আবছায়া
writer::প্রিয়া
১২
ইনায়া ওদের কথার আগামাথা কিছুই বুঝলো না।অজান্তা যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো।
অজান্তা যাওয়ার পরই ইনায়া রুমে আসলো।
এসে দেখে আইজানের হাতে থাকা গ্লাস জোরে চেপে ধরেছে।
মুহূর্তে গ্লাস ভেঙ্গে আইজানের হাতে ঢুকে যায়।ইনায়া দৌড়ে গিয়ে হাত থেকে গ্লাসের টুকরো বের করে।
-পাগল হয়ে গেছো তুমি।এরকম কেউ করে।
‘কি করবো ইনয়া তুমি বলো আমি আর পারছিনা।
-কি হয়েছে অজান্তা কি বলে গেলো এসব।
-ইনয়া তুমি আমায় বিলিভ করো না।
‘বিলিভ করার কথা আসছে কেনো অজান্তা কেনো বললো আম্মু আর আমার সামনে তোমার মুখোশ খুলে যাবে।
-তুমি কি আমায় সন্দেহ করো।
‘না আইজান আমি তোমায় ভালোবাসি তাই জানতে চাইছি।
-তাহলে শুনো।
অজান্তা এখানে এসেছে মাত্র দু বছর হলো।
চাচি মারা যাবার পর অনেকবছর আমরা গ্রামে যাইনি।দু বছর আগে দাদিমার মৃত্যু বার্ষিকীতে আমরা গ্রামে যাই।সেখানে গিয়ে দেখি অজান্তার উপর ওর সৎ মায়ের অত্যাচার আমার মা ওকে নিজের সাথে নিয়ে আসেন।
নিজের মেয়ের মতোই আদর করেন।কিন্তু অজান্তা
প্লিজ ইনয়া তুমি আমায় ভুল বুঝো না।
-অজান্তা কি।
-অজান্তা আমায় না কি ছোটবেলা থেকেই ভালোবাসে।ও যখনি আমায় ওর ভালোবাসার কথা জানায় তখন আমি তোমায় পাগলের মতো ভালোবেসে ফেলি। তাই ওকে ফিরিয়ে দেই।
ও নাছোড়বান্দা আমার ভালোবাসা আদায় করেই ছাড়বে তাই ওর থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য তাড়াহুড়ো করে তোমায় বিয়ে করে নেই
‘সেটা না হয় বুঝলাম কিন্তু মুখোশ কি বললো।
-সব ওর নাটক আড়ালে দাঁড়িয়ে তুমি কথা শুনছো দেখেই এসব আজগুবি কথা বলে।
আইজানের কথাগুলো ইনায়ার ঠিক বিশ্বাস হলো না।তবুও মুখে হাসি ফুটিয়ে বেড়িয়ে আসতে চাইলে।
পিছন থেকে আইজান ওর কোমর জড়িয়ে ধরে।
-বউ ও বউ তুমি কি রাগ করেছো।
‘না তবে তোমার কথাগুলো কেনো জানি ঠিক বিশ্বাস করতে পারছি না।অজান্তার চোখ বলছিলো ও কিছু বলতে চায় আমায় আজ ওর কান্না ও কেমন জানি লাগছিলো ।
আইজান ইনায়ার চুলে নাক ঘষছিলো।
-আমি তোমায় কতখানি ভালোবাসি সেটা তুমি ফিল করতে পারছো না।যদি পারতে তাহলে বুঝতে এই আইজান এক্ষুণি জীবন দিয়ে দিবে ইনয়ার জন্য।
ইনায়ার চুলগুলো কানে গুছে দিয়ে গালে চুমু খেয়ে আলতো করে বুকে জড়িয়ে ধরলো।
-যদি কখনো আমায় অবিশ্বাস করো সেদিনই যেনো আমার মৃত্যু হয়।
‘এভাবে বলো না।
-আমি তোমার বিশ্বাস নিয়ে খেলা করবো না।
‘জানি।
-তাহলে এবার হাসি দাও।
‘হি হি।
-আমি কি বলেছিল আমাকে ভয় দেখানোর জন্য।
‘ভয় দেখালাম কোথায় হাসি দিলাম।
-ভূতের মতো হাসি।
ইনায়া হেসে আইজানকে জড়িয়ে ধরলো।
অজান্তা চলে গেছে তাই আইজানের মা রান্নাঘরে রান্না করছেন।
ইনায়া উনার কাছে যায়।
-মা আমি হেল্প করি।
‘কি বলিস মাত্র দু দিন হলো এসেছিস এখুনি কাজ করবি।
তুই যা তোর আম্মুর সাথে গল্প কর গিয়ে।
-একটু কাজ করি
‘ঠিক আছে এই সবজি গুলো ধুইয়ে দে।
-হুম দিচ্ছি।
‘ঠিক আছে এবার যা তোর আম্মুর জন্য এই চা নিয়ে।
-হুম যাচ্ছি।
ইনায়া চায়ের কাপ নিয়ে গেলো আইজান তখন ফুফির সাথে গল্প করছিলো।
-আম্মু আপনার চা।
‘আয় বস এখানে,
ইনায়া আইজানের পাশে বসে।
-তোর পাগল স্বামীর কান্ড দেখ।
‘কি আম্মু।
-আমাদের পাশের বস্তির এক মেয়ের বিয়েতে এক লক্ষ টাকা দিয়ে আসছে। এসে আবার ভয়ে ভয়ে বলছে।
‘আসলে ফুফিমা তুমি তো জানো আমি কারো দুঃখ কষ্ট সহ্য করতে পারিনা।মেয়েটার বাবা অসহায় যুবতী মেয়ে বিয়ে হচ্ছে না তাই নিজে খরচা করে বিয়ে দিয়ে আসলাম।
-খুব ভালো করেছিস বাবা আল্লাহ আমাদের অনেক দিয়েছেন।দান খয়রাত করলে আল্লাহ খুশি হোন।
‘আমার সোনা ফুফিমা তুমি এতো ভালো কেনো।
-হয়ছে আর পাম দিতে হবে না চেক বই নিয়ে আয় সাইন করে দিচ্ছি।
ইনায়া দেখছে আইজানের ফুফি আইজানকে চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করেন।
আইজান চেক বই এনে দিতে উনি দু লক্ষ টাকার চেক সাইন করে দিলেন।
-দু লক্ষ কেনো ফুফিমা।
-অজান্তার বিয়ে না তোরা সবাই যাবি তাই তোদের শপিং খরচাপাতির জন্য দিলাম।
‘না চাইতে এতোকিছু কেনো দাও ফুফিমা।
-আমার তো একটা মাত্রই ছেলে।
আজ বিকেলে আমার ইনায়াকে নিয়ে শপিং করতে যাবি পুরো বিকেল ঘুরাঘুরি করে রাতে ডিনার করে বাসায় ফিরবি।
‘তোমায় দেখলে কে বলবে তুমি আগের যুগের মহিলা।
-ফাযিল ছেলে।
ইনায়া যা বিকেলে সুন্দর করে সেজেগুজে বাইরে ঘুরতে যাস।
দুপুরের খাবার খেয়ে আইজান শুইয়ে রইলো। কিছুক্ষণ পর ইনায়া রেডি হয়ে আইজানকে ডাকলো।
ইনায়া নীল ড্রেস পড়েছে হালকা মেকাপ খোলা চুল এতেই ইনায়াকে খুব সুন্দর দেখাচ্ছে।
দুজন বেড়িয়ে পড়লো শপিংমলে গেলো।ইনায়া অজান্তার জন্য কয়েকটা শাড়ি কিনলো।
নিজের জন্য একটা ড্রেস নিয়ে আয়নায় টায়াল দিচ্চিলো তখনি গ্লাসে দেখতে ফেলো আবেগ তাকিয়ে আছে।
পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখে নেই।
শপিং শেষ করে বাইরে আসতেই দেখতে ফেলো আবেগ মোটরসাইকেল স্ট্রার্ট করছে তখনি ইনায়া আবেগ কে ডাক দিলো।
আবেগ ওদের সামনে আসলো।
-আরে মুটকি কেমন আছিস।
‘তুই আমাকে দেখে পালাচ্ছিস কেনো।
-কি বলছিস,আমি তো তোকে দেখিনি।
‘আমি তোকে আয়নায় দেখেছি তুই আমার দিকে তাকাচ্ছিস।
-দূর মুটকি কি বলিস
“তোমাদের ঝগড়া শেষ হলে থামো আমি কথা বলি।
-আইজান কেমন আছো।
‘আবেগ ভাইয়া ভালো আছি।তুমি কেমন আছো।
-এইতো আলহামদুলিল্লাহ।
‘একদিন আসুন না প্রাণের বেস্টফ্রেন্ডের বাড়িতে বেড়িয়ে আসবেন।
-নিশ্চয় আসবো মুটকির বাড়ি গিয়ে কব্জি ডুবিয়ে খাবো
‘কবে আসবি সেদিন তোকে আমাদের বাসার সামনে দিয়ে যেতে দেখলাম।
আইজান-কারো বাসায় গিয়েছিলে না কি।
-না হ্যাঁ না আমি না অন্য কেউ হবে।
“আমতা আমতা করছিস কেনো আমি তোকেই দেখেছি।
“-আমি না রে অন্য কেউ হবে।
‘আমার চোখ কি ভুল দেখলো।
-আমি যাই পরে দেখা হবে।
আবেগ দ্রুত সাইকেল নিয়ে চলে গেলো।
-আইজান আমার মনে হচ্ছে আবেগ পালিয়ে বাঁচলো
‘আরে না হয়তো কাজ আছে।
ওরা দুজন বাসায় ফিরে গেলো।
দু দিন পর
ইনায়া অজান্তার বিয়েতে যাওয়ার জন্য সবকিছু গুছিয়ে নেয়।ইনায়া ভাবছে অজান্তার চোখ মিথ্যে নয়, আবার আইজান যা বলছে তা ও অবিশ্বাস করা যায়।
ওর জানার অনেককিছু বাকি অনেক রহস্য লুকিয়ে আছে যা ওকে খুঁজে বের করতে হবে।হয়তো অজান্তায় ওকে রহস্য উদঘাটনে সাহায্য করবে।
চলবে