদ কানে হাত দিয়ে বললো,
—-তোর এই ঘ্যানঘ্যান শুনতে শুনতে আমার কানের পোকারা সব মরে গেছে।মাফ কর বইন।কাকাইয়ের সাথে যা,নয়তো ছোটমাকে নিয়ে যা।আমাকে ছাড়।আমি তোকে নিতে পারবোনা।তোর মতো বলদকে নিয়ে আমি কোথাও যাবোনা।

শুভ্রা গিয়ে হৃদের গলা জড়িয়ে ধরলো।
—-প্লিজ প্লিজ প্লিজ।।

—-ওই ছাড়।তুই এমন গায়ে পড়া কেন?কথায় কথায় গায়ে পড়ে যাস।সর তো।

—-না সরবোনা।আমাকে না নিয়ে গেলে আমি সরবোনা।

শুভ্রা ইচ্ছে করে আরো জোরে জড়িয়ে ধরলো।হৃদ আর না পেরে বললো,
—-আচ্ছা আচ্ছা নিবো।এইবার ছাড়।

শুভ্রা খুশি হয়ে লাফিয়ে উঠলো।
—-থ্যাংক ইউ।তুমি কত ভালো।

—-পাম বন্ধ কর।আমার একটা শর্ত আছে।

—-কি শর্ত?

—-তোকে আমি কতগুলো ম্যাথ দেবো।যদি ৪টার মধ্যে কমপ্লিট করে রেডি হতে পারিস তবেই।

—-ওকে ডান।

হৃদ ইচ্ছে করে পুরো বই জুড়ে এত্ত এত্ত ম্যাথ দিয়ে দিলো।যাতে শেষ না করতে পারে।শুভ্রা হৃদের কান্ড দেখে কাদো কাদো হয়ে গেলো। তারপর বই নিয়ে নিজের রুমে একের পর এক ম্যাথ করতে লাগলো।ঘড়ি দেখছে আর ম্যাথ করছে।তাড়াতাড়ি করে লেখায় হাতের আংগুল ব্যথায় ফেটে যাচ্ছে।যাইহোক যত কষ্ট হোক।সব কমপ্লিট করে হৃদের সাথে যাবেই।হৃদের সাথে যাওয়ার জন্য আংগুল কাটা লাগলে তাই করবে।অবশেষে ম্যাথ কমপ্লিট করে ৪টার মধ্যে রেডি হয়ে নিলো শুভ্রা।হৃদের সাথে যাবে তাই স্পেশাল ভাবে সাজগোজ করেছে।

রেডি হয়ে হৃদকে আর খোজে পাচ্ছেনা।বারাবাড়ি খোজে ওকে ফোন করলো।কিন্তু ফোন তুলছেনা।অতঃপর জানতে পারলো হৃদ আধঘন্টা আগে বেড়িয়ে গেছে।
শুভ্রা নিজের রুমে গিয়ে অনেক কেদেছিলো।হৃদের সাথে দুদিন কথা বলেনি।আর না হৃদের রুমে গিয়েছে।শুভ্রা ভেবেছিলো হৃদ আসবে।এসে সরি বলবে কিন্তু না হৃদ শুভ্রাকে ভুল প্রমাণিত করলো।হৃদ শুভ্রার ব্যাপারে বেখেয়ালি ছিলো সবসময় তাই হয়েছিলো।শুভ্রা পরে নিজে থেকেই হৃদের কাছে গেছে।হৃদ আসেনি শুভ্রার অভিমান ভাংগাতে।

শুভ্রা ভাবছে কি আহাম্মক ছিলো।মাঝে মাঝে মনে হয় যদি ম্যাজিক জানতো তাহলে ছোটবেলার ওই মুহুর্তগুলো, বোকামিগুলো ডিলিট করে দিতো ব্রেইন থেকে।কেননা ওই স্মৃতিগুলো ওকে বারবার জানান দেয় ও কতটা দূর্বল ছিলো।

শুভ্রা রাতের বেলা লিভিং রুমে প্লাজু,টিশার্ট পড়ে,চুলগুলো উচু করে হেয়ার স্টিক দিয়ে খোপা করে সোফায় পা তুলে বসে ফোন টিপছে।আর মাঝেমধ্যে হাসছে।হৃদ কফির জন্য নিচে নামছে।একবার শুভ্রার দিকে আড়চোখে তাকিয়ে ফোনে কথা বলায় মন দিলো।হৃদকে শুভ্রার চোখে পড়লো।শুভ্রা কান পেতে শোনার চেষ্টা করছে হৃদ কি বলছে।দুদিন পার হয়ে গেলো এ পর্যন্ত হৃদের কন্ঠস্বর শুনেনি।তাই কান পেতে হৃদের কন্ঠস্বর শোনার বৃথা চেষ্টা করছে।হৃদ এত আস্তে কথা বলছে যে শোনা যাচ্ছেনা।
—-ব্যাটা খারুস,নিশ্চয়ই গার্লফ্রেন্ডের সাথে কথা বলছে।হুহ।

শুভ্রার এখন ঠান্ডা পানির প্রয়োজন।নয়তো মেজাজ ঠিক হবেনা।শুভ্রা ফোন টিপতে টিপতে কিচেনের দিকে যাচ্ছে।হৃদ ফোন টিপতে টিপতে কিচেন থেকে এদিকে আসছে।হটাৎ শুভ্রার সাথে হৃদের ধাক্কা লেগে যায়।যদিও সেদিনের ধাক্কার মতো এত গুরুতর নয়।শুভ্রার কাধের সাথে হৃদের কাধের ধাক্কা লেগেছে।

শুভ্রা চোখ মুখ খিচে একহাতের পাচ আংগুল টান টান করে বললো,
—–আবারো?উফফ!!মাই গড!!
এই আপনি কি ধাক্কা মারার ডিগ্রি নিয়ে দেশে ফিরেছেন?
যখন তখন ধাক্কাই মেরে যাচ্ছেন।আল্লাহ বাচাও।

হৃদ কপাল কুচকে শুভ্রার কথা শুনছে।শুভ্রা কাধ,হাত অন্য হাতে ঝাড়ছে যেনো ময়লা লেগে গেছে।
শুভ্রার এমন ভাব দেখে হৃদ হতবাক যে মেয়ে ওর গা ঘেষে থাকতো সে এখন ওর টাচের জায়গা ঝাড়ছে।
শুভ্রা কিচেনে চলে গেলো।হৃদ ওর যাওয়ার দিকে চেয়ে থেকে মনে মনে বলছে,
এটা কি হলো?শুভ্রা এতটা বদলে গেছে?আমাকে আপনি করে বলছে আবার এমন অদ্ভুৎ বিহেভ।
শুভ্রার এহেন বিহেভে হৃদ অপমানবোধ করছে।ওর রাগ উঠে যাচ্ছে।ইচ্ছে করছে ছেলেবেলার মতো ওর গলা চেপে ধরতে।

শুভ্রা কিচেনে গিয়ে ফ্রিজ থেকে পানি বের করে মুখে দিলো।সার্ভেন্ট কফি বানাচ্ছে।
শুভ্রার এখন কফি পান করতে ইচ্ছে করছে।
—-কফি কার জন্য?

—-জ্বি আপু ছোট স্যারের জন্য।

ছোট স্যার কে?ওর বাবা না নতুন আমদানিকৃত বিলাতী মা*।তাই জানার জন্য জিজ্ঞেস করলো,
—-ছোট স্যার কে?

—-হৃদ বাবা।

—-ওওহহহ আচ্ছা।আমার জন্য একটু বানিয়ে দিন।
সার্ভেন্ট কফি মগে ঢালছে।শুভ্রার মাথায় অদ্ভুৎ চিন্তা এলো হৃদের আওয়াজ বের করার।হৃদ এত আস্তে কথা বলে ওর ভয়েজ লন্ডন থেকে আসার পর আজ পর্যন্ত শুনে নি।তাই এবার চিতকার শুনবে।হৃদ ঝাল খেতে পারেনা একদম।

শুভ্রা নিজের ফোন লুকিয়ে সার্ভেন্টকে বললো,ফোন এনে দিতে লিভিং রুম থেকে।
সার্ভেন্ট যেতেই শুভ্রা মরিচের পট বের করে মরিচের গুঁড়ো কফিতে দিলো এক চামচ।
—-হায় আল্লাহ!!কফির কালার তো চেঞ্জ হয়ে গেছে।এখন কি করি?
শুভ্রা কফি কিছুটা কমিয়ে তাড়াতাড়ি দুধ ঢেলে দিলো কালার কিছুটা চেঞ্জ হয়েছে।

.
.

হৃদ এক চুমুক কফি খেয়ে কফির মগ ফ্লোরে ছুড়ে মেরে রাগে ফুসছে।এমনিতেই শুভ্রার কাছ থেকে অপমানিত হয়েছে তারপর আবার শুভ্রা ওকে মরিচের কফি খাইয়েছে।মেজাজ এখন চাংগে।হৃদের বুঝতে দেরি নেই এ কাজ শুভ্রার।হৃদের মা হৃদের কাছে এসে বললো,
—-কি হয়েছে বাবা?

শুভ্রা দূরে দাড়িয়ে ঘটনা দেখে হতাশ।শুভ্রা ভেবেছিলো হৃদ কফি খেয়ে ঝালে চিতকার করবে।কিন্তু না সে চুপ করে আছে।

হৃদের মা অনেকবার জিজ্ঞেস করার পর হৃদ মুখ খোলেছে।
শুভ্রা কান পেতেও শুনতে ব্যার্থ।হৃদ ফুলকে নিচুস্বরে বললো,
—-মাম্মা কফিতে মরিচের গুঁড়ো।

সবাই লিভিং রুমে হাজির সার্ভেন্টসহ।রাহাত সার্ভেন্টকে ধমকাচ্ছে এমন অসাবধানতার জন্য।শুভ্রার আর সহ্য হচ্ছে না নিজের কফির মগ টেবিলে রেখে বললো,
—-স্টপ পাপা।লিসেন টু মি।
এ কাজ আমি করেছি।একচুয়ালি আমার ঝাল কফি খেতে ইচ্ছে করছিলো তাই আমি নিজের হাতে এমন কফি বানিয়েছি।তুমি তো জানো আমি প্রায়শই মিক্সিং খাবার খাই।বাট উনি ভুল করে ভুল মানুষকে সার্ভ করে ফেলেছে।বাট ইট ওয়াজ মাই ফল্ট।সো যার যা বলার আমাকে বলো।আ’ম রেডি।
আর হ্যা সময় সময় ১০মিনিট কারণ আমার ঘুমানোর সময় হয়েছে। নেও যার যার আমাকে বকার আছে শুরু করো।আর হ্যা টাইম স্টার্ট নাও।
সবাই হা করে শুভ্রার দিকে তাকিয়ে আছে।
—-কি হলো তাকিয়ে আছো কেন সবাই?সময় কিন্তু চলে যাচ্ছে।ওহ বুঝেছি শুভ্রা তুইও না।তোর মতো সুইট,কিউট মেয়েকে কেউ বকতে পারে?একদম ই না।না বকার জন্য থ্যাংকস এভ্রিওয়ান।এন্ড গুড নাইট।উমম কি ঘুম পেয়েছে।

শুভ্রা নিজের রুমে চলে গেলো।সবাই হা করে শুভ্রার যাওয়ার দিকে চেয়ে আছে।

হৃদের মা হেসে বললো,
—-মেয়ে কার দেখতে হবেনা!!

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here