#তোকে_অনেক_ভালোবাসি (পর্ব ২৫)
#মেঘা_আফরোজ
·
·
·
আরিশা ব্যালকনিতে দাড়িয়ে আছে ওর দৃষ্টি অন্ধকার আকাশে। আজ আকাশে চাঁদ নেই কালো অন্ধকারে ছেয়ে আছে চারিদিক। চাঁদ বিহীন অন্ধকারের মতো আরিশার মন টাও আজ ঘন কালো অন্ধকার হয়ে আছে। আর এর একমাত্র কারন আদ্র।
আদ্র কেনো এমন করলো আমার সাথে? উনি সেই ছোট থেকেই আমাকে দেখছে উনার কি করে মনে হলো আমি বাইরের একটা ছেলেকে বাড়িতে নিয়ে আসবো?আমি শুধু তোমাকে ভালোবাসি আদ্র,অনেক ভালোবাসি। জানো তো আজকে আমার এতো সাজ তোমার পছন্দের রঙের শাড়ি পড়া শুধু মাত্র তোমার জন্য। আজ আমি তোমাকে আপন করে নিতে চেয়েছিলাম। যতোটা আপন করলে স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক আরো মর্য়াদা পূর্ণ হয়ে ওঠে। কিন্তু আফসোস তুমি একটি বার ভালো ভাবে তাকালে না আমার দিকে।
কে কি বললো তুমি সেটা বিশ্বাস করে আমাকে ভুল বুঝলে।
হঠাৎ কেউ পেছন থেকে আরুকে জড়িয়ে ধরলো। আরু ভয় পেয়ে গিয়েও সামলে নিলো কারন এ স্পর্শ আদ্রর।
আরু নিজেকে ছাড়াতে চেষ্টা করলে আদ্র আরো চেপে ধরলো ঘাড়ে মুখ গুজে অপরাধী স্বরে বলতে লাগলো………
আ’ম সরি আরু। প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দাও আমি আর কখনো তোমাকে ভুল বুঝবোনা। অনেক বেশি ভালোবাসি তোমাকে আমি সহ্য করতে পারি না অন্য ছেলেকে তোমার পাশে। আমি সিওর আমাদের মাঝে কেউ দূরত্ব সৃষ্টি করতে চাইছে। আমার আরু এমন কিছু করতেই পারে না।
আরু জোর করে নিজেকে ছাড়িয়ে বললো………একদম ঢং করবে না আমাকে ভুল বুঝে কাঁদিয়ে এখন এসেছে সরি বলতে। এখন এসেছো কেনো যাও যে তোমাকে ওই ছবি দিয়েছে তার কাছে যাও।
আদ্র আরুর হাতটা শক্ত করে ধরে বললো………আমার ভুল হয়েছে সোনা তার জন্য আমি অনুতপ্ত। এই ভুলের কারোনে অথই এর কাছে আমাকে ছোট হতে হয়েছে। ভাবতে পারছো আরু আমার ছোট বোন আজ পর্যন্ত আমার মুখের উপর উচু গলায় কোনোদিন কথা বলে নি কিন্তু আজ বলেছে আমার ভুল ভাঙিয়েছে। ওর ভাবির মন খারাপ থাক ও চায়না।
আরু অবাক চোখে তাকিয়ে বললো………কি বলেছে অথই??
এই যে ছেলেটি তোমার কেউ না ও রাফিয়ার বন্ধু। আচ্ছা রাফিয়ার এতো সাহস হলো কি করে ও একটা ছেলেকে বাড়িতে ডাকে? আমি কালই বাবাকে বলবো ওকে বাড়িতে পাঠিয়ে দিতে।
রাফিয়া আপু আমার কাছে আগেই বলেছিলো ওর কোনো বন্ধু আসবে। বাবাকে কিছু বলো না।
ওও তাহলে তুমি জেনে না করলে না কেনো??
রাফিয়া আপু মন খারাপ করবে তাই।
রাফিয়ার মন রাখতে চেয়ে যে তোমার নিজেরই কষ্ট হলো।
.
.
আরুর চোখে এখনো পানি জমে আছে আদ্র ওর চোখের পানি মুছে বললো………ইসস আমার বউটা কেঁদে কেটে চোখ মুখ ফুলিয়ে ফেলেছে। সরি বউ আর এমন হবে না তাকাও আমার দিকে। কি হলো তাকাবে না? আচ্ছা যাচ্ছি আমি।
আদ্র চলে যেতে নিলে আরু ওর হাত ধরে জড়িয়ে ধরে ওকে। আদ্রর বুকটা যে ওর সব চেয়ে শান্তির স্থান। আদ্র যে এতো অল্প সময়ে নিজের ভুল বুঝতে পেরে আরুর কাছে এসেছে এটাই অনেক।
আদ্র আরুকে বুক থেকে তুলে আরুর মাথা থেকে পা পর্যন্ত দেখে বললো………আজ আমার বউকে অনেক অনেক সুন্দর লাগছে। তো এতো সাজ কেনো হুম??
ইচ্ছে হয়েছে তাই। তুমি তো ডিনার করোনি নিচে চলো অনেক রাত হয়েছে।
আদ্র একটানে আরুকে কাছে টেনে কোমড় জড়িয়ে বললো……..একদিন ডিনার না করলে কিছু হবে না। আজ না হয় ডিনারটা রুমেই করি। আমি কিন্তু জানি তুমি কেনো সেজেছো।
মানে কি জানো তুমি??
এইযে আমার বউয়ের এতোদিনে মনে হয়েছে তার স্বামীকে অধিকার দেওয়া প্রয়োজন।
আদ্র বাকা হেসে আরুর দিকে তাকিয়ে আছে। আরু লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে বললো……..এমন কিছু নয়।
উহুম বউ নিজেকে আর দূরে সরিয়ে রেখো না। তুমি তখন কি বলেছো আমি পেছনে দাড়িয়ে সব শুনেছি।
আরু মাথা তুলে কিছু বলতে নিলে আচমকা আদ্র আরুর ঠোঁট নিজের দখলে নিয়ে নেয়। হঠাৎ করে এমনটা করায় আরু যেনো ফ্রিজড হয়ে গেছে সারা শরীরে শীতল হাওয়া বয়ে চলেছে। আরু আদ্রর টি শার্ট খামচে ধরে আছে। নিজেকে যে ছাড়াবে সেটাও ভুলে গেছে।
প্রায় ৫ মিনিট পর আদ্র আরুর ঠোঁট ছেড়ে দিলো। দুজনেই ঘন ঘন নিশ্বাস নিচ্ছে। আদ্র বাকা হেসে বললো………ডিনারের প্রথম অংশটা খুব মিষ্টি ছিলো।
আরু অন্য দিকে ঘুরে লজ্জা মিশ্রিত কন্ঠে বললো……..অসভ্য লোক একটা তুমি খুব খারাপ।
তাই আমি অসভ্য খারাপ? ঠিকআছে আজ তাহলে বুঝিয়েই দেই আমি কতোটা অসভ্য।
বলেই আরুকে কোলে তুলে নিলো আদ্র আরু হাত পা ছুড়ছে নামার জন্য।
হুশশশ কোনো নড়াচড়া নয় আজ আমি তোমাকে ভালোবাসতে চাই প্লিজ বাধা দিয়ো না।
আরু আর কিছু বললো না আদ্র আরুকে বেডে শুইয়ে দিয়ে আরুর মুখে ঠোঁটে গলায় বুকে অজস্র চুমুতে ভরিয়ে দিলো। আরু কোনো বাধা দিচ্ছে না আরুও চায় আদ্র ওকে নিজের করে নেক।
দুটি মনের ভালোবাসা আরো হাজার গুন বেড়ে গিয়েছে আজ ওদের ভালোবাসার মধ্যে দিয়ে।
.
.
সকালে আদ্রর আগেই আরুর ঘুম ভেঙে গিয়েছে। আদ্র জেগে ওঠার আগেই আরু ওয়াশরুমে চলে গেলো। শাওয়ার নিয়ে মিষ্টি কালারের শাড়ি পড়েছে আরু। ওয়াশরুম থেকে বেড়িয়ে দেখলো আদ্র এখনো ঘুমে আরু এগিয়ে গিয়ে আদ্রর কপালে ঠোঁট ছুইয়ে নিচে চলে এলো।
আদ্র ঘুম থেকে উঠে আরুকে দেখলো না। আদ্র বেশ বুঝতে পারছে আরু আজ লজ্জায় ওর দিকে তাকাবেই না।
আরুকে অনেকদিন পর সকালে শাড়ি পড়া দেখে আদ্রর মা হাসি মুখে বললো……..আমার মেয়েকে আজ খুব মিষ্টি দেখাচ্ছে। মাঝে মধ্যে এভাবে শাড়ি পড়বি কেমন।
রাফিয়া আদ্রর মায়ের কথা শুনে আরুর দিকে তাকালো। আরুর চোখে মুখে খুশির ঝিলিক দেখে রাফিয়া চোখ ছোট করে তাকিয়ে রইলো ওর দিকে।
সবাই নাস্তা করতে বসেছে আদ্র এখনো আসেনি আরুর মা বললো………আরিশা আদ্র কে ডেকে আন আসছে না কেনো এখনো।
আরু মায়ের দিকে তাকিয়ে বললো……..ডাকতে হবে না এসে পড়বে।
আসলে আরু চাইছে না আদ্রর সামনে পড়তে ওর চোখে চোখ রাখলে আরো লজ্জা পেতে হবে।
অথই মিটমিটে হেসে বললো………আমি যাচ্ছি ভাইয়াকে ডাকতে।
অথই উঠে দাড়াতেই আদ্র সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে বললো……..কাউকে যেতে হবে না আমি চলে এসেছি।
আদ্র অফিসের পোশাক পড়েই নাস্তা করতে এসেছে আরু আড় চোখে আদ্রকে দেখে চুপচাপ দাড়িয়ে রইলো।
আরু খেতে বসছে না দেখে আদ্রর মা বললো……..আরিশা দাড়িয়ে আছিস কেনো খেয়ে নে ভার্সিটি যেতে হবে তো।
আদ্র বললো……মা আরুর আজ ভার্সিটি যেতে হবে না আমি দুপুর পর ওকে নিয়ে বেড় হবো। আরু বসে পড়ো খেয়ে নাও।
আরু আদ্রর পাশের চেয়ারে বসলো মনে মনে ভাবছে…….কোথায় যাবে আমাকে নিয়ে? আমাকে তো কিছু বলেনি।
আদ্র সবার চোখের আড়ালে আরুর কানের কাছে মুখ এগিয়ে বললো……..আমার দিকে তাকাচ্ছো না কেনো? এতো লজ্জা পেলে চলবে নাকি। সকালে মর্নিং কিস টাও পাই নি। আজ ছেড়ে দিলাম কাল থেকে যদি আমাকে ঘুম থেকে না তুলে রুম থেকে বেড় হও তোমার ১২টা বাজাবো। তবে যাই বলো কাল রাতের ডিনার টা কিন্তু বেস্ট ছিলো।
আরু চোখ বড় বড় করে আদ্রর দিকে তাকালো আদ্র চোখ টিপ মেরে মুচকি হেসে খেতে লাগলো।
ওদের দিকে আর কেউ না তাকালেও রাফিয়া তাকিয়ে আছে। আদ্র আর আরুকে আজ অন্য রকম লাগছে।
রাফিয়া মনে মনে বলতে লাগলো……..কি হলো ব্যাপারটা! ভাবলাম একটা হলো তার উল্টো। আদ্র রেগে থাকা তো দূরের কথা আরো যেনো লেপ্টে আছে আরিশার সাথে। তাহলে কি আমার কালকের প্ল্যানটা কোনো কাজে আসে নি?
নাহ আর মানতে পারছি না আবার কিছু একটা ভাবতে হবে। আজ পর্যন্ত এই রাফিয়ার কোনো চাওয়া অপূর্ণ থাকে নি এটাও থাকবে না।
.
.
দুপুর পরে আদ্র বাড়িতে এসে আরুকে রেডি হতে বললো। আরু ওয়াশরুমে গেলো ফ্রেস হতে। আদ্র বেডে বসে ফোন টিপছিলো আরুর ফোনে ম্যাসেজ টোন বেজে উঠলো। আদ্র ফোন হাতে নিয়ে ম্যাসেজ অন করলো ওখানে লেখা ছিলো……..
আরিশা আজ তোমার জন্য এক নতুন চমক অপেক্ষা করছে আদ্রর থেকে তোমাকে তো আমি দূরে সরাবোই। আদ্র তো তোমাকে ভুল বুঝবেই আজ আ’ম সিওর। কালকে আদ্রকে ওই ছবি আর মিথ্যে বলে কোনো লাভ হয়নি কিন্তু আজ হবে। তোমার চোখে মুখে আমি চিন্তার ছাপ দেখতে চাই তাই এ এস এম এস টা করলাম।
আদ্র ম্যাসেজ টা পড়ে নাম্বারটা নিজের ফোনে তুলে ম্যাসেজ টা ডিলিট করে দিলো। ও চায় না আরু আবারো এই অজানা ভয় নিয়ে চিন্তা করুক।
আদ্র নিজের ফোন থেকেই সে নাম্বারে কল দিলো রিং হচ্ছে কেউ রিসিভ করছে না।
কে হতে পারে এই মেয়ে? আমার মন বলছে সে সব সময় আমাকে আর আরুকে ফলো করছে। আরুকে এ বিষয়ে কিছু জানাবো না আমি নিজেই বেড় করবো কে আমাদের লাইফটা এলোমেলো করতে চাইছে।
আরুকে রেডি হতে বলে আদ্র নিচে এসে সেই নাম্বারটা কাউকে দিয়ে বললো………
এই নাম্বারটা কোথায় আছে সে লোকেশনটা আজকের মধ্যে জানতে চাই।
ফোন রেখে আদ্র মৃদু হেসে বললো…….তুমি যেই হও না কেনো তোমাকে তো আমি খুজে বেড় করবোই। আমার বারবার মনে হচ্ছে খুব বেশি খাটতে হবে না এই মেয়েকে ধরতে। নিজেকে বড্ড চালাক ভাবো তাইনা,তাই চালাকি করতে যেয়ে নিজের জালেই ফেসে গেলে। চমক যদি দেওয়ারই হতো তাহলে ম্যাসেজ করে বলার কি দরকার। আমি যাকে আইডিয়া করছি যদি সেই হয় তাহলে আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না। আরু আমার জান,আমার জানকে আলাদা করাটা এতোটাও সোজা নয়।
আরুকে এ বিষয়ে কিছুই বলা যাবে না এখন।ওকে আমি কখনো কষ্ট দিবো না #তোকে অনেক ভালোবাসি আরু অনেক বেশি ভালোবাসি।
.
.
আরিশাকে সারপ্রাইজ দেবে বলে ওকে না জানিয়ে মনিকার বাসায় নিয়ে এসেছে আদ্র। অনেকদিন পর বেস্ট ফ্রেন্ডকে পেয়ে আরিশা মনিকা দুজনেই খুব খুশি। সারা বিকেল সন্ধাটা মনিকা সাথে কাটিয়ে আদ্র আরুকে নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে বেড় হলো।
রাত নেমে এসেছে আদ্র ড্রাইভ করছে আর আরু বাইরে তাকিয়ে আছে।
ওদিকে রাফিয়া রুমে এপাশ ওপাশে পাইচারি করছে আর ভাবছে……..আরিশাকে এস এম এসটা করলাম ভয়,পাওয়ানোর জন্য কিন্তু ও তো হাসি খুশি মনেই বেড়িয়ে গেলো। হয়তো তখন এস এম এসটা দেখে নি পরে অবশ্যই দেখেছে। এখন বাকী কাজটা করতে হবে। রাফিয়ে কাউকে ফোন দিয়ে বললো……যে নাম্বারটা দিয়েছি ওই নাম্বারে কল দাও দুজনেই একসঙ্গে আছে এটাই সুযোগ। যা যা বলতে বলেছি সেগুলোই বলবে।
আদ্র সামনে তাকিয়ে বললো……..আরু কিছু বলছো না যে??
ড্রাইভ করার সময় কথা বলতে নেই চুপচাপ গাড়ি চালাও।
তুমি তো আজ সারাদিনে আমার দিকে ভালো ভাবে তাকালেই না। সারপ্রাইজ দিতে মনিকার বাসায় নিয়ে গেলাম ওখানে খুব মজা করলে হাসলে তাহলে আমার সাথে কেনো কথা বলছো না??
আরু মুচকি হেসে আদ্রর দিকে একবার তাকিয়ে মাথা নিচু করে বললো…….তোমার দিকে তাকাতে আমার লজ্জা লাগছে।
আদ্র শব্দ করে হেসে উঠে বললো……..এই পাগলি আমি তোমার বর অন্য কেউ না কিসের এতো লজ্জা শুনি? ও বুজেছি লজ্জাটা পুরোপুরি ভেঙে দিতে হবে তাইনা সোনা?
অসভ্য।
হুমম বউ এর কাছে না হয় অসভ্য হলাম তাতে ক্ষতি নেই বরং লাভ আছে।
আরুর ফোন বেজে উঠলো আরু অচেনা নাম্বার দেখে ধরছে না।
কে ফোন দিয়েছে??
নাম্বার চিনি না।
রিসিভ করো আর শোনো স্পিকারে দাও।
আরু ফোন রিসিভ করে হ্যালো বলতোই ওপাশ থেকে একটা ছেলে বলে উঠলো………কি ব্যাপার আরিশা দুপুর থেকে একবারো ফোন দিলে না যে? তুমি জানো না তোমার সাথে কথা না বলে আমি থাকতে পারি না। আমি তোমার বাসার গেটে দাড়িয়ে আছি তাড়াতাড়ি এসো খুব দেখতে ইচ্ছে করছে তোমাকে।
আরু একবার ফোনের দিকে তাকাচ্ছে আবার আদ্রর দিকে। আদ্রর মাঝে কোনো পরিবর্তন নেই ও খুশি মনেই গাড়ি চালাচ্ছে। আরু খুবই অবাক হচ্ছে হঠাৎ কে এসব বলছে ফোন দিয়ে।আদ্রকে এমন চুপ থাকতে দেখে আরো বেশি অবাক হচ্ছে।
ওপাশ থেকে ফোন কাটেনি এখনো আরু রীতিমত কাঁপছে তাড়াতাড়ি ফোন কেটে আদ্রর দিকে তাকিয়ে বললো……….
আদ্র আমি এ ছেলেকে চিনি না। বিশ্বাস করো আমি বাইরের কাউকে আমার নাম্বার দেইনি। কে এসব করছে আমি জানি না আদ্র। তুমি কিছু বলছো না কেনো রাগ করেছো? আমি সত্যি…..
আদ্র আরুর হাত টেনে নিজের কাছে নিয়ে বললো……..এই পাগলি এতো ঘাবড়ে যাচ্ছো কেনো? চোখে পানি কেনো হুম পানি মুছে ফেলো জলদি। একদিন না বলেছি তোমার কান্না আমার সহ্য হয় না। আমি তোমাকে অবিশ্বাস করছি না। যে যা খুশি বলুক আমার আরুর উপর থেকে আমার বিশ্বাস হারাবে না।
বাড়িতে এসে আরু গাড়ি থেকে নামতেই আবারো সেই নাম্বার থেকে কল আসলো আদ্র ইশারা করলো ধরতে। আরু ফোন রিসিভ করলো ওপাশ থেকে বললো…….
আরিশা বেবি তুমি এলে না কেনো? কতক্ষণ অপেক্ষা করলাম। ভেবেছিলাম দেখা করবো কাছাকাছি আসবো দুজনে কিছুই হলো না।তোমাকে আমি অনেক আদর দিবো ওই আদ্রর থেকেও বেশি। কাল দেখা করবে কেমন।
আদ্র আরুর থেকে ফোন নিয়ে বললো……..তোর ভাগ্য ভালো তুই এখনো স্বাভাবিক ভাবে কথা বলতে পারছিস। নিজেকে খুব চালাক ভাবিস তাইনা? তুই এবং তোর পেছনে যে আছে সে খোজ বেড় করতে আমার বেশি সময় লাগবে না। কি ভেবেছিলি এসব শুনে আমি আরুকে ভুল বুঝবো? আগে না বুঝে ভুল করেছি বাট আর না। আর তোকে শুধু একবার সামনে পাই তোর জিভ টেনে ছিড়ে ফেলবো আমার আরুকে বাজে কথা বলার স্বাদ মিটে যাবে।
আদ্র খুব রেগে কথাগুলো বলছিলো আরু ভয় পেয়ো চুপ করে দাড়িয়ে আছে। আদ্র আরুকে একহাতে জড়িয়ে নিয়ে বললো……..ভয় পেয়ো না আমি তোমাকে অবিশ্বাস করি নি। আমি আছি তো কে বা কারা এসব করছে আমি খোজ নিচ্ছি শীঘ্রই জেনে যাবো। ভেতরে চলো।
আদ্রর ফোনে কল আসতেই আদ্র রিসিভ করলো ওপাশ…………
ওকে থ্যাংক ইউ সো মাচ,রাখছি।
আদ্র মৃদু হেসে বললো…….অবশেষে আমার আইডিয়াটাই ঠিক হলো।
·
·#তোকে_অনেক_ভালোবাসি (পর্ব ২৬)
#মেঘা_আফরোজ
·
·
·
রুমে বসে আদ্রর জন্য অপেক্ষা করছি কিন্তু উনার আসার নামই নেই। মনিকাদের বাসা থেকে ফিরে আমাকে রেখে বেড় হলো কোথায় গেলো উনি?
আমাকে তখন কে ফোন দিয়ে ওসব বলেছিলো সেটাও মাথা থেকে বেড় করতে পারছি না। তবে এতো কিছু শুনেও যে আদ্র আমাকে এতটুকুও অবিশ্বাস করেনি এতেই আমি অবাক হচ্ছি। রাফিয়ার বন্ধু আমাকে ফুল দিয়েছে বলে ভুল বুঝলো আর আজ এসব শুনেও কিছু বললো না!!
ওদিকে আদ্র বাইরের কাজ সেরে ছাদে গিয়ে অন্য একটা নাম্বার থেকে সেই ম্যাসেজ করা নাম্বারে কল দিলো। কয়েকবার রিং হওয়ার পড় রিসিভ হলো।
হ্যালো কে বলছেন??
আমাকে তুমি চিনবে না। তুমি রাফিয়া তো??
হুম আমিই রাফিয়া। আপনি কে আমার নাম জানলেন কি করে??
মুহুর্তেই আদ্রর চোখ লাল হয়ে উঠলো হাতের মুঠো শক্ত করে নিজের রাগটা কনট্রোল করে বললো……..সেসব না হয় পরে জানবে।
আদ্র ফোন কেটে দিলো। আদ্র যাকে নাম্বারটার লোকেশন জানতে বলেছিলো সে জানায় এ নাম্বারটার লোকেশন আদ্রদের বাড়ির মধ্যেই দেখাচ্ছে। আর সে ছেলেটিকেও ধরতে সক্ষম হয়েছে আদ্র। আদ্র ছেলেটিকে এখনো কিছু বলেনি শুধু ওর মুখ বন্ধ রাখতে বলেছে। যার কথামত একাজ করেছে তাকে যেনো কিছু না বলে।আদ্র রাফিয়াকে সন্দেহ করেছিলো আর লোকেশন জানার পর ও ধরেই নিয়েছে এর পেছনে রাফিয়া আছে। তাও পুরোপুরি ভাবে সিওর হতে ফোন দিয়ে রাফিয়ার নামটা জেনে নিলো।
আদ্র ভাবছে এই রাফিয়ার মুখোশ সবার সামনে কিভাবে খোলা যায়। কিছু একটা ভেবে আদ্র বাকা হেসে বললো……..রাফিয়া তোর মুখোশ তো আমি খুলবোই তার জন্য একটু অভিনয় করতে হবে আমার।
আদ্র ছাদ থেকে সোজা নিচে নেমে এলো। রাত তখন ১০:৪৩ বাজে। এর মাঝে আরু ফোন দিয়েছিলো আদ্র বলেছে দেরি হবে ফিরতে। আদ্র যে বাড়িতেই আছে এটা আরু জানে না,আদ্র ইচ্ছে করেই বলেনি। ও চায় রাফিয়ার সব সত্যি সামনে এনে তারপর আরুকে জানাবে।
.
.
আদ্র রাফিয়ার রুমে দরজায় দাড়িয়ে নক করলো। রাফিয়া দরজা খুলে আদ্রকে দেখে অবাক হয়ে বললো…….আদ্র তুমি এতো রাতে!!
হুম কেনো আসতে পারি না বুঝি? সরে দাড়া ভেতরে যেতে দে।
আদ্র রাফিয়ার রুমে এসে বেডের একপাশে বসলো রাফিয়া ওর সামনে দাড়িয়ে বললো…….আদ্র আমি ভাবতে পারছি না তুমি এ সময় আমার রুমে আসবে। আচ্ছা আরিশার সাথে ঝগড়া হয়েছে নাকি??
আদ্র মন খারাপের ভঙ্গিতে বললো………আর ঝগড়া। ওকে খুব বিশ্বাস করেছিলাম কিন্তু ও আমাকে ঠকালো।
রাফিয়া হুট করে আদ্রর হাত ধরে নিলো। আদ্র ইচ্ছে করছিলো রাফিয়ার গালে ঠাটিয়ে চড় মারতে। কিন্তু এখন এটা করা যাবে না ওকে যা বলার বাড়ির সকলের সামনে বলবে।
রাফিয়া আদ্রর হাতে নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বললো……আদ্র আরিশা সত্যি ভালো মেয়ে নয় ওকে বিয়ে করে তুমি ভুল করেছো। আমি বলিকি তুমি ওকে ডিভোর্স দাও। আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি আদ্র আমি তোমার হয়ে থাকতে চাই।
কি বলছিস তুই আমাকে ভালোবাসিস!!
হ্যা হ্যা খুব ভালোবাসি তোমাকে আমি চেয়েছিলাম তোমাকে বলবো কিন্তু তার আগেই ওই মেয়ে তোমাকে নিজের প্রেমের জালে ফাসিয়ে বিয়ে করে নিলো। আরিশাকে আমার মটেও সহ্য হয় না তাছাড়া ওর অন্য ছেলের সাথে রিলেশন আছে।
আরুর যে অন্য ছেলের সাথে রিলেশন আছে এ কথা তো তোকে বলিনি কি করে জানলি??
ও ওই তো মনে হলো আর কি তুমিই তো বললে আরিশা তোমাকে ঠকিয়েছে। আদ্র তুমি আরিশাকে ছেড়ে আমাকে বিয়ে করো খুব ভালো থাকবো আমরা।আর শোনো বাড়ির সবাইকে বলবো আরিশা ভালো মেয়ে নয় অন্য ছেলের সাথে রিলেশন আছে। বাড়িতে কেউ না থাকলে ও সেই ছেলেকে বাড়িতে ডেকে নেয় আর ফোনে যোগাযোগ করে যেখানে সেখানে দেখা করে।
রাফিয়া এসব কথা বাড়ির সকলের সামনে বলতে পারবি??
তোমার জন্য আমি সব করতে পারি আর সকলের সামনে বলাটা কোনো ব্যাপার না যদি তুমি আমার সামনে থাকো।
তো আর কি কি করতে পারবি আমার জন্য??
তুমি যা বলবে তাই করবো তবে তার বিনিময়ে আমি তোমাকে চাই।
আদ্র মনে মনে ভাবছে………আমি আরুকে বোকা বলি এই রাফিয়া তো দেখছি ওর থেকেও বোকা অল্পতেই ইমোশনাল হয়ে পড়ে। আমার আরুকে খারাপ বলা তাইনা তুই শুধু কাল সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা কর দেখ আমি কি করি।
.
.
আদ্র রুমে এসে দেখে আরু গুটিশুটি হয়ে শুয়ে ঘুমিয়ে আছে। আদ্র আর আরুকে জাগালো না আরুকে বুকে নিয়ে জড়িয়ে নিজেও ঘুমিয়ে পড়লো।
আরুর সকালে ঘুম ভাঙতেই দেখলো আদ্র ওকে বুকে জড়িয়ে ঘুমাচ্ছে। রাতে আদ্রর জন্য অপেক্ষা করতে করতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছিলো বুঝতে পারেনি। সকালে ঘুম ভেঙে আদ্রকে দেখে আরুর মুখে হাসি ফুটে উঠলো। আরু আদ্র কপালে ঠোঁট ছুইয়ে উঠে যেতে নিলে আদ্র ওকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। চোখ বন্ধ করে মুচকি হেসে বললো………
আরু আমার ঘুমের সুযোগ নিয়ে এটা করো তুমি তাইনা??
আরু লজ্জা পেয়ে বললো………কই আমি কিছু করিনি তো।
মিথ্যে বলছো কেনো হুম। আমার কপালে তোমার ওই নরম ঠোঁট ছোয়ালে আমি তো জেগে ছিলাম তুমি কি করো দেখার জন্য ঘুমের ভান করেছিলাম।
আরু নিজেকে ছাড়ানোর জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়লো। আদ্র আরুকে শুইয়ে দিয়ে ওর গলায় মুখ গুজে বললো………তোমার শরীরের স্মেলটা এতো সুন্দর কেনো বলোতো? আমাকে মাতাল করে দেয় এ স্মেল। ইচ্ছে করে এভাবেই তোমাকে জড়িয়ে রাখি সব সময়।
এই ছাড়ো তো কতো বেলা হয়েছে আমাকে আজ ভার্সিটি যেতে হবে।
উহু আজও যাবে না তুমি আমিও অফিস যাবো না আজ।
কেনো আজ আবার কি আছে??
সময় হলেই দেখতে পাবে। এখন নড়াচড়া করো না তো।
ছাড়ো তো উঠবো আমি।
আদ্র আরুর মুখের দিকে তাকিয়ে বললো………ঠিকআছে ছাড়ছি তবে……
তবে কি??
আদ্র আরুর ঠোঁটে চুমু খেয়ে বললো…..তবে এটাই যাও উঠো।
আরু ছাড়া পেয়ে জোরে শ্বাস নিয়ে ফ্রেস হতে চলে গেলো।
.
.
আদ্র ওর বাবা আর আরুর বাবাকে বলেছে আজ একটু দেরি করে বেড় হতে। বাড়ির সবাই ড্রয়িংরুমে বসে আছে আদ্র আরিশা নিয়ে নিচে এলো। তারপর আদ্র জোরে জোরে রাফিয়াকে ডাকতে লাগলো।
আদ্রর মা বললো…….আদ্র রাফিয়াকে ডাকছিস কেনো??
এলেই বুঝতে পারবে।
রাফিয়া হাসি মুখে এসে আদ্রর সামনে দাড়িয়ে বললো…….কি ব্যাপার ডাকছো কেনো??
কাল রাতে আমাদের মাঝে কি কথা হয়েছিলো সবাইকে বলতে হবে তো তাই ডেকেছি। নে বল সবাইকে।
রাফিয়া একটু পিছিয়ে গিয়ে ঢোক গিলে বললো…….আদ্র তুমি বলো না।
আমি কেনো বলবো তুই আমাকে কতোটা ভালোবাসিস এটা তুই নিজেই সবাইকে বল।
উপস্থিত সবাই অবাক হয়ে তাকালো রাফিয়ার দিকে,আরিশা আদ্র কাছে এসে বললো……..এসব কি বলছো তুমি??
এক্ষুনি বুঝতে পারবে সব। অয়ন ভেতরে এসো।
অয়ন নামটা শুনে রাফিয়া চমকে উঠলো। সবার নজর দরজার দিকে অয়ন মাথা নিচু করে আদ্রর পাশেই দাড়ালো।
আরে এ তো সেই ছেলেটি রাফিয়া আপুর বন্ধু উনিই সেদিন ফুল দিয়েছিলো আমাকে।
আদ্রর বাবা বললো…….আদ্র কি হচ্ছে এসব?
বলছি বাবা। রাফিয়া তুই নিজে সবটা বলবি নাকি আমি বলবো??
আদ্র আমি কি বলবো আমি তো কিছু করিনি।
আমি তো একবারো বলিনি তুই কিছু করেছিস। নিজের মনের কথাটা তাহলে এভাবেই বেড়িয়ে আসে যেমনটা কাল রাতে বলেছিস।
আদ্র দেখো আমাদের কথা এমন ছিলো না কিন্তু।
আদ্র এবার রেগে বললো…….তো কেমম কথা ছিলো বল। আরুকে আমার কাছে খারাপ বানানো এটাই তো উদ্দেশ্য ছিলো তাইনা??
.
.
সবাই স্তব্ধ হয়ে দাড়িয়ে আছে আদ্রর কথা কারো মাথায় ঢুকছে না। আরুর বাবা বললো…….আদ্র এ কি বলছিস তুই রাফিয়া আরিশাকে খারাপ বানাবে কেনো??
কারন রাফিয়া নাকি আমাকে ভালোবাসে তাই ও যে কোনো মূল্যে আমাকে চায়। আরুকে ভয় পাওয়ানোর জন্য ম্যাসেজ পাঠায়। এমনকি আরুকে আমার কাছে খারাপ প্রমাণিত করার জন্য অন্য ছেলেকে দিয়ে আরুকে ফোন দিয়ে বাজে কথা বলায় যেনো আমি আরুকে ভুল বুঝি। রাফিয়া আরু তোর ছোট বোন তোর কি একটুও বাধলো না এসব করতে??
রাফিয়া আদ্রর বাবার কাছে গিয়ে বললো……..মামা এসব মিথ্যে আমি আদ্রকে ভালোবাসি তাই আরিশা ওকে দিয়ে এসব করাচ্ছে তোমাদের কাছে আমাকে খারাপ বানাচ্ছে।
আদ্র রাফিয়াকে নিজের দিকে ঘুড়িয়ে জোরে থাপ্পড় মারলো ওর গালে রাগে ওর চোখ লাল হয়ে গেছে।……তুই আবারো আমার আরুকে নিয়ে মিথ্যে বলছিস। তুই এতোটা নিচে নেমে গেছিস যে একটা অসহায় ছেলেকে তোর এই পাপ কাজে লিপ্ত করেছিস। অয়ন রাফিয়া তোমাকে কি করতে বলেছিলো বলো সব।
রাফিয়া আমাকে বলেছিলো সেদিন আরিশাকে ফুল দিতে উনি পেছন থেকে সে ছবি তুলে আপনাকে দেখাবে। আর ফোনও আমি করেছিলাম রাফিয়া যেভাবে বলতে বলেছে সেভাবেই বলেছি। ভাই বিশ্বাস করেন আমি নিরুপায় ছিলাম। আমার মা হসপিটালে ভর্তি অনেক টাকা লাগতো। রাফিয়া আমাকে বলেছিলো এসব করলে উনি টাকা দেবে আমাকে। আমি আমার মাকে বাচানোর জন্য এমন একটা কাজ করতে বাধ্য হয়েছি।
অয়ন আরিশার সামনে গিয়ে মাথা নিচু করে বললো…….আপু প্লিজ আমাকে মাফ করে দেন।
রাফিয়া চেঁচিয়ে বললো…….এই ছেলে আমাকে ফাসানোর জন্য মিথ্যে বলছো তাইনা।
আমি মটেও মিথ্যে বলছি না। আমি ভুল করেছি আপনার মতো মেয়ের সঙ্গ দিয়ে। আদ্র ভাই আমার মায়ের চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছে। অনেক বড় পাপ করেছি আমি আরিশাকে ওসব বলে এতকিছুর পরেও আদ্র ভাই আমাকে ক্ষমা করে আমার পাশে দাড়িয়েছে। এই নিন আপনার টাকা।
অয়ন রাফিয়ার মুখের উপর টাকা ছুড়ে মারলো। আদ্র নিজের ফোন বেড় করে রাফিয়ার সাথে রাতে কি কথা হয়েছে সবাইকে রেকর্ডিং শোনালো।
আরিশার বাবা রাফিয়ার সামনে এসে বললো……..রাফিয়া আমি আরিশাকে যতোটা ভালোবাসি তোকেই ততটাই ভালোবাসি আর তুই কি করলি এটা। আমার মেয়ের সংসার তুই এভাবে নষ্ট করতে চাইছিলি। আমার মেয়েটাকে তুই আদ্রর চোখে খারাপ করতে ওই ছেলেটাকে দিয়ে ছি।
মামা আমি……
আরিশার বাবা রাফিয়াকে চড় মেরে বললো……..খবরদার আমাকে মামা বলবি না। এখনি বেড়িয়ে যাবি তুই এ বাড়ি থেকে।
আদ্রর বাবা মা আরিশার বাবা মা রাফিয়াকে অনেক কথা শোনালো।
আরিশা এতক্ষণ চুপ করে সব শুনছিলো। রাফিয়াকে ও দেখতে পারতো না ঠিকি কিন্তু এমন একটা কাজ যে ও করবে আরিশা ভাবতে পারছে না। আরিশার চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ছে রাফিয়া সামনে গিয়ে শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো……….
আমি তো তোমার ছোট বোন একটুও কি মনে হয়নি তুমি আমার নয়,নিজের ক্ষতি করছো। এটাকে তো ভালোবাসা বলে না আপু। এটাকে জেদ বলে। তুমি যদি আদ্রকে সত্যি ভালোবাসতে তাহলে চাইতে উনি ভালো থাকুক। কিন্তু তুমি কি করলে? তোমাকে আপু বলে ডাকতেও আমার ঘৃণা হচ্ছে।
.
.
আদ্র অথইকে দিয়ে রাফিয়ার ব্যাগ গুছিয়ে নিয়ে এলো। আদ্র ওর বাবার সামনে গিয়ে বললো…….বাবা তুমি তে জানো আমি আরুকে কতোটা ভালোবাসি। দেখো আরু কাঁদছে এই বেয়াদব মেয়েটার জন্য কাঁদছে। আমি চাই এই মেয়ের ছায়া আর কোনোদিন এ বাড়িতে না পরুক বিশেষ করে আমার আরুর উপর। আমি চাই না ওর কারনে ফুপি আমাদের থেকে দূরে সরে যাক। ফুপিকে বলেছি আসতে সব বুঝিয়ে বলে এই বেয়াদবটাকে দূর করো এ বাড়ি থেকে।
আদ্রর বাবা ওর কাধে হাত রেখে বললো……..আমি তোর ফুপিকে সব বলবো। আমার ছেলের হাসি খুশিটাই তো আমার কাছে সব।
আরিশা ওর মাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে। আদ্রর মা আরিশার মাথায় হাত বুলিয়ে বললো……..আরিশা সব ঠিক হয়ে গেছে কাঁদিস না মা। এই আদ্র আরিশাকে নিয়ে রুমে যা তোর ফুপি এলে আমরা যা বলার বলবো।
আদ্র অয়নকে বললো……..এমন ভুল আর কখনো করো না যাও তোমার মায়ের কাছে যাও। টাকা লাগলে আমাকে বলবে। আদ্র আরিশাকে নিয়ে রুমে চলে গেলো।
আদ্রর ফুপি আসার পর আদ্রর মা সব কিছু বললো। আদ্রর ফুপিও খুব লজ্জিত মেয়ের কাজে। নিজের ভাইয়ের বাড়ির সবার কাছে মাথা উচু করে দাড়ানোর আর কোনো পথ থাকলো না। নিজের মেয়ের হয়ে সবার কাছে ক্ষমা চেয়েছে।
আরিশার বাবা বললো……..অদিতি তুই ক্ষমা চাইছিস কেনো। আমাদের ছোট বোন তুই কখনো ভাববি না আমরা তোকে ভুল বুঝেছি। রাফিয়া যা করেছে এতে তো তোর কোনো দোষ নেই। তোর সাথে আমাদের সম্পর্ক যেমন ছিলো তেমনি থাকবে। মন খারাপ করিস না বোন।
আদ্রর ফুপি জানে ভাইয়েরা উনাকে খুব ভালোবাসে। শুধু মাত্র রাফিয়ার জন্য আজ এমন একটা পরিস্থিতিতে পড়তে হলো।
আরিশা আদ্রর বুকে মাথা রেখে বসে আছে। আদ্র আরিশার মাথায় হাত বুলিয়ে বললো……..আরু সোনা মন খারাপ করে আছো কেনো?
রাফিয়া আপু এসব করতে পারলো আদ্র!!
ভুলে যাও, এসব ভেবে আর মন খারাপ করো না। যাই হয়ে যাক না কেনো আমি তোমার পাশে আছি এবং থাকবো।
আরিশা আদ্রকে আরে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো আদ্র ওকে জড়িয়ে ধরে মুচকি হেসে বললো…….আরু তোমাকে আজ ফুচকা খাওয়াতে নিয়ে যাবো। যাবে তো?
আরিশার মন যতোই খারাপ থাক ফুচকার কথা শুনলে ওর মন ভালো হয়ে যাবে। তাই আদ্র ওর মন ভালো করতে ফুচকার কথা বললো।
শুধু ফুচকা??
আর কি খেতে চাও বলো??
আইসক্রিম খাবো আর….
আর কি??
পরে বলবো শোনো অথইকেও নিয়ে যাবো।
আমাদের মাঝে অথই কেনো??
আমি বাইরে গিয়ে মজা করে ফুচকা আইসক্রিম খাবো আর আমার বোনুটা বাড়িতে থাকবে না সেটা হবে না।
আমার বউ দেখছি ননদ ভক্ত হয়ে গেছে।
এই শোনো ও আমার ননদ ঠিকি কিন্তু তার আগে ও আমার বোন বুঝেছো?
হ্যা বুঝেছি। ঠিকআছে বিকেলে দুজনেই রেডি হয়ে থেকো। এখন একটা মিষ্টি দাও তো।
আরিশা হুট করে আদ্রর গালে কিস করে দৌড়ে বেড়িয়ে গেলো রুম থেকে। আদ্র হা করে তাকিয়ে আছে ও ভেবেছিলো আরু হয়তো লজ্জা পাবে। বলার সাথেই এভাবে কিস করে পালাবে ভাবতে পারে নি!!
·
·
·
চলবে…………………………
·
চলবে……………………..