হয়তো তোরই জন্য পর্ব ২০

#হয়তো_তোরই_জন্য
#পার্ট_২০
#নিশাত_জাহান_নিশি

জায়ান বাঁকা হাসি দিয়ে তমার দিকে তাকিয়ে আছে। তমা হুট করে জায়ানকে চোখ মেরে দিলো। জায়ান চোখ দুটো বড় বড় করে তমার দিকে তাকিয়ে আছে।

জায়ানের এমন অবাক চাহনী দেখে তমা মুখে হাত দিয়ে খিলখিল করে হেসে দিলো। বাড়ির সবাই কিছুটা অবাক হয়ে পিছনে ঘুরে তমার দিকে তাকালো। তমা তাড়াতাড়ি হাসি থামিয়ে মাথাটা নিচু করে ফেলল। জায়ান মাথা চুলকিয়ে তমাকে নিয়ে সোজা সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে গেলো। তমা রুমে ঢুকে হু হা করে হাসছে আর বেডের উপর গড়াগড়ি খাচ্ছে। জায়ান দরজা আটকে তমার পাশে বসে মুগ্ধ নয়নে তমার হাসি দেখছে। এক পর্যায়ে তমা হাসি থামিয়ে জায়ানের দিকে তাকাল। জায়ানের এমন অদ্ভুত চাহনী দেখে তমা মাথাটা নিচু করে ফেলল। জায়ান বাঁকা হেসে তমাকে হেচকা টান দিয়ে ওর বুকের সাথে মিশিয়ে নিলো। তমা জায়ানের শার্ট আঁকড়ে ধরল। জায়ান তমার মাথায় বিলি কেটে শান্ত কন্ঠে বলল,,,,,,,

—-“তমু তোর সাথে আমার কিছু কথা ছিলো!”

তমা শান্ত স্বরে বলল,,,,,,

—-“পারমিশন নেওয়ার কি আছে? বলে ফেলো!”

—“আমি চাইছি আগামী সপ্তাহে আমাদের বিয়ের ডেইট টা ফিক্সড করে নিতে।”

তমা জায়ানের বুক থেকে মাথা উঠিয়ে অবাক দৃষ্টিতে জায়ানের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,

—-“এতো তাড়া কিসের জায়ান ভাইয়া? আগে তাহাফ ভাইয়াকে শায়েস্তা করে নাও এরপর বিয়ে। আমি চাই না বিয়ের পরে তাহাফ ভাইয়াকে নিয়ে আমাদের সংসারে কোনো অশান্তি হোক।”

—-“বিয়ের দিনই তাহাফের স্টোরি খতম করতে হবে। তাই তাড়াহুড়ো করে বিয়ের ডেইট টা আগামী সপ্তাহেই ফিক্সড করা হচ্ছে। বিয়ের পর তাহাফ আমাদের সংসারে কোনো রকম অশান্তি করতে পারবে না তমু। তুই নিশ্চিন্তে থাকতে পারিস।”

তমা যেই না হা করে কিছু বলতে যাবে এর আগেই দরজায় কড়া নড়ল। তমা মুখটা বন্ধ করে রুমের দরজা খুলে দিলো। জায়ানের আম্মু রুমে ঢুকে মলিন হেসে তমা আর জায়ানকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,

—-“নিচে খেতে চল। খাবার টেবিলে সবাই ওয়েট করছে।”

জায়ান আর তমা মাথা নাঁড়িয়ে হ্যাঁ বুঝালো। হুট করে জায়ানের আম্মু কিছুটা সন্দেহের দৃষ্টিতে জায়ানের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,,

—-“আকাশ কি সত্যি সত্যি এক্সিডেন্ট করেছে জায়ান?”

জায়ান কিছুটা থতমত খেয়ে জোর পূর্বক হাসি টেনে বলল,,,,,,

—-“হুম। ঐ সময় তো বললাম ই!”

—-“কেনো জানি আমার বিশ্বাস হচ্ছে না।”

জায়ান ভ্রু কুচকে বলল,,,,,

—-“বিশ্বাস না হওয়ার এক্টা কারণ দেখাও?”

—-“তোর ভাব ভঙ্গি। তোর ভাব ভঙ্গি দেখে মনে হচ্ছে তুই আমাদের থেকে কিছু লুকাচ্ছিস। এমন এক্টা কষ্টের মুহূর্তে তমার খিলখিল হাসি। সব মিলিয়ে আমার খুব সন্দেহ হচ্ছে। তুই আর তমা কি লুকাচ্ছিস আমাদের থেকে বল?”

জায়ান আর তমা দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে শুকনো ঢোক গিলে জায়ানের আম্মুর দিকে তাকিয়ে কিছুটা চেঁচিয়ে বলল,,,,,,,,,

—-“আমরা কিছু লুকাচ্ছি না আম্মু। তোমার কোথাও ভুল হচ্ছে।”

জায়ানের আম্মু কানে হাত দিয়ে নাক মুখ কুচকে মৃদ্যু চিৎকার দিয়ে বলল,,,,,,

—-“উফফফ….আমি বয়রা না। ক্লিয়ারলি সব শুনি। এভাবে চেঁচানোর কি আছে?”

জায়ান আর তমা হু হা করে হেসে জায়ানের জড়িয়ে ধরে আহ্লাদী কন্ঠে বলল,,,,,,,

—-“মজা করেছি আম্মু। প্লিজ মাফ করে দাও।”

জায়ানের আম্মু এক গাল হেসে জায়ান আর তমার পিঠে চাপড় মেরে বলল,,,,,

—-“ছেলে, মেয়ে দুইটাই দুষ্টু। চল চল নিচে চল। তাড়াতাড়ি খেয়ে দেয়ে আকাশ আর তমাকে বিদায় দিতে হবে। আকাশের হাত ভাঙ্গার খবরটা শুনে আকাশের আম্মু কেঁদে কেটে হয়রান। জলদি ওকে পার্সেল করতে হবে। ওর আম্মু নাকি নিজের হাতে ছেলের সেবা করবে।”

তমা আর জায়ান দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে ডেবিল স্মাইল দিয়ে মিসেস ফারহানার হাত ধরে রুম থেকে বের হয়ে সোজা নিচতলায় নেমে ডাইনিং টেবিলে বসে গেলো। পরিবারের সবাই ডাইনিং টেবিলে উপস্থিত। শুধু আকাশ আর জয়া ছাড়া। জয়া প্লেইটে খাবার বেড়ে আকাশের রুমে চলে গেছে। দুজন একসাথে খাবে বলে।

মিসেস ফারহানা সবার প্লেইটে খাবার বেড়ে দিচ্ছে। খাবার বাড়া শেষে সবাই সবার মতো করে প্লেইট নিয়ে খাওয়া শুরু করল। এর মাঝেই জায়ান গলা ঝাঁকিয়ে সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,,

—-“তোমাদের সাথে আমার কিছু ইম্পরটেন্ট কথা আছে। তোমাদের সবার সায় থাকলে আমি কি শুরু করব?”

জায়ানের আব্বু ভাতের লোকমা মুখে পুড়ে জায়ানের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,

—-“বলে ফেল তোর ইম্পরটেন্ট কথা। আমরা শুনছি।”

জাবেদ আর তমা বেশ বুঝতে পেরেছে জায়ান কি বলতে চাইছে। তমা মাথাটা নিচু করে খেয়ে যাচ্ছে। জাবেদ মুখে খাবার পুড়ে জায়ানের দিকে তাকিয়ে আছে। জায়ান মুখে থাকা ভাত গুলো গিলে গলাটা খানিক ঝাঁকিয়ে বলল,,,,,,,

—-“আমি তমাকে আগামী সপ্তাহেই বিয়ে করতে চাই। বিয়েটা আমি ঐ বাড়িতে থেকেই করব।”

জায়ানের আম্মু, আব্বু অবাক হয়ে দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে আছে। ওরা ভাবতে পারে নি জায়ান এতো তাড়াতাড়ি বিয়ের অনুষ্ঠানটা সেরে ফেলতে চাইবে। জায়ান উওরের অপেক্ষায় ওর আম্মু, আব্বুর দিকে তাকিয়ে আছে। জায়ানের আব্বু গলাটা ঝাঁকিয়ে জায়ানের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,,,

—-“এতো জলদি কিসের বাবা? আগামী মাসের প্রথম দিকে বিয়ের ডেইট টা ফিক্সড করলে মন্দ হয় না। তাহলে আমরা খুব ভালোভাবে প্রস্তুতি নিয়ে তোমার বিয়েটা জাকজমক ভাবে সেলিব্রেট করতে পারব।”

—-“স্যরি আব্বু। আমার হাতে অতো সময় নেই। বিয়েটা আমাকে আগামী সপ্তাহেই করতে হবে। ইট’স আর্জেন্ট। প্লিজ তোমরা আমার কথায় মাইন্ড করো না। আমি সবদিক ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্তটা নিয়েছি। তোমরা আজকেই তমার ফ্যামিলির সাথে কথা বলে সামনের সপ্তাহে বিয়ের ডেইট টা ফিক্সড করে নাও। এতে সবার ই মঙ্গল হবে।”

জায়ানের সাথে সাথে জাবেদ ও তাল মিলিয়ে বলল,,,,,,,

—-“আমার ও মনে হচ্ছে জায়ানের সিদ্ধান্তটা মেনে নেওয়া উচিত। জায়ান হয়তো ভালো মন্দ ভেবেই সিদ্ধান্তটা নিয়েছে।”

জায়ানের আম্মু, আব্বু দুজন দুজনের দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে মৃদ্যু হেসে জায়ানকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,,

—-“ওকে আমরা রাজি। তোদের যেভাবে সুবিধে হয়। আজই আমরা তমার ফ্যামিলির সাথে কথা বলে বিয়ের ডেইটটা ফিক্সড করে নিবো।”

জায়ান মৃদ্যু হেসে ওর আম্মু, আব্বুর দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,,

—-“তোমাদের অনেক গুলো ধন্যবাদ। আমি ভাবতে পারি নি তোমরা এতো সহজে সবটা মেনে নিবে।”

বিনিময়ে জায়ানের আম্মু, আব্বু মুচকি হেসে খাওয়ার দিকে মনযোগ দিলো। তমা মাথাটা এখনো নিচু করে রেখেছে। লজ্জায় ওর মাথা কাটা যাচ্ছে। জায়ান মুখে খাবার পুড়ছে আর তমার দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে হাসছে। জাবেদ খাবার শেষ করে হাত ওয়াশ করে সোজা রুমে চলে গেলো। প্রায় পনেরো মিনিট পর জায়ান আর তমা ও খাবার শেষ করে নিজেদের রুমে চলে গেলো।

বিকেল পাঁচটা,,,,,,,,

আকাশ আর জয়ার বিদায়ের ক্ষন ঘনিয়ে এসেছে। জয়া গাড়িতে উঠছে আর ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কাঁদছে। আকাশ অলরেডি গাড়ির ব্যাক সিটে বসে আছে। আকাশ এখনো ভয়ে চুপসে আছে। জায়ানের ভয় এখনো ওর মন থেকে কাটে নি। হাত ভেঙ্গে যাওয়ার কারণে সে গাড়ি ড্রাইভ করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে। তাই ব্যাক সিটে বসে আছে। ড্রাইভার ওদের বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে দিবে।

জয়ার আম্মু জয়াকে ধরে অঝড়ে কেঁদে যাচ্ছে। কিছুতেই মেয়েকে ছাড়ছে না। জয়া ও মিসেস ফারহানাকে ছাড়ছে না। তমা ও চোখের জল ছাড়ছে। জায়ানের আব্বু আর জায়ান কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে মুখটা বিষন্ন করে রেখেছে। মিসেস ফারহানা নিজেকে কিছুটা শান্ত করে জয়াকে ছেড়ে জয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,,,,,,

—-“নিজের যত্ন নিস মা। সবসময় জামাইয়ের আশে পাশে থাকবি। শ্বশুড়, শ্বাশুড়ির যত্ন নিবি। ওরা যা যা বলবে তাই শুনবি। খাওয়া, দাওয়া ঠিক করে করবি। আমাদের নিয়ে একদম চিন্তা করবি না। যখন আমাদের কথা মনে পড়বে জামাইকে নিয়ে চলে আসবি। ভালো থাকিস মা। যা এবার গাড়িতে গিয়ে বস। লেইট হয়ে যাচ্ছে।”

জয়া চোখে এক রাশ জল নিয়ে পিছু ফিরে কাঁদতে কাঁদতে গাড়িতে উঠে গেলো। জয়া গাড়িতে উঠারর সাথে সাথেই ড্রাইভার গাড়ি স্টার্ট করে দিলো। জয়া জানালার কাঁচ দিয়ে উঁকি মেরে সবাইকে দেখছে আর চোখের জল ফেলছে।

তমার চোখ থেকে ও টুপটাপ করে জল গড়িয়ে পড়ছে। সে যেনো চোখের সামনেই নিজের বিদায় দেখছে। এক সপ্তাহ পর তাকে ও নিজের পরিবারের থেকে ঠিক এভাবে বিদায় নিয়ে সারা জীবনের জন্য এই বাড়িতে চলে আসতে হবে। জায়ান তমার দিকে তাকিয়ে আছে। জায়ান বেশ বুঝতে পারছে তমা কেনো কান্না করছে। তাই সে তমার পাশে গিয়ে দাঁড়ালো। তমা জায়ানকে দেখে চোখের জল গুলো মুছে ফেলল। এর মাঝেই হাতে এক্টা ল্যাকেজ নিয়ে জাবেদ বাড়ির গার্ডেনে চলে এলো। তাকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে সে কোথাও বের হচ্ছে। জায়ান বুঝতে পেরেছে জাবেদ কোথায় যাচ্ছে। মিসেস ফারহানা জাবেদের হাতে ল্যাকেজ দেখে কিছুটা উওেজিত হয়ে জাবেদকে ঝাঁকিয়ে বলল,,,,,,

—-“কি রে? কোথায় যাচ্ছিস তুই?”

জাবেদ মুখটা কাচুমাচু করে বলল,,,,,,

—-“হুট করে অফিস থেকে জরুরী এক্টা কাজ পড়ে গেলো আম্মু। তাই আমাকে এক্ষনি বের হতে হচ্ছে। হয়তো এক সপ্তাহ পর ফিরব।”

মিসেস ফারহানা মুখটা ফুলিয়ে বলল,,,,,

—-“এক সপ্তাহ পর জায়ানের বিয়ে। তোর কিনা এখনই অফিসের জরুরী কাজ পড়ে গেলো?”

জাবেদ মলিন হেসে বলল,,,,,

—-“চিন্তা করো না আম্মু। বিয়ের দিনই আমি এসে হাজির হবো।”

—-“সত্যি তো?”

—-“হুম আম্মু সত্যি।”

জাবেদের আব্বু পিছন থেকে জাবেদের কাঁধে হাত রেখে বলল,,,,,,,

—-“না গেলে হয় না?”

জাবেদ ওর আব্বুর দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,,,,,,

—–“না আব্বু হয় না। ইট’স আর্জেন্ট।”

জায়ান ওর আম্মু, আব্বুকে উদ্দেশ্য করে কিছুটা রেগে বলল,,,,,,,,,

—-“প্লিজ তোমরা এভাবে যাএা পথে বাঁধা দিও না। ভাইয়া হয়তো ভেবে চিন্তেই যাচ্ছে। তোমরা আর কথা না বাড়িয়ে ভাইয়াকে হাসি মুখে বিদায় দাও।”

জায়ানের আম্মু আব্বু মলিন হেসে জাবেদের মাথায় হাত বুলিয়ে জাবেদকে বিদায় দিয়ে বাড়ির ভিতর ঢুকে গেলো। জাবেদ যাওয়ার আগে জাবেদের নতুন সিমের নাম্বারটা জায়ানের হাতে ধরিয়ে দিয়ে গেছে। জায়ানের বুদ্ধিতে জাবেদ ওর সিম পাল্টে নিয়েছে। সেই কার্ডের নাম্বারই জাবেদ জায়ানকে দিয়ে গেছে।

সন্ধ্যা সাতটা,,,,,,

জায়ান আর তমা বিদায় নিয়ে তমাদের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলো। জায়ান খুব টেনশানে আছে। জায়ানদের এ্যাবসেন্সে তাহাফ কোনো কারসাজি করে রেখেছে কিনা সে বিষয়ে জায়ান বেশ চিন্তিত। জায়ান এক হাতে ড্রাইভ করছে অন্য হাতে তমার হাত ধরে রেখেছে।

প্রায় আধ ঘন্টা পর গাড়ি এসে পৌঁছে যায় তমাদের বাড়ির গার্ডেনে। গাড়ি থেকে নেমে জায়ান তমাকে নিয়ে সোজা বাড়ির ড্রইং রুমে ঢুকে যায়। ড্রইং রুমে পা রাখতেই জায়ান আর তমা তাহাফের মুখোমুখি হয়ে গেলো। তাহাফ বাঁকা হাসি দিয়ে জায়ান আর তমার দিকে তাকিয়ে আছে। তাহাফের মুখের এই বাঁকা হাসিটা জায়ানকে বেশ চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। এই বাঁকা হাসিতে স্পষ্ট লিখা আছে কোনো অগ্রিম বিপদের আভাস।

তাহাফ এক্টু এগিয়ে এসে জায়ানের কাঁধে হাত রেখে বলল,,,,,,,,

—-“আজকের দিনটা কেমন কাটালি? নিশ্চয়ই বউকে নিয়ে খুব আরামে ছিলি?”

জায়ান মলিন হেসে বলল,,,,,,

—-“বউ পাশে থাকলে তো বছরের ৩৬৫ দিনই খুব আরামে কাটে। কোনো হিসেব ই থাকে না। দিন থেকে রাত। রাত থেকে দিন।”

তাহাফ মুহূর্তেই মুখে রাগী ভাব ফুটিয়ে হন হন করে হেঁটে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে গেলো। জায়ান আর এক মুহূর্ত দেরি না করে তমার হাত ধরে উপরে উঠে সোজা স্টোর রুমে চলে গেলো। ল্যাপটপ টা অন করে জায়ান পুরো বাড়ির সিসি ক্যামেরা ফুটেজ গুলো চেইক করতে লাগল। কোথাও কিছু পাওয়া গেলো না। জায়ান কিছুটা হতাশ হয়ে যেই না তমার রুমের ফুটেজটাতে ক্লিক করল অমনি জায়ান আর তমার চোখ দুটো বড় বড় হয়ে গেলো। ফুটেজটাতে দেখা যাচ্ছে,,,,

—-“তাহাফ ধীর পায়ে হেঁটে চোরের মতো তমার রুমে ঢুকে খাটের সাথে লেগে থাকা ডেস্কের উপরের ফুলদানীটায় এক্টা সিসি ক্যামেরা ফিট করে সোজা রুম থেকে বের হয়ে গেলো।”

তমা মুখে হাত দিয়ে জায়ানের দিকে তাকিয়ে আছে। জায়ান বাঁকা হেসে ল্যাপটপ টা অফ করে তমার দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,

—-“ঠিক এই ভয় টাই পাচ্ছিলাম। আমি জানতাম আমাদের এ্যাবসেন্সে তাহাফ কোনো না কোনো শয়তানী চাল চালবেই।”

তমা পর পর কয়েকটা শুকনো ঢোক গিলে জায়ানের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,

—-“কি করব এখন? রুমে তো সিসি ক্যামেরা আছে। আমাদের প্রতিটা হাঁটার আওয়াজ ও তাহাফ ভাইয়ার কান অব্দি পৌঁছে যাবে। রুমে থাকাটা কি সেইফ হবে?”

—-“রুমে থাকব না তো কোথায় থাকব? তাহাফ কি শেয়ানা, তাহাফের চেয়ে ও বড় শেয়ানা এই জায়ান। সিসি ক্যামেরা কিভাবে অফ করতে হয় সেটা আমার ভালো করেই জানা আছে।”

কথাগুলো বলেই জায়ান তমার হাত ধরে রুম থেকে বের হয়ে গেলো। ঐদিকে তাহাফ অধীর আগ্রহে পায়ের উপর পা তুলে ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে আছে। তাহাফ বাঁকা হেসে ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,,

—-“তোরা রুমে কি করবি না করবি সব আমি চোখের সামনে থেকে দেখব। তোদের প্রতিটা স্টেপ আমি লাইভ দেখব। আর সুযোগ পেলেই তোদের ক্ষতি করে বসব। তমা যখন রুমে একা থাকবে তখনই আমি তমার রুমে ঢুকে তমার কানে তোর নামের বিষ ঢুকিয়ে দিবো। আস্তে আস্তে তমাকে তোর থেকে আলাদা করে নিবো। তমা যখন তোকে পুরোপুরি অবিশ্বাস করতে শুরু করবে তখনই আমি তমাকে ফুসলিয়ে ফাসলিয়ে নিজের করে নিবো।”

তাহাফ এসব বলছে আর অট্টহাসিতে ফেটে পড়ছে।

জায়ান তমাকে নিয়ে ওর রুমের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। জায়ান কিছুটা ঝুঁকে তমার কানে ফিসফিসিয়ে বলল,,,,,,

—-“রুমে ঢুকেই তুই গায়ের উড়নাটা কায়দা করে ফুলদানীটার উপর ছুড়ে মারবি ওকে?”

তমা বাঁকা হেসে বলল,,,,,,

—-“ওকে।”

জায়ান রুমের দরজাটা খুলে বড় এক্টা হাই তুলে শটান হয়ে বিছানায় শুয়ে চোখ দুটো বন্ধ করে কিছুটা ক্লান্তির স্বরে তমাকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,

—-“তমু খুব ক্লান্ত লাগছে আমার। তুই আমার মাথায় এক্টু হাত বুলিয়ে দিবি প্লিজ?”

তমা দুহাত নাড়িয়ে ওর মুখের সামনে হাওয়া দিচ্ছে আর বলছে,,,,,

—-“সাংঘাতিক গরম পড়ছে আজ। উড়নাটা গাঁয়ে রাখা যাবে না। উড়নাটা খুলে নেই এরপর তোমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিবো।”

কথাটা বলেই তমা খাটের উপর বসে উড়নাটা ফুলদানীটার উপর ছুড়ে মারল। উড়না ঠিকঠাক জায়গায় পড়েছে। সিসি ক্যামেরাটা উড়না দিয়ে ঢেকে গেছে। এবার যাই দেখা যাবে সব অস্পষ্ট দেখা যাবে। ক্লিয়ারলী কিছুই দেখা যাবে না। জায়ান তাড়াতাড়ি শোয়া থেকে উঠে ফুলদানীটার দিকে তাকালো। জায়ান বাঁকা হেসে এক্টু সামনে এগিয়ে উড়নাটা ধরে দিলো এক হেচকা টান। টানের গতিতে ফুলদানীরা নিচে ছিটকে পড়ল। ফ্লোরে পড়ার সাথে সাথে ক্যামেরাটা নষ্ট হয়ে গেলো। তমা খিলখিল করে হেসে জায়ানকে ঝাপটে ধরে বলল,,,,,,,

—-“ইয়েস আমরা সফল হয়েছি।”

জায়ান এক গাল হেসে তমাকে জড়িয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ল। ঐদিকে তাহাফ চোয়াল শক্ত করে ল্যাপটপটা ফ্লোরে ছুড়ে মেরে মুদ্যু চিৎকার দিয়ে বলল,,,,,,,,

—-“আবার আমি হেরে গেলাম। জায়ানের বাচ্চা উড়নাটা টান দেওয়ার আর সময় পেলো না। ওর জন্যই আমার সাজানো প্ল্যানটা ভেস্তে গেলো। না না এভাবে ভেঙ্গে পড়লে চলবে না। আমাকে নতুন কোনো প্ল্যান খুঁজতে হবে। আজ রাতে ওদের এক্টা না এক্টা ক্ষতি করতেই হবে।”

তাহাফ কথা গুলো বলছে আর পুরো রুম ঘুরে পায়চারী করছে। প্রায় দশ মিনিট পর তাহাফ কিছু এক্টি ভেবে সোজা রুম থেকে বের হয়ে কিচেনে চলে গেলো। কিচেন রুমে মিসেস আন্জ্ঞুমান আর মিসেস হাফসা রাতের ডিনার তৈরী করছে। জায়ানের জন্য বিভিন্ন আইটেমের খাবার তৈরি করছে। তাহাফ পিছন থেকে গলা ঝাঁকিয়ে ওর আম্মু আর চাচী আম্মুকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,,,

—-“জায়ান আর তমু কি রাতে খাবে?”

মিসেস আন্জ্ঞুমান পিছু ঘুরে মৃদ্যু হেসে বলল,,,,,,,

—-“হুম ওরা দুজনই আমাদের সাথে ডিনার করবে। কেনো বলো তো?”

তাহাফ মাথা চুলকিয়ে বলল,,,,,,,

—-“না ভাবছিলাম স্পাইড আনব ওদের জন্য। খাবার শেষে খাবো। হজমের ও এক্টা ব্যাপার স্যাপার আছে।”

মিসেস আন্জ্ঞুমান এক গাল হেসে বলল,,,,,,

—-“ঠিক বলেছ। একদম আমার মনের কথা। সব কটা ডিশ ই অয়েলি। তাই স্পাইড হলে মন্দ হয় না।”

#চলবে,,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here