বৈবাহিক চুক্তি পর্ব ১৮

#রোদে_ভেজা_মেঘ
#লিখাঃ Liza Bhuiyan
#বৈবাহিক_চুক্তি (সিজন ২)
#পর্বঃ ১৮

আজ সাতদিন পর লন্ডনের মাটিতে পা রাখলো রোয়েন, এতোদিন খুবই গুরুত্বপূর্ণ মিশনে ইউরোপের বাইরে ছিলো। প্রতিবারের মতো এবারো ফিরে সেখানেই যাচ্ছে যেখানে প্রতিবার যায়; চার্জে। তাও আবার সেই মানুষটার জন্য দোয়া করতে যে মানুষটি ওর খুব কাছের ছিলো। বাবা-মায়ের চেহারা খুব একটা মনে নেই ওর তবে ঝাপসা কিছুটা মনে পড়ে বিশেষত ওর মায়ের ফেস। প্রায়ই স্বপ্নে দেখা হয় শাড়ি পড়া এক মধ্যম বয়সী নারী ওকে ডাকছে আর বলছে যে খুব মিস করছে। হয়তো মায়ের কথা খুব ভাবে বলে সেই ঝাপসা, ঘোলাটে কিছুটা ফেস দেখতে পায় তবে তাই অনেক কারণ যতবারই দেখে ততবারই মনে হয় ওর মা ওর সাথে আছে।

ছোট বেলায় মাকে খুব মিস করতো ও, প্রায়ই মাঝরাতে মাম্মা বলে ঘুম থেকে উঠে যেতো কিন্তু আশেপাশে হাজার খুজেও পেতোনা তখন পাশের রুম থেকে ঠিকই একজন ব্যাক্তি দৌড়ে আসতো আর মাথায় হাত রেখে বলতো “ভয় কিসের আমি আছিতো ”
মাথার উপর সেই ভরসার হাতটাই ওর জন্য অনেক ছিলো সেই সময়ে।

কিন্তু ওর বয়স যখন উনিশ শেষে বিশে পা দিবে তখনি হঠাৎ খবর আসে সে হসপিটালে আছে আর ওকে কাছে ডাকছে। ভার্সিটি ক্যাম্পাসে ছিলো ও, সেখান থেকে দ্রুত হাসপাতালে আসে কিন্তু এসেই সাদাকাপড়ে মোড়ানো একটা লাশ দেখতে পেয়েছিলো যার পায়ের কাছে লিখা ছিলো “হি ইজ ডেড” পুরো পৃথিবী থমকে গিয়েছিলো ওর, মনে হচ্ছিলো রাতে যদি হঠাৎ চিৎকার করে উঠে তাহলে কেউ এসে বলবেনা সে ওর পাশে আছে, কারো সাথে প্রান ভরে বাংলায় কথা বলা হবে না। খুব সাহস নিয়ে কাছে গেলো কারণ সাদা কাপড় উল্টে তার চেহারা শেষবারের মতো দেখার লোভ সামলাতে পারেনি। কিন্তু কাপড় উল্টাতেই চক্ষু দর্পনে দৃশ্যমান হলো অস্যংখ্য ক্ষতসহ বিভৎস এক চেহারা যা দেখলে যে কারো আত্মা কেপে উঠবে কিন্তু ও দৃষ্টি সরায় নি বরং তাকিয়ে ছিলো আর মনে মনে সেই ব্যাক্তির ঠিক একই অবস্থা করার ছক আঁকছিল। সেই ঘটনায় ছোট্ট রুহান খুব বদলে যায় যেকিনা এখন আর মাম্মা বলে মাঝরাতে চেঁচিয়ে উঠে না হয়তো বুঝে গিয়েছিলো শান্তনা দেয়ার মানুষটি হারিয়ে গেছে। আর সেই দিনের রুহান জামিল খান আজকের রোয়েন লিউস দ্যা মাফিয়া লর্ড!

মাফিয়া শব্দটিকে সবাই ভয় পায় কারণ এর দ্বারা এমন একজনকে বুঝায় যে সকল ক্রাইমের হেড থাকে, উইমেন ট্রাফিকিং, মার্ডার, ড্রাগস সেলিং সহ সকল জঘন্যতম অপরাধও সে করে এমনি নিজের পরিবারকেও তারা শেষ করে দেয় কারণ মাফিয়া মানেই নো উইকনেস তাই তারা তাদের উইকনেসকে ধীরে ধীরে শেষ করে দেয়। রোয়েন লিউস নামটা মাফিয়া ওয়ার্ল্ডে খুব পরিচিত এমনকি লন্ডনের সবার কাছেও তবে কেউ হয়তো জানেই না এই শক্ত দেহ আর কঠিন চেহারার পেছনে রয়েছে খুবই আবেগি একটি ছেলে। সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে ওকে অনেকেই চিনে না তবে ওর নাম জানে না এমন কম মানুষই রয়েছে লন্ডনে।তাই ওকে সামনে থেকে দেখে অনেকেই চিনে না।

রোয়েন নিজের প্রেয়ার শেষ করে চার্জের পাশে থাকা গ্রেভইয়ার্ডে গেলো যেখানে ওর কাছের মানুষটি শায়িত আছে ওর বড় আব্বু। সবার এমন স্থানে এলে হয়তো কষ্ট হয় কিন্তু ওর জেদ কাজ করে যে ও এখনো সেই মানুষটিকে খুজে পায়নি যার ওর কাছের মানুষটি ওর পাশে নেই!

“কেমন আছো বড় আব্বু? মনে আছে তুমি একবার বলেছিলে তোমার লাইফে অনেক মেয়ে এসেছিলো কিন্তু তুমি তোমার সোলমেট খুজে পাওনি কখনো! আমি পেয়ে গেছি জানো! মেয়েটি একটু বাচ্চা টাইপের তবে খুব সুন্দর মনে হয় বিধাতা নিজ হাতে গড়েছেন। আর তুমি ভুল ছিলে বড় আব্বু কেউ কারো সোলমেট হয়না তবে সামনের মানুষটিকে যদি অসীম ভালোবাসতে পারো তবে সে সারাজীবন তোমার হাত ধরে পাশে থাকবে।
তবে আমি তোমার কথা আমি রাখতে পারেনি বড় আব্বু, তুমি বলেছো “মাফিয়াদের কোন উইকনেস থাকতে নেই” কিন্তু আমার সবচেয়ে বড় উইকনেস হচ্ছে ও আর আমার শক্তিও। তবে কি জানো রিস্ক না নিলে লাইফে সফল হওয়া যায়না আর আমি রিস্ক নিতে চাই ওকে ভালোবাসতে আর ওকে নিজের করতে। আমি কেমন মাফিয়া লর্ড হলাম যদি নিজের পছন্দের কিছুই নিজের কাছে না রাখতে পারি! আমি হেরে যাবো না। দেখো ওকে আমার করে তারপর তোমার কাছে নিয়ে আসবো। ভালো থেকো! ”

বলেই ফিরেই আসছিলো রোয়েন তবে শেষবারের মতো দেখার লোভ সামলাতে পারেনি, তাই আরেকবার দেখে দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে সামনে ফিরতেই কারো সাথে ধাক্কা খেলো যার চোখে ছিলো একরাশ বিস্ময়।

“ওহ মাফিয়া লর্ডের আবার এখানেও আসা হয় নাকি!”

“আমার এখানে আসা অস্বাভাবিক কিছু নয় তবে এরেন লিউস কি মনে করে এখানে? তার এখানে আসার কারণ আমি খুজে পাচ্ছিনা ”

“আমাকে কিছু রেসপেক্ট দাও রোয়েন বয়সে বড় তোমার আমি! কল মি আংকেল ”

“স্যরি সম্মান জিনিসটা আমার সবার জন্য আসেনা কেনো যেনো আর আপনার ক্ষেত্রে চেয়েও আনতে পারিনা ”

“তা কেমন আছো? সব ঠিকঠাক চলছে?”

“এতোক্ষন ভালো ছিলাম তবে এখন মনে হচ্ছে ভালো নেই”

বলেই রোয়েন স্থান ত্যাগ করলো যেন এখান থাকাটা এখন সবচেয়ে বিরক্তিকর। এরেন দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে সামনে এগিয়ে গেলো কারণ এর থেকে বেশি কিছুর বলার নেই।

এরেন লিউস সম্পর্কে রোয়েনের আংকেল হয় তবে লোকটিকে ওর কখনোই ভালোলাগে না। ওর বয়স যখন দশ ছিলো তখন সে ওর বড় আব্বুর বিরুদ্ধে গিয়ে একজনকে বিয়ে করেন এবং তা নিয়ে বড় আব্বুর সাথে তার খুব ঝগড়া হয়। তারপর থেকে তাকে আর বড় আব্বুর বাসায় দেখেনি ও তবে যেদিন বড় আব্বুর বারিয়াল ছিলো সেদিন দেখেছিলো। তবে ওর একটাই কথা যাকে বড় আব্বুর পছন্দ না তাকে ওরও পছন্দ না।

রোয়েন গ্রেভইয়ার্ড থেকে সোজা ইনায়ার এপার্টমেন্টে হাজির হয় আর নিচে থেকে ইনায়াকে একের পর এক ফোন দিতে থাকে কিন্তু বারবার নট রিচেবল বলছিলো। তাই সোজা এপার্টমেন্টে চলে যায় কিন্তু সেখানে গিয়ে ইয়া বড় তালা দেখে চিন্তিত হয়ে বাসায় ফিরে আসে।ওর মেজাজ পুরোই বিগড়ে আছে, মানে এই মেয়ের কোন আক্কেল নেই? হুট করে কোথায় গায়েব হয়ে গেলো! মেজাজ খারাপের সাথে সাথে চিন্তাও হচ্ছে। কোথায় ভেবেছিলো এসেই ইনায়াকে বলবে মাথা ব্যাথা করছে একটু টিপে দাওতো? কিন্তু তা আর হলো কই?
চোখ খুলে নিজের ছবির দিতে তাকাতেই মেজাজ আরো বিগড়ে গেলো।

“জাফার!! জাফার!!” চিৎকার করে নিজের বডিগার্ডকে রুমে ডাকলো রোয়েন। জাফার ভয়ে ভয়ে ভিতরে ঢুকে মিনমিনিয়ে বললো

“ইয়েস বস!”

“এই পিকচারের এই অবস্থা কেন?”

জাফার হাসতে গিয়েও তা গিলে ফেললো, আজ ছয়দিনে এই ছবির দশা এইরকম ই দেখে আসছে আর কতোবার যে হেসেছে হিসাব নেই। রোয়েনের ছবির মধ্যে ইয়া বড় করে গোঁফ আঁকা যাতে ওকে খুব ফানি লাগছে।

“বস আমি জানিনা এটা কে করেছে তবে ইনায়া মেম যাওয়ার পর থেকেই এটার এই অবস্থা”

“ইনায়া এসেছিলো এখানে? কখন?” ইনায়ার নাম শুনতেই রোয়েনের বিরক্তি গুলো কোথায় যেনো উধাও হয়ে গেলো, কপালে থাকা রেখাগুলো ধীরেধীরে মিলিয়ে গেলো আর ঠোটের কোনে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠলো

“সাতদিন আগে যেদিন আপনি মিশনে গিয়েছিলেন। আপনার জ্যাকেট ফেরত দেয়ার জন্য তবে কিছু না বলেই চলে গিয়েছেন ”

“আমি ওকে পাচ্ছিনা ফোনে আর ও ফ্লাটেও নেই। খোজ নাও এখন কোথায় আছে ও!” চিন্তিত কন্ঠে বললো রোয়েন

“বস আমি অলরেডি খোজ নিয়েছে মেম ক্যালিফোর্নিয়ার লস এঞ্জেলসে তার ফেমিলির কাছে আছেন। তার মামা…”

“এখনি সেখানের ফ্লাইট বুক করো, আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বুক করো আদারওয়াইজ হেলিকপ্টার মেনেজ করো”

“বস আপনি আজকেই ফিরলেন, রেস্ট… ”

“যা বলেছি তাই করো। নাউ গো এন্ড হারি আপ”

বলেই রোয়েন টাওয়াল নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়লো, ওর ইনায়াকে দেখতে হবে সেটা এখন এবং এই মুহুর্তে। ওই মুখখানি না দেখা পর্যন্ত ওর শান্তি হবে। ওকে দেখা চাই তাও এক্ষনি!
আপনার পছন্দের গল্প পড়তে ভালোবাসার রোমান্টিক গল্প পেইজে লাইক দিয়ে সাথেই থাকুন এবং গল্পের লিংক পেতে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন। গ্রুপের লিংক কমেন্ট বক্সে দেওয়া আছে
#চলবে

(ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখিবেন আর ছোট করে দেয়ার জন্য স্যরি)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here