তোকে অনেক ভালোবাসি পর্ব ২৩+২৪

#তোকে_অনেক_ভালোবাসি (পর্ব ২৩)
#মেঘা_আফরোজ
·
·
·
আরু আদ্রর নাম্বারে কয়েকবার ফোন দিলো আদ্র ফোন তুলছে না। আরু ফোনের ম্যাসেজ অপশনে গিয়ে ম্যাসেজটা আবারে পড়লো ওখানে লেখা ছিলো………

কেমন আছো আরিশা? নিশ্চই ভালো। হুম ভালো থাকারি কথা নিজের ভালোবাসার মানুষটাকেই যে বিয়ে করতে পেরেছো। কিন্তু আমি তো ভালো নেই কি করে ভালো থাকি বলো তুমি যে আমার ভালোবাসাকে কেড়ে নিয়েছো আমার আদ্রকে কেড়ে নিয়েছো। খুব সুখে আছো তাইনা? হ্যা এতো দিন এ সুখে থাকার সুযোগটা আমি তোমাদের দিয়েছিলাম। কিন্তু আর না তোমাদের এ সুখ আমার সহ্য হচ্ছে না। প্রতিনিয়ত আমি জ্বলে পুরে মরছি তোমাদের প্রেমময় জীবন কাঁটাতে দেখে। আদ্র শুধুই আমার হবে কথাটা মাথায় ঢুকিয়ে নাও। আর শোনো খুব তাড়াতাড়ি আমি তোমাদের কাছে আসছি। বাই আরিশা বোনটি।

আরিশা ফোন বেডে ছুড়ে ফেলে ভাবতে লাগলো কে হতে পারে এটা।

আরিশা নিজে নিজে বলতে লাগলো…….
আদ্রকে আমি অনেক ভালোবাসি উনাকে কেউ আমার থেকে আলাদা করতে পারবে না কেউ না। সবই তো ঠিক ছিলো হঠাৎ এ কিসের ছায়া পড়তে চলেছে আমার আদ্রর জীবনে। কে করতে পারে এই ম্যাসেজ? নিশা আপু নয়তো? নিশা আপু তো আদ্রকে ভালোবাসতো। নাহ এ কি ভাবছি আমি,নিশা আপু এমনটা করবে না। যদি নিশা আপু না হয় তাহলে কে এই মেয়ে? আর আমাকে বোনটি কেনো বললো? নিশা আপু আমার নাম বলেই ডাকতো।
তবে বোনটি বলে একমাত্র রাফিয়া আপু ডাকতো মাঝে মধ্যে।তাহলে কি রাফিয়া? কিন্তু ওর আচরনে তো কখনো মনে হয়নি আদ্রকে ভালোবাসে। উফ আর ভাবতে পারছি না সব যেনো গুলিয়ে যাচ্ছে।

আরু আবারো আদ্রকে ফোন দিলো এবার ওপাশ থেকে ফোন কেটে দিলো। আরুর চিন্তা যেনো শতগুনে বেড়ে গিয়েছে। কি করবে কিছুই বুঝতে পারছে না। কিছুক্ষণ ঝিম মেরে বসে থেকে ফোনটা হাতে নিয়ে আদ্রর বাবার নম্বারে ফোন দিলো। দুবার রিং হতেই রিসিভ হলো ওপাশ থেকে বলে উঠলো………

আরিশা হঠাৎ ফোন দিলে যে কোনো প্রবলেম??

আরু নিজেকে স্বাভাবিক করে নরম ভাবেই বললো…….না বাবা কোনো প্রবলেম নেই আসলে আপনার ছেলে ফোন ধরছে না তাই….

ওহ আদ্র তো একটা ইমপর্টেন্ট মিটিং এ বিজি আছে তাই হয়তো ফোন তুলছে না। ও বের হলে কল ব্যাক করতে বলবো। তুমি ভার্সিটি থেকে ফিরেছো?

হ্যা বাবা আমি কিছুক্ষণ আগেই বাড়িতে এসেছি। আচ্ছা বাবা রাখছি এখন।

আরুর বুকটা একটু হালকা হলো কেনোনা আদ্র অফিসে মিটিং এ বিজি আছে। আদ্র এলেই সব বলবে ওকে। টেনশনের মাঝে আরু ভুলেই গিয়েছে যে নাম্বার থেকে ম্যাসেজ এসেছে সে নাম্বারে ফোন দিতে।
আরু ওই নাম্বারে ফোন দিলো বন্ধ ছিলো সে নাম্বার।
.
.
রাত ৮ টার পর আদ্র বাড়িতে এলো রুমে এসে আরুকে শুয়ে থাকতে দেখে ওর পাশে গিয়ে বসলো।

আরু তুমি এ সময় শুয়ে আছো যে শরীর খারাপ লাগছে??

আরু আদ্রর দিকে ঘুরে বললো……..না আমি ঠিক আছি এমনি শুয়ে আছি। তুমি যাও চেঞ্জ করে ফ্রেস হয়ে নাও।

আরু এখন কিছু বললো না আদ্রকে মাত্র ফিরেছে এখনি টেনশন দেওয়া ঠিক হবে না। আদ্র ফ্রেস হতে চলে গেলো আরু নিচে চলে এলো ডিনারের ব্যবস্থা করতে।

আদ্র বেডে বসে ল্যাপটপে কাজ করছে। আরু সবার খাওয়া শেষে রুমে এলো দরজাটা আটকে আদ্রর পাশে বসলো। আদ্র ল্যাপটপে কাজ করতে করতে বললো……..

আরু কি হয়েছে এসে থেকে দেখছি তেমন কথা বলছো না। দুপুরে ফোন ধরি নি বলে রাগ করেছো??

না রাগ করি নি। তুমি কাজ করো আমি ব্যালকনিতে যাচ্ছি।

আরু চলে গেলো আদ্র ল্যাপটপ অফ করে নিজেও ব্যালকনিতে গেলো। আরু রেলিং ধরে সামনে তাকিয়ে আছে। সব কিছুই যেনো বিষন্ন লাগছে বারবার মনে হচ্ছে আদ্রকে হারিয়ে ফেলবে।
আদ্র পেছন থেকে আরুকে জড়িয়ে ধরলো আরু কিছুটা চমকে উঠে আবার স্থির হয়ে দাড়ালো। আদ্র আরুর ঘারে মুখ গুজে বললো………

আমার বউটার মন খারাপ থাকলে যে আমার ভালো লাগে না সে কি তা জানে?? বলনা কি হয়েছে বাড়ির কেউ কিছু বলেছে তোমাকে??

আরু আদ্রর দিকে ঘুরে হঠাৎ করেই আদ্রকে জড়িয়ে ধরলো দুহাতে আদ্রর টি শার্ট খামচে ধরে বললো……..আমাকে বাড়ির কেউ কিছু বলেনি। আমি সত্যি মন খারাপ করতে চাইনা আদ্র কিন্তু আমি যে নিজেকে ঠিক রাখতে পারছি না। আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি আদ্র। আমার অস্তিত্বে তুমি মিশে গিয়েছো আমি তোমাকে ছেড়ে বাঁচতে পারবো না।

আরুর মুখে এমন কথা শুনে আদ্র অবাক হলো! আরুকে বুক থেকে তুলে ওর চোখের দিকে তাকিয়ে বললো……..আমিও তো তোমাকে অনেক ভালোবাসি আরু। তোমাকে ছাড়া বাঁচার আশা আমিও করি না। তুমি হঠাৎ এ কথা কেনো বলছো কি হয়েছে বলো আমাকে??

আরু নিজের ফোন থেকে আদ্রকে ম্যাসেজ টা দেখালো আদ্র ভাবতে লাগলো এমন ম্যাসেজ কে দিতে পারে? ওর মাথায়ও নিশার কথা এলো।
আদ্র আরুকে শান্তনা দিয়ে বললো……আরু এটা হয়তো কেউ মজা করে করেছে তোমাকে ভয় পাওয়ানোর জন্য। এই সামান্য ব্যাপারে এতো ভেঙে পড়তে হয় নাকি হুম। আমাকে তোমার থেকে কেউ কেড়ে নেবে আর আমি চলে যাবো এটা ভাবলে কি করে? আমি যে এই পাগলিটাকে নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসি বুঝেছো তুমি? আমি তোমার গোমড়া মুখটা দেখতে চাইনা আমার আরুর মুখে হাসি দেখতে চাই।

আদ্র আরুকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। আরু যেনো নিজের শান্তি খুজে পেয়েছে এ বুকটা যে আরুর জন্য পরম সুখের জায়গা।
.
.
কেঁটে গেলো আরো দুই দিন এর মধ্যে আরুর ফোনে আর কোনো ম্যাসেজ আসে নি। আরু এবার ভেবেই নিয়েছে এটা মজা করেই করেছে কেউ। আদ্র এ নিয়ে আর কিছু বলেনি তবে নিশাকে একটু সন্দেহ করেছিলো। নিশার খোজ নিয়ে জানা গেছে নিশা প্রায় ৫ মাস আগে দেশের বাহিরে চলে গিয়েছে। যে নাম্বার থেকে ম্যাসেজ এসেছিলো ওটা বাংলাদেশের নাম্বার এটা যে নিশা করে নি বুঝাই যাচ্ছে।

ভার্সিটি থেকে ফিরে এসে দেখালাম রাফিয়া এসেছে। ওকে এমনি আমার সহ্য হয় না। তারপরে এবার একা এসেছে ফুপিও আসে নি ফুপি থাকলে ওর ন্যাকামো গুলো কম দেখা যায় এবার কি করবে কে জানে। কিন্তু হঠাৎ একা এলো কেনো ও তো ফুপিকে ছাড়া আসে না। ধুর আসতেই পারে ওর মামা বাড়ি এটা আমার এতো ভেবে কাজ নেই।
রাফিয়া আমার থেকে বড় তাই আপু বলেই ডাকতে হয় তবে ওকে আপু ডাকতে মটেও ইচ্ছে করে না আমার।
রাফিয়ার সাথে টুকটাক কথা বলে উপরে আসতে নিলে রাফিয়া বলে উঠলো……..

আরিশা বিয়ে তো করে ফেললে কাউকে না জানিয়ে তাও আবার নিজের বড় চাচ্চুর ছেলেকে। তো আমাকে ট্রিট দিচ্ছো কবে??

কিসের ট্রিট??

কিসের আবার তোমাদের বিয়ের।

এ বাড়িতে এসেছো থাকে ঘুরো খাও মনে করে নিয়ো এসবই আমাদের বিয়ের ট্রিট।

আমি আর না দাড়িয়ে উপরে চলে এলাম। তবে রাফিয়ার ব্যবহার কেমন যেনো লাগলো। কথা বলছিলো কেমন তাচ্ছিল্যের স্বরে। ওর মধ্যে সেই আগের ন্যাকামো ভাবটা একটুও নেই। হঠাৎ এতো চেঞ্জ হলো কি করে? তাছাড়া রাফিয়া তো আমাকে তুই করে বলতো আগে আজ তুমি করে বললো! যাক চেঞ্জ হলেই ভালো না হলে তো ওকে আমার সহ্যই হতো না।

রাতে পড়ছিলাম আদ্র এসে আমার সামনে দাড়িয়ে তাকিয়ে আছে আর মিটমিট করে হাসছে।

কি দেখে হাসছো??

তোমাকে দেখছি।

এতো দেখার কিছু নেই যাও আমাকে পড়তে দাও।

তুমি পড়ো বাধা দিয়েছি নাকি আমি তো চুপ করে দাড়িয়ে আছি।

তুমি এখানে থাকলে আমার একটুও পড়া হবে না যাও বলছি।

আদ্র অভিমানি স্বরে বললো……..কি বউরে বাবা! ঠিকআছে যাচ্ছি থাকলাম না তোমার সামনে।

আদ্র ফোন হাতে নিয়ে ব্যালকনিতে চলে গেলো। উনার কান্ড দেখে ফিক করে হেসে উঠলাম….পাগল একটা।

পড়া শেষ করে বই গুছিয়ে রাখছিলাম। রাফিয়া দরজায় দাড়িয়ে বললো…….আসতে পারি।

হুম এসো।

রাফিয়া বেডে পা ঝুলিয়ে বসে বললো…….পড়ছিলে বুঝি। আচ্ছা আদ্র কোথায়??

আমি ভ্রু কুঁচকে রাফিয়ার দিকে তাকালাম। ফাজিল মাইয়া একটা,এখনো আমার বরের নাম ধরে বলে সাহস কতো। ইচ্ছে তো করছে তোর চুল গুলো ছিড়ে দিতে।
রাফিয়া আপু আদ্র না তোমাকে ভাইয়া ডাকতে বলেছে?

রাফিয়া বিড়বিড় করে বললো…….ওকে ভাইয়া ডাকতে আমার বয়েই গেছে।

আপু কিছু বললে??

কই না তো কিছু বলি নি। তো আরিশা কেমন চলছে তোমাদের বিবাহিত জীবন সুখে আছো তো??

হুম খুব ভালো চলছে সুখেই আছি।

রাফিয়ার সাথে কথা বলতে বিরক্ত লাগছিলো আমার। আদ্র রুমে এসে আমাকে কিছু বলতে চেয়ে রাফিয়াকে দেখে থেমে গেলো। মুখে হাসি ফুটিয়ে আমার পাশে এসে দাড়ালো তারপর রাফিয়াকে বললো……..

রাফিয়া আমার বউকে পছন্দ হয়েছে??

আমি উনার দিকে তাকালাম যেভাবে বলছে মনে হচ্ছে রাফিয়া আমাকে চেনে না আজ নতুন দেখছে। রাফিয়া একটু চুপ থেকে বললো…….হুম খুব পছন্দ হয়েছে।

আদ্র আমাকে একহাতে জড়িয়ে বললো……পছন্দ তো হতেই হবে দেখতে হবে না কার বউ।

রাফিয়া কিছুই বললো না শুধু আড় চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বেড়িয়ে গেলো রুম থেকে। আদ্র অবাক হয়ে বললো……..

কি হলো,রাফিয়া এভাবে চলে গেলো কেনো??

যাবে না তো কি করবে ওর সামনে এভাবে জড়িয়ে ধরেছো কেনো? আমাকে বুদ্ধিহীন বলো এখন দেখছি তুমি নিজেই বুদ্ধিহীন। ছাড়ো আমাকে।

ছাড়ার জন্য তো ধরি নি সোনা। বলেই আরো কাছে টেনে নিলো।

ওদিকে কেউ একজন রাগে ফুসছে দুহাতে নিজের চুল টেনে দাঁতে দাঁত চেপে বলতে লাগলো……..আমি পারছি না ওদের এতো ভালোবাসা সহ্য করতে। আদ্র আমার হবে আরিশাকে তো আমি আদ্রর থেকে আলাদা করবোই। শুধু একটা সুযোগের অপেক্ষায় আছি।
আরিশা আমি বুঝতে পারি তুমি আমাকে পছন্দ করো না তাতে আমার প্রবলেম নেই। বাট তুমি আমার ভালোবাসাকে নিজের মনের কথা বলার আগেই কেড়ে নিয়েছো তার জন্য যে তোমাকে কষ্ট পেতে হবে মাই সুইট বোনটি।
·
·#তোকে_অনেক_ভালোবাসি (পর্ব ২৪)
#মেঘা_আফরোজ
·
·
·
আজ ভার্সিটি অফ অনেকটা ফ্রি লাগছে। বাড়িতে আমি রাফিয়া আর অথই আছি। ব্যালকনিতে বসে ফেসবুকিং করছি এমন সময় রাফিয়া এসে আমার পাশে বসলো। আমি একবার ওকে দেখে আবার ফোনের দিকে তাকিয়ে বললাম………

রাফিয়া আপু কিছু বলবে??

হ্যা আসলে

কি বলো?

আসলে আরিশা আমার একটা বন্ধু আসবে বাড়িতে মামিরা নেই তাই তোমাকে বলছি ও এলে কি প্রবলেম হবে??

বন্ধুকে বাড়িতে কেনো আনতে হবে! কিন্তু আমি তো না করতেও পারছি না পরে আবার এটা নিয়ে মাকে বলবে আর মা আমাকে বকবে। এ মেয়েকে দেখা যায় এমন পেটে অনেক প্যাচ।

কি হলো আরিশা ঠিকআছে আমার বন্ধুকে বরং বলে দেই আমার মামা বাড়িতে আসতে হবে না।

না আপু আসতে বলো তবে বেশিক্ষণ যেনো না থাকে। বাড়িতে কেউ নেই আদ্র এসে দেখলে রাগ করবে। আর শোনো আমাকে কিন্তু ডেকো না আবার।

আচ্ছা আমার মিষ্টি বোনটি।
এ কথা বলে বাকা হেসে রাফিয়া চলে গেলো। আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি ওর যাওয়ার দিকে। ওর হাসিটা সুবিধার লাগলো না আবার বোনটি বললো আমাকে! হঠাৎ করেই আবার সেই ম্যাসেজ এর কথা মনে পড়ে গেলো।

হঠাৎ ফোন বেজে উঠলো ফোনের স্ক্রিনে মনি নামটা ভেসে উঠলো। রিসিভ করে কানের কাছে ফোন ধরতেই মনিকা বলে উঠলো………

আরু কেমন আছিস তুই??

আমি তো খুব ভালো আছি। তুই কেমন আছিস? এই মনি তোকে খুশি খুশি লাগছে কেনো??

আমিও অনেক ভালো আছি। খুশির কারনটা এখন বলা যাবে না তুই আদ্র ভাইয়াকে নিয়ে আমাদের বাসায় আয় তারপর বলবো।

সে পরে আসবো,মনি জানু আমার বলনা কি কারন? তুই তো জানিস আমার এতো ধৈর্য নেই। বলনা প্লিজজ?

উফ এ মেয়ের যে ধৈর্য কম এটা কেনো আমার মাথায় ছিলো না।

মনি তুই বলবি নাকি ফোনের মধ্যেই তো নাকটা ফাটিয়ে দিবো।

আরে বলছি এতো হাইপার হচ্ছিস কেনো? আরু তুই খালামনি হতে চলেছিস।

কিহ! মনি তুই সত্যি বলছিস!! আমার যে কি খুশি লাগছে তোকে কি বলবো। দোয়া করি গুলুগুলু কিউটি একটা প্রিন্সেস আসবে,নরম নরম হাতে ছুয়ে দেবে আর আমাকে খালামনি বলে ডাকবে। দারুন হবে ব্যাপারটা।

বা বাহ আরু তুই দেখছি আমার থেকেও বেশি আনন্দিত! নিজে তো লাফাচ্ছিস আমারো তো লাফানো দরকার তাইনা। আমার খালামনি হওয়ার সুযোগটা কবে আসবে শুনি??

মনির কথায় আরুর হাসিটা মিলিয়ে গেলো ও মনে মনে ভাবছে…….আদ্রকে ভালোবেসেছি ঠিকি আপন করেই নিতে পারি নি এখনো আর খালামনি হওয়ার সুযোগ।
আরু হালকা হসে বললো……..

যখন সুযোগ আসবে জানতে পারবি। এখন এটা বল তন্ময় ভাইয়া ও কি তোর মতো খুশি??

আরু কি বলবো তোকে আমার থেকেও বেশি খুশি। বাবা হবে সে কথা শুনে সে কি অবস্থা আমাকে কোলে নিয়ে সারা বাড়ি ঘুরেছে।

ওহ,আচ্ছা মনি আমি তোর সাথে পরে কথা বলবো একটু কাজ আছে।
.
.
মনিকার ফোন কেটে আরিশা ভাবতে লাগলো কয়েক দিন আগের কথা………আদ্র ওর এক ফ্রেন্ডের সাথে ম্যাসেনজারে কথা বলছিলো আর আরু আদ্রর কাধে মাথা রেখে বসে ছিলো। হঠাৎ আদ্র বলে উঠলো…….আরু দেখো বেবিটা কত্ত কিউট।

আরু বেবিটাকে দেখে বললো…….হ্যা অনেক কিউট বেবি। কার বেবি এটা??

নাহিদের মেয়ে আমার ফ্রেন্ড ও। নাহিদ কি বলে জানো? বলে ওর মেয়ে নাকি সারাক্ষণ আধো আধো স্বরে ওকে বাবা বলে ডাকে। রাতে নাকি ওর মায়ের কাছে থাকতে চায় না নাহিদের বুকে শুয়ে ঘুমায়।
ইস কবে যে আমাদের ও একটা বেবি আসবে আমাকে বাবা বলবে,সব সময় এটা সেটা আবদার করবে। নাহিদের মতো বাবা হওয়ার স্বাদ টা আমারো খুব নিতে…….

আরু চোখ বড় বড় করে তাকাতেই আদ্র থেমে কথা ঘুরিয়ে বললো…….আরু এভাবে তাকিয়ে আছো কেনো? আমি এখনকার কথা বলি নি তো।

কথাগুলো ভেবে আরু হেসে উঠলো। আর মনে মনে একটা সিদ্ধান্ত নিলো যা আদ্র আর আরুর বিবাহিত জীবনটা নতুন করে গড়ে তুলবে।
.
.
কলিংবেল বেজে চলেছে কেউ খুলছে না আরু জোরে জোরে অথইকে ডাকলো অথই কোনো সারা দিলো না। হয়তো বাড়ির সবাই চলে এসেছে তাই নিজেই নিচে নেমে এলো দরজা খুলতে।
আরু দরজা খুলতেই দেখলো একটা ছেলে একগুচ্ছো গোলাপ হাতে নিয়ে দাড়িয়ে আছে। অপরিচিত ছেলেকে দেখে আরু কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে বললো……..

কাকে চাই??

আমি অয়ন রাফিয়ার ফ্রেন্ড। রাফিয়া আছে??

জ্বি আছে আসুন।

ছেলেটি ভেতরে আসতে আরু বললো……..আপনি বসুন আমি রাফিয়া আপুকে ডেকে দিচ্ছি।

আরু চলে যেতে নিলে ছেলেটি বলে উঠলো……..আপনি রাফিয়ার মামাতো বোন আরিশা তাইতো??

আরু ঘুরে বললো……..হ্যা,এছাড়াও আমার আরো একটা পরিচয় আছে আমি……

জানি আপনি রাফিয়ার বড় মামার ছেলের বউ। এই নিন ফুল গুলো আপনার জন্য এনেছি।

আরু চোখ ছোট করে বললো…….আমার জন্য ফুল এনেছেন মানে! আপনি তো রাফিয়া আপুর বন্ধু ফুলগুলো ওকেই দেবেন।

না মানে রাফিয়ার মুখে আপনার কথা অনেক শুনেছি আর শুনলাম আপনাদের কিছুদিন হলো বিয়ে হয়েছে তাই আর কি। ফুলগুলো নিলে খুশি হতাম।

আরু আর কিছু বললো না মৃদু হেসে অয়ন নামে ছেলেটির হাত থেকে ফুল নিয়ে ধন্যবাদ বলে চলে গেলো।

আরু ফুল হাতে উপরে আসতেই অথই বললো……..ভাবি ছেলেটি কে??

রাফিয়া আপুর বন্ধু যা তো ওই ন্যাকা রাণীকে ডেকে দে। আর এই নে ফুলগুলো তোর।

আমাকে দিচ্ছো কেনো ছেলেটি তো তোমার আর ভাইয়ার নতুন বিয়ে হয়েছে তাই ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানালো। ওগুলো রুমে নিয়ে রাখো ভাইয়া এসে ভাইয়াকেও ভাগ দিয়ো।

আরু অথই এর নাক টেনে বললো……..সব বুঝিস তাইনা। যা রাফিয়া আপুকে ডেকে দিয়ে আমার রুমে আয়।

আরু আলমারি থেকে সবগুলো শাড়ি বেড় করে বেডের উপর রেখে গালে হাত দিয়ে কিছু একটা ভাবছে। তারপর সবগুলো শাড়ির মধ্যে থেকে তিনটা শাড়ি আলাদা করলো। রেড কালারের কাতান শাড়ি একটা, ব্লু আর অরেঞ্জ এর মিশ্রণে একটা সিল্কের জর্জেট শাড়ি,আর একটা ব্ল্যাক জর্জেট শাড়ি পাশাপাশি রেখে ভাবছে কোনটা পড়বে।

একি ভাবি! সব শাড়ি বেড় করেছো কেনো??

পড়বো তাই বেড় করেছি।

সবগুলো একসাথে পড়বে নাকি??

ধুর সবগুলো একসাথে পড়া যায় নাকি। আসলে কোনটা পড়বো বুঝতে পারছিলাম না তাই সব গুলো নামিয়ে এই তিনটা সিলেক্ট করেছি। এখন এই তিনটার মধ্যে কোনটা পড়বো বলতো??

অথই শাড়ি তিনটা পরখ করে দেখে বললো……..ভাবি ব্লু শাড়িটা পড়ো তোমার তো এ কালার পছন্দ,তোমাকে মানাবেও ভালো। তাছাড়া ভাইয়া ও ব্লু লাইক করে। কিন্তু হঠাৎ শাড়ি কেনো পড়বে ভাইয়ার সাথে কি ঘুরতে যাবে??

আরে না এমনি পড়বো এতো গুলো শাড়ি ফেলে রেখে কি করবো বল তাই ভাবলাম মাঝে মধ্যে পড়বো।
.
.
আরিশা শাড়ি পড়ে খুব সুন্দর করে সেজেছে। আয়নার সামনে দাড়িয়ে মাথায় কাপড় তুলে ঘুরে ফিরে নিজেকে দেখছে। দরজা খোলার আওয়াজ পেয়ে তাকিয়ে দেখলো আদ্র এসেছে। আদ্র আরুর দিকে একপলক তাকিয়ে ফোন ঘড়ি রেখে টাই খুলতে খুলতে ওয়াশরুমে চলে গেলো।

আরু অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো……..আদ্র তো অফিস থেকে এসে আগে আমাকে খোজে আর আজ আমাকে দেখেও কিছু বললো না! আমি যে শাড়ি পড়েছি সেটাও কি দেখেনি? আদ্রকে দেখতে কেমন যেনো বিষন্ন লাগছিলো কি হয়েছে উনার? শরীর খারাপ নয় তো?

আরু সেখানেই দাড়িয়ে আছে আদ্র ফ্রেস হয়ে বেড় হয়ে সোফায় গিয়ে বসলো। আরুও গিয়ে আদ্রর পাশে বসলো।

কি হয়েছে তোমার শরীর খারাপ? এসে আমার সাথে কথা বললে না তাকালেও না ঠিক করে।

আদ্র কিছু বলতে নিলে ওর চোখ পড়লো টেবিলে। সেখানে গোলাপ গুলো রাখা আদ্র উঠে গিয়ে ফুলগুলো হাতে নিয়ে বললো……..তাহলে আমি ভুল কিছু দেখিনি।

আদ্রর গলার স্বরটা গম্ভীর আরু হাসি মুখে বললো……..ভুল দেখবে কেনো। ফুলগুলো তোমার আর আমার বিয়ের জন্য……

থাক বলতে হবে না। ছেলেটির নাম অয়ন তোমার ভার্সিটির বন্ধু তাইতো??

হ্যা ছেলেটির নাম অয়ন কিন্তু ও তো আমার বন্ধু নয় রাফিয়া আপুর বন্ধু।

আরু মিথ্যা বলবে না রাফিয়ার বন্ধু হলে ওকে ফুল না দিয়ে তোমাকে কেনো দেবে। খুব তো হাসি হাসি মুখ করে ওই ছেলের থেকে ফুলগুলো নিয়েছো।

আদ্র কি বলছো তুমি এসব!

কি বলছি বুঝতে পারছো না ওয়েট…….এই দেখো।

আদ্র নিজের ফোন আরুর সামনে ধরলো সেখানে ছেলেটির মুখ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে না তবে আরুর মুখটা ভালো ভাবে দেখা যাচ্ছে। আরু হাসি মুখে ফুলগুলো হাতে নিচ্ছে এমন একটা ছবি আদ্র আরুকে দেখালো।

আরু ভেজা কন্ঠে বললো………আদ্র তুমি আমাকে ভুল বুঝছো। ছেলেটিকে সত্যি আমি আগে দেখি নি।

ভুল বুঝছি না কিন্তু আমার কষ্ট হয় আরু অন্য কোনো ছেলেকে তোমার পাশে আমি সহ্য করতে পারি না। আর সেখানে এই ছেলে তোমাকে ফুল দিয়েছে।

এই ছবি তোমাকে কে দিয়েছে আর এটা আমার বন্ধু এ কথাটা কে বলেছে?

আননোন একটা নাম্বার থেকে ছবি দিয়েছে আর বলেছে ছেলেটি তোমার ভার্সিটির ফ্রেন্ড বাড়িতে কেউ নেই তাই তুমি ওকে বাড়িতে এনেছো। কেনো করলে আরু তুমি এটা? তুমি কি বোঝো না আমার খারাপ লাগে?

আদ্র ওই ছেলেটাতো……..

আদ্র আরুকে আর কিছু বলতে না দিয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো। অথই কোনো একটা দরকারে এসেছিলো ওদের কথা শুনে দরজার বাইরেই দাড়িয়ে ছিলো। আদ্র যে আরুকে একটু হলেও ভুল বুঝছে অথই এটা বুঝেছে।

আদ্র ছাদে দাড়িয়ে আছে অথই এসে পেছন থেকে ডাকলো……..ভাইয়া?

আদ্র ঘুরে তাকিয়ে বললো……..অথই তুই এখানে কেনো??

ভাইয়া তুমি ভাবিকে ভুল বুঝছো কেনো? ভাবির তো কোনো দোষ নেই।

আরু তোকে এসব বলে দিয়েছে! ওর বাচ্চামি স্বভাবটা গেলো না।

ভাবি আমাকে কিছুই বলেনি তোমরা কথা বলছিলে তখন আমি শুনেছি। আচ্ছা ভাইয়া তোমার কি করে মনে হলো ভাবি কোনো ছেলেকে বাড়িতে আনবে তাও ফাকা বাড়িতে ভাবি যে এমন নয় তুমি তো জানো। শুধু একটা ছবি দেখেই কিসব ভেবে নিচ্ছো।

অথই তুই ছোট বুঝবি না এসব নিচে যা।

ছোট হলেও অনেক কিছু বুঝতে পারি ভাইয়া। ওই ছেলেটি রাফিয়া আপুর বন্ধু,রাফিয়া আপুর সাথে দেখা করতে এসেছিলো। রাফিয়া আপুর থেকে নাকি শুনেছে তোমার আর আরিশা ভাবির বিয়ের কথা তাই ফুলগুলো দিয়ে ভাবিকে শুভেচ্ছা জানিয়েছে। ভাবি নিতে চায় নি ছেলেটি তোমাদের বিয়ের শুভেচ্ছা জানিয়েছে বলে নিয়েছে। আমি তখন ছিলাম ওখানে দেখেছি এবং শুনেছি সবটা।
ভাইয়া তুমি কি করে পারলে একটা ছবি দেখে ভাবিকে ভুল বুঝতে? ভাবি যে আজ তোমার জন্য শাড়ি পড়েছে সেজেছে দেখেছো তুমি? সেই সন্ধা থেকে সেজে অপেক্ষা করছে তোমার জন্য। আর তুমি কি করলে সামান্য একটা বিষয়ে ভাবির হাসি মুখটাতে মেঘের ছায়া নামিয়ে দিলে কথা শুনালে ভাবিকে।

আদ্র অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে অথই এর দিকে। সত্যি তো সামান্য একটা বিষয় তার জন্য আরুর সাথে এমন বিহেব করলো ভেবেই আদ্রর খারাপ লাগছে। এমনকি নিজের ছোট বোনের কাছেও ছোট হতো হলো আজ। আদ্র তো চাইলেই পারতো ঠান্ডা মাথায় আরুর থেকে সব শুনতে।

অথই বললো…….ভাইয়া সত্যি বলছি ভাবির কোনো দোষ নেই। তুমি যাও ভাবির কাছে হয়তো মন খারাপ করে বসে আছে।

আদ্র মৃদু হেসে বোনের মাথায় হাত বুলিয়ে নিচে চলে গেলো।
·
·
·
চলবে……………………
·
চলবে………………………….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here