পবিত্র সম্পর্ক পর্ব ২১+২২

#পবিত্র_সম্পর্ক
লেখক : রিদন রায়হান
পর্ব : ২১

—” ঘুমাবেন মানে, নামাজ পড়বেন না?”
—” হ্যাঁ। নামাজ তো পড়ব। তুমি পড়বে না?”
—” আপনি গোসল সারতে সারতে আমি নামাজ পড়ে ফেলছি। আপনি নামাজ পড়ে নিন। আমি অপেক্ষা করছি। ”

রায়হান সাদিয়ার হাত থেকে টি-শার্টটি নিয়ে ওয়াশরুম থেকে ওযু করে এসে নামজ পড়ে নিল। মোনাজাতে আল্লাহ তায়ালার কাছে বাবা-মা, সাদিয়া এবং পরিবারের সবার সুস্থতা কামনা করল। নিজের গুনাহখাতা গুলো থেকে মাফ চাইল। জায়নামাজ ভাজ করে টি-টেবিলে রাখা খাবার প্লেটের ঢাকনা উঠিয়ে খাবার দেখে চেঁচাল সে। বলল,
—“আমি এই চিকেন কাড়ি, ফিস ফ্রাই দিয়ে ভাত খাবো না।”

কাপড় ভাজ করা রেখে, রায়হানের সামনে এসে কোমড়ে হাত দিয়ে দাঁড়াল সাদিয়া। শান্ত কন্ঠে বলল,
—“তো কি দিয়ে খাবেন শুনি? এইগুলা ছাড়া আর কিছু রান্না হয়নি আজ।”
—” এমনিতেই এখন খেতে ইচ্ছে করছে না তার উপর এগুলা দিয়ে কোনভাবেই খেতে পারব না। বিরিয়ানি হলে খাওয়া যেত।”

—” আবার বিরিয়ানির?” রেগে তাকালো সাদিয়া। সাদিয়ার রাগান্বিত মুখ দেখে ভদ্র ছেলের মত চুপচাপ হটে খাটে গিয়ে বসল রায়হান। টি-শার্ট খুলে ছুড়ে মারল ওয়ারড্রব এর উপর। কাঁথা নিয়ে বালিশে মুখ গুঁজে শুয়ে পড়ল সে। সাদিয়া বোকা হয়ে গেল। কিছু না বলে গিয়ে শুয়ে পরল? এখন এই রাতে কে বিরিয়ানি রান্না কর বসে আছে?

খাবার ট্রে হাতে নিয়ে খাটের সামনে গেল সাদিয়া। বেড সাইড টেবিলে ট্রে-টা রেখে ডাকল রায়হানকে। বলল,
—“উঠুন। খাবার খেয়ে তারপর ঘুমান বলছি। এই ভোরবেলা আপনার জন্য কে বিরিয়ানির রান্না কর রেখেছে বলুন? যা আছে তাই দিয়ে খেয়ে নিন প্লিজ।”

রায়হানের কোন সাড়াশব্দ না পেয়ে এটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে সাদিয়া বলল,
—“আচ্ছা যাচ্ছি আপনার বিরিয়ানির রান্না করতে।”

সাদিয়া চলে যেতে নিবে তখনি রায়হান ওর হাত টেনে ধরল। বলল,
—“এখন বিরিয়ানি রান্না করতে যেতে হবে না। আমি এগুলো দিয়েই খাবো। তবে একটা শর্তে। রাজি?
—” কি শর্ত?”
রায়হান বাঁকা হাসি দিয়ে বলল,
—” তোমার হতে খায়িয়ে দিলে খেতে পারি।”

সাদিয়া মুখ ফসকে বলে ফেলল,
—” আমিও তো রাতে কিছু খাইনি খিদেও পেয়েছে। এখন আপনাকে খায়িয়ে দিলে আমাকে কে খায়িয়ে দিবে?”
—” তুমি বললে আমি খায়িয়ে দিতে পারি।”
—” তহলে আপনি আপনার হাতেই তো খেতে পারেন।”

রায়হান ভ্রু কুঁচকে তাকালো, সাদিয়া কথা না বাড়িয়ে রায়হানের মুখে খাবার তুলে দিলো। রায়হানও সাদিয়ার মুখে খাবার তুলে দিতে লাগল।

খাবার শেষে রায়হান বেসিং এ হাত ধুতে চলে গেল। সাদিয়া খাবার ট্রে নিয়ে চলে গেল রান্নাঘড়ে। রায়হান হাত ধুয়ে এসে শুয়ে পড়ল বিছানায়। সাদিয়ার রান্নাঘরে সব গুছিয়ে রেখে ঘরে আসল। সাদিয়াকে ঘরে প্রবেশ করতে দেখেই চোখ বন্ধ করল রায়হান। সাদিয়া রায়হানে পাশে এসে শুয়ে পড়ল। ওপাশে ফিরে রায়হানের ঘুমন্ত মুখটা একবার দেখল। কি মায়াভরা সে মুখ, খোঁচা খোঁচা চাপ দড়িগুলো চেহারার সৌন্দর্য যেন বাড়িয়ে দিয়েছে।

সাদিয়া ভালোভাবে তাকিয়ে দেখল রায়হান গভির ঘুমে। ওর লোমশ বুকে মাথা রেখে প্রশান্তির নিশ্বাস ফেলল সাদিয়া। রায়হান এবার চোখ খুলল, মুচকি হেসে দুই বাহুতে বুকের সাথে জরিয়ে ধরল। সাদিয়া জিহ্বায় কামড় দিল, এমন পরিস্থিতিতে কখনো পড়তে হয়নি ওকে। কি লজ্জাজনক একটা ব্যাপার…..
সাদিয়ে রায়হানের বুকের উপর থেকে মাথা সড়াতে চাইল। কিন্তু রায়হান ওকে শক্ত করে চেপে ধরল বুকের সাথে, তলিয়ে গেল ঘুমাতে জগতে। সাদিয়া প্রার্থনা করল, “সারাজীবন যেন আপনার বুকে ঠিক এভাবেই মাথা রেখে ঘুমাতে পারি।”



মিম ঘুম থেকে উঠে হোন্য হয়ে খুঁজেতে লাগল হৃদয়কে। হৃদয়ের ঘরে পৌঁছাতেই মিম দেখল, হৃদয় ঘুমাচ্ছে। হৃদয়ের পাশে গিয়ে বসে হৃদয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগল মিম। হঠাৎ মিমের চোখের পানি গড়িয়ে হৃদয়ের মুখের উপর পরতেই ঘুম ভাঙে হৃদয়ের। ধীরে ধীরে চোখ খুলল হৃদয়, মিমকে দেখা মাত্রই চোখ জোরা ভিজে আসল। চোখের পানি দু’পাশে গড়িয়ে পরতেই তা স্বযত্নে মুছে দিল সাদিয়া। অস্ফুট স্বরে বলল,
—” কেন করেছিলেন এমনটা? জানেন তো আত্মহত্যা পহাপাপ? জানার পরও কেন করেছিলেন এমনটা? জাহান্নাম সম্পর্কে কোন ধারণা আছে আপনার? আমার কথা একবার ভাবলেন না? ”

হৃদয় উঠে বসার চেষ্টা করল কিন্তু ব্যার্থ হলো। মিম ধরে বসাল হৃদয়কে। হৃদয় বলতে আরম্ভ করল,
—” আমি যে অপবাদটা পেয়েছিলাম সেটা আমাকে কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছিল মিম। বিশ্বাস করো আমি আত্মহত্যাকে সত্যিই ভয় পেতাম। এবং এটাও জানতাম, আত্মহত্যা করলে মানুষ এই পৃথিবী থেকেই জাহান্নাম নিয়ে যায়। কিন্তু কি করে আমার এই মস্ত বড় ভুলটা হলো তা জানা নেই আমার। ”
—” সব দোষ আমার। আমার জন্যই তো…”

মিমের কথা কেঁড়ে নিয়ে হৃদয় বলল,
—” না, তোমার কোন দোষ নেই। সব দোষ আমার। আমিই তো ধর্ষিতাদের কত বাজে ভাবতাম। ওদের বিরুদ্ধে কত বাজে চিন্তাভাবনা রাখতাম মনে। কিন্তু তোমার সেইদিনের কথাটায় অনুভব করলাম,
নিজের প্রিয়জনের সাথে যতক্ষণ না ধর্ষণের মত একটা জঘন্য ব্যাপার ঘটে তার আগে সে মানুষটা উপলব্ধি করতে পারে না ধর্ষিতার শরীররিক ও মানসিক অবস্থাটা। উল্টো সে ধর্ষিতা নরীর উপর কত শত অভিযোগ করে বসে। আমাদের সমাজে এমন বহু মানুষ আছে যারা ধর্ষিতাকে নিয়ে কানাঘুষা করে। ধর্ষীতা নারীর পরিবারকে ঠেলে দেয় সমাজের বাইরে। কোন ছেলে এগিয়ে আসে না ধর্ষিতা মেয়েটির হাতটি ধরতে সারাজীবনের জন্য এমনকি সেই নারীর বোনদের পর্যন্ত বিয়ে দিতে পারে না তার মা-বাবা। জীবনটা ধ্বংস হয়ে যায় সেই মেয়েটির। একদিন দেখা যায় সমাজের নিম্ন-মস্তিষ্কের মানুষের কথা শুনতে শুনতে আত্মহত্যা বেছে নেয় সে।
আমি অনুভব করতে পেরেছি মিম। আমার সম্পূর্ণ ধারণা বদলে গেছে মিম। সব সম্ভব হয়েছে তোমার জন্য। শুধু তোমার জন্য।”

মিমের চোখের জ্বল যেন বাঁধ মানছে না। দুই হাতে চোখ মুছে বলল,
—” আলহামদুলিল্লাহ। শুনে খুব খুশি হলাম আল্লাহ আপনার হেদায়েত দান করেছেন। কিন্তু সবকিছু রিয়েলাইজ হওয়ার পরেও কেন এমন একটা কাজ করতে যাচ্ছিলেন বলুন তো? ”

—” সবকিছু যখন রিয়েলাইজ হয়েছিল তখনও তুমি আমায় ভুল বুঝতে মিম। আমায় একজন খারাপ লোক ভাবতে যা আমার সহ্য হচ্ছিল না।”

—” জানেন, আমার বান্ধবী আমার কলিজাটা যখন প্রাইভেট পরে বাসায় আসছিল দুজন কাপুরুষের ওকে মাঝ রাস্তায় ফেলে ধর্ষণ করে। অনেক ভালো স্টুডেন্ট ছিল সান্জু । সবসময় ক্লাসে টপ করতো। জুনলে অবাক হবেন ধর্ষিত হবার পরও একটুও ভেঙ্গে পরেনি ও । পড়াশোনা করতে চাইত, স্কুলে যেতে চাইত কিন্তু সমাজের কিছু লোকের জন্য গলায় ফাস দেয়। হারিয়ে ফেলি আমার সান্জুকে।

আর কিছু বলতে পারল না মিম শব্দ করে কেঁদে উঠল। হৃদয় ওর কাধে হাত রাখল। মিম আবারো বলতে শুরু করল,
—” সেই থেকেই ধর্ষকদের মতই ঘেন্না করি ওইসব লোকদের যারা ধর্ষিতকে খারাপ ভাবে, সমাজের নোংরা কীট ভাবে। আর যখন দেখলাম সাদিয়া আপুর পরিবারের লোকজন আপুকে সেই ঘটনার পর থেকে নিন্দা করে, বাসার দরজা আপুর জন্য বন্ধ করে দেয় তখন থেকে ওইসব লোকদের আমি পৃথিবীতে সবচাইতে বেশি ঘেন্না করি। যখন শুনলাম আপনিও তাদেরি মত তখন নিজেকে আর মানাতে পারিনি। দূরে ঠেলে দিতে চেয়েছি আপনাকে। ”

—” আমি নিজকে শুধরে নিয়েছি সাদায়ি। বাকি ভুলটুকুও তুমি শুধরে দিও আমার। আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি মিম। আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই। দিবে কি তোমার দুটো হাত, আমার হাতে?”

হাত দুটো বাড়িয়ে ধরল হৃদয়। মিম “হ্যাঁ” সূচক মাথা নেড়ে হৃদয়ে হাত হাত দিতেই, হৃদয় খুশিতে জরিয়ে ধরল মিমকে। এত খুশি হৃদয় আগে কখনো হয়ছিল মনে নেই হৃদয়ে।



ছয়টা থেকে দশটা পর্যন্ত, চার ঘন্টা ঘুমালো রায়হান আর সাদিয়া। আর চার ঘন্টা ঘুমাতে পারলো হয়তো মন্দ হতো না। কিন্তু ফেরিওয়ালা তার স্ত্রী এবং ছেলে এসেছে তাই বলে রেহানা বেগম ডেকে তুললো ওদের দুজনকে। ফ্রেশ হয়ে দুজনেই গেল ড্রয়িং রুমে। রাস্তায় বেলুক বিক্রি করা ছোট্ট ছেলেটি দৌড়ে এসে রায়হানকে জরিয়ে ধরে হাসলো। বলল,
—” আমারে স্কুলে ভর্তি করতে নিবেন না? কহন যামু।”

রায়হান ফ্লোরে হাটু গেড়ে বসল ছেলেটির সামনে। হাত দিয়ে সাদিয়াকে দেখিয়ে বলল,
—“তোমার এই আন্টিটি নিয়ে যাবে তোমাকে ভর্তি করাতে। আমার একটু কাজ আছে তো আমি যাবো না।”
সাদিয়া বাইরে যাবার কথা শুনে ভয় পেয়ে গেল। সেই দিনটির কথা মনে পরে গেল ওর।
ছোট ছেলেটি একবার সাদিয়া দিকে তাকাল। সাদিয়ার ভয়ার্ত মুখ দেখে মন খারাপ করে বলল,
—” অফনে গেলে কি হইবো।”

রায়হান উত্তরে কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না। সে একা একটা মহিলার সাথে কোথাও যেতে চায় না তাই সাদিয়াকে তার সাথে পাঠাতে চাইছে।

সাদিয়া পিচ্চিটির গাল হাত রেখে মুচকি হেঁসে বলল,
—” উনিই তোমার সাথে যাবে। চিন্তা করো না।”
“একটু অপেক্ষা করুন আপু। উনি রেডি হয়ে আসছে। ” মহিলাটাকে উদ্দেশ্য করে বলে ; সাদিয়া রায়হানের হাত ধরে টেনে রুমে নিয়ে আসল।”

রায়হান সাদিয়ার কথা, আচরণে দেখে বলল,
—” আমি একটা মহিলার সাথে একা কোথাও কিভাবে যেতে পারি? ব্যাপারটা কেমন দেখায় বলো? তোমার কি হলো? তুমি যাবে না কে?”

—” আমার ভয় করে। উনি একজন মহিলা আর আমিও। যদি কোন বিপদে পড়ি? আমরা দুজন মেয়ে হয়ে কিভাবে নিজেদের রক্ষা করবো? আমার একা কোথাও যাওয়ার সহস নেই।”

সাদিয়ার কথা শুনে রায়হান একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। সত্যি, এ শহরে মেয়েদেন কোন সুরক্ষা নেই। জাহিলিয়া যুগ অনুসরণ করছে কিছু মানুষ । ভেবেই রায়হান বলল,
—” আমরা দুজনের যাই তাহলে?”

সাদিয়া এবার মাথা নেড়ে “হ্যাঁ।” জানাল। রায়হান তাড়াতাড়ি সাদিয়াকে তৈরি হতে বলল। সাদিয়া ওয়ারড্রব থেকে একটা হোয়াইট জিন্স আর ব্লাক শার্ট রায়হানের জন্য বের করে রেখে, নিজে তৈরি হতে চলে গেল।

রায়হান আজ অফিসে যাবে না বলে জানিয়ে দেয়। রুমে এসে দেখে সাদিয়া ওর জন্য ব্লাক শার্টটা বের করে রেখেছে। শার্টটা লাস্ট একবছর আগে জাপানে থাকতে পরেছিল রায়হান । কিশোরী মেয়েদের থেকে শুরু করে মধ্য বয়সের মহিলারাও কেমন আড়চোখে তাকিলে ওকে দেখছিল। কেউ কেউ আবার চোখ দিয়ে বস করতে চাইছিল যেন। তারপর থেকে আর এই কালো শার্টটা পরে দেখিনি রায়হান। আজ সাদিয়া এটা বের করে রেখেছে বলে পরতে হলো।

রায়হান ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাড়িয়ে মাথার চুল ঠিক করছি ঠিক তখনি আয়নায় সাদিয়াকে দেখে চোখ আঁটকে গেল। পিছন ঘুরে তাকাল রায়হান। বোরকা খীমার পরলে অসম্ভব সুন্দর লাগে সাদিয়াকে। চোখজোড়া যেন আরো বেশি মায়াবী মনে হয় সাদিয়ার। যেই চোখজোড়া খুব টানে রায়হানকে। রায়হান মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সাদিয়ার দিকে। সাদিয়াও হা হয়ে তাকিয়ে আছে রায়হানের দিকে। কালো শার্টে তার ফর্সা মুখ যেন কালো আকাশে উজ্জ্বল চাঁদের আলোর মত মনে হচ্ছে। সাদা জিন্স, কালো শার্টে দারুন মানিয়েছে রায়হানকে।

আচমকা রায়হান খেয়াল করল সাদিয়া কেমন হা হয়ে তাকিয়ে আছে। পা টিপে সাদিয়ার সামনে গিয়ে দাঁড়াল রায়হান। মুচকি হেঁসে দু’আঙুল দিয়ে সাদিয়ার মুখ বন্ধ করতেই সাদিয়া চমকে গেল। কেমন অপ্রস্তুত হয়ে গেল সাদিয়া। লজ্জায় মাথা নামাল, ভাঙ্গা কন্ঠে বলল,
—” চলুন আমি তৈরি। ”
রায়হান এবার শব্দ করে হেঁসে উঠল বলল,
—” চলো।”
কিন্তু মূহুর্তেই খেয়াল করে দেখল সাদিয়া সেইদিন পরা বোরখা, খীমার আবার আজও পরেছে। সাদিয়া এ বাসায় আসার পর থেকে এই একটা বোরখা, খীমারই পড়তে দেখে আসছে রায়হান। হয়তো ওর এই একটাই বোরখা? ভাবতেই পরিকল্পনা করে নিল আজ আসার সময় সাদিকে বোরখা, খীমার কিনে দিবে।



ছোট্ট ছেলেটি স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিয়ে স্কুল থেকে বেরল তারা। বাইরে বেরিয়ে রায়হান দুটো রিকশা ডাকল। একটা রিকশাতে মাহিলাটিকে এবং ছোট ছেলেটিকে উঠতে বলল। মহিলাটির কাছে ভাড়া নেই। আাসার সময় তো রায়হান ভাড়া দিয়ে দিয়েছিল এখন বাসায় গিয়ে রিকশা চালককে টাকা দিবে কিভাবে? ভেবে কিছুক্ষণ ইতস্তত করে বলল,
—” আমরা হাইট্টা বাসায় যাইতে পারমু। রিকশার দরকার নাই।”
রায়হান এবার ব্যাপারটা বুঝতে পারল। “আরেহ আমি তো ভাড়া দিয়েই দিব। ভাড়া নিয়ে চিন্তা কেন? ” কথাটা মনে মনে বলেই তাকে রিকশায় উঠে বসতে বলল।মহিলাটি উপায়ান্ত না পেয়ে উঠে বসল রিকশায়। রায়হান রিকশাওয়ালাকে ভাড়া দিতেই তা দেখে মহিলাটি শান্তির নিঃশ্বাস ফেলল। রিকশা চালক তাদের নিয়ে রওনা হলো।

রায়হান অপর রিকশায় সাদিয়াকে উঠার জন্য ইশারা করে হাতটা বাড়িয়ে ধরল। সাদিয়া ওর হাতে ভর দিয়ে রিকশায় উঠে বসল। রায়হান ওর পাশে উঠে বসল রিকশায়। রিকশা চালক কে উদ্দেশ্য করে বলল,
—”
—“ওখানে যাব কেন আমরা। বাসায় যাব না?”
—” কিছু কেনাকাটা আছে। ওখানে গেলেই দেখবে।”
—” বাসা থাকতে তো এসব কিছু বলেননি? ”
—” ওহ মাই ডিয়ার ইউ আস্ক এ লট অফ কোশ্চেন। উই গো বিফোর, ইউ ক্যান ফাইন্ড আউট ফর ইউরসেল্ফ।”

সাদিয়া এ কতা শুনে আর কিছু বলল না। মার্কেটে গিয়েই সাদিয়াকে নিয়ে বোরখার দোকান ঢুকলো বায়হান। রায়হানকে দেখেই তাকিয়ে রইল দোকানের কিছু মেয়ে ক্রেতা, বিক্রেতারা। সাদিয়ার চোখ এঁরালো না ব্যাপারটা। ইচ্ছে করছে নাক ফাটিয়ে দিতে সাদিয়ার। বাড়িতে কি বাবা-ভাই নেই? রেগে কটমট করে সাদিয়া বলল,
—” এখানে কেন নিয়ে আসলেন চলুন বাসায় যাবো।”
—“তোমার বোকখা, খীমার তো নেই এই একটা ছাড়া তাই তোমার জন্য কিছু বোরখ,খীমার কিনবো।”

উনি কিভাবে জানলো আমার এই একটাই বোরখা এই বারিতে? সব দিক এত নজর কেন এই লোকটার। না চাইতেও যেন সব কিছু হাজীর করে দেয়। কতজনের এমন স্বামী ভাগ্যে জোটে? মনে মনে বলল সাদিয়া। রায়হান ওকে জিজ্ঞেস করল,
—” সাদিয়া? কি ভাবছো? বোরখা কোনটা দেখাতে বলবো?”
সাদিয়া আস্তে করে দোকানী ভদ্রমহিলাকে বলল ও যে টাইপ বোরখা পড়তে চায় তা দেখাতে। মহিলাটি কিছু বোরখা দেখাতেই বলল,
—“আপু ডিপ কার্লোস এর বোরখা খীমার বের করেন। আমি লাইট কার্লার পরি না।”
—“লাইট কার্লার কেন নয় সাদিয়া?”
—“বর্তমানে কিছু মেয়ে আছে লাইট কালারের বোরখা পড়ে ফ্যাসন করে। তাই আমি বৃদ্ধরা যেসব কালারের বোরখা পড়ে সেইসব পরতে পছন্দ করি। আর জানেন এমন টাইপ বোরখা আমাদের পড়া উচিৎ যা দেখে বোঝার উপায় নেই বোরখার ভিতরে কি কোন যুবতি মেয়ে আছে নাকি বৃদ্ধা।”
রায়হান মুগ্ধ হয়ে ওর কথাগুলো শুনল, সাথে দোকানী ভদ্রমহিলাটিও।

সাদিয়ার জন্য দুটো বোরখা, দুটো খীমার, দুটি নেকাব, হাত মোজা, পা মোজা নিয়ে মার্কেট থেকে বেরিয়ে আসল। রায়হান একটা রিকশা ডাকল, তাতে করে দুজন বাসার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হোলো। মাঝ রাস্তায় আসতেই সাদিয়ার মনে পড়ল, মার্কেট যাওয়ার সময় আর মার্টেকেটের ভিতর কতগুলো মেয়ে রায়হানকে আড়চোখে দেখছিল। কথার ছলে মুখ ফসকে বলে হেলল,
—” আপনি এই কালো শার্টটা আর পড়বেন না তো।”

রায়হান ঘাড় ঘুরিয়ে সাদিয়াকে একবার দেখল। জিগ্যেস করল,
—” তোমারও চোখে পড়েছে ব্যাপারটা?”
—” কোন ব্যাপারটা?”
—” নাহ কিছু না। তুমি বলো কেন এই শার্টটা পড়তে না করলে? ”
—“এমনি বললাম।”
—“আরে বলো তো শুনি কেন পড়বো না শার্টটা। ”
—” এই শার্টটাতে আপনাকে অনেক সুন্দর লাগে। মেয়েরা কেমন ডেবডেবে করে তাকিয়ে তাকে।”
—” কেন তোমার জেলাস ফিল হচ্ছে? সবসময়ই তো তাকিয়ে থাকে। ”

খোঁচা মেরে কথাটা বলল রায়হান। সাদিয়া বলে উঠল,
—” তা থাকে তবে ফর্সা মানুষ কালো পড়লে সবার নজর কাড়ে। ”
—” হুম। আমিও এটাই বলি। কিন্তু এ কথা জানার পরও কেন আমায় এই কালো শার্ট পড়তে দিলে?”

সাদিয়া এবার দুষ্টামী করে বলল,
—” আপনি কি ফর্সা নাকি?”
বলে মুচকি হেঁসে রাহানের দিকে তাকাল। রায়হান ওর মুখের দিকে তাকিয়ে শব্দ করে হেঁসে ফেলল।



এবাবে কথা বলতে বলতে কখন বাসায় এসে পৌঁছেছে দুজনের মধ্যে কারোই জানা নেই।

রিকশা চালককে টাকা দিয়ে বাসা এসে সদর দরজা ঢেলে ভিতরে ঢুকতেই রায়হানের পরিচিত একটা মুখ দেখতে পেল। মূহুর্তেই মনে পড়ল কাল রাতের কথা। এই তো সেই পঞ্চমতম ধর্ষক যাকে কাল মুন্নার মোবাইলে দেখেছিল। এই ধর্ষক আমাদের বাড়িতে কি করে?

চলবে….

[ #পবিত্র_সম্পর্ক
লেখক : রিদন রায়হান
পর্ব : ২২

এই তো সেই পঞ্চমতম ধর্ষক ‘ইকবাল’ যাকে কাল মুন্নার ফোনে দেখেছিল রায়হান । “এ আমাদের বাড়িতে কি করে?”
মনে মনে কথাটা বলে, চিন্তিত হয়ে ভিতরে ঢুকল রায়হান। পিছু পিছু সাদিয়াও ভিতরে ঢুকল। দেখল, ধর্ষক ইকবালের সাথে হেঁসে হেঁসে কথা বল যাচ্ছে হৃদয়, আমজাদ চৌধুরী, রেহানা বেগম। রায়হান কিছু বুঝে উঠার আগেই; হৃদয় রায়হানকে দেখে ইকবালকে উদ্দেশ্য করে বলল,
—” স্যার, এটা আমার বড় ভাই রায়হান।”

ইকবাল হাসান বসা থেকে দাঁড়ালেন। রায়হানের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেঁসে বলল, ” হ্যালো মি. রায়হান। ”

লোকটির কথার উত্তরে কিছু বলতে ইচ্ছে করছে না রায়হানের তবুও বলল, ” হ্যালো।”

হৃদয় এবার রায়হানকে এবং ইকবালকে উদ্দেশ্য করে বলল, ” ভাইয়া উনি আমার অফিসের বস, ইকবাল হাসান। আর স্যার, আর ইনি হলো আমার ভায়ের বউ মানে আমার একমাত্র ভাবি সাদিয়া।”

ইকবাল হাসান, “হ্যালো।” বলো সাদিয়ার দিকে হাতটা বাড়িয়ে দেলেন। ব্যাপারটা কেমন দৃষ্টিকটু মনে হলো সবার কাছে। যেই জায়গায় সাদিয়ার বোরখা খীমা, হাতমোজা, পামোজা দেখে যে কেউ বুঝতে পারবে সে পর্দানশীন সেই জায়গায় কি করে উনি হাত মিলাতে চায় সাদিয়ার সাথে। রায়হানের ইচ্ছে করছে ইকবালের হাতদুটো ভেঙে গুরিয়ে দিতে।

লোকটাকে দেখার পর থেকেই সাদিয়া কেমন অসস্তী হচ্ছে। অজানা ভয়ে বুকট কেমন ধড়ফড় করছে। দম আটকে আসতে চাইছে যেন। জোরে জোরে নিশ্বাস নিতে লাগল সাদিয়া। হাত দুটো দিয়ে খামচে ধরে আছে বোরখার কিছু অংশ।

রায়হান বুদ্ধি আঁটলো। হাতে থাকা শপিং ব্যাগগুলো সাদিয়ার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল, ” এগুলা নাও তো। সেই কখন থেকে এগুলোর বোঝা বয়ে যাচ্ছি আমি। ঘরে রেখে আসো।”

সাদিয়া বিস্ময় নিয়ে তাকালো রায়হানের দিকে। “এই ব্যাগগুলো আর ভাড়ি কি? এমন কথা বলল কেন উনি? নাকি আমার অসস্তীর কারণটা বুঝেই তিনি কথাটা বললেন? সব বাজে পরিস্থিতি থেকে উনি আমাকে বাঁচিয়ে দেয় তা জেনে হোক বা না জেনে হোক। ” মনে মনে কথাটা বলেই মুঁচকি হাসলো সাদিয়া। নেকাব এর আঁড়ালে থাকা ওর সেই হাঁসিটা কেউ দেখতে পেল না।

সাদিয়া কিছু না বলে সোজা ঘরে চলে গেল। ইকবাল এক রহস্যময় হাঁসি হাসলো। যে হাঁসির মানে বুঝতে বাকি রইলো না রায়হানের। হৃদয় তাকে উদ্দেশ্য করে বলল, ” আসলে ভাবী পর্দা করে তো পরপুরুষের সামনে কথা বলা কি দেখাও করে না। আপনি কিছু মনে করবেন না স্যার।”

“একজন মেয়েকে বোরখা, খীমার, হাত-মোজা পা-মোজা পরা অবস্থায় দেখে যে কেউ বুঝতে পারবে যে সে পর্দা করে। আমাদের উচিৎ পরপুরুষ হয়ে তাদের সাথে সেধে কথা না বলা। আরে আপনি দাঁড়িয়ে কেন? বসুন মি. ইকবাল হাসান। মা উনাকে চা নাস্তা খেতে দিয়েছ?”

কথাটা ইকবাল হাসানকে শুনিয়ে আবার শেষের দুটো বক্য দিয়ে কথাটা ঘুরিয়ে দিল রায়হান। যাতে কেউ না ভাবে রায়হান ইকবাল হাসানকে কথাটা শুনিয়েছে। গ্রাম্য ভাষায় এটাকে বলে, “সাপও মরে আবার লাঠিও না ভাঙ্গে।”

রায়হান ইকবাল হাসানকে উদ্দেশ্য করে বলল, ” দুপুর তো প্রায় হলে এলো, দুপুরের খাবার খেয়ে যাবেন।”

—” হ্যাঁ লাঞ্চ করে যেতে পারলে আমিও খুশি হতাম। কিন্তু কিছুই করার নেই একএকটা মিটিং আছে তাই সেখানে যেতে হবে। ”

মেয়ে পাঁচার করার জন্য কোন মিটিং তাইনা? নয়তো কোন মেয়েকে নতুন করে ধর্ষণ করার পরিকল্পনা আঁটছিস? মনে মনে কথাটা বলতেই চোয়াল শক্ত হয়ে গেল রায়হানের।

ইকবাল হাসান এর মোবাইলে একটা ফোনকল আসতেই সে সকলের থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেল। রায়হানের ব্যাবহারে উনি কষ্ট পেয়ে চলে গেল, সবাই এটাই ভাবলো। উনার সাথে কেন রায়হান খারাপ ব্যাবহার করল তা জিজ্ঞেস করতে রেহানা বেগম ছেলেকে ডাকলেন। কিছু বলার আগেই রায়হান বলে উঠল।

—” বাইরে থেকে এসেছি মা। ধুলো বালিতে ঠান্ডা লেগে যাচ্ছে আমার। আগে গোসল সেরে আসি তারপর লাঞ্চ করবো।”

বলেই দ্রুত ঘরে চলে গেল রায়হান। রেহানা বেগম আর কিছু বলার সুযোগ পেল না। ভাবলো যখন ছেলে খাবার টেবিলে বসবে তখনি ঠান্ডা মাথায় ছেলেকে জিজ্ঞেস করবে।

রায়হান ঘরে ঢুকতেই দেখল, সাদিয়া আনমনে বসে আছে হাতে থাকা শপিং ব্যাগটাগুলোও রাখেনি কোথাও। রায়হান দরজায় নক করতেই সাদিয়ার হুঁশশ ফিরল। রায়হান জিজ্ঞেস করল,
—” সেই কখন ঘরে আসলে এখনো বোরখাই খুলোনি? কি এত ভাবছো বিবিজান? যে হাত থেকে শপিং ব্যাগগুলোও কোথাও রাখার সময় পেলে না?”

—“ওই লোকটাকে মনে হচ্ছে আমি আগে কোথাও দেখিছি। উনাকে দেখার পর থেকেই কেমন অসস্তী হচ্ছে আমার। দম আটকে আসতে চাইছে বারবার। একদম সহ্য হচ্ছে না লোকটাকে। লুচ্চা মার্কা একটা হাসি দিচ্ছিল আমার দিকে তাকিয়ে।”

সাদিয়ার কথায় চোখ গুলো বড়বড় করে তাকাল রায়হান। সেই রাত্তিরে তো সাদিয়া কাউকে দেখেনি। ইশান ছাড়া কারো গলার আওয়াজও মনে নেই। তাহলে এই ধর্ষকে দেখে কিভাবে ওর এত অসস্তী হচ্ছে? ভেবে পাচ্ছে না রায়হান।

—” কিভাবে বলবো সাদিয়া ইকবাল তোমার ধর্ষক। তুমি ছাড়া আরো কত মেয়েকে ধর্ষণ করেছে জানি না। আমাদের বাড়িতে কোন মতলবে এসেছে তার জানি না। তোমাকে এসব বলতে পারলে হয়তো শান্তি পেতাম। কিন্তু ভয় করে সব জানার পর যদি তুমি আমায় ছেড়ে চলে যাও! ”

মনে মনে কথাটা বলে সাদিয়ার দিকে তাকাল। তাকাতেই একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসল। রায়হান বলল, ” আমার কাছেও লোকটাকে শুভিদার মনে হয়নি। আচ্ছা ছাড়ো এইসব কথা। গোসল সেরে নাও আমি হৃদয়ের রুমের পাশের বাথরুমে গোসল করে আসি। সবাই অপেক্ষা করছে, আমরা গেলেই একসাথে খাবার টেবিলে বসবে। ”

সাদিয়া মাথা নেড়ে রায়হানের হাতে একটা তোয়ালে, ট্রাউজার আর টি-শার্ট ধরিয়ে দিয়ে চলে গেল। রায়হানও গোসলে চলে গেল।



হৃদয় ডাকছে, বুঝতে পেরেই দৈড়ে গিয়ে দরজা খুলল মিম। হৃদয় ঘরে ঢুকেই দরজা আঁটকে দিল। মিমের একাবারে কাছে এসে ওর হাত দুটো ধরল। বলল,
—” তুমি লাঞ্চ করে ফেলেছ?”
—” না মাত্র গিয়ে নিয়ে আসলাম।”
—” চলো না আজ সবার সাথেএ বসে খাবে। জানি একা একা খেতে তোমারও ভালো লাগে না।”
—” সবার সাথে খাবো? এতদিন একা একাই তো খেয়েছি; এখন সাবার সাথে গিয়ে খেতে বসব? কি ভাববে সবাই।”
—” কেউ কিছুই ভাববে না বরং খুশি হবে। চলো না প্লিজ।”
—” নাহ যাবো না।”
—” প্লিজ জান। আমার জন্য চলো।”
—” আচ্ছা। আপনি আগে যান আমি আসছি একটু পর।”
—” আচ্ছা।”



আমজাদ চৌধুরী, রেহানা বেগম, মিম একসাথে ডাইনিং টেবিলের বসে আছে। রেহানা বেগম অপেক্ষা করছে তার ছেলে – বউমা এর জন্য। আমজাদ চৌধুরী বসে বসে খবরের কাগজ পড়ছেন। সকালে ব্যাস্ততার করণে পড়তে একদমই সময় পায়নি। এদিকে মিম অপেক্ষা করছে হৃদয়ের। বিড়বিড় করে বলছে,
—” আমাকে এখানে বসিয়ে রেখে নিজেই হারিয়ে গেছে। আমি এখানে এসে পরেছি এখন তো ঘরেও যেতে পারবো না, আংকেল, আন্টি কষ্ট পাবে। কি যে করি এখন।”

পেছন থেকে ” মিম ” বলে কেউ ডাকতেই ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসল মিম। পেছন ফিরে তাকাতেই দেখল, ওর সাদিয়া আপু আর রায়হান ভাইয়া। রায়হান ওর মথায় টোকা দিয়ে বলল,
—” হঠাৎ আজ আমাদের সাথে খেতে বসলে? করণ কি হুমম? হৃদয় তো এখনি আসবে।”

রায়হানের দুষ্টমি দেখে সাদিয়া রেগে গেল বলল, ” এভাবে ওর সাথে দুষ্টামি করছেন কেন? মিম, তুই এই জায়গায় আমাদের সাথে খেতে এসেছিস অনেক খুশি হয়েছি রে। এখন থেকে প্রতিদিন আমাদের সাথেই খেতে বসবি। হৃদয়কে নিয়ে ভাবিস না সে নিজের মত থাকবে আর তুই তোর মত। ঠিক আছে?”

মিম নিচে তাকিয়ে হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ল। ঠিক তখনি হৃদয় এসে মিমের পাশের চেয়ার টেনে বসল। বলল,
—” কি হলো তোমরা এখনো শুরু করোনি কেন?”

হৃদয়ের কথাবার্তা আচরণ দেখে সবাই বেশ অবাক হলো। সবার মনে শুধু একটাই প্রশ্ন, “মিম ওর পাশে বসা তা দেখেও হৃদয়ের কোন পাত্তা নেই! এ কিভাবে সম্ভব? ”

কেউই এই রহস্য উন্মোচন করতে পারল না। তাই খাওয়া-দাওয়া শুরু করল। মিম ফিসফিস করে হৃদয়কে বলল,
—“আমাকে আসতে বলে আপনি কোথায় গিয়েছিলেন?”

উত্তরে হৃদয় কি বলবে কিছু ভেবে পাচ্ছে না। তাছাড়া সে ফিসফিসিয়ে কথাও বলতে পারে না। গলার শো-র অনেক লাউড বলে আস্তে বললেও অনেক জোরে শোনা যায়।

মিম এবার উত্তর না পেয়ে রেগে গেল। হাত ধোঁয়ার জন্য গ্লাস নিতেি হৃদয় আস্তে করে বলে ফেলল,
—“তোমার সাথে বসার জন্যই আমি দেড়ি করে এসেছি।”

কথাটা মিম ছাড়া সবার কান পর্যন্তই পৌঁছাল। রায়হান খুকখুক করে কেশে উঠল। সবার খাওয়া বন্ধ হয়ে গেল। মিম আর হৃদয় এত পরিমানে লজ্জা পেল যা বলার বাইরে। সবার আর জানতে বাকী রইলো না, মিম কেন হঠাৎ সকলের সাথে খেতে বসেছে? হৃদয় কেন মিমের পাশে এসে বসেছে? মিমকে দেখেও না দেখার ভান করেছে। সবাই বুঝতে পারল হৃদয় আর মিমের মধ্যে ভাব হয়েছে। রায়হান তো বলেই ফেলল,

—“কি দুজনের মধ্যে দেখছি খুব ভালোই ভাব হয়েছে। তাইতো বলি মিম কিভাবে হৃদয়ের পাশে এতক্ষণ বসে আছে। হা হা হা, হৃদয় বিয়েটা-কি এবার করিয়ে দিব নাকি?”

রায়হানের এমন কথার জন্য কেউ প্রস্তুত ছিলো না। হৃদয় যেন লজ্জা ভেঙ্গে বলতে চাইছে “হ্যাঁ, করিয়ে দাও।” সাদিয়া রায়হানকে ইশারায় চুপ হতে বলাতে রায়হান বাধ্য ছেলের মত চুপ হয়ে গেল।

রেহানা বেগম প্রসঙ্গ পালটাতে বলে উঠলেন, “রায়হান আজ তুই হৃদয়ের স্যার এর সাথে মোটেই ভালো ব্যাবহার করিসনি। লোকটা কত ভালো বলতো! অফিসের সামান্য একজন কর্মচারীর অসুস্থতার কথা শুনে দেখতে চলে আসল। আর তুই…..”

” তুমি যদি ওর আসল রূপ আর কীর্তিকলাপ সম্পর্ক সবকিছু জানতে মা তাহলে এসব কথা জীবনেও বলতে না। উনি আমাদের বাসায় হৃদয়কে দেখতে আসেনি মা তোমার ছেলে আর ছেলে বউকে মারার পরিকল্পনা করার জন্যই সে এসেছে।” মনে মনে বলল রায়হান। তবে মুখে বলল, “আমি কি বললাম আবার?”

রায়হানের প্রশ্নের উত্তরে আমজাদ চৌধুরী বলল,
—” ভেবে দেখো কি বলেছ। হৃদয় তো তখন উনাকে সুন্দরভাবে বুঝিয়ে বলেছিল সাদিয়ার ব্যাপারটা। তারপর তোমার আইসব কথা বলা ঠিক হয়নি।”

—” বাবা আমি তো উচিৎ টা-ই সুধু বলেছি। এখানে আমার অন্যায়টা কি?”

রায়হানের কথায় রেহানা বেগম চুপ হয়ে গেলেন। আমজাদ চৌধুরী বলল, “যাই হোক উনি আমাদের মেহমান ছিল আর মেহমানদের সাথে আমাদের ভালো ব্যাবহার করা উচিৎ।”

হৃদয় এখন বলে উঠল, “এখানে আমি আমার ভাইয়ের কোন দোষ খুঁজে পাইনি। তাছাড়া উনি এ বাড়িতে আাসার পর আমাদের কারো সাথেই তো হেন্ডসেক করলো না তাহলে ভাবীর সাথে কেন করতে চাইল? আমারতো এটা দেখার পর উনাকে লুচ্চা বলে মনে হয়েছে। এখন মনে হচ্ছে এ বাড়িতে আসার পিছনেও কোন কারণ আছে তার।”

এবার রেহানা বেগম এবং আমজাদ চৌধুরী ব্যাপারটা ভেবে দেখলো, “হৃদয় কথা ঠিকই বলছে।”

হৃদয়ের কথা পরীপেক্ষিতে রায়হান বলল, ” একদম ঠিক বলেছিস। উনার সম্পর্কে অনেক বেড রেকর্ড আমি শুনলে। যা তোমাদের কাউকে বলা সম্ভব না।”

আমজাদ চৌধুরী আর রেহানা বেগম এবার ছেলের ওই ব্যাবহারের কারণ বুঝতে পারল। শুধুশুধু কারো সাথে তো খারাপ ব্যাবহার করার ছেলে তো রায়হান না।

নিশ্চুপে সবাই খাবার শেষ করতে লাগল।
আমজাদ চৌধুরী সবার আগে খাবার খাওয়া শেষ করে উঠলেন। বেসিংয়ে হাত ধুয়ে এসে, খবরের কাগজ হাতে নিয়ে সোফায় বসলেন। পৃষ্ঠা উল্টাতেই হেডলাইন দেখলেন,
—” এ নিয়ে চারজন ধর্ষকের খুন। প্রতিটি লাশের সাথে লিখা ” আমি ধর্ষক। হাজরো মেয়েকে ধর্ষণ করেছি আমি। ”

চলবে….

[

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here