১৬ বছর বয়স পর্ব ৩১+৩২

গল্পর নাম : #১৬_বছর_বয়স
#পর্ব_৩১ : #A_cup_of_tea
লেখিকা : #Lucky

“আমি কাছে আসলে এত কাপাকাপি শুরু করো কিসের জন্য! আমি কি তোমাকে খেয়ে ফেলব নাকি?”
আমি ঢোক গিলে বললাম, এ.. এ… একটু দূ…দূরে সরে ক…থা বলেন।
শাওন ভ্রুকুচকে আমার দিকে তাকিয়ে সরে গেল।তারপর দরজা খুলে চলে গেল।
উনি বের হবার সাথে সাথে আমি বুকের উপর হাত দিয়ে হাপাতে লাগলাম। স্নোবেল দরজা খোলা পেয়ে আমার দিকে দৌড়ে আসলো তারপর এক লাফ দিয়ে বিছানায় উঠে গেল। বুঝিনা উনি স্নোবেলকে কেন বাহিরে রেখে দেন! স্নোবেল লেজ নাড়তে নাড়তে আমার কোলে এসে বসলো।

ফ্রেস হয়ে নাস্তা করতে এলাম। নাস্তার টেবিলে বসে কোনোদিকে না তাকিয়ে শুধু মাথা নিচু করে নিজের প্লেটে মনোযোগ দিলাম। তবে এটা বেশ ভালোই বুঝতে পারছি যে উনি আমার দিকে ভ্রুকুচকে তাকিয়ে আছেন।

খাওয়া শেষ করে উঠতেই উনি গম্ভীর গলায় আমাকে বললেন, তোমার ফোন কোথায়?
আমি ওনার দিকে ভ্রুকুচকে তাকিয়ে বললাম, কেন?

“কোথায়?” উনি উওর না দিয়ে রেগে বললেন।
আমি দাত কিরমির করে মনে মনে গালি দিয়ে বললাম, আনছি।
আমি রুম থেকে ফোনটা এনে ওনার হাতে দিলাম। উনি নিজের ফোন বের করে টেবিলে রাখলেন তারপর আমার ফোনে কিছু টাইপ করতে লাগলেন।
আমি বিষয়টা বুঝতে চেষ্টা করতে লাগলাম যে গরিলাটা করছে টা কি!
হঠাৎই শাওনের ফোনটা বেজে উঠল। শাওন কল টা কেটে দিলো। তারপর আমার ফোনটা আমার দিকে ধরে বলল, এটা আমার নাম্বার। কল দেওয়ার সাথে সাথে ধরবা।
রাগমিশ্রিত কন্ঠে আমাকে থ্রেট দিয়ে দিল শাওন। আমি রেগে এক থাবা দিয়ে ফোনটা নিলাম।
শাওন ভ্রুকুচকে বলল, “কলেজে নামিয়ে দিয়ে আসব। আর কলেজ শেষে সেখান থেকে সোজা বাসায় আসবা। আর যদি এদিক ওদিক ছোটাছুটি করতে দেখি, Then you know me!”
আমি কপাল কুচকে অন্যদিকে তাকিয়ে রইলাম। হুকুম চালাচ্ছে দিন দিন।
উনি আমাকে কলেজে নামিয়ে দিয়ে চলে গেলেন। অর্থাৎ সেই বোরিং কলেজে বসে বসে পচতে লাগলাম।
|
|
কলেজ শেষ না করেই আমি শাওনের অফিসে রওনা হলাম। কারণ সুইটির বিষয়টা বার বার আমাকে ভয় পাইয়ে দিচ্ছে। না জানি সে কি সত্যি নিয়ে বসে আছে!
কিন্তু অফিস পর্যন্ত আমাকে আর যেতে হলোনা। আমি রাস্তাতেই একটা বড়ো হোটেলের সামনে শাওনকে দেখতে পেলাম। দেখার সাথে সাথে মুখে এমনিই একটা হাসি চলে এলো। আমি রিক্সা থামাতে বলে নেমে পরলাম। এখন কথা হচ্ছে রাস্তার ওপারে উনি। আর এত গাড়ি যে পার হতেও পারছি না।
তবে এই পার থেকেই দেখে বুঝতে পারছি যে উনি গোমড়া মুখ করে অন্যমনস্ক হয়ে আছেন।
“গারিলাটার আবার কি হলো!” মনে মনে বললাম আমি। তারপর রাস্তা পার হবার জন্য পা বাড়ানোর আগেই আমি থমকে গেলাম। আর মুখের হাসিটাও উবে গেল। কারন সেই মুহুর্তেই সুইটি এসে শাওনের হাত ধরে শাওনকে ওর দিকে ঘুরালো।
মেয়েটা অনেক কেদে কেদে কিছু বলছে হয়ত শাওনকে। আমি স্থিরভাবে দাড়িয়ে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম। আমি শুধু সুইটির মুখটাই দেখতে পাচ্ছি। কারন ওরা মুখোমুখি দাড়ানো। শাওনকে সুইটি কাদতে কাদতে অনবরত হাত নাড়িয়ে কিছু বুঝাতে ব্যস্ত। এক পর্যায়ে এসে সুইটি শাওনের কাধে মাথা ঠেকিয়ে কাদতে লাগল।
এগুলো দেখার জন্য আমি আর ওখানে দাড়ালাম না। একটা রিক্সা দাড় করিয়ে উঠে বসলাম আর সোজা বাসাতে ফিরে এলাম।
স্নোবেল আমার দিকে এগিয়ে এসে লেজ নাড়তে লাগল। কিন্তু আজ ওর মাথায় আর হাত বুলিয়ে দিলাম না। এইভাবে আমার আর থাকতে ইচ্ছে করছে না।
আমি হুট করে দুই পায়ের উপর বসে হাটু জড়িয়ে ধরে কাদতে লাগলাম। স্নোবেল চিন্তিত হয়ে আমার চারিদিকে ঘুরতে লাগল। আর মুখ দিয়ে আস্তে আস্তে সান্ত্বনা দেওয়ার মত শব্দ করতে লাগলো। কিন্তু আমার কান্না আমি থামাতে পারলাম না। অনেক সময় ওভাবে থাকার পর আমি নাক মুখে পানি দিয়ে রুম থেকে বের হলাম। অন্যমনস্ক থাকলে হয়ত ভাল লাগতে পারে তাই রান্নাঘরে রান্না করতে চলে গেলাম। ফ্রিজের সব কুমড়ো একসাথে ভেজে নিলাম। তারপর ডাইনিং এ বসে খেতে আরম্ভ করলাম। চোখ দিয়ে গড়িয়ে পানি পরতে লাগল। আমি কুমড়ো কেন খাচ্ছি তা নিজেও জানিনা। স্নোবেল আমার দিকে দুঃখিত চোখে তাকিয়ে চুপচাপ ফ্লোরে বসে রইল।

আমি নিজের প্লেট ধুয়ে রুমে চলে এলাম। তারপর চুপচাপ শুয়ে এপাশ ওপাশ ফিরতে লাগলাম। অসহ্যকর এক অসস্তি আর কষ্ট আমাকে গ্রাস করে ফেলছে। স্নোবেল না খেয়েই আমার পাশে এসে শুয়ে পরল। আমি বিকাল থেকে শুরু করে রাত দশটা অব্দি শুয়েই রইলাম। শাওন সাধারণত আটটার আগে আগেই আসে কিন্তু আজ আসলো না। এজন্য আরো বেশিই খারাপ লাগতে শুরু করল। রাত আরোই বাড়তে লাগল আর আমি অপেক্ষা করতে করতে আমি ঘুমিয়ে পরলাম।

যখন চোখ খুললাম তখন সকাল হয়ে গেছে। কিছুক্ষণ একদৃষ্টে তাকিয়ে থেকে তারপর হুট করে মনে হলো শাওন কি আমার পাশে? মনে হতেই আমি পাশ ফিরলাম। কিন্তু না। উনি আজ আমার সাথে ঘুমান নি। স্নোবেলই চোখ খুলে শুয়ে আছে। আমাকে ঘুরতে দেখেই স্নোবেল মাথা তুলে লেজ নাড়তে লাগল।
তাহলে কি সুইটির সাথে ওনার সব ঠিক হয়ে গেছে? চিন্তা করেই আমার গলা শুকিয়ে গেল। নাকি উনি রাতে বাসাতে ফিরেই আসেন নি?
আমি তাড়াতাড়ি বিছানা ছেড়ে নেমে রুম থেকে বের হলাম। আর বের হতেই শাওনকে দেখতে পেলাম। উনি টেবিলে খাবার রেডি করছিলেন। আমার দিকে একবার ঘাড় ঘুরিয়ে তাকিয়ে তারপর আবার খাবার রেডি করতে ব্যস্ত হয়ে গেলেন।
“কখন এসেছিলেন আপনি রাতে?” আমি শান্ত গলায় প্রশ্ন করলাম।
শাওন আমার দিকে না তাকিয়েই বলল, at 12:30 maybe. Why?”
“এত দেরি কেনো?” আমি দরজার কাছে দাড়িয়েই অনেক ব্যস্ত হয়ে প্রশ্নটা করলাম।
শাওন এবার আমার দিকে ভ্রুকুচকে তাকিয়ে বলল, তোমার এত concerned হবার কারন কি? কাজ ছিল আমার।
বলেই উনি নিজের রুমের দিকে যেতে যেতে বললেন, ফ্রেস হয়ে খেতে বসো।
‘সত্যিই ত, আমার উদ্ধিগ্ন হওয়ার কারন কি! উনি যত রাতেই আসুক কিংবা সুইটির সাথে থাকুক সেটা ওনার ইচ্ছা।’ মনে মনে বললাম আমি। কিন্তু এই তীব্র কষ্ট সহ্য করতে পারছি না।

ফ্রেস হয়ে নাস্তা করতে এলাম। শাওন সাদা শার্টের হাতা ভাজ করতে করতে চেয়ারে বসল আর নিজের ফোন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে গেল। আমি ওনার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে তারপর নিজের প্লেটের দিকে তাকিয়ে রইলাম।
“তাকিয়ে না থেকে খাও।” শাওন ফোনের দিকে তাকিয়েই বলল।
আমি ওনার দিকে করুন দৃষ্টিতে তাকালাম।
উনি আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, কি?
এই মুহূর্তে আমার একটা প্রশ্ন খুবই করতে ইচ্ছে করছে যে, ‘আমি যদি আপনাকে ছেড়ে চলে যাই আপনি কি আমাকে খুজবেন?’
কিন্তু প্রশ্নটা গলা অব্দিই আটকে রইল। মুখে বলতে পারলাম না।
শাওন ভ্রুকুচকে তাকিয়ে বলল,”hey, is something wrong with the food?”
আমি ওনার দিকে থেকে চোখ সরিয়ে প্লেটের দিকে তাকালাম এবং না সূচক মাথা নাড়লাম। তারপর একটা নিঃশ্বাস ফেলে খেতে আরম্ভ করলাম।
“You are acting strange!” শাওন বলল।
আমি এবার ওনার দিকে ভ্রুকুচকে তাকিয়ে বললাম, “আমার একটা নাম আছে।”
“মানে?” শাওন পানির গ্লাস থেকে পানি খেতে খেতে বলল।
“মানে আমার নাম আছে। সারাক্ষণ হেই, ওই, গাধা, ষ্টুপিড এগুলো বলে ডাকেন কেন?” আমি বিরক্তির সাথে তাকিয়ে বললাম।
শাওন স্বাভাবিক চোখে আমার দিকে তাকিয়ে রইল।
আমার সত্যিই রাগ লাগছে। গরিলাটা এখন অব্দি আমাকে এগুলো বলেই ডেকেছে। অসভ্য গরিলা।
শাওন টেবিল ছেড়ে উঠতে উঠতে বলল, জলদি করো।
বলেই শাওন নিজের রুমে চলে গেল। ভাব এমন নিচ্ছে যেন শুনতে পায়নি আমি কি বললাম। নাকি উনি আমার নামই জানে না!

শাওন আমাকে কলেজে নামিয়ে দিয়ে অফিসে চলে গেল।
কিন্তু আমার কিছুই ভালো লাগছে না। কারন মনের মধ্যে যে কি চলছে সেটা কাউকেই বুঝাতে পারব না। শুধু জানতে ইচ্ছে করছে সুইটি কি বলল সেদিন ওনাকে!
ধুর, ইচ্ছে করছে কোথাও চলে যাই যেখানে কোনো অশান্তি নেই, চিন্তা নেই, কষ্ট নেই। কিন্তু এমন জায়গা এখন কোথায় পাব!
কলেজে ঢুকেও বের হয়ে এলাম। তারপর রাস্তা দিয়ে হাটতে লাগলাম। অনেক দূর অব্দি হেটে আসলাম। হঠাৎ পিছন থেকে একটা ছেলে বলে উঠল, হেলো।
আমি থেমে পিছনে তাকালাম।
আবার সেই ছেলেটা। অর্থাৎ সুইটির সেই হবু বর। আমি স্বাভাবিক ভাবেই তাকিয়ে আবার ঘুরে হাটতে শুরু করলাম। একে ত সুইটির কথাগুলো ভুলতে চাচ্ছি তার উপর তার বরও এসে হাজির।
ছেলেটা এসে আমার সামনে দাড়িয়ে গেল। আমি হকচকিয়ে গেলাম।
ছেলেটা অনেক দুঃখিত চোখে তাকিয়ে বলল, সরি ওই দিনের জন্য। আমার জন্য হয়ত অনেক ঝামেলা পোষাতে হয়েছিল।
আমি বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পরে গেলাম। আমি আসলে ওনার সাথে কথাই বলতে চাচ্ছি না।
“দেখুন আমি জানিনা আপনাদের মধ্যে কি ঝামেলা কিন্তু আমি এ বিষয় কোনো কথা বলতে চাইনা।” একটু চোখ নামিয়ে বললাম আমি।
“It’s ok. বাট আমার কিছু দরকারি কথা ছিল।” ছেলেটা অনুরোধের সুরে বলল।
আমি দ্বিধায় পরে ওনার দিকে তাকালাম আর বলতে লাগলাম, ”আমি শুনতে চাইনা তাই….”
ছেলেটা আমাকে থামিয়ে দিয়ে একটা বন্ধুসুলভ হাসির সাথে বলল, নেক্সট দেখাতে কিছু পরিশোধ করার কথা ছিল। A cup of tea, remember?

আমি ভ্রুকুচকে ওনার দিকে তাকালাম। উনি আমার পায়ের দিকে ইশারা করে একটা নিঃশব্দ হাসি দিল। অর্থাৎ সেই জুতোর বিষয় বলছেন উনি। আর সেটা আজ আমার পায়ে নেই। থাকলে আমি এখনি খুলে দিয়ে দিতাম।
ধুর ছাতা কেনো যে সেদিন বের হলাম! ঘরে বসে থাকলে এমন হত! কিন্তু আসল দোষ ত ওই গরিলাটার। আমার সাথে ওমন ব্যবহার দিল তাই ই ত আমি…!
“What are you thinking?” ছেলেটা প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল।
আমি এদিক ওদিক তাকিয়ে বললাম, আমি আপনাকে টাকা দিয়ে দিচ্ছি আপনি বরং খেয়ে আসুন।
ছেলেটা এবার একটু শব্দ করেই হেসে দিল। আমি বিব্রতকর দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম।
“ভয় নেই, এটাই আমাদের লাস্ট মিটিং, I Won’t show up Again.” ছেলেটা সিরিয়াস হয়ে বলল।
আমি দ্বিধায় পরে তাকিয়ে রইলাম।
উনি অনুরোধ সূচক চোখে তাকিয়ে রইলেন।
“চ..চলুন।” ইচ্ছে না থাকার সত্বেও যেতে হলো। আশা করি এটাই শেষ দেখা হবে।

একটা রেস্টুরেন্টে এসে ঢুকলাম। আমি খুব যে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছি তাও না।
উনি একটা টেবিলের কাছে গিয়ে দাড়ালেন আর বললেন, এটাতে বসি!
আমি কিছু না বলে এগিয়ে গিয়ে বসলাম৷ কাচের দেয়ালের পাশেই টেবিলটা। উনি আমার মুখোমুখি বসলেন। তারপর হাসিমুখে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, কেমন আছ?
আমি একটু হকচকিয়ে গেলাম। কারন উনি আমাকে তুমি করে কথা বলা শুরু করেছেন। নাকি আগে থেকেই বলত!
“কি?” ছেলেটা ঠোঁট উলটে বলল।
আমি বললাম, হ্যা আমি ভাল আছি। আ..আপনি?

ছেলেটা নিজের গালের দিকে ইশারা করে বলল, “ভাল নেই।”
ওনার গালে একটা ওয়ান টাইম ব্যান্ডেজ লাগানো। যদিও আগে খেয়াল করেছিলাম কিন্তু প্রশ্ন করিনি।

আমি একটু বিব্রতকর হাসি দিয়ে বললাম, অহ আচ্ছা।
“কে করেছে জানো?” ছেলেটা একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে বলল।
আমি মনে মনে বললাম, আমি কেম্নে জানব!
কিন্তু মুখে কিছু না বলে তাকিয়ে রইলাম।
“শাওন করেছে।” ছেলেটা সিরিয়াস হয়ে বলল।
আমার চোখ বড়সড় হয়ে গেল।
“উনি কেন করবেন?” আমি প্রশ্ন করে উঠলাম।
“তোমার কি মনে হয় কেন করবে?” ছেলেটা উজ্জ্বল হাসির সাথে মেনু কার্ডটা হাতে নিতে নিতে বলল।
আমি বুঝতে না পেরে তাকিয়ে রইলাম।
ছেলেটা মেনু চেক করে আমাকে বলল, দুইটা হট কফি অর্ডার দিতে চাচ্ছি।
আমি কিছু না বলে চিন্তায় মগ্ন হয়ে রইলাম। উনি সুইটির জন্য এই ছেলেটার গায়ে হাত তুলেছেন!
ছেলেটা হাতে একটা তূরী বাজিয়ে বলল, কি হলো?
আমি ভাবনার জগৎ থেকে বের হয়ে বললাম, হ্যা বলুন।
ছেলেটা একটু মাথা চুলকে বলল, “আমরা এখনো একে অপরকে ভালো মত চিনি ই না!”
বলেই ছেলেটা হাসিমুখে বলল, “আমি সৌরভ, একজন আর্কিটেক্ট লাইক শাওন, and you?”
আমি একটু অবাক হলাম। উনিও আর্কিটেক্ট! তারপর বললাম, “আমি মিলা।”
“নাইচ নেইম। সো মিলা, এই রেস্টুরেন্টে সেল্ফ সার্ভিস। So you need to go there and place order.” সৌরভ আমাকে আঙুল দিয়ে রিসিপশনের দিকে ইশারা করে বলল।
আমি হ্যাসূচক মাথা নাড়িয়ে নিজের পার্স নিয়ে অর্ডার করতে চলে গেলাম। অর্ডার করে একবারে কফি হাতে নিয়েই ফিরে এলাম।
সৌরভ কাউকে ফোন করতে করতে কফি হাতে নিলো। কফি হাতে ধরেই আবার কাউকে ফোন দিতে লাগল৷ যা বুঝলাম তা হলো যাকে ফোন দিচ্ছে সে ধরছে না। বেচারা ভ্রুকুচকে কল করেই যাচ্ছে।
আমি কফি হাতে নিয়ে শুধু নাড়তেই লাগলাম। হঠাৎ সৌরভ বলে উঠল, “মিলা, তোমার ফোন আছে?”
আমি হ্যাসূচক মাথা নাড়লাম।
উনি হাত বাড়িয়ে বললেন, প্লিজ একটু দেওয়া যাবে?
আমি হ্যাসূচক মাথা নাড়িয়ে ব্যাগের মধ্যে থেকে ফোনটা বের করে ওনাকে দিলাম।
উনি আমার ফোন নিয়ে কি যেন করতে লাগলেন। উনিও কি আবার আমার ফোন নাম্বার নিবে নাকি?
চিন্তা করেই আমি চোখ বড়সড় করে বলে উঠলাম, কি করবেন আপনি?
সৌরভ আমার ফোনের দিকে তাকিয়ে হেসে দিল। আমি ভ্রুকুচকে তাকিয়ে বললাম, কি?
সৌরভ অট্টোহাসিতে ফেটে পরল আর বলল, শাওনের নাম্বার গরিলা লিখে সেভ করা!
আমি জলদিই ফোন টা নেওয়ার জন্য হাত বাড়ালাম কিন্তু উনি সরিয়ে নিলেন। তারপর হাসি থামিয়ে ঠোঁট উলটে বললেন, আমি তোমার ফোন দিয়ে একটু ফোন করব। ওকে?
আমি কিছু বললাম না। শুধু ভ্রুকুচকে তাকিয়ে রইলাম।
উনি ফোনটা নিয়ে নিজের কানে দিলেন। আমি আবার নিজের কফি নাড়তে লাগলাম।
আসলে সৌরভ শাওনকে ফোন করছিলো। কিন্তু উনি তুলছিলেন না। তাই সৌরভ আমার ফোনটা চেয়ে নিয়ে শাওনকে কল দিল।
শাওন মিটিং এ ছিল। আমার কল ঢুকতে দেখে রিসিভ করে কানে দিল।
সৌরভ ফোনটা কান থেকে নামিয়ে টেবিলে রেখে আমার দিকে একটা নিঃশব্দ হাসি দিয়ে বলল, I knew it, তোমার কল ধরবেই।
আমি ভ্রুকুচকে সৌরভের দিকে তাকালাম। কারন উনি কি বিষয় কথা বলছেন আমি বুঝলাম না।
“এখানে আসার জন্য ধন্যবাদ।” সৌরভ হাসিমুখে বলল।
শাওনের থমকে গেল।

আমি ওনার দিকে ভ্রুকুচকে তাকালাম। সৌরভ সিরিয়াস চাহনির সাথে আমার দিকে তাকিয়ে বলল, “মিলা, আমি পছন্দ করি তোমাকে।”
শুনেই আমি চোখ বড়সড় করে ফেললাম। হঠাৎ কি বলছে এসব উনি!

শাওনের টেবিলের উপর থাকা হাত মুষ্টিবদ্ধ হয়ে গেল কারণ ফোনের ওপাশ থেকে শাওন এগুলো সবই শুনছে।

আমি বললাম, “আপনি হঠাৎ এসব…!”
“I am serious.” শক্ত চোখ মুখ করে কথাটা বলল সৌরভ।
যদিও ওনাকে দেখে মনে হচ্ছেনা যে উনি মজা করছেন। কিন্তু আমি বিবাহিত তা ত উনি জানেন। আর তাছাড়া সুইটির সাথে ওনার সামনে বিয়ে তাও কেন উনি এমন ভাবে বলছেন?
“আমি জানি তুমি শাওনের সাথে ভাল নেই। তাই প্লিজ তুমি শাওনকে ছেড়ে দেও, I will marry you and believe me, you will be happy with me.” সৌরভ বলে উঠল।
গল্পর নাম : #১৬_বছর_বয়স
#পর্ব_৩২ : #আপনি_পছন্দ_করেন_আমাকে?
লেখিকা : #Lucky

“আমি জানি তুমি শাওনের সাথে ভাল নেই। তাই প্লিজ তুমি শাওনকে ছেড়ে দেও, I will marry you and believe me, you will be happy with me.” সৌরভ বলে উঠল।

শাওন অতিরিক্ত রেগে নিজের ফোন কান থেকে নামিয়ে আবার কানে দিলো। মিটিং এর সবাই শাওনের দিকে হা করে তাকিয়ে রইল।

আমি শক্ত মুখে সৌরভকে বলতে লাগলাম, “আমি আপনাকে পছন্দ করিনা। আর দয়া করে ওনাকে কষ্ট দেওয়ার জন্য নতুন করে কোনো কিছু করার চেষ্টা করবেন না। হতে পারে উনি আমাকে পছন্দ করেন না, কিন্তু তার মানে এটা না যে আমার আপনাকে প্রয়োজন হবে।”
শাওনের রাগ চোখমুখ থেকে সরে গেল। বরং এখন স্তম্ভিত হয়ে রইল।
সৌরভ একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে বলল, সো তুমি পছন্দ করো শাওনকে! রাইট?
আমি হকচকিয়ে গেলাম আর সাথে সাথে বলে উঠলাম, মো..মোটেও না। আ…আমি কেন ওনাকে পছন্দ করব!

শাওন রেগে ভ্রুকুচকে বলে উঠল, how dare she..!

মিটিং এর সবাই না বুঝতে পেরে হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইল। কিন্তু শাওনের সেদিকে খেয়াল নেই।

সৌরভ এবার ভ্রুকুচকে মুচকি হাসি দিয়ে বলল, “আমাকে বললা যে পছন্দ করোনা, আর শাওনকে ‘মোটেই’ পছন্দ করোনা। তারমানে শাওনের চান্স ১% হলে আমার চান্স ১০%, ওর থেকে বেশি রাইট?”
আমি চোখ বড়সড় করে তাকালাম।
সৌরভের কথা শুনে শাওনের মেজাজ আবার বিঘড়ে গেল।

সৌরভ হেসে আমাকে বলে উঠল, রিল্যাক্স। এভাবে তাকানোর কিছুই হয়নি। এভাবে তাকালে তোমাকে অনেক বেশিই সুন্দর লাগে।
আমি ওনার এই কথা শুনে অনেক বিব্রতবোধ করতে লাগলাম।
সৌরভ একটু মন খারাপের ভান করে বলল, So you just rejected me?!
আমি এদিক ওদিক তাকাতে লাগলাম।
সৌরভ পরক্ষণেই নিজের মুখে একটা হাসি টেনে এনে বলল, কি আর করার!
আমি চোখ পিটপিট করে ওর দিকে তাকালাম।
সৌরভ আমার ফোনটা টেবিল থেকে হাতে নিতে নিতে বলল, But I want something.
আমি প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে সৌরভের দিকে তাকালাম।
“I want to hug you for the first and last time.” সৌরভ হাস্য উজ্জ্বল চোখে তাকিয়ে বলল।
আমি চমকে চোখ বড়সড় করে তাকালাম।

এটা শোনার সাথে সাথে শাওন রেগে মিটিং এর মধ্যে উঠে দাঁড়িয়ে বলে উঠল, হোয়াট ননসেন্স!
সৌরভ তখনি ফোনটা কেটে দিল। শাওন অনেক বেশিই রেগে গেল এখন।
“dammit.” বলেই আবার কল দিল। কিন্তু ফোন আর ঢুকলো না।

সৌরভ আমাকে ওভাবে চমকে যেতে দেখে হাসতে লাগল। আমি বোকা সেজে গেলাম।
সৌরভ হাসি থামিয়ে সিরিয়াস হয়ে তাকালো আর বলল, Hope it works for you.
আমি না বুঝে তাকিয়ে রইলাম।
সৌরভ একটা নিঃশ্বাস ফেলে আমার দিকে তাকিয়ে বলল, আমি জানতাম না তুমি শাওনের স্ত্রী। Even এটাও জানতাম না যে তুমি বিবাহিত।
আমি সৌরভের দিকে তাকিয়ে আবার চোখ সরিয়ে নিলাম।
“একচুয়েলি আই হেট শাওন।” স্বাভাবিক ভাবেই বলল সৌরভ।
আমি ভ্রুকুচকে ওর দিকে তাকালাম।
“কিন্তু এখন আমি যা করছি সেটা শাওনের জন্য না। তোমার জন্য করছি। কারন আমার জন্য তুমি কষ্ট পেলে সেটা আমার একদমই ভাল লাগবে না। কারণ আমি কোনোদিনো তোমার খারাপ চাই ই না।” সৌরভ হালকা হাসি মুখে বলে যেতে লাগল।
কিন্তু ওর কথা আমি কিছুই বুঝে উঠতে পারলাম না। আমার জন্য করছেন মানে কি? কি করছেন?

“Because my feelings for you are serious.” এই কথাটা বলেই সৌরভের হাসি মুখ ম্লান হয়ে গেল।

আমি কি বলব বুঝতে পারলাম না। কারন এর আগে এমন পরিস্থিতিতে আমি পরি নি। এভাবে কেউ আমাকে এসব বলেও নি।
আমাকে বিব্রতবোধ করতে দেখে সৌরভ আবার উজ্জ্বল হাসি দিয়ে বলল, Don’t feel awkward.

আমি দুইহাত দিয়ে কফির মগটা ধরে সৌরভের দিকে তাকিয়ে বললাম, আপনি ওনাকে ঘৃণা করেন কেনো?
সৌরভ নিজের গালে এক হাত রেখে অল্প হাসির আভার সাথে বলল, “কারন ও সব কিছুতে এগিয়ে। শাওন যে কোম্পানি চালাচ্ছে সেটা আমার চালানোর কথা ছিল।”
আমি বুঝতে চেষ্টা করলাম ওনার কথার অর্থ।
সৌরভ একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বলল, শাওন Study, career, love life সব দিক থেকে এগিয়ে। যেমন তোমাকেও আমার আগে ও-ই পেয়ে গেল। তবে যেটা শাওনের হাতে চলে যায় সেটা কিভাবে ধরে রাখতে হয় সেটা শাওন ভাল করেই জানে।

আমি কিছু বলার মত না পেয়ে কফির মগের দিকে তাকিয়ে রইলাম।
“আমি এই হেল্পটা না করলেও শাওন একসময় তোমাকে ওর নিজের ফিলিংস গুলো ঠিকই প্রকাশ করতো। হয়ত আর একটু দেরি হত। কিন্তু যেটা হবারই সেটা জলদি হওয়াই ভাল। তাছাড়া সম্পর্কে ভুল বুঝাবুঝি না থাকাই ভাল।” সৌরভ বলল।
আমি স্তম্ভিত হয়ে বললাম, ফিলিংস?
“হ্যা। আর একটা কথা।” সৌরভ সিরিয়াস হয়ে বলল।
“কি?” আমি হালকা চমকে গেলাম।
সৌরভ নিজের ব্যান্ডেজ লাগানো গালের দিকে ইশারা করে বলল, এটার কাহিনী আমি বলব না। এটা শাওনের থেকে শুনে নিবা।
আমি রোবটের মত মাথা নাড়লাম।
তারপর উনি মুচকি হেসে বললেন, তাহলে ওঠা যাক?
আমি মাথা নাড়িয়েই হুট করে ব্যাগটা কাধে নিলাম। তারপর আমরা নিচে নেমে এলাম।
“তাহলে এটাই আমাদের লাস্ট দেখা।” সৌরভ হাসি মুখে বলল।
আমি কিছু না বলে অপ্রস্তুত হয়ে হাসলাম।
সৌরভ আচমকা আমাকে জড়িয়ে ধরল। আমি অনেক চমকে গেলাম।
পরক্ষণেই সৌরভ আমাকে ছেড়ে সরে দাড়িয়ে হাসি মুখে বলল, গুড বাই।
আমি চমকে তাকিয়ে রইলাম।
সৌরভ পিছাতে পিছাতে উজ্জ্বল হাসির সাথে বলল, আমি আমার লাইফে এই একটা বিষয় কোনোদিনো পস্তাবো না, সেটা হলো তোমাকে পছন্দ করা। শুধু যদি আমি আগে তোমাকে পেতাম!

শেষ কথাটা বলার সময় সৌরভের হাসিটা সীমিত হয়ে গেল। কিন্তু আমার কাছে ওকে সান্ত্বনা দেওয়ার কোনো ভাষা নেই। যদিও ওর পরিস্থিতি বুঝতে পারছি। কারণ আমিও… আমি শাওনকে ছাড়া অন্য কারো সাথে থাকতে চাই না। একদমই থাকতে চাই না।
সৌরভ হাত নেড়ে টাটা দিলো। তারপর ঘুড়ে চলে গেল। আমি একটা নিঃশ্বাস ফেলে রিক্সা দাড় করালাম আর সোজা বাসায় ফিরলাম।
বাসায় ফিরে নিজের রুমে এসে বিছানায় বসলাম। স্নোবেল আমার পায়ের কাছে লাফিয়ে লাফিয়ে নিজের খুশি প্রকাশ করছে। আমি হাসি মুখে ওর দিকে তাকিয়ে ব্যাগটা কাধ থেকে নামালাম। ওর মাথায় হাত বুলিয়ে তারপর নিজের কাবাড খুললাম। এখন শান্তিতে গোসল করে, খেয়েদেয়ে একটা ঘুম দিতে চাই। আমি কাবাড হাতিয়ে কাপড় খুজতে লাগলাম। তখনি ফট করে শাওন আমার এক হাত ধরে টেনে ওর কাছে নিয়ে এলো।
আমি অনেক চমকে গেলাম কারন এই দুপুরের সময়টায় উনি ত অফিসে থাকেন আজ হঠাৎ চলে এসেছেন কেন!
“তোমাকে কি বলেছিলেন আমি?” শাওন ভ্রুকুচকে তাকিয়ে বলল।
আমি প্রশ্নসূচক চোখে তাকিয়ে হাত ছাড়িয়ে নিলাম।
শাওন রাগী চোখে তাকিয়ে বলল, বলেছিলাম না যে কলেজ শেষে সোজা বাসায় আসবা?! কথা কেনো শোনো না?

আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম যে উনি কিভাবে জানলো! স্নোবেল একপাশে চিন্তিত হয়ে লেজ নাড়তে লাগল।
শাওন রেগে আমার দিকে এক পা এগিয়ে এসে বলল, ফোন দিলে ধরোনা কেন? আর বলেছিলাম না further ওর সাথে দেখা না করতে?

এবার আমিও রাগীচোখে তাকিয়ে বলে উঠলাম, তাতে আপনার কি?এসব আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার। আর আমি যার সাথে ইচ্ছা দেখা করি আর না করি! আপনার তাতে কি?
শাওন রেগে আমার দুইবাহু ধরে আমাকে কাবাডের দরজার সাথে দাড় করালো আর বলল, আমি যেটা বলেছি সেটাই করবা তুমি। কোনো রকম প্রশ্ন ছাড়াই। আর তোমার ব্যক্তিগত বলে কিছু নেই এখন। কারণ তুমি এখন….
একটু বলে শাওন থেমে গেল।
আমি রাগমিশ্রিত চোখে ওনার দিকে তাকিয়ে বললাম, “আমি এখন কি? বলুন। থেমে গেলেন কেনো!”
“Whatever, কথাটা যেন মাথায় থাকে।” দাতেদাত চিপে কথাটা বলে আমাকে ছেড়ে দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেল শাওন।
আমি বুঝিনা আমি ওনার কাছে কি! আর উনি সুইটির সাথে ঘুরঘুর করলে ঠিক আছে। কিন্তু আমি কারো সাথে গেলেই সমস্যা! এবার ত আমি আরোই যাব। যাবই যাব। দেখিয়ে দেখিয়ে যাব। ইচ্ছা করে যাব। দেখব আপনি কি করেন! গরিলা একটা।
কিন্তু এক মিনিট! উনি কিভাবে জানলেন আমরা একসাথে ছিলাম? যদি দেখেই ফেলতেন তাহলে ত এসে ঝামেলা করার কথা। কারন সুইটির জন্য ত উনি মরেই যান। হুহ।
একটু সময় চিন্তা করেই আমি চোখ বড়সড় করে ফোনটা বের করলাম। সৌরভ তখন তারমানে ওনাকে ফোন করেছিল? সব শুনেছেন নাকি উনি?

আমি চোখ বড়সড় করে ফেললাম। সৌরভ ইচ্ছে করে ওনাকে এগুলো শুনিয়েছে! এখন উনি যদি আমাকে ভুল বোঝে!
আমি ফট করে রুম থেকে বের হয়ে শাওনের রুমে ঢুকলাম। রুমে ত কোথাও নেই। চলে গেছে নাকি? কিন্তু ফোনটা ত বিছানায় পরে আছে!
তারমানে বাথরুমে। আমি দাড়িয়ে অপেক্ষা করতে লাগলাম। সাথে সাথে শাওনের ফোন বেজে উঠল। আমি ফোনের দিকে তাকালাম। দেখলাম সুইটি নামটা ফোনের স্ক্রিনে উঠে আছে। দেখার সাথে সাথেই মনের মধ্যে কেমন করে উঠল। আমি আর ওনার রুমে দাড়ালাম না। সোজা নিজের রুমে এসে দরজা আটকে দরজা ঘেঁষে মেঝেতে বসে পরলাম। আমি ভুলেই গেছিলাম যে উনি…. উফ চিন্তা করতেও অসহ্য লাগছে। আর সাথে খারাপও লাগছে।

মাথাটা এদিক ওদিক ঝাকিয়ে সব চিন্তা ঝেড়ে ফেলার চেষ্টা করলাম। তারপর আমার পাশে বসে থাকা স্নোবেলকে কোলে নিয়ে বেলকোনিতে চলে গেলাম।
অনেকক্ষণ পরে উনি দরজা নক করে বললেন, বের হও।
আমি রেগে দরজার দিকে তাকিয়ে বললাম, আমি খাব না।
“বের হতে বলেছি।” রেগে গেল শাওন।
আমি আর তর্কে গেলাম না। কারণ আমার আর ভালো লাগছে না। গিয়ে দরজা খুলে দিলাম। উনি এক পকেটে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আমার দিকে ভ্রুকুচকে তাকিয়ে বললেন, খেতে আসো।
তারপর টেবিলে চলে গেলেন। আমিও একটা নিঃশ্বাস ফেলে টেবিলে গিয়ে বসলাম আর স্নোবেলের জন্য মাছ দিয়ে ভাত মাখিয়ে দিলাম।

তারপর নিঃশব্দে নিজের প্লেটের মধ্যে দৃষ্টি আবদ্ধ করলাম।
কিছুক্ষণ পরই শাওন বলে উঠল, Did he really hug you?
আমি খাওয়া থামিয়ে শাওনের দিকে তাকালাম। উনি সিরিয়াস হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন।
আমি বিরক্তির সাথে এদিক ওদিক তাকাতে লাগলাম। কারণ ওনার এটা নিয়ে এত মাথা ব্যথা কেনো?
“Did he?” শাওন ভ্রুকুচকে ফেলল।
এখন আমি কি বলব! হ্যা বললে কি হবে, আর না বললে কি হবে?
আমি ওনার দিকে তাকালাম। ইতিমধ্যে উনি রেগে গেছেন।
আমি তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে বলে উঠলাম, হ্যা জড়িয়ে ধরেছিল।
শাওন সাথে সাথে টেবিলে দুই হাত রেখে দাড়িয়ে পরলো আর রেগে বলে উঠল, What?
আমি ওনার থেকে চোখ সরিয়ে ভ্রুকুচকে অন্যদিকে তাকিয়ে রইলাম।
“আর তুমি বাধাও দেও নি?” শাওন রাগে গজগজ করতে করতে বলল।
ওনার এই ব্যবহার আমার স্বাভাবিক লাগছে না। তাই আমি চোখ মুখ শক্ত করে তাকিয়ে বললাম, আপনি পছন্দ করেন আমাকে?
শাওন থমকে গেল। কিন্তু পরক্ষণেই গম্ভীর গলায় বলে উঠল, Why would I like you?
শুনে যদিও অনেক খারাপ লাগল কিন্তু আমি সেটা বুঝতে দিলাম না। বরং আমি একটু থেমে উঠে দাড়িয়ে বলে উঠলাম, তাহলে আমার বিষয় নিয়ে মাথা ব্যথা বন্ধ করে দিন।
শাওন ভ্রুকুচকে আমার দিকে তাকালো।
আমি আর এক মূহুর্তের জন্য না থেমে আমি নিজের রুমে চলে এসে দরজা বন্ধ করে দিলাম।
তারপর বিছানায় পরে নিঃশব্দে কাদতে লাগলাম। উনি এভাবে কিভাবে বলে দিলেন? অনেক ক্ষণ ওভাবে পরে থেকে তারপর উঠে বসে চোখ মুছলাম। তারপর হাত ধুতে বাথরুমে চলে গেলাম।
আয়নায় নিজের দিকে তাকিয়ে নিজেরই বিরক্ত লাগছে। ওনার কথার জন্য কেন কাদব আমি? উনি আমাকে পছন্দ করেনা এটা কি নতুন কিছু?

তারপর মনে মনে ঠিক করে নিলাম যে আমি এখানে আর থাকব না। সত্যিই ত, কেন থাকব? উনি যাকে পছন্দ করেন তাকে নিয়েই থাকুক। আমি কালই চলে যাব। ওনার সাথে থাকার চেয়ে ওই দর্জাল শাশুড়ীর সাথে থাকাই ভাল।
রাতে উনি ডাকার আগেই নিজে ডাইনিং এ চলে এলাম। আর কোনো কথা না বলে চুপচাপ খেয়ে উঠে চলে এলাম। ওনার দিকে একবারো তাকালাম না।

সকালে উনি অফিসে যাওয়ার সময় আমাকে কলেজে ছেড়ে দিলেন। কিন্তু আমি কলেজে ঢুকে তারপর আবার বের হয়ে এলাম। আর একটা রিক্সা নিয়ে বাসায় ফিরে এলাম।
বাসায় এসেই আমি নিজের ব্যাগ গুছিয়ে নিলাম। এবার আমি একটা কিছুও ফেলে যাব না, একটা কিছুও না। স্নোবেল থেকে শুরু করে সব নিয়ে তবেই আমি যাব। যাতে ওনার মাথা ঘামিয়ে কোনো জিনিস আবার ফেরত দিতে আসতে না হয়। থাকেন আপনি আপনার সুইটিকে নিয়ে।
তবে ব্যাগ গোছাতে গিয়ে সেই হলুদ আর নীল পাখি জোড়া সামনে চলে এলো। পাখি জোড়া হাতে নিয়ে অন্যমনস্ক হয়ে গেলাম। কিছুসময় পাখিগুলোর দিকে তাকিয়ে তারপর আবার ব্যাগে রেখে দিলাম। কারন এটা আমার অনেক পছন্দের, শুধু এজন্যই এটা নিয়ে যাব। অন্য কোনো কারণে না।
কিন্তু আর একটা জিনিসও ল্যাগেজে আছে। সেটা যদিও আমার সাথে নেওয়ার দরকার নেই। শাওনের সেই সাদা শার্টটা। যেটা বৃষ্টির রাতে পরতে হয়েছিল। এটা…
আর কিছু চিন্তা না করে শার্ট টাও ঢুকিয়ে নিলাম। এমনিও উনি বলেছিলেন এটা লাগবে না ওনার।
তারপর জলদি রেডি হয়ে পুরো ঘর ঘুড়ে দেখে নিলাম কিছু রয়ে গেল কিনা। এবার কিছু রয়ে যাক এটা আমি চাই-ই না। আমি ল্যাগেজটার হেন্ডেল টেনে রুম থেকে বেরিয়ে এলাম।
ড্রয়িং রুমে দাড়িয়ে শাওনের রুমের দিকে তাকালাম।
তারপর একটা নিঃশ্বাস ফেলে স্নোবেলের দিকে তাকিয়ে বললাম, চল।
বাড়ি পৌছাতে বিকাল হয়ে গেল। পিশামনি আমাকে দেখে হতভম্ব হয়ে গেলেন।
“কি রে তুই হঠাৎ?! মাত্র না সেদিন তোরা গেলি!” পিশামনি বলে উঠল। আমার শাশুড়ী রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে এলো। পিছনে পিছনে কাকিমনিও এলো।
কাকিমনি হাসিমুখে বলল, এসে ভালই করেছিস। এমনিই….
কাকিমনিকে থামিয়ে দিয়ে আমার শাশুড়ী কপাল কুচকে বলে উঠলেন, তুমি একা কেন? শাওন কোথায়?
আমি এদিক ওদিক তাকাতে লাগলাম।
পিশামনি একটু কিছু চিন্তা করেই বলে উঠলেন, আহা থাক না। মিলা তুই রুমে যা।
তারপর আমার শাশুড়ীর দিকে তাকিয়ে হেসে বললেন, তোমার ছেলেকে এবার একটু শিক্ষা দেওয়া উচিত বুঝলে! তুমি শুধু দেখো আমি কি করি।
আমি পিশামনির দিকে তাকালাম।
“মানে? বুঝলাম না।” শাশুড়ী ভ্রুকুচকে বলল।
“মানে খুবই সোজা। এবার খালি আসুক তোমার ছেলে।” হাস্য উজ্জ্বল মুখে তাকিয়ে বললেন পিশামনি।
আমি নিজেও বুঝলাম না কিছুই।

রুমে এসে খাটে বসলাম আমি। বসেই সামনে তাকাতেই শাওনের ছবিটা চোখে পরলো। হেটে গিয়ে ছবিটা নামিয়ে আলমারির এক ড্রয়ারে ঢুকিয়ে রাখলাম। ওনাকে চোখের সামনে রাখতেই চাইনা।

কিন্তু চলে এসে এখন একদমই ভালো লাগছে না। ওনার কথা খুবই মনে পরছে। আবার চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পরতে লাগল। স্নোবেল আমাকে কাদতে দেখে আমার পায়ের কাছে ব্যস্ত হয়ে ঘোরাঘুরি করতে লাগল।
আমি চোখ মুছে ওর দিকে একটা হাসি দেওয়ার চেষ্টা করে ওর মাথাটা নেড়ে দিলাম। তারপর ফ্রেস হতে চলে গেলাম। আর ফ্রেস হয়ে কিচেনে চলে গেলাম। কিচেনে এখন কেউই নেই। আমি ফ্রিজ থেকে কুমড়ো খুজে বের করলাম। তারপর অনেক গুলো কুমড়ো ভেজে নিলাম। আর ডাইনিং এ বসে খেতে লাগলাম। যদিও একদমই খেতে ভালো লাগছে না তাও খেতে লাগলাম। কেন খাচ্ছি তাও জানিনা। এদিকে চোখে জল চলে আসছে। কিন্তু কেউ দেখে ফেললে ঝামেলা। তাই চেষ্টা করতে লাগলাম যেন চোখ থেকে পানি না পরে। সত্যিই অনেক বিরক্তিকর। সুইটি মরলে ভালো হত।
কিন্তু…. সুইটি মরলেও কি উনি আমাকে পছন্দ করবেন?
আমি একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে চিন্তায় পরে গেলাম।

“কুমড়ো তোমার এত পছন্দ?” পিছন থেকে একটা চেনা আওয়াজ ভেসে আসলো।

(চলবে…)
(চলবে…)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here