১৬ বছর বয়স পর্ব ৪১+৪২

গল্পর নাম : #১৬_বছর_বয়স
#পর্ব_৪১ : #অভিমান
লেখিকা : #Lucky

“আপনার আমাকে নিয়ে চিন্তা করতে হবে না।আপনি যান আপনার গুরুত্বপূর্ণ কাজে। এক মাস কেনো এক বছর কাটিয়ে আসুন।” রেগে বললাম আমি।
“ওকে। যাব আমি।” শক্ত মুখ করে বলল শাওন।
আমি থমকে গেলাম।
শাওন বের হয়ে চলে গেল।
উনি কি সত্যিই যাবেন নাকি? এখন কি করব আমি?
উনি আগের চেয়েও বেশি খারাপ হয়ে গেছেন এখন। আমাকে কষ্ট দিয়ে কি পান উনি?
এখন ত আমারই রাগ লাগছে।
যাওয়ার খুব শখ ওনার, তাই না? উনি যাওয়ার আগে আমিই চলে যাব।
আমি এক বছর আগে আর ফিরবই না এবার। অসভ্য গরিলা।
আমি নিজের ল্যাগেজ গুছিয়ে নিজের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। কারণ শাশুড়ীর কাছে গেলে হাজারটা প্রশ্ন করবে, পরে কিনা বকবেও। তার চেয়ে আমি নিজের বাড়িই যাই, এটাই ভাল হবে।

আমি সত্যি সত্যিই চলে এলাম। বাড়ি আসতে আসতে বিকাল হয়ে গেল।
আর বাড়ি ফিরতেই কাকা কাকির হাজার প্রশ্ন। তাও আবার সব শাওনকে নিয়ে।
সে আসেনি কেন, সে কই, কেমন আছে, কখন আসবে, নিয়ে আসলি না কেন? হেন তেন অনেক প্রশ্ন।
বুঝিনা এদের উপর গরিলাটা কি কালাজাদু করে বসেছে!
আমি বলে দিলাম যে আমি এখানে অনেক দিন থাকবো, উনি বিদেশ যাচ্ছেন।
এটুকু বলেই আমি নিজের রুমে ঢুকে এলাম।
আমি ত একটা দিনও থাকতে পারিনা এক মাস কিভাবে থাকব?
এখনি ত চলে যেতে ইচ্ছে করছে।
উনি কি আমাকে নিতে আসবেন? আসলেও আমি যাব না।
আমাকে রেখে যাওয়ার কথা চিন্তা করল কিভাবে উনি?
ফ্রেস হয়ে কিছু খাওয়ার চেষ্টা করলাম। কিন্তু খেতেও ভালো লাগছে না। যদিও আমি সকাল থেকে না খাওয়া, তাও।
সময় ত কাটছেই না! তাই বকুলের কাছে চলে গেলাম।
বকুল আমাকে দেখেই খুশিতে লাফিয়ে উঠল।
“কিরে, ফুলসজ্জা কেমন করলি?” বকুল প্রথমেই এই প্রশ্ন করল।
বকুলটা দিন দিন লুচ্চা হয়ে যাচ্ছে।
“কি ভাবছিস? আর তোর বর কই?” বকুল বলল।
আমি উওর দিলাম না। আর বকুলও উত্তরের অপেক্ষা না করে বলে উঠল, “এবার ত কাহিনী শুনাতেই হবে তোকে। বল কি হয়েছিল?” বকুল হালকা হেসে ভ্রু উঁচু করে বলল।
“এগুলো ছাড়া আর কোনো কথা নেই?” চোখ পাকিয়ে বললাম আমি।
বকুল সন্দেহের চোখে তাকিয়ে বলল, “বলিস না যে এবারো কিছু হয়নি!”
আমি কিছু না বলে চুপ করে রইলাম।
“হায়রে কপাল! আমি মা হতে চলেছি আর তুই এখনো বরকেই হাত করতে পারলি না?” হেসে বলে উঠল বকুল।
আমি চোখ বড়সড় করে বললাম, সত্যি?
“হ্যা, দুই মাস হয়েছে।” বকুল নিজের পেটের উপর হাত রেখে বলল।
আমি খুশি হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে রইলাম।
“তোদের কি ঝামেলা চলছে? না হলে এমন অবস্থা কেন? শাওন কি তোকে এখনো মেনে নিতে পারছে না?”
আমি সাথে সাথে বলে উঠলাম, “আমাদের মধ্যে সব স্বাভাবিক আছে আর উনি আমাকে…” এটুকু বলেই আমি থেমে গেলাম।
আমি ওনার শেখানো কথাগুলোই বলে ফেলছিলাম প্রায়। ভাগ্যিস পুরোটা বলিনি।
“উনি তোকে কি?” বকুল প্রশ্ন সূচক চোখে তাকিয়ে বলল।
আমি অপ্রস্তুত হয়ে গেলাম আর বললাম, “কি…কিছুনা, আমি যাব এখন কাজ আছে।” বলেই আমি উঠে দাড়ালাম। কিন্তু বকুল আমাকে হাত ধরে টেনে বসিয়ে দিয়ে বলল,”আমার ত মনে হয় তুই কিছু পাকিয়ে বসে আছিস। তোর দ্বারা কিছুই হবেনা।”
বলেই বকুল আমার মাথায় টোকা দিলো।
“সত্যিই কি সব স্বাভাবিক আছে? নাকি তুই স্বাভাবিক হতে দিচ্ছিস না?” ভ্রু উঁচু করে বলল বকুল।
আমি ওর প্রশ্ন শুনে নিজেই নিজেকে জিজ্ঞেস করলাম সত্যিই কি আমি স্বাভাবিক হতে দিচ্ছি না?

রাতে তাড়াতাড়ি শুয়ে পরলাম। স্নোবেলও আমার পাশে এসে শুয়ে পরল। আমি ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলাম আর চিন্তা করতে লাগলাম যে, উনি অফিস থেকে এসে ত আমাকে অবশ্যই খুজবেন আর না পেলে ত অবশ্যই এখানে চলে আসবেন! তাই না?
এক মিনিট! এগুলো ত আমার ভাবার বিষয় না। সব চিন্তা ঝেড়ে ফেলে আমি জোর করে ঘুমানোর চেষ্টা করলাম।
কিন্তু চোখে ঘুম আসতে আসতে রাত দশটা বেজে গেল।
কিন্তু ঘুম আসতে না আসতেই কেউ আমার এক হাত ধরে টেনে উঠিয়ে বসিয়ে দিল।
আমি ঘুম ঘুম চোখ ডলতে ডলতে বললাম,”কে? উফ অসহ্য!”
ভালো মত তাকাতেই বুঝলাম যে এটা শাওন।
আমার মুখ হা হয়ে গেল। উনি এত জলদি কিভাবে এলেন।
ঘরের আবছা আলোতে ঘড়িটা ভালো ভাবেই দেখা যাচ্ছে। দশটা তেরো বাজে।
উনি এত জলদি কিভাবে আসতে পারেন? ওনার অফিস থেকে ফিরতেই ত সাড়ে আটটা বাজে। নাকি এটা স্বপ্ন।
“না বলে এসেছ কেন?” শাওন রেগে দাতেদাত চিপে বলল।
উনি যে অনেক রেগে গেছেন সেটা কথা বলার ধরনেই বুঝতেই পারছি।
আমি বিছানা থেকে নেমে দাড়ালাম আর ওনার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে প্রশ্ন করলাম, “এটা কি সত্যিই আপনি?”
উনি রেগে আমার দুই বাহু ধরে ওনার কাছে নিয়ে এসে বললেন, “তোমাকে মানা করেছিলাম না? কেন বের হয়েছো? আর তোমার সাহস কি করে হয় এভাবে চলে আসার?”
আমি নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে শক্ত চোখে তাকিয়ে বললাম, “আমার ইচ্ছা হয়েছে আমি এসেছি।”
শাওন রেগে আমার দিকে এক পা এগিয়ে আসতেই আমি ঘাবড়ে গেলাম।
“তোমাকে একটা শিক্ষা না দিলে হবেই না।” রেগে বলল শাওন।
“মা…মানে?” আমি চমকে গেলাম।
উনি হুট আমাকে কোলে তুলে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিলেন। আর আমি কিছু বুঝে ওঠার আগেই উনি আমার ঘাড়ে আলতো করে কামড় বসিয়ে দিলেন।
আমি ঠোঁট কামড়ে ধরে চোখ বন্ধ করে নিলাম আর এক হাত দিয়ে ওনার কাধের কাছের শার্ট খামচে ধরে নিলাম।
উনি আমার কানে কানে বললেন, না বলে আর আসবা?
আমি আস্তে আস্তে চোখ খুললাম।
শাওন আমার চোখের দিকে তাকিয়ে রইল।
আমি এবার শব্দ করে কেদে দিলাম।
শাওন বেশিই চমকে গেল আর আমার কাছ থেকে সরে আমাকে হাত ধরে টেনে উঠিয়ে বসিয়ে দিল।
“তোমার বেশি লেগেছে?” শাওন অস্থির হয়ে গেল।
আমি কাদতে কাদতে হ্যা সূচক মাথা নাড়লাম।
শাওন বলল “ওকে রিল্যাক্স আমি…”
ওনার কথা শেষ হবার আগেই আমি ওনাকে জড়িয়ে ধরে কাদো কাদো গলায় বললাম, “যাবেন না কোথাও। আর গেলেও আমাকে রেখে যাবেন না। আপনি কথা দিয়েছিলেন আমাকে ছেড়ে যাবেন না। তাও আপনি যেতে চাচ্ছেন। খারাপ আপনি।”
“তুমিই ত যাওয়ার পারমিশন দিয়েছ।” শান্ত গলায় বলল শাওন।
আমি রেগে গেলাম। আর ওনাকে ছেড়ে ওনার বুকের উপর দুই হাত দিয়ে ধাক্কা মেরে বললাম, দিইনি আমি। কতবার বলবো?
“কিন্তু আমাকে ত যাওয়াই লাগবে।” শাওন সরু চোখে তাকিয়ে বলল।
আমি চোখ পাকিয়ে বললাম, কি বললেন?
“শোনো নি?” শাওন বলল।
আমি ওনাকে ঠেলে বিছানায় শুইয়ে দিলাম আর ওনার কাছে এসে ঘাড়ে জোরে কামড় বসিয়ে দিলাম।
উনি প্রকাশ না করলেও বেশ ভালই ব্যথা পেলেন। পাওয়া উচিত। অসভ্য গরিলা।
আমি সরে আসার আগেই উনি আমাকে টেনে শুইয়ে দিয়ে আমার কাছে চলে আসলেন। আমি চোখ বড়সড় করে তাকিয়ে রইলাম।
“অনেক বেশিই সাহস হয়ে গেছে তোমার।” শাওন ভ্রুকুচকে বলল।
আমি ক্ষোভের সাথে বলতে লাগলাম “হ্যা হয়েছে। তো? আমি এবার সত্যিই আপনার সাথে যাব না। আপনার এতই যখন যাওয়ার শখ…”
“Shut up.” জোরেই বলে উঠল শাওন।
আমি ভয়ে চুপ হয়ে গেলাম।
“গাধা। আমি একবারো বলেছি যে আমি যাচ্ছি? সব সময় দশ লাইন বেশি বোঝো কিসের জন্য?” শাওন রাগমিশ্রিত কন্ঠে বলল।
“মা…মানে?” আমি বললাম।
“তোমার মত গাধা হয়তো পুরো World এ পাওয়া যাবে না। কাদতে এতই ভালো লাগে তোমার যে তুমি রিজন খুজে পেলেই শুরু করে দেও। আগে পরে না শুনেই! I’m speechless. তোমার মাথায় বুদ্ধি নেই? বাসা থেকে এক পা বের হলেই ত মিনিটের মধ্যে অঘটন ঘটিয়ে বসে থাকো। আর তোমাকে রেখে এক মাসের জন্য যাব আমি?” শাওন রেগে আমার দিকে তাকিয়ে বলল।
আমি হা হয়ে গেলাম। আমি কি তাহলে আবার ভুল বুঝলাম!
আমি চোখ পিটপিট করে তাকিয়ে বললাম, আমি ত…।
“তুমি ত গাধা।” শাওন ভ্রুকুচকে বলল।
আমি চোখ পাকিয়ে তাকালাম আর বললাম, আর আপনি ত বনমানুষ।
বলেই আমি হেসে দিলাম।
শাওন কিছু না বলে আমার দিকে তাকিয়ে রইল।
“আপনিই ত বলেছিলেন কামড়ে দেওয়া বনমানুষের কাজ। মনে নেই?” আমি মৃদু হেসে বললাম।
উনি কিছু না বলে ওভাবেই তাকিয়ে রইলেন।
আমি চোখ নামিয়ে নিলাম আর একটা ঢোক গিললাম। এখন আবার কি!
সাথে সাথে আমার পেটের মধ্যে শব্দ হলো।
আমি ঠোঁটে ঠোঁট চিপে সরু চোখে ওনার দিকে তাকালাম। সকাল থেকে না খাওয়ার কারনেই হয়ত। এখন খিদেও পেয়েছে।
উনি আমার দিকে কড়া চোখে তাকালেন। অর্থাৎ এখন আমি আবার বকা খাব।
আমি কি বলব বুঝতে না পেরে এদিক ওদিক তাকাতে লাগলাম।
“পিরিয়ড না তোমার? এই সময় না খেয়ে থাকো কেনো? এগুলো করো বলেই ত দুই দিন পর পর অসুস্থ হয়ে যাও।” কড়া চোখে তাকিয়ে বলল শাওন।
আমি কিছু না বলে তাকিয়ে রইলাম।
উনি আমার কাছ থেকে সরে বিছানা থেকে নামলেন। তারপর রুম থেকে বের হয়ে গেলেন।
এখন আবার কি করতে চলেছেন উনি?
আমি বিছানা থেকে নেমে বাহিরে বের হয়ে এলাম।
কাকি আর প্রভাতী ত আজ বিকেলেই বেড়াতে গেছে। এদিকে কাকাও এখনো ফেরে নি।
“এখন এত রাতে কি করবেন আপনি?” আমি শাওনকে প্রশ্ন করলাম।
উনি রান্নাঘরে খাবার খুজতে ব্যস্ত কিন্তু কিছুই নেই। আসলে আমি কিছুই রান্না করিনি রাতের জন্য। ভাত ছাড়া কিছুই নেই এখন।
“পাবেন না আপনি এখনে কিছু।” আমি বললাম।
শাওন রেগে বলে উঠল, ওরা না খাইয়ে রেখেছে তোমাকে?
ওনার প্রশ্ন শুনে আমি হা হয়ে গেলাম।
“আমিই খাই নি। ওদের কোনো দোষ নেই।” বললাম আমি।
এটা শুনে আরোই রেগে গেল শাওন।
নেও ঠেলা। কিছু বলেই শান্তি নেই।
আমি একটু কিউট হাসি দেওয়ার চেষ্টা করলাম। কিন্তু সেটাতে কোনো লাভ হলো না।
উনি রান্নাঘরের তাকের উপর থেকে ডিম নিলেন।
“এখানে গ্যাসের চুলা নেই। মাটির চুলা। আমাকে দিন আপনি পারবেন না।” আমি বললাম।
শাওন নিজের শার্টের হাতা গুটিয়ে নিতে নিতে বলল, “তোমাকে কে বলল আমি পারবো না?”
ওনার ভাব নেওয়া দেখে আমি আর কিছু বললাম না। বুকের কাছে দুই হাত গুজে ওনার কাজ দেখতে লাগলাম।
উনি ছোটো টুল নিয়ে চুলো ধরানোর জন্য বসলেন।
কিন্তু এখন সমস্যার বিষয় হলো উনি চুলো ধরাতেই পারছেন না। একবার পাতা দিয়ে চেষ্টা করছেন, আরেকবার ছোটো গাছের ডাল দিয়ে চেষ্টা করছেন। কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছে না। ওনার কাজ দেখেই আমার হাসি চলে আসছে। কিন্তু অনেক কষ্টে হাসি আটকে আছি। উনি মাঝে মাঝে আমার দিকে কড়া চোখে তাকাচ্ছেন। তখনি আমি এমন ভান করছি যেন কিছুই জানিনা।
প্রায় বিশ মিনিট ত হয়েই এলো। কিছুতেই কিছু হচ্ছে না। এদিকে উনি অনেক ঘেমেও গেছেন।
যাবারই কথা, এসি নেই আমাদের বাড়িতে।
“আমাকে দিন, কেনো জেদ করছেন?” বললাম আমি।
“তুমি চুপ থাকো। আমি পারব।” উনি চেষ্টা করতে করতে বললেন।
যত যাই হোক উনি হার মানতে রাজি না। এত জেদ। অসভ্য গরিলা একটা।

উনি শেষমেশ চুলো ধরিয়েই ছাড়লেন কিছু কাগজের সাহায্যে।
উনি একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, “See?”
এই চুলো ধরাতে আমার পাঁচ মিনিটও লাগে না কিন্তু সেটা উনি হয়ত তিরিশ মিনিটের বেশি সময় নিয়ে ধরালেন। আর তাতেই উনি এত খুশি।
তবে এই হাসিটা দেখেই আমার মন ভরে গেলো।
উনি ডিম দিয়ে ভাত ভেজে নিলেন।
কিন্তু উনি কি খাবেন? কুমড়ো ত নেই।
উনি প্লেটটা আমার দিকে ধরে বললেন, নেও। কি চিন্তা করছ এত?
“আর আপনি?” আমি জিজ্ঞেস করলাম।
“আমার চিন্তা তোমার করতে হবে না।” বলেই উনি আমার হাতে প্লেটটা ধরিয়ে দিয়ে রুমে চলে গেলেন।
আমি না করলে কে করবে! গরিলা একটা।
আমি একা খাব না। তাই প্লেট টেবিলে রেখে রুমে এসে ঢুকলাম। আর ঢুকেই হকচকিয়ে গেলাম।
উনি নিজের শার্ট খুলতে খুলতে আমার দিকে তাকালেন।
“কি?” প্রশ্ন সূচক চোখে তাকিয়ে বলল শাওন।
“এ…এটা খুলছেন কেন?” আমি অন্যদিকে তাকিয়ে বললাম।
“তোমার ল্যাগেজে আমার একটা শার্ট রেখে দিয়েছ না? ওটা দেও, I need to take shower.” শাওন বলল।
“মা..মানে?” আমি অবাক হয়ে গেলাম।
“মানে আমার যে শার্টটা নিয়ে নিয়ে ঘুরে বেড়াও। সেটা। কুইক।” বলল শাওন।
উনি জেনে গেছেন!
আমি এগিয়ে গিয়ে ল্যাগেজ খুললাম। তারপর ওনার শার্টটা বের করে ওনার দিকে ধরলাম।
উনি আমার হাত ধরে টান দিয়ে ওনার কাছে নিয়ে এলেন।
আমি চমকে গেলাম।
“ক…কি করছেন আপনি?” আমি বললাম।
“এটা কেন রেখে দিয়েছ?” শাওন ঠোঁটের কোনে একটা হাসি টেনে বলল।
“এ…এটা.. আমি…” আমি একটা ঢোক গিললাম।
উনি আমার কাছে ওনার মুখটা এগিয়ে আনতেই আমি এক হাত দিয়ে ওনার ঠোঁটটা ঢেকে দিলাম।
“আ…আপনিও আমার সাথে খাবেন। তাই তাড়াতাড়ি আসুন।” দ্রুত কথাগুলো বলেই আমি নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে রুম থেকে বের হয়ে এলাম।

আমি টেবিলে বসে অপেক্ষা করতে লাগলাম। উনি কিছুক্ষণের মধ্যেই চলে এলেন।
আমি ওনাকে আমার পাশে বসার জন্য চেয়ারে হাত রেখে দেখিয়ে দিলাম।
উনি শার্টের হাতা গুটিয়ে নিতে নিতে আমার পাশে এসে বসলেন।
উনি ঠিক ভাবে মাথাও মুছেন নি। গাল বেয়ে পানি গড়িয়ে পরছে। আমার জন্য হয়ত তাড়াহুড়ো করে চলে এসেছেন।
“কি?” শাওন আমার দিকে প্রশ্ন সূচক চোখে তাকিয়ে বলল।
“থামেন আমি আসছি।” বলেই আমি রুমে চলে এলাম।
তারপর তোয়ালে নিয়ে এসে ওনার মাথার উপর দিয়ে মাথা মুছে দিতে লাগলাম।
উনি চুপচাপ বসে রইলেন।
ভাল মত মুছে দিয়ে আমি তোয়ালে সরিয়ে বললাম, এখন ঠিক আছে।
কিন্তু ওনার চুলগুলো এলোমেলো হয়ে গেছে। তাই আমি হাত দিয়ে সেগুলো ঠিক করে দিতে লাগলাম।
উনি আমার দিকে গম্ভীর চোখে তাকিয়ে রইলেন।
ওনাকে ওভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে আমি অপ্রস্তুত হয়ে গেলাম আর হাত সরিয়ে নিলাম।
তোয়ালেটা চেয়ারের ব্যাক সাইডে রেখে চেয়ারে বসে পরলাম।
“শুরু করো।” শাওন আমাকে বলল।
“প্লেট ত আরেকটা লাগবে।” বলেই আমি উঠতে লাগলাম। কিন্তু উনি আমার হাত ধরে আমাকে বসিয়ে দিলেন।
“তোমার হাতে খাব আমি।” শাওন বলল।
আমি তাকিয়ে রইলাম।
“কি হলো?” শাওন বলল।
আমি মৃদু হেসে না সূচক মাথা নাড়লাম তারপর শাওনের মুখে খাবার তুলে দিলাম।
গল্পর নাম : #১৬_বছর_বয়স
#পর্ব_৪২ : #এতটা_ভালোবাসেন!
লেখিকা : #Lucky

খাওয়া শেষ করে আমরা রুমে চলে এলাম। কিন্তু আমি এখনি ঘুমাতে চাচ্ছি না। বরং আজ আমি গল্প করতে চাই। আমি বালিশে হেলান দিয়ে বসলাম।
উনি বিছানায় বসতে বসতে ভ্রুকুচকে তাকিয়ে বললেন, আজও কি আবার সেই প্রশ্ন উওর চলবে?
আমি হালকা হেসে বললাম, “না, আজ গল্প চলবে।”
উনি আমার পাশে এসে আমার মত হেলান দিয়ে বসলেন।
“সব হনুমান গুলো কোথায়?” শাওন জিজ্ঞেস করল।
আমি বুঝলাম উনি কাকিদের কথা বলছেন।
“তারা বেড়াতে গেছে আর কাকা বাহিরে থেকে এখনো আসিনি।” বললাম আমি।
উনি আমার কথা শুনে ভ্রুকুচকে ফেললেন।
“একা এভাবে সব দরজা খুলে রেখে ঘুমিয়ে ছিলা!” শাওন রেগে গেল।
“হ্যা। ত? আমি এর আগেও এভাবে কত ছিলাম! চোর নেই আমাদের গ্রামে।” মৃদু হেসে বললাম আমি।
উনি আমার এক বাহু ধরে টান দিয়ে ওনার কাছে নিয়ে এসে বললেন,”Do you Have any idea? যেকেউ এসে পরতে পারতো।”
আমি ওনার দিকে চোখ পিটপিট করে তাকিয়ে রইলাম।
“কবে কেয়ারফুল হবা তুমি? এখনো যদি এমন কেয়ারলেস থাকো!” বলল শাওন।
রেগে গেল কত কিউট লাগে ওনাকে। চিন্তা করেই আমার মুখে হাসি চলে এলো।
“হাসছ কিসের জন্য? হাসির কথা বলেছি আমি?” উনি রেগে বললেন।
আমি মুখ থেকে হাসিটা সরিয়ে না সূচক মাথা নাড়লাম।
কিজানি আরো রেগে গেলে সমস্যা।
উনি আমার হাত ছেড়ে দিয়ে বিরক্তির সাথে বসে রইলেন।

“আচ্ছা আপনি এত জলদি কি করে এলেন?” আমি অনেক আশ্চর্য হয়ে প্রশ্নটা করে ফেললাম।
শাওন আমার দিকে সরু চোখে তাকালো।
“কিহলো? বলুন।” আমি ব্যস্ত হয়ে বললাম।
“তুমি বেশি লাফাও এজন্য রিসিপশনসহ গেটের দারোয়ানকেও বলে রেখেছি তোমাকে বের হতে দেখলেই যেন আমাকে কল করে।” বলল শাওন।
আমি হা হয়ে গেলাম, “আপনি আমার উপর নজরদারি করে রেখেছেন?”
শাওন ভ্রুকুচকে তাকিয়ে বলল, “কারণ তোমার ত অভ্যাস আছে হুটহাট বের হয়ে যাওয়ার।”
“আপনার কারণেই ত। নিজের দোষ দেখেন না কখনো!” মুখ ভেংচি দিয়ে বললাম আমি।
“আমার কি দোষ? সমস্যা ত এটাই যে তুমি একটা গাধা।” ভ্রুকুচকে আমার দিকে তাকিয়ে বলল শাওন।
আমি রাগে কটমট করে বললাম, “একদম উল্টাপাল্টা বলবেন না। আমি নিজের কানে শুনেছি যে টিকিট বুক করা হয়েছে। রবিন অসুস্থ তাই আপনার হেল্প লাগবে অর্থাৎ আপনার যেতে হবে।”
শাওন আমার দিকে উপহাসের চোখে তাকিয়ে বলল, “আমার হেল্প লাগবে বলতে আমাকে দিয়ে ও সব ফাইল রেডি করিয়ে নিয়েছে। আর ফ্লাইট বুক করে আমাকে জানাতে বলেছিলাম। গাধা।”

আমি তাও রাগ করে বালিশ পাতিয়ে শুয়ে পরলাম।
“তোমার গল্প শেষ?” শাওন বলল।
আমি উল্টোদিকে পাশ ফিরে শুয়ে বললাম, “হ্যা, ঘুমাবো এখন।”
উনি আমার পাশে শুয়ে আমাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলেন।
আমি প্রথমে চমকে গেলেও পরক্ষণেই মুখে একটা হাসি চলে এলো।
“হাসছ কেনো?” শাওন পিছন থেকে বলল।
আমি হকচকিয়ে গেলাম, উনি কিভাবে বুঝলো!
আমি উওর না দিয়ে চুপ করে রইলাম।
কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললাম,”কালই ফিরব না। প্লিজ আরেকদিন থাকেন।”
“তুমি নাকি এবার ফিরে যাবাই না!” শাওন বলল।
উনি মজা নিচ্ছেন আমার।
আমি মুখ ফুলিয়ে বললাম, “সত্যি সত্যিই যাব না কিন্তু!”
“Really!” শাওন সুর টেনে বলল।
“আমার ত যাওয়াই উচিত না, আপনি সেদিন রাগ করে রাতে আমাকে জড়িয়েই ধরেন নি।” আমি মুখ ফুলিয়ে বললাম।
“তোমাকে কে বলল ধরিনি! ঘুমিয়ে গেলে ত কিছুই টের পাও না।” শাওন মৃদু হেসে বলল।
আমি অনেক বেশিই চমকে গেলাম আর সাথে সাথে ওনার দিকে ঘুরলাম।
“ম..মানে? আমি ঘুমিয়ে গেলে কি সব করেন আপনি আমার সাথে?” আমি অবাক হয়ে বললাম।
“সেটা তোমার না জানলেও চলবে।” বলল শাওন।
“আ…আমি ঘুমাবই না আপনার সাথে।” বললাম আমি।
“কিন্তু আমি ত তোমার সাথেই ঘুমাবো।” বলেই উনি আমার গালে কিস করে দিলেন।
আমি মৃদু হেসে ওনাকে জড়িয়ে ধরলাম।


সকালে কাকা শাওনকে দেখে হতভম্ব হয়ে গেল।
“তুমি নাকি বিদেশে চলে গেছ?” বলল কাকা।
শাওন আমার দিকে সরু চোখে তাকালো। তারপর কাকাকে বলল,”যেতে চাচ্ছিলাম কিন্তু ও ফোন করে কান্নাকাটি শুরু করে দিয়েছিল তাই যেতে পারিনি।”
কাকা হেসে দিল। আমি হা হয়ে রইলাম। কখন ফোন দিয়ে কান্নাকাটি করলাম?
“বাড়িতে ত কেউই নেই এমন সময় এসেছ।” আফসোস নিয়ে বলল কাকা।
“আজই ফিরে যাব সো সমস্যা নেই।” শাওন বলল।
“কাল যাব, আজ যাবই না।” বললাম আমি।
শাওন রাগী চোখে আমার দিকে তাকালো।
আমি পাত্তা না দিয়ে অন্য দিকে তাকালাম।
“হ্যা থেকে যাও, ওরা আজই এসে যাবে।” বলল কাকা।
আমি খুশি হয়ে গেলাম। কিন্তু উনি হন নি খুশি।
খুশি হোক আর না হোক আজ যাব না আমরা, ব্যাস।

আমি এখন ওনার আশেপাশে থাকলেই বকা খাব তাই বাড়ি থেকে বের হয়ে এলাম।
আজ গাছে উঠব মজা হবে।
যেই ভাবা সেই কাজ।
কিন্তু আমার প্রিয় গাছটায় উঠে বসতে না বসতেই উনি বললেন, নামো।
আমি সরু চোখে তাকিয়ে বললাম, কেনো?
“তুমি বড় হবা না? এই সময়ে লাফিয়ে বেড়াচ্ছ কেনো?” ভ্রুকুচকে বলল শাওন।
“নামব না।” হালকা হেসে বললাম আমি।
উনি রেগে গেলেন।
যদিও আমি এখন সুস্থ কিন্তু তাও ওনাকে রাগাতে ভাল লাগছে।
“পারলে আমাকে নামিয়ে নিয়ে যান।” মুচকি হেসে বললাম আমি।
উনি সত্যি সত্যিই গাছে উঠে এলেন।
আমি আশ্চর্য হয়ে গেলাম, “আপনি গাছে উঠতে পারেন?”
“এটা না পারার কি আছে! নামো এখন।” বলেই উনি আমার হাত ধরলেন।
“উফ কিছু করেই শান্তি নেই। অনেক জ্বালান আপনি।” মুখ ফুলিয়ে বললাম আমি।
উনি আমার দিকে গম্ভীর চোখে তাকিয়ে আমার কাছে চলে এলেন।
আমি ঘাবড়ে গেলাম, “ক..কি করছেন! কে..কেউ দে…দেখে ফেলবে।”
“নামো।” শাওন বলল।
“ন…নামছি।” নেমে এলাম আমি। নাহলে না জানি গাছে বসেই আমার সাথে কি কি করতেন উনি।
আমি গোমড়া মুখ করে আগে আগে হাটতে লাগলাম। উনি পিছন থেকে এসে আমার হাত ধরলেন। সাথে সাথে আমার রাগ উবে গেল।
আমরা একসাথে বাড়ির ভিতরে এসে ঢুকলাম।
“এখন বের হব আমরা।” শাওন বলল।
এই কথাটা শোনার সাথে সাথে আমার মুখ আবার কালো হয়ে গেল।
শাওন বলতে লাগল “রেডি হও। আমদের..”
আমি ওনার কথা শেষ হবার আগেই দ্রুত ওনার কাছ থেকে সরে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেলাম।

“কোথায় যাচ্ছ তুমি?” উনি রেগে গেলেন আর আমার পিছন পিছন আসতে লাগলেন।
হুহ, আগের বার ওনার কথামতো হয়েছে এবার আমার কথামতো হবে। এখান থেকে ফিরলেই উনি অফিসে থাকেন সারাদিন, এটা একদম ভালো লাগে না। এখানে থাকলে চব্বিশ ঘণ্টা সাথে থাকা যায়।

“Stop there.” শাওন রেগে বলল।
অনেক মজা লাগছে। অনেক দিন ধরাধরি খেলি না। আজ ওনার সাথে খেলব।
আমি মুখে হাসি নিয়ে পিছাতে লাগলাম আর বললাম, “পারলে ধরে দেখান।”
উনি আমার থেকে একটু দূরে দাড়িয়ে পরলেন আর রেগে বললেন, “You are annoying me. আমি থামতে বলেছি তোমাকে।”
আমি ওনার কথায় পাত্তা না দিয়ে পিছনে পিছিয়ে যেতে লাগলাম, “কেনো ধরতে পারবেন না?”
“সিরিয়াসলি যদি আমি আজ তোমাকে ধরি তাহলে বুঝবা তুমি।” শাওন রেগে তাকিয়ে বলল।
“গাছে কাঠাল গোফে তেল!” উপহাস করে বললাম আমি।
উনি আমার দিকে এগিয়ে আসতেই আমি ছুটে পুকুর পাড়ে চলে এলাম।
কিন্তু এখানে এসেই ত বোকার মতো কাজ করে ফেললাম। এখন কই যাব আমি!
আমি শাওনের দিকে তাকালাম। উনি সরু চোখে তাকিয়ে আমার দিকে এগিয়ে আসতে লাগলেন।
আমি হার মানতে রাজি না। আমি মুখ ভেংচি দিয়ে পুকুরে নেমে যেতে লাগলাম।
উনি ভ্রুকুচকে তাকিয়ে বললেন, “Wait, কি করছ তুমি!”
আমি পানিতে নেমে গেলাম তারপর ওনার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললাম,”এখন?!”
উনি গম্ভীর চোখে আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন। আমি জানি উনি নামতে চাচ্ছেন না।
“উপরে আসো।” শাওন শক্ত মুখ করে বলল।
“আসবো না। শান্তিতে গোসল করতে দিন ত।” বলেই আমি পানিতে ডুব দিয়ে মাথা তুললাম।
উনি পারে বসে গম্ভীর চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, “পাঁচ মিনিটের বেশি না।”
আমি মুখ ভেংচি দিলাম।
হঠাৎই ওনার ফোন বেজে উঠল। উনি ফোনে কিছু করাতে ব্যস্ত হয়ে গেলেন।

আমি ওনার দিকে কপাল কুচকে তাকালাম। ইদানীং উনি আমার দিকে মনোযোগই দেন না।
হঠাৎই আমার মাথায় আবার একটা দুষ্টু বুদ্ধি চলে এলো। ওনাকে আবার পানিতে নামাতে চাচ্ছি। আগের মত।
আমি সরু চোখে ওনার দিকে তাকালাম। উনি ফোনটা রেখে আমার দিকে তাকালেন আর ভ্রুকুচকে বললেন, জলদি ওঠো।
আমি সাথে সাথে অভিনয় আমার এক হাত নাড়াতে নাড়াতে বললাম, “আহ, আমাকে এবার সত্যিই সাপে কামড়ে দিয়েছে।”
আমি মনে করেছিলাম উনি ধরে ফেলবেন। কিন্তু না, উনি এবারো ফেসে গেলেন। অর্থাৎ দ্রুতই পানিতে নেমে এলেন। আর আমার কাছে এসে ব্যস্ত হয়ে আমার হাত ধরে বললেন, “কোথায়!”
আমি হেসে বলে উঠলাম, “আপনি এত বোকা! একই ভুল কেউ দুইবার করে? এর আগেরবারেও ত ফেসে গেছিলেন!”
উনি আমার দিকে ভ্রুকুচকে তাকালেন।
“সত্যিই, আপনি যে এবারো ফেসে যাবেন আর আমার কাছে আসবেন ভাবতেই পারিনি।” অবাক হয়ে বললাম আমি।
“একই ট্রিকস হাজার বার করলেও আমার তোমার কাছে আসতেই হবে, কারণ যদি কখন সত্যিই ঝামেলায় পরে যাও আর আমি ট্রিকস মনে করে তোমার কাছে না আসি তাহলে তোমার… যাই হোক সেটার রিক্স আমি নেব না।” উনি আমার দিকে সিরিয়াস হয়ে তাকিয়ে বললেন।
এই মুহূর্তে বলার জন্য আমার কাছে কিছুই নেই। আমি ত কিছুই করিনি ওনার জন্য তাও কি করে উনি আমাকে এতটা ভালোবাসেন!
আমি এগিয়ে গিয়ে ওনার গালে কিস করলাম।
উনি অবাক হয়ে আমার দিকে তাকালেন।
আমার চোখে জল চলে এলো। আমি ওনাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম। তবে এই চোখের জল খুশির জন্য।
“কাদতে এতই ভালো লাগে!” শাওন মুচকি হেসে বলল।
আমি চুপচাপ জড়িয়ে ধরে রইলাম। চোখ থেকে এখনো খুশির অশ্রু ঝরছে।
“এখন কি কেউ দেখবে না?” শাওন মৃদু স্বরে বলল।
আমি সাথে সাথে ওনাকে ছেড়ে দিলাম আর মাথা নিচু করে ওনার কাছ থেকে সরে আসতে চাইলাম। কিন্তু উনি আমার হাত ধরে নিলেন।
আমি ওনার দিকে তাকালাম না। মাথা নিচু করেই রইলাম কারণ এভাবে কাদার পর এখন লজ্জা লাগছে।
উনি দুই হাত দিয়ে আমার দুই চোখের পানি মুছে দিলেন।
“ওই বাড়িতে যেতে হবে তাই তোমাকে বলেছিলাম রেডি হতে। ঢাকা যাবার জন্য না। তুমি ত অর্ধেক শুনেই কাজ করে ফেলো।” বলল শাওন।
আমি ওনার কথা শুনে বোকা সেজে গেলাম আর ওনার দিকে তাকালাম।
“চলো এখন।” বললেন উনি।
আমরা বাড়ি ফিরে এলাম। আজ কাকা কে আবার দোকানে যেতে হলো ওনার জন্য জামাকাপড় কিনতে।
আমরা ফ্রেস হয়েই বের হয়ে গেলাম।
বাড়ি ফিরে জানতে পারলাম নিপাকে পাত্রপক্ষ পছন্দ করেছে। আর নিপার বিয়ে খুব শীঘ্রই হবে।
ভালো হয়েছে, তারমানে আরো কিছু দিন এখানে থাকা যাবে।
কিন্তু আমার আশা উনি নিরাশা করে দিলেন। উনি কালই চলে যাবেন আর আমাকেও নিয়ে যাবেন।
“পিশামনি একটু বুঝাও না, উনি কালই চলে যেতে চাচ্ছেন” আমি পিশামনিকে বললাম।
পিশামনি একটু কেশে শাওনকে বলল “ত যা তুই একা, মিলা থাকুক।”
“না, ওনাকেও থাকতে হবে।” আমি কপাল কুচকে ফেললাম।
সবাই হেসে দিল।
শাওন ভ্রুকুচকে বলল, “আমি যাব আর তুমিও যাচ্ছ। এটাই ফাইনাল।”
বলেই শাওন সিড়ি দিয়ে উপরে উঠে গেল।
কে আর কি বলবে! উনি আর ওনার জেদই সব।
আমিও রুমে চলে এলাম।
উনি ফোনে ব্যস্ত। আমার দিকে এক পলক তাকিয়েই আবার কথা বলার কাজে ব্যস্ত হয়ে গেলেন।
আমি বিরক্তির সাথে অপেক্ষা করতে লাগলাম।কিন্তু ওনার ত কথা শেষই হচ্ছে না।
তাই আমি এগিয়ে গিয়ে ওনার বাহুর কাছের শার্ট টেনে ওনাকে নিজের দিকে ঘুরালাম।
উনি ভ্রুকুচকে ইশারায় জিজ্ঞেস করলেন, কি?
আমি কিছু না বলে মুখ ফুলিয়ে তাকিয়ে রইলাম।
উনি ফোনের ব্যক্তিকে পরে ফোন করবেন জানিয়ে ফোন কাটলেন আর আমাকে বললেন, “কি?”
“সারাদিন আপনার শুধু ফোন আর অফিস, ফোন আর অফিস। ওদিকেই আপনার মনোযোগ। আপনি আমার দিকে মনোযোগ দেবেন কবে, আর আমাকে সময় দেবেন কবে?” রেগে বললাম আমি।
উনি গম্ভীর চোখে তাকিয়ে আমার দিকে এগিয়ে আসতে লাগলেন।
“ক…কি!” আমি ঘাবড়ে গেলাম।
“মনোযোগ চাচ্ছ তাহলে পিছিয়ে যাচ্ছ কেনো?” শাওন গম্ভীর গলায় বলল।
“আ…আমি ত…।” আমি ভয়ে ঢোক গিললাম।
সাথে সাথে দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেল।
উনি আমার অনেক কাছে চলে এলেন। আমি চোখ নামিয়ে রাখলাম।
উনি আমার গলায় এক হাত ডুবিয়ে দিলেন। আমি সাথে সাথে কেপে উঠলাম।
“Attention চাও কিন্তু আমাকে কাছে আসতে দিতে চাও না। Attention চাও কিন্তু আমি তোমাকে টাচ করলেই তোমার কাপাকাপি শুরু। কারণ তুমি নিজেই এসবের জন্য এখনো রেডি না।” শাওন গম্ভীর চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বলল।
আমি চোখ তুলে ওনার দিকে তাকালাম।
“তোমার জন্য একটা প্রজেক্ট ছেড়ে দিয়ে চলে এসেছি। কালকের মিটিং গুলোও ক্যানসেল করে দিয়েছি। যেহেতু আমি ওখানে প্রেজেন্ট নেই তাই ফোনের মাধ্যমেই সব সামলাতে হচ্ছে আমার।
যে আমি কিনা রাইট টাইমের আগে অফিসে প্রেজেন্ট থাকতাম এখন অফিস মিস করে দিই। তারপরও তোমার মনে হয় আমি তোমাকে Attention দিচ্ছিনা।” শাওন শান্ত চোখে তাকিয়ে বলল।
আমি হা হয়ে তাকিয়ে রইলাম। এবারো আমার কাছে বলার কিছুই নেই।
ওনার ফোন আবার বেজে উঠল। উনি আমার দিকে এক পলক তাকিয়ে ফোন তুলে কথা বলতে বলতে রুম থেকে বের হয়ে গেলেন।
উনি সত্যিই অনেক করেন আমার জন্য কিন্তু আমি হয়ত তার অর্ধেকও জানতে পারিনা। কারণ উনি প্রকাশ করেন না।
মনোযোগ ত আমি ওনাকে পুরোপুরি দিচ্ছি না। কিছুই স্বাভাবিক হতে দিচ্ছি না। কিন্তু আমি সত্যিই একটা স্বাভাবিক সম্পর্ক চাচ্ছি। কিন্তু কিভাবে! নিজের মুখে ত বলতেও পারব না আমি।

আমি একটা নিঃশ্বাস জোর করে বের করে দিয়ে নিজেকে শান্ত করে নিলাম।
হঠাৎই সেদিন নিপার বলা কিছু কথা মাথায় এলো। কিন্তু ওগুলো কি আমার দ্বারা হবে?
হবে, হবে না কেনো! অবশ্যই হবে।
আমি ঠোঁট কামড়ে ধরে চিন্তা করতে লাগলাম।

রাতের ডিনারের পর আমি আগে আগে রুমে চলে এলাম।
কেমন কেমন যেন লাগছে। আমি রুমের মধ্যে পায়চারি করতে লাগলাম।
“কি হয়েছে?” শাওন রুমে ঢুকে ভ্রুকুচকে বলল।
আমি শাওনের দিকে তাকালাম আর একটা ঢোক গিলে বললাম, “ক…কি হবে! কিছুই না।”
শাওন নিজের মত বেডে গিয়ে বসল আর ফোনে কিছু করতে লাগল।
“আ..আমি..।” আমি এটুকু বলেই এদিক ওদিক তাকাতে লাগলাম।
“ঘামছ কেন!” শাওন বলল।
আমি নিজের কপালে আর গলায় হাত দিয়ে দেখলাম। সত্যিই ঘেমে যাচ্ছি।
“Are you feeling sick?” শাওন ব্যস্ত হয়ে আমার কাছে চলে এলো। তারপর আমার কপালে হাত দিল।
আমি এদিকে ওদিকে তাকাতে লাগলাম।
“জ্বর ত নেই! কি হয়েছে?” শাওন প্রশ্ন সূচক চোখে তাকিয়ে বলল।
“আমি…।”
“হ্যা তুমি…?” শাওন ভ্রুকুচকে ফেলল।
আমি মাথা নিচু করে বললাম, কিছু না।
“What the hell! কিছু না ত এমন করছ কেনো!” শাওন বলল।
শাওনের ফোন বেজে উঠল। উনি গিয়ে ওনার ফোন তুললেন।
আমি নিজেকে শান্ত করে কাবাডের কাছে এগিয়ে গিয়ে শাওনের একটা সাদা শার্ট নিয়ে নিলাম। তারপর বাথরুমে চলে গেলাম।
আর শুধু শার্টটা পরে বের হয়ে এলাম।
উনি বিছানায় হেলান দিয়ে বসে ফোনে কিছু টাইপ করছিলেন।
আমার এখন অনেক লজ্জা লাগছে। তাই আমি লাইটটা অফ করে দিলাম। রুম আবছা অন্ধকারে ভরে গেল।
“এখনি ঘুমাবা তুমি…?” বলেই আমার দিকে তাকিয়ে চুপ হয়ে গেল শাওন।
উনি হয়তো এমন কিছু আশাই করেন নি।
আমি লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেললাম।
উনি বেডের পাশের লাইটের সুইচ অন করে দিলেন।
পুরো ঘর আবার আলোয় ভরে গেল।
এতে আমি আরোই লজ্জা পেলাম। এক হাত হাটুর কাছে অন্য হাত দিয়ে বুকের কাছের শার্ট চেপে ধরলাম।
লাইটটা জ্বালানো কি খুব দরকার ছিল! এখন কি করব আমি!
উনি ওনার জায়গায় বসে আমার মুখের দিকেই তাকিয়ে আছেন।
পুরো রুম নিস্তব্ধতায় ভরে আছে। কিন্তু এরই মধ্যে আমি আমার নিজের হার্টবিট শুনতে পাচ্ছি।
“ল…লাইট টা ব..বন্ধ করেন প্লিজ।” আমি এদিক ওদিক তাকাতে তাকাতে বললাম।
“রোমান্স করতে পারোনা, কিস করতে পারোনা, এখন আমাকে Seduce করতে এসেছো সেটাও ঠিক মতো করতে পারছ না।” গম্ভীর চোখে তাকিয়ে বলল শাওন।
আমি ওনার দিকে তাকিয়ে আবার চোখ সরিয়ে নিলাম।
“এখানে আসো।” শাওন এক হাত দিয়ে ইশারা করে বলল।
আমি ঢোক গিলে ওনার দিকে তাকালাম। উনি স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন।
আমি চোখ নামিয়ে ওনার দিকে এগিয়ে যেতে লাগলাম। একটু একটু ভয়ও লাগছে।
আমি ওনার কাছে এসে আগে লাইটটা বন্ধ করে দিলাম। সাথে সাথে শাওন আমার হাত ধরে টেনে ওর কাছে নিয়ে এলো।
আমার দুইহাত ওনার কাধের উপর রাখলাম আর চোখ বড়সড় করে ওনার দিকে তাকালাম।
উনি মুচকি হেসে আমার কপালে কিস করলেন।
আমি চোখ বন্ধ করে নিলাম তারপর আস্তে আস্তে আবার খুললাম।
হার্ট প্রচন্ড জোরে জোরে বিট করছে।
“তোমার স্নোবেল কোথায়?” শাওন আমার কানে কানে বলল।
আমি ওনার দিকে তাকিয়ে মাথা নিচু করে ফেললাম।
উনি মৃদু হাসলেন। আমি এদিক ওদিক তাকাতে লাগলাম।
উনি এক হাত দিয়ে আমার কোমড় জড়িয়ে ধরে কাছে টেনে নিলেন। আমি চোখ তুলে ওনার দিকে তাকালাম।
উনি গম্ভীর চোখে তাকিয়ে আমার গলার কাছের শার্টের বোতামে হাত দিলেন। সাথে সাথে আমি লজ্জায় ওনাকে জড়িয়ে ধরলাম।
উনি নিঃশব্দে হেসে আমাকে জড়িয়ে ধরলেন।

(চলবে…)
(চলবে…)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here