পর্ব ১৯+২০
#ভালো তোকে বাসতেই হবে❤️
#পরিধি রহমান বিথি🍁
#পর্ব-১৯
“,,,কাল বাদে পরশু থেকেই তো শপিংয়ে বেরিয়ে পড়তে হবে।তাই আগে থেকে জুয়েলারি কোনটা কার পছন্দ আর কি কি কিনতে হবে তা দেখতে চলে এসেছি,,।”
❤️
সবাই একে একে করে বিছানায় বসে পড়ল গোল হয়ে। অপূর্ব ভাইয়া আর রাত ভাইয়াও বসে পড়ল। সবগুলো বক্স খোলা হলো। টানা দুই ঘণ্টা নাওয়া খাওয়া বাদ দিয়ে এই বিরক্তিকর কাজ করেছি। তার পড়ে গিয়ে সব ঠিকঠাক হলো। জেরিন ,, অপূর্ব ভাইয়া আর রাত ভাইয়া এক সাথে খাওয়া দাওয়া করে বের হলেন।রাত ভাইয়া বাসায় যাবে আর ভাইয়া জেরিনকে বাসায় পৌঁছে দেবে। আমি ও সারাদিনের ক্লান্তি দুর করার উদ্দেশ্য বিছানায় গিয়ে শুয়ে পরলাম।বেশ খানিকক্ষণ শুয়ে থাকলাম । সন্ধ্যা নামতে এখনো বেশ কিছুটা সময় বাকি আছে। অনেকদিন ছাদে যাওয়া হয় না । এখন না হয় একটু ঘুরে আসি।ওড়নাটা নিয়ে কিচেনে গেলাম এক কাপ চায়ের আশায়।চা জিনিসটাও বেশ মজাদার,,এক পরন্ত বিকেলে ছাদের দোলনা সাথে এক কাপ চা,, ও হো,,, বেশ একটা বড় বড় ফিল আসে।সে যাইহোক,,এক কাপ চা সাথে আমি সিঁড়ি বেয়ে উঠে পড়লাম ছাদে। গিয়ে বসলাম প্রিয় অপেক্ষমান সেই দোলনায়।আরাম করে পা তুলে বসলাম দোলনায়। পা নামিয়ে বসতাম যদি কোনো প্রিয় ব্যক্তিত্ব আমার পিছনে দাঁড়িয়ে দোলনায় ধাক্কা দিত। আপাতত এমন কেউ নেই তাই পা তুলে বসতেই বেশ স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছি। আশেপাশের এক ঝলক চোখ বুলিয়ে এক চুমুক চায়ের কাপে ঠোঁট বুলিয়ে দিলাম। চা আমি অতো ভালো বানাই না কিন্তু মোটামুটি খাওয়ার মতো হয়ে যায় । এটাই অনেক আমার কাছে।
,,””আচ্ছা এই দোলনাটা ঢেলে দাওয়ার জন্য একজন কবে আমার পেছনে দাঁড়িয়ে থাকবে?(নিজেকে নিজে প্রশ্ন করছি)
জেরিনের ও বিয়ে হয়ে যাচ্ছে। রিয়াদ ভাইয়া প্রোপোজ করার আগেই রাত ভাইয়া এসে বেগড়া দিল।দিবেই না কেন নিজের রাস্তা তো ক্লিয়ার। এখন আমরা সবাই চুলোয় যাই।উফফ,,,এই সিঙ্গেল লাইফ আর ভালো লাগে না। যদিও রিয়াদ ভাইয়াকে আমি ওই নজরে কখনো দেখিনি
তাই উনি ভুলবশত প্রোপোজ করে দিলেও আমি এই প্যারায় জড়াতাম না।(আর এক চুমুক চায়ের কাপে দিয়ে),,রাত ভাইয়া হলেও মানা যেত।আর মানা যেত কি বলছি এক পায়ে দাঁড়িয়ে মেনে নিতাম।(একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে)হহহহম,,, সেই কপাল কি আর আমার আছে??,,সে তো সব পেতনিগুলো মুখে মেকআপের বস্তা মেখে তারপর রাত ভাইয়ার ঘাড়ে চাপার ধান্দা করে।আর রাত ভাইয়াও কম যায় না,, একদম লুচু ক্যারেক্টার।”
সন্ধ্যে নামল নামল ভাব।একা একা বকবক করতে ভালোই লাগে। তবে হঠাৎ কেউ দেখলে পাগল ভাবার তীব্র সম্ভাবনা রয়েছে । এখন নিচে নামতে হয় ,,এর পড় ভুতেরা হানা দিবে ছাদে।তাই ওদের পার্সোনাল টাইম কাটাতে দেওয়া ও তো আমাদের কর্তব্য (কথাগুলো ভাবছি আর হাসতে হাসতে ছাদ থেকে রুমে যাচ্ছি)।
।
।
।
।।।,,, তাড়াহুড়ো করে রেডি হচ্ছি। একটা কালো গোলজামার সাথে লাল রঙের সালোয়ার আর ওড়না পড়ে নিলাম,, চুলে একটা সাইট ফেনী সাথে হালকা কাজল আর ঠোঁটে হালকা গোলাপি রঙের লিপস্টিক পড়ে রেডি আমি।”,,সময় ও নদীর স্রোত কারো জন্য অপেক্ষা করে না”,, ঠিক তেমনি এসে গেছে বহুল প্রত্যাশিত সেই শপিংয়ের দিন। আমার থেকে ও আম্মু বেশি এক্সাইটেড।,,, কয়টা শাড়ি কিনবে ??কোন শাড়ি কিনলে তাকে বেশ শাশুড়ি শাশুড়ি বলে মানাবে,, সেই চিন্তায় তার রাতের ঘুম হারাম,,। আমি একদম রেডী।সিঁড়ি বেয়ে নেমে সোজা ড্রয়িং রুমে পদার্পণ করতেই দেখি রাত ভাইয়া ,, অপূর্ব ভাইয়া সোফায় বসে জুস খাচ্ছে। রাত ভাইয়াকে দেখে আমি একটু অবাক হলাম শ্ মেয়েদের শপিংয়ে এনার ইন্টারেস্ট আছে বলে তো মনে হয়না। ,,বাহ ভালোই তো,,আমিও ওখানে যাওয়াতে কারো তেমন কোন হেলদোল দেখতে পেলাম না,,, তারা তাদের মতো জুসের গ্লাসে হমলে পড়েছে। শুধু রাত ভাইয়া কয়েক সেকেন্ডের জন্য এক পলকে তাকিয়ে ছিল ,, তারপর আবার নজর সরিয়ে জুসের গ্লাসে দিল।ভাইয়া শুরু বলল,,
,,”বস বস তোদের জন্যই তো অপেক্ষা করছি,,”।
আমি একটু অবাক হলাম। আর ভাইয়াকে প্রশ্ন করলাম,,,
,,”আমাদের জন্য মানে?? আমি আর কে??
ভাইয়া হালকা একটু হেসে উত্তর দিল,,
,, কেন ??,,আম্মু আর আন্টি,,!””
আমার ও মনে পড়ল তাই তো এ দুজন তো এখানে উপস্থিত নয়।তাই মৃদু স্বরে বললাম,,
ব
,,”ওওও,,তাই বল।”
বলতে বলতে আমি ও গিয়ে দুমিনিট বসতে বসতেই আম্মু আর ভালো আন্টি কথা বলতে বলতে এসে উপস্থিত হলেন। বেশ একটা উৎসব মুখোর বাড়ির পরিবেশ । আম্মু এসেই তাড়া দিলেন,,
,,,”কিরে তোরা বসে আছিস কেন গাড়ি বের কর।,,যা,,যা।
বড্ড তাড়া তার কন্ঠে ,, ওদিকে যে নিজেই লেট সেদিকে কোনো খেয়াল নেই। সবাই গিয়ে গাড়িতে উঠলাম। ভাইয়া আর রাত ভাইয়া সামনে ,,আমি ,আম্মু , ভালো আন্টি পেছনে। আম্মু আর ভালো আন্টির বকবকানিতে আমি বিরক্ত।জানালা দিয়ে মুখ করে ওনাদের এভয়েট করার তীক্ষ্ণ প্রচেষ্টা। মনে মনে চিন্তা ,,
,,”কখন যে শপিং মলে পৌছাব আর জেরিনের সঙ্গে দেখা হবে!!”
,,ও,, জেরিনের ফ্যামিলিও আসছে শপিং করতে । একসাথেই সব কেনাকাটা করা হবে তাই।
শপিং মলটা বাসা থেকে খুব বেশি দুরে না। তবুও আজ যেন বহু দুরের পথ বলে মনে হচ্ছে। কারণ আমার পাশের দুজন মহিলা বেশ
বকবক করছে।মন থেকে বিরক্তির ছাপ দুর করতে বাইরের পরিবেশে মন বসালাম।
মিনিট পঁচিশ পড়ে গাড়ি গিয়ে থামল মস্ত বড় এক দালানের সামনে,,মানে বিল্ডিংয়ের সামনে। চারপাশে নানা ধাঝের প্রচুর লোকের সমারোহ। শপিং মল বলে কথা ভীড় তো থাকবেই। গাড়ি থেকে ঝটপট নেমে পড়লাম।গাড়ি যেন আজ আমার জন্য কারাগারে পরিণত হয়েছিল।ভাগ্যশ রাস্তায় কথাও থামানি।নাহলে ওখান থেকে ছুটে পালাতাম। প্রচুর মানুষের ভীড় হলেও আমার বেশ ফ্রেশ ফ্রেশ লাগছে। জেরিনের সাথে দেখা হলে আর দুচারটে কথা বললে আরো ফ্রেশ লাগবে।
ভাইয়া গাড়ি পার্ক করে এসেছে। আমরাও হাঁটা দিলাম ভেতরে ঢুকে বলে। জেরিনরা নাকি গেটের সামনে অপেক্ষা করছে। কিছুটা এগিয়ে যেতেই ওদের সাথে দেখা হয়ে গেল । তবে ওদের সবাইকে ভালো করে দেখার পরে আমার হাসি মলিন হয়ে গেল। তার একমাত্র কারন ,,”প্রিতি আপু”। জেরিনের পুরো পরিবারের সাথে জেরিন আপুও উপস্থিত।সবাই যেখানে একজন আরেকজনকে সালাম বিনিময় করছে সেখানে।প্রিতি আপু রাত ভাইয়াকে গিয়ে জড়িয়ে ধরল।দেখেই আমার শরীরে ১০০ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রায় জ্বলে যাচ্ছে। ইচ্ছে হচ্ছে প্রিতির হাত পা ভেঙে,, এখানেই বসিয়ে রাখি।আজ আবার শুরু হয়েছে এইসব। ওনার এই ব্যবহারে কেউ তেমন একটা অবাক হয়নি।উনি যে এই কোয়ালিটির এটা সবার বোধগম্য হয়ে গেছে।,, কোথায় ভেবেছিলাম মনটা ফ্রেশ হবে উল্টো একটা পেতনি এসে মেজাজের বারোটা বাজিয়ে দিল।
সবাই মলের ভেতরে ঢুকছে। সকলের সামনে কথা বলতে ভাইয়া বা জেরিন দুজনই বেশ লজ্জা পায়।আর একসাথে হাঁটার তো কোনো প্রশ্নই ওঠে না।তাই জেরিনের সাথে আমি হাঁটছি সবার পেছনে ,,বাকিরা সকলে সামনে হাঁটছে। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে রাত ভাইয়া আর প্রিতি আপু। একটা হ্যান্ডসাম ছেলে তার দিকে যে সবাই তাকিয়ে থাকবে তা তো স্বাভাবিক । অন্যদিকে একজন জিন্স টপস পড়ুয়া মেয়ে যদি সেই ছেলের হাত ধরে ঝুলতে ঝুলতে এগোতে থাকে তাহলে যে সবাই হা করে তাকিয়েই থাকবে তা তেও কোনো সন্দেহ রাখা ঠিক না। ওদিকে আমার আর ভালো লাগছে না এসব প্রমীলা দেখতে। মাথার ধমনী শিরায় বেশ টান পড়েছে ইঙ্গিত দিচ্ছে রাগের। জেরিনকে মুখ ফুটে কিছু বলতেও পারছি না।কারন রাত ভাইয়ার পাশে থাকা পেতনিটা হলো জেরিনের বোন।,
,,”আসলে আমার ব্যাড লাকই খারাপ ।”(মনে মনে বিরবির করছি।)
পাশ থেকে জেরিন আমি কি বলছি তা জানার তীব্র আগ্রহ দেখিয়ে বলল,,
,,”কিরে সোনু কি হলো তোর??,,বিরবির করছিস কেন?
আমি একটু শান্ত হয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে শান্ত গলায় বললাম,,
,,”তেমন কিছু নারে জেরি,, শুধু ভাবছিলাম কি কি কিনবো ?”
জেরিনের মুখ দেখে মনে হলো না যে ও আমার কথায় বিন্দুমাত্র বিশ্বাস করেছে। তারপরও হয়তো নিজেকে শান্তনা দিতেই বলল,,
,,ওওও,,
সবাই গিয়ে শাড়ির দোকানে ঢুকলো ,,রাত ভাইয়া আর প্রিতি আপুও।রাত ভাইয়ার আর কোনো চিন্তা নেই শুধু প্রিতি আপুকে শাড়ি পছন্দ করে দেওয়া ছাড়া।যে যাই করুক এরা দুজন জোড়া কবুতরের মতো একজন আরেকজনের সাথে চিপকে আছে।
,,”হ্যাঁ ,, প্রিতি আপুর নাম পেতনি থেকে ট্রান্সফার করে চিপকু তো রাখাই যায়।”(মনে মনে ভাবছি আর হাসছি)
#পর্ব-২০
হ্যাঁ ,, প্রিতি আপুর নাম পেতনি থেকে ট্রান্সফার করে চিপকু তো রাখাই যায়।”(মনে মনে ভাবছি আর হাসছি)
❤️
,,, শপিং মল নাকি মেয়েদের জন্য স্বর্গের ন্যায় স্থান। কিন্তু এই উক্তিটি আমার জন্য আজ ভুল প্রমাণিত হলো। আমার জন্য এই শপিং মলটা বিরক্তির কারখানায় রুপান্তরিত হয়েছে। আমার মনে হয় কি এখানে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি পেয়েছে।কারন ঝকঝকে এসির বাতাসে ও আমার বেশ গরম লাগছে। মাথার চুল ভেদ করে বিন্দু বিন্দু ঘাম একত্রে গড়িয়ে আমার ঘাড়ে এসে জায়গায় করে নিয়েছে। ঘামের বিন্দুগুলো যেন আপ্রাণ চেষ্টা করছে আমার অস্বস্তির জানান দেওয়ার।এরই মধ্যে রাত ভাইয়াকে ভালো আন্টি ডাকলো,,
,,,”রাত,,, এদিকে আয় তো বাবা,,!!”
রাত ভাইয়ার এবার ফুরসৎ হলো প্রিতি আপুর বাহু ডোর থেকে বাইরে আসার।রাত ভাইয়া গিয়ে ভালো আন্টির পাশে বসতে বসতে হালকা কন্ঠে বলল,,
,,,”হ্যাঁ,, আম্মু বল।”
আমার এবার একটু গরমটা কম লাগছে। বেশিক্ষণের ছিল না এই শান্তি,,প্রিতি আপু ও গিয়ে চেয়ার টেনে রাত ভাইয়ার গা ঘেঁষে বসে পড়ল।
রাগে আমার দাঁত কটমট করছে। ইচ্ছে হচ্ছে সবকটা চুল টেনে ছিঁড়তে। কিন্তু নিজের চুল তো ছিড়লে নিজেই ব্যাথা পাবো।তাই আবার এই আইডিয়া বাতিল করতে হলো। মনে মনে ভাবছি,,
,,”আমি ঠিক বুঝি না ওদের এই ন্যাকামি দেখলে আমার এতো জ্বলে কেন? তাহলে কি আমি সিরিয়ালের দজ্জাল শাশুড়ি বা বাড়ির অন্য কোনো সদস্যের মতো হয়ে গেলাম???,,,ছি সোনালী,,তুই ও এমন হয়ে গেলি??
বেশ একটা তাড়না দিয়ে উঠলো বিবেক। নিজের প্রতি একটা অনিহা জন্ম নিচ্ছে। ঠিক তার পড়ের মুহূর্তে আবার ভাবলাম,,,
,,,”আমার জ্বলবে নাই বা কেন??রাত ভাইয়ার গার্লফ্রেন্ড থাকা সত্ত্বেও উনি অন্য একটা মেয়ের সাথে মিশছেন ,,এতে করে তো ওই মেয়েটাকে ধোঁকা দেওয়া হচ্ছে। আবার প্রিতি আপু ,, ওনাকে মেয়ে বলতেও আমার অস্বস্তিবোধ হয় ,, এইভাবে ছেলেদের গায়ে পড়া মেয়ে আমি খুব কমই দেখেছি। ছেলে দেখলেই হামলে পড়ে। আমি একদম ঠিক করছি।,, সোনালী,,নো ছি,, ওনলি হিহি,,!”(কথাগুলো ভাবতে ভাবতে হেসে দিলাম)।
রাত ভাইয়া তার মায়ের জন্য শাড়ি পছন্দ করেছেন।রাত ভাইয়া বললে ভুল হবে,প্রিতি আপু ভালো আন্টির জন্য শাড়ি পছন্দ করেছেন।তবে যেটা প্রিতি আপুর পছন্দ হচ্ছে সেটা ভালো আন্টির পছন্দ হচ্ছে না আবার রাত ,,। আবার ভালো আন্টির যেটা পছন্দ হচ্ছে সেটায় ভুলভাল লজিক দিয়ে অপছন্দ করে দিচ্ছে প্রিতি আপু। অন্যদিকে জেরিন ,,বেচারী লজ্জায় ঠিকমতো পছন্দ ও করতে পারছে না।তাই একটু পড় পড় আমার কানে ফিসফিস করে বলছে,,
,,”সোনু ,, আমার এটা পছন্দ হয়নি আন্টিকে বল না ।”
আমি ও ভারী গলায় বললাম,,
,, “আম্মু,,এটা একটুও ভালো না , তুমি অন্য আর একটা দেখ।”
আম্মু হতাশ হয়ে নিস্তেজ গলায় বলছেন,,
,,,”কি বলছিস ?,, আমার তো ভালোই লাগছে,, জেরিন ও বলল ভালো।,”
একটু ঝাঁঝালো কন্ঠে বললাম,,
,,”, ওহহ,,,বলছি তো এটা ভালো না অন্য একটা দেখ। তারপরও এতো কথা পেচানোর কি আছে ?? সেটাই তো বুঝতে পারছি না।”
আম্মু আর কিছু বলল না। আমি অল্পেতেই এতো রাগী না কিন্তু আজ যেন কি হয়েছে।একে তো ন্যাকামি সহ্য হচ্ছে না আবার আম্মুর পেনপেন।আসলে এই রাগটা ছিল রাত ভাইয়া আর প্রিতি আপুর উপর পড়ল গিয়ে আম্মুর উপড়ে।তাই তো “হুমায়ূন আহমেদ” বলেছেন,,
,,”মানুষ হবার অনেক যন্ত্রনার ,, একটি হচ্ছে যা বলতে প্রান কাঁদে তা কখনো বলা হয় না।”
একটা ছোট নিঃশ্বাস ফেলে আবার শাড়ির দিকে মন দিলাম।এর মধ্যেই ভালো আন্টি আমাকে ডাকলেন,,
,,”মিষ্টি মা একটু এদিকে আয় তো,,দেখ আমার কিছু পছন্দই হচ্ছে না।”
আমি চেয়ার ঢেলে গুটি গুটি পায়ে ধীর গতিতে এগিয়ে গেলাম। আমার হাঁটায় স্পষ্ট বিরক্তির ছাপ প্রকাশ পাচ্ছে। তবু ও যাচ্ছি। আমি গিয়ে সামনে দাড়াতেই ভালো আন্টি সংকোচিত গলায় বলল,,
,,”প্রিতি মা তুমি একটু ওই পাশের চেয়ারে গিয়ে বসবে ??”
শত অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও প্রিতি আপু তার গোল মাথাটা ঝাঁকিয়ে উত্তর দিলেন,,যার অর্থ হচ্ছে ,, হ্যাঁ ,,।উনি উঠে পাশের চেয়ারে গিয়ে বসলেন।আর এই সুযোগে আমি গিয়ে বসলাম রাত ভাইয়ার পাশে। আমার যে কি খুশি লাগছে তা বলার ভাষা নেই আমার।মনে হচ্ছে আলীবাবা চল্লিশ চোরের গুহার পাসওয়ার্ড পেয়ে গেছে। খুশিতে চোখমুখে চকচক করছে।যে কেউ আমাকে দেখেই বলতে পারবে আমি কতো খুশি। আমার খুশি দিগুন করতে পাশ থেকে ঝড়ঝড়ে গলায় রাত ভাইয়া বলে উঠলেন,,
,,”কোনটা পছন্দ সোনা,,??”
আমি একটু ও অবাক হয়নি বললেই চলে ।কারণ সোনা বলে ডাকার ডেফিনেশন আমি আর ও আগেই জেনে ফেলেছি।কিন্তু আমার পরিবর্তে চমকালো ভালো আন্টি আর চিপকু ওরফে প্রিতি আপু। ভালো আন্টি ঝটপট করে প্রশ্ন ছুড়লেন রত ভাইয়ার উদ্দেশ্যে,,
,,”রাত ,,তুই মিষ্টি মাকে সোনা বলে সম্বোধন করলি কেন,,?(কিছুটা রাগের লক্ষন ও দেখা দিল)
আমার ডান পাশে থাকা চিপকু ও তীব্র উত্তেজনা দেখিয়ে প্রশ্ন করল,,
,”,হ্যাঁ তাইতো রাত,,বল।”
আমি একবার ও রাত ভাইয়ার দিকে তাকালাম না । কিন্তু চিপকুর চেহারার কি অবস্থা তা দেখার তীব্র বাসনা আমার মনে। অবাকের চড়ম সীমান্তে পৌছে গেছে তা কন্ঠে স্পষ্ট।তাই সোজাসুজি না তাকিয়ে আড় চোখে তাকালাম চিপকুর দিকে। মুখটা বাঁদরের মতো হয়ে গেছে। যতটা ফেকাসে হয়েছে তার থেকে বেশি হতবাকের ছাপ প্রকাশিত। চিন্তার চোটে কাঙ্ক্ষিত উত্তরের আশায় অনবরত ঠোঁট কামড়ে যাচ্ছে। আমি মনে মনে মিটমিট করে হাসছিল। মনের জলন্ত কুয়ায় কে যেন এক বালতি পানি ঢেলে দিয়েছে।যেখানে এক ফোঁটা সুখের খোজ ছিল না সেখানে দুঃখ ও যেন সুকান্ত হয়ে ধরা দিল । এখানে দুঃখ হলো উনি সত্যি আমাকে সোনা বলে ডাকছে না ।আর সুখ হলো চিপকুর চুপসে যাওয়া মুখটা।
রাত ভাইয়া একদম ঠান্ডা গলায় শাড়ি বাছার আন্দাজে বলছে,,
,,”আরে আম্মু এই সিম্পল জিনিসটা বুঝলে না??,,ওর নাম তো সোনালী তাই লী টা কেটে দিয়ে সোনা বললাম।”
আন্টির বাঁড়া ভাতে ছাই দেওয়ার মতো একটা হতাশার দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন,,
,,ও,,এই!!,আমি তো ভাবলাম ,,,,,।”(উনি আর কিছু না বলে মাথা নিচু করে নিলেন)।
অন্যদিকে চিপকু খুব খুশি। মুখে কিছু বলেনি কিন্তু মুখ দেখে বুঝলাম ওর অন্ধকার ঘরে আলোর জ্যোতির আবির্ভাব ঘটেছে। ময়ূরের পালকের মতো মতো হাসি ফুটে উঠেছে। আমি ও শাড়ি বাছাই করতে মন দিলাম। ভালো আন্টির জন্য একটা ওফ হোয়াইট কালারের শাড়ি পছন্দ করলাম। ওনার ও বেশ ভালো লাগলো। আমাকে আবার জেরিন ডাকল সেখানে গেলাম। এভাবে চলল তার চারটে ঘন্টা। তারপরও আরো অনেক কিছু বাকি তার জন্য আবার আসতে হবে।
আমার মতো সবাই ক্লান্তির চোটে নেতিয়ে পড়েছে।তাই ফুড কোর্টের দিকে রওনা হলো। আইসক্রিম আর ফুচকা ।রাত ভাইয়া বলেছে খাবে না। এসব নাকি আন হাইজেনিক। কিন্তু ওই যে চিপকু।স্বাদে কি নাম রেখেছি চিপকু। সারাদিন রাত ভাইয়ার সাথে চিপকে থাকে। এখনও তার ভিন্ন নয়।রাত ভাইয়া খাবে না কিন্তু সে খাওয়াবেন।মাথাটা খারাপ করে রেখেছে।ন্যাকা সুরে বলছে,,
,,”নাও না রাত,, প্লিজ নাও।”
রাত ভাইয়া বিরক্ত কন্ঠে বলছেন,,
,,”না প্রিতি । প্লীজ আমাকে ইনসিস্ট করিস না। আমি এসব খাই না,,!”
কিন্তু প্রিতি আপু নাছোড়বান্দা। কিছুতেই মানতে রাজি না। আবার গায়ে পড়ে বলছে,,
,, “প্লীজ রাত একটু খাও”।
এদের এই ন্যাকামি দেখে আমার আবার রাগ লাগছে।তাই ফুচকা আইসক্রিমে হাত বুলাচ্ছি আর ব্যাগ থেকে চুইংগাম বের করে চিবাতে শুরু করলাম। বেশি রেগে গেলে আমি এমন করি।এই ব্যাপারে শুরু জেরিন জানে আর কেউ না। আমি চুইংগামে রাগ ঝাড়ছি। বেশ খানিকক্ষণ চেবানোর পর একটু হালকা লাগছে। এবার একটু উঠে রাত ভাইয়া আর চিপকুর কাছে গেলাম। ঠান্ডা গলায় বললাম,,
,,আপু ,,!!,,ভাইয়া যখন খেতে চাইছে না তাহলে থাক,, আপনিই খান।ভাইয়া না হয় অন্য একদিন খাবে আপনার সাথে।”
চিপক উচ্চ বোধ হয় আমার কথায় একটু দমে গেল,,,রাত ভাইয়াকে খাওয়ানোর বৃথা চেষ্টা বন্ধ করল।আমরাও সবাই খাওয়া দাওয়া শেষ করলাম।তাই ক্লান্ত ব্যস্ত শপিং মল ছেড়ে এক টুকরো শান্তির আশায় বাসায় ফিরছি।
বাসায় ফিরে সোজা ওয়াশরুমে ঢুকলাম ফ্রেশ হতে।খুব ধকল গেছে আজ। তোয়ালে দিয়ে চুল মুছতে মুছতে ওয়াশরুম থেকে বের হলাম। বারবার ফোনে দিকে তাকিয়ে যাচ্ছি কাঙ্ক্ষিত ফোনের অপেক্ষায়। এতোক্ষণে তো কল চলে আসার কথা । এখনো এলো না কেন?? বলতে না বলতেই ফোন বেজে উঠল।,, ক্রিং ক্রিং,,,
ওপাশ থেকে উদ্বিগ্ন গলায় একটি মেয়ে বলছে,,
,,,”সোনু কাজটা তুই করেছিস না?? আমি জানি এটা তুই ছাড়া অন্য কারো কাছ না।”
আমার খুব হাসি পাচ্ছে শ্ ইচ্ছে করছে লুটোপুটি খাই।আর আপনারা ঠিক ভাবছেন,,ওপাশের মেয়েটা জেরিন। আমার কোনো উত্তর না পেয়ে উত্তেজিত গলায় বলছে,,
,,”কিরে কথা বলছিস না কেন ??,,জানিস বাসায় সব মাথায় তুলেছে।ওর চেঁচামেচিতে এতোক্ষণে বাসার সব ইঁদুর ,, তেলাপোকারাও লাপাতা হয়েছে। আমি জানি তুই ই বেশি রেগে গেলে চুইংগাম চাবাস। আমার সিক্সসেন্স বলছে তুই এই কাজ করেছিস।”
আমার এবার খুব হাসি পাচ্ছে। আমি খিলখিল করে হেসেই চলেছি।চিপকুর চেঁচামেচি ফোন ভেদ করে আমার কানে এসে পৌঁছেছে।এটা শুনার অপেক্ষায় তো ছিলাম এতোক্ষণ।
জেরিন ও হেসে দিল।আর বলল,,
,,”আর হাসতে হবে না আমি আগেই জানতাম প্রিতি আপুর চুলে কে চুইংগাম লাগিয়েছে।”
,, চলবে,,,,?❤️