অনুভুতিরা শীর্ষে পর্ব ১৪

#অনুভূতিরা_শীর্ষে 💗
#লেখনিতে_সুমাইয়া_ইসলাম_মিম
#পর্ব_১৪
.
আইসক্রিম দেখে আমার মাথা ঠিক নেই। সাদাদ ভাই এসে পাশে দাঁড়িয়ে এক ধ্যানে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আর আমিতো আইসক্রিমের দিকে তাকিয়ে আছি। আসলেই বেশিই ঠান্ডা পড়েছে যা খুব ভালোভাবেই উপলব্ধি করতে পারছি। কিন্তু আইসক্রিম তো খেতেই হবে। আমি সাদাদ ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বললাম,

–আপনি কোন ফ্লেবারের আইসক্রিম খাবেন?

সাদাদ ভাই দুইহাত ঘষে বললেন,

–এই ঠান্ডায় আইসক্রিম খেলে আমাকে আর খুঁজে পাওয়া যাবে না, আইসক্রিম কন্যা!

আমি ভ্রু কুঁচকে হেসে দিলাম। হাতে আইসক্রিম নিয়ে বললাম,

–কথাটা বেশ বললেন! আইসক্রিম কন্যা! আমাকে বেশিরভাগ মানুষ আইসক্রিম পাগলী বলে কিন্তু আপনিতো ইউনিক কিছু বানিয়ে দিলেন!

সাদাদ ভাই আমার কথায় হেসে দিলো। ঠান্ডায় উনার গোলাপি ঠোঁট সাদা হতে শুরু করেছে। হায়! হায়! উনি আমার দিকে আড়চোখে তাকিয়ে বললেন,

–আচ্ছা বুঝলাম না চকলেট আর বাটার স্কচ দুইটা দুই প্রান্তের ফ্লেবার! এই দুইটাকে মিক্স করে কিভাবে খাও?
আমি বেশ ভাব নিয়ে বললাম,

–আমি ইউনিক! হিহি!
উনিও হেসে দিলেন। বিড়বিড় করে বললেন,
–আসলেই তুমি ইউনিক! অসাধারণ!

উনার বলা অসাধারণ কথাটা শুনে আমার হঠাৎই তাহসান আর কনার ছিপ নৌকো গানটা মনে পড়ে গেলো। তাই আনমনেই আইসক্রিম খেতে খেতেই গাইতে শুরু করলাম,

“আমি অতি সাধারণ
অনিন্দ্য কিছু নই..
তোমার দেখার চোখটাই অবাক
তাই এমন মনে হয়..
অদ্ভুত এই ভুলগুলো
চোখের তারার ফুলগুলো..
উদাস হাওয়ায় উড়ে আনমনা..

তোমার ছিপ নৌকোয় যাবে
সেই ‘অন্য মেয়ে’
তুমিও আড়াল রেখোনা..
তোমার ছিপ নৌকোয় যাবে
সেই ‘অন্য মেয়ে’
লাজুক লিরিক আর কল্পনা..”

সাদাদ ভাইয়ের হাত তালিতে আমার হুশ ফিরলো। এতোক্ষন গানের তালে খেয়ালই ছিলো না! জিহবায় কামড় দিয়ে উনার দিকে তাকাতেই দেখি উনি মিষ্টি হেসে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আর অনবরত হাত তালি দিচ্ছে আস্তে আস্তে। আমি লাজুক হেসে বলতে নিলাম,

–আসলে….

উনি আমাকে থামিয়ে দিয়ে বললেন,

–আমি জানি তোমার এতো ভালো একটা অভ্যাস আছে!

আমি অন্যদিকে তাকিয়ে হেসে দিলাম। আমি এক হাতে একটা কোন আর অন্য হাতে চকলেট আর বাটার স্কচ এর মিক্স আইসক্রিম নিয়ে আছি ফোনটা সাদাদ ভাইয়ের কাছেই রেখেছি। হঠাৎ একটা আননোন নাম্বারে কল এলো আমার ফোনে। সাদাদ ভাই আমাকে দেখালো। আমি দেখে বললাম,

–এই নাম্বার আমার চেনা নয়! আর এতো রাতে তো কারো আমাকে ফোন দেওয়ার কথা নয়!

সাদাদ ভাই একবার ফোনের দিকে তাকিয়ে আবার আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,

–কলটা আমি রিসিভ করতে পারি!

আমি কিছু না ভেবেই মাথা দুলিয়ে হ্যাঁ বলে দিলাম। উনি কিছুক্ষণ নাম্বারের দিকে তাকিয়ে কলটা রিসিভ করে কানে ধরলেন। খেয়াল করলাম উনি কিছুই বলছেন না শুধু কানে ধরে রেখেছেন! আমি কিছু বলব তার আগেই আঙুল দিয়ে ঠোঁট চেপে ধরলেন। আমিও চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলাম। খেয়াল করলাম উনার চোখ আবার লাল হয়ে উঠছে। দাঁতে দাঁত চেপে ধরছেন বারবার। হঠাৎ ফোনটা কান থেকে নামিয়ে কেঁটে দিলেন আর পারলে ফোনটা আছাড় মেরে ভাঙে কিন্তু আমি চিৎকার করে বললাম,

–আমার ফোন!

উনি ফোনটা আমার হাতে ধরিয়ে হাত থেকে একটা আইসক্রিম নিয়ে খেতে শুরু করলেন। দুই মিনিটে আইসক্রিমটা খেয়ে শেষ করলেন। কিছুক্ষণ পর আমাকে শান্ত গলায় বললেন,

–এই নাম্বার থেকে আর কখনো ফোন এসেছিল?

আমি মাথা ডানে বামে ফিরিয়ে না বললাম। উনি আবার হাত দিয়ে ঠোঁটটা ঘষে কয়েকবার শ্বাস ছাড়লেন। আমি বেশ কৌতুহল নিয়ে বললাম,

–কে ফোন করেছিল?

উনি উনার আগুন ধরানো চোখ দুটো দিয়ে আমার দিকে তাকাতেই বেশ ভয় পেয়ে গেলাম। উনি উনার ফোন থেকে কাকে যেন ফোন করে বললেন,

–একটা নাম্বার পাঠিয়েছি! যে করে হোক কালকে আমার সামনে হাজির করবি! এট এনি কস্ট!

আমি এবার আসলেই বেশ ভয় পেলাম। কে ফোন করেছিল? আর এমন কি বলল যার জন্য উনি এতো রেগে গেছেন? এই তো বেশ ভালো ছিলেন। আমি আর কিছু বলার সাহস পেলাম না। হঠাৎ আমার মনে হলো আমি কিছু ভুলে গেছি! বেশ জোরেই বলে উঠলাম,

–আরে আমি তো ভুলেই গেছি!

সাদাদ ভাই আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,

–কি ভুলে গেছো?

আমি বেশ করুনভাবে বললাম,

–আপনাদের গেস্ট রুমে আমার চকলেট বক্সটা রয়ে গেছে! কেউ যদি চকলেট গুলো নিয়ে যায়?

আমার কথা শুনে উনি কতক্ষণ কপাল চাপড়িয়ে বললেন,

–যেভাবে চিৎকার করলা ভেবেছি কি না কি হয়ে গেছে! আজব মেয়ে তুমি! আমি এখানে উনাকে নিয়ে টেনশনে মরে যাচ্ছি আর উনি চকলেট নিয়ে পড়ে আছে। তাড়াতাড়ি বাসায় চলো! প্রচুর ঠান্ডা লাগছে আমার!

আমি দ্রুত মাথা দুলিয়ে হ্যাঁ বলে উনার সাথে তাড়াতাড়ি চলছি! আসলে গাড়ি থেকে বেশ দূরে চলে এসেছিলাম এখন আবার গাড়ির কাছে যাচ্ছি। আসলেই ঠান্ডায় উনি রীতিমত কাঁপছে। আমি আমার চাদরটা উনাকে পড়িয়ে দিলাম! উনার যা অবস্থা দেখে আমার অনেক খারাপ লাগলো। তার উপর মেজাজ দেখিয়ে আইসক্রিম খেলো! আজব পাবলিক! উনি আমাকে কি মানা করবে! পারলে আমাকে ঝাঁপটে ধরে! উনার এতো ঠান্ডা লাগছে! আমার হাত ধরে রীতিমত দৌড়াতে শুরু করলেন! তাড়াতাড়ি গাড়ির কাছ পৌছানোর জন্য। আমিও উনার সাথে সাথেই চলতে লাগলাম। গাড়িতে বসে উনি নিজেকে গরম করার জন্য হাতে হাত ঘষতে শুরু করলো। উনার নাক লাল হয়ে গেছে। উনি ড্রাইভ কিভাবে করবে ভেবেই মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে।

বেশ কিছুক্ষণ পর উনি নরমাল হলেন। কিন্তু নাক মুখ লাল হয়ে গেছে। আমি জানালার গ্লাসগুলো উঠিয়ে দিতে বললাম। উনিও তাই করলেন। আমাকে চাদরটা ফেরত দিতে চেয়েছিলেন আমি নিই নি।

–চাদরটা আমার থেকে বেশি আপনার প্রয়োজন! আমি বাসায় গিয়ে নিয়ে নিবো। এটাকে আপাতত মাথায় পেচিয়ে নিন! ঠান্ডা কম লাগবে!

বেশ কিছুক্ষন আমাদের মধ্যে নিরবতা ছিলো। নিরবতা ভেঙে আমিই বললাম,

–বাসায় গিয়ে সবার আগে গরম পানি খেয়ে নিবেন। রুমে তো হিটার আছে তাই না?

আমার বেশ চিন্তা হচ্ছে উনার জন্য! উনার ঠোঁট ফ্যাকাসে হয়ে আসছে! তার জন্য কথাও বলতে পারছেন না। আমি যা বলছি তার হ্যাঁ হু করে উত্তর দিচ্ছেন। কি যে হবে!
,
,
,
চলবে…………..❤️

(অনলাইন ক্লাস ছিল তাই দেরি হয়ে গেলো! সরি)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here