বৈবাহিক চুক্তি পর্ব ১৯

#রোদে_ভেজা_মেঘ
#লিখাঃ Liza Bhuiyan
#বৈবাহিক_চুক্তি (সিজন ২)
#পর্বঃ ১৯

ডিনার শেষ করে মাত্রই নিজের রুমে আসলো ইনায়া,ওর মামাকে আজকে রিলিজ দেয়া হয়েছে তাই তাদের বাসায় ছিলো সন্ধ্যা থেকে। বাসায় ফিরতে ফিরতে প্রায় দশটা বেজে গিয়েছে, ওর মামি অনেকবার বলেছিলো ডিনার করে আসতে কিন্তু ইনায়ার ফেমিলি চায়নি এতরাতে মামি তাদের সবার জন্য রান্না করুক তাই তারা না খেয়েই ফিরে এসেছে।

ইনায়া ফোন হাতে নিয়ে অলস ভংগিতে রুমের বিছানায় ঠাস করে শুয়ে পড়লো একপা নিচে আর শরীর উপরে। এমন ভাবে ঘুমানোর প্রায়ই অভ্যাস রয়েছে ওর, বলতে গেলে ও খুব অলস নিজের স্থান থেকে উঠে সঠিকভাবে শুতে তাই এভাবেই শুয়ে আছে। ফোনে কিছুক্ষণ ঘাটাঘাটি করেও বিশেষ কিছু না পেয়ে সিদ্ধান্ত নিলো ঘুমিয়ে পড়ার। চোখ বন্ধ করার হয়তো দশ পনেরো মিনিট হয়েছে, চোখে কিছুটা ঘুমের ভাব এসেছে কিন্তু তখনি বিকট আওয়াজে ফোনখানা ডাক দিয়ে উঠলো যে ইনায়া ভয়ে খাট থেকে খট করে নিচে পড়ে গেছে। ভয়ে পেয়ে বুকে থুতু দিলো আর আস্তে আস্তে বুকের বাঁ পাশে ঘষছে যাতে শরীরের কাঁপুনিটা কিছু কমে।
কিন্তু ফোনখানাকে দেখো সেতো বেজেই চলছে, থামার কোন নামই নেই। প্রচণ্ড বিরক্ত হয়ে ফোন হাতে নিয়ে দেখে আননোন নাম্বার থেকে কল, এটা দেখে মেজাজ আরো খারাপ হয়ে গেলো। নিশ্চিত কোন ছেলে ফোন করেছে ডিস্টার্ব করার জন্য। তাই ফোন সাইলেন্ট করে আবার বিছানায় ঠিক করে শুয়ে পড়লো আর বিড়বিড় করতে থাকলো

“আর কোন ফোন পেলো না, আমার টাই পেলো এতোরাতে ফোন দেয়ার জন্য। দূরে গিয়ে মর! এই ফোনের জ্বালায় ঠিকমতো ঘুমানোও যায়না”

ফোনটা পাশে রেখে হয়তো পাঁচ মিনিটও চোখ বন্ধ করার সুযোগও পায়নি তার পুর্বেই ফোন ভাইব্রেট হওয়া শুরু হলো, আজকাল ফোনগুলো সাইলেন্ট করেও শান্তি নেই সেই ভোঁ ভোঁ করতেই থাকে এর থেকে সাইলেন্ট না করাই ভালো। প্রচণ্ড বিরক্তি নিয়ে আবারো হাতে নিতেই সেম নাম্বার থেকে ফোন আসতে দেখলো, অগত্যা ওকে ফোন তুলতে হলো। আগেই ভেবে নিয়েছিলো ফোন তুলেই দিবে কয়েকটা ঝাড়ি এতোরাতে ফোন দেয়ার জন্য কিন্তু তা আর হলো কই? ফোন তুলতেই ভারী কন্ঠে কেউ একজন বলে উঠলো

“পাঁচ মিনিট সময় দিচ্ছি তার মধ্যে নিচে আসো নইলে আমি উপরে যাবো”

ইনায়া চট করে শোয়া থেকে উঠে বসলো, অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে ফোনের দিকে তাকিয়ে আছে। কন্ঠটা কেমন রোয়েনের মতো শুনা গেলো না?
কাঁপাকাঁপা কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো

“আপনি কি রোয়েন?”

“তোমার কাছে আর চার মিনিট ৩২ সেকেন্ড রয়েছে ”

ইনায়া এবার শিউর হলো এটা রোয়েন ছাড়া অন্যকেউ হতেই পারেনা, কিন্তু এতোরাতে কি পাগল হয়ে গেছে নাকি ভাবছে ও এখনো লন্ডনে আছে? নিশ্চই এমনটাই ভাবছে তাই দ্রুততার সাথে বললো

“আপনার মাথা ঠিক আছে? আমি এখন এমেরিকায় আছি আমার ফেমিলির কাছে। আমি নিচে… ”

“জানি ক্যালিফোর্নিয়ার লস এঞ্জেলসে আছো, ডি ব্লকের হোয়াইট বাড়িটা তোমাদের, তার সামনে রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে আছি আমি। আরো যদি ক্লিয়ারলি শুনতে চাও তাহলে বলবো বারান্দার দরজা খুললেই আমাকে দেখতে পাবে”

রোয়েন ক্লান্ত গলায় বললো, লস এঞ্জেলস এয়ারপোর্ট থেকে টেক আউট করেছে ঘন্টাখানেক পুর্বে তারপর সেখান থেকে নিজে ড্রাইভ করে সোজা এখানে চলে এসেছে। ইনায়ার এড্রেস থেকে শুরু করে সব ডিটেইলস আগেই নেয়া ছিলো তাই আসতে কোন ঝামেলা পোহাতে হয়নি।এখানে এসেছে পঁয়ত্রিশ মিনিট হতে চললো কিন্তু এই মেয়ের কোন খবর নেই। তিনবার ফোন দিয়েছে ওকে ভাবা যায়! রোয়েন লিউস কোন মেয়েকে তিনবার ফোন দিয়েছে আর সেই মেয়ের কোন পাত্তাই নেই? হাউ রিডিকিউলাস!

ইনায়া দৌড়ে এসে বারান্দার দরজা খুললো আর আশেপাশে দূরে তাকাতে থাকলো কিন্তু কিছু খুজে পেলো না তাই একটু চটেই বলে উঠলো

“রাত বিরাতে মজা করছেন আমার সাথে? কোথায় আপনি?”

“তোমার বারান্দার ঠিক নিচ বরাবর তাকাও”

ইনায়া চোখ বড় বড় করে নিচে তাকালো আর যা দেখতে পেলো তাতে চোখ বের হয়ে আসার উপক্রম। লম্বা কোর্ট পরে থাকা একজন লোককে দেখতে পেলো যা কানে ফোন চেপে ধরে ওর দিকেই তাকিয়ে আছে। চোখে মুখে ক্লান্তির ছাপ, মুখে ছোটছোট চাপদাড়ি দেখেই বুঝাই যাচ্ছে অবহেলার ফসল তবে এতে সৌন্দর্য আরো বেড়ে গিয়েছে। ফর্সা মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়িতে অসম্ভব সুন্দর লাগছে রোয়েনকে, চেয়েও যেনো দৃষ্টি ফেরানো যায়না। কিছুক্ষণ ওইভাবেই চোখের কথোপকথন শেষে ইনায়া কিছু লক্ষ্য করতেই চিল্লিয়ে উঠলো,

“এই আপনি গেটের ভেতরে ঢুকলেন কি করে?দারোয়ান দেখেনি! ওই মাই গড এরমানে বাড়িতে চোর ঢুকলেও তো এর কোন হুশ থাকবেনা, দেখা যাবে সব চুরি করে নিতে গেছে। নাহ পাপাকে বলে চেঞ্জ করতে হবে”

খুবই চিন্তিত স্বরে বললো ইনায়া যাতে রোয়েনের মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো মানে একি সারাজীবন ডাম্বোই থাকবে?আমি দেয়াল টপকে ওর জন্য এখানে এসেছি সেটা ওর চোখে পড়ছেনা কিন্তু দারোয়ানের কাছে ধরা খায়নি সেটা নিয়ে ভারী দুঃখ হচ্ছে। একে বলে জাতে মাতাল তালে ঠিক। রোয়েন বিরস কন্ঠে বললো

“তোমার কাছে আর একমিনিট আছে, নিচে আসো নয়তো এখনি গিয়ে বেল বাজাবো আর গেট খুলে বলবো তোমার সাথে দেখা করতে এসেছি ”

কি সাংঘাতিক! মানে এটা বললে পাপা আর মাম্মাকে কি জবাব দিবে ও যে এই ছেলে কেন এসেছে ওর কাছে? নাহ সেটা তো কোন মতেই সম্ভব নয়। কিন্তু আবার বাইরে আসাও সম্ভব নয়, নিশ্চই পাপা এখন এগারোটার নিউজ দেখছে আর মাম্মা সব গুছিয়ে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। এইমুহুর্তে ঠিক যত বাহানাই করুক ও ঘর থেকে বের হতে পারবেনা।

“দেখুন পাপা, মাম্মা জেগে আছে।এখন কিছুতেই নিচে আসা সম্ভব নয়। আপনি প্লিজ ফিরে যান কাল আপনার সাথে দেখা করছি ”

“তুমি কিভাবে মেনেজ করবে তা তোমার বেপার, তুমি যদি না আসো তাহলে আমি উপরে আসছি। ওয়েট ফর মি”

খুবই সিরিয়াস টোনে বললো রোয়েন যাতে ইনায়া ধরেই নিয়েছে ও না গেলেই উপরে আসবে রোয়েন তাই হচকিত হয়ে বললো

“এই না না নিচেই থাকেন আমি আসছি ” বলেই ফোন রেখে দৌড়ে নিচে আসলো, আসতেই ঠিক যা ভেবেছিলো সেইরকম চিত্রই দেখতে পেলো। ভয়ে ভয়ে পাপার সামনে এলো আর আমতাআমতা করে বললো

“পাপা, আমার রুমে দম বন্ধ হয়ে আসছে। আমি একটু গার্ডেন থেকে ঘুরে আসি?”

অন্যদিকে ইনায়ার পাপা খুবই ভালো মুডে ছিলো তার পছন্দের ফুটবল টিপ অলমোস্ট জিতে যাচ্ছে তাই অন্যকিছু না ভেবে ইনায়াকে যাওয়ার অনুমতি দিয়ে দিয়ে দিলো। ইনায়া একবার টিভির দিকে তাকিয়ে সেই দলকে থ্যাংকস জানিয়ে একদৌড়ে বাইরে চলে এলো।অদূরেই রোয়েন দেখতে পেলো সাদা ড্রেস পরা একটা এদিকেই আসছে, খুব দ্রুত আসার ফলে চুলগুলোও ওরসাথে তালে তালে দুলছে যাতে মেয়েটিকে আরো মোহনীয় লাগছে, মনে হচ্ছে কোন রাজকুমারী হেটে আসছে। রোয়েন বুকের বাঁ পাশে হাত দিয়ে ‘আহহহ’ করে উঠলো মনে হচ্ছে সত্যি সত্যি ব্যাথা পেয়েছে, ঠিক তখনি ইনায়া এসে রোয়েনের সেই হাত খপ করে চেপে ধরলো আর রোয়েনকে টেনে গার্ডেন এরিয়ায় নিয়ে গেলো যেখানে আবছা আলো ছিলো তারপর দাঁতে দাঁত চেপে বললো,,

“সমস্যা কি এভাবে থ্রেড দিচ্ছেন কেন? রাত বিরাতে কি আর কোন কাজ নেই?”

রোয়েন কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে হঠাৎ ইনায়াকে জড়িয়ে ধরলো যেন এই মুহুর্তে এই উষ্ণতার খুব প্রয়োজন ছিলো ওর। ইনায়া প্রথমে সরে যেতে চাইলেও পরে কিছু বলতে পারলো না। রোয়েন অস্ফুট স্বরে বললো

“খুব মিস করেছি তোমায়!”

চারপাশে ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক, আকাশের অর্ধচন্দ্র আর হাজার তারার মেলা তারসাথে রোয়েনের ক্ষীণ কন্ঠের একমুঠো আবেগ! সবমিলিয়ে সময়টিকে বেশ উপভোগ করেছিলো ইনায়া, এই মুহুর্তে রোয়েনকে খুব আপন মনে হচ্ছিলো যাকে ছাড়া একমিনিট ও চলবে না, হয়তো এক সেকেন্ডও না!!

#চলবে

(আসলে আমি বড় করে লিখতে চেয়েও লিখতে পারিনা। আমার বাংলা টাইপিং খুব স্লো। আগে অনেক টাইম পেতাম তাই বড় করে লিখতে পারতাম কিন্তু এখন সে টাইম পাইনা তাই চেয়েও বড় করে লিখতে পারিনা। আমি আন্তরিক ভাবে দুঃখিত।আশাকরি বুঝাবেন 😥)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here