বৈবাহিক চুক্তি পর্ব ১৬

#রোদে_ভেজা_মেঘ
#লিখাঃ Liza Bhuiyan
#বৈবাহিক_চুক্তি (সিজন ২)
#পর্বঃ ১৬

দম খিচে চোখ বন্ধ করে থাকা ইনায়ার হাটুর একদম ঘেষে খুব জোরে একটি গাড়ি ব্রেক করলো, পায়ে কিছুর ছোঁয়া অনুভুত হতেই খুব জোরে চিৎকার দিয়ে কানে হাত চেপে ধরে ইনায়া। ওর এই আত্ম চিৎকারে ওর পিছনে আসা ছেলে গুলো দমে যায় আর কোন কিছুতে ফেসে যাওয়ার আশংকায় ভয়ে পালিয়ে যায়। ছেলেগুলোর পালানো দেখে কেউ একজন মৃদু হাসে আর গাড়ির গেট খুলে বাইরে বেরিয়ে আসে।

“এই যে মিস, মরার যদি এতোই ইচ্ছে থাকে তবে ছাদ থেকে ঝাপ দিতে পারেন। শুধু শুধু আমার গাড়ির নিচেই কেনো মরতে আসলেন?”

“বালাইষাট মরতে যাবো কে…”

কিছুটা বিরক্তিকর ভংগি নিয়ে কথাটা বলতে নিলেও শেষ করলো না, সামনে থাকা অত্যাধিক সুদর্শন পুরুষকে দেখে থমকে গেলো। প্রায় ছয়ফুটের কাছাকাছি লম্বা আর ফর্মাল গেট আপে থাকা একটি ছেলে তবে কিছু একটার কারণে তাকে খুবই সুদর্শন লাগছে প্রায় অনেকটাই জেইন মালিকের মতো, হ্যাঁ ঘাড়ের কাছে থাকা ট্যাটু।কিন্তু কথা হচ্ছে এইলোক ওকে মারতে মারতেই বাচিয়েছে। তাই বকা দেয়া উচিৎ নাকি ঠিক ধন্যবাদ বলা উচিৎ তা নিয়ে ও বেশ কনফিউজড। হুমায়ন আজাদের একটা বিখ্যাত উক্তি রয়েছে

“প্রত্যকটা সুদর্শন ছেলে একেকটা গর্ধব”

কথাটি আসলেও একশো ভাগ সত্যি, এরা আসলে এমন কাজ করে যে গর্ধব ছাড়া এদের অন্যকিছু ভাবাই যেনো মহা অপরাধ। এই ছেলেটিকেই দেখো! মরার হলে কি কেউ ভয় পেয়ে দাঁড়িয়ে থাকে?এতো জোরে কেউ গাড়ি চালায়! হঠাৎ করে এক্সিডেন্ট হতে পারেনা?তারউপর দেখো হেবলার মতো তাকিয়ে আছে। বাপের জন্মে মেয়ে দেখেনি। ওয়েট ওই লোক বাংলা বললো কি করে? সব প্রথমে লন্ডন এখন ক্যালিফোর্নিয়া সব জায়াগায় কি শুধু বাঙালীই থাকে? এই কয়দিনে সব বাঙালী ওর গাড়েই কেনো চাপছে!

তখনি কেউ হাতের সামনে চুটকি বাজিয়ে বললো

“কি কোথায় হারিয়ে গেলেন?রাস্তা থেকে সরুন ”

ছেলেটির কথা শুনে মেজাজ বিগড়ে গেলো ওর, মানে কি? এখন কি বাসায় ও পৌঁছে দিবে না! দেখতেইতো পাচ্ছে নিরিহ একটা মেয়ে রাস্তায় ফেসে গেছে। নাহ নিজে থেকেই বলতে হবে নাহয় গর্ধবের মাথায় সুবুদ্ধি হবে না তবে মাম্মা যে বলে সুন্দর ছেলেদের বিশ্বাস করতে নেই! একে বিশ্বাস করা কি ঠিক হবে!

আচ্ছা রোয়েন ও তো সুন্দর দেখতে হয়তো ওর দেখা সবচেয়ে সুদর্শন যাকে ওর “আইডিয়াল টাইপ” বলা চলে। কিন্তু ওর সাথে থাকার সময় এমন মনে হয়নি কেনো? ওর সাথে তো খালি ফ্লাটে একাও থেকেছে তবে তার ক্ষেত্রে কেনো বিশ্বাসের কথা মাথায় আসেনি? কেনো এতো সেফ মনে হয় নিজেকে ওর সাথে?

যাকগে এখন এতো কিছু ভেবে লাভ নেই বাসায় যাওয়াই হচ্ছে মেইন। ইনায়া কিছুটা নরম কন্ঠে বললো

“আসলে আমি আমার পার্স আর ফোন সব হারিয়ে ফেলেছি। তাই ফেমিলির কাছে কিভাবে যাবো বুঝতে পারছিনা। এতোরাতে কি করবো বুঝতে তাও পারছিনা, যদি একটু আমাকে পৌঁছে দিতেন?”

কিছুটা শংকা নিয়েই বললো ইনায়া, সামনের মানুষটি কনভিন্স হলো কিনা বুঝা যাচ্ছে না

“কিন্ত অপরিচিত একটা মেয়েকে কিভাবে গাড়িতে উঠাই?”

ইনায়া হেবলার মতো তাকিয়ে আছে লোকটির দিকে, এটাতো ওর ডায়লগ হওয়ার কথা ছিলো! অপরিচিত লোকের গাড়িতে কি করে উঠবে? কিন্তু লোকটি খুব সিরিয়াস ভংগিতে কথাটা বলেছে তাই মজা যে করছে না তা ঢের বুঝতে পারছে। ইনায়া তাই চোখ ছোট ছোট করে বললো

“তাহলে টাকা দিন আমি ট্যাক্সি করে চলে যাবো”

“আমি গার্লফ্রেন্ড ছাড়া অন্যকারো পিছনে টাকা খরচ করিনা। তাই আপনার পিছনে কেনো খরচ করবো কেন?”

“আমি খরচ করতে বলছিনাতো আমি বলছি ধার দিতে, বাসায় গিয়ে ফেরত দিয়ে দিবো, সত্যিই বলছি ”

“আমাকে কি পাগল মনে হচ্ছে! আমি আপনাকে চিনি যে বিশ্বাস করবো? তার থেকে ভালো আপনাকে পৌঁছে দেই। চলুন ”

যাক ব্যাটার সুবুদ্ধি হয়েছে, অতোটাও গর্ধব না। ইনায়া হসপিটালের এড্রেস দিতেই ছেলেটি অবাক হয়ে তাকালেও পরে কিছু বললো না। হয়তো ভাবছে বাড়ি না গিয়ে হসপিটালে কেনো যাচ্ছে!

গাড়িতে তেমন একটা কথা হলো না লোকটির সাথে বলতে গেলে কথা বলার থেকে ওকে চোখ দিয়ে গিলে খাওয়াতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেছিলো। একবার কিছু বলতে চেয়েছিলো তবে এরপর আর কিছু বলেনি, কারণ লোকটি ওকে সাহায্য করছে তাই ঝামেলায় না জড়ানোই বেটার।



সায়ান আজ প্রায় দেড়দিন পর চোখ খুলেছে, ঘড়ির কাটা এখন প্রায় এগারোটার কাছাকাছি। চোখ খুলে নিজেকে হসপিটালের বেডে আবিষ্কার করে খুব একটা অবাক হয়নি। রুশি যখন হসপিটালের নিয়ে আসার কথা বলছিলো তখন ওর সেন্স ছিলো। ডানপাশে তাকাতেই রুশিকে হাত ধরা অবস্থায় ঘুমিয়ে থাকতে দেখলো। যাতে ওর কেন জানি খুব অভিমান হলো।

“যখন তোমাকে খুব করে কাছে চাই, দুদন্ড কথা বলতে চাই তোমার সাথে, প্রান ভরে দেখতে চাই তোমাকে তখন তুমি সাড়া দেওনা। তবে কেনো এখন এতো খেয়াল রাখছো আমার? তাও অচেতন অবস্থায় যখন আমি তোমায় অনুভবই করতে পারিনা! আমারো অভিমান হয় রুশি, মাঝেমাঝে ইচ্ছে হয় মরে যাই তবে বেঁচে আছি এটা ভেবে আমি ছাড়া তোমার আর কেউ নেই। হয়তো কোন একদিন অভিমানের পাঠ চুকিয়ে তুমি কথা বলবে কিন্তু সেইদিনের অপেক্ষা করতে করতে আমি ক্লান্ত রুশি। জীবনের অনেকগুলো বছর আমি তোমার আশায় কাটিয়ে দিয়েছি তবে আর নয়। এবার তোমাকে বুঝতে হবে আমায়। বুঝতে হবে আমার কষ্ট, অভিমান আর ভালোবাসা। তোমার এতোকালের অবহেলায় আমি বড্ড স্বার্থপর হয়ে গেছি রুশি তাই এবার তোমাকে আমার করে চাই। তোমাকে অতীত ভুলতে হবে আর জীবনের শেষ মুহুর্তগুলো আমার হাত ধরে কাটাতে হবে তবে সেটা তুমি নিজে থেকে করবে। এন্ড আই উইল মেক শিউর দিজ উইল হেপেন ”

মনে মনে কথাগুলো আওড়াতে আওড়াতে রুশির চুলগুলো কানের পাশে গুজে দিলো সায়ান, এই ছোট জীবনে পাওয়ার থেকে হারানোর হিসাব অনেক তবে আর কিছু হারাতে চায়না। এবার নিজের পাওনা নিজে শুধে আসলে বুঝে নিবে। কেউ একজন কেবিনের দরজা খুলতেই হাত সরিয়ে সোজা হয়ে শুয়ে পড়লো তবে হাত ছাড়ালো রুশির থেকে। জেনে হোক আর অজান্তে রুশি ওর হাত ধরে বসে আছে এটাই অনেক বড় পাওয়া।

সায়রা বাবার সেন্স ফিরেছে দেখে সবাইকে ডাকতে যাবে তার আগেই সায়ান ওকে ইশারা করে চুপ করতে বললো আর রুশিকে দেখালো। মাকে ঘুমাতে দেখে সায়রা দমে গেলো আর আস্তে কেবিনের দরজা লক করে বাইরে এসে ইনান আর সামুকে এই খবরের কথা বললো। ইনান যেনো আশংকামুক্ত হলো, গতকালের রিপোর্টে সায়ানের শরীরে লোব ক্যন্সার কিংবা সিপিওডির কোন লক্ষণ পাওয়া যায়নি তবে লোব কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাই স্মোকিং ছেড়ে দেয়ার কড়া নির্দেশ দিয়েছে ডক্টর নাহয় বড় ধরনের ক্ষতি হতে পারে। ইনান তো ধরে নিয়েছে সায়ান কিছুটা সুস্থ হলেও আগে কতোক্ষণ পিটাবে ওকে, কতোটা টেনশনে ফেলে দিয়েছে সবাইকে। এদিকে ইনায়াকেও ফোনে পাওয়া যাচ্ছে না, এতোক্ষনে পৌঁছে যাওয়ার কথা ছিলো কিন্তু আসছে না। এদিকে এদের এখানে ফেলে যেতেও পারছে না।

“পাপা! সায়রু মামুর এখন কি অবস্থা?” ইনায়া একপ্রকার ছুটে এসে হাপাতে হাপাতে কথাটি বললো

“বাবাই এখন আউট অব ডেঞ্জার, তবে কিছুটা রেস্টের প্রয়োজন ”

“হঠাৎ করে এসব হলো কি করে আর…”

“তাহলে আপনি থাকুন, আমি আসি ” কথাটা শেষ করার আগেই কেউ একজন কথাটি বললো যাতে ওরা সবাই তার দিকে তাকালো।ইনান বিস্ময়ের সাথে বললো

“মিস্টার শেখ আপনি?”

#চলবে

(নিন বাচিয়ে দিলাম সায়ানকে, এবার আমাকে ট্রিট দেন সবাই। আচ্ছা একটা কথা আমার কাছে একজন লিংক চেয়েছিলো কিন্তু আমি সকালে উঠে তার আইডি আর খুজে পায়নি তাই লিংক দিতে পারিনি। আমি আন্তরিক ভাবে দুঃখিত)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here