বৈবাহিক চুক্তি পর্ব ৫

#রোদে_ভেজা_মেঘ
#লিখাঃ Liza Bhuiyan
#বৈবাহিক_চুক্তি (সিজন ২)
#পর্বঃ ৫

অডিটোরিয়ামের বাইরে এসে যেন হাফ ছেড়ে বাচলো ইনায়া, এতোক্ষন যেন দম আটকে ছিলো ভেতরে, শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিলো কারণ একেকটা নিশ্বাস সাবধানে নিতে হচ্ছিলো নাহয় কখন পকেট থেকে গান বের করে বলে “এই ওয়ানা টেক ইউর লাইফ ”

লাইফে ভিলেনদের খুব পছন্দ তবে এতো ভিলেন না আস্ত একটা কিলার, লোকটি দেখে কতো ভালো ভেবেছিলো কিন্তু এখন নিজের ভাবনা কেই চড় মারতে ইচ্ছে হচ্ছে, ডিসগাস্টিং পিপল

সারাটা সময় ধরে ওইখানে লোকটির পাশে বসে থাকতে হয়েছে ভেবেই গা শিউড়ে উঠলো, লোকটি সত্যিই পাগল, ওইখানে থাকা একটা সুন্দর হার নিলামে উঠানো হয়েছিলো যা দেখতে বেশ পুরোন মনে হচ্ছিলো, ওইখানের একটা লোক সেটা পছন্দ করেছে প্রায় সেটা তার হয়ে যাবে এমন সময় আমার হাতে থাকা ব্যচ হাতসহ তুলে ধরলো।
আর তারপর শুরু হলো দুপক্ষের নিশ্চুপ স্নায়ু যুদ্ধ। শেষমেশ ওই পক্ষ হার মেনে নিলো আর হারটি তার হয়ে গেলো। সামান্য একটা হার কেউ ১.৫ মিলিয়ন দিয়ে কিনে ওর জানা ছিলো না। ওই মুহুর্তে লোকটিকে চরম বোকা মনে হয়েছিলো ওর কিন্তু কাহিনী যদি ওইখানে শেষ হয়ে যেতো তাহলে তো হতোই!

এই লোকটি সেই লোকের এসিসট্যন্টকে ডাক দিলো আর হারটি ফ্রি ফ্রি তাকে দিয়ে দিলো, মানে দুনিয়াতে এমন পাগলও আছে যেকিনা নিজের টাকা খরচ করে কিনে তারপর তা অন্যজনকে দিয়ে দেয়?

এমন অদ্ভুত লোকের সাথে থাকতেই ভয় করেছিলো ওর তাই শেষ হওয়ার সাথে সাথেই “আমি আসছি” বলে বাইরে চলে এসেছে ও, কাউকে কিছু বলার সুযোগ দেয়নি যদিও শিউর ছিলো ওইলোক কিছু বলবেনা, আস্ত একটা গম্ভীর! মানুষ কথা না বলে থাকে কি করে সেটাই ভেবে পায়না ও।

ড্রেসিং রুমে এসে ড্রেস বদলে ব্লু জিন্স আর টিশার্ট পরে নিলো সাথে উপরে শার্ট সিস্টেম কোটি পরে নিলো, মেকাপ তুলে ফেলার পর এখন যেন আরাম লাগছে। মেয়েলি ড্রেস কেন জানি অনেকটাই অপছন্দ তবে বাসায় থাকলে তাই পরতে হয় কিন্তু এখানে এগুলোই পরে।

সব গুছিয়ে বেরিয়ে পড়লো এপার্টমেন্টের উদ্দ্যেশ্যে যেই বেরুতে যাবে তখন কয়েকজন কালো পোষাক ধারী লোক ওর সামনে এসে দাঁড়ালো, তাদের মধ্যে একজন কিছু বলতে যাবে তার পুর্বেই ইনায়া গেটের দিকে ছুটলো কিন্তু শেষরক্ষা হলো, কিছুদূর সামনেই আরো কয়েকজন এসে দাড়ালো তাই পালানো অসম্ভব, তাই তাদের কথা শুনাই বুদ্ধিমানের কাজ মনে হলো

“মেম প্লিজ কাম উইথ আস, স্যার ইজ ওয়েটিং ফর ইউ”

“হু ইজ ইউর স্যার?”

“মেম প্লিজ কাম উইথ আস, ইউ উইল নো”

অনুষ্ঠান শেষ হয়েছে অনেকক্ষণ তাই স্টুডেন্টরা সবাই আগেই চলে গিয়েছে আর টিচার্সরাও, নিলামে যারা ছিলো তারা প্রায় সবাই চলে গিয়েছে, কিছু ওয়াচম্যান আছে তবে তারা এগুচ্ছে না তাই এখানে বর্তমানে চিৎকার করেও বিশেষ লাভ হবে না, সুতরাং তাদের ফলো করাই শ্রেয়!

যত একটু পথ যাচ্ছে ততটাই ভয় পাচ্ছে ও, রাত প্রায় এগারোটার কাছাকাছি, এই মুহুর্তে কোন ছেলে ওকে ডেকেছে সেটা ভাবতেই কেমন যেন লাগছে ইনায়ার , রুমের কাছে যেতেই বডিগার্ড গুলো থেমে গেলো আর ভেতরে যাওয়ার ইশারা করছে, ভিতরে ঢুকেই একজনকে কপালে আংগুল ঘষতে দেখলো, ওর ঢুকার আওয়াজে ওর দিকে তাকালো, সামনে পরিচিত ফেস দেখে স্বস্তি পেলো ও,

“মিস্টার লিউস!”

ওর দিকেই তাকিয়েই হাতের ইশারা করলো আর তাতেই একজন গার্ড কিছু একটা ওর হাতে দিলো যাতে ইংলিশে লিখা আছে, ও না পড়েই সামনের লোকটির দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালো যা মানুষটি ঢের বুঝতে পারলো,

“এটা হচ্ছে পেইন্টিং ফি যা কয়েক ঘন্টা আগে আপনি নষ্ট করে দিয়েছেন, কেশ দিবেন ওর চেক?”

লোকটিকে বাংলায় এতো স্পষ্ট কথা বলতে দেখে ইনায়া যেন একশো আশি ভোল্টের শক খেলো, তারমানে ওইদিন ও যা বলেছে তার সব এই লোক বুঝে গেছে?
ইনায়া স্ক্যান করতে থাকলো সামনে থাকা ব্যাক্তিটিকে, কোন এংগেলে একে বাঙালি মনে হচ্ছে না অথচ বাংলায় এতো ফ্লুয়েন্টলি কি করে কথা বললো?

“আমাকে দেখা হয়ে গেলে প্রশনের জবাব দিতে পারেন”

“আমি আপনাকে কখন… ”

“ডোন্ট ওয়েস্ট মাই টাইম ” চেহারায় কঠোরতা ফুটিয়ে বললো রোয়েন, মেয়েদের সাথে কথা বলা তার কোন কালেই পছন্দ নয় তাই পৃথিবীর সব নেশা করলেও মেয়ের নেশা ওর নেই, তাই ইনায়ার এভাবে ওকে স্ক্যান করাতে মহা বিরক্ত সে,

ইনায়া চোখ বড় বড় করে টাকার এমাউন্টের দিকে তাকিয়ে আছে, ১০০০০০ডলার?কিছুটা চেঁচিয়েই বলে উঠলো,

“সামান্য পেইন্টিং এর জন্য এতো টাকা ”

নিজের পেইন্টিং এর অপমান কোন কালেই পছন্দ নয় রোয়েনের তাই এই সামান্য কথাটা তার রাগ উঠানোর জন্য যথেষ্ট ছিলো, ও ভেবেছিলো মেয়েটি স্যরি বলে দিলে ছেড়ে দিবে কিন্তু এই বিষয় এখানে শেষ হবে না, ও হতে দিবে। হাত মুঠো করে ইনায়ার দিকে তাকালো ও,

“ইটস নট ইভেন দ্যা মাইনর এমাউন্ট, পে ইট এন্ড গো ”

“বাট আমার কাছে এতো টাকা নেই ”

“তাহলে বাসায় গিয়ে দিয়ে দিবেন, আমার বডিগার্ড যাবে আপনার সাথে ”

“আরে বাবা বাসায় ও নেই থাকলেতো… দেখুন আপনার তো অনেক টাকা সামান্য একটা পেইন্টিং এর জন্য এমন করছেন কেন? আপনি চাইলেতো আবার বানাতে পারবেন, বিষয়টা এখানেই শেষ করে দিন না!”

রোয়েন উঠে দাঁড়াল আর ইনায়ার দিকে এগুতে এগুতে বললো

“আমি আপনার আত্মীয়? বয়ফ্রেন্ড না হাজবেন্ড? ইভেন আমি কি আপনাকে চিনি?”

ইনায়া থতমত খেয়ে মাথা নাড়াল যে কেউ না

“তাহলে আমার যতই টাকাই থাকুক আপনার পেছনে কেন খরচ করবো! ”

কথাটা যুক্তিসংগত মনে হলো ওর, ও তো কিছুই হয়না তাহলে কেন করবে কিন্তু ওর কাছেতো এতো টাকা নেই তাই দেয়া সম্ভব না আর পাপার কাছে চাওয়াও সম্ভব না, অনেক গুলো প্রশ্ন করবে আর ও মিথ্যে বলতে পারবে না। কি করবে এখন!

ইনায়াকে গভীর ভাবে ভাবতে দেখে রোয়েন গলা পরিষ্কার করলো আর সামনে একটা সাদা কাগজ এগিয়ে দিলো

“সাইন হেয়ার এন্ড গো হোম ”

সাদা কাগজ দেখে ইনায়া ভ্রু কুচকে তাকালো, এই লোক কি আসলেই পাগল? সাদা কাগজে সাইন করতে বলছে!

“বাসায় যেতে চান?”

ইনায়া ভাবুক দৃষ্টিতে বললো “হুম”

“তাহলে সাইন করে দেন, আমার গার্ড পৌছে দিবে আপনাকে ”

ইনায়া তাড়াতাড়ি সাইন করে বেরিয়ে পড়লো এই পাগলের পাল্লায় না পড়াই বেটার, ইনায়া যেতেই গার্ড এসে কিছু একটা রোয়েনের হাতে দিলো যাতে দেখে ও একটু অবাক হলেও পরে মুচকি হাসলো।

🌸🌸🌸

“বস মেয়েটিকে খুজে পায়নি তবে এখানে ডিটেইলস আছে মেয়েটির, কোথায় থাকে কি করে সব ”

হাতের থাকা পেপারটায় একবার চোখ বুলিয়ে নিলো তারপর হাস্যজ্জোল মুখটিতে হাত বুলিয়ে বললো

“বেবি গার্ল, সুন ইউ আর গনা বি মাইন। গেট রেডি ফর ইট”

#চলবে

“কেমন হয়েছে জানিনা, কমেন্টে জানাবেন “

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here