#রোদে_ভেজা_মেঘ
#লিখাঃ Liza Bhuiyan
#বৈবাহিক_চুক্তি (সিজন ২)
#পর্বঃ ৬
“আর ইউ শিউর এই বিল্ডিং এ থাকে?”
“ইয়াহ বস, চার তলার সেকেন্ড এপার্টমেন্ট”
রোয়েন ভ্রু কিছুটা কুচকে তাকিয়ে আছে সামনের দশতলা বিল্ডিং এর দিকে, এই বিল্ডিংটা কিছুটা পরিচিত মনে হচ্ছে ওর, দেরি না করে লিফটের দিকে এগোলো, বাটনে ৩ ক্লিক করে করেই কিছু বিড়বিড় করলো “শুড বি ইট!”
চারতম ফ্লোরে এসে থামতেই একবার জোরে শ্বাস নিলো আর ভেতরে ঢুকে সেকেন্ড এপার্টমেন্টের কাছে গেলো যার দরজায় বড় বড় করে লিখা “এনা এন্ড ইনা’স কিংডম”
লিখাটার দিকে শান্ত দৃষ্টিতে চেয়ে একবার হাত বুলালো তারপর কলিংবেলে চাপ দিলো আর একটা মেয়ে এসে দরজা খুলে দিলো,
“ইউউউউউ!”
“ক্যান আই গো ইনসাইড?”
“ইয়াহ শিউর, হোয়াই নট?”
রোয়েন ভেতরে যেতেই দেখলো টিনি সাইজ সোফা, ক্লিন কিচেন, সামনে টিভি। চারপাশ দেখে মনে হচ্ছে ছোটখাটো একটা সংসার, ছোট্ট একটা ফেমিলি থাকে
“হেই মাই নেম ইজ এনাবেল ডিউক, ইউ ক্যান কল মি এনা।ইউ রিমেম্বার! দেট ডে… ”
” এনা! হোয়ারস ইউর ফ্রেন্ড?
“ইউ মিন ইনা? শি ইজ স্লিপিং ইনসাইড, ডিড ইউ কাম হেয়ার ফর হার?” সামনে থাকা একটা রুমের দিকে ইশারা করে।
“ইয়াহ, আই হ্যাভ সামথিং উইথ হার” রোয়েন কিছু না ভেবেই রুমের দিকে এগিয়ে গেলো যদিও জানে রুমের ভেতরে ঢুকলেই একটা মেসি গার্লকে দেখবে সে,
রোয়েনের মুখে ইনায়ার কথা শুনে এনার মুখটা একটু থমথমে হয়ে গেলো, ও ইনার থেকে বেশি সুন্দর, এলিগেন্ট আর গর্জিয়াছ। কিন্তু ওকে রেখে কোন ছেলে এই প্রথম ওর ফ্রেন্ডের খোজে এসেছে তাও সে যার উপর ও বড়সড় ক্রাশ খেয়েছে। না চাইতেও কেমন যেন জেলাসি কাজ করছে ওর মধ্যে,এমনিতেও সুন্দর মেয়েদের কেউ ইগনোর করলে তাদের ইগোতে তা খুব লাগে, শি ইজ বার্নিং ইনসাইড কিন্তু মুখে হাসি ঝুলে আছে যদিও তা আগের থেকে ফেকাসে হয়ে গেছে। কিছুটা রেগেই রান্না ঘরের দিকে এগিয়ে গেলো ও।
রোয়েন রুমের ভেতরে ঢুকে হেসে দিলো,একটা মেয়ে ঠিক কি লেভেলের বাচ্চা হলে বাচ্চাদের ড্রয়িং করে করে তা আবার দেয়ালে টাংগিয়ে রাখে। ছোট বাচ্চারাও ওর থেকে ভালো ড্রয়িং করতে পারে, সামনে ঘুমন্ত ইনায়াকে টেডিবিয়ার জড়িয়ে ঘুমিয়ে থাকতে দেখলো কিন্তু টেডিবিয়ার বড় না ও বড় তা নিয়েই কনফিউজড ও।
সামনে গিয়ে ইনায়াকে কয়েক বার দূর থেকেই ডাকলো কিন্তু তার কোন হুশ নেই, সকাল নয়টা বাজে আর এই মেয়েই এখনো ঘুমাচ্ছে! সময় নষ্ট করা মানুষ তার কখনোই পছন্দ না তার উপর নয়টা পর্যন্ত ঘুমাচ্ছে। হাউ ইরেস্পন্সিবল!
“এই মেয়ে এই উঠো! পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছো কেন? এত সকাল পর্যন্ত কেউ ঘুমায়?”
“উফফফ এনা বেব, লেট মি স্লিপ, আজকে কোন ক্লাস নেই তাই গো টু ইউর বিএফ। ডোন্ট ডিস্টার্ব মি ” বলে অন্য দিকে ফিরে ঘুমিয়ে গেলো, আর রোয়েন থম মেরে তাকিয়ে রইলো ওর দিকে যেন অবিশ্বাস্য কিছু শুনে ফেলেছে তারপর মুচকি হেসে চিবুক ঘষলো, একবার জোরে নিশ্বাস নিয়ে একটানে ইনায়াকে উঠিয়ে বসালো। আচমকা টানে ইনায়া বলদের মতো তাকিয়ে আছে আর কি হচ্ছে তা বুঝার চেষ্টা করছে
“আহহহহহহ! আপনি এখানে কি করছেন? চাদরে নিজেকে ঢেকে বললো কারণ ও শর্টস আর আন্ডারভেস্ট পরা। এই পরিস্থিতিতে একটা ছেলেকে এখানে বসে থাকতে দেখবে ভাবতে পারেনি, হাউ রিডিকিউলাস!!!
রোবটের মতো বসে হাতে থাকা পেপারগুলো উল্টেপাল্টে দেখছে ইনায়া চোখে মুখে বিস্ময়ের ছাপ, হলদেটে পেপারে ১নং পয়েন্ট, ২নং পয়েন্ট দিয়ে ইংরেজিতে অনেক কিছু লিখা যেমন করে চুক্তির ক্ষেত্রে শর্ত লিখা হয়।কিন্তু সবচেয়ে বড় ঝাটকা তখন খেলো যখন দেখলো কাগজের শেষে ওর নিজের স্বাক্ষর করা, বাপের জন্মে এমন কিছুতে সাইন করছে বলে ওর মনে পড়ছে না। চেহারায় ইয়া বড় এক প্রশ্নবোধক চিহ্ন ঝুলিয়ে সামনে থাকা ফর্মাল ড্রেসের লোকটির দিকে তাকালো,
একে তো ছুটির দিনে মন মতো ঘুমাতে পারলো না তারউপর সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠার পর দেখলো নতুন এক আপদ জুটেছে তাও কিসব কাগজ টাগজ দেখাচ্ছে। ইচ্ছে করছে সব ফেলে দিয়ে ঘুমাতে যেতে কিন্তু পারছে না তারউপর এনা ও নেই বাসায়। মানে আক্কেল কি মেয়ের! একা নিজের ফ্রেন্ডকে একটা স্ট্রেঞ্জার এর সাথে ফেলে চলে গেলো। মন চাচ্ছে ইচ্ছে মতো থাপড়াতে কিন্তু পারছেনা। তারউপর এই লোক কোন মেনার্স নেই, এভাবে কোন মেয়ের রুমে কেউ বিনা ওয়ার্নিং এ ঢুকে? প্রশ্নবোধক ফেস থেকে তা ক্রমশ বিরক্তিকর হয়ে যাচ্ছে ওর
“তখন থেকে এটা এটা উল্টেপাল্টে দেখেছো আবার আমার দিকে তাকাচ্ছ, কি ব্যাপার বলোতো?”
“অনেক গুলো প্রশ্ন কিন্তু কোথা থেকে শুরু করবো বুঝতে পারছি না ” ভাবুক দৃষ্টিতে বললো ইনায়া, ওর এই তাকানোতে না চাইতেও রোয়েনের হাসি পেলো কিন্তু এই সিরিয়াস মুহুর্তে হাসা যাবে না তাই গলা পরিষ্কার করে বললো,
“এমনিতেই তোমার জন্য সময় নষ্ট হয়েছে অনেক, আমি আমার লাইফে এই প্রথম কারো জন্য এতোটা সময় নষ্ট করছি, তাই দেরি না করে একটা একটা করে প্রশ্ন করে ফেলো ”
“এরমানে আপনার কোন গার্লফ্রেন্ড নেই, সেই… যেমনে থাকে আর মানুষের দিকে তাকায় মনে চোখ দিয়েই লাশ ফেলে দিবে, এই ব্যাটার লগে কোন মাইয়্যা সময় নষ্ট করবো? ” প্রথম কথাটা জোরে বললেও পরেরটা মিনমিনিয়ে বললো কিন্তু তা রোয়েনের শোনার জন্য যথেষ্ট ছিলো, তাই কিছুটা এটিটিউড নিয়ে বললো
“রোয়েন লিউস ফালতু কাজে সময় নষ্ট করে না”
“এটাই…” রোয়েনের দিকে আঙুল পয়েন্ট করে বললো ইনায়া যাতে রোয়েন কিছুটা থতমত খেয়ে যায়, কিন্তু ইনায়া একরাশ বিস্ময় নিয়ে বলে
“আপনি বাংলা এতো স্পষ্ট কি করে বলতে পারেন? দেখতে তো পুরা ইংরেজের ব্যাটা নামও সেইরাম মাগার বাংলা বলবার পারে কেমতে?”
“এইরকম উদ্ভট ভাষা কে শিখায় তোমাকে?” কিছুটা নাক ছিটকে কথাটা বললো রোয়েন
“এই কথা চেঞ্জ করবেন না, আমার আঞ্চলিক ভাষা শিখতে ভালো লাগে তাই শিখি কিন্তু কথা তো সেইটা না, কথা হচ্ছে বাংলা ভাষায় আপনি এতো ভালো কি করে বলতে পারেন?”
“তুমি কি করে বলতে পারো?” ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করলো রোয়েন
“আমি বাঙালী তাই! তাছাড়া জন্ম এখানে হলেও আমার ফেমিলির সবাই বাংলায় কথা বলে সেই হিসেবে আমি পারি, কিন্তু আপনি কিভাবে পারেন?”
“আমিও তাই ”
“আপনি বাংলাদেশি?ইম্পসিবল,আপনি দেখতে একদমি বাঙালী না তাছাড়া আপনার নাম রোয়েন লিউস কেন?” সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকালো ওর দিকে
“নাম দিয়ে কি এসে যায় আমি বাঙালী সেটা তুমি বললেও আর না বললেও ”
ইনায়ার সন্দেহ যেন দূরই হচ্ছে না যে সামনের সাদা চামড়ার মানুষটি বাঙালী, হঠাৎ মনে পড়লো ওর মামাও সেম দেখতে, হঠাৎ দেখলে ধরাই যায় না সে বাঙালী। ওয়েট, নিজের মামার সাথে এই লোকটির তুলনা করে নিজেই যেন বোকা বনে গেলো ও। কিন্তু লোকটির সাথে কোথাও একটা যেন মামার খুব মিল বিশেষ করে ওই বাদামি চোখদুটো! মামার সাথে খুব মিলে যায় যেন মামার যৌবনের রুপ কিন্তু মামার সাথে এই অদ্ভুত মিলানোতে নিজেই যেন অবাক হলো,
“এই কোথায় হারিয়ে গেলে তুমি?” সামনে তুড়ি বাজিয়ে রোয়েন বললো
“আপনি আমাকে ওইদিন তো আপনি আপনি বলেছিলেন, আজ হঠাৎ তুমি হয়ে গেলাম? আমি আপনার পরিচিত কেউ?”
“প্রথমত তুমি আমার চেয়ে ছোট আর দ্বিতীয়ত তুমি আমার এমপ্লয়ি তাই আপনি করে ডাকার কারণ খুজে পাচ্ছিনা ”
“লে হালুয়া আপনাকে ভালো করে চিনিই না আবার এমপ্লয়ি হলাম কবে? আমি তো ইন্টার্ভিউ দেই নি! তা এমন জিনিস কোথায় লিখা আছে? ”
“আপনার হাতে থাকা পেপারে ” হাতের দিকে ইশারা করে “এটা ব্যাসিকালি একটা কন্ট্রাক্ট পেপার যেখানে অনেক গুলো রুলস লিখা আছে আর এটাও লিখা আছে যে তুমি আমার সকল কথা শুনতে বাধ্য এবং তোমার সাইন এটাতে আছে তাই এটা লিগাল”
ইনায়া একবার পেপারের দিকে তাকাচ্ছে তো একবার রোয়েনের দিকে
“আমি এমন কোন পেপার সাইন করিনি”
“তোমার কি মনে হয় ওইদিন রাতে তোমাকে আমি এমনিই সাদা কাগজে সাইন করতে বলেছিলাম?আমাকে কি পাগল মনে হয়? অবশ্যই কোন কারণ ছিলো এর পেছনে আর তা হচ্ছে এই কন্ট্রাক্ট”
ইনায়া এবার বুঝতে পারলো ওই কাগজ এমনি এমনি সাইন করেনি ও বরং তার পেছনে অনেক বড় কারণ ছিলো
“আমি আমার লাইফে আমার মতো চলি, আমার ফ্রিডমে আমার বাবা মাও হস্তক্ষেপ করে না থাকতো বাইরের লোক তাই ইনায়া চৌধুরী আপনার কথা শুনবো? ইন ইউর ড্রিমস, কতো টাকা লাগবে বলেন আমি দিয়ে দিচ্ছি” কিছুটা রাগি কন্ঠে বলে উঠলো ইনায়া
” টেন মিলিয়ন ডলার তাও ওয়ান উইকের মধ্যে ”
“হোয়াট? ওইদিন তো ওয়ান লাক ডলার ছিলো!” ওর চোখ যেন কোটর থেকে বেরিয়ে আসবে এতো টাকা কোন ভাবেই জোগাড় করা সম্ভব নয়।
“ওইটা মাইনর সাম ছিলো বাট এখন এটা দিতে হবে নাহয় আমি যা বলবো তাই করতে হবে, কন্ট্রাক্ট এ তাই লিখা আছে ”
ইনায়া অসহায় দৃষ্টিতে কনট্রাক্টের দিকে তাকালো তারপর কিছু মাথায় আসতেই কন্ট্রাক্ট তুললো আর এটাকে দুই টুকরো করে ফেললো
“কোথায় কন্ট্রাক্ট আমিতো দেখছি না? আমাকে বশ করা এতো সোজা নয়, এখন না থাকবে বাজ আর না বাজবে বাসুরি ”
হাতে থাকা পেপারগুলোর দিকে তাকিয়ে তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে,,
#চলবে
(কালকে ইনান আর সামুকে নিয়ে লিখা হবে, আজ লিখতে পারিনি তাই স্যরি)