#হয়তো_তোরই_জন্য
#পার্ট_১৮
#নিশাত_জাহান_নিশি
তমা আর জায়ান যেই না ওদের কাজ শেষ করে ড্রইং রুমে সোফায় ধপ করে বসল অমনি তাহাফের পরিবার এসে ড্রইং রুমে হাজির হয়ে গেলো।
তমা আর জায়ান শুকনো ঢোক গিলে চোখ বড় বড় করে ওদের দিকে তাকিয়ে আছে। তাহাফের আম্মু, আব্বু এক গাল হেসে তমা আর জায়ানকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,,
—-“কেমন আছো তোমরা?”
তমা আর জায়ান দুজনেই অস্থির দৃষ্টিতে তাহাফের আম্মু, আব্বুর আশে পাশে তাকাচ্ছে। ওরা দুজনই চোখ বুলিয়ে তাহাফকে খোঁজার চেষ্টা করছে। তমা আর জায়ানের ভাব ভঙ্গিমা দেখে তাহাফের আম্মু কিছুটা অবাক হয়ে আবার বলল,,,,,,
—-“কি হলো? তোমরা আমার প্রশ্নের উওর না দিয়ে এদিক সেদিক তাকিয়ে কি খুঁজছ?”
তমা আর জায়ান দুজনই থতমত খেয়ে তাহাফের আম্মুর দিকে তাকিয়ে জোর পূর্বক হাসি টেনে বলল,,,,,
—-“ভালো আছি জেঠি মনি। তুমি কেমন আছো?”
—-“আমি তো খুবই ভালো আছি।”
তাহাফের আম্মু আবার জায়ানকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,
—-“জায়ান বাবা….কবে এলে তুমি?”
জায়ান মলিন হেসে বলল,,,,,
—-“গতকাল এসেছি জেঠি। জয়ার বউভাতে।”
তাহাফের আম্মু মুখ ফুলিয়ে বলল,,,,,
—-“জানো….খুব আপসোস হচ্ছে জয়ার বিয়েতে থাকতে পারলাম না।”
জায়ান বাঁকা হেসে বলল,,,,,
—-“জেঠিমনি মন খারাপ করো না। সামনে আরেকটা বিয়ে আছে। ঐ বিয়েতে না হয় ষোল আনা পুষিয়ে নিও।”
তাহাফের আম্মু মুখে হাত দিয়ে কিছুটা অবাক হয়ে বলল,,,,,
—-“ওহ্ মাই গড। সামনে আরো একটা বিয়ে? কার বিয়ে শুনি?”
জায়ান তমার দিকে তাকিয়ে ডেবিল স্মাইল দিয়ে বলল,,,,,
—-“আমার আর তমুর!”
তমা খানিক লজ্জা পেয়ে মাথাটা নিচু করে ফেলল। এর মাঝেই তাহাফ ফোনে কথা বলতে বলতে সোজা ড্রইং রুমে ঢুকে গেলো। ড্রইং রুমে পা দেওয়ার সাথে সাথে তাহাফ তমা আর জায়ানের মুখোমুখি হয়ে গেলো। তাহাফকে দেখা মাএই তমা লজ্জা ভুলে একনাগাড়ে শুকনো ঢোক গিলতে লাগল। জায়ান বাঁকা হাসি দিয়ে বসা থেকে উঠে তাহাফের মুখোমুখি দাঁড়ালো। তাহাফ ফোনটা কান থেকে সরিয়ে চোয়াল শক্ত করে জায়ানের দিকে তাকিয়ে আছে। তাহাফের আম্মু দৌঁড়ে এসে তাহাফের কাঁধে হাত দিয়ে মৃদ্যু হেসে বলল,,,,,,
—-“তাহাফ দেখ….জায়ান চলে এসেছে। এবার শুধু বিয়ে খাওয়ার পালা, মজা মাস্তির পালা। খুব ধুমধাম করে আমরা দুজনের বিয়ে দিবো। আমার তো দারুন খুশি লাগছে।”
তাহাফ চোখ লাল করে ঘাঁড় ফিরিয়ে মিসেস তারিনের দিকে তাকালো। তাহাফের রাগী দৃষ্টি দেখে মিসেস তারিন শুকনো ঢোক গিলে সোজা উপরে চলে গেলো। তাহাফের আব্বু শার্টের হাতা ফোল্ড করতে করতে উপরে চলে গেলো। জায়ান বাঁকা হেসে তাহাফের কাঁধে হাত রেখে বলল,,,,,,
—-“তোমাকে খুব রাগান্বিত দেখাচ্ছে তাহাফ ভাইয়া! আমাকে দেখে তুমি খুশি হও নি? আমার কিন্তু খুব মন খারাপ লাগছে।”
মুহূর্তের তাহাফ মলিন হেসে জায়ানের হাতটা ওর কাঁধ থেকে সরিয়ে সোফায় বসে থাকা তমার দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,
—-“আমার তো দারুন খুশি লাগছে তোদের দুজনকে এক সাথে দেখে। ভাবা যায়, তোরা দুজন এখন ও কতো হাসি খুশি আছিস। কিছুদিন বাদে বিয়ে ও করবি। ভাবছি তোদের বিয়েতে খুখুখুব স্পেশাল এক্টা দফা দিবো।”
জায়ান ডেবিল স্মাইল দিয়ে পকেটে দুহাত গুজে তাহাফকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,
—-“আই হোপ সারাজীবন আমরা দুজন এভাবেই হাসি খুশি থাকব। হয়তো বা তখন হাসি খুশির পরিমানটা আরো বেশি বেড়ে যাবে। জানো….আমাদের এই ভাবে হাসি খুশি দেখে চারদিক থেকেই পোড়া পোড়া গন্ধ আসছে। আমি আবার ওসবে তেমন পাওা দেই না। যাই হোক…তোমার স্পেশাল দফার অপেক্ষায় রইলাম!”
তাহাফ কপাল কুচকে জায়ানকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,
—-“চারদিক থেকে পোড়া পোড়া গন্ধ আসছে মানে? তুই কি বুঝাতে চাইছিস?”
জায়ান তাহাফের শার্টের কলারটা ঠিক করছে আর মলিন হেসে বলছে,,,,,,,,
—-“আমি বুঝাতে চাইছি, আমাকে আর তমাকে একসাথে দেখে অনেকেরই খুব জ্বলছে। একচুয়েলি আমি জাবেদ ভাইয়ার কথা বলছিলাম। জাবেদ ভাইয়া ও তো তমাকে ভালোবাসত তাই।”
তাহাফ গলাটা ঝাঁকিয়ে এক্টা বড় শ্বাস ছেড়ে জায়ানের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,
—-“ওহ্ আচ্ছা এই কথা। আমি ভাবলাম কি না কি! যাই হোক আমি আসছি। খুব টায়ার্ড, ফ্রেশ হয়ে রেস্ট নিতে হবে। তোদের সাথে আমি পরে কথা বলব।”
কথাগুলো বলেই তাহাফ জায়ানকে ক্রস করে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠছে আর হিংস্র বাঘের দৃষ্টিতে তমা আর জায়ানকে দেখছে। জায়ান তাহাফকে দেখিয়ে ধপ করে তমার পাশে বসে তমাকে এক হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরল। তমা মুখটা ভয়ে কাচু মাচু করে তাহাফের দিকে আড়চোখে তাকিয়ে আছে। তাহাফ চোখের সামনে এসব সহ্য করতে না পেরে হনহনিয়ে সিঁড়ি বেয়ে সোজা ওদের ফ্ল্যাটে চলে গেলো। রুমে ঢুকেই তাহাফ দরজাটা ঠাস করে বন্ধ করে পায়ের জুতো গুলো এদিক সেদিক ছুড়ে মেরে শার্টের কলার টানতে টানতে চোখ মুখ লাল করে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে ড্রেসিং টেবিলের আয়নাটায় এক্টা ঘুষি মেরে মৃদ্যু চিৎকার দিয়ে বলল,,,,,,
—-“আমি তোকে ছাড়ব না জায়ান। তোকে এবার মেরেই ছাড়ব। সাথে তোর ভাই জাবেদকে ও মারব। সব কটাকে আমি আগুনে জ্বালিয়ে মারব। আমার মনে যতোটা আগুন জ্বলছে এর চেয়ে ও বেশি আগুনে আমি তোদের জ্বালিয়ে মারব। তমা শুধু আমার। আমি তমাকে আর কষ্ট দেবো না। তমাকে এবার নিজের করে ছাড়ব। বিয়ের দিন বরের জায়গায় আমি থাকব। আর তুই থাকবি কবরে!”
তাহাফ কথা গুলো বলছে আর রক্তমাখা হাত নিয়ে সামনের চুল গুলো টানছে। তাহাফ পুরো উন্মাদ হয়ে গেছে। ওর হাত থেকে টুপটাপ রক্ত গড়িয়ে ধবধবে ফর্সা মুখটা লাল বর্ণ ধারন করেছে। হাতের মধ্যে কয়েকটা কাঁচের টুকরো ও গেঁথে আছে। সে দিকে তাহাফের খেয়াল নেই। এই মুহূর্তে সে মও আছে প্রতিশোধের নেশায়। কখন সে প্রতিশোধ নিয়ে নিজের পাগলামীকে বাস্তব রূপ দিবে সে চিন্তায় আছে।
জায়ান আর তমা স্টোর রুমে বসে তাহাফের সব পাগলামী ল্যাপটপে দেখছে। তমা ভয়ে কাঁপছে আর চোখের জল ফেলছে। জায়ান চোয়াল শক্ত করে তাহাফের পাগলামী দেখছে। জায়ান হাত দুটো শক্ত করে চোখ দুটো বন্ধ করে নিজের রাগকে কন্ট্রোল করার চেষ্টা করছে। হঠাৎ তমার চোখ থেকে এক ফোঁটা জল গড়িয়ে জায়ানের ডান হাতে পড়ল। তৎক্ষনাত জায়ান চোখ খুলে পাশ ফিরে তমার দিকে তাকালো। তমা মুখে উড়না চেপে কান্না করছে। তমার কান্না দেখে জায়ান বেশ উদ্বিগ্ন হয়ে তমাকে বুকের সাথে চেঁপে ধরে শান্ত কন্ঠে বলল,,,,,,
—-“বোকা মেয়ে…কাঁদছিস কেনো?”
তমা হেচকি তুলে কাঁদছে আর বলছে,,,,,,,
—-“তাহাফ ভাইয়াকে এমন ভাইলেন্ট রূপে দেখতে আমার প্রচন্ড ভয় লাগছে। তার উপর জাবেদ ভাইয়া আর তোমাকে নিয়ে ও ভীষণ ভয় হচ্ছে। তাহাফ ভাইয়া যদি সত্যি সত্যি তোমাদেরর আগুনে পুড়িয়ে দেয়? তখন কি হবে জায়ান?”
জায়ান তমার মাথায় হাত বুলিয়ে শান্ত কন্ঠে বলল,,,,,,,
—-“তাহাফ আমাদের কিছু করতে পারবে না তমু। ওর হিম্মত নেই জায়ানের মুখোমুখি দাঁড়ানোর। সে যতোটা ভয়ংকর, এর চেয়ে অধিক ভয়ংকর এই জায়ান। তুই উটকো চিন্তা করিস না তমু। এবার থেকে যা হবে ভালোই হবে। আমাকে একবার বাড়ি যেতে হবে। জাবেদ ভাইয়াকে সেইফ করতে হবে। আমি ডেম সিউর তাহাফ আগে জাবেদ ভাইয়ার ক্ষতি করার চেষ্টা করবে। এরপর আমি। সো আগে জাবেদ ভাইয়াকে আমার সেইফ করতে হবে। তাছাড়া আকাশের মুখোমুখি ও হতে হবে। যতদিন যাবে ওর নোংরামো আরো বেড়ে যাবে। তাই ওকে এক্টা চরম শাস্তি দিতে হবে। আকাশের সাথে আমার বোনের জীবন জড়িয়ে আছে। আমি কিছুতেই চাই না জয়ার সদ্য বিবাহিত জীবনটা নষ্ট হয়ে যাক।”
—“তোমার সাথে আমি ও যাবো জায়ান। প্লিজ আমাকে নিয়ে চলো।”
—-“তোকে নিয়েই তো যাবো। তোকে এই হিংস্র জানোয়ারের কাছে, রেখে যাওয়ার কোনো মানেই হয় না।”
কথা গুলো বলেই জায়ান তমার হাত ধরে ধীর পায়ে হেঁটে স্টোর রুম থেকে বের হয়ে সোজা ড্রইং রুমে চলে গেলো। ড্রইং রুমটা আপাতত ফাঁকা। সবাই নিজেদের রুমে। তমার আম্মু আর মিসেস তারিন কিচেনে রান্না করছে। জায়ান আর তমা যেই না কিচেনের দিকে পা বাড়াল অমনি পিছন থেকে তাহাফ ওদের দুজনকে ডেকে বলল,,,,,,
—-“কি রে? কোথায় যাচ্ছিস তোরা?”
তমা থতমত খেয়ে জায়ানের দিকে তাকালো। জায়ান মলিন হেসে পিছু ঘুরে তাহাফের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,
—-“বাড়ি যাচ্ছি। জয়া আজ শ্বশুড় বাড়ি যাবে। তাই জয়াকে একবার দেখতে যাচ্ছি।”
তাহাফ সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে জায়ান আর তমার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বলল,,,,,,
—-“বাঃহ্ গ্রেট। আমাকে ও নিয়ে যাবি তোদের সাথে?”
জায়ান বেশ অবাক হয়ে তাহাফের দিকে তাকিয়ে আছে। তমা তো চোখ দুটো হাসের ডিমের মতো বড় বড় করে তাহাফের দিকে তাকিয়ে আছে। জায়ানের মৌনতা দেখো তাহাফ আবার গলা ঝাঁকিয়ে এক ভ্রু উঁচু করে জায়ানের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,
—-“কি রে নিবি না?”
জায়ান বেশ বুঝতে পারছে তাহাফ অলরেডি প্ল্যান করে জায়ানদের বাড়িতে যাওয়ার ওয়ে খুঁজছে। জাবেদের ক্ষতি করার জন্য। জায়ান মাথায় এক্টা শয়তানী বুদ্ধি এঁটে তমার দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,
—“তমু….আজ আর তোকে পার্লারে যেতে হবে না। চুল স্ট্রেইট করতে প্রায় তিন, চার ঘন্টা সময় তো লাগবেই। আমি না হয় তোর বর বলে এতোটা সময় ধরে অপেক্ষা করতে পারব কিন্তু তাহাফ ভাইয়া তো পারবে না। তাহাফ ভাইয়া এমনিতেই কারো জন্য পাঁচ মিনিট অপেক্ষা করা পছন্দ করে না। সেই জায়গায় তো টানা তিন থেকে চার ঘন্টা। বাপরে বাপ কি ভয়ংকর অপেক্ষা। হুট করে হয়তো অফিস থেকে তাহাফ ভাইয়ার জরুরি কল ও চলে আসতে পারে। তখন কি হবে বল তো?”
তমা বেশ বুঝতে পেরেছে জায়ানের ফন্দি। তাই তমা কাঁদো কাঁদো মুখ করে জায়ানের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,
—-“শুনো জায়ান……আমি এতো কিছু জানি না। আজ আমাকে পার্লারে যেতে হবে মানে যেতেই হবে। চুল গুলো কেমন বাঁকা তেড়া হয়ে আছে। সেই এক বছর আগে চুল স্ট্রেট করেছি। বারো মাস কি চুলে স্ট্রেট থাকে বলো?”
জায়ান এবার ঠোঁট উল্টে তাহাফের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,,
—-“দেখেছ? তমু কেমন বায়না করছে? এখন আমি কি করব বলো? তুমি চাইলে আমাদের সাথে আসতে পারো। পার্লারের সামনে না হয় আমরা দুজনই তিন, চার ঘন্টা পায়চারী করে কাটিয়ে দিবো!”
তাহাফ চোয়াল শক্ত করে মনে মনে বিড়বিড় করে বলল,,,,,,,
—-“উফফফফ…. এই মেয়েটা আর চুল স্ট্রেইট করার সময় পেলো না। খুব পাকাপোক্ত এক্টা প্ল্যান কষেছিলাম জাবেদকে মারার। মাঝখান থেকে তমুটা ভেজাল লাগিয়ে দিলো। আমার পক্ষে সম্ভব না তিন, চার ঘন্টা পার্লারের সামনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করা। আজ বরং ছেড়ে দেই। আপাতত প্ল্যানটা পেন্ডিং এ রাখলাম। কাল ঠিক প্ল্যানটাকে রূপ দিবো।”
তাহাফ গলাটা ঝাঁকিয়ে মলিন হেসে তমা আর তাহাফের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,
—-“আচ্ছা যা তোরা। আমি না হয় কাল যাবো। কাল কিন্তু অবশ্যই তোদের সাথে আমাকে নিয়ে যাবি!”
জায়ান বাঁকা হেসে বলল,,,,,,,
—-“ওকে ব্রো। কাল আর মিস হবে না।”
তমা কিছুটা ঢং করে তাহাফের ব্যান্ডেজ করা হাতের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,
—-“এমা তাহাফ ভাইয়া। তোমার হাতে এটা কিসের ব্যান্ডেজ?”
তাহাফ কিছুটা থতমত খেয়ে ওর হাতটা পিছনে লুকিয়ে জোর পূর্বক হাসি টেনে তমার দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,,
—-“শাওয়ার নিতে গিয়ে ওয়াশরুমে বেকায়দায় স্লিপ খেয়ে পড়ে যাই। তাই হাতটা খানিক কেটে গেছে। তোরা যা। তোদের হয়তো লেইট হয়ে যাচ্ছে।”
তমা বাঁকা হেসে জায়ানের দিকে তাকালো। জায়ান তমার দিকে তাকিয়ে মনে মনে বিড়বিড় করে বলল,,,,,,
—-“বাঃহ বাঃহ আমার বউ তো দেখি কাটা জায়গায় নূনের ছিটা দেওয়া শিখে গেছে।অবশ্য আমার বউ বলে কথা। ট্যালেন্টেড তো হবেই।”
জায়ান এবার ভাবনার জগত থেকে বের হয়ে পিছু ঘুরে তমার হাত ধরে কিচেন রুমে ঢুকে মিসেস আন্জ্ঞুমানকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,
—-“সাসু মা…..আমি এক্টু আমার বউকে নিয়ে ঐ বাড়ি যাচ্ছি। ফিরতে হয়তো রাত হবে। আপনারা টেনশান করবেন না।”
মিসেস আন্জ্ঞুমানন মুখটা কালো করে জায়ান আর তমার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বলল,,,,,,
—-“আজ না গেলে হয় না? কোথায় ভাবলাম সবাই এক সাথে বসে লাঞ্চ করব। হৈ, হুল্লোড় করব। মাঝ খান থেকে তোমরা ঐ বাড়িতে চলে যাচ্ছ।”
—-“আমাদের খাবারটা তুলে রাখবেন সাসু মা। রাতে এসে সবাই এক সাথে খাবো।”
মিসেস আন্জ্ঞুমান এক গাল হেসে বলল,,,,,,,
—-“ওকে বাবা তাই হবে।”
জায়ান আর তমা মিসেস আন্জ্ঞুমানের থেকে বিদায় নিয়ে গার্ডেনে পার্ক করা গাড়িতে বসে জায়ানের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলো। তাহাফ কিছুক্ষন আগেই ওর গাড়ি নিয়ে অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে।
প্রায় আধ ঘন্টা পর,,,,,,,
জায়ান আর তমা জায়ানের বাড়িতে এসে পৌঁছে গেছে। বাড়ির গার্ডেনে গাড়িটা পার্ক করে জায়ান তমার হাত ধরে গাড়ি থেকে নেমে সোজা বাড়ির ভিতর ঢুকে গেলো। জায়ানের আম্মু, আব্বু ড্রইং রুমে বসে কথা বলছিলো। জায়ান আর তমাকে দেখা মাএই উনারা বসা থেকে উঠে মৃদ্যু হেসে বলল,,,,,,
—-“আমি জানতাম তোরা আসবি। জয়ার আজ বিদায়, তোরা নিশ্চয়ই জয়াকে দেখতে আসবি।”
তমা মুচকি হেসে জায়ানের আম্মুকে জড়িয়ে ধরে বলল,,,,,,
—-“তুমি তো আমাদের মা। মা রা তো সবসময় সন্তানদের মনে বিরাজ করে। সন্তানদের সমস্ত মনেরর কথা মা রা আগে থেকেই জেনে যায়। যাকে বলে দিব্য দৃষ্টি।”
জায়ানের আম্মু তমার গাল টেনে বলল,,,,,
—-“ওলে বাবা লে….কতো বুঝে আমার মেয়েটা!”
এসব কথার মাঝেই জায়ান হুট করে কিছুটা সিরিয়াস হয়ে ওর আম্মুকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,,,
—–“আম্মু…..জাবেদ ভাইয়া কোথায়?”
—-“জাবেদ তো রুমে। ল্যাপটপ নিয়ে ঘাটাঘাটি করছে!”
জায়ান এক মুহূর্ত ও দেরি না করে সিঁড়ি বেয়ে সোজা উপরে উঠে জাবেদের দরজার সামনে দাঁড়াল। জাবেদ দরজাটা ভেতর থেকে লাগিয়ে বেডে বসে খুব মনযোগ দিয়ে অফিসের কাজ করছে। জায়ান দরজা ধাক্কিয়ে জোরে চেঁচিয়ে বলল,,,,,,,,
—-“ভাইয়া দরজাটা খোল। আমি জায়ান।”
জাবেদ চোখ,মুখ লাল করে ল্যাপ্টপ টা অফ করে বলল,,,,,,,
—-“বিজি আছি এখন। দরজা খুলতে পারব না। অফিসের ইম্পরটেন্ট মিটিং এ আছি। সো লিভ মি এলোন।”
—“মিটিং এর চেয়ে ও ইম্পরটেন্ট দরকার আছে তোর সাথে। সো প্লিজ দরজাটা খোল।”
—-“জায়ান প্লিজ যা তো। বিরক্ত লাগছে।”
#হয়তো_তোরই_জন্য
#পার্ট_১৯
#নিশাত_জাহান_নিশি
—-“জায়ান প্লিজ যা তো। বিরক্ত লাগছে।”
—-“ভাইয়া প্লিজ বুঝার চেষ্টা কর। সামনে আমাদের অনেক বিপদ।”
কথাটা শুনে জাবেদের কেমন ঘটকা লাগল। তাই সে বসা থেকে উঠে দৌঁড়ে গিয়ে রুমের দরজাটা খুলে দিলো। জায়ান ধরফরিয়ে রুমে ঢুকে রুমের দরজাটা আটকে জাবেদকে নিয়ে সোজা বেডে বসে পড়ল। জাবেদ কপাল কুঁচকে বলল,,,,,
—-“এসব কোন ধরনের পাগলামী জায়ান। এভাবে টানা হেছড়া করার মানে কি?”
—“ভাইয়া তোর সাথে আমার খুব ইম্পরটেন্ট কথা আছে। খুব সাবধানে আর একান্তে কথা গুলো বলতে হবে। তাই এভাবে টানা হেছড়া করছি।”
জাবেদ ভ্রু কুচকে বলল,,,,,
—-“কি ইম্পরটেন্ট কথা? যা বলার তাড়াতাড়ি বল।”
জায়ান কিছুটা সিরিয়াস হয়ে বলল,,,,,
—“তাহাফ ভাইয়া আমাদের পিছনে লেগে আছে। তোর আর আমার জীবন হুমকির মধ্যে আছে।”
জাবেদ কিছুটা রেগে বলল,,,,,
—-“হোয়াট রাভিস! যতো সব আউল ফাউল কথা।”
—-“আমি সত্যি বলছি ভাইয়া। প্লিজ আমার কথা বিশ্বাস কর।”
—“তাহাফ খামোখা আমাদের ক্ষতি করবে কেনো?”
—-“এর অনেক গুলো কারণ আছে। প্রথমত, তুই আর আমি তমাকে ভালোবাসি। দ্বিতীয়ত, তাহাফ ভাইয়া তমাকে বিয়ে করতে চায়। কজ উনি তমাকে ভালোবাসে। উনি চায় না তমা আর উনার মাঝে আমরা কেউ আসি। তাই উনি প্ল্যান করে রেখেছে আমাদের ক্ষতি করার। শুধু ক্ষতি কেনো বলছি আমাদের মারার ফুলপ্রুভ প্ল্যান করেছে।”
জাবেদ চরম অবাক হয়ে জায়ানের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,
—-“হোয়াট? তাহাফ তমাকে ভালোবাসে? কখনো তো শুনি নি!”
—“হুম ভাইয়া। তোর আগে থেকে তাহাফ ভাইয়া তমাকে ভালোবাসে। তাছাড়া ঐদিন তাহাফ ভাইয়ার দল বল ই তোকে আর আকাশকে ছাদের পিলারের সাথে বেঁধেছিলো।”
জাবেদ মাথায় হাত দিয়ে বেশ চিন্তিত হয়ে বলল,,,,,,
—-“কি বলছিস এসব তুই? তাহাফ এতোটা জঘন্য?”
—-“হুম ভাইয়া খুব জঘন্য। তাই তাহাফ ভাইয়া থেকে আমাদের যথেষ্ট দূরে দূরে থাকতে হবে। তাহাফ ভাইয়া আমাদের মারার প্ল্যানিং করেছে। আপাতত কিছুটা দিন তোকে এক্টা সেইফ জায়গায় থাকতে হবে। তাহাফের কাহিনী খতম করে এরপর আমি তোকে ডেকে নেবো।”
জাবেদ কিছুটা চিন্তিত হয়ে বলল,,,,,
—-“তোর কি হবে? তাহাফ তো তোকে ও মারতে চাইছে!”
—“তোকে আমার কথা ভাবতে হবে না। আমি লুকিয়ে পড়লে তাহাফ হয়তো বুঝে যাবে আমি ওর প্ল্যানিং ধরে ফেলেছি। তাই আমাকে প্রকাশ্যে থাকতে হবে। আমাকে সামনে থেকেই তাহাফের মোকাবিলা করতে হবে!”
—-“বেশি রিস্ক হয়ে যাচ্ছে না?”
—“রিস্ক নিয়েই তো জীবন। রিস্ক না থাকলে জীবনটা তেমন জমে না। কেমন একঘুয়ে লাগে।”
জাবেদ জায়ানের কাঁধে হাত রেখে বলল,,,,,
—-“আমি ও তোর পাশে থাকতে চাই জায়ান।”
—-” না ভাইয়া এতে তোর লাইফ রিস্ক থাকতে পারে।”
জাবেদ মলিন হেসে বলল,,,,,,,,
—-“থাকুক। রিস্ক নিয়েই তো জীবন।”
জায়ান জাবেদের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে জাবেদকে জড়িয়ে ধরল। জাবেদ চোখ দুটো বন্ধ করে জায়ানকে টাইট করে জড়িয়ে ধরে বলল,,,,,,,
—-“আ’ম স্যরি জায়ান। এতোটা বছর ধরে তোর সাথে খারাপ ব্যবহার করার জন্য। একচুয়েলি, আমি তমাকে খুব ভালোবাসি তো, তাই নিজের অজান্তেই সব কেমন উল্টো পাল্টা হয়ে যায়। তোর সাথে তমাকে দেখলে ভীষণ মন খারাপ হয়। কেমন জেদ জেদ লাগে। তাই রাগের বসে তোর সাথে খারাপ ব্যবহার করে ফেলি। উল্টো পাল্টা কাজ করে বসি। প্লিজ আমাকে মাফ করে দে জায়ান। নেক্সট টাইম এই ভুল গুলো হবে না। নিজেকে যথেষ্ট কন্ট্রোল করার চেষ্টা করব। তোদের দেখে হাসি, খুশি থাকার চেষ্টা করব। আগের সব ভুলের জন্য আমাকে মাফ করে দে জায়ান।”
জায়ান মলিন হেসে বলল,,,,,,,,
—-“আগে যা হয়েছে ভুলে যা। এসব মনে রেখে লাভ নেই। তুই এতো বছর যা করেছিস একদম ঠিক করেছিস। তোর জায়গায় আমি থাকলে হয়তো এর চেয়ে বেশি করতাম। এখন এসব কথা বাদ দে। সামনে কি করতে হবে আমরা বরং তা নিয়ে ভাবি।”
—-“একদম ঠিক বলেছিস। আমাদের এক্টা পাকাপোক্ত প্ল্যান করতে হবে। তাহাফকে হাতে নাতে ধরতে হবে।”
—-“হুম। যা করতে হবে তাহাফদের বাড়িতে থেকে করতে হবে। তাহলে প্রমান সহ তাহাফকে ধরতে পারব।”
—-“প্রমান সহ ধরতে পারব মানে?”
—-“তাহাফদের পুরো বাড়ি সিসি ক্যামেরা ফিট করা হয়েছে। তাহাফ যাই করবে তাই প্রমাণ স্বরূপ সিসি ক্যামেরায় গেঁথে যাবে।”
জাবেদ জায়ানকে ছেড়ে মলিন হেসে বলল,,,,,
—-“বাঃহ ভালো আইডিয়া তো। তাহলে চল এবার আমরা প্ল্যানিং সাজাই তাহাফকে জব্দ করার।”
—-“তাহাফকে জব্দ করতে হলে আগে আমাকে বিয়ের পিড়িতে বসতে হবে। আমাদের বিয়ের দিনই তাহাফ ওর ভয়ংকর চাল চালবে। সেই অব্দি তোকে গা ঢাকা দিয়ে থাকতে হবে। তুই দূরে দূরে থেকে আমার সাথে কানেক্টেড থাকবি। বিয়ের দিন এসে আমার সাথে জয়েন করবি।”
—-“তাহলে তো বিয়েটা এই সপ্তাহের মধ্যেই করতে হবে। যতো দিন বাড়বে তাহাফ ততো ভয়ংকর হয়ে উঠবে।”
—-“ঠিক বলেছিস। আমি ও তাই ভাবছি। আজই আম্মু, আব্বুর সাথে কথা বলে সামনের সপ্তাহে বিয়ের ডেইট ফিক্সড করে নিবো। এই এক সপ্তাহ তোকে দূরে দূরে থাকতে হবে। আজ রাতেই তোকে গা ঢাকা দিতে হবে। তুই কোথায় আছিস এই ব্যাপারে যেনো কেউ কিছু না জানে। এমনকি আমাদের ফ্যামিলির মেম্বাররা ও না। তাহাফ যদি কোনো রকমে জানতে পারে তুই কোথায় আছিস। তাহলে তোর ক্ষতি করার চেষ্টা করবে।”
—-“ওকে….তুই যা বলবি তাই হবে। তাহলে আজ রাতেই আমি বরিশাল চলে যাবো। ইরফানের বাড়িতে।”
—-“হুম তাই কর। তুই বরং ব্যাগ প্যাক করে নে। আমি আসছি।”
কথাটা বলেই জায়ান রুম থেকে বের হয়ে সোজা জয়ার রুমের দরজার সামনে দাঁড়াল। দরজাটা ভেতর থেকে লক করা। জায়ান দরজা ধাক্কিয়ে চেঁচিয়ে বলল,,,,,,,
—-“জয়া দরজা খোল। আমি তোর জায়ান ভাইয়া।”
জায়ানের গলার স্বর পেয়ে জয়া কান্না থামিয়ে আকাশকে ওর উপর থেকে ধাক্কা মেরে সোজা দরজাটা খুলে জায়ানের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ল। আকাশ মুহূর্তেই ওর রাগী ভাবটা ভুলে মুখে মৃদ্যু হাসি ঝুলিয়ে জয়ার পিছু পিছু রুম থেকে বের হয়ে গেলো। জয়া জায়ানের বুকে মাথা রেখে অঝড়ে কাঁদছে আর নাকের জল মুচছে। জায়ান বেশ বুঝতে পেরেছে আকাশ আর জয়ার মধ্যে কিছু না কিছু হয়েছে। আকাশে জোর পূর্বক হাসি টেনে জায়ানের কাঁধে হাত রেখে বলল,,,,,
—-“দেখছিস তোর পাগলী বোনটা সেই কখন থেকে কান্না করেই যাচ্ছে। তোদের ছেড়ে যেতে নাকি ওর খুব কষ্ট হচ্ছে। কিছুতেই ওকে বুঝাতে পারছি না কাল বাদে পরশু তো আমরা এই বাড়িতে আসবই। সপ্তাহে দুই দিন করে আমরা এই বাড়িতে থেকে যাবো। কিন্তু কিছুতেই সে বুঝতে, চাইছে না। কি জয়া ঠিক বলছি তো?” (জয়ার দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে)
জয়া এক্টা শুকনো ঢোক গিলে মাথা নাঁড়িয়ে হ্যাঁ বুঝালো। জায়ান বাঁকা হেসে আকাশকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,
—“আকাশ চল। এক্টু বাইরে থেকে ঘুরে আসি। তোর সাথে আমার কিছু ইম্পরটেন্ট কথা আছে।”
আকাশ ক্লোজ হাসি দিয়ে বলল,,,,,
—“চল চল ঘুরে আসি। তোর ইমপরটেন্ট কথাটা ও শুনে আসি।”
জায়ান ডেবিল স্মাইল দিয়ে জয়াকে ওর বুক থেকে উঠিয়ে আকাশের হাত ধরে বাড়ির বাইরে চলে গেলো। জয়া রুমে ঢুকে রুমের দরজা আটকিয়ে অঝড়ে কাঁদছে আর বলছে,,,,,,,,
—-“আমি ঠকে গেলাম জায়ান ভাইয়া। আকাশের ছলনার কাছে আমি ঠকে গেলাম। আকাশ আমাকে ঠকিয়েছে। আকাশ গোপনে আরো অনেক মেয়ের সাথে কথা বলে। আমি হাতে নাতে আকাশকে দেখেছি। এমনকি তমার অশ্লীল ছবি ও আমি আকাশের ফোনে দেখেছি। আকাশ তমাকে ও ঠকিয়েছে। আকাশ আমাকে ব্ল্যাকমেইল করে মুখ বন্ধ করে রেখেছে। তমার ছবি ভাইরাল হওয়ার ভয়ে আমি মুখ খুলছি না। আমি চাই না আমার এক্টা ভুলের জন্য তমার চরিএে দাগ লাগুক। তাই মুখ বুজে সব সহ্য করে নিচ্ছি।”
কথাগুলো বলেই জয়া ধপ করে বিছানায় বসে শাড়ি আঁকড়ে কাঁদতে লাগল। জায়ান বাড়ি থেকে বের হয়ে আকাশকে নিয়ে সোজা গাড়িতে উঠে গেলো। প্রায় বিশ মিনিট পর জায়ান এক্টা নিরিবিলি জায়গায় গাড়ি থামালো। জায়গাটা খুব শুনশান। শুধু এক্টা গুদাম ঘর দেখা যাচ্ছে। জায়ান আকাশকে নিয়ে গাড়ি থেকে নেমে সোজা গুদাম ঘরটায় ঢুকে গেলো। আকাশ বেশ অবাক হয়ে জায়ানের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,,
—-“এই কোথায় এলাম আমরা? এটা কোনো ঘুরার জায়গা হলো?”
হুট করে জায়ান এক্টা টুল টেনে আকাশকে হেচকা টান দিয়ে টুলটাতে বসিয়ে এক্টা দঁড়ি দিয়ে আকাশের হাত, পা বেঁধে দিলো। আকাশ বেশ ভয় পেয়ে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে জায়ানের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,,,,
—-“কিকিকিকি করছিস এসব তুই? আআআমাকে এভাবে বাঁধলি কেনো?”
জায়ান চোয়াল করে এক্টা কাঠের গুঁড়ি নিয়ে আকাশকে এলোপাথারি মারছে আর চিৎকার করে বলছে,,,,,,
—-“আমার বোনকে কষ্ট দেওয়া তাই না? আমার তমুর সাথে ফস্টি নস্টি করা তাই না? আমার বন্ধুত্বের সুযোগ নেওয়া তাই না? সব কিছুর উসুল আমি নিয়েই ছাড়ব। তোকে মারতে মারতে আজ আধমরা করে ছাড়ব।”
আকাশ জোরে জোরে কাঁদছে আর বলছে,,,,,,,
—-“প্লিজ জায়ান আর মারিস না। আমি খুব ব্যাথা পাচ্ছি। হাত, পা ভেঙ্গে যাবে আমার। আমার যদি কিছু হয়ে যায় তোর বোন কিন্তু বাঁচবে না। বাঁচলে ও বিধবা হয়ে বাঁচবে। বোনকে বিধবা সাজে দেখে সহ্য পারবি তো?”
জায়ান মার ধরের পরিমাণ আরো বাড়িয়ে দিয়ে জোরে চেঁচিয়ে বলছে,,,,,,,
—-“আমাকে ভয় দেখাচ্ছিস তাই না? এই জায়ানকে ভয় দেখাচ্ছিস? তাহলে শুন….তোর কিছু হয়ে গেলে আমার বোনের কিছু আসবে যাবে না। অন্য কোথাও আমি আমার বোনকে বিয়ে দিবো। তোর থেকে ডবল ভালো ছেলের সাথে আমি আমার বোনকে বিয়ে দিবো। তোর মতো ক্যারেক্টার লেস ছেলে আমার বোনের যোগ্য না। তুই ওর জীবনে না থাকলে ওর কিচ্চু হবে না।”
—-“প্লিজ আমাকে মাফ করে দে জায়ান। আমার ভুল হয়ে গেছে। আর জীবনে ও এমন ভুল করব না। প্লিজ আমাকে ছেড়ে দে।”
জায়ান আকাশকে মারতে মারতে রক্তাক্ত করে ফেলেছে। আকাশের জীবন এখন প্রায় যায় যায় অবস্থা। জায়ান কিছুটা ক্লান্ত হয়ে মার থামিয়ে দিকে আকাশের থুতনী চেঁপে ধরে তেজী কন্ঠে বলল,,,,,,,
—-“বল তোর গার্লফ্রেন্ড কয়জন? বিয়ের পরে ও কার কারর সাথে কনটিনিউ করছিস?”
আকাশ চোখ জোড়া আধ খোলা করে ঢুলতে ঢুলতে বলল,,,,,,,
—-“দুদুদুই জনের সাথে কনটিনিউ করছি।”
—-“ওরা কি জানে না তুই বিবাহিত?”
—-“না।”
—-“কেনো জানাস নি?”
—-“জানালে ওরা আমাকে ছেড়ে দিতো।”
—-“তমুর সাথে কেনো প্রেমের অভিনয় করলি?”
—“তমাকে আমার ভালো লাগত তাই!”
—-“তমু আমার বউ..তা জানা সও্বে ও তুই কেনো আমার তমুকে প্রেমের জালে ফাসালি? আমার তো মনে হচ্ছে কেউ তোকে স্যাল্টার দিয়েছে।”
—-“কেউ সেল্টার দেয় নি আমাকে। তমাকে আমার ভালো লাগত তাই তমার সাথে প্রেমের অভিনয় করেছি।”
—-“খারাপ কিছু করিস নি তো তমুর সাথে?”
—-“চান্স ই তো পাই নি। তবে তমার কিছু অশ্লীল ছবি আমার কাছে আছে। তুই চাইলে এখনি ডিলেট করে দিতে পারিস। ফোনটা আমার পকেটে।”
জায়ান আর এক মুহূর্ত দেরি না করে আকাশের পকেট থেকে ফোনটা নিয়ে গ্যালারি অপশনে ঢুকে চোখ বন্ধ করে তমার অশ্লীল ছবি গুলো ডিলেট করে দিলো। আকাশ ব্যাথায় ছটফট করছে আর চিৎকার করে বলছে,,,,,,,,
—-“প্লিজ জায়ান এবার তো আমাকে ছাড়। শেষ বারের মতো আমাকে মাফ করে দে। আমি কথা দিচ্ছি আর কখনো এমন নোংরামো করব না। নিজের ক্যারেক্টার শুধরে নিবো। জয়াকে আর কষ্ট দিবো না। জয়াকে ভালোবেসে আগলে রাখব। প্লিজ আমায় বিশ্বাস কর। আমি তোর কাছে হাত জোর করছি।”
জায়ান চোয়াল শক্ত করে আকাশের সামনের চুল গুলো মুঠ করে ধরে বলল,,,,,,
—-“এতোক্ষন যা যা বলেছিস সব মনে থাকবে তো?”
—“হুম জায়ান মনে থাকবে। পারলে তুই রেকর্ড ও করে নিতে পারিস। আমি এতোদিন খুব পাপ করেছি। অন্যায় করেছি। এই পর্যায়ে এসে আমি আমার ভুলটা বুঝতে পারছি। আমি খুব লজ্জিত জায়ান। প্লিজ আমাকে এক্টা বার সুযোগ দে। আমি আমার ভুল শুধরাতে চাই।”
জায়ান আকাশের চুল গুলো ছেড়ে নিজেকে খানিক শান্ত করে বলল,,,,,
—-“এইবারের মতো তোকে ছাড় দিলাম। পরের বার আর ছাড় দেওয়া হবে না। সোজা কবরে দাফন করা হবে। আশা করি তুই তোর কথা রাখবি। আমার বোনকে নিয়ে হাসি খুশি থাকার চেষ্টা করবি।”
আচমকাই আকাশ গোঙ্গাতে গোঙ্গাতে চোখ দুটো বন্ধ করে ফেলল। ব্যাথায়, যন্ত্রনায় টিকতে না পেরে আকাশ সেন্সলেস হয়ে গেছে। জায়ান আর দেরি না করে আকাশকে টেনে হেছড়ে গুদাম থেকে বের করে সোজা গাড়িতে নিয়ে বসিয়ে দিলো। জায়ান এক হাত দিয়ে ড্রাইভ করছে আর অন্য হাত দিয়ে আকাশকে ধরে রেখেছে। জায়ানের উদ্দেশ্য হলো হসপিটাল যাওয়া। আকাশের ট্রিটমেন্ট করা।
প্রায় বিশ মিনিট পর জায়ান ইলোরা হসপিটালের সামনে এসে গাড়ি সাইড করল। জায়ান আকাশকে নিয়ে গাড়ি থেকে নেমে সোজা হসপিটালে ঢুকে গেলো। ডক্টরের কেবিনে যাওয়ার সাথে সাথেই ডক্টররা আকাশের ট্রিটমেন্ট শুরু করল। হাত, পা এক্সরে করার পর জানা গেলো আকাশের বামটা হাতের কব্জিটা খানিক ভেঙ্গে গেছে। প্লাস্টার করা হয়েছে হাতে। প্রায় দুই ঘন্টা ট্রিটমেন্টের পর মেডিসিন আর এক্সরে রিপোর্ট নিয়ে জায়ান আকাশকে নিয়ে বাড়িতে ফিরল।
ঘড়িতে দুপুর দুইটা। জায়ান আকাশকে নিয়ে বাড়ির ড্রইং রুমে পা রাখল। আকাশের কপালে ব্যান্ডেজ আর হাতের প্লাস্টার দেখে ড্রইং রুমে উপস্থিত জায়ানের আম্মু, আব্বু, জাবেদ, জয়া, তমা সবাই খুব ঘোরতোড় ঝটকা খেলো।
জয়া উদ্বিগ্ন হয়ে দৌঁড়ে গিয়ে আকাশের প্লাস্টার করা হাতটার দিকে তাকিয়ে বলল,,,,
—–“তোতোতোমার হাতে প্লাস্টার কেনো আকাশ? কিকিকি হয়েছে তোমার?”
আকাশ শান্ত চোখে জয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। জয়ার চোখে পানি টলমল করছে। জায়ান জয়ার দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,,,,,,,,
—-“আকাশের এক্টা ছোট্ট এক্সিডেন্ট হয়েছে জয়া। রাস্তা পাড় হতে গিয়ে এমনটা হয়েছে।”
আকাশ অবলার মেয়েদের মতো মুখ করে জায়ানের দিকে তাকিয়ে আছে। জয়ার আস্মু, আব্বু দৌঁড়ে এসে আকাশের সামনে দাঁড়িয়ে হায় হুতাশ করতে লাগল। জাবেদ ও বেশ পেরেশান হয়ে আকাশকে দেখছে। তমা দূর থেকে দাঁড়িয়ে হু হা করে হাসছে। সে ঠিক বুঝতে পেরেছে এসব জায়ানের চালাকী।
জায়ান বাঁকা হাসি দিয়ে তমার দিকে তাকিয়ে আছে। তমা হুট করে জায়ানকে চোখ মেরে দিলো। জায়ান চোখ দুটো বড় বড় করে তমার দিকে তাকিয়ে আছে।
#চলবে……….
#চলবে……….