বৈবাহিক চুক্তি পর্ব ১৭

#রোদে_ভেজা_মেঘ
#লিখাঃ Liza Bhuiyan
#বৈবাহিক_চুক্তি (সিজন ২)
#পর্বঃ ১৭

সারাদিন ধরে হসপিটালের গন্ডিতে থেকে হাপিয়ে উঠেছে সবাই, রাতে জোর করে সামু আর ইনায়াকে বাসায় পাঠাতে পেরেছে কিন্তু ইনানকে শত বলেও বাসায় পাঠাতে পারেনি সায়রা। প্রাণপ্রিয় বন্ধুর এই অসময়ে বাসায় যাওয়া যেন রীতিমত অপরাধ ভাবছে ইনানকে তাই তাকে বলে কয়েও পাঠানো যায়নি। ভেবেছিলো ওর মাম্মাকে ফুফিমনির সাথে পাঠিয়ে দিবে কিন্তু বলার পুর্বেই সে না করে দিয়েছে। ওর মাকে এই প্রথম এতোটা ভয় পেতে দেখেছে।

আকাশে ভোরের আলো ফুটে উঠেছে, হসপিটালের ছোট জানালা দিয়ে মৃদু আলো ঘরে প্রবেশ, হাত দুটো প্রসারিত করে কেবিন থেকে বেরিয়ে এলো ও।
পাশের কেবিনের ভেতরে ফুফা আর বাবাই রয়েছে ওর মা তার পাশে বুকিং করা কেবিনে ফ্রেশ হচ্ছে। এই পরিবেশে কেমন জানি দম বন্ধ হয়ে আসছে সায়রার তাই ভাবলো বাইরের খোলা হাওয়ায় একটু শ্বাস নেয়া দরকার। গায়ে একটা শাল জড়িয়ে বাইরে বেরিয়ে এলো। ফোনটা হাতে নিয়ে সময় চেক করে আবার পকেটে রেখে দিলো তখনি কিছু একটা দেখে থমকে দাঁড়ায়। পরিচিত একটা গাড়ি পার্কিং স্পটে পার্ক করা।

দ্রুত পায়ে এগিয়ে গিয়ে জানালায় নক করা শুরু করলো, কিন্তু ভেতরের মানুষের কোন হেলদোল নেই তাই ও ভেবেই নিয়েছে গাড়িতেছ কোন মানুষ নেই কিন্তু কি ভেবে জেনো ভেবে আরেকবার টোকা দিলো তবে বিশেষ উপকার হলো না। তাই আশেপাশে তাকিয়ে ফিরে আসছিলো তখনি খট করে গেট খুলার আওয়াজ হলো আর ঘুমন্ত অবস্থায় হায় তুলতে তুলতে একটা ছেলে বেরুলো। সায়রা ছেলেটির দিকে এগিয়ে এলো, এতোক্ষন যে পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছিলো তা চেহারা দেখেই ঢের বুঝা যাচ্ছে। চোখ পিট পিট করে তাকাতে তাকাতে সেও সায়রার দিকে এগিয়ে আসলো।
সায়রা ঠিক তার বরাবর এসে দাঁড়িয়ে থেকে ভ্রু কুচকে বললো

“এটা কি ঘুমানোর জায়গা? এখানে পড়ে পড়ে না ঘুমিয়ে হোটেলে গেলেই পারতেন ”

“জি ইচ্ছে তো তাই ছিলো কিন্তু আপনার জন্য হলো কই?

“আমি কি করেছি আপনাকে? হাত পা বেধে রেখেছি?” চোখ ছোট ছোট করে বললো সায়রা

“তার থেকেও বেশি কিছু করেছেন, মানবতার শিকলে আমাকে বেধে দিয়ে আরামের ঘুম হারাম করে দিয়েছেন। কই ভেবেছিলাম নাক টেনে লম্বা একটা ঘুম দিবো তা আর হলো কই?”

বেশ দুঃখী দুঃখী ভাব নিয়ে বললো ছেলেটি, ছেলেটির কথায় সায়রা বেশ কনফিউজড। চোখে বিস্ময় রেখেই বললো

“আমি আবার কি করেছি? যা বলছেন নিজের মাথায় ঢুকছে তো?”

ছেলেটি কিছু না বলে গাড়ির দিকে এগিয়ে গেলো আর একটা পার্স নিয়ে ওর দিকে আসলো। সায়রা এবার বুঝতে পারলো কোন মানবতার কথা বলছিলো ছেলেটি। মুচকি হেসে পার্সটি হাতে নিলো আর বললো

“সো মিস্টার… হেই নাম কি আপনার?”

“আসতাগফিরুল্লাহ! এতোক্ষন আমার সাথে ছিলেন অথচ আমার নামই জানেন না? আপনি হয়তো প্রথম মেয়ে যে কিনা আমার সাথে এতো সময় থাকার পরও নামটি পর্যন্ত জানেন না ”

“অনেক মেয়ের সাথেই উঠাবসা হয় তাহলে?”

“তা হয় তবে বন্ধুত্ব পর্যন্তই সীমাবদ্ধ থাকে, আমি আমার বন্ধুত্বপ্রিয় মানুষ। তবে আজ পর্যন্ত মনের মানুষ খুজে পায়নি পেলেই সোজা টেনে কাজি অফিসে নিয়ে যাবো আর বিয়ে করে তবেই ক্ষান্ত হবো ”

“খুব মজার মানুষতো আপনি! কিন্তু পার্সটি দেয়ার জন্য এতো সময় অপেক্ষা করার দরকার ছিলো না। ভেতরে এসে দিয়ে গেলেই পারতেন ”

“তা পারতাম তবে তাতে আপনার পরিবার আপনার সম্পর্কে ভুল ধারণা পোষণ করতে পারতো যে অচেনা ছেলে পার্স দিয়ে যাচ্ছে! তাই ভাবলাম এখানেই ওয়েট করি, মনের কোথাও একটা বলছিলো আপনি বাইরে আসবেন ”

“বাহ আপনার মন আবার আমায় নিয়েও কথা বলে? ইম্প্রেসিভ! বাই দ্যা ওয়ে থ্যাংকস ফর দিস”

“শুধু শুকনো থ্যাংকস দিবেন?”

“তো আর কি করতে হবে?”

“এটলিস্ট নাম্বারটা পেতেই পারি! হোয়াটস এপে নাহয় টুকটাক খবরই নিয়ে নিবো”

“হুট করে নাম্বার চেয়ে বসলেন অথচ নামটাই জানা হলো না ”

“ওহ আমি আরাভ, আরাভ রেহমান ” হাত বাড়িয়ে দিয়ে

“আর আমি…”

“সায়রা! জানি আমি তোমার ফ্রেন্ড বলেছিলো ওইদিন ফোনে ”

“ওহহহ”

“তা মেম নাম্বারটা যদি দিতেন?”

সায়রা একবার ভেবেছিলো দিবে না পরে কি মনে করে যেনো নাম্বারটা দিয়েই দিলো।আরাভ ওর বাবার খবর নিয়ে তারপর হোটেলের উদ্দেশ্যে রওনা দিলো। মনটা এখন বেশ ফুরফুরে লাগছে সায়রার,

সেদিন সকালে আরাভকে খুব খারাপ ছেলে মনে হয়েছিলো যে কোন মেয়ের অসহায়ত্বের সুযোগ নেয় এবং যা নয় তা শুনিয়েছিলো কিন্তু আরাভ কোন রিয়াক্ট করেনি। কিছুক্ষণ পর ঠান্ডা মাথায় সবটা বুঝিয়ে বলেছে যাতে সায়রা ওর ভুল বুঝতে পেরেছিলো। কিছু বলবে তার আগেই সামু ফোন করে ওর বাবার অবস্থার কথা জানায়। সায়রা অনেক প্যানিক করা শুরু করলে আরাভ ওকে থামিয়ে নিজ দায়িত্বে হসপিটালে নামিয়ে দিয়ে গেছে। আসলে সকল ছেলে খারাপ নয়, কিছু ছেলে এখনো রয়েছে যারা সুযোগ পেয়েও কোন মেয়ের ক্ষতি করেনা বরং তাদের সম্মান করতে জানে। এসব ছেলেদের চোখ বুঝে বিশ্বাস করা যায় আর এরা আমাদের আশেপাশে এখনো বিরাজমান।

🌸🌸🌸

ইনায়া মাত্রই ঘুম থেকে উঠেছে, সকাল প্রায় সাড়ে এগারোটা বাজে। জার্নিতে প্রচুর ক্লান্ত ছিলো তাই এতোক্ষন পর্যন্ত ঘুমিয়েছে। নাইট ড্রেস পরে হায় তুলতে তুলতে নিচে নামছিলো কিন্তু কেউ একজনকে দেখে উল্টো পথে আবার নিজের রুমে চলে যায়। ফ্রেশ হয়ে ড্রেস চেঞ্জ করে নিচে নেমে আসে আর লোকটির সম্মুখীন হয়।

“মিস্টার শেইখ! আপনি হঠাৎ কি মনে করে আমাদের বাসায়? আর এড্রেস কোথায় পেলেন? ”

“তুমি হয়তো ভুলে যাচ্ছো তোমার বাবা আমার বিজনেস পার্টানার তাই তার ঠিকানা জানা কি স্বাভাবিক নয়?”

ইনায়া মাথা নাড়ালো, কালকে হসপিটালে পৌঁছানোর পরই জানতে পেরেছিলো লোকটির নাম “জেইন শেখ আর সে ওর বাবা আর মামুর কোম্পানির বিজনেস পার্টানার।

“তা বাবা তো বাসায় নেই কোন প্রয়োজন ছিলো?”

“তোমার বাবার কাছে আসিনি তোমার কাছে এসেছি, এই নাও তোমার হ্যান্ডবেগ আর ফোন পাস্পোর্ট আর ভিসা সব ঠিক আছে কিনা দেখো”

“আপনি কোথায় পেলেন এগুলো?”

“তোমার বাবাকে যখন বলেছিলে তখন শুনেছি তাই ভাবলাম যেখানে তোমাকে পেয়েছি তার আশেপাশেই হয়তো পেয়ে যাবো আর পেয়েও গিয়েছি ”

“ওহ অনেক ধন্যবাদ আপনাকে, সত্যিই অনেক উপকার করলেন আমার ”

“নাহ এভাবে মুখে বললে তো হবে না কিছু একটা করে রিপেয় করতে হবে আমায়”

ইনায়া কিছুটা অস্বস্তি বোধ করলো, লোকটির চাহনি কেন জানি ওর ভালো ঠেকে না।

“আহ রিলাক্স, এক কাপ কফি খাওয়াও নিজ হাতে”

“জি একটু ওয়েট করুণ ”

ইনায়া জোরপূর্বক হেসে সেখান থেকে প্রস্থান করলো। মাঝেমাঝে লোকটিকে কেমন আজব লাগে। মনে অস্বাভাবিক কেউ!

#চলবে

(আপনারা কি গল্পটি মনোযোগ দিয়ে পড়ছেন না? আমি তো ভেবেছিলাম “মিস্টার শেইখ” শুনেই বুঝে যাবেন কার কথা বলছি কিন্তু আপনারা বুঝতেই পারেননি উল্টো তাকে ভুলেই গিয়েছেনফ)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here