#তুমি_আমার_ভালোবাসা
#পর্ব_১৪
#লেখিকা_Munni_Akter_Priya
.
.
প্রিয়ার কথা শুনে ফাহাদ হো হো করে হেসে দিলো। প্রিয়ার কথাটা রিপিট করে বললো,
“ইশ! আমি বিয়েই করবো না।”
প্রিয়া রাগি রাগি গলায় বললো,
“এতে হাসির কি হলো?”
“কিছু হয়নি?”
“না।”
“হবে কি করে আমি তো কিছু করিইনি।”
“নির্লজ্জ একটা।”
“ইশ! বুকের বাঁ পাশে লাগলো।”
“বুকে না লেগে গলায় লাগলে খুশি হতাম।”
“গলায় তো তুমি ঝুলেই আছো।”
“কিহ্?”
“এত্ত জোড়ে কেউ কিহ বলে? আমি তো ভয় পেয়ে গেছি।”
“আমি মোটেও এত জোরে বলিনি।”
“আমি কি মিথ্যে বলছি?”
“আপনি তো মিথ্যুকই।”
ওদের ঝগরা দেখে পৃথা ফ্লোরেই বসে পড়লো গালে হাত দিয়ে। প্রিয়া পৃথাকে টানতে টানতে বললো,
“আরে কি করছিস তুই? উঠ উঠ তাড়াতাড়ি।”
“না, তোরা ঝগরা কর। আমি বসে বসে দেখি। বিয়ে করা লাগবেনা আমার।”
পৃথার কথায় প্রিয়া একটু লজ্জা পেলো।
খুব ধুমধাম ভাবেই পৃথার বিয়ে হয়ে যায়। যাওয়ার আগে পৃথা প্রিয়াকে একা রুমে নিয়ে যায়। দুজনের চোখেই পানি টলমল করছে। পৃথা প্রিয়ার দুই গালে হাত রেখে মুখটা উঁচু করে বললো,
“একদম কাঁদবিনা। তুই কাঁদলে আমার কষ্ট হয় জানিস না?”
প্রিয়া কাঁদতে কাঁদতেই বললো,
“তুই কেন এসেছিলি আমার লাইফে বলতো? আর এলিই যখন তখন এভাবে ছেড়ে যাচ্ছিস কেন?”
“তোর লাইফে না এলে কি এমন মিষ্টি মেয়েটাকে পেলাম? তুই অনেক লক্ষী একটা মেয়ে। তুই অনেক অনেক বেশিই সুখি হবি। আর আমি কি সারাজীবনের জন্য চলে যাচ্ছি নাকি? আমি আকাশকে পরে বোঝাবো যাতে জবটা করতে দেয়।”
প্রিয়ার চোখেমুখে খুশি চিকচিক করছে।
“সত্যিই বলবি?”
“তিন সত্যি।”
প্রিয়া পৃথাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।
“শোন প্রিয়ু, তোকে কিছু কথা বলার জন্য এখানে নিয়ে এসেছি।”
“বল।”
“দেখ কোনো রকম রিয়াক্ট করবিনা কথাটা শুনে বলে দিলাম। যদি আমায় বকিস আমি কিন্তু কষ্ট পাবো।”
প্রিয়া হেসে বললো,
“বল। কিচ্ছু বলবো না।”
“ফাহাদ স্যার তোকে সত্যিই অনেক ভালোবাসে রে। তুই হয়তো কখনো চাসইনি তার ভালোবাসাটা উপলব্ধি করতে। কিন্তু আমি দেখেছি এবং সেটা খুব কাছ থেকেই। প্রচন্ড রকম ভালোবাসে তোকে মানুষটা। শুধু একটাবার তার ভালোবাসাটা উপলব্ধি করার চেষ্টা করিস, দেখবি এতটুকুও মিথ্যা নেই সেখানে।”
প্রিয়া কিছু বলার আগেই পৃথার কাজিনরা দৌঁড়ে রুমে ঢুকে বলে,
“তুই এখানে। আর সবাই তোকে খুঁজছে। চল চল।”
এক প্রকার জোর করেই টেনে নিয়ে যায় পৃথাকে। পৃথার বিদায়ের পর থেকে অনেক বেশি ভেঙ্গে পড়ে প্রিয়া। যে কেউ দেখলে ভাববে নিজের বোনের বিয়ে হচ্ছে হয়তো। প্রিয়ার অন্যান্য মেয়ে কলিগরা এগিয়ে আসলে ফাহাদ হাতের ইশারায় বারণ করে। প্রিয়া চুপচাপ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কাঁদছে। ফাহাদ কাছে গিয়ে বললো,
“এভাবে কেঁদো না প্লিজ। এখনই যদি সব চোখের পানি ফেলে দাও তাহলে আমাদের বিয়ের সময় কাঁদবে কি করে?”
প্রিয়া কিছু বললো না। শুধু হাউমাউ করে কাঁদছে। ফাহাদও আর কিছু না বলে প্রিয়াকে নিয়ে গাড়িতে উঠলো। আলতো করে প্রিয়ার মাথাটা ফাহাদের বুকে রাখলো।
.
.
পরেরদিন থেকে প্রিয়া যথারীতি অফিসে যাওয়া শুরু করে। আবারও আগের মত চুপচাপ হয়ে যায়। ফাহাদ কতকিছুই বলে তবুও প্রিয়া চুপ করে থাকে। তাই ফাহাদ ভাবলো প্রিয়াকে নিয়ে একটু বের হওয়া উচিত। কিন্তু প্রিয়াকে কি করে বলবে এটা? ফাহাদ ভাবতে লাগলো কিভাবে বলবে আর কি বলে রাজি করাবে। ভাবতে ভাবতেই ফাহাদ আইডিয়া পেয়ে গেলো। তিনদিন পরই ফাহাদের জন্মদিন। যা করার এই জন্মদিনকে ইস্যু করেই করতে হবে। ফাহাদ তখন থেকেই দিন গুণতে লাগলো। কবে আসবে সেইদিন। দেখতে দেখতে আকাঙ্ক্ষিত সেই দিনটা এসেও পরে। জন্মদিনের একদিন আগে প্রিয়াকে জানানো হয় আগামীকাল অফিস বন্ধ থাকবে। তাই প্রিয়াও আর আসেনি। ঐদিকে অফিসের সবাইকেই জন্মদিনের আগের দিন জানিয়ে দেওয়া হয় গতকাল অফিসে ফাহাদের জন্মদিন পালন করা হবে। ফাহাদের পিএ তোয়া আর অফিসের জুনিয়র এক বসকে দিয়ে ফাহাদের বার্থডের আয়োজন করা হয়। সবাই ফাহাদের জন্য ঐদিন গিফ্ট নিয়ে আসে,শুধু প্রিয়া বাদে। কারণ প্রিয়া তো জানতোই না যে ফাহাদের জন্মদিন। যখন সবাই ফাহাদকে গিফ্ট দিচ্ছিলো তখন প্রিয়া ভীষণ লজ্জার মুখে পড়ে যায়। কেক কাটার পর প্রিয়াকে নিজের রুমে নিয়ে যায় ফাহাদ।
“আমার গিফ্ট কোথায়?”
প্রিয়া কি বলবে বুঝতে পারছেনা। মুখটা কাচুমুচু করে বললো,
“আমি তো জানতাম না স্যার। আচ্ছা আমি কাল গিফ্ট দিয়ে দিবো।”
“জন্মদিন আজ আর গিফ্ট দিবে কাল?”
“তাছাড়া তো আর উপায় নেই।”
“আচ্ছা আমার গিফ্ট যদি আমি নিজেই চেয়ে নিই?”
“কি গিফ্ট চান?”
“আমি চাই আজকের দিনটা তুমি আমায় দাও।”
“বুঝলাম না।”
“না বুঝার কি আছে? তুমি আর আমি মিলে ঘুরবো, খাবো, ছবি তুলবো।”
“আমি পারবোনা।”
“কেন নয়?”
“আমার ইচ্ছে তাই।”
ফাহাদ জানে প্রিয়া খুবই ঘাড়ত্যারা। একবার যখন না বলেছে তখন হ্যাঁ বলানো অনেক কঠিন কাজ। তাই অন্য টোপ দিলো। বললো,
“ওকে ফাইন। আমি ভেবেছিলাম আজকের দিনটা আমায় দিলে আমি আর কখনোই তোমাকে বিরক্ত করতাম না।”
প্রিয়া কিছুক্ষণ চুপ করে বললো,
“সত্যি তো?”
“হুম।”
“পরে আবার অস্বীকার করলে চলবে না কিন্তু।”
ফাহাদ হাসলো। মনে মনে বললো,
“স্যরি প্রিয়া তোমায় মিথ্যা বলার জন্য। একটা মিথ্যা যদি একদিনের জন্য হলেও তোমায় খুশি রাখতে পারে তবে আমি সেই মিথ্যা বলে মিথ্যুক হতেও রাজি আছি। আমি কখনোই তোমাকে ছাড়তে পারবো না। কখনো না।”
প্রিয়া ফাহাদের চোখের সামনে হাত ঝাঁকিয়ে বললো,
“কই চলেন?”
“হুম চলো।”
অফিস থেকে বেড়িয়ে ফাহাদ একটা রিক্সা নিলো। প্রিয়া অবাক হলো কিন্তু কিছু বললো না। ফাহাদ সেটা বুঝতে পেরে হাসলো। ফাহাদ প্রিয়ার ছোট খালাতো বোনের কাছে শুনেছে প্রিয়া বাইকে চড়তে আর রিক্সায় চড়তে খুব পছন্দ করে। ফাহাদ তো বাইক চালায় না তাই এখন রিক্সাই নিতে হলো। তবে খুব তাড়াতাড়িই ফাহাদ একটা বাইক কিনে নিবে।
রিক্সা আপনগতিতে চলছে। দুজনই চুপচাপ বসে আছে। মাঝখানে যথেষ্ট স্পেস আছে। নিরবতা কাঁটিয়ে ফাহাদ বললো,
“কোথায় যাবে?”
“যেদিকে ইচ্ছে।”
“আচ্ছা তোমার রিক্সায় চড়তে কেমন লাগে?”
“একদম ভালো লাগে না।”
“সত্যি বলছো?”
“মিথ্যা কেন বলবো?”
“উত্তর না দিয়ে পাল্টা প্রশ্ন করেছো তার মানে এটা মিথ্যা কথা।”
“অনেক বেশি বুঝেন আপনি।”
“তুমিই তো বোঝাও।”
আবারও নিরবতা। রিক্সা থামে একটা ফুচকার দোকানের সামনে। দোকানটা ফুটপাতে। এসব খাবার একদম খায় না ফাহাদ। কিন্তু প্রিয়ার এসব পছন্দ। তাই ফাহাদ প্রিয়ার পছন্দকেই গুরুত্ব দিচ্ছে। ভাড়া মিটিয়ে ওরা দোকানে এগিয়ে গেলো।ফাহাদকে দেখে বারবার অবাক হচ্ছে প্রিয়া। এই মানুষটা হঠাৎ করে এমন হয়ে গেলো? নিজের ভেতর অজস্র কৌতুহল ছোটাছুটি করছে। নিজের সাথে আর না পেরে প্রিয়া জিজ্ঞেস করে ফেললো,
“আপনি তো কখনো রিক্সায় চড়তেন না।বাইরের এসব খাবারও খান না। তাহলে হঠাৎ চেঞ্জ কেন? আমাকে ইম্প্রেস করার জন্য?”
“তোমার এই কেনোর উত্তর একটাই। আর সেটা হলে তুমি। তখন তুমি আমার জীবনে ছিলে না তাই এসবের প্রতি কখনোই কোনো আগ্রহ জন্ম নেয়নি। আর তুমি এমন একটা মেয়ে যাকে সহজে ইম্প্রেস করা খুব কঠিন। এত টাকা-পয়সা দেখে যেই মেয়ে ইম্প্রেস হয়না সেই মেয়ে এই সামান্য কিছুতে ইম্প্রেস হবে সেটা আমি ভাবতেও পারিনা। তাছাড়া আমি চাইও না যে তুমি আমার উপর ইম্প্রেস হও। আমি চাই তুমি আমায় ভালোবাসো।”
“আপনি কিন্তু আপনার কমিটমেন্টের কথা ভুলে যাচ্ছেন।”
“কিসের কমিটমেন্ট?”
“কিসের কমিটমেন্ট মানে? আজকের পর আপনি আর কখনো আমায় জ্বালাবেন না বলেছিলেন।”
ফাহাদ প্রিয়ার কথার উত্তর দিলো না। ফুচকাওয়ালাকে বললো,
“মামা বানানো হয়েছে?”
“হ, মামা।”
ফুচকাওয়ালা দুই প্লেট ফুচকা এগিয়ে দিলো ওদের দিকে। প্রিয়া ফুচকা খাওয়া শুরু করলো এবং সেটা অনেকদিন পর। অনেকগুলো সময় পাড় হয়ে গিয়েছে প্রিয়া ফুচকা খায়না। প্রিয়া বেশ মজা করেই খাচ্ছে। হঠাৎ করে ফাহাদের দিকে তাকাতেই দেখলো, ফাহাদ মাত্র দুইটা ফুচকা খেয়েছে। তাতেই ফাহাদের অবস্থা কাহিল। চোখ দুইটা লাল টকটকে হয়ে গেছে। ঠোঁটদুইটারও একই অবস্থা। চোখের পানি টলমল করছে। প্রিয়া বুঝতে পারলো ফাহাদ ঝাল খেতে পারেনা। ফাহাদের প্লেটের ফুচকাগুলো নিজের প্লেটে নিতে নিতে বললো,
“চাইলেই সব অর্জন করা যায়। অযথাই আমার জন্য কষ্ট করার দরকার নেই। এইসব আপনার কাম্য নয়।”
“না, আমি পারবো। আমাকে দাও। তুমি ঝাল খেতে পারলে আমি পারবো না কেন?”
প্রিয়া কোনো উত্তর দিলো না। ফাহাদ আবার বললো,
“দিবে না তুমি? ঠিক আছে দিয়ো না। মামা আমাকে আরেক প্লেট ঝাল দিয়ে ফুচকা দিন তো।”
প্রিয়া এবার ধমক দিয়ে বললো,
“একদম না। মামা আপনি বরং কয়েকটা শুকনা ফুচকা দিন।”
ফুচকাওয়ালা প্লেটে করে শুকনা ফুচকা দিয়ে গেলো। ফাহাদ জেদ ধরে বললো,
“আমি এসব খাবো না।”
প্রিয়া দাঁত কটমট করে বললো,
“এরকম টিনেজারদের মত করার মানে কি?”
“জানিনা। আমি খাবোনা এগুলা।”
প্রিয়ার খুব রাগ হলো। নিজের ফুচকার প্লেটটা রেখে শুকনা ফুচকাগুলো হাতে নিয়ে গুঁড়ো করলো। এক হাত দিয়ে ফাহাদের গাল চেপে ধরে মুখে গুঁজে দিলো। ফাহাদ ফেলে দিতে চাচ্ছিলো। প্রিয়া হাত দিয়ে ফাহাদের মুখ আটকে ধরে।
“একদম ফেললে খবর আছে বলে দিলাম। কষ্ট করে খেয়ে পানি খান। ঝাল কমে যাবে।”
ফাহাদের চোখমুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছিলো অনেক কষ্টে খেয়েছে। পানি পান করেই বললো,
“ইশ! শুকনা ফুচকা খেতে কি বিশ্রি টেষ্ট। একটুও লবণ নেই।”
“ঝাল কমেছে?”
“হুম অনেকএএএএকককটা।”
“চলুন এবার উঠি।”
ফুচকার বিল দিয়ে ফাহাদ আর প্রিয়া হাঁটা শুরু করলো। ফুটপাতেই হরেক রকমের কাঁচের চুড়ি, রেশমি চুড়ি বিক্রি করছে। প্রিয়াকে নিয়ে ফাহাদ সেখানে গেলো।
“দেখো তো কোন চুড়িগুলো ভালোলাগে।”
“চুড়ি দিয়ে কি করবেন?”
“চুড়ি দিয়ে মানুষ কি করে?”
প্রিয়া চুপ করে রইলো। ফাহাদই চুড়ি দেখতে লাগলো। অনেক বেছে বেছে একমোট চুড়ি ফাহাদের দৃষ্টি কাড়লো যেমনটা প্রিয়া কেঁড়েছিল। খাঁজকাটা সাদা কালার চুড়ি। চুড়িগুলো নিয়েই প্রিয়ার হাতে পড়িয়ে দেওয়া শুরু করলো।
“আরে আরে কি করছেন এগুলা? আমি চুড়ি পড়িনা।”
“আজ থেকে পড়বে।”
চুড়ি পড়ানো শেষে প্রিয়ার হাতটা ধরে বললো,
“ইশ! কি সুন্দর লাগছে দেখতে। মনে হচ্ছে চুড়িগুলো তৈরি করাই হয়েছে তোমার হাতের জন্য। আমি শিওর এই চুড়িগুলো অন্য কারো হাতে একদম পূর্ণতা পেতো না।”
“আপনার মত পাগল আমি খুব কমই দেখেছি।”
“আমার গুড লাক।”
প্রিয়া মুখে বিরক্তির ছাপ ফুঁটিয়ে বললো,
“আমি পানি খাবো।”
“পানি খাবে? আচ্ছা তুমি এখানেই দাঁড়াও। আমি রাস্তার ঐপাশ থেকে নিয়ে আসছি। এপাশে কোনো পানির দোকান নেই।”
“আচ্ছা।”
ফাহাদ যাওয়ার পরই প্রিয়া একটু ঘুরেঘুরে দোকানগুলো দেখছিলো। আশেপাশে অনেক লোকজনই আছে। এর মধ্যে কয়েকটা ছেলে প্রিয়ার সামনে আসে। ওদের মধ্যে একজন বলে,
“এক্সকিউজ মি ম্যাম?”
প্রিয়া পিছনে ঘুরে দাঁড়ায়।
“আমাকে বলছেন?”
“হ্যাঁ। কিছু মনে না করলে কয়টা কথা বলতাম।”
“বলুন?”
“আপনার নাম কি?”
“একজন অপরিচিত লোককে আমি আমার নাম কেন বলবো?”
“নাম বলতে সমস্যা হলে নাম্বারটা যদি একটু দিতেন প্লিজ প্লিজ।”
“দেখি সরেন, আমাকে যেতে দিন।”
প্রিয়া চলে যাওয়া ধরলে ছেলেটাও পিছু পিছু আসে আর রিকোয়েস্ট করে নাম্বার দেওয়ার জন্য। এমন করতে করতে অনেকটা রাস্তার মাঝখানে চলে যায় ওরা। পেছন থেকে ফাহাদ পানির বোতল এনে ছেলেটার কাঁধে হাত রেখে বলে,
“কি সমস্যা ভাই? বিরক্ত করছেন কেন?”
“আমি উনাকে বিরক্ত করছিনা।”
ছেলেটা খুব ঠান্ডাভাবেই কথা বলছিল। কিন্তু ফাহাদ ভীষণ রেগে যায়। ঠাটিয়ে একটা থাপ্পড় লাগিয়ে দেয় ছেলেটার গালে। ছেলেটা শান্তভাবেই বলছে,
“আরে ভাই মারছেন কেন? আর আপনিই বা কে? হুটহাট করে গায়ে হাত তু্লতেছেন।”
“রাস্তায় মেয়েদের বিরক্ত করার আগে মারের কথা ভাবা উচিত।”
প্রিয়া বারবার ছাড়তে বলছে কিন্তু ফাহাদ ওর কথা কানেই নিচ্ছেনা। ধস্তাধস্তি করার এক পর্যায়ে ফাহাদ একদমই মাঝরাস্তায় চলে যায়। আর ওর পাশ থেকেই দ্রুতবেগ একটা ট্রাক ফাহাদের কাছে এসে পড়ে। প্রিয়া জোরে চেঁচিয়ে বলো,
“ফাহাদ!!!!!!!!”
ফাহাদ পিছনে তাকিয়ে দেখে প্রিয়ার একদম কাছে একটা বাস এসে পড়েছে। রাস্তাটা বাঁকানো টাইপের হওয়ায় ড্রাইভার বুঝতে পারেনি। ফাহাদও চেঁচিয়ে বললো,
“প্রিয়া!!! সরোওও ওখান থেকে।”
প্রিয়া পেছন ঘুরে তাকাতে তাকাতেই প্রিয়ার খুব কাছ ঘেঁষে বাতাস বয়ে গেলো। ওখান থেকে সরার শক্তি পাচ্ছিলো না। মনে হচ্ছিলো মৃত্যু খুব সন্নিকটে। প্রিয়া চোখ বন্ধ করে কানে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো। জীবনটা বুঝি চলেই গেলো। আসলে কি হয়েছে বুঝতে প্রিয়ার কয়েক সেকেন্ড সময় লাগলো। খুব ভয় পেয়ে গেছে। ভয়ে প্রিয়ার শরীর কাঁপছে।ফাহাদ প্রিয়ার গালে হাত দিয়ে বললো,
“কিচ্ছু হয়নি তোমার। তাকাও আমার দিকে।”
প্রিয়া চোখ খুলে দেখলো ফাহাদের বাহুডোরে আবদ্ধ। ফাহাদের চোখের দিকে তাকিয়ে আছে।
“আর ইউ ওকে?”
প্রিয়া মাথা নাড়ালো। প্রিয়ার হাত ধরে ঐ ছেলেটির সামনে গিয়ে বললো,
“তখন বলেছিলে না আমি ওর কে হই? হাত ধরার অধিকার দেখে বুঝতে পারছো? ও আমার ভালোবাসা।”
প্রিয়ার হাত ধরেই উল্টো পথে হাঁটা শুরু করলো। প্রিয়া অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ফাহাদের দিকে। আজ পৃথার কথাগুলো কানে বাজছে প্রিয়ার। তবে কি প্রিয়া সত্যিই উপলব্ধি করতে পারছে ফাহাদের ভালোবাসা?
এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে ফাহাদ ভ্রু কুঁচকে বললো,
“কি?”
প্রিয়া চোখের ইশারায় বললো,
“কিছুনা।”
ফাহাদ একটা রিক্সা থামালো। রিক্সায় উঠে প্রিয়ার হাত ছেড়ে দিলো। প্রিয়ার খুব রাগ হলো। কি দরকার ছিল রিক্সাটা নেওয়ার? হাত ধরে হাঁটাটাই তো ভালো লাগছিল। পরক্ষণেই প্রিয়ার মনে হলো,
“এসব কেন ভাবছি আমি? এর আগেও তো ফাহাদ আমার হাত ধরেছিলো। কই তখন তো এমন কিছু ফিল করিনি আমি। তবে কি আমি ভুল করলাম আজকের দিনে তার সাথে বেড়িয়ে? নাকি ভালোবেসে ফেললাম?”
প্রিয়ার কথায় ছেদ ফেললো ফাহাদ। আকাশের দিকে একটা আঙ্গুল তুলে বললো,
“দেখো চাঁদটা সুন্দর না?”
প্রিয়া আকাশের দিকে তাকালো। আসলেই আজকের চাঁদটা অপরূপ সুন্দর। হঠাৎ করে হুট খোলা রিক্সায় ঠান্ডা শীতল হাওয়া বয়ে গেলে প্রিয়ার চোখমুখ স্পর্শ করে। সব জড়তা দূরে সরিয়ে দিয়ে প্রিয়া ফাহাঁদের এক হাতের মুঠোয় নিজের হাত মুঠোবন্দি করে নিলো। ঘটনার আকস্মিকতায় চমকে যায় ফাহাদ। এটা কি সত্যিই প্রিয়া? কিন্তু সেটা বুঝতে দেয়না প্রিয়াকে। প্রিয়ার দিকে তাকাতেই প্রিয়া ফাহাদের চোখের দিকে তাকিয়ে বললো,
“ভয় করছে!”
ফাহাদ কিছু বললো না। মুচকি হেসে প্রিয়ার হাত আরো শক্ত করে হাতের মুঠোয় জড়িয়ে ধরলো……
চলবে…
#তুমি_আমার_ভালোবাসা
#পর্ব_১৫
#লেখিকা_Munni_Akter_Priya
.
.
অফিসে গেলে এখন আর প্রিয়ার ততটা খারাপ লাগেনা। তার দুইটা কারণও অবশ্য রয়েছে। প্রথমত পৃথা আগামী মাস থেকেই অফিসে জয়েন করবে আর দ্বিতীয়ত আজকাল প্রিয়াও চুপিচাপি ফাহাদকে দেখে। কেন দেখে তা জানেনা প্রিয়া। প্রিয়া নিজেই নিজেকে বারবার সংযত করার চেষ্টা করে কিন্তু বেহায়া মন সেটাতে পাত্তা দেয়না।
মাত্রই গোসল সেরে ছাদে জামা-কাপড় রোদে দিতে যায় প্রিয়া। মৃদু মৃদু রোদ ভালোই লাগছিল। তাই নিচে না গিয়ে ছাদেই দাঁড়ায়। একা একা থাকলে মনটা খারাপ হয়ে যায়। এজন্য প্রিয়া সবসময়ই নিজেকে ব্যস্ত রাখতে চায়। আজ ইচ্ছে হলো কিছু সময় একলা থাকা দরকার।একটাবার হয়তো অতীত থেকে ঘুরে আসা দরকার। তাহলেই হয়তো এই বেহায়া মন ফাহাদের দিক থেকে ঘুরে আসবে। চোখজোড়া বন্ধ করতেই পেছন থেকে প্রিয়ার খালাতো বোন আপু আপু বলে দৌঁড়ে কাছে আসে। প্রিয়ার আর অতীতের দরজায় কড়া নাড়া হলো না। হয়তো প্রকৃতি চাচ্ছেনা স্বল্প কষ্টও প্রিয়ার মনে দাগ কাটুক!
“কি হয়েছে?”
“আপু ঐ ভাইয়াটা এসেছে।”
“কোন ভাইয়া?”
“ঐযে ঐদিন এসেছিল। কি যেন নাম? ফ..ফা..”
“ফ ফা না ফাহাদ।”
“হ্যাঁ হ্যাঁ। ঐ ভাইয়াটা এসেছে।”
“তো কি হয়েছে?”
“নানু তোমায় ডাকছে।”
“তোর নানুকে গিয়ে বল তার আদরের ফাহাদকে কোলে নিয়ে বসে থাকতে।”
“অত বড় ছেলেকে নানু কোলে নিবে কিভাবে?”
“এটা নিয়ে তোর এত মাথাব্যথা কেনো রে?”
“আমার তো মাথাব্যথা করছেনা আপু।”
“ঐ তুই যা তো।”
“আমি তোমাকে নিয়েই যাবো।”
“আমার সাথে তো তুই কখনো জেদ ধরিস না। এই সত্যি করে বলতো কি ঘুষ খেয়েছিস?”
“ঘুষ খাবো কেন? যারা ঘুষ খায় ওদের পেট তো অনেক বড় দেখেছি। আমার পেট কি বড়? দেখো আমার পেট কি স্লিম! একদম দীপিকার মত।”
“যা ভাগ! আসছে আমার দীপিকা।”
“ও আপু চলো না প্লিজ।”
“ঠিক আছে চল।”
নিচে নেমে প্রিয়া সোজা নিজের রুমে গেলো। ফাহাদ আর নানুর আড্ডাখানা এখন প্রিয়ার রুমটাকেই ঘিরে। পিচ্চিটা প্রিয়ার টেবিলের ওপর থেকে পাঁচ বক্স চকোলেট পেটের ওপর রেখে নিয়ে যাচ্ছে। প্রিয়া জিজ্ঞেস করলো,
“এত চকোলেট তুই কোথায় পেলি? আর আমার রুমে কেন?”
“তোমায় বলবো কেন?”
“কত্ত বড় সাহস! বেয়াদব।”
ফাহাদ হেসে বললো,
“শালিক পাখি চকোলেট কি আরো লাগবে?”
“নেক্সট টাইম দুই বক্স বাড়িয়ে দিলেই হবে।”
বলেই চকোলেটগুলো নিয়ে চলে গেলো। প্রিয়া আগামাথা কিছুই বুঝলো না। নানু বললো,
“এত পাখি থাকতে তুমি আমার নাতনীরে শালিক পাখি ডাকলা?”
“ওহ নানু! এজন্যই তো বলি তুমি বুড়ি হয়েছো বাতাসে। তোমার মনের বয়স তো এখনো ১২ বছরের বাচ্চার মত। কিচ্ছু বুঝোনা। শালিক পাখি বলেছি আদর করে। শালিকা থেকে শালিক পাখি বুঝছো?”
প্রিয়া দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
“এসব আদিক্ষেতা বন্ধ করেন তো।”
“তোমার হিংসে হচ্ছে?”
“আমার হিংসে হবে কেন?”
“এইযে তোমার বোনকে আদর করে শালিক পাখি ডাকলাম বলে। আচ্ছা আজ থেকে তোমাকে আমি কৈতরী বলে ডাকবো কেমন?”
“এই এই একদম আজেবাজে নামে ডাকবেন না বলে দিলাম।”
“রাগ করেনা আমার কৈতরী।”
“ধ্যাত!”
“এত রাগ করো কেন? রাগ করলে তোমায় দারুণ লাগে জানো?”
“জানি।”
“কে বলেছে? আমি ছাড়া আর কার সাথে তুমি রাগ করো?”
“আপনাকে কেন বলবো?”
“আচ্ছা বলতে হবেনা। এখন রেডি হও।”
“কেন?”
“আমার মায়ের সাথে দেখা করতে নিয়ে যাবো তোমায়।”
“আপনার মায়ের সাথে আমি কেন দেখা করবো?”
“মাকে তোমার কথা বলেছি। মা তখনই তোমায় দেখতে চেয়েছিল।”
“তখন আর এখন কি? তখনও কোনো সম্পর্ক ছিলোনা আর এখনো নেই।”
“নেই তো কি? হতে কতক্ষণ?”
“হবেনা।”
“বেশ! কিন্তু মায়ের সাথে প্লিজ দেখা করো।”
“আমি পারবো না।”
“কেন?”
“আনইজি লাগে।”
“আমি পাশে থাকলে সবই ইজি লাগবে। তাছাড়া আমার মা এত্ত ভালো মানুষ যে তোমার মনেই হবেনা সে অপরিচিত।”
“না, আমি যাবো না।”
“প্লিজ!”
.
.
ফাহাদের রুমে বসে আছে প্রিয়া। একটা ছেলে মানুষের রুম এতটা সাজানো-গোছানো হতে পারে সেটা ফাহাদের রুম না দেখলে বুঝাই যাবেনা। একদমই ইচ্ছে ছিলনা এই বাসায় আসার। কিন্তু বাড়িতে সবার জোড়াজুড়িতে আসতে বাধ্য হয়েছে। ফাহাদের মা বাসায় নেই। মেয়েকে নিয়ে একটু বাহিরে গিয়েছে। একটু পরই এসে পড়বে। ফাহাদের বাবা অফিসে। প্রিয়া ড্রয়িংরুমেই বসে অপেক্ষা করতে চেয়েছিল কিন্তু ফাহাদ শোনেনি। টেনে নিজের রুমে নিয়ে এসেছে। পুরো বাড়ি ফাঁকা। শুধু দুইজন কাজের লোককে দেখলো কিন্তু তারা নিচে কাজে ব্যস্ত। এক রুমে ফাঁকা বাড়িতে ফাহাদের সাথে প্রিয়া। প্রিয়ার একটুও ভয় করছেনা। কেন জানি প্রিয়ার মন বলে এই ছেলেকে চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করা যায়। সত্যি বলতে মেয়েরা এমনই একজন জীবনসঙ্গী চায় সবসময়। ফাহাদ এতক্ষণ ওয়াশরুমে ছিল। চুলগুলোতে হালকা পানি দিয়েছে। হাত দিয়ে ঠিক করতে করতে ওয়াশরুম থেকে বের হয়। প্রিয়া এক পলক তাকিয়েই অন্যদিকে তাকায়। ফাহাদের প্রিয়ার সামনে এসে একই স্টাইলে হাত দিয়ে চু্ল ঠিক করতে করতে বললো,
“একা একা বসে থাকতে বোরিং লাগছে?”
প্রিয়া কিছু বললো না। ফাহাদের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বললো,
“আমার কথা শুনে নাকি তার বুকের বাম পাশে লাগে। আর এখন তার চুল ঠিক করার এই দৃশ্যটা যে আমার বুকের বাম পাশে লাগছে সেটা কি মিষ্টার আয়মান চৌধুরী ফাহাদ জানে!”
“কি হলো?”
“হাত দিয়ে চুল ঠিক করছেন কেন? বাসায় চিরুনি নেই?”
“আছে। কিন্তু আমার এভাবেই চুল ঠিক করতে ভালো লাগে।”
“একদম বাজে লাগে বিষয়টা।”
“সত্যিই?”
“হু।”
“তোমার কাছে বাজে লাগলে আর করবো না।”
“হু।”
“হু হু করছো কেন? মুখে কি হয়েছে?”
“কিছুনা।”
“আচ্ছা তোমার ভয় লাগছেনা?”
“কেন?”
“এইযে আমার সাথে একা রুমে আছো।”
“এখানে ভয় পাওয়ার কি হলো? আপনি বাঘ নাকি ভাল্লুক?”
“তা নয়। কিন্তু একা ঘরে একটা ছেলে একটা মেয়ের কাছে কিন্তু বাঘ, ভাল্লুকের চেয়েও কম ভয়ংকর নয়।”
“সেটা আপনার মনে হতে পারে। আমার নয়।”
“কেন? যদি কিছু করে ফেলি?”
“বিশ্বাস আছে।”
“কার ওপর?”
“এখানে আপনি ছাড়া আর কেউ আছে নাকি?”
“তার মানে তুমি আমায় বিশ্বাস করতে শুরু করেছো?”
“জানিনা।”
ফাহাদ আর কিছু বললো না। মিটমিট করে হাসছে। প্রিয়া বললো,
“হাসির কিছু হয়েছে?”
“নাহ্ তো।”
“তাহলে হাসছেন কেন?”
“একটা কথা ভেবে।”
“কি কথা?”
“তুমি কি জানো তুমি প্রেমে পড়েছো?”
“নাহ্ জানিনা। কারণ আমি তো প্রেমেই পড়িনি।”
“তুমি প্রেমে পড়েছো এবং সেটা নিজের অজান্তেই।”
“বাজে বকবেন না।”
“একদম সত্যি বলছি।”
“তাই? তা কার প্রেমে পড়লাম শুনি?”
ফাহাদ চোখ টিপ দিয়ে বললো,
“এই আয়মান চৌধুরী ফাহাদের।”
“আপনার বেশি বুঝার স্বভাবটা আর গেলো না।”
ফাহাদ হোহো করে হেসে দিলো। কিছুক্ষণ পরই ফাহাদের বাবা-মা আর বোন আসে। বোনটা টেনে পড়ে। ফাহাদের মা আর বোন তো প্রিয়ার ব্যাপারে সবই জানে। তাই প্রিয়াকে দেখে চিনতে একটুও কষ্ট হয়নি ওদের। ফাহাদের ছোট বোনের নাম ফুল। দেখতেও ফুলের মতই সুন্দর। টেনে পড়ে এবার। ফুল দৌঁড়ে এসে প্রিয়াকে জড়িয়ে ধরে।
“তুমি এসেছো! ভাইয়া তো ঠিকই বলেছে। তুমি একদম সাদা পরী। আর এই সাদা শাড়িটায় তোমায় দারুণ লাগছে।”
প্রিয়ার লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছে করছে। যাদের কখনো দেখেনি, চিনেনা তাদের কাছে এসব প্রসংশা সত্যিই লজ্জাজনক। লজ্জায় লাল হয়ে গিয়েছে প্রিয়া। ফাহাদের মা এগিয়ে এসে প্রিয়ার গালে হাত দিয়ে চুমু খেয়ে বললো,
“মাশআল্লাহ্।”
ফাহাদ চোখের ইশারায় সালাম করতে বললো। প্রিয়ার কি হলো কে জানে! ফাহাদের কথামত পায়ে হাত দিয়ে সালাম করলো। তিনি এবার প্রিয়ার হাত ধরে বললেন,
“আমার ছেলের পছন্দ আছে।”
প্রিয়া কিছু বলতে পারছেনা। শুধু মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। ফাহাদের মা বললো,
“ওকে তো কিছু খেতেও দিসনি তাইনা?”
ফাহাদ মাথা চুলকালো।
“ইয়ে….”
“হয়েছে বুঝছি। ফুল তুই ওকে নিয়ে একটু গল্প কর। আমি খাবারের ব্যবস্থা করছি।”
“ওকে মম।”
ফুল প্রিয়াকে নিয়ে বিছানায় বসতে বসতে বললো,
“আচ্ছা ভাবী তোমার প্রিয় খাবার কি?”
“তুমি আমায় ভাবী ডাকছো কেন?”
“ভাইয়ের বউকে তো ভাবীই ডাকে তুমি জানো না?”
“আমি তো তোমার ভাইয়ের বউ নই।”
“এখন নও কিন্তু হয়ে যাবে।”
ফাহাদ ফুলের কোলে মাথা রেখে বললো,
“তোর ভাবী আমার বউ হতে ভয় পায় বুঝলি?”
“বুঝাবুঝি পরে। আগে তুমি ভাবীর কোলে মাথা রাখো। বউ আছে তাও খালি আমার কোলে মাথা রাখবে।”
“বাবারে! তুই তোর ভাবীকে এখনো চিনিসইনা। আমাকে ধাক্কা দিয়েই ফেলে দিবে।”
দুই-ভাই বোনের কথোপকথন চুপচাপ গিলে যাচ্ছে প্রিয়া। আনইজি লাগছে খুব আবার ভালোও লাগছে ভাই-বোনের খুনসুটি।
পাশের রুমেই ফাহাদের বাবা ফাহাদের মাকে জিজ্ঞেস করলো,
“মেয়েটা কে?”
“তুমি জানোনা?”
“নাহ্ তো।”
“ফাহাদ তোমায় বলেনি?”
“এমন কিছু কি যেটা বলতে হবে আমায়?”
“তার চেয়েও বেশি কিছু।”
“কি সেটা?”
“মেয়েটাকে ফাহাদ অনেক ভালোবাসে।”
“কিহ্?”
“হ্যাঁ।”
“কবে থেকে?”
“এক বছরের কাছাকাছি তো হবেই।”
“মেয়েটাও ভালোবাসে।”
“জানিনা শিওর। তবে ভালো না বেসে আর যাবে কোথায়!”
“নাম কি? কোথায় থাকে, কি করে?”
“নাম প্রিয়া। পড়াশোনা+জব করে।”
“কোথায় জব করে?”
“ফাহাদের অফিসেই।”
এবার ফাহাদের বাবা একটু উত্তেজিত হয়ে বললেন,
“হোয়াট? অফিসের সাধারণ একজন ওয়ার্কারকে ভালোবাসে ফাহাদ? ওর মাথা কি ঠিক আছে?”
“ওয়ার্কার তাতে কি হয়েছে?”
“স্ট্যাটাস বলে একটা কথা আছে সেটা কি ভুলে যাচ্ছো?”
“ভালোবাসার কাছে আবার স্ট্যাটাস কিসের?”
“ছেলের মত তুমিও পাগল হইয়ো না। সময় থাকতে ফাহাদকে বুঝাইয়ো এসব ভালোবাসার ভূত যেন মাথা থেকে নামায় বলে দিলাম। আর যদি ভালোবাসতেই হয় তবে এমন কাউকে ভালোবাসতে বলিয়ো যাতে তাকে বাড়ির বউ করতে গিয়ে আমাদের সোসাইটিতে কোনো কথা শুনতে না হয়।”
ফাহাদ আর ফুল খুনসুটিতে মেতে থাকলেও পাশের রুম থেকে কথাগুলো ভেসে প্রিয়ার কানে ঠিকই আসে। না চাইতেও চোখগুলো ঝাপসা হয়ে আসে…..
চলবে….