#রোদে_ভেজা_মেঘ
#লিখাঃ Liza Bhuiyan
#বৈবাহিক_চুক্তি (সিজন ২)
#পর্বঃ ২০
সায়ানের প্রিয় কাবক আর কোরিয়ান স্পেশাল ডিশ রামেন রান্না মাত্র শেষ করেছে রুশি, এখন ঠান্ডার সিজন চলছে তবে সকাল থেকে রান্নাঘরে থাকার কারণে ওর শরীর ঘেমে একাকার। সবকিছু সুন্দর করে পরিবেশন করে ডাইনিং টেবিলে নিয়ে আসলো রুশি। বাবা-মেয়ে সেই এগারোটা থেকে বারান্দায় বসে লুডু খেলছে আর এখন প্রায় বেলা একটায় গড়ালো কিন্তু তাদের কোন হদিশ নেই। রুশির ভ্রু কিঞ্চিত কুচকে এলো এটা ভেবে কিন্তু তাদের ডাকলো না। উপরের রুমে গেলো ফ্রেশ হতে, আজকে অনেকদিন পর কেনো জানি শাড়ি পড়তে ইচ্ছে হলো। আগে প্রায় সায়ান মার্কেটে গেলে শাড়ি কিনে নিয়ে আসতো আর চুপিচুপি আলমারিতে রেখে চলে যেতো তবে কোনদিন মুখ ফুটে বলেনি
“শাড়িটাতে তোমায় কেমন লাগবে একটু দেখতে চাই, প্লিজ পরে আসো”
যদিও চোখদুটো তাই বলতো কিন্তু মুখে একটি শব্দও করেনি কোনদিন, তবে প্রায় অনেক বছর হয়েছে সায়ান তার অভ্যাস পরিবর্তন করেছে হয়তো একসময় ক্লান্ত হয়ে গিয়েছে। কথায় আছে ঘরের সামনের গাছটাও শুকিয়ে যায় অবহেলায় আর সেতো জলজ্যান্ত মানুষ। গাছের যেমন যত্ন না নিলে তা ধীরে ধীরে শুকিয়ে যেতে থাকে আর একসময় বিলীন হয়ে যায়, সম্পর্ক গুলোও ঠিক তেমন অবহেলায় অবহেলায় ধীরেধীরে ফিকে হয়ে আর একসময় তা নিঃশেষ হয়ে যায়।
রুশির বুক চিরে একরাশ দীর্ঘনিশ্বাস বেরিয়ে এলো, মানুষ মাঝেমাঝে নিজের কষ্টেতে এতো মজে থাকে যে আশেপাশের কারো কষ্ট তার দৃষ্টিগোচর হয়না আর যখন হয় তখন খুব দেরি হয়ে যায়। মানুষটিকে খুব বেশি কষ্ট দিয়ে ফেলেছে ও। যদি ও একটু এফোর্ট দিতো তবে ওদের সম্পর্কটি অন্যরকম হতো। আর পাঁচটি দম্পতির মতো ওরাও হাত হাত রেখে এতোদুর আসতে পারতো যাতে থাকতো একমুঠো আবেগ আর একরাশ প্রেম। কিন্তু সেই হাতে হাত রাখা আর হয়নি না হয়েছে ঠিকমতো বসে দুদন্ড কথা বলা আর হয়তো এই সবকিছুর জন্য ও দায়ী সম্পুর্ণ ও!
কালো কালার একটি জামদানি শাড়ি পরেছে রুশি যাতে তেমন কোন কাজ নেই এবং ওর বয়সের সাথে বেশ মানানসই, চোখের নিচে হাল্কা কাজল ছুঁইয়ে দিয়ে খোলা চুলগুলো খোঁপা করতে করতে সিড়ি দিয়ে নিচে নেমে এলো। কিন্তু নিচে এসে যা দেখলো তাতে ওর মেজাজ গরম হয়ে গেলো।সায়রা আর সায়ান মিলে পিজা ভাগাভাগি করে খাচ্ছে। সারা সকাল ধরে কষ্ট করে ও রান্না করেছে অথচ এরা টেস্টই করেনি!
“ওয়াও মাম্মা, কত্তো সুন্দর লাগছে তোমাকে! আমিতো ভাবতেই পারিনি শাড়িতে এতো সুন্দর লাগবে তোমায়, ইউ আর সো বিউটিফুল! ”
সায়রার চোখে তার মায়ের জন্য ক্লিয়ার এডমাইরেশন দেখা যাচ্ছে। ওর মাকে অনেক সুন্দর লাগছে আজকে তাই প্রশংসা না করে যেনো পারলো না। সায়রার কথায় সায়ান একদণ্ড রুশির দিকে তাকিয়ে আবার খাওয়ায় মনোযোগ দিলো, এই স্বয়ং সম্পুর্ণা নারীকে দেখলে সে এখনো কন্ট্রোল হারিয়ে ফেলে। সামান্য শাড়িতে কাউকে এতোটা সুন্দর লাগতে পারে ওর জানা ছিলো না, আর বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকলে হয়তো রুশি সব ধরে ফেলতো তাই অসহায় ভাবে পিজাতে বাইট বসিয়ে চুপচাপ খেয়ে যাচ্ছে।
সায়ানের এরুপ ইগনোর কোনমতেই আর সহ্য হলোনা রুশির, হাসপাতালে থাকার সময় থেকে এখন পর্যন্ত একটা কথাও বলেনি ওর সাথে সায়ান যেনো ‘ও’ নামক মানুষটি এই দুনিয়াতেই নেই। কাছের মানুষটির এতোটুকু অবহেলাও যেনো সহ্য হচ্ছে না ওর। আগে রুশি কথা না বললেও সায়ান নিজের ভাগের কথাগুলো বলে দিতো যাতে রুশির মনে না হয় যে ও একা আছে কিন্তু এই কয়দিন রুশি কথা বললেও সায়ান কোন পাত্তা দেয়নি বরং রীতিমতো তাকায়নি পর্যন্ত ওর দিকে। রুশি কিছু না বলেই সেই স্থান প্রস্থান করলো যা সায়ানের চোখে স্পষ্ট ধরা পড়েছে। পিজার শেষ অংশ মুখে পুরে উঠে দাড়ালো ও
“বাবাই! মাম্মা কি রেগে আছে?”
“নাহ হয়তো কিছু মনে পড়েছে তাই উপরে গিয়েছে”
যদিও ওদের সম্পর্কটা শুরু থেকেই অস্বাভাবিক ছিলো তবুও ওরা দুজনেই ওদের বেস্ট ট্রাই করেছে যাতে এর প্রভাব সায়রার উপর না পড়ে। এতো বছরে সায়রাও অভ্যস্ত হয়ে গেছে, ওর বরাবরি মনে হয় ওর মাম্মা কথা কম বলে আর হয়তো ভাইকে মিস করছে!
সায়ান পকেটে হাত দিয়ে উপরে নিজের ঘরের দিকে যাচ্ছে,শরীরটা কাল ধরে ভালো যাচ্ছে হয়তো রুশির এক্সট্রা কেয়ারে! নিজেই একদফা গেসে উঠলো তারপর ভাবলো ভালোবাসা খুব অদ্ভুত জিনিস! ওর জায়াগায় অন্য কেউ হলে হয়তো এতো আশা ছেড়ে দিতো কিংবা পরনারীতে আসক্ত হয়ে যেতো কিন্তু ওর ক্ষেত্রে তার কিছুই হয়নি বরং দিনের পর দিন ও সত্যিই রুশির মুখ চেয়ে কাটিয়ে দিয়েছে আর এখন এসেও নতুন করে ওকে ইচ্ছাটা আরো তীব্র হচ্ছে।
কথায় আছে ভালোবাসাটা ভালোবাসার মানুষের কাছে প্রকাশ করে দেয়াই উচিৎ কারণ কখন কি হয় কেউ জানেনা। শাহজাহান তার ভালোবাসা মুমতাজের শানে তাজমহল বানিয়েছে কিন্তু সেই ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ দেখার সৌভাগ্য মুমতাজের হয়নি। আর ও সেই মুমতাজের মতো অভাগা হতে চায়না যে নিজের ভাগের ভালোবাসা না পেয়েই মরে যাবে। দরজা ঠেলে রুমের ভেতর কয়েককদম দিতেই পরিচিত সুবাস নাকে ভেসে আসলো। সায়ান কিছুটা অবাক হয়ে এদিক ওদিক তাকাতে থাকলো তখনি হঠাৎ একজোড়া নরম হাত ওর শার্টের কলার চেপে ধরলো, আচমকা আক্রমণে ও পেছনে হেলে পড়ে যেতে নিলেও বুকশেলফ ধরে দাঁড়িয়ে পড়লো। সামনে নজর পড়তেই দেখলো এক তিরিশ উর্ধো নারী রক্তচক্ষু নিয়ে তাকিয়ে আছে। যেনো শুভ্র দেবি পার্বতী হঠাৎ কালি রুপ ধারণ করেছে,
“তুমি আবার সিগারেটে হাত দিয়েছো? ডাক্তার নিষেধ করেছে না এসব খেতে না?”
“অনেকদিনের অভ্যাস হঠাৎ করে ছাড়া যায়না তবে চেষ্টা করছি”
শান্ত কন্ঠে বললো সায়ান আর এতেই রুশি তেলেবেগুনে জলে উঠলো
“চেষ্টা করছো মানে! তুমি আর এসব অখাদ্য ধরবে না বলে দিলাম ”
“হঠাৎ আমার প্রতি এতো কন্সার্ন তোমার? এতোকাল যখন খেয়েছি তখন তো টেরই পাওনি আজ হঠাৎ এসে বললেই কি ছেড়ে দিতে পারবো নাকি যেমন তোমাকে ছাড়তে পারিনি, অভ্যাস হয়ে গিয়েছিলে কিনা!”
তাচ্ছিল্যের সাথে বললো সায়ান যাতে ছিলো একরাশ অভিমান
“তো কোন একসময় ছাড়তে চেয়েছিলে আমায়?”
কিছুটা টলমলে চোখ নিয়ে বললো রুশি যা সায়ানের দৃষ্টি এড়ালো না, ও কিছুটা মুচকি হাসি ঝুলিয়ে বললো
“খুব ক্লান্ত হয়ে গেছি তোমার অভিমানগুলো বহন করতে করতে তাই আর পারছিনা। দিনশেষে আমিও একজন মানুষ!”
“তাহলে ছেড়ে দিবে এখন আমায়?” কথাটি বলতেই চোখ গড়িয়ে অবাধ্য জলগুলো নিচে পড়লো
“তা আর পারলাম কই? তবে আশা ছেড়ে দিবো যা এতোদিন পেতে চেয়েছিলাম ”
এই কথায় আচমকা রেগে গেলো রুশি, সায়ানের বুকে রিতিমতো কিল বসাচ্ছে আর নাক টেনে টেনে বলছে
“কেনো জোর করলে না আমায়? কেনো তোমার উপর করা অন্যায়গুলো মুখ বুঝে সহ্য করলে। আগেতো সবকিছু চাপিয়ে দিতে আমার উপর এমনকি বৈবাহিক চুক্তিও সাইন করিয়েছো যদিও সেটা রেজিস্ট্রি পেপার ছিলো তবে এসময় এসে কেনো আমার উপর ছেড়ে দিলে? তুমি তো আমাকে আমার থেকেও বেশি চিনতে তাইনা! তবে কেনো বুঝোনি আমি রেগে থাকলেও কোণ এক জায়াগায় চেয়েছিলাম তুমি আমায় জোর করো, বাধ্য করো তোমার সাথে থাকতে! কেনো আমার করা ভুলগুলো ধরিয়ে দিলে না আর আমাদের সুন্দর বর্তমানটা নষ্ট হতে দিলে? বলতে পারলে রুশি চলো সব ভুলে নতুন করে শুরু করি! আমি নামক খারাপ মানুষটির এতো কষ্ট কেন সহ্য করলে তুমি?আমি রুহানকে হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছি সায়ান, তোমাকে হারিয়ে কি নিয়ে বাচবো বলো? এর থেকে তো মরে যাওয়াই শ্রেয় আমার জন্য”
কথাটা বলতেই সায়ান রুশিকে শক্ত বন্ধনী আবদ্ধ করে ফেললো আর বললো
“ভবিষ্যতে এমন কথা আর বলবে না, আমি বলার অনুমতি দেয়নি তোমাকে শুনতে পেয়েছো তুমি?”
“সায়ান তুমি আমাকে ক্ষমা… ”
“হুশশশ আর একটা কথাও বলোনা, আমাকে কিছুক্ষণ জড়িয়ে ধরতে দাও তোমাকে। আজ অনেক বছর পর তোমায় এই বাহুডোরে পেয়েছি। মনে রেখো তুমি কিন্তু নিজ থেকে ধরা দিয়েছো আমার কাছে তবে একমাত্র আমার মৃত্যুতেই আলাদা হতে পারবে আমার থেকে। এর আগে আমার চক্ষু আড়ালো হতে পারবে না তুমি”
কঠিন গলায় বললো সায়ান যাকে বলে শান্ত ভাষায় শাসন, রুশি এই শাসনের গলা শুনে হাল্কা হেসে উঠলো তারপর বুকে আরো কয়টা কিল বসিয়ে বললো
“তুমি যদি আর সিগারেট ধরেছো তবে হাত কেটে রেখে দিবো বলে দিলাম!”
কপট রাগ দেখিয়ে বললো রুশি যাতে সায়ান কিছুটা ভয় পাওয়ার অভিনয় করে বললো
“এতো দ্রুত হাত হারানোর ইচ্ছে নাই আমার, তাছাড়া এখন অনেক বড় নেশা আমার কাছে আছে তাই ওইসব মাদকতার প্রয়োজন নেই। আমার এই আসক্তিতেই চলবে যার নেশায় বারবার ডুবে যাই”
রুশি প্রথমে বুঝতে না পারলেও খুব দ্রুত ও সায়ানের কথার অর্থ ধরতে পারলো আর চোয়াল শক্ত করে বললো
“দুদিন পর মেয়ে বিয়ে দিবে, নিজের বয়সের একটু তো লেহাজ করো!”
“মেয়ে বিয়ে দিবো বলে কি রোমান্স ভুলে যাবো? তাছাড়া ভালোবাসার কোন বয়স নেই আর এতোটাও বুড়ো হয়নি এখনো আরো গুটি কয়েক বাচ্চার…”
“মুখে লাগাম লাগাও! আল্লাহ কি বেশরমের পাল্লায় পড়লাম ”
রুশি ছুটতে চাইতেই সায়ানের হাতের বন্ধনী আরো শক্ত হয়ে গেলো
“নিজের ইচ্ছেতে আসলেও আমার ইচ্ছে ব্যতীত তুমি ছাড়া পাবে না রুশি! সায়ান জামিল খান তার পাওনা শুদে আসলে বুঝে নিতে জানে তাও ডোন্ট ওয়েস্ট ইউর এনার্জি”
রুশি যেনো বহুবছর পুর্বের সায়ানকে দেখতে পেলো, সেই কথা সেই এটিটিউড আর সেই চাহনি কিছুই বদলায় নি শুধু বদলেছে সময় তবে ভালোবাসাটা সেই আগের ন্যায় রয়ে গেছে বা তার থেকেও গাঢ় হয়েছে। কারণ বিচ্ছেদের পরের মিলন খুব সুখকর হয়!
#চলবে
(নিন মান অভিমান শেষ করে দিয়েছি, এখন ওরাতো এক হয়ে গেছে কিন্তু আমার বড্ড ঘুম পাচ্ছে।
বিঃদ্রঃ কাল এই ঘুমের কারণেই রাতে আরেক পর্ব দেয়া হয়নি😅)
Next part gulo ekto taratari diyen
R story kin2 oussooommm
পরের পর্ব তাড়াতাড়ি দিন
Baki porbo gulo abar kobe diben? plz taratari den. R golpota khuv sundor hocce.
পরের পর্ব গুলো কবে দিবেন
I also miss this stories next part….plzzzzzz