১৬ বছর বয়স পর্ব ৩৯+৪০

গল্পর নাম : #১৬_বছর_বয়স
#পর্ব_৩৯ : #পরিশোধ
লেখিকা : #Lucky

সকালে আগে আমার ঘুম ভাঙলো। শাওন আজও আমাকে পিছন থেকে কোমড় জড়িয়ে ধরে আছে। আমি হালকা ঘাড় ঘুরিয়ে ওনার দিকে তাকালাম। উনি এখনো ঘুমাচ্ছেন।আমি ওনার হাতটা আস্তে করে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করতেই উনি নড়েচড়ে আমার আরো কাছে চলে আসলেন আর সেভাবেই ধরে রইলেন।
কি করব এখন! শাশুড়ীর গুনধর ছেলে ত সকাল সকাল উঠত। কিন্তু এখন দেখো!
ওদিকে স্নোবেলটাকে কাল রাত থেকে দেখলাম না। হয়ত শাওনের কাজিনরা নিয়ে গেছে। ওর কাছে যেতে হত।
কিন্তু এখন ওঠার উপায় নেই। তাছাড়া আমি ওনাকে ঘুম থেকে উঠাতেও চাচ্ছিনা। তাই অপেক্ষা করতে লাগলাম।
অপেক্ষা করতে করতে একঘন্টা হয়ে এলো তাও উনি ঘুমাচ্ছেন। বুঝিনা উনি এক পাশে ফিরে যে আমাকে ধরে থাকেন অন্যদিকে ফিরতে ইচ্ছে করেনা? এদিক ওদিক না ফিরে ঘুমায় কিভাবে একপাশে ফিরেই!

“মিলা আজ কি আর বের হতে ইচ্ছে করছে না?” দরজার বাহিরে থেকে বলল নিপা। পাশে অন্য কাজিন গুলোও আছে। ওরা সবাই বাহিরে অনেক হাসাহাসি করেছে।
আমি সাথে সাথে শাওনের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে উঠে বসলাম বিছানা থেকে নামার জন্য।
কিন্তু শাওন আমার হাত ধরে নিল। আমি চমকে ওনার দিকে তাকালাম। উনি এক হাত ভাজ করে তার উপর মাথা উঁচু করে রেখে আমার দিকে মুচকি হাসি দিয়ে তাকিয়ে আছেন। অর্থাৎ উনি এখন আমাকে ছাড়বেন না।
আমি গলায় স্বর নামিয়ে অনুরোধ করে বললাম, প্লিজ এখন যেতে দিন আমাকে। সবাই কি মনে করবে!
শাওন বলল, ওকে।
উনি আমার হাত ছেড়ে দিলেন। আমি সাথে সাথে বিছানা ছেড়ে নামলাম কিন্তু শাড়ির আঁচলে টান অনুভব করে থেমে গেলাম।
ব্যস্ত হয়ে পিছনে ঘুরেই অবাক হয়ে গেলাম। উনি উঠে বসে আমার শাড়ির আঁচলটা হাতে ধরে নিয়েছেন।
আমি নিচু গলায় বললাম, “কি শুরু করেছেন আপনি?”
ওদিকে বাহিরে দাড়িয়ে ওরা সবাই হেসেই যাচ্ছে।
শাওন অন্য হাত দিয়ে ইশারা করে বলল,”এখানে আসো।”
আমি শাড়ির আঁচল টেনে নেওয়া চেষ্টা করে বললাম, “কখনই না, আমি জানি ত আপনি আমার সাথে আবার কি কি সব করবেন।”
শাওন শাড়ির আঁচলটা হাতে পেচিয়ে এক টান দিতেই আমি ওনার কাছে চলে এলাম। আমার হাত দুটো এসে পরলো শাওনের কাধের উপর। উনি গম্ভীর চোখে তাকিয়ে আমার মুখের সামনে এসে পরা চুলগুলো সরিয়ে দিলেন। আমি চোখ বন্ধ করে নিলাম।
বাহিরে থেকে আবার কেউ দরজা ধাক্কাতে ধাক্কাতে বলল, “তোরা কি আজ আর বের হবি না?”
বলেই সবাই হাসতে লাগল।
আমি শাওনের উপর থেকে হাত সরিয়ে নিলাম তারপর এদিক ওদিক তাকিয়ে বললাম, “ছাড়ুন এখন, প্লিজ।”
“বকুলকে বলবা আমাদের মধ্যে সব স্বাভাবিক আছে। আর আমি তোমাকে আদরও করি।” শাওন বলল।
আমি হকচকিয়ে গেলাম আর শাওনের দিকে তাকালাম। কিন্তু উনি মজা করছেন না। বরং সিরিয়াস হয়ে কথাটা বলেছেন।
আমি কি বলব বুঝতে না পেরে এদিক ওদিক তাকাতে লাগলাম।
“আর এখন আগে শাওয়ার নেও তারপর রুম থেকে বের হও।” বলেই শাওন আমার শাড়ির আঁচল ছেড়ে দিল আর বাথরুমের দিকে ইশারা করল।
আমি উঠে দাড়ালাম। সাথে সাথে শাওন আবার আমার হাত ধরল।
আমি চমকে তাকালাম।
“তোমার সবকিছু আমাদের কাবাডে রাখা।” বলেই শাওন ওর কাবাডের দিকে ইশারা করল।
তারপর আমার হাত ছেড়ে দিল।
আমি এগিয়ে গিয়ে কাবাড খুললাম। ওনার একটা কথা “আমাদের কাবাড” আমার মুখে হাসি নিয়ে এলো। আমি সব নিয়ে বাথরুমে ঢুকে গেলাম।

সব ত করলাম কিন্তু শাড়ি কি করে বাথরুমে পরব? রুমে ত আবার উনি আছেন।
তাই মাথায় তোয়ালে বেধে শাড়িটা কোন রকম গায়ে জড়িয়ে বের হয়ে এলাম।
উনি নেমে খাটে বসে ছিলেন। আমাকে বের হতে দেখে বললেন, “আমার জন্য ওয়েট করো।”
বলেই উনি জামাকাপড় নিয়ে বাথরুমে ঢুকে গেলেন।
আমি এবার একটা হাফ ছেড়ে নিজের শাড়ি ঠিক করতে লাগলাম।

উনি খানিকক্ষণ বাদেই একটা সাদা শার্ট আর আকাশী রঙ এর জিন্স পরে মাথা মুছতে মুছতে বের হয়ে এলেন।
আমি ওনার দিকে তাকিয়ে আবার চোখ সরিয়ে নিলাম। উনি আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে কাছে এগিয়ে আসতে লাগলেন। আমি দরজার কাছেই দাড়িয়ে ছিলাম। তাই তাড়াতাড়ি রুমের দরজা খুলে বের হয়ে গেলাম। উনি নাহলে আবার আমাকে জ্বালানো শুরু করে দেবেন।
কিন্তু বের হতে না হতেই উনি এসে আমার হাত ধরে নিলেন। আমি চমকে ওনার দিকে তাকালাম।
“বলেছি না অপেক্ষা করতে, একসাথে নিচে যাব।” শাওন ভ্রুকুচকে তাকিয়ে বলল।
আমি কি বলব বুঝতে না পেরে তাকিয়ে রইলাম।
“চলো এখন।” বলেই শাওন আমার হাত ধরে নিয়ে যেতে লাগলো। সিড়ির কাছে এসেই আমি হাত ছাড়িয়ে নিলাম। শাওন আমার দিকে প্রশ্নসূচক চোখে তাকালো।
“স..সবাই দেখবে।” আমি চোখ নামিয়ে বললাম।
শাওন আবার আমার হাত ধরে নিয়ে বলল,”আমি সবার দেখা নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছিনা তাই তুমিও ঘামানো বন্ধ করো।”
আমি আর কিছু বললাম না।
নিচে সবাই বাসা সাজাচ্ছে। আমাদের দেখে কাকিমনি বলল, “এত সময়ে আসতে ইচ্ছে হলো?”
নিপা বলে উঠল,”ডেকে ডেকে গলা ব্যথা হয়ে গেল তাও সারা দিল না।”
সবাই হাসতে লাগল।
“হয়েছে তোর?” শাওন ভ্রুকুচকে নিপাকে বলল।
“না। এখন মিলাকে লাগবে আমাদের। কাজ আছে।” চোখ পাকিয়ে বলল নিপা।
অন্য কাজিনরাও কোমড়ে হাত দিয়ে হ্যা সূচক মাথা নাড়ল। পলক এক কোনায় দাঁড়িয়ে চুপচাপ হাসছে।
“আমি জানি ত কি কাজ। ওকে উল্টাপাল্টা প্রশ্ন করার কাজ। তাই ভুলে যা। ও আমার সাথেই থাকবে।” শাওন সিরিয়াস হয়ে বলল।
নিপা রেগে কাকিমনিকে বলল, “মা দেখেছো? কিভাবে বউ এর হয়ে আমাদের সাথে ঝগড়া করছে।”
কাকিমনি কিছু না বলে শুধু হাসলেন।
আমি মাথা নিচু করে রইলাম। উনি এখনো আমার হাত ধরেই আছেন। ছাড়াছাড়ির নাম নেই।
শাওন ওদের পাত্তা না দিয়ে আমাকে চেয়ারে নিয়ে বসালো আর আমার পাশে বসল।
আমার শাশুড়ী সিড়ি দিয়ে তখনি নিচে নেমে এসে দাড়ালেন।
“সবার খাওয়া শেষ। তোদের জন্য অপেক্ষা করতে করতে শেষ আমরা।” বলতে বলতে পিশিমনি আমাদের সামনে আলু ভাজি আর রুটি রাখলেন।
“কুমড়ো ভাজি নেই?” আমি আর শাশুড়ী দুইজন একসাথেই বলে উঠলাম।
আমি চমকে শাওনের মায়ের দিকে তাকালাম।
সবাই স্তম্ভিত হয়ে গেল কিন্তু পরক্ষণেই হেসে দিল।
শাওনও নিঃশব্দে হেসে দিল।
“যাক এতদিনে তোমার মধ্যে সুবুদ্ধি হয়েছে।” শাওনের মা শক্ত মুখে তাকিয়ে আমাকে বললেন।
এটা প্রশংসা নাকি না, বুঝলাম না।
“কুমড়ো আজ নেই।” কাকিমনি বললেন।
“সমস্যা নেই।” শাওন বলল।
“শাওনের কুমড়ো ত এখন মিলা।” বলে উঠল পিশামনি।
সবাই আবার হেসে দিল। শাওন আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিল।
“এখন কথা না বলে ওদের খেতে দে।” শাওনের মা সবাইকে বলল।
শাওন আমার তিনটা প্লেট সাজালো একটা আমার সামনে রেখে অন্যটা ওর মায়ের জন্য এগিয়ে নিয়ে গেল।
শাওনের মাকে এই প্রথম আমি হাসতে দেখলাম। শাওন ওর মা কে নিয়ে এসে আমার পাশের চেয়ারে বসালো।
আমি সরে যাওয়ার জন্য উঠতেই শাওনের মা শক্ত মুখে বললেন, তোমাকে উঠতে বলেছি?
আমি অপ্রস্তুত হয়ে তাকিয়ে আবার বসলাম।
শাওন ওর প্লেট নিয়ে আমার পাশে এসে বসলো। আমার যে কেমন অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে সেটা আমিই জানি। ভাবা যায় শাশুড়ীর পাশে বসে খাচ্ছি!
শাওন আমার দিকে প্রশ্নসূচক চোখে তাকালো। আমি না সূচক মাথা নেড়ে খেতে লাগলাম।
“আজ বৌভাত। শাড়ি চেঞ্জ করে আমি যেটা দেব সেটাই পরবে তুমি।” শাশুড়ী বললেন আমাকে।
আমি ওনার দিকে চোখ পিটপিট করে তাকিয়ে হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়লাম।

খাওয়া শেষ হতেই শাশুড়ী আমাকে বললেন, আমার রুমে এসো, শাড়ি নিয়ে যাও।
আমি ওনার পিছু পিছু ওনার রুমে গিয়ে ঢুকলাম। এই প্রথম আমি আমার শাশুড়ীর রুমে ঢুকলাম। উনি একটা অনেক সুন্দর কালো খয়রী রং এর শাড়ি আমার হাতে দিলেন।
“এটা পরে এসো।” উনি আমাকে বললেন।
উনিও শাওনের মতই হাসে না। শাওনের মত বলতে শাওন আগে যেমন গোমড়ামুখু ছিল তেমন। হয়ত সুইটির শোকে। নাকি উনি এমনই?
আমি শাড়ি নিয়ে বের হয়ে এলাম।
রুমে এসে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিলাম। তারপর শাড়ি পরতে লাগলাম। শাড়িটি সত্যিই অনেক সুন্দর। আমি শাড়িটা ঠিকভাবে পরে নিলাম।
“it suits you perfectly.” পিছন থেকে বলে উঠল শাওন।
আমি অনেক বেশিই চমকে উঠলাম। উনি কিভাবে….? আমি ত দরজা বন্ধ করেছিলাম। তাহলে?
আমি স্তম্ভিত হয়ে দাড়িয়ে রইলাম। পিছনে ঘুরলাম না।
এটাই হওয়ার বাকি ছিল মনে হয়। আমি এখন কি করব! উনি আমার শাড়ি পরা পুরোটা…।
আমি মাথা নিচু করে রইলাম। আর এক হাত দিয়ে শাড়ির আঁচল চেপে ধরলাম।
“আমি দেখতে চাই নি। তোমার দোষ। তুমি বেলকোনি চেক করোনি।” শাওন শান্ত গলায় বলল।
এখন উনি সহজেই আমার ঘাড়ে দিয়ে দিলেন। উনি ইচ্ছে করেই সবটা… সত্যিই উনি অনেক বেশিই খারাপ। আমার এই পরিস্থিতিতে এখন অদৃশ্য হয়ে যেতে ইচ্ছে করছে।
আমি ওভাবেই দাঁড়িয়ে রইলাম। উনিও আর কোনো কথা বলছেন না। পিছনে ঘুরতেও ত কেমন লাগছে। কিন্তু এভাবে আর কত সময়! নিচে সবাই অপেক্ষা করছে হয়ত।
“কি করেছ তুমি আমার উপর?” শাওন বলে উঠল।

কি বলছেন উনি এসব? আমি আবার কি করলাম!
“মিলা নিচে আয়।” পিশিমনি নিচ থেকে জোর গলায় বলল।
আমার পা ত নড়ছেই না। কারণ পিছনে ঘুরতে পারব না আমি।
“যাও। নাকি থাকতে চাচ্ছ?” শাওন বলল।
আমি কোনোদিকে না তাকিয়ে তাড়াতাড়ি ঘুরেই দরজার কাছে এগিয়ে গেলাম।
তারপর দরজা খুলে বের হয়ে এলাম। শাওন আবার পিছন থেকে এসে আমার হাত ধরল।
আমি হকচকিয়ে গেলাম আর ওনার দিকে না তাকিয়েই বললাম, “কি করতে চাচ্ছেন আবার!”
“একসাথে যেতে চাচ্ছি।” শাওন বলল।
উনি আমার হাত ধরে আমাকে নিয়ে নিচে নেমে এলেন।
সবাই নিচে অপেক্ষা করছিল। কাকা, কাকি আর প্রভাতীও এসেছে।
আমি শাওনের কাছ থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করতেই উনি আমার দিকে প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকালেন।
“স্নোবেলের…কাছে…যাব।” আমি থেমে থেমে বললাম।
শাওন আমার হাত ধরে রেখেই আমার কাছে এসে আস্তে করে বলল, “তোমার স্নোবেল ভালো আছে। চিন্তা করা লাগবে না।”
“ওকে ছাড় এখন। কেউ নিয়ে যাবে না তোর মিলাকে।” বলল কাকিমনি।
শাওন তাও আমার হাত ধরেই রইল।
কিন্তু লাভ হলো না। কাকিমনি আমাকে জোর করে ওনার কাছ থেকে নিয়ে গেলেন।
সত্যিই হাসি পাচ্ছে উনি যা শুরু করেছেন।

সেদিন অনেক ব্যস্ততার মধ্যে দিয়ে কাটলো। অনেকের সাথে পরিচয় হতে হল। কিন্তু উনি সারাদিনে আমাকে চোখের আড়াল হতে দিলেন না।

কিন্তু রাতের খাওয়া দাওয়া শেষে হয়ে গেল আরেক কান্ড। খাওয়া শেষ করতেই শাওনের ফোনে একটা কল আসলো। শাওন ফোন তুলে কথা বলতে বলতে
এক সাইডে চলে যাওয়ার সাথে সাথে নিপা আমাকে এক হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে লাগল। সাথে অন্য কাজিন রাও ছিল। ওরা নিয়ে আমাকে এক কোনার ঘরে ঢুকিয়ে দিয়ে বলল, “একদম চুপ চাপ এখানে থাকবা, দেখি এখন তোমাকে কিভাবে খুজে বের করে।”
বলেই দরজা বন্ধ করে দিলো। আমাকে কিছু বলার সুযোগই দিলো না।
এখন বোকার মত বসে থাকা ছাড়া উপায় নেই। এ কেমন জ্বালা! রুমটা গোডাউনের মত।
মাকড়সার জালে ভরা আর চারিদিকে আবছা অন্ধকার।
এখন ওই গরিলা আমাকে খুজে না পাওয়া অব্দি হা করে বসে থাকতে হবে আমার!
আমি রুমটার ভিতরটা দেখতে লাগলাম। রুমটার সাথে একটা বেলকোনিও আছে। আমি এগিয়ে গিয়ে বেলকোনিতে দাড়ালাম।
চাঁদ ত দেখা যাচ্ছে না। কিন্তু বাহিরে আলো ভালই আছে। আমি মুগ্ধ চোখে বাহিরের দিকে তাকিয়ে রইলাম।
আচমকা শাওন আমাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরল। আমি একটু চমকে গেলাম।
উনি একটা সস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বললেন, “পেয়ে গেছি।”
আমি ঘাড় ঘুরিয়ে শাওনের দিকে তাকালাম। উনি আমার চোখের দিকে তাকিয়ে রইলেন।
আমি চোখ সরিয়ে সামনের দিকে তাকালাম। ওনার চোখের দিকে বেশি সময় তাকিয়েই থাকতে পারি না আমি।
“ছাড়ুন এখন।” মাথা নিচু করে বললাম আমি।
উনি আমাকে ছেড়ে দিয়ে আমাকে ওনার দিকে ঘুরালেন। কিন্তু কিছু না বলে তাকিয়ে রইলেন।
আমি অবাক হয়ে প্রশ্ন করলাম, “কি? কিছু বলবেন?”
“আমার যেটা পাওনা সেটা কবে পাব আমি?” শাওন আমার ঠোঁটের দিকে ইশারা করে বলল।
আমি সরু চোখে তাকিয়ে বললাম,”দিয়েছি ত। তাও একটা না, চারটা।”
শাওন প্রশ্ন সূচক চোখে তাকিয়ে বলল, মানে?
আমি ওনার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বললাম, “মানে আবার কি? চার বার দিয়েছি। পরিশোধ হয়ে গেছে। আপনার কি মনে হয়? আপনি একাই ঘুমিয়ে থাকার সময় সুযোগ নিতে জানেন? আমি জানিনা? হুহ।”
বলেই মুখ ভেংচি দিয়ে একটু ভাব নিয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলাম।
উনি জায়গায় দাড়িয়ে আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন।
এখন আমিও বলব না কখন দিয়েছি। হুহ। বুঝুক কেমন লাগে!
গল্পর নাম : #১৬_বছর_বয়স
#পর্ব_৪০ : #আমাদের_ঘর
লেখিকা : #Lucky

“তোরা এতসময় কোথায় ছিলি?” জিজ্ঞেস করল পিশিমনি।
আমি কিছু না বলে শুধু হাসলাম।
“মিলা এত জলদি পেলো কি করে তোমাকে? তুমি নিশ্চয়ই দরজা ধাক্কিয়েছ!” চোখ পাকিয়ে বলল নিপা।
আমি নিপার দিকে বোকা হয়ে তাকিয়ে রইলাম। নিপা আমাকে চোখ দিয়ে ইশারা করে উওর দিতে বলল।
আমি কিছু বলার আগেই শাওন বলে উঠল, “তোর সারাদিনে আর কোনো কাজ নেই?”
“না নেই।” সাথে সাথে বলল নিপা।
“উফ অনেক হয়েছে। থাম এবার।” বললেন পিশিমনি।

“অনেক দিন ত হলো, এবার ত তোদের একটা বাচ্চা নেওয়া উচিত।” বলে উঠলো সেই উটকো বুড়িটা।
আমি এদিক ওদিক তাকাতে লাগলাম।
এই উটকো মহিলাটা হলো আমার শাশুড়ীর বড়বোন। উফ শাশুড়ীর চেয়েও অসহ্য এই মহিলা। ফুলসজ্জা আর বৌভাতে মন ভরে নি। এখন বাচ্চাও চায়।
“বাচ্চা এখনি না। আর এই বিষয়টা আমি বুঝে নিব। তাই এটা নিয়ে আমি কারো মাথা ব্যথা চাচ্ছিনা।” গম্ভীর চোখে তাকিয়ে বলল শাওন।
আমি আড়চোখে তাকালাম শাওনের দিকে।
উটকো মহিলাটা একটু অসন্তুষ্ট হয়ে চুপ করে রইল।
“আচ্ছা বাবা তোদের ইচ্ছা মতই নিস। এখন সবাই যা৷ গিয়ে ঘুমা।” হাসিমুখে বললেন কাকিমনি।
সবাই নিজ নিজ রুমে চলে যেতে লাগল।
আমি শাওনের আগে আগে হেটে চলে এলাম নাহলে উনি আবার সবার সামনে হাত ধরে নিয়ে আসতেন।
আমি ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাড়িয়ে সব গহনা খুলতে লাগলাম।
“কালই ঢাকা ফিরব আমরা।” শাওন রুমে ঢুকতে ঢুকতে বলল।
আমি ঘুরে শাওনের দিকে তাকালাম। আর ঠোঁট উলটে বললাম, “এত জলদি কেনো?”
শাওন ভ্রুকুচকে বলল, “তোমার কলেজ চলছে সেদিকে খেয়াল আছে? এতদিন কলেজ বাদ দিয়ে ঘুরে বেড়িয়েছ আর এখন ত পুরো কলেজ যাওয়াই বন্ধ করেছ। রেজাল্ট ভালো না হলে আমি তোমাকে দেখে নেব।”
আবার শুরু ওনার সেই চোখ রাঙানো কথাবার্তা।
আমি মুখ ভেংচি দিয়ে আয়নার দিকে ঘুরলাম আর মুখ ফুলিয়ে বললাম, “আরো কিছুদিন থাকতে চাচ্ছি আমি। কালই কেন যেতে হবে?”
“কাল মানে কাল। কোনোরকম প্রশ্ন ছাড়াই যেতে বাধ্য তুমি।” শাওন বলল।
আমি রেগে শাওনের দিকে তাকিয়ে বললাম, “সব সময় হুকুম চালান কেনো? তাছাড়া আপনি যেটা চাইবেন সেটাই কেন শুনব আমি?”
শাওন কাবাড থেকে নিজের শার্ট বের করতে করতে বলল, “কারন আমি তোমার থেকে বড়।”
“বড় না ছাই!” বিড়বিড় করে বলে উঠলাম আমি।
কিন্তু উনি শুনে ফেললেন আর আমার দিকে ভ্রুকুচকে তাকালেন।
“কি বললা মাত্র?” শাওন বলল।
“বলেছি বড় না ছাই। আমি কি ছোটো বাচ্চা? আমিও বড়। তাই আমি আপনার হুকুম শুনতে রাজি না।” মুখ ভেংচি দিয়ে বললাম আমি।
শাওন আমাকে উপহাস করে বলল, “তুমি বড়? কোনো দিক থেকেই ত মনে হয়না। একটা গাধারও তোমার চেয়ে ভাল বুদ্ধি আছে।”
উনি অপমান করছেন আমাকে! আমি রেগে গেলাম।
“মানে আমি মুর্খ?! এটাই বলতে চাচ্ছেন ত!” বলে উঠলাম আমি।
শাওন কোনো কিছুই বলল না। উনি নিজের শার্ট বের করতে ব্যস্ত।
আমি রেগে বলে উঠলাম, “আমি মুর্খ হলে আপনার মাথা ফাপা।”
শাওন ভ্রুকুচকে আমার দিকে তাকিয়ে বলল, হোয়াট?

আমি ওনাকে পাত্তা না দিয়ে ড্রেসিং টেবিলে হাতের চুড়িগুলো খুলে খুলে রাখতে লাগলাম।
শাওন আমার কাছে এসে আমার হাত ধরে টেনে ওর দিকে ঘুরালো।
আমি চোখ পাকিয়ে তাকালাম আর বললাম,”কি করছেন! দেখছেন না আমি কাজ করছি?!”
“কার মাথা ফাপা?” শাওন আমার দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বলল।
আমি এদিক ওদিক তাকিয়ে পিছিয়ে যেতে যেতে বললাম, “কা…কানে শুনতে পান নি? তাও কেন জিজ্ঞেস করছেন?”
বলতে বলতেই পিছনের বিছানায় বাধা পেয়ে গেলাম। এখন কোথায় যাব আমি! আমার হার্টবিট আবার বেড়ে যাচ্ছে।
শাওন আমার সামনে এসে দাড়ালো।
“ক…কি?” বললাম আমি।
শাওন এক হাত আমার গালের মধ্যে ডুবিয়ে দিল। আমি চোখ বন্ধ করে ফেললাম।
“এখন বলো কে বড়?” শাওন শান্ত গলায় বলল।
আমি আস্তে আস্তে চোখ খুললাম আর ওনার দিকে তাকালাম।
উনি আর এক পা এগিয়ে আসতেই আমি চোখ নামিয়ে বলে উঠলাম, “আ..আপনি বড়। এখন যেতে দিন প্লিজ।”
শাওন তখনি আমার কপালে কিস করে বলল, “কোথায় যাবা?”
আবার শুরু ওনার দুষ্টমি। ঝগড়া করেও শান্তি নেই। আগে ঝগড়া করে আমাকে হুট হাট ঘর থেকে বের করে দিত কিন্তু এখন কিস করে।
“কি?” শাওন প্রশ্ন সূচক চোখে তাকিয়ে বলল।
আমি শাওনের চোখের দিকে তাকালাম কিন্তু আবার নামিয়ে নিলাম। উনি মিষ্টি হাসি দিয়ে আমার গালে কিস করলেন।
আমি চোখ বন্ধ করে শাড়ির আঁচল চেপে ধরলাম।
তখনি স্নোবেল এসে আমার পায়ের কাছে ঘুরঘুর করতে লাগল।
আমি স্নোবেলের দিকে তাকিয়ে শাওনকে কাছ থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে বললাম, ছাড়ুন আমাকে।
“আমি তোমার এই স্নোবেলকে এখানেই রেখে যাব, he really is a third person.” শাওন ভ্রুকুচকে স্নোবেলের দিকে তাকিয়ে বলল তারপর আমাকে ছেড়ে দিল।
আমি ওনার কথায় অবাক হয়ে গেলাম।
“আমি মোটেও রেখে যাব না ওকে। ও আমার সাথে যাবেই যাবে।” আমি বলে উঠলাম।
“গেলেও আমাদের সাথে এক রুমে থাকতে দেব না।” বলল শাওন।
“হ্যা জানি ত, যাতে আমার সাথে এগুলো করতে অসুবিধা না হয়!” মুখ ভেংচি দিয়ে বললাম আমি।
শাওন সাথে সাথে এক টান দিয়ে আমাকে একদম ওর কাছে নিয়ে এলো।
আমি চমকে গেলাম।
শাওন মুচকি হেসে বলল, “আমার কোনো অসুবিধা হবে না, হবে তোমার। প্রমাণ দেখবা?”
আমি হকচকিয়ে গেলাম আর শাওনকে ঠেলে সরিয়ে দিয়ে বললাম, এ..একদম না।
“তাহলে আমি যেটা বললাম ওটাই ফাইনাল।” মুচকি হেসে বলল শাওন। তারপর চেঞ্জ করতে চলে গেল।

আমি স্নোবেলের দিকে তাকালাম। স্নোবেল একপাশে বসে আমার দিকে তাকিয়ে লেজ নাড়ছে।
গরিলাটা সত্যিই অসভ্য। স্নোবেলকে এখন দূরে সরাতে চাচ্ছে।
আমি এগিয়ে গিয়ে স্নোবেলকে নিয়ে ওর বিছানায় বসিয়ে দিলাম। কিন্তু স্নোবেল লাফাতে লাগল। এই কয়েক দিনে সে অনেক মিস করেছে আমাকে। আমি ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলাম।
শাওন ফ্রেস হয়ে বের হয়ে এলো।
আমি স্নোবেলের দিকে হাসিমুখে তাকিয়ে কাবাড থেকে নিজের শাড়ি নিয়ে ফ্রেস হতে গেলাম।

ফ্রেস হয়ে বের হতেই দেখলাম শাওন আমার ল্যাগেজ প্যাক করে ফেলেছে। উনি তারমানে কালই ফিরবেন। অর্থাৎ সেই মরা বাড়ির মত কলেজে আবার যেতে হবে! সত্যিই অসহ্যকর।
উনি আমাকে দেখে ল্যাগেজ বিছানা থেকে নামিয়ে রাখতে রাখতে বললেন, “আমি সব প্যাক করে দিয়েছি। কাল সকালে বের হব।”
আমি সরু চোখে তাকিয়ে রইলাম। কিছু বলেও লাভ হবে না জানি। তাই না বলাই ভালো।
শাওন ভ্রুকুচকে তাকিয়ে বলল, “শুয়ে পরো। দাড়িয়ে আছ কেনো? নাহলে কাল সকালে তোমাকে ডাকলে আবার বলবা যে এত রাতে তোমাকে ডাকছি কেন!”
আমি চোখ পাকিয়ে শাওনের দিকে তাকালাম আর বললাম, “আমার ঘুম সকাল সকালই ভাঙে কিন্তু আপনার কারণে উঠতে পারি না। নিজে ত ওঠে না আমাকেও উঠতে দেয় না।”
“আমি দেই না?” শাওন সরু চোখে তাকিয়ে বলল।
“হ্যা দেন না-ই ত! আর আপনার জন্যই ত রাতেও শান্তিতে ঘুমাতেও পারিনা।” মুখ ভেংচি দিলাম আমি।
“কি?” শাওন ভ্রুকুচকে তাকিয়ে বলল।
“হ্যা। আপনার জন্য।” আমি বললাম।
“তারমানে এগুলো তোমার ভালো লাগে না?” শাওন বলল।
আমি ওনার এই প্রশ্নে থতমত খেয়ে গেলাম। তাও নিজেকে সামলে নিয়ে বললাম, “হ…হ্যা লাগে না ই ত। স…সবসময় উল্টাপাল্টা কাজ করেন আমার সাথে।”
“Ok, Then ঘুমাও তুমি শান্তিতে।” বলেই শাওন লাইট বন্ধ করে শুয়ে পরল।
আমি হা করে কয়েক সেকেন্ড দাড়িয়ে রইলাম। কি হলো বিষয়টা বুঝলাম না। তাই গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে গিয়ে ওনার পাশে শুয়ে পরলাম। উনি আমার দিকে পিঠ ফিরিয়ে শুয়ে আছেন।
অন্যদিন ত আমার দিকে ঘুরেই শোয় আর আমাকে জড়িয়েও ধরে। আজ কি হলো!
উনি কি আমার কথায় রাগ করেছেন!
এখন রাগ করে আমাকে আর জড়িয়েই না ধরলে! ধুর ছাতা ভাল্লাগেনা। হয়তো বেশিই বলে দিয়েছি আমি। এখন কি করব?
ওনাকে এখন আবার বলব যে জড়িয়ে ধরতে পারেন? না না, অসম্ভব। বললেই উনি মজা করবেন আবার আমাকে নিয়ে।
উফ। কি করব?
কিছুই করার নেই। আজ হয়তো এভাবেই ঘুমোতে হবে! সব আমার নিজের দোষে।

খুব সকালেই আমরা রওনা হলাম। সবাই আরো কিছুদিন থাকতে বলল। কিন্তু ওনার অফিসের কি না কি গুরুত্বপূর্ণ কাজ তাই যেতেই হবে। তাই ফিরতে ত হবেই।
তবে এখন সমস্যা হলো উনি আমার সাথে কথা ত স্বাভাবিক ভাবেই বলছেন কিন্তু কেন জানি মনে হচ্ছে উনি দূরে সরে আছেন। হয়তো কালকের ওই কথাগুলো আমার ওভাবে বলা উচিত হয় নি।
ফেরার পথে ওনার দিকে অনেক বার তাকালাম। এক পর্যায়ে উনি প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকিয়ে শুধু এইটুকুই বললেন, “কি? কিছু বলবা?”
আমি না সূচক মাথা নাড়লাম।

দুপুরের পরেই ঢাকা ফিরলাম। ফেরার পরেই উনি রেডি হয়ে অফিসে চলে গেলেন। আর যাওয়ার একটু পরেই বাহিরে থেকে এক ডেলিভারিতে খাবারও পাঠিয়ে দিলেন আমার জন্য।
রাগ করেছেন কি করেন নি সেটাও স্পষ্ট না। গাড়িতে বসেও ত কিছু বলতে পারলাম না।
একা একা লাগছে এখন। যদিও স্নোবেল আছে, তাও।
কিছু করার মতো না পেয়ে আমি ওনার পেইন্টিং রুমে গিয়ে ঢুকলাম।
ঢুকতেই আমার পদ্ম ফুলসহ সেই ছবিটা ক্যানভাসে আকা। উনি অনেক বেশিই ভালো আকেন।
ইস যদি আমিও ওনাকে আঁকতে পারতাম!

কিন্তু এটা সত্যিই অদ্ভুত যে প্রথমে যেদিন এই রুমে ঢুকলাম উনি আমাকে এই রুম থেকে একেবারে বের করে দিলেন। কিন্তু এখন!
সেই রুমে আমারই ছবি একে রাখা। সত্যি সবই বদলে গেছে।

আজ রাতের রান্না আমিই সেরে ফেললাম। উনি এসে পরলে আমাকে আর করতে দেবেন না। বরং বলে উঠবেন ‘রান্না করতে জানো না তাও কেন করতে এসেছ!’

সন্ধ্যার পরেই উনি ফিরে এলেন। কিন্তু রান্না দেখে ভাল মন্দ কিছুই বললেন না। চুপচাপ বসে খেয়ে নিলেন।

“আপনি কি রাগ করেছেন আমার উপর?” আমি প্রশ্ন করে ফেললাম।
“এটা মনে হবার কারণ?” শাওন স্বাভাবিক ভাবে তাকিয়ে বলল।
গরিলা একটা। এখন আবার কারণ জানতে চাচ্ছে।
“না এমনিই।” বললাম আমি।
তারপর আর কিছু বললাম না।

রাতে ঘুমানোর সময় উনি আমার গায়ে চাদর টেনে দিয়ে বললেন যে ওনার এখন প্রজেক্টের কাজ আছে।
তাই উনি ড্রয়িং রুমে চলে গেলেন।
আমার সত্যিই অনেক অসহ্য লাগছে এখন। ঘুমও আসছে না।
আমি উঠে ড্রয়িং রুমে চলে এলাম। উনি সোফায় বসে টি-টেবিলের উপর একটা মডেল বানাচ্ছেন। আমাকে দেখে আমার দিকে প্রশ্ন সূচক চোখে তাকিয়ে বললেন, “ঘুমাও নি কেনো এখনো? কাল থেকে কলেজ যেতেই হবে তোমার।”
“আপনি কখন ঘুমাবেন?” আমি বললাম।
“আমার দেরি হবে। সো যাও আর ঘুমাও।” বলেই শাওন আবার নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে গেল।
এখন সত্যিই অসহ্য লাগছে।
আমি এগিয়ে গিয়ে ওনার পাশে বসে পরলাম।
উনি ভ্রুকুচকে তাকিয়ে বললেন,”এখানে বসেছ কেন?”
“আমি এখন ঘুমাব না। আপনার কাজ দেখব আমি এখন।” বলে উঠলাম আমি।
“চুপচাপ ঘুমাতে যাও।” গম্ভীর চোখে তাকিয়ে বলল শাওন।
“না। দেখব আমি।” আমি শক্ত মুখ করে বললাম।
“ঘুমাতে যেতে বলেছি।” শাওন বলল।
আমি এবার মুখ কালো করে বললাম, “আপনি আবার আমার সাথে ক্যাটক্যাট করা শুরু করেছেন! খারাপ আপনি।”
উনি ভ্রুকুচকে আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন।
“নেন, শুরু করেন।” আমি বললাম।
শাওন আর কিছু না বলে কাজে মন দিলো।
আমি মনোযোগ দিয়ে দেখতে লাগলাম।
মাঝে মাঝে আমার মনে প্রশ্ন আসে যে ওনাকে ছেড়ে দিল কেন সুইটি? উনি ত সব দিক থেকেই পারফেক্ট।প্রশ্নটা আসলেও করিনি কখনো। আজও করলাম না।
কারণ সুইটি ওনাকে ছেড়ে না দিলে আমি ওনাকে পেতাম না।
চিন্তা করেই মুখে একটা হাসি চলে এলো। আর আমি নিজের অজান্তেই ওনাকে পাশ থেকে জড়িয়ে ধরলাম।
শাওন অবাক হয়ে আমার দিকে তাকালো।
এখন আমার খেয়াল হলো যে আমি কি করে ফেলেছি। তাই সাথে সাথে ওনাকে ছেড়ে দিয়ে অন্যদিকে তাকালাম।
কয়েক সেকেন্ড পর আস্তে আস্তে ওনার দিকে তাকালাম। উনি আমার দিকেই তাকিয়ে আছেন এখনো।
আমি চোখ নামিয়ে বললাম, “আ…আমি ত….”
শাওন আমার কাছে এগিয়ে আসতেই আমি কাচুমাচু হয়ে তাকালাম।
শাওন সরে গিয়ে আবার নিজের কাজ করতে লাগলো।
আমি আড় চোখে ওনার দিকে তাকালাম। উনি এত ভালো হয়ে গেলেন কিভাবে!
নাকি আমার কথাটা উনি সিরিয়াস ভেবে নিয়েছেন?
“ঘুমাতে যাও। আমার অনেক দেরি হবে।” শাওন কাজ করতে করতে বলল।
আমি কিছু না বলে হতাস চোখে তাকিয়ে বসে রইলাম।
উনি ত আমার দিকে তাকাচ্ছেনও না। এত কিসের মনোযোগ দিয়ে কাজ করে বুঝিনা।
“কার জন্য বানাচ্ছেন এটা?” আমি প্রশ্ন করলাম।
“নাম বললে চিনবা তুমি?” শাওন আমার দিকে না তাকিয়েই বলল।
“আপনি আমাদের ঘর বানাবেন কবে?” আমি প্রশ্ন করে বসলাম।
শাওন এবার কাজ থামিয়ে আমার দিকে তাকালো।
আমি কি বলব বুঝতে না পেরে চোখ নামিয়ে রাখলাম।
“I will.” মৃদু হাসির সাথে বলল শাওন।
আমি ওনার কথা শুনে ওনার দিকে তাকালাম। আর আমার মুখেও একটা হাসি চলে এলো।
আমাদের ঘর হবে। সত্যিই অনেক খুশি লাগছে।
উনি সেই মৃদু হাসির সাথে আবার কাজে মনোযোগ দিলেন। আমিও দেখতে লাগলাম। আর দেখতে দেখতেই ঘুমিয়ে গেলাম।
সকালে যখন ঘুম ভাঙল তখন নিজেকে বিছানায় আবিষ্কার করলাম। অর্থাৎ উনি রাতে আমাকে বিছানায় নিয়ে এসেছিলেন।
কিন্তু এখন উনি কোথায়? আজ এত জলদিই ঘুম থেকে উঠে গেছেন!
আমি গা থেকে চাদর সরিয়ে রুম থেকে বের হয়ে এলাম।
শাওন সোফায় এক পাশ ফিরে ঘুমিয়ে আছে। সামনের টি-টেবিলে ওনার তৈরি করা একটা ঘরের মডেল। আমি রুম থেকে একটা চাদর এনে ওনার গায়ে দিয়ে দিলাম। তারপর রান্নাঘরে গিয়ে নাস্তা বানিয়ে নিলাম।
উনি হয়ত রাতে ঘুমাতেই পারেন নি।
আমি রুমে গিয়ে ওনার অফিসের জন্য শার্ট, টাই, গায়ের কোট, ঘড়ি বিছানায় সাজিয়ে রাখলাম। যাতে উনি সবই হাতের কাছে পেয়ে যান।

আমার সাজিয়ে রাখতে রাখতেই উনি রুমে এসে ঢুকলেন। আমি একটু অপ্রস্তুত হয়ে গেলাম।
“আ..আপনি উঠে গেছেন!” বললাম আমি।
শাওন মৃদু হাসি দিয়ে বলল, “এত কিছু কবে শিখেছ?”
আমি কিছু না বলে অন্যদিকে তাকিয়ে রইলাম। লজ্জা লাগছে এখন।
শাওন তোয়ালে নিয়ে শাওয়ার নিতে চলে গেল। আমি ডাইনিং এ এসে খাবার রেডি করতে লাগলাম।
রেডি করা শেষ হতেই সোফার উপর থাকা শাওনের ফোনটা বেজে উঠল।
আমি এগিয়ে গিয়ে ফোনটা হাতে নিলাম। সুমনা ফোন করেছে।
আমি ফোন তুলে কানে দিতেই সুমনা বলে উঠল, শোন ফ্লাইট বুক করে ফেলেছি। আমাদের প্রজেক্টের জন্য এক মাসের বেশি হয়তো লাগবে। তুই কি সব রেডি করেছিস? এদিকে রবিনও অসুস্থ। ও থাকলে পরে তোকে ঝামেলায় ফেলতাম না।
আমি থমকে দাঁড়িয়ে রইলাম।
“হ্যালো?….হ্যালো? তুই কি শুনতে পাচ্ছিস না?” সুমনা ওপাশ থেকে বলল।
আমার মুখ থেকে কোনো কথা বের হল না। আমি কান থেকে ফোন নামিয়ে হাতে ধরে রাখলাম।
উনি কি সত্যিই এতদিনের জন্য চলে যাবেন! আমাকে ত একবারের জন্য বললেনও না। নাকি উনি আমার উপর এতটাই রাগ করেছেন যে আমার থেকে এত দূরে সরে থাকতে চাচ্ছেন।

আমি এসে রুমে ঢুকলাম। শাওন ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাড়িয়ে নিজের টাই ঠিক করছিলো। আমাকে দেখে ভ্রুকুচকে বলল, “কি হয়েছে? মুখের এই অবস্থা করে রেখেছ কেনো?”
আমি কিছু না বলে দাঁড়িয়ে রইলাম। আর চোখের পানি অনেক কষ্টে আটকে রাখলাম।
উনি টাই ঠিক করে কোটটা হাতে নিতে নিতে বলতে লাগলেন, “তোমাকে একটা কথা জানানোর ছিল। এই মাসে…”
“কোথাও যেতে পারবেন না আপনি। এই মাস, পরের মাস, তার পরের মাস সহ সব মাস, কোথাও যেতে দেব না আমি।” ওনাকে থামিয়ে দিয়ে বলে উঠলাম আমি। চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পরতে লাগল।
শাওন অবাক হয়ে বলল, কাদছ কিসের জন্য?
আমি এগিয়ে গিয়ে শাওনকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম আর ফুপিয়ে কাদতে কাদতে বললাম, “কেন যেতে চাচ্ছেন তাহলে? আমি যেতে দেব না আপনাকে।”
শাওন আমাকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে বলল, “কি হয়েছে? আর এভাবে জড়িয়ে ধরেছ কেনো?”
“আপনি কোথাও যাবেন না, আপনার বের হওয়া বন্ধ আজ থেকে।” কাদতে কাদতে বললাম আমি।
“মানে?” শাওন বলল।
আমি উওর না দিয়ে জড়িয়ে ধরে রইলাম।
শাওন একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলল, অনেক হয়েছে, ছাড়ো এখন।
“না। পারলে নিজেকে ছাড়িয়ে নিন।” বললাম আমি।
“আমার ছাড়িয়ে নিতে এক সেকেন্ডও লাগবে না। কিন্তু আমি তোমার উপর জোর খাটাতে চাচ্ছি না।” বলল শাওন।
আমি কেদেই যেতে লাগলাম।
“সিরিয়াসলি? Why are you crying damn it?” গম্ভীর গলায় বলল শাওন।
“আপনি আমার উপর রাগ করে আমাকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছেন কেনো? এক মাসের জন্য চলে যেতে চাচ্ছেন! একবার আমাকে বলার প্রয়োজন মনে করেন নি?” কাদতে কাদতে বললাম আমি।
আরো বললাম, “আমি জানি আমার সেদিন ওভাবে বলা উচিত হয় নি। ওর জন্য ত আপনি রাগ করে এখন ঠিক ভাবে আমার সাথে কথাও বলেন না, আমার দিকে তাকানও না। আর…”
” তুমি নিজেই বলেছ তোমার এসব পছন্দ না। এখন হঠাৎ এসব বলছ কেনো?” শাওন আমাকে থামিয়ে দিয়ে বলল।
আমি মাথা তুলে শাওনের দিকে তাকালাম।
উনি গম্ভীর চোখে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে।
শাওন আমার হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বলল, “কলেজের জন্য রেডি হও, আমারও লেট হচ্ছে।”
“যাব না আমি কলেজে।” রেগে বললাম আমি।
“বেশি কথা না বলে যা বলি শোনো।” শাওন ভ্রুকুচকে তাকিয়ে বলল।
“আপনার আমাকে নিয়ে চিন্তা করতে হবে না।আপনি যান আপনার গুরুত্বপূর্ণ কাজে। এক মাস কেনো, এক বছর কাটিয়ে আসুন।” রেগে বললাম আমি।
“ওকে। যাব আমি।” শক্ত মুখ করে বলল শাওন।
আমি থমকে গেলাম।
শাওন বের হয়ে চলে গেল।
উনি কি সত্যিই যাবেন নাকি? এখন কি করব আমি?

(চলবে…)

🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩
[

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here