#রোদে_ভেজা_মেঘ
#লিখাঃ Liza Bhuiyan
#বৈবাহিক_চুক্তি (সিজন ২)
#পর্বঃ ১১
কয়েকদিন ধরেই হালকা কাশি হচ্ছিলো সায়ানের সাথে তীব্র বুকে ব্যাথা কিন্তু নতুন প্রজেক্ট নিয়ে খুবই ব্যস্ত ছিলো তাই ডাক্তারের কাছে যাওয়ার সময় হয়ে উঠেনি।ভাবছে একদিন সময় বের করে যাবে। ওয়াশরুমে যাবে তার আগেই কেমন জানি বুকে ব্যাথা শুরু হোলো তাই ওয়াশরুমের দরজার সামনে বসে পড়লো কাউকে যে ডাকবে তাও পারছে না। হঠাৎ করেই কেশে উঠলো আর সাথে সাথেই হাতে কিছু তরল পদার্থ ফিল করলো, হাত সামনে নিতেই তাজা রক্ত দেখতে পেয়ে আতকে উঠলো, তখনি কেউ দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকছিল তাই হাত পেছনে লুকিয়ে ফেললো,,
মুখে মুচকি হাসি ঝুলিয়ে সামনে তাকাতেই রুশিকে দেখতে পেলো, কলাপাতা রঙের শাড়ি পড়া নেই কোন সাজগোছ না পড়েছে চুড়ি আর না চোখের নিচে কাজল দিয়েছে। তবুও কি স্নিগ্ধ লাগছে, চুল থেকে টপটপ করে পড়া পানি সেই স্নিগ্ধতা কে আরোও কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে, এই এক নারী যার প্রেমে ও বারবার পড়তে রাজি আছে নতুন ভাবে। একটা দুটো চুল হালকা পাক ধরলেও সৌন্দর্য যেন আগের থেকে বহুগুণ বেড়ে গিয়েছে। আজ এতোগুলা বছর ও এই মানুষটির সাথে কথা বলে না কিন্তু রোজ চোখে চোখে ওদের হাজারো কথা হয় শুধু বলার সময় কথা ফুরিয়ে যায়। প্রথম প্রথম খুব কথা বলার চেষ্টা করলেও সেই অভ্যাস ত্যাগ করেছে বহুকাল হয়েছে, আজকাল নিজের মধ্যেও অভিমানের শিরদাঁড়া গেড়েছে অনেক ইচ্ছা থাকলেও মুখে টু শব্দটি বের করেনা।
একাকিত্ব যেন গ্রাস করেছে ওকে, রুশি ওর জীবনে আসার পর যেই একাকিত্ব ঘুচেছিলো তা যেন শত গুন বেড়ে গেছে। মাঝে মাঝে খুব বলতে ইচ্ছে হয় যদি আমার হবেই না তবে কেনো এলে জীবনে? কেন ভালোবাসার লোভ দেখিয়ে মাঝ পথে হাত ছেড়ে দিলে? তুমি কি জানো আমি এক ফ্রিজ হৃদয়হীনার প্রেমে বারবার পড়ি কিন্তু সেই নারীর পাথরের তৈরি, এক মুহুর্তেও বুঝেনি আমায়, কখনো বুঝেনি। শান্তশিষ্ট মানুষগুলো সহজে রেগে যায় তবে তাদের রাগ সবচেয়ে ভয়ংকরী আর অভিমান তার থেকেও বেশি!
রুশি খাবার রেখে কিছুক্ষণ সায়ানের দিকে তাকিয়ে তারপর রুম থেকে বেরিয়ে এলো, কিছু বলতে চেয়েছিলো শত চেষ্টার পরেও একটা শব্দ বের হলো না, সব যেন দলা পাকিয়ে গিয়েছে। নিজের সাথে একপ্রকার যুদ্ধ করে শেষমেশ বেরিয়ে এলো। খুব ভালো করেই বুঝেছে সায়ান কিছু লুকাচ্ছে কিন্তু কি?
–
–
–
“এই যে শুনছেন আমি বাসায় যাবো”
“চুপচাপ ঘুমাও নাহয় তুলে আছাড় মারবো”
“এই আপনি কি মারামারি আর খুন খারাবি ছাড়া আর কিছু পারেন না?”
“নাহ পারি না! তুমি কি চাও তোমার উপরেও ট্রাই করি? চুপচাপ ঘুমাও তুমি এমনিতেই খুব দুর্বল ” কিছুটা শক্ত কন্ঠে বললো
“জল্লাদের বংশ জল্লাদ” বিড়বিড় করে কথাগুলো বললো ইনায়া।
একটা মানুষ কতক্ষণ ঘুমিয়ে থাকতে পারে? দুদিন যাবৎ খাওয়া মেডিসিন আর ঘুম ছাড়া আর কোন কিছুই করছে না। ঘুমাতে ঘুমাতে বিরক্ত হয়ে গেছে ও,আর এই লোক এই দুদিন ধরে এইখানেই আছে। ছায়ার মতো পড়ে আছে। হাসপাতালে থাকতে ওর প্রচুর বিরক্ত লাগছে, খুব কান্না পাচ্ছে তাই থাকতে না পেরে কেঁদেই দিলো তবে আওয়াজ হচ্ছে না কিন্তু থেকে থেকে কেঁদে উঠছে যাতে শরীর হালকা কাঁপছে।
রোয়েন ল্যাপটপে অফিসের কাজ করছে, পুরো রুম জুড়ে পিনপিন নিরবতা তাই মৃদু নাক টানার আওয়াজ শুনা যাচ্ছে। ও চোখ উঠিয়ে ইনায়ার দিকে তাকালো, ওর দিকে পিঠ দিয়ে শুয়ে আছে, গভীরভবে লক্ষ্য করতেই দেখলো ও কেঁপে কেঁপে উঠছে। ও ল্যাপটপ ওফ করে ইনায়ার দিকে ছুটে আসলো
“ইনায়া এই তুমি কাঁদছ কেন?”
রোয়েনের কন্ঠ শুনে ইনায়া থেমে গেলো যা রোয়েন বুঝতে পারলো তাই বেডের পাশে বসে বসলো তারপর কাধে হাত রেখে বললো
“ইনু এই ইনু! ডোন্ট ক্রাই প্লিজ ”
রোয়েনের এই আকুতি কন্ঠ শুনে ইনায়ার কান্নার বেগ বেড়ে গেলো, ওকে কেউ ছোট থেকে কেউ ধমক দিলে ওর খুব কান্না পায়। ও রোয়েনের দিকে ফিরে ওর হাত চেপে ধরে কান্না করতে থাকে
“লিসেন আম স্যরি, কান্না করছো কেন? স্যরি তো!”
“আপনি ব_কা দি_দিলেন কেন আমাকে?আমাকে কেউ ধমক দিলে আমার কান্না পায়”
রোয়েনের শার্টের কোনায় নাক মুছে বললো , ও আসলে রোয়েনের হাত ধরেছেই নাক মোছার জন্য। এর জন্য ওর কান্না করতে হয়েছে তাহলে এর হাতেই নাক মুছবে হুহ। রোয়েন নাক ছিটকে তাকালো তারপরও কিছু বললো না
“আচ্ছা ঠিক আছে স্যরি আর ধমক দিবো না এবার কান্না থামাও প্লিজ, দেখো এই যে স্যরি ”
“কান ধরে বলেন নাহয় ক্ষমা করবো না ” নাক টেনে বললো
“হোয়াট দ্যা? আমি কি ওয়ান টু এর বাচ্চা যে কানে ধরবো?”
“এএএ আপনি কানে ধরবেন না কেন?” বাচ্চাদের মতো কান্না করে
“আচ্ছা এই থামো, এই দেখো কানে ধরেছি এবার চুপ করো”
“হুম ঠিক আছে এবার আইস্ক্রিম নিয়ে আসেন, আমি খাবো ” পাপ্পি ফেস বানিয়ে বললো ইনায়া
রোয়েন এই ফেস কিছুতেই ইগনোর করতে পারবে না তাই বললো
“ঠিক আছে নিয়ে আসছি বসো ”
এই মেয়েটা ঠিক ওকে ম্যানেজ করে নেয়, শেষমেশ কানে ধরতে হলো ওকে! কিন্তু এমন ফেস বানায় যে ইগনোরও করতে পারেনা। পাগলি একটা,,,
🌸🌸🌸
সায়রা ক্যাফেতে বসে আছে কতক্ষণ ধরে কানে ব্লুটুথ লাগানো, এদিক ওদিক তাকাচ্ছে অনেকক্ষন ধরে কিন্তু যার অপেক্ষায় বসে আছে সে কিছুতেই আসছে না
হঠাৎ কেউ একজন ওর মাথায় টোকা দিয়ে সামনে দাঁড়াল, গৌর বর্নের একজন বিদেশী ছেলে, যাকে দেখে বুঝাই যাচ্ছে জিমে রোজ যাতায়াত আছে তার। ও মুচকি হেসে দাঁড়িয়ে ছেলেটাকে হাগ করলো, সেই সুযোগে ছেলেটি ওর কোমর টাচ করলো। কিছুটা অস্বস্তিতে পরলেও কিছু বললো না বরং ছাড়িয়ে বসে পড়লো কারণ কিস, হাগ এগুলো পশ্চিমা দেশগুলোতে ডাল ভাতের মতো। আর লাইফ পার্টানার পেতে হলে এগুলোতে এক্সপার্ট থাকতে হবে
“হেই বেব কাম টু মাই প্লেস দিস আফটারনুন”
“হোয়াই এগর্ন, এনিথিং স্পেশাল?”
“ইয়াহ বেব, আই হ্যাভ প্লান্ড আওয়ার ফার্স্ট ডেট, উই উইল স্পেন্ড কোয়ালিটি টাইম টুগেদার”
“ওকেই শিউর লাভ”
সায়রা আর ওই ফর্সা ছেলেটির কান্ড দেখে কেউ একজন খুবই বিরক্ত হলো,,
“হাহ গোল্ডডিগার ”
এইরকম ডেট প্রায়ই চোখে পড়লেও আজকের ঘটনা সম্পুর্ণ ভিন্ন, বাঙালী নারীদের এই অধঃপতন কেন জানি মেনে নেয়া যায়না, ওর মতে বাঙালী নারীরা হচ্ছে ওয়াইফ মেটারিয়াল। তারা এভাবে রেন্ডম ছেলের সাথে ডেটে যাবে তা মেনে নেয়া দুষ্কর হয়তো ওর চোখে বাঙালি নারীর চিত্রই এমন কিন্তু বাঙালি নারীরা অনেক মর্ডান হয়ে গেছে। দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে হোটেলের উদ্দেশ্যে রওনা দিলো ও।
পরবর্তী পর্ব পড়তে পেইজটি তে লাইক দিন এবং গল্পের লিংক পেতে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন। গ্রুপের লিংক কমেন্ট বক্সে দেওয়া আছে
#চলবে
(জানিনা কেমন হয়েছে! জানাবেন আমাকে, হ্যাপি রিডিং ☺)