বৈবাহিক চুক্তি পর্ব ৪

#রোদে_ভেজা_মেঘ
#লিখাঃ Liza Bhuiyan
#বৈবাহিক_চুক্তি (সিজন ২)
#পর্ব-৪

রেড গাউন পরা মেয়েটিকে নেশাক্ত চাহনিতে দেখেই যাচ্ছে গৌর বর্ণের লম্বাটে ছেলেটি যেন কত যুগ পর ভিন্নরকম সুন্দরির দেখা মিললো,, এই লন্ডন শহরের ফর্সা গড়ন বা কালো গড়ন দেখতে দেখতে ক্লান্ত হয়ে উঠা মন যেন হঠাৎ এক পসলা আলোর দেখা পেলো,,সাদা আর কালোর মিশ্রণে গড়া অদ্ভুত এক সৌন্দর্য যাকে বলে শ্যামল সুন্দরি,, যত তার দিকে তাকাচ্ছে ততই যেন চাহনি নেশাক্ত হয়ে উঠছে যেন প্রত্যেক পলকে কেউ একচুমুক রেড ওয়াইন খাওয়াচ্ছে তাকে,ক্রমশ গভীর নেশায় আসক্ত হচ্ছে সে আর তাকে পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা শত গুন বেড়ে যাচ্ছে, এই মেয়েটিকে তার চাই একদিনের জন্য হলেও খুব করে চাই। তর্জনী আংগুল দিয়ে নিজের চিবুক ঘষতে ঘষতে ভাবছে সে আর নয়ন যুগল দিয়ে গিলে খাচ্ছে তাকে যেভাবে বাজ তার শিকারের দিকে তাকিয়ে থাকে,, এক সেকেন্ডের জন্য দৃষ্টি সরিয়ে কাউকে মেসেজ করলো তারপর আবার পুর্বের খেলায় মেতে উঠলো।

গানটা শুরু করার সময় যতটা নার্ভাস ইনায়ার লেগেছিলো গানের শেষ মুহুর্তে এসে সেটা এনজয়মেন্টে পরিণত হয়েছে,, সামনে বসে থাকা দর্শকদের ভালো রেসপন্স পেয়ে নিজের খুব ভালো লাগছে আর গানটা সম্পুর্ণ মন থেকে গেয়েছে। সবার করতালিতে খুশিরা যেন আরো জড়োশড় হয়েছে,

সবার দিকে তাকিয়ে খুব সুন্দর একটা হাসি দিয়ে স্টেজ থেকে নেমে গেলো ও আর রাফিন, ছেলেটি খুব ভালো গান গায় আর সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে ও বাংলাদেশি মানে ঢাকার গতকাল অনুষ্ঠানের সব ঠিক করার সময় জানতে পেরেছে কারণ রাফিন তার মায়ের সাথে বাংলায় কথা বলছিলো। ছেলেটি খুব কম কথা বলে তবে ভালো মনের দেখেই বুঝা যায়, পড়াশুনা ছাড়া লাইফে আর কিছুই নেই, কথার ছলে বুঝতে পারলো ওর মাকে খুব ভালোবাসে ও আর তাই ভালো কিছু করার জন্য এতোদুর আসা।

“তোমার গলা অনেক সুন্দর রাফিন, ইংলিশ গান এতো ভালো গাইতে পারো ভাবতে পারিনি ” ইনায়া উৎসুক দৃষ্টিতে চেয়ে বললো।

“আমি জাস্টিন বিবাড় এর ফ্যান সেই সুবাদে অনেক ইংলিশ গান শেখা হয়েছে আর এইটা রিসেন্ট ফেভারিট” শান্ত গলায় বললো রাফিন,

“বাট এই ডোন্ট লাইক হিম,কেমন জানি ভালোলাগে না, হি ইজ সো ডিসগাস্টিং”

“তোমার পার্সোনাল অপিনিয়ন সেটা, কাউকে ভালো নাই লাগতে পারে ” বলেই ছেলেদের রেস্টরুমের দিকে অগ্রসর হলো রাফিন।

ইনায়া ভেবেছিলো ফেভারিট সিংগারকে নিয়ে বললে পাল্টা কিছু বলবে কিন্তু না বলে নি বরং সম্মানের সহিত বিষয়টাকে এড়িয়ে গেলো,
ওর সবচেয়ে বড় যে জিনিসটা ইনায়ার ভালোলাগে তা হচ্ছে কোন মেয়ের সাথে কথা বললে ও দৃষ্টি অবনত রেখে কথা বলে, কখনো তাদের দিকে তাকায় না।

আজকাল পুরো বিশ্বের সবচেয়ে ট্রেন্ডিং টপিক হচ্ছে “রেপ” যার প্রধান কারণ হিসেবে অনেকেই সবাই নারীর পর্দা না করাকে উল্লেখ করেছেন বা বাইরে বের হওয়াকে।হ্যা মুসলিম হিসেবে পর্দা করা ফরজ তবে তা উভয়ের জন্য। নারীর পর্দা যেমন ঢেকে চলা, পুরুষদের পর্দা তার দৃষ্টি অবনত রাখা যা নিতান্তই সহজ একটি কাজ, নারীদের দিকে সবাই আংগুল তুলা মানুষগুলো নিজেদের কাজ কি ঠিকমতো করছেন? নারীদের ইসলামিক জ্ঞান দেয়ার আগে নিজেদের কি জ্ঞান দিচ্ছেন?। না বরং তাদের এমন একটা ভাব যে নারী পাবলিক প্লেসে থাকলে তারা পাবলিক প্রপার্টি হয়ে যায়। কিন্তু কথা হচ্ছে যদি ড্রেসেই সমস্যা হতো তবে ষাটোর্ধ নারী কিংবা আটমাসের শিশু এই ঘটনার স্বিকার হতো না! আর বোরকা পরা মেয়েটিও তার সম্ভ্রম হারাতো না। সবকিছু মুলে রয়েছে দৃষ্টি আর চিন্তাধারা যা বদলানোর প্রয়োজন,ঘটনাগুলোতে মেয়েরা কোন ভাবেই সেফ না তবে যদি সেসব ছেলেগুলো নিজেদের সংযত করতো আর দৃষ্টি অবনত রাখতো তবে একটি ঘটনাও ঘটতো না। তাই মেয়েদের নয় ছেলেদের শিক্ষা দেয়া উচিৎ তারা কিভাবে নারীদের সম্মান দেখাবে কারণ মনে রাখতে হবে দুনিয়া গোল, তুমি যা শুরু করবে,তোমাকে দিয়েই তার শেষ হবে। তোমরা পুরুষরাই কোন একদিন কন্যা সন্তানের বাবা হবে তখন নিজের মেয়ের লাশ যদি দেখার ইচ্ছে নাহয় তবে অন্যের মেয়েকে লাশ বানিও না

আজকের এই যুগে রাফিনের মতো ছেলেদের খুব দরকার যে মেয়েদের লালসা নয় সম্মানের চোখে দেখে কারণ তার ঘরেও মা বোন রয়েছে। ইনায়া দীর্ঘনিশ্বাস ফেললো, বাংলাদেশের প্রতি ছোট থেকেই আলাদা টান অনুভব করে ও তাই শখের বসেই বাংলা শিখা আর বাংলাদেশের খবরও নিয়মিত রাখা হয়।

রেস্টরুমের দিকে এগিয়েই যাচ্ছিলো তখন প্রিন্সিপাল স্যার বললেন একটু পরে নিলাম শুরু হবে আর চিফ গেস্টের সাথে ওকে উপস্থিত থাকতে হবে, বিষয় শুনে কেমন খটকা লাগলো ওর তারপরেও এগিয়ে গেলো, লন্ডনের একটা নিয়ম রয়েছে, বিশেষ ফাংশনে বিশেষ ব্যাক্তিদের সাথে নারী স্বংগি থাকে যাদের পার্টি পার্টনার বলে তারা, হয়তো তাই ওকে নিলামে থাকতে বলছে। তাই গেস্টরুমের দিকে এগিয়েই যাচ্ছিলো তখন দেখলো একজন সুদর্শন ছেলে বেরিয়ে আসছে যার পেছনে অনেক গুলো বডিগার্ড রয়েছে, মানুষটিকে ও চিনে,

“হেই ইউউ! আই নো ইউ,, রিমেম্বার দ্যাট মর্নিং?” বলেই এগোতে যাবে আর গাউন হিলে বেজে যাওয়াতে পড়েই যাচ্ছিলো কিন্তু ছেলেটির হাত ধরে ব্যালেন্স করে নিলো
কিন্তু সামনের ছেলেটি এমন ভাবে তাকালো যেন সে ওর উপর মহা বিরক্ত, হেল্প তো করলোই না উল্টো হাত ছাড়িয়ে নিলো আর ব্যালেন্স করতে না সামনে থাকা কিছু একটার সাথে ধাক্কা খেলো আর জিনিসটা পড়ে গেলো । আর ওইটা সহ পড়ে গেলো, সামনে তাকিয়ে দেখে পেইন্টিংটি পুরো নষ্ট হয়ে গিয়েছে, ও অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে

“মিস্টার লিউস আম সো স্যরি ফর দিস”

“লেটস গো টু দ্যা ফাংশন ” বলেই হনহন করে হেটে চলে গেলো লোকটি আর ইনায়া বুঝতে পারলো এই লোকটিই আজকের চিফ গেস্ট আর ফেমাস পেইন্টার “রোয়েন লিউস”, কিছু না বলাতে ও ভেবেই নিলো যে এই টপিক এখানেই শেষ কিন্তু এতো বড় কান্ড করার পরও প্রিন্সিপাল ওকে ওই লোকের সাথে অডিটোরিয়ামে পাঠালো, কি অদ্ভুত লোক রে বাবা!

আধ ঘন্টা ধরে “রোয়েন লিউসের “ব্যাচ নিয়ে বসে আছে ইনায়া আর বিষয়টাতে ও চরম বিরক্ত। এই লোকটি না তার ব্যাচ এএকবারো উঠাতে বলছেনা, গম্ভীরভাবে শুধু অনুষ্ঠান দেখেই যাচ্ছে, তাহলে থাকার দরকার কি এখানে! তখনি সামনে তাকিয়ে সেই অপুর্ব পেইন্টিং দেখলো, ও মুচকি হাসি দিয়ে পাশে তাকাতেই দেখে চোয়াল শক্ত করে ফোনের দিকে তাকিয়ে আছে লোকটি, ও একটু কিউরিয়াস হয়েই ফোনের দিকে তাকালো আর যা দেখলো তাতে ও চোখ বড় বড় করে সামনে তাকিয়ে গেলো মনে হচ্ছে নড়া চড়া বন্ধ হয়ে গেছে ওর, মেসেজের কথা ভাবতেই রোম দাঁড়িয়ে গেলো আর সেইদিন রাতের কথা মনে পড়ে গেলো,,কি ভয়ানক!

“টুক এওয়ে দ্যা পেইন্টিং অর আই উইল শুট ইউ রাইট নাও”

#চলবে

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here