১৬ বছর বয়স পর্ব ৪৩

গল্পর নাম : #১৬_বছর_বয়স
#পর্ব_৪৩ : #50_Shades_of_Blue
লেখিকা : #Lucky

মাত্র কয়েকদিন আগেই ত আমরা দুইজন দুইজনকে সহ্য করতে পারতাম না। আর এখন দুইজন দুইজনকে ছাড়া থাকতে পারিনা। সময়ের ব্যবধানে কতটা পরিবর্তন এসে গেছে! ভেবেই অবাক লাগে।
আমি ওনাকে পেয়ে সত্যিই অনেক খুশি। কারণ আমি ওনার মত একজনকে পেয়েছি।
যদিও প্রায় দেড় বছর হয়ে যাচ্ছে আমাদের বিয়ের তাও সব নতুনই লাগে। মাত্র কয়েকদিন মনে হয়।

– “কি ভাবছ?”
আমি শাওনের দিকে তাকালাম।
উনি প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন।
“কিছুনা, কোথায় যাব আমরা আজকে? তাও আবার এত সকালে সব ব্যাগ গুছিয়ে?” আমি সরু চোখে তাকিয়ে বললাম।
“গেলেই দেখতে পাবা।” মুচকি হেসে বলল শাওন।
তারপর গাড়ি স্টার্ট দিলো।

সকাল সকাল বের হবার কারণ হয়তো জ্যাম নেই। যাক ভাল। স্নোবেলটা আমার কোলের উপর লাফাচ্ছে। সেও অনেক আবেগে আপ্লুত।
উনি একটা সুন্দর বাড়ির সামনে এসে গাড়ি থামালেন।
“এটা কোথায় এসেছি আমরা?” আমি শাওনের দিকে তাকালাম।
“Our Home.” শাওন মৃদু হেসে বলল।
আমি অবাক হয়ে গেলাম। আমি একটা ঘর চেয়েছিলাম আর উনি আমার বলা সেই কথাটা মনে রেখে দিয়েছেন!
উনি সীট বেল্ট খুলতে খুলতে আমাকে নামার জন্য ইশারা করলেন।
আমরা একসাথে গাড়ি থেকে নামলাম।
তারপর কেচি গেট খুলে বাড়িটায় ঢুকলাম। বাড়িটার চারিদিকে দেওয়াল দিয়ে ঘেটা আর সামনে সুন্দর গার্ডেন আছে।
বাড়িটা দোতালা। ডিজাইন দেখেই বোঝা যাচ্ছে যে এটা উনি নিজে করেছেন।
উনি হঠাৎই আমাকে কোলে তুলে নিলেন।
আমি অবাক চোখে তাকিয়ে বললাম, কি করছেন আপনি!
উনি মিষ্টি হেসে আমাকে ঘরের ভিতরে নিয়ে গেলেন। তারপর কোল থেকে নামিয়ে আমার হাত ধরলেন।

বাসাটা সত্যিই অনেক সুন্দর। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো নিচতলায় একটা সুইমিং পুল আছে। এটা দেখেই আমি খুশি হয়ে গেলাম।
উনি আমাকে বেডরুম, ড্রয়িং রুম, কিচেন রুম সব ঘুরিয়ে দেখালেন। উনি একটা Dog house ও রেখেছেন স্নোবেলের জন্য৷
স্নোবেল দৌড়ে সেখানে গিয়ে ঢুকলো।

“আমরা আজ থেকে এখানেই থাকব।” শাওন বলল।
আমি খুশিতে এগিয়ে গিয়ে ওনাকে জড়িয়ে ধরলাম আর বললাম, “অনেক অনেক খুশি আমি। সত্যিই অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।”
শাওনও আমাকে জড়িয়ে ধরল।

আমরা একসাথে রান্নাঘরে এসে ঢুকলাম।
“আমি রান্না করব।” বললাম আমি।
উনি ফ্রাইপ্যান গ্যাসের উপর দিতে দিতে বললেন, “No need.”
“গরিলা একটা।” মুখ ভেংচি দিয়ে বললাম আমি।
উনি ভ্রুকুচকে আমার দিকে তাকালেন।
“কি বললা তুমি!” শাওন বলল।
-“আপনি যেটা, সেটাই ত বললাম।”
উনি সাথে সাথে আমার হাত ধরে টান দিয়ে নিজের কাছে নিয়ে এলেন।
আমি চমকে গেলাম, “ক…কি করছেন আপনি!”
“রোম্যান্স।” মুচকি হেসে বলল শাওন।
আমি চোখ বড়সড় করে শাওনের দিকে তাকালাম।
উনি আমার গালে হাত ডুবিয়ে দিলেন।
আমি সাথে সাথে ঠেলা দিয়ে ওনাকে সরিয়ে দিয়ে চোখ পাকিয়ে বললাম, আবার শুরু আপনার!
উনি আমার দিকে এক পা এগিয়ে আসতেই আমি মৃদু হেসে রান্নাঘর থেকে বের হয়ে এলাম।
বের হয়ে সুইমিং পুলের কাছে এলাম। উফ এখনি নেমে পরতে ইচ্ছে করছে।
আমি পানিতে পা ডুবিয়ে বসে পরলাম।
সেই মুহুর্তে উনিও এসে আমার পাশে বসে পরলেন আর আমার হাত ধরলেন।
আমি মৃদু হেসে ওনার কাধে মাথা রাখলাম।

দুপুরের খাবার পরেই ওনার ফোন আসায় উনি কথা বলতে বলতে উপরে চলে গেলেন।
আমি টিভি ছেড়ে বসে চ্যানেল চেঞ্জ করতে লাগলাম। হঠাৎই চলে এলো সেই ‘ফিফটি শেইডস অব গ্রে’ নামের মুভিটা।
একটু আগেই কেবল শুরু হয়েছে হয়ত।
উনি পিছন থেকে এসে আমার হাত থেকে রিমোট টেনে নিয়ে টিভিটা অফ করে দিলেন।
আমি অবাক হয়ে ওনার দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালাম আর ভ্রুকুচকে ফেললাম।
উনি রাগমিশ্রিত চোখে তাকিয়ে বললেন, “এসব দেখে বেড়াও তুমি? মানা করেছি না!”
“বাহ! এসব মুভি আপনি দেখতে পারেন আর আমি দেখলে সমস্যা?” বলেই মুখ ভেংচি দিলাম আমি।
উনি দাতে দাত চিপে বললেন, “আমি এসব ফালতু মুভি দেখিনা।”
আমি সরু চোখে তাকিয়ে বললাম, “তাহলে জানলেন কিভাবে এই মুভিতে ওসব অসভ্যতা আছে?”
“কিছু জিনিস এমনিই বোঝা যায়। কমন সেন্স লাগে।” উনি বললেন।
“হুহ! আমাকে গাধা পেয়েছেন? আমি বুঝিনা মনে করেন?” মুখ ভেংচি দিয়ে বললাম আমি।
“না, তুমি এখন আর গাধা নেই। এখন ত তুমি দিন দিন গাধা থেকে গরু হচ্ছ।” গম্ভীর চোখে তাকিয়ে বলল শাওন।
“কি? আর আপনি ত গরিলা থেকে শিম্পাঞ্জি হচ্ছেন।” মুখ ফুলিয়ে বললাম আমি।
“Shut up.” বলল শাওন।
আমি মুখ ভেংচি দিয়ে সামনের দিকে মুখ ঘুরিয়ে বুকের কাছে দুই হাত গুজে নিলাম।
উনি চলে যেতে গিয়ে থেমে দাড়ালেন।
“Wait a minute!” অবাক হয়ে বলল শাওন।
আমি প্রশ্ন সূচক চোখে শাওনের দিকে ঘুরে তাকালাম।
উনি ভ্রুকুচকে তাকিয়ে আমার সামনে এসে দাড়ালেন।
এখন আবার কি হলো! আমি না বুঝে তাকিয়ে রইলাম।
“তুমি কিভাবে জানলা এই মুভিতে অসভ্যতা আছে?” শাওন বলল।
আমি হকচকিয়ে গেলাম আর একটা ঢোক গিললাম।
এখন কি হবে আমার!
উনি আমার দিকে ঝুকে আমার দুই পাশে দুই হাত রেখে গম্ভীর চোখে আমার দিকে তাকালেন।
আমি এদিক ওদিক তাকাতে তাকাতে বললাম,”আ.. আপনিই ত বললেন কিছু জিনিস দেখা লাগে না এমনিই বুঝা যায়। ক…কমন সেন্স।”
“Stop lying.” রেগে বলল শাওন।
আমি একটু হাসার চেষ্টা করে বললাম, “স..সত্যি বলছি আমি।”
“কবে দেখছ?” শাওন জিজ্ঞেস করল।
উফ এত সমস্যা কি দেখলে! তাও ত পুরোটা দেখিও নি। জঘন্য।
“কি চুপ করে আছ কেন? কবে দেখেছ?” রেগে বলল শাওন।
“হ্যা দেখেছি। ত কি হয়েছে দেখলে! মহাভারত অশুদ্ধ হয়েছে!” রেগে বললাম আমি।
“হোয়াট?” শাওন দাতেদাত চিপে বলল।
“আমি এখন কি বাচ্চা আছি যে দেখলে সমস্যা।” বললাম আমি।
“না মানে না। কেনো দেখেছ?” শাওন রেগে আমার আরো কাছে চলে এলো।
আমি চোখ বড়সড় করে নিজের মুখ পিছিয়ে নিয়ে বললাম,”এ..এত রেগে যাচ্ছেন কেনো?”
“ভাল মুভি দেখো সেটাতে সমস্যা নেই। কিন্তু এসব দেখলে আমার চেয়ে খারাপ কেউ হবে না। তাই যেটা বললাম সেটা যেন মাথায় থাকে।” গম্ভীর গলায় বলল শাওন।
আমি চোখ পিটপিট করে তাকালাম।
উনি একটা বিরক্তির নিঃশ্বাস ফেলে আমার কাছ থেকে সরে চলে যেতে লাগল।
আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম। উনি কি মুভির হিরোর জন্য জেলাস!
মানে আমি ওই হিরোকে ওভাবে জামাকাপড় ছাড়া দেখেছি এতেই ওনার এত সমস্যা? মানে এত জেলাস!
আমি একটা শয়তানি হাসি দিলাম। কারণ এখন আমার ওনাকে আর একটু জ্বালাতে ইচ্ছে করছে।
আমি জোরে জোরে ওনাকে শুনিয়ে শুনিয়ে বলতে লাগলাম, “ইস, ওই ছেলেটাকে কি হটই না লাগছিল যখন… ওই ছেলেটা নিজের….!”
“Shut up, Mila.” উনি অনেক রেগে গেলেন।
আসলে রেগে না, অনেক বেশিই জেলাস হয়ে গেলেন।
আমার অনেক মজা লাগছে।
আমি সোফা থেকে উঠে ওনাকে পাশ কাটিয়ে যেতে যেতে বললাম, “আমি ত সব দেখেছি।”
“চুপ করতে বলেছি তোমাকে।” শাওন রেগে বলল।
আমি নিজের হাসি আটকে ওনার দিকে ঘুরে তাকিয়ে বললাম, “আমি ত ছবিও রেখে দিয়েছি নিজের কাছে।”
শাওন রেগে আমার হাত থেকে ফোনটা নিতে এগিয়ে আসতেই আমি হাতটা পিছনে নিয়ে বললাম, “ফোনের ছবি ত ডিলিট করে দিবেন, কিন্তু আমি যে সব দেখে ফেলেছি তা কিভাবে ডিলিট করবেন!” মুচকি হেসে বললাম আমি।
উনি হুট করে আমাকে কোলে তুলে নিলেন।
আমি চমকে গেলাম,”ক..কি করছেন?”
“50 shades of Blue মুভি করব আজ আমি তোমার সাথে।” রাগী চোখে তাকিয়ে বলল শাওন।
আমি হকচকিয়ে গেলাম। Blue আবার কোনটা! ভাল মুভি ত মনে হয় না!
আমি শাওনের ঘাড়ে ধাক্কা দিয়ে বললাম,”এ..একদম না, কি সব বলছেন আপনি! এ…এমন কিছু করবেন না।”
“তুমি দেখতে পারলে আমি করতে পারব না কেনো!” শাওন বলল।
“আ…আপনি নাকি ওসব মুভি দেখেন নি!” হা হয়ে বললাম আমি।
“দেখিনি। কিন্তু তোমার ত খুব শখ অন্য ছেলেকে ওভাবে দেখার! তোমাকে শিক্ষা ত দেওয়া উচিত।” শাওন গম্ভীর চোখে তাকিয়ে বলল।
“নামান আমাকে।” চোখ বড়সড় করে বললাম আমি।
“মানা করেছিলাম না আমি! তখন ত শোনোনি।” বললেন উনি।
“আ…আমি আর জীবনেও দেখব না। সত্যি বিশ্বাস করুন।” ঢোক গিলে বললাম আমি।
“It’s too late Mila.” উনি দুষ্টু হাসি দিয়ে বললেন।
আমি বুঝলাম যে উনি এখন আমাকে ছাড়বেন না।
আমি ভুলেই গিয়েছিলাম যে উনি মোটেও সুবিধার না। আজ ব্লু, গ্রিন, রেড সবই হবে মনে হচ্ছে!
এই ভরদুপুরে! ছি! আমার ওনাকে জ্বালানোই উচিত হয়নি। নিজের দোষে নিজেই ফেসে গেলাম।

(চলবে….)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here