তুমি এলে তাই পর্ব শেষ

#তুমি এলে তাই ❤
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল
#শেষ পর্ব
.
ছয় মাস কেটে গেছে। এই ছয়মাসে স্পন্দন গুঞ্জনের ভালোবাসা অনেক গভীর রুপ ধারণ করেছে। গুঞ্জনের বাবা মা ওর সাথে অনেকবার কথা বলতে চেয়েছে। গুঞ্জন মুখে বলেছে যে ওনাদের ক্ষমা করে দিয়েছে কিন্তু এখনো ওনাদের সাথে স্বাভাবিক হয়নি। খুব প্রয়োজন ছাড়া কথা বলেনা তাদের সাথে। এ বিষয়ে শুরুতে মেঘলা, তিতলি আর আবির শুরু থেকে সাপোর্ট করলেও এখন ওকে বলে যে ক্ষমা করে দে অনেকতো হলো। আর স্পন্দন শুরু থেকেই গুঞ্জনের ইচ্ছার মর্জাদা রাখে। ওর ব্যাক্তিগত সিদ্ধান্তে এখনো কোনো বাধা সৃষ্টি করেনি ও। আর গুঞ্জনের কাকা কাকীকে সবাই একঘরৃ করে দিয়েছে। ওনাদের সাথে কেউ কোনো কথা বলেনা। ওনাদের হাড়িও এখন আলাদা চলে।মেঘলা রেহান যখনি বেড়াতে আসে গুঞ্জনের বাবা মায়ের কাছেই থাকে ওদিকে যায়। মেঘলার বাবা মা এখন ভীষণভাবে অনুতপ্ত। ওনারা নিজেদর ভুল খুব ভালো করে বুঝে নিয়েছেন এবং শুধরেও গেছেন কিন্তু ওনাদের দিকে ঘুরে তাকানোর কেউ নেই। ওদিকে আহিল কানাডায় যায়নি কিন্তু দেশে থেকেই ড্রাগ স্মাগলিং কেসে পুলিশের কাছে এরেস্ট হয়েছে আর ওর অনেক বছরের জেলও হয়েছে। স্পন্দন গুঞ্জনের এনগেইজমেন্ট ছয় মাস আগেই হয়ে গেছে আর গুঞ্জনের সেকেন্ড ইয়ারের ফাইনাল এক্সামের পরেই বিয়ের কথা বলা ছিলো।

আজ স্পন্দন আর স্পন্দনের বিয়ে। খুব আনন্দের সাথে, হাসি মজার মাধ্যমেই বিয়েটা মিটে গেলো। এবার গুঞ্জনের বিদায়ের পালা। এটা প্রত্যেকটা মেয়ের জীবণের সবচেয়ে কঠিন মুহূর্ত। না চাইতেও তাকে তার শৈশবের স্মৃত, তার অস্তিত্বের শুরুটাই ছেড়ে যেতে হয়। গুঞ্জন খুব শক্ত মেয়, কিন্তু আজ ওরও খুব কান্না পাচ্ছে। আবিরকে জরিয়ে ধরে অনেক্ষণ কান্না করলো। আবিরও কেঁদে দিয়েছে। খুব বেশিই ভালোবাসে নিজের বোনকে। আজ তাকে অন্যৃর বাড়িতে পাঠিয়ে দিতে বুক ফেটে যাচ্ছে। গুঞ্জনের বাবা মাও চোখভরা জল নিয়ে তাকিয়ে আছেন। স্পন্দন এবার গুঞ্জনের কাধে হাত রাখলো, গুঞ্জন তাকাতেই চোখের ইশারায় বোঝালো অনেক হয়েছে এবার ক্ষমা করে দাও ওনাদের। গুঞ্জন একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল, এই ছয়মাস ওর বাবা ওকে এতো ভালোবাসা দিয়েছে যে ওর মনে ওনাদের প্রতি জমে থাকা সকল অভিমান কেটে গেছে। গুঞ্জন গুটিগুটি পায়ে ওর বাবা মায়ের কাছে গেলো। কিছু না বলে দুজনকেই জরিয়ে ধরে কেঁদে দিলো। আজ বহুদিনের মান অভিমান শেষে বাবা-মা আর মেয়ে মিলন হলো। গুঞ্জন ওনাদের ছাড়িয়ে বলল,

— “একটা কথা রাখবে আমার?”

গুঞ্জনের বাবা বলল,

— ” তুই যা চাইবি তাই দেবো আজ তোকে বল?”

গুঞ্জন চোখ মুছে বলল,

— ” কাকা কাকীকে মাফ করে দাও প্লিজ। ওনারা নিজেদের ভুল বুঝতে পেরেছেন। শুধরে নিয়েছেন নিজেদের। ওনাদের আর শাস্তি দিওনা।”

এটা শুনে গুঞ্জনের কাকা তো কাঁদলেনই কাকী তো শব্দ করেই কেঁদে দিলেন। ওনারা এসে গুঞ্জনের হাতে ধরে ক্ষমা চাইলো। গুঞ্জনের কথা রাখতে সবাই ওনাদের ক্ষমা করলেও মেঘলা কোনো কথা বলেনি ওনাদের সাথে। গুঞ্জনও আর জোর করেনি। কারণ জোর করে সব হয়না। সময় এর সাথে সাথে সব ঠিক হয়ে যাবে।

____________________

গুঞ্জন ফুলে সাজানো বাসর ঘরে বসে আছে। ওর মধ্যে কখনো লজ্জা, একটু ন্যাকামো, ইতস্ততবোধ এসব মেয়েলি ব্যাপার নেই বললেই চলে। কিন্তু আজ এক অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে ওদের মধ্যে। সব এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। এরকম অনুভূতি কখনো হয়নি ওর।

স্পন্দন বাসর ঘরে ঢুকতে নেবে তখনি সব বিচ্ছু বাহিনীর দল দাঁড়িয়ে গেলো। সারা বলল,

— ” এতো তাড়া কিসের ভাইয়া? আগে টাকা ছাড়া? ফ্রি তে তো আর বউয়ের কাছে যেতে পারবি না।”

সারার কথা শুনে স্পন্দন ভ্রু কুচকে বলল,

— ” মারবো এক থাপ্পড়। যা ভাগ।”

রেহান দাঁত কেলিয়ে বলল,

— ” নাহ ভাই সেটা হচ্ছে না। টাকা কোথাও যেতে পারছোনা।”

স্পন্দন বিরক্ত হয়ে বলল,

— ” তুই না বড় ভাই? এসব কী হ্যাঁ?”

রেহান আবারও দাঁত কেলিয়ে একটা হাসি দিয়ে বলল,

— ” বলেছিলাম না? আপনা টাইম ভি আয়েগা? আ গেয়া না? এবার ছাড় পঞ্চাশ হাজার। আমার যা গেছে তার ডাবল”

স্পন্দন আর কী করবে? বাধ্য হয়ে কার্ড টাই ওদের হাতে দিয়ে তারপর ভেতরে যেতে পারলো।

গুঞ্জন আর স্পন্দন ব্যালকনিতে ফ্লোরে বসে আছে। আকাশের গোল চাঁদ দেখা যাচ্ছে রুপার থালার মতো। স্পন্দন মৃদু স্বরে বলল,

— ” জানো তোমার গানটাই সবার আগে ভালোলেগেছিলো আমার। তোমাকে ভালোলাগার যাত্রাটা গান থেকেই শুরু হয়েছিলো।”

গুঞ্জন স্পন্দনের বুকে মাথা রেখেই বলল,

— ” আর ভালোবাসার?”

স্পন্দন হালকা হেসে বলল,

— ” সেটাতো জানিনা।”

গুঞ্জন একটু হাসলো। তারপর একটা লম্বা শ্বাস ফেলে বলল,

— ” জানো তুমি আসার পর আমার জীবণ কতোটা বদলেছে? আমার ভাইয়ার সাথে আমার সম্পর্কটা ঠিক হয়েছে। আবার বাবা মাকে ফিরে পেয়েছি। সব কিছু ঠিক হয়ে গেছে। আমি নতুন করে হাসতে শিখেছি, কাঁদতে শিখেছে। নিজেকে বুঝতে শিখেছি। আর ও সব কিছু তুমি আমার জীবণে এসছো বলেই হয়েছে। তুমি এলে বলেই আমার জীবণটা এতো সুন্দর হয়েছে।”

স্পন্দন কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,

— ” একটা রিকোয়েস্ট রাখবে?”

গুঞ্জন ভ্রু কুচকে বলল,

— ” কী?”

— ” একটা গান গাইবে?”

গুঞ্জন স্পন্দনের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল,

— ” বিয়ের প্রথম রাতে আমার বর আমার কাছে কিছু আবদার করেছে না পূরণ করে থাকি কীকরে?”

স্পন্দন গুঞ্জনের কপালে একটা চুমু দিলো। গুঞ্জন উঠে দাঁড়িয়ে গাইতে শুরু করলো-

ইচ্ছে, পারি দিচ্ছে
ইচ্ছে, পারি দিচ্ছে..
মন বলছে ঐ আকাশ ছুতে চায়
ছিলো একলা রাত মেঘলা
ছিলো একলা রাত মেঘলা
খোলা জানালায় রোদের ছোয়া পাই
তুমি এলে তাই, তুমি এলে তাই
তুমি এলে তাই, তুমি এলে তাই

এটুকু গাইতে গাইতে গুঞ্জন ভেতরে চলে গেলো। স্পন্দনও ভেতরে এলো। গুঞ্জন ঘুরে স্পন্দনকে জরিয়ে ধরলো।

কিছু স্বপ্ন হলে সত্যি আরো স্বপ্নস চোখে ছায়ে
শধু তুমি দিন রাত্রি থাকো কথায় কবিতায়
থাকো কথায় কবিতায়..
কিছু ভাবনা, মেলে পাখনা
আরো দূরে দূরে যেতে চায়
ছিলো একলা রাত মেঘলা
ছিলো একলা রাত মেঘলা
খোলা জানালায় রোদের ছোয়া পাই
তুমি এলে তাই, তুমি এলে তাই
তুমি এলে তাই, তুমি এলে তাই
তুমি এলে তাই, তুমি এলে তাই
তুমি এলে তাই, তুমি এলে তাই

স্পন্দন গুঞ্জনকে ছাড়িয়ে নিয়ে কোলে তুলে নিলো। গুঞ্জন না চাইতেও লজ্জা পেয়ে গেলো। স্পন্দনের বুকে মুখ লুকিয়ে নিজের সেই লজ্জার প্রকাশ করলো ও।

______________________

দুই বছর পর,

রাত দশটার মতো বাজে। গুঞ্জন বাইক চালাচ্ছে স্পন্দন পিছনে বসে আছে। স্পন্দন বলল,

— ” আরে কোথায় নিয়ে যাচ্ছো বলবে তো?”

গুঞ্জন একটু হেসে বাইক চালাতে চালাতে বলল,

— ” সারপ্রাইজ।”

গুঞ্জন বাইক সেই ব্রিজটার ওপর থামালো। তারপর বাইক থেকে নামল। পুরো ব্রিজটাই। স্পন্দ চারপাশে তাকিয়ে একটু অবাক হয়ে বলল,

— ” এসব কী? এখানে কেনো?”

গুঞ্জন কিছু বললনা শুধু মুচকি হেসে ইশারায় দূরে দেখালো। দেখলো একটা ফুচকার দোকান। স্পন্দন অবাক হয়ে বলল,

— ” তুমি এতোরাতে এখানে ফুচকা খেতে এসছো? আর এতোরাতে দোকান খোলা?”

গুঞ্জন একটু হেসে বলল,

— ” হ্যাঁ খোলা রাখিয়েছি আমি।”

— ” কেনো?”

— আপনাকে একটা নিউস দেওয়ার আছে।”

স্পন্দন ভ্রু কুচকে তাকালো। গুঞ্জন স্পন্দের কানের কাছে গিয়ে ফিসফিসিয়ে বলল,

— ” তুমি বাবা হতে চলেছো?”

স্পন্দন অবাক হয়ে তাকালো গুঞ্জনের দিকে।কিছুক্ষণ অবাক চোখে তারপর চোখের ইশারায় জানতে চাইলো সত্যিই? গুঞ্জন মাথা নেড়ে হ্যাঁ বলল ওর চোখে পানি চিকচিক করছে। স্পন্দন গুঞ্জনকে কোলে তুলে নিয়ে ঘুরতে লাগল। কিছুক্ষণ ঘুরানোর পর নামিয়ে বলল,

— “থ্যাংক ইউ থ্যাংক ইউ সো মাচ। তুমি জানোনা তুমি আমায় কী দিয়েছো। আমার একটা বেইবি হবে? ওর কচি কচি হাত পা দিয়ে খেলবে? আদো আদো কন্ঠে আমাকে বাবা বলবে? তোমাকে মা বলবে? সারাবাড়ি জুড়ে খেলবে?”

স্পন্দনের কথায় গুঞ্জন আরো ইমোশাল হয়ে গেলো তাই মাথা নেড়ে ওকে জরিয়ে ধরলো। স্পন্দন বলল,

— ” এই মাসটাই আমার জন্যে লাকি। কদিন নর সারার বিয়ে আর আজ এতো ভালো একটা খবর।”

গুঞ্জন এবার মুখ ফুলিয়ে বলল,

— ” ফুচকা খাবো।”

স্পন্দন ওর নাক টেনে দিয়ে বলল,

— ” ওকে ফাইন বাট শুধু আজকেই কিন্তু। এই অবস্থায় আর এসব খেতে দেবোনা তোমাকে আমি।”

গুঞ্জন ভালো মেয়ের মতো মাথা নেড়ে চলে গেলো। স্পন্দন আর গুঞ্জন সেদিন অনেক রাত অবধি বাইরে ঘুররো। কখনো স্পন্দন বাইক চালিয়েছে কখনো গুঞ্জন। আজ ওরা দুজনেই খুব খুশি। সম্পূর্ণ ভালোবাসাতে পূর্ণ ওরা। জীবণের সব বাধা প্রতিকুলতা পার করে নিজেদর মতো করে ভালোবাসাময় জীবণ কাটাচ্ছে।
আপনার পছন্দের গল্প পড়তে পেইজটি তে লাইক দিয়ে সাথেই থাকুন এবং গল্পের লিংক পেতে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন। গ্রুপের লিংক কমেন্ট বক্সে দেওয়া আছে
#সমাপ্ত

( অবশেষে এই গল্পটাও শেষ হলো। দেরী হওয়ার জন্যে দুঃখিত। আসলে আজ বার্থডে তাই বারোটা থেকে সবার উইস, এন্ড রিপ্লে দিএ দিতে অনেকটা সময় কেটে গেছে। তারওপর সারাদিকে আরো একটা পার্ট, #মায়াবিনী অনুগল্পটাও দিয়েছি। যাই হোক সবাই ভালো থাকবেন। আর পরবর্তী গল্প অবশ্যই আপনাদের প্রিয় অনিয়ানকে নিয়েই লিখব। ধন্যবাদ।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here