গল্পর নাম : #১৬_বছর_বয়স
#পর্ব_২৯ : #By_Hook_or_crook.
লেখিকা : #Lucky
গাড়িতে বসে আমি আড় চোখে শাওনের দিকে তাকালাম। উনি সামনের দিকে তাকিয়ে নিজের সীট বেল্ট পরে নিলেন। তারপর গাড়ি স্টার্ট দিলেন।
আমি স্নোবেলের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে জালানার বাহিরে তাকিয়ে রইলাম। গাড়ির মধ্যে বিরাজ করছে অনেক নিস্তব্ধতা।
অনেকক্ষণ পর আমি নিস্তব্ধতা ভেঙে বলতে লাগলাম,”আপনি কি…”
“Shut up.” শাওন বলে উঠল। তার দৃষ্টি সামনেই আবন্ধ।
আমি চোখ পাকিয়ে বলে উঠলাম, আপনার মনে হয় না আপনি দিন দিন বেশিই মদন টাক হয়ে যাচ্ছেন?
শাওন কটমট চোখে আমার দিকে তাকালো।
আমি মুখ ভেংচি দিয়ে বললাম,”হ্যা, হ্যা, চুপ করছি।”
তারপর সারারাস্তা আর কথাই বললাম না।
ঢাকা ফিরে এসে এখন আমাকে আর সোফায় ঘুমাতে হয়না। পিশামনির তালা মেরে যাওয়া রুমটা এখন খোলা। এটাতেই এখন থাকি আমি আর স্নোবেল। আর ফিরে আসার সময় পিশামনি আমাকে কলেজের বিষয় জানিয়ে দিয়েছেন। উনি সব ভর্তির কাজ আগেই করে ফেলেছিলেন। ফোনও সাথে দিয়ে দিয়েছেন একটা। গরিলা কিছু করলেই নালিশ দিয়ে দিতে বলেছে। তাছাড়া এখন থেকে সারাদিন মনে হয় আর বোরিং কাটবে না। কলেজেই কাটবে সারাদিন।
কিন্তু এখন কাহিনী হচ্ছে আজই প্রথম যাচ্ছি কলেজে। আর পিশামনি ওনাকে বলে দিয়েছেন ফোন করে যেন আমাকে দিয়ে আসে। তাই গরিলাটা আমাকে আজ কলেজে নিয়ে যাবে। কষ্ট লাগছে যে স্নোবেল বাসাতে একা একা থাকবে সারাদিন।
শাওন কলেজ গেটের সামনে গাড়ি দাড় করালো। আমি শাওনের দিকে তাকালাম। শাওন ভ্রুকুচকে তাকিয়ে বলল, নামো।
আমি ঠোঁট উলটে বললাম, নেমে কোথায় যাব! কিছুই ত চিনি না।
“যেদিকে ইচ্ছে যাও, আমার দেরি হচ্ছে।” শাওন দাতেদাত চিপে কথাটা বলল।
আমি ওনার দিকে তাকিয়ে একটা নিঃশ্বাস ফেলে নেমে পরলাম। সত্যিই দিন দিন মদন টাক হচ্ছেন উনি। অসহ্য।
আমি নেমে হেটে ভিতরে ঢুকলাম। অনেক বড় ক্যাম্পাস। কলেজ, অনার্স-মাস্টার্স সব একসাথে। এখন সাইন্সের ইন্টার প্রথম বর্ষ কোন রুমে! কে জানে! দাঁড়িয়ে এদিক ওদিক তাকিয়ে চিন্তা করতে লাগলাম। আশেপাশে ছেলে মেয়ের অভাব নেই। কিন্তু জিজ্ঞেস করব কাকে?
“দাঁড়িয়ে আছ কেন?” শাওন বলল।
আমি চোখ বড়সড় করে পিছনে তাকালাম। হ্যা সত্যিই উনি!
শাওন আমার দিকে বিরক্তির সাথে হেটে এসে বলল, জিজ্ঞেস করলেই ত জানা যাবে কোন রুম! হা করে দাঁড়িয়ে থাকলে না।
আমি চোখ পিটপিট করে শাওনের দিকে তাকিয়ে রইলাম।
“কি?” শাওন বলল।
আমি মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে বললাম, কিছুই না।
শাওন সামনে এগিয়ে গিয়ে একজনকে জিজ্ঞেস করে নিলো। জানা গেল যে পাশের বিল্ডিং এর দোতালায় আমার ক্লাস।
আমি তাও “থ” মেরে দাঁড়িয়ে রইলাম।
“এখন আবার বলো না যে কোলে করে ক্লাসে বসিয়ে দিয়ে আসুন!” শাওন ভ্রুকুচকে তাকিয়ে বলল।
আমি হাসিমুখে বললাম,”কোলে না, হেটে হেটে দিয়ে আসলেও হবে।”
শাওন একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলল, চলো জলদি।
সত্যিই যতটা ভালো লাগবে মনে করেছিলাম তার চেয়ে বেশি বোরিং লাগছে। মরার কলেজ! স্নোবেলটা কি করছে কে জানে?
আমি কলেজ থেকে বের হয়ে এলাম। এখন সমস্যা হলো বাসার চাবিটা নিয়ে আসিনি। আর দরজার পাসওয়ার্ডও ত জানিনা! গরিলাটার ফোন নাম্বারও জানিনা। ওনার অফিসে চলে যাব?
কিন্তু যদি রেগে যায় আর আমাকে কাচা চিবিয়ে খেয়ে নেয়?
কিন্তু এখানে ত ভালও লাগছে না!
আমি শাওনের অফিসের সামনে এসে নামলাম।
শাওনে কেবিনে নেই! মিটিং এ নাকি কে জানে।
আমি কাধের লম্বা ফিতার সাইড ব্যাগটা সোফায় রাখলাম। তারপর সোফাতে মাথা হেলিয়ে দিয়ে অপেক্ষা করতে লাগলাম। কিন্তু ওনার আসার কোন নাম নেই। অপেক্ষা করতে করতে আমি সোফায় ঘুমিয়েও গেলাম।
একটা বড় ঘুম দিয়ে তারপর উঠলাম। এখনো আসেনি উনি!
আমি কেবিন থেকে বের হয়ে এলাম। আর একটা মেয়ের কাছে গিয়ে শাওনের কেবিন দেখিয়ে বললাম, উনি কোথায়?
মেয়েটা আমাকে চিনলো না। হয়তো নতুন বা আমার সাথে দেখা হয়নি।
মেয়েটা সন্দেহের চোখে তাকিয়ে বলল, who are you?
আমি কি বলব বুঝলাম না।
মেয়েটা এবার এক পা এগিয়ে এসে বলল, চিনলাম না ঠিক! কে তুমি?
আমি চুপ করে এদিক ওদিক তাকাতে লাগলাম।
মেয়েটা এবার অবাক হয়ে বলল, কি?
“আমি মিলা। ওনার…”
“ওনার?” মেয়েটা প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল।
“এখানে কেন এসেছো?” শাওন বলে উঠল।
আমি আর মেয়েটা ঘাড় ঘুরিয়ে শাওনের দিকে তাকালাম।
শাওন ভ্রুকুচকে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
মেয়েটা বলে উঠল, স্যার, ইউ নো হার?
আমি ঘাড় ঘুরিয়ে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে ভাব নিয়ে বললাম, আমার নাম মিলা, আর উনি আমাকে ভালো করেই চেনেন।
মেয়েটা আমার দিকে এমন ভাবে তাকালো যেন আমি ভুল কিছু বলে ফেলেছি।
“Get back to work.” মেয়েটাকে বলল শাওন।
আমি মেয়েটাকে মুখ ভেংচি দিলাম। মেয়েটা আর কিছু না বলে চলে গেল।
শাওন আমার দিকে এগিয়ে এসে ভ্রুকুচকে তাকিয়ে বলল, কলেজে দিয়ে এসেছিলাম না তোমাকে?এখানে এসে বসে আছ কেনো?
আমি চোখ ছোট ছোট করে বললাম, ভালো লাগছিল না।
“হোয়াট!” রেগে গেল শাওন।
আমি যেন কিছুই জানিনা এমন ভান করে অন্য দিকে তাকিয়ে রইলাম।
“এখনি যাও।” শাওন বলল।
“এত সময়ে শেষ হয়ে গেছে।” আমি বললাম।
শাওন এক পা এগিয়ে আসতেই আমি চোখ বড়সড় করে ফেললাম আর বললাম, যাচ্ছি যাচ্ছি। এত তেলে বেগুনে জ্বলার কি আছে?
বলেই আমি ওনার কেবিনে ঢুকে গেলাম আর নিজের ব্যাগ নিলাম। তারপর বের হয়ে মুখ ভেংচি দিয়ে চলে গেলাম। উনি চুপচাপ ভ্রুকুচকে তাকিয়ে রইলেন।
লিফটে করে কার পার্কিং এ এসে নামলাম।
মনে মনে শাওনকে গালি দিতে লাগলাম আর রাস্তা দিয়ে হাটতে লাগলাম। এখন আবার আমাকে কলেজ পাঠাচ্ছে। অসভ্য গরিলা।
ভাবতে ভাবতে হাটতে গিয়ে হঠাৎ একটা খাম্বার সাথে ধাক্কা খেয়ে মাটিতে পরলাম আর হাত দিয়ে ব্যালেন্স করে নিলাম। কিছুসময় ওভাবেই হা হয়ে রইলাম। কি কপাল আমার! একটা নিঃশ্বাস ফেলে মাথায় চুলগুলো মুখ থেকে সরিয়ে নিলাম। তারপর ব্যাগটা তুলে উঠে দাড়িয়ে গা ঝারতে ঝারতে এগুতে গিয়েই কারো সাথে ধাক্কা খেয়ে আবার পরে যেতে লাগলাম কিন্তু সাথে সাথে সেই ব্যক্তি আমার হাত ধরে নিল। যদিও ব্যাগটা নিচে পরে গেল।
“যাক বাবা বাঁচলাম!” নিচের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বললাম আমি।
“বলেছিলাম না, আমাদের আবার দেখা হবে!”
আমি সেই ছেলেটার গলা শুনে ফট করে তার মুখের দিকে তাকালাম আর হতভম্ব হয়ে গেলাম।
ছেলেটা হাসিমুখে আমার দিকে তাকিয়ে রইল। আমি ওনার কাছ থেকে একটু সরে হাত ছাড়িয়ে নিয়ে নিজের ব্যাগটা কাধে তুলে দাড়ালাম।
“আ…আপনি এখানে কিভাবে!” আমি হা হয়ে প্রশ্ন করলাম।
ছেলেটা এক পা এগিয়ে এসে হাসি মুখে বলল, প্রথম দেখাটা incidence, দ্বিতীয় দেখাটা coincidence, কিন্তু তৃতীয় দেখা means – Something else.
বলেই ছেলেটা একটু ঝুকে আমার দিকে তাকালো। আমি ওনার কথার আগা মাথা না বুঝে একটু পিছিয়ে গেলাম। ছেলেটা সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে আমার হাতের দিকে তাকালো। আর মুখের হাসিটা গায়েব হয়ে গেল। আর ফট করে আমার এক হাত ধরে বলল, আবার ছিলে গেছে?!
আমি হকচকিয়ে গেলাম কারন উনি হুট করে আমার হাতটা ধরে নিয়েছেন।
আমি বলতে লাগলাম, “আমার হাত….”
আমার কথা শেষ হবার আগেই পিছন থেকে শাওন ওই হাতটা ধরে এক টান দিয়ে আমাকে সরিয়ে নিয়ে এলো।
আমি অনেক চমকে গেলাম। আর শাওনের দিকে তাকালাম। শাওন তীব্র রাগের সাথে ছেলেটার দিকে তাকিয়ে আছে।
শাওনকে দেখে ছেলেটার মুখের হাসির আভা সরে এখন সিরিয়াস ভাব চলে এসেছে।
উফ! সবাই আজ আমার হাত নিয়ে টানাটানি করছে কেন!
“What the hell are you doing here?” শাওন রেগে বলল ছেলেটাকে।
ছেলেটা সিরিয়াস মুখে একটা হাসি এনে বলল, লং টাইম নো সি শাওন!
আমার চোখ বড়সড় হয়ে গেল! এনারা নিজেদের চেনে!
“Get the hell out of my sight.” রাগে দাতে দাত চিপে বলল শাওন।
আমি হা হয়ে দেখতে লাগলাম। এদিকে আমার হাতের কবজি উনি এত শক্ত করে ধরেছেন যে আমার লাগছে।
আমি ওনার হাতটা ধরে ছাড়ানোর চেষ্টা করতেই উনি হাতটা আরো শক্ত করে ধরে আমার দিকে কটমট চোখে তাকালেন।
“লাগছে ত আমার।” আমি ভ্রুকুচকে তাকিয়ে বললাম।
সামনের ছেলেটা আমার দিকে তাকিয়ে চিন্তিত হয়ে বলে উঠল, শাওন ডোন্ট প্যানিক!
শাওন ভ্রুকুচকে রেগে ওর দিকে তাকিয়ে বলল, যেতে বলেছি।
ছেলেটা ধরে থাকা হাতের দিকে প্রশ্নসূচক চোখে তাকিয়ে বলল, What’s your relationship with her?
“That’s none of your business.” শাওন রেগে গেল।
এদিকে আমার হাত আর হাত থাকবে বলে মনে হয় না।
ছেলেটা অদ্ভুত ভাবে আমার দিকে তাকিয়ে বলল, Don’t tell me that…she..?
শাওন কড়া চোখে তাকিয়ে বলল, yes, she is.
এটা শোনার পর ছেলেটার চেহারা দেখে মনে হলো সে এটা আশাই করেনি।
আমি হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করেই যাচ্ছি কিন্তু লাভ হচ্ছেই না।
ছেলেটা এবার হালকা হেসে বলল, ওর উপর আমার রাগটা না দেখালেই ভাল।
শাওন অন্য হাত দিয়ে ছেলেটার কলার ধরে বলল, Shut the f* up and get out.
আমি হা হয়ে গেলাম। এখন কি শাওন ওনাকেও মারবে নাকি, মিশুকে যেমন মেরেছিল!
“আপনি কি করছেন ছাড়ুন ওনাকে!” আমি বলে উঠলাম।
শাওন ওর কলার ধরা অবস্থাতেই আমার দিকে রেগে তাকিয়ে বলল, তোমাকে ত আমি পরে বুঝে নিচ্ছি।
বলেই সামনের ছেলেটার কলার ছেড়ে দিল শাওন।
ছেলেটা কিছু একটা চিন্তা করে নিজের কলার ঠিক করতে সিরিয়াস হয়ে বলল, কিসের জন্য এত রাগ! এজন্য যে ওর সাথে আমাকে দেখে ফেলেছ নাকি এজন্য যে সুইটির সাথে আমার এনগেজমেন্ট হয়ে গেছে?
শাওন অন্য হাতটা মুষ্ঠি বদ্ধ হয়ে গেল। আর অত্যন্ত রেগে ছেলেটার দিকে তাকিয়ে রইল। আমি বড়সড় চোখ করে ছেলেটার দিকে তাকালাম তারপর শাওনের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বললাম, ‘এজন্য উনি এত রেগে গেছেন! সুইটির সাথে এনার….!’
চিন্তা করেই অনেক বিরক্ত লাগছে আমার। কেন, তা জানি না! সুইটির জন্য এত মাথাব্যথা কিসের ওনার! অসহ্য।
শাওন রেগে কিছু একটা বলতে যাওয়ার আগেই আমি রেগে একটা নিঃশ্বাস ফেলে শাওনকে বলে উঠলাম, যথেষ্ট হয়েছে। এখন থামুন প্লিজ। আর হাত ছাড়ুন আমার।
শাওন ছেলেটাকে আর কিছু না বলে আমার হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে যেতে লাগল।
“উফ, লাগছে আমার!” আমি বলতে লাগলাম।
কিন্তু ওনার থামার বা হাত ছাড়ার কোনো নাম নেই। এদিকে ব্যাগটাও ঘাড় থেকে বার বার পরে যাচ্ছে।
উনি আমাকে টানতে টানতে নিয়ে অফিসের লিফটে উঠলেন। অনেকে হা করে তাকিয়ে রইল। উনি লিফটের একদম উপরের ফ্লোরে আসার জন্য বাটন চাপলেন।
আমি চোখ বড়সড় করে বললাম, উপর থেকে ফেলে দেবেন নাকি আমাকে? ছাদে কেন নিচ্ছেন?
উনি আমার কোনো প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন না। রেগে ফুলে ফেপে সামনের দিকে তাকিয়ে আছেন। আমি হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করে করে ক্লান্ত হয়ে গেছি। লিফট ছাদে এসে থামার সাথে সাথে উনি আমাকে টেনে নিয়ে একটা দেয়ালের সাথে দুই হাত চেপে ধরলেন।
“কি করছেন আপনি?” আমি বিরক্তির সাথে বললাম।
শাওন রেগে কড়া চোখে তাকিয়ে বলল, কিভাবে চেন তুমি ওকে? কি সম্পর্ক ওর সাথে তোমার?
উনি রেগে ফুসছেন ইতিমধ্যে। আমি কিছু না বলে রাগ মিশ্রিত চোখে তাকিয়ে রইলাম ওনার দিকে। সুইটির জন্য এখন উনি আমাকে ধমকাচ্ছেন এটা আমার সহ্য হচ্ছেই না।
“Answer me damn it!” অনেক জোরে বলে উঠল শাওন। আমি প্রায় লাফিয়ে উঠলাম। আর ভীত চোখে ওনার দিকে তাকালাম।
“Further যদি ওর সাথে দেখি তাহলে আমি তোমার সাথে কি করব আমি নিজেও জানিনা।” দাতে দাত চিপে বলল শাওন।
আমি কিছুই বললাম না শুধু শুনেই গেলাম। আর একটা অদ্ভুত প্রশ্ন নিজেকে করতে লাগলাম, আমাকে উনি এত অপছন্দ করেন কেন? আমি কি এতই অসহ্য!
“Do you understand me?” শাওন রেগে বলল।
আমি কিছুই বললাম না। হালকা চোখ সরিয়ে অন্যমনস্ক হয়ে রইলাম।
শাওন এবার আমার দুই বাহু ধরে ঝাকিয়ে বলল, বুঝেছ তুমি?
আমি চমকে তাকালাম কিন্তু চুপ করেই রইলাম। আর সেই প্রশ্নটা মাথায় ঘুরতে লাগল।
শাওন রেগে বলতে লাগল, বাহিরে যাওয়া বন্ধ তোমার। কলেজও যাওয়া বন্ধ। বাসাতেও একা থাকতে পারবা না। আমার সাথে কাল থেকে অফিস আসবা। আমার সামনে বসে Study করবা। দরকার হলে আমি পড়াবো তোমাকে।
আমি শুনে হা হয়ে গেলাম এটা চিন্তা করে যে, ওই সুইটি শাক চুন্নির জন্য আমার সব বন্ধ?
শাওন দাতে দাত চিপে বলল, Is that clear?
আমি এবার রেগে ফেপে বলে উঠলাম, না, কিচ্ছু ক্লিয়ার না। আমার যেখানে ইচ্ছা আমি সেখানে যাব। আপনি আমার বাহিরে যাওয়া কেনো আটকাবেন?
শাওন রেগে আমার আরো চলে আসতেই আমি পিছিয়ে গিয়ে সাহসী হবার ভান করে বললাম, ভ…ভয় পাইনা আমি।
শাওন আমার কানের কাছে মুখ নিয়ে এসে বলল, আমি যা বলেছি তা করতে তুমি বাধ্য। By Hook or by crook.
বলেই শাওন সরে গিয়ে সিড়ি দিয়ে নিচে নেমে গেল। আমি ছাদে ওভাবেই দাঁড়িয়ে রইলাম।
গাড়িতে বাসায় ফেরার সময় কেউ কারো সাথে কোনো কথা বললাম না। আর আমি ত বলতেও চাইনা। মুখ গোমড়া করে অন্যদিকে ঘুরিয়ে রাখলাম।
বাসায় এসে কোনো দিকে না তাকিয়ে নিজের রুমে চলে গেলাম। স্নোবেল আমাকে দেখে অনেক খুশি। ওকে বিছানায় আমার পাশে উঠিয়ে দিলাম। আর ব্যাগটা বিছানার এক পাশে রেখে আমিও শুয়ে পরলাম। অনেক বিরক্তি লাগছে এখন। সুইটির চুল ছিড়তে পারতাম যদি তাহলে হয়ত ভাল লাগত!
স্নোবেলের দিকে ঘুরে ক্ষোভের সাথে বললাম, গরিলাটা আসলে মদনটাক।
স্নোবেল না বুঝে তাকিয়ে রইল। আমি একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেললাম। মনের মধ্যে আবার কেমন কেমন করছে। কিছুই ভাল লাগছে না। আমি লাইট বন্ধ করে শুয়ে পরলাম। আর আজ না খেয়েই ঘুমিয়ে গেলাম।
সকালে নিজের চোখ ডলে উঠে বসলাম। তারপর হঠাৎ কিছু একটা মনে হতেই ডান হাতের দিকে তাকালাম। ব্যান্ডেজ করা! বুঝতে আর বাকি রইল না কে করেছে।
আমি নামার জন্য উঠতেই ওড়নাটায় টান খেলাম। তারপর ভ্রুকুচকে হাতের বাম দিকে ঘুরে তাকাতেই চমকে উঠলাম। ডান দিকে ঘুরে শুয়ে থাকার কারনে আমি খেয়ালই করিনি!
শাওন এখানে কেন ঘুমাচ্ছে? আমি হা হয়ে গেলাম। আশেপাশে তাকিয়ে দেখলাম যে এটা আমারই রুম। উনি এসেছেন তারমানে!
কিন্তু ঘুমাচ্ছে ত ঘুমাচ্ছে আমার ওড়না ওনার হাতের মুঠোয় চেপে ধরে ঘুমাচ্ছে। উনি কি বাচ্চা! উফ!
আমি ওনার কাছে গিয়ে ওড়নাটা হালকা করে টেনে নেওয়ার চেষ্টা করলাম। লাভ হলো না। আরো শক্ত করে ধরে রাখল।
আমি একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেললাম।
কিন্তু এক মিনিট স্নোবেলকে কোথায় পাঠিয়েছেন উনি? রুমের আশেপাশে তাকিয়ে কোথাও দেখলাম না।
গল্পর নাম : #১৬_বছর_বয়স
#পর্ব_৩০ : #Worth_it
লেখিকা : #Lucky
দরজার কাছে তাকাতেই দেখলাম দরজা বন্ধ করা। এটার কি মানে?
আর উনি এত যে ঘুমাচ্ছেন! উনি কি আজ অফিস যাবেন না, নাকি?
আমি শাওনের কাধে হাত দিয়ে নাড়িয়ে বললাম, “এইযে শুনছেন! উঠুন এখন আর আমার ওড়নাটা দয়া করে ছাড়ুন।”
শাওন নড়েচড়ে চোখ খুললো। যাক মহারাজ উঠল শেষ অব্দি।
শাওন চোখ খুলে বিষয়টা বুঝে সাথে সাথে উঠে বসল। হাতে এখনো ওড়নাটা ধরা। আমি নিজের কোমড়ে হাত রেখে ভ্রুকুচকে তাকিয়ে বললাম, আপনি নিজের বিছানার ধারে কাছে আমাকে যেতে দেন না অথচ এখানে আমার বিছানায় এসে ঠিকই ঘুমাচ্ছেন!
শাওন ভ্রুকুচকে তাকিয়ে বলল, এখানে তোমার বিছানা বলে কিছুই নেই।
আমি রেগে কটমট করে উঠলাম। তারপর বিরক্তির নিঃশ্বাস ফেলে চোখ পাকিয়ে বললাম, এজন্যই বুঝি আমার জামা কাপড় নিয়েও আপনি টানাটানি করবেন? এগুলোও আপনার?
শাওন এবার নিজের হাতের দিকে তাকালো। তারপর ওড়নাটা ছেড়ে দিয়ে আমার দিকে তাকালো। আমি ভ্রুকুচকে নিজের ওড়নাটা নিলাম আর জিজ্ঞেস করলাম, “স্নোবেল কোথায়?কি করেছেন ওকে?”
শাওন কিছু না বলে বিছানা থেকে উঠে দরজা খুলল। আমি উওর জানার জন্য ওনার পিছনে পিছনে ছুটলাম। দরজা খোলার সাথে সাথে স্নোবেল ঘেউঘেউ শুরু করে দিল। শাওন ওকে পাত্তা না দিয়ে বেরিয়ে যেতে লাগল কিন্তু আমি ফট করে ওনার হাতের কবজি চেপে ধরলাম। শাওন অবাক হয়ে হাতের দিকে তাকালো।
“ওকে বাহিরে রেখে দিয়েছিলেন কেন আপনি?! সারা রাত এভাবে ছিল ও!” আমি হা হয়ে বলে উঠলাম।
স্নোবেলও ঘেউঘেউ করে ক্ষোভ প্রকাশ করতে লাগল।
উনি কিছু না বলে আমার হাতের দিকে তাকালেন। আমি বুঝতে পেরে ফট করে ওনার হাত ছেড়ে দিলাম।
শাওন আমার দিকে একবার তাকিয়ে তারপর বের হয়ে গেল।
“অসহ্য। হুটহাট অনেক কিছু করে কিন্তু জিজ্ঞেস করলে কুমড়োপটাশ হয়ে থাকে! উওর দেয় না!” মনে মনে বলে আমি স্নোবেলের দিকে ঝুকলাম। মনেহয় ও সারারাতই বাহিরে ছিল।
‘কিন্তু উনি আমার সাথে কেন ঘুমাচ্ছিলেন!’ আমি স্নোবেলের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে চিন্তা করতে লাগলাম।
আমি ফ্রেস হয়ে কলেজের জন্য রেডি হলাম তারপর নাস্তা করতে এলাম। ইদানিং উনি নিজে কুমড়ো খেলেও আমাকে ডিমই দিচ্ছেন। এটা ভাল। যেমন আজও ডিম।
আমি ওনার দিকে তাকিয়ে হাসিমুখে শব্দহীন হাতেতালি দিয়ে বললাম, ধন্যবাদ।
উনি একবার আমার দিকে তাকিয়ে তারপর নিজের খাওয়ায় মনোযোগ দিলেন। অর্থাৎ গোমড়া মুখ করেই রইলেন।
আমি একটা নিঃশ্বাস ফেলে খেতে আরম্ব করলাম। খাওয়ার শেষেই শাওন আমাকে বলল, চলো।
আমার হঠাৎ মনে পরে গেল যে উনি আমাকে আর কোথাও যেতে দেবেন না। এখন কি করব আমি?
উফ অসহ্যকর বিষয় একটা।
“কি হলো!” শাওন বলল।
“আপনার সাথে আপনার অফিসে! কিভাবে থাকবো আমি?” আমি চোখ ছোট ছোট করে বললাম।
শাওন ভ্রুকুচকে তাকিয়ে বলল, “কি সমস্যা থাকলে?”
“সবসময় চিল্লাবেন ত, আমি জানি।” মুখ ভেংচি দিয়ে বললাম।
“তুমি যেমন তোমার সাথে তেমনই করি, এখন বেশি কথা না বলে চলো। দেরি হচ্ছে আমার।” শাওন নিজের কোটটা হাতে নিতে নিতে বলল।
শাওনের টেবিলে ওর মুখামুখি সামনের চেয়ারে বসে আছি। উনি ওনার ল্যাপটপ আর ফাইল নিয়ে ব্যস্ত। অর্থাৎ উনি আমাকে বসিয়ে রাখার জন্য এনেছেন।
আমি বিরক্ত হয়ে ওনার পাশে গিয়ে ল্যাপটপের ক্রিন টা নামিয়ে দিলাম।
শাওন ভ্রুকুচকে আমার দিকে তাকিয়ে বলল, কি সমস্যা তোমার!
“খাব আমি, খিদে পেয়েছে।” চোখ সরু করে বলে উঠলাম আমি।
কিন্তু শাওনকে দেখে মনে হলো যেন আমি ওকে খেতে চেয়েছি!
“এখন চুপচাপ থাকো।” সিরিয়াস হয়ে বলল শাওন। তারপর আবার ল্যাপটপের ক্রিনটা উঠাতে গেল। আমি চোখ পাকিয়ে আবার ল্যাপটপটা বন্ধ করে দিলাম।
শাওন এবার রেগে আমার দিকে তাকালো। আমিও যথেষ্ট রেগে আছি।
“আমাকে রাগিও না।” শাওন বলল।
আমি হা হয়ে মনে মনে বললাম,’রেগে গিয়ে বলে কিনা রাগিও না!’
উনি ল্যাপটপ খুলে কাজে লেগে পরলেন। আমি এসে আবার আমার চেয়ারে বসলাম। কিছুক্ষণ রেগে এদিক ওদিক তাকিয়ে তারপর ব্যাগটা কাধে নিলাম আর উনি কিছু বলার আগেই আমি বের হয়ে এলাম।
একদম অফিসের বাহিরে এসে হাটতে হাটতে চিন্তা করতে লাগলাম যে এখন কোথায় যাওয়া যায়! বাসাতে গেলেই ভাল হবে কিন্তু তার আগে আইচক্রিম খেলে বেশি ভালো হয়। চিন্তা করেই আমি পিছনে ঘুরে থমকে গেলাম। শাওন রেগে দাঁড়িয়ে আছে।
উফ গরিলাটা আমার সাথে নতুনভাবে এগুলো কি শুরু করল!
“তোমার সাহস দিন দিন অনেক হচ্ছে।” শাওন সিরিয়াস চোখে তাকিয়ে বলল।
আমি কিছু না বলে নাক মুখ কুচকে বিরক্তির সাথে অন্যদিকে তাকিয়ে রইলাম।
“চলো এখন।” শাওন কড়া চোখে তাকিয়ে বলল।
ওনার সাথে তর্ক করেও লাভ নেই। কারণ উনি আমাকে নিয়ে তবেই যাবেন।
তাই চোখ ছোট ছোট করে ঠোঁট উলটে বললাম, খিদে পেয়েছে বলেছিলাম না! তাও ত আপনি কানে শুনতে পান না!
শাওন ভ্রুকুচকে তাকিয়ে বলল, এখন আবার কি খাবা!
আমি একটা বড়সড় হাসি দিয়ে বললাম, কতগুলা চিপস আর একটা কোক।
“তুমি বড় হবা না?” শাওন অবাক হয়ে বলল।
আমি ওনার কথায় উত্তর না দিয়ে একটা দোকান দেখিয়ে বললাম, ওইযে অইখানে আছে চিপস।
উনি দোকানের দিকে তাকিয়ে বিরক্তির সাথে বললেন, “এখানেই থাকো। আমি আনছি।” বলেই উনি দোকানের দিকে যেতে লাগলেন। কিন্তু আমি ত দাঁড়িয়ে থাকার মত মানুষ না। আমিও পিছন পিছন চলে এলাম।
এসে শাওনের পাশে দাড়িয়ে দোকানদারকে বললাম, মি.টুইস্ট দিবেন পাঁচটা আর কোক তিনটা।
শাওন ভ্রুকুচকে আমার দিকে তাকিয়ে বলল, হ্যা খাও তারপর ডায়রিয়া বাধাও।
আমি ওনাকে পাত্তা না দিয়ে আর কি কেনা যায় দেখতে লাগলাম। দোকানদার চিপস আর কোক একটা বড় পলিথিনে ভরে আমার দিকে এগিয়ে দিল৷ আমি খুশি মনে নিয়ে নিলাম। শাওন একটা এক হাজারের নোট দোকানদারকে দিলো।
“সরি স্যার, ভাংতি ত নেই।” বিব্রতকর কন্ঠে বলল দোকানদার।
“আমার কাছেও নেই।” শাওন গম্ভীর গলায় বলল।
গরিলার কাছে সব এক হাজারের নোট। অন্যদিকে দোকানদারের কাছে ভাংতি নেই। তারমানে আমাকে সব ফেরত দিয়ে যেতে হবে?
আমি কপাল কুচকে হা হয়ে রইলাম।
শাওন বিরক্ত হয়ে দোকানদারকে হাজারের নোট ধরিয়ে বলল, ওকে লাগবে না।
তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বলল, চলো এখন।
আমি এবার অনেক বেশিই হা হয়ে গেলাম আর বললাম, “এতগুলো টাকা আপনি দিয়ে দিবেন?”
“বেশি কথা না বলে চলো।” শাওন মানিব্যাগ ঢুকতে ঢুকতে বলল।
“এগুলার দাম ত দুইশোও হবেনা! তাহলে আরো কিনি!” আমি ভ্রু নাচিয়ে বললাম।
শাওন রেগে বলল, বেশি কথা বললে এগুলো সব ফেরত দিয়ে যাব।
শুনে মন খারাপ লাগলেও পরক্ষনেই হেসে বললাম, তাহলে দিয়ে দিলেই ভাল, তাও এত গুলো টাকা অপচয় করা ঠিক না।
বলেই আমি সব আবার দোকানদারের কাছে ফেরত দিয়ে এক হাজারের নোটটা নিলাম আর শাওনের দিকে এগিয়ে দিলাম।
এবার শাওন অবাক হয়ে গেল।
“কি হলো নিন!” আমি ওনার দিকে তাকিয়ে বললাম।
শাওন ভ্রুকুচকে তাকিয়ে বলল, আমার যথেষ্ট টাকা আছে।
আমি একটা নিঃশ্বাস ফেলে হাসিমুখে বললাম, যথেষ্ট আছে বলেই হয়ত মূল্য বুঝতে পারেন না। তবে যথেষ্ট আছে বলে আপনার অবহেলাও করা উচিত না। কারন সেটা আজ থাকলেও কাল না-ও থাকতে পারে। যেমন আমাকে দেখুন! আগে সব ছিল এখন কিছুই নেই।
আমার কথায় উনি কিছুসময় থমকে তাকিয়ে রইলেন।
আমি ভ্রু উঁচু করে বললাম, কী?
শাওন টাকাটা নিয়ে আবার দোকানের লোককে দিলেন আর ফেরত দেওয়া চিপস আর কোকের ব্যাগটা নিয়ে আমার সামনে এসে দাড়িয়ে সিরিয়াস হয়ে বলল, “আমি খুব ভালো করেই জানি কোনটার মূল্য কি। আর এটাও জানি কোনটা ধরে রাখতে হবে আর কোনটা ছেড়ে দিতে হবে। তাই না থাকার প্রশ্নই আসেনা। কারন যেটা আমার সেটা আমারই থাকবে। আর বাকি রইল অবহেলা! I know where It’s Worth to spend.”
বলেই আমার হাতে ব্যাগটা ধরিয়ে দিয়ে দোকান থেকে বের হয়ে গেল শাওন।
আমি ঘাড় একটু বাকিয়ে ওনার কথাটা বুঝতে চেষ্টা করতে লাগলাম। পিছন থেকে দোকানদার ছেলেটা হাসিমুখে বলে উঠল, স্যার মনে হয় আপনাকে অনেক ভালোবাসে, তাইনা ম্যাম!
আমি হকচকিয়ে ছেলেটার দিকে তাকালাম। তারপর চোখ বড়সড় করে দোকান থেকে বের হয়ে এলাম আর মনে মনে বলতে লাগলাম, “মাথা খারাপ নাকি দোকানদারের! গরিলাটা নাকি আমাকে ভালোবাসে! টাকা আছে তাই উড়াচ্ছে। কবে যে আমাকেও উড়িয়ে দেয় ঠিক নেই। গরিলা একটা।”
শাওন আমার সামনে সামনে হাটছে। আমি ওর দিকে তাকিয়ে হাটতে লাগলাম। দোকানদারের কথাটা আমাকে অন্যমনস্ক করে দিল। আর আমি আস্তে আস্তে বলে উঠলাম, ভালোবাসে! এটা কি সত্যি হতে পারে!
তারপর ওনার হাতের দিকে তাকালাম। আর নিজের অজান্তেই ওনার হাত ধরার জন্য হাত বাড়িয়ে দিলাম। কিন্তু ওনার ফোনটা সাথে সাথে বেজে উঠলো। আর আমি হাত না ধরে সরিয়ে নিলাম। উনি ফোন তুলে কানে দিয়ে কোনো একটা ক্লাইন্টের সাথে কথা বলতে লাগলেন। আমি মন মরা হয়ে দাঁড়িয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে রইলাম। উনি কথা বলতে বলতে একটু এগিয়ে গিয়ে আবার আমার দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালেন। আর ভ্রুকুচকে এগিয়ে এসে আমার হাত ধরলেন আর বললেন, দাড়িয়ে আছ কেন?
আমি অবাক হয়ে ধরে থাকা হাতের দিকে তাকালাম। উনি আমার হাত ধরেই নিয়ে যেতে যেতে ফোনে কথা বলতে লাগলেন আর আমি অনেক খুশির সাথে ধরে থাকা হাতের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে হাটতে লাগলাম। আর মাঝে মাঝে ওনার দিকে তাকিয়ে দেখতে লাগলাম। উনি ফোনে সিরিয়াস হয়ে কথা বলে যাচ্ছেন আর আমার হাত ধরে মোটামুটি দ্রুতই হাটছেন। ওনার সাথে পা মিলাতে না পারার কারনে আমি হালকা পিছিয়ে আছি। আর আমার কানে একটা কথাই বাজছে, স্যার মনে হয় আপনাকে অনেক ভালোবাসে। ভালোবাসে!
আমি ওনার টেবিলের সামনে বসে চিপস খাচ্ছি। উনি কোনো মিটিংয়ে গেছেন এখনো আসছেন না। বোরিং লাগছে।
একটু পরেই দরজা খোলার শব্দ হতেই আমি হাসি মুখে পিছনে ফিরলাম। কিন্তু পিছনে ফিরেই হাসি গায়েব হয়ে গেল। সুইটি রেগে দাঁড়িয়ে আছে।
আমি কি বলব বা কি করব কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না।
আমি উঠে দাড়ালাম আর ওর দিকে একরাশ অসস্তি নিয়ে তাকালাম। যদিও কাল ওর চুল টানতে ইচ্ছা করছিল কিন্তু আজ হালকা ভয় লাগছে। এজন্য না যে ও আমাকে কিছু করে ফেলবে। কিন্তু এজন্যই যে ও যদি শাওনকে আমার থেকে নিয়ে যায়!
“তুমি! Are you even qualified?” সুইটি তীব্র রাগের সাথে টিটকারি মেরে বলল।
আমি ভ্রুকুচকে ওর দিকে তাকিয়ে কিছু বলার আগেই ও আবার বলতে লাগল।
“শাওনকে ভালোবাসার নাটক করবা না একদম। শাওন যে তোমাকে জীবনেও ভালোবাসবে না তা আমি তা। because তুমি ওর টাইপের মেয়েই না।” রেগে অগ্নিমূর্তি হয়ে বলল সুইটি।
আমি এবার স্বাভাবিক ভাবেই বলে উঠলাম, আমি যে টাইপই হই না কেনো, আমার চরিত্র ঠিকই আছে। আজ একজন কাল আরেকজন এভাবে চলি না।
“হোয়াট!” সুইটি রেগে গেল।
“আপনার না একটা ছেলের সাথে বিয়ে ঠিক হয়ে আছে? তাও কেন শাওনের জীবনে আসতে চাচ্ছেন।” আমি রাগী চোখে তাকিয়ে বললাম।
সুইটি রাগে গজগজ করতে করতে আমার দিকে এগিয়ে এসে বলল, বিয়ে ভেঙে দিয়েছি আমি। আর সবটা আমি শীঘ্রই শাওনকে জানাবো। শুধু আমি সব জানানোর সুযোগটা পাচ্ছিনা। আর সত্যিটা শাওন জানলে পর তোমার এই তেজ আর থাকবে না। তখন শাওনের জীবনে কে থাকবে আর কে থাকবে না সেটাও বুঝতে পারবা।”
আমি লাস্ট কথাটার মানে ঠিক বুঝলাম না। তাই চিন্তায় পরে প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম।
সুইটি আঙুল তুলে রাগী গলায় বলল, just you wait and see!
বলেই সুইটি বের হয়ে চলে গেল। আমি থমকে দাঁড়িয়ে রইলাম। কি সত্যি জানার বাকি! শাওন সেই সত্যিটা জানলে কি আমাকে সত্যি সত্যি ছেড়ে দেবে!
এটা চিন্তা করতেই বুকের ভিতরটা মোচড় দিয়ে উঠল।
জীবনে কি আমি সবাইকেই হারিয়ে ফেলব! কিন্তু এটা ত সত্যি আমি ওনার জন্য হয়ত মানানসই না! কিন্তু তাও কি উনি আমাকে একটুও মেনে নিতে পারবেন না?
চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পরতে লাগল। কিন্তু এসব চোখের জলের কোনো মূল্য নেই। একটা নিঃশ্বাস মুখ দিয়ে বের করে দিয়ে আমি চোখ মুছলাম। তারপর চেয়ারে বসে সুইটির বলা কথা গুলো চিন্তা করতে লাগলাম।
অনেকক্ষণ পর শাওন এসে কেবিনে ঢুকলো। আমি তাকালাম না। উনি নিজের চেয়ারের কাছে যেতে যেতে আমাকে বললেন, লাঞ্চ টাইম এখন।
আমি ওনার দিকে তাকিয়ে তারপর টেবিল থেকে চিপস গুলো সরিয়ে সোফায় রাখলাম।
“কি হয়েছে!” শাওন ভ্রুকুচকে তাকিয়ে বলল।
আমি কোনো উওর দিলাম না। নিজের মত চেয়ারে এসে বসে রইলাম।
শাওন আরো কিছু বলার আগেই একজন কেবিনের দরজায় নক করল।
আমি ঘাবড়ে গেলাম যে সুইটি কি এখন কিছু বলবে শাওনকে? এজন্য এসেছে!
“Yeah, come in.” শাওন বলতে বলতে চেয়ারে বসল।
আমি ভীত চোখে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালাম। কিন্তু আমার ধারণা ভুল হলো। খাবার দিতে এসেছে এক লোক। দেখে আমি সস্তি পেলাম।
সেদিন সারাদিন আর কোনো কথাই বললাম না। চুপচাপ বসে রইলাম। শাওন কাজের ফাকে কয়েকবার আমার দিকে ভ্রুকুচকে তাকালো। কিন্তু আমার মাথায় ওই একটা জিনিসই ঘুড়তে লাগল যে সত্যিটা কি হবে? আর উনি কি সত্যিই আমাকে ছেড়ে দেবেন?
চুপচাপ গাড়িতে বসে আমি সীট বেল্ট বাধলাম। শাওন উপহাস করে বলল, যাক এতদিনে তোমার বেশি কথা বলা বন্ধ হলো।
আমি ওনার কথার কোনো উওর দিলাম না। জালানা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে রইলাম।
শাওন আমার এক বাহু ধরে টান দিতেই আমি ওনার দিকে ভ্রুকুচকে তাকালাম।
“কি হয়েছে তোমার?” শাওন সিরিয়াস হয়ে জিজ্ঞেস করল।
আমি হাত ছাড়িয়ে নিয়ে শক্ত মুখ করে বললাম, কিছু হয়নি। তাছাড়া আমি কথা বললেই ত সমস্যা, তাই এখন যেহেতু বলছি না, সেহেতু সমস্যা হবার ত কথা না।
আমি আবার জালানার দিকে তাকালাম। ইদানীং উনি জালানাও খুলে রাখেন দেখছি। ওনার না জানালা খোলাতে সমস্যা?!
শাওন গাড়ি স্টার্ট দিলো।
বাসায় ফিরে অনেক সময় নিয়ে গোসল করলাম। তবে যতই চেষ্টা করছি না কেন মাথা থেকে চিন্তাটা সরছেই না। এত চাপ আমি সত্যিই আর নিতে পারছি না।
গোসল সেরে মাথায় তোয়ালে পেচিয়ে বের হয়ে এলাম। সাথে সাথে শাওনকে রুমে দেখতে পেলাম। উনি আমাকে দেখে ভ্রুকুচকে বললেন, “এত সময় গোসল করেই ত তুমি….”
“জ্বর বাধাব না। আপনার চিন্তা করতে হবে না। আর বাধালেও আপনার আমাকে কষ্ট করে সেবা করতে হবে না।” আমি শাওনকে থামিয়ে দিয়ে একটা শুকনা হাসির সাথে কথাগুলো বললাম।
“What’s wrong with you!” শাওন আশ্চর্য হয়ে ভ্রুকুচকে তাকিয়ে বলল।
আমি কিছু না বলে অন্যদিকে তাকিয়ে রইলাম।
শাওন কিছু একটা বলার আগেই ওর ফোন বেজে উঠল। শাওন আমার দিকে একবার তাকিয়ে তারপর ফোন রিসিভ করে বেরিয়ে গেল।
আমি একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বেলকোনির কাছে এসে দাড়ালাম।
একটু পরেই শাওন দরজায় টোকা দিয়ে বলল, ডিনার করতে আসো।
আমি চুপচাপ ডিনার করলাম। আর ডিনারের সময় ওনার চাহনিতে যা বুঝলাম তা হলো, উনি আমার এই চুপচাপ থাকাটা ঠিক হজম করতে পারছেন না।
আমি ডিনার সেরে এসে বেলকোনির এক কোনায় থাকা বড় সোফার মত চেয়ারে উঠে বসলাম। স্নোবেল আমার পায়ের কাছে এসে বসল। আমি ওর দিকে তাকিয়ে ম্লান হাসি দিলাম। তারপর দুইহাতে হাটু জড়িয়ে ধরে রেলিং এ মাথা হেলিয়ে দিলাম। আর অনেক আকাশ পাতাল চিন্তা করতে করতে কখন যে ঘুমিয়ে গেলাম টেরও পেলাম না।
সকালে ঘুম ভাঙতেই নিজেকে বিছানায় আবিষ্কার করলাম। কিন্তু আমি ত বাহিরে ছিলাম! … তারমানে উনি রাতে আমার রুমে এসেছিলেন! নাকি আজও আমার সাথে ঘুমাচ্ছেন?!
আমি ফট করে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালাম আর সাথে সাথে হা হয়ে গেলাম। সত্যিই উনি আজও আমার সাথে ঘুমাচ্ছেন। তাও আবার আমার ওড়না ওনার হাতের মুঠোয় চেপে ধরে ঘুমোচ্ছেন। আমি ওনার দিকে পাশ ফিরলাম। সত্যিই আশ্চর্যের। উনি আমার বিছানায় কেন ঘুমাচ্ছেন?
তবে হয়ত আমি এইভাবে ওনার সাথে আর বেশিদিন থাকতে পারব না। এটা ঠিক যে আমি ওনার জন্য পারফেক্ট না কিন্তু এটুকু জানি যে আমি ওনাকে ছাড়তে পারব না। না, আসলে আমি ওনাকে ছাড়তেই চাই না। একদমই না। কিন্তু উনি কি চান?
চিন্তা করতে করতে আমি এক হাত বাড়িয়ে ওনার গাল স্পর্শ করে ফেললাম। আর তখনি শাওন আস্তে করে চোখ খুলে তাকালো। আমি হকচকিয়ে গেলাম। শাওন ভ্রুকুচকে আমার হাতের দিকে আড়চোখে তাকালো।
আমি ফট করে হাত সরিয়ে নিয়ে হাসার ভান করে বললাম, ম..মশা, হেহে মশা ছিল।
শাওন স্বাভাবিক ভাবেই আমার দিকে তাকিয়ে রইল। আমি চোখ সরিয়ে নিলাম আর একটা ঢোক গিলে মনে মনে বললাম, ‘এখন আবার কি হলো?’
শাওন উঠে বসল আর আমার ওড়নাটা ছেড়ে দিল। উনি খাট থেকে নামতে যাওয়ার সাথে সাথে আমি ওনার এক হাত আমার দুই হাত দিয়ে চেপে ধরলাম। শাওন ভ্রুকুচকে আমার দিকে তাকালো।
আমি রাগী চোখে ওনার দিকে তাকিয়ে বললাম, আপনি রাতে রাতে এসে আমার সাথে ঘুমান কেনো!
আমার প্রশ্ন শুনে শাওন এক পলক আমার দিকে তাকিয়ে তারপর আমার দিকে ঝুকে আসলো আর আমার দুইপাশে দুই হাত রাখলো।
আমি চোখ বড়সড় করে মাথাটা একটু পিছনে সরিয়ে নিলাম।
শাওন সিরিয়াসভাবে আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বলল, তোমার কি মনে হয়, কেন?
আমি চোখ বড়সড় করেই তাকিয়ে রইলাম। একদিকে হার্টও জোরে জোরে বিট করছে। অন্যদিকে সারা শরীরও কাপছে কারন হালকা ভয়ও লাগছে।
শাওন কপাল কুচকে বলল, “আমি কাছে আসলে এত কাপাকাপি শুরু করো কিসের জন্য! আমি কি তোমাকে খেয়ে ফেলব নাকি?”
(চলবে…)
(চলবে…)