অচেনা শহর পর্ব ১২+১৩

#অচেনা_শহর💖
#লেখিকা:—-তানজিনা আক্তার মিষ্টি
#পর্ব:—১২

অন্তরা রেগে আগুন হয়ে বসে আছে। ওর পাশে হৃদয় ও বসে আছে অন্তরা উঠতে চাইছিলো ছেলেটা জোর করে বসিয়ে রেখেছে।
উঠতে গেলেই হাত শক্ত করে টেনে আবার বসিয়ে দেয়। এজন্য উঠতে ও পারছে না‌।

একটু আগে ওনার ফোন নিয়ে স্নেহাকে কল করেছিলাম স্নেহা ফোন রিসিভ করে নি‌। তিন বার কল করেছি তারপর থেকে এখানেই বসে আছি। আর উঠতেও পারছি না পেছনে একটা ম্যাম বসে আছি। তাই কিছু বলতে পারি না।
ওনার দিকে রেগে তাকালে দাঁত বের করে হাসে সেই হাসি প্রথম ভালো লাগলেও এখন আমার গাঁ জ্বলে যাচ্ছে এই হাসি দেখে। হনুমান একটা, কেমন পেছনে পরে আছে।

“অন্তরা”

হঠাৎ কারো মুখে নিজের নামে ডাক শুনে ঘার ঘুরিয়ে সেদিকে তাকালো….
তাকিয়ে দেখি রাহাত ভাইয়া আমার দিকে আসছে। সামনে এসে দাড়িয়ে হেসে উঠলো আমি একটা হাসি দিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,

“হাই ভাইয়া কেমন আছেন?”

“আলহামদুলিল্লাহ ভালো। তুমি কেমন আছো?”

“আলহামদুলিল্লাহ ভালো।”

“অন্তরা তোমাকে একা দেখছি স্নেহা আসে নাই। ওকে দেখছি না‌!”

“ও তো আসে নাই। কতো করে বললাম তবুও এলো না। কাল এতো করে রাজি করিয়েছি আর এখন দেখেন আসেই নাই‌। ফোন দিচ্ছি রিসিভ ও করছে না।”

মনটা খারাপ করে বলল …

“কিন্তু ভাইয়া আপনাকে দেখলাম না তো কালকে ভার্সিটিতে। আসছিলেন না নাকি।”

“কাল একটু বিজি ছিলাম এজন্য আসি নাই।”

“ওহ আচ্ছা। আপনি কি কোন দরকারে স্নেহাকে খুঁজছেন?”

কৌতুহল নিয়ে জিজ্ঞেস করলো….

“না না তেমন না আসলে তোমাকে দেখলাম ওকে দেখলাম না তাই। আচ্ছা আসি।”

“ভাইয়া একটা কথা ছিলো।”

“হ্যাঁ বলো।”

অন্তরা আদ্রর পাশে দাঁড়ানোর একটা মেয়ে কে দেখিয়ে বলল,,

“ওই মেয়েটা কে ? আসলে আগে আপনাদের সাথে দেখি নাই তো তাই‌।”

“আয়রা আমাদের ফ্রেন্ড। কিছু দিন ভার্সিটিতে আসে নাই এজন্য দেখো নি। আচ্ছা আসি ভালো থেকো।”

অন্তরা কে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে রাহাত চলে গেল।

“কিরে কোথায় গেছিলি‌?”
মাইশা কথাটা বলল রাহাতকে,,,,

“এইখানেই।”

“তোকে দেখলাম ওই স্টুপিট মেয়ে ফ্রেন্ডের সাথে কথা বলছিস। কি কথা বললি?”

“হোয়াট, স্টুপিট মেয়েটা আবার কে?”

“কে আবার ওই যে কি যেন নাম ,, কিছু ক্ষন ভেবে,
স্নেহা ইয়েস স্নেহা ওই মেয়েটা কে তো দেখলাম না আসে নাই।”

“নাহ। কিন্তু তুই কি সব বলছিস ওকে। ”

“বেশ করেছি ওই মেয়েটাকে আমার একদম সহ্য হয় না। ভালোই হয়েছে আসে নাই।”

মুখ বেঁকিয়ে বেঁকিয়ে কথা বলতে লাগলো সাথে সবাই শুধু চুপ করে আছে আয়রা ও কিছু বুঝতে পারছেনা‌। আর রাহাত চুপ করে আছে ও বলে ও এদের থামাতে পারবে না তার থেকে চুপ থাকাটাই বেটার। রাহাতের চোখ যায় আদ্রর দিকে আদ্র চলে যাচ্ছে।

রাহাত ওর পেছনে যেতে যাবে পেছনে থেকে কেউ ওর হাত ধরে নিয়েছে।
তীক্ষ্ণ চোখে পেছনে তাকায়…

“কোথায় যাসছিস?”

“হাত ছার আয়রা। এসব কিন্তু আমি পছন্দ করি না।”.

“আচ্ছা ছারছি। এতো হাইপার হচ্ছিস কেন? আমার দিকে তো তাকাচ্ছস‌ই না দেখ আমি শাড়ি পরছি কেমন লাগছে আমাকে বলতো।”

রাহাত কিছু বলল না।

“ওই কিছু বলিস না কেন? আমাকে কি দেখতে খারাপ লাগছে। ”

বলেই মুখ কালো করে ফেলল….

“জানিনা।”

আর দাঁড়ালো না দ্রুত পায়ে চলে গেল।

আয়রা ওর দিকে তাকিয়ে আছে ওর চোখ ছলছল করছে। গাল বেয়ে পরার অপেক্ষা।

তুই আমাকে কখনো বুঝলি না রাহাত। একটু ও কি ভালোবাসা যায় না আমাকে।
হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে চোখের পানি মুছে নিলো। মাইশাদের পাশে দাঁড়িয়ে র‌ইল।

আয়রা রাহাত কে ভালোবাসে তিন বছর ধরে কিন্তু রাহাত সেটা বুঝতে চায় না। সব সময় ইগনোর করে।

.

রান্না শেষ করে ঘেমে গেছে স্নেহা বাবাকে খাবার দিয়ে গোসল করতে চলে যায়।
গোসল করার সময় ফোনের রিংটোন বেজে উঠে কিন্তু এখন রিসিভ করা সম্ভব না। তারাতারি করে গোসল শেষ করে এসে ও শেষ রক্ষা করা গেল না। কল কেটে গেছে তিনবার মিস কল আননোন নাম্বার।

আবার আসে কিনা তার জন্য ফোন হাতে নিয়ে দাড়িয়ে রইলাম কিন্তু আর আসলো না খিদে লেগেছে খেতে হবে এখন আলু ভাজা দিয়ে ভাত খেলাম। আব্বু কে ডিম ভেজে দিছিলাম। ঘরে বাজার ও নাই কাল ভার্সিটি থেকে আসার সময় কিছু কিনতে হবে।

দুটো বাজে অন্তরা নিশ্চয়ই আমার উপর খুব রেগে আছে কিন্তু আমি কি করবো যেতে পারলে তো যেতাম ই।
কাল ই তো এক তারিখ কাল থেকে টিউশনি তে যেতে হবে।

সন্ধ্যায় অন্তরার ফোন এলো। ভয়ে ভয়ে রিসিভ করলাম ঔপরপাশ থেকে ঝাঁজালো কন্ঠস্বরে কানে এলো অন্তরা বটেই যাচ্ছে। চোখ বন্ধ করে বকা হজম করলাম।

নিজে নিজে বকে ঠান্ডা হয়ে গেল এবার আমি কিছু বলবো তার আগেই খট করে ফোনটা কেটে গেল। আমি কিছু বলার সুযোগ ই পেলাম না।

ফোনের দিকে তাকিয়ে আছি। প্রচন্ড খেপেছে আমার উপর। এটি স্বাভাবিক কিন্তু এখন কিছু করতে পারবোনা কাল গিয়ে তা করার করতে হবে। সব খুলে বলতে হবে।

.

পরদিন

ভার্সিটিতে আসতেই মুখোমুখি হয় আদ্রর সাথে সে আমার দিকে একটা কেমন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। একবার আড়চোখে তাকিয়ে সিড়ি বেয়ে উপরে চলে গেলাম।
ক্লাসে ঢুকে দেখি অন্তরা আগেই এসেছে আমি মুখে হাসি ফুটিয়ে ওর পাশে গিয়ে বসলাম। কিন্তু ও একবার আমার দিকে তাকিয়ে ইগনোর করে মুখ ঘুরিয়ে ফোন টিপতে লাগলো।

“সরি রাগ করিস না প্লিজ।”

অন্তরা ফিরে ও তাকালো না । আমি ওর কাঁধে হাত রেখে আমার দিকে ঘুরিয়ে আবার সরি বললাম…

“সরি তো আমি ইচ্ছে করে আসি না এমন না আস্তে চাইছিলাম। কিন্তু তোর ব্লাউজ আমার হয় নাই আর ফোনে টাকা ও নাই তাই ফোন দিতে পারি নি।”

মুখ গোমড়া করে বললাম। অন্তরা এবার আমার দিকে তাকালো।

” তাই কি শাড়ি না পরতি অন্য ড্রেস পরে আসতি।”

“আসলে সবাইকে শাড়ি পরতে বলেছিল আমি একা অন্য ড্রেস পরলে যদি কেউ কিছু বলে তাই।

“তুই জানিস কাল কি হয়েছে ?”

“না বললে জানবো কিভাবে?”

অন্তরা হৃদয়ের ব্যাপারে সব বলল..
স্নেহা সব শুনে হাসতে হাসতে শেষ। আর অন্তরা রেগে রেগে কথা গুলো বলছে।

স্যার রুমে আসতেই সবাই দাঁড়িয়ে পরলো।
স্যার একটা না সাথে আদ্র ও তার দুজন ফ্রেড আছে। এরা এখন এখানে কি করছে? কথা গুলো ভাবতে ভাবতে বসে পরলাম কিন্তু বেশিক্ষণ বসে থাকতে পারলাম না।

চট করে আবার উঠে দাঁড়াতে হলো ভয়ে আমার আত্মা কাঁপছে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছি। আমি একা কিনা দেখার জন্য একবার মাথা উঁচু করে ক্লাসে চোখ বুলিয়ে নিলাম না একা না আমি বাদেও আর ও চার জন আছে দুইটা মেয়ে একটা ছেলে ।

আমাদের দাঁড়ানোর কারণ কাল অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করি নি তাই।
আদ্রর দাঁড়িয়ে স্যারের সাথে কথা বলে বেরিয়ে গেল যাওয়ার আগে আমার দিকে এক নজর তাকিয়ে ছিলো।

“তোমরা কাল অনুষ্ঠানে আসো নি এজন্য তোমাদের জন্য শাস্তি আছে। এখন সেটাই পাবে ফাইনাল ইয়ারের স্টুডেন্টেরা তোমাদের জন্য কষ্ট করে অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল কিন্তু তোমরা না এসে তাদের অপমান করেছো।সবার আসা টা বাধ্যতা মূলক ছিলো এবার তোমরা যাও আজ ক্লাস করতে হবে না।”

স্যার বলেই যেতে বলল আমি ভয়ে কাঁপতে লাগলাম এ কোন মসিবত রে বাবা এখন কি হবে?

এই সব কিছু ওই অসভ্য ছেলে টা করেছে আমি সিউর। স্যারকে কি যেন বুঝিয়ে গেল অসভ্য এখন তো যেতেই হবে কিছু করার নাই স্যার বলেছে।

“এভাবে তাকিয়ে না থেকে কাজে লেগে পরুন ম্যাডাম। ”

বলেই আদ্র চেয়ারে উপর বসে পরলো হাতে ফোন সেটা চাপছে পায়ের উপর পা তুলে বসে আছে।
স্নেহা তীক্ষ্ম চোখে তাকিয়ে আছে আদ্রর দিকে।

“আপনি ইচ্ছে করে এসব করাচ্ছেন তাইনা।”

“তুমি এখন ও এখানে দাঁড়িয়ে আছো সবাই কাজ করছে দেখতে পারছো না ।যাও কাজ করো।”

স্নেহাদের কালকের অনুষ্ঠানের জন্য যে স্টেজ সাজানোর হয়েছিল সেগুলো খুলতে বলা হয়েছে স্নেহাকে দিয়েছে ফুল বিভিন্ন দিয়ে যে সাজানো সেসব পর্দা খুলতে।

এসব ডেকোরেটরে লোকরাই করে কিন্তু ওদের শাস্তি দেওয়ার জন্য এসব করা হয়েছে। কিছু ক্ষন রেগে আদ্রর দিকে তাকিয়ে থেকে কাজে লেগে পরে স্নেহা আদ্রর বলছে কাজ ঠিক মতো না করলে অন্য কিছু ভাবতে হবে এজন্য ঠিক মতোই করতে হবে।

কাজ করছে আর রেগে আদ্রর দিকে একটু পর পর তাকাচ্ছি‌। খাটাশ একটা এভাবে কেউ কাজ করায়। নিজে কেমন লাখসাহেবের মতো বসে আছে মন চাইছে মাথা ফাটিয়ে দেয়।

মনে মনে ইচ্ছে মতো বকছে আদ্রকে কিন্তু সেটা একমাত্র
স্নেহা জানে আর কেউ না।
স্যার না বললে কখনো এই খচ্চরটার কথা শুনতাম না‌।

“আমাকে না বকে কাজ শেষ করুন ম্যাডাম এভাবে দাড়িয়ে থাকলে আমার অন্য কিছু ভাবতে হবে। সেটা কিন্তু আর ও কঠিন কিছু হবে।”

আচমকা কানের কাছে আদ্রর কন্ঠস্বর আসতেই থমকে গেলাম। একটু নড়েচড়ে দাঁড়ালাম আসলেই আমি দাঁড়িয়ে আড়চোখে আদ্রর দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করছিলাম কিন্তু আদ্র শুনলো কি ভাবে আদ্র দূরে বসা ছিলো।

“আপনি এখানে কেন? আর আমি আপনাকে বকতে যাব কেন?

কিছু টা তোতলাতে তোতলাতে বললো,
“তুমি আমাকে বকছিলানা বলছো। ওকে গুড গার্ল। আর আমি কি করছিলাম তোমাকে বলতে বাধ্য না নিজের কাজ করো।”

বলেই আবার নিজের জায়গায় চলে গেল। রেগে তার দিকে তাকিয়ে কাজে মন দিলাম।

রেগে কাজ করছি আড় চোখে বার কয়েক না চাইতেও তাকিয়েছি। তারপর কাজে মনোযোগ দিয়েছি ভালো করে।
এখন শীতের সময় তবুও আমার গরম লাগছে কাজ করলে তো গরম‌ই লাগবে।
#অচেনা_শহর💖
#লেখিকা:– তানজিনা আক্তার মিষ্টি
#পর্ব:— ১৩

নিজের কাজ শেষ করে স্টেজের উপরে উঠে দাঁড়িয়ে লাফালাফি করতে হচ্ছে এখন স্নেহা কে। কারণ ওপরেও নাগাল পাচ্ছে না। বার কয়েক লাফালাফি করে যখন কাজ হলো তখন দাঁড়িয়ে সে হাঁফাতে লাগলো।লাফালাফি করে কাজ নাই আমি ত আর তালগাছ না যে আমার হাত এত উঁচু তে যাবে এর জন্য অন্য ব্যবস্থা করতে হবে।
কিন্তু কি ব্যবস্থা?

গালে হাত দিয়ে ভাবছি কিভাবে আমিওই উঁচুতে পৌঁছাব। হঠাৎই আমার মাথায় আসে কিভাবে আমার হাতে এখানে পৌঁছাবে চোখ সরিয়ে মাঠে দৃষ্টি রাখে স্নেহা।
এখন একটা চেয়ার দরকার চেয়ারে দাড়িয়ে কাজ শেষ করতে পারব। কিন্তু হায় কপাল আমার মাঠে তো একটা চেয়ার ও নাই এখন কি হবে হন্যে হয়ে চারপাশে চেয়ার খুঁজে যাচ্ছি। চোখ রাখা মালপত্রের গাড়িতে ডেকোরেটরের লোক গুলো চেয়ার নিয়ে গাড়িতে উঠিয়ে রেখেছে সব। এখন আমি কি করব?
কাজ শেষ না হলে তো আমাকে যেতে দেবে না যে রাক্ষস আমার পেছনে পড়েছে।
রাগে এখন হাত পা ছড়িয়ে কাঁদতে ইচ্ছে হচ্ছে স্নেহার।

ভাবনার বিভোর হয়ে আছে স্নেহা হঠাৎ ওর নজর পড়ে আদ্রর দিকে আজও বসে আছে পায়ের উপর পা তুলে হাতে ফোন। অনবরত টিপে যাচ্ছে ভুল করে ও মাথা উঁচু করছে না। কি এত করে ফোনে আল্লাই জানে?
হঠাৎ স্নেহা টনক নড়ে বসে আছে কিসে চেয়ারে বলতেই স্নেহার চোখ চিকচিক করে উঠে। লাফিয়ে ওঠে এইতো পেয়ে গেছি এটা আগে আমার চোখে পড়লো না কেন?

আমি এত বোকা না চোখের সামনে একজন চেয়ার পেতে বসে আছে। আর আমি ছাড়া দুনিয়া খুঁজে বেড়াচ্ছি। দৌড়ে আদ্রর সামনে গিয়ে দাঁড়ায় স্নেহা।

স্নেহা আদ্রর সামনে দাঁড়াতেই মাথা উঁচু করে স্নেহা দিকে তাকায় আদ্র। ওর সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ব্রু কুচকায়,,

“তুমি এখানে কি করছ? কাজ কি শেষ?”

আদ্রর কথায় স্নেহা একটা বিরাট বড় হাসির আদ্র হাসি দেখে প্রশ্ন তোক চোখে তাকায় ও হাসির কারণ কি বুঝার চেষ্টা করছে। হঠাৎ ওর মাথার আসা স্নেহা কি কাজ শেষ? ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে ২৫ মিনিট হয়েছে কেবল এত তাড়াতাড়ি কাজ শেষ! ইম্পসিবল মিনিমাম এক ঘন্টা লাগবে কাজ সেইসাথে তাহলে স্নেহা,

ওর ভাবনার মাঝে স্নেহা ডাক পড়ে।

“নানা কাজ এখনো শেষ হয় নাই কিন্তু শেষ করার জন্য আপনার এখানে আসা।”

“হোয়াট কাজ শেষ করতে এখানে আসা মানে কি? তোমার কাছ তো ওইখানে তুমি এখানে এসে আবার কিভাবে কাজ শেষ করবে?”

অবাক হয়ে কথাগুলো বলছে আদ্র ওর মাথায় কিছুই ঢুকছেনা স্নেহার কথাবার্তা।

“সেসব আপনার ভাবতে হবেনা আপনি একটু দাঁড়ান তো।”

কথা নেই বার্তা নেই আচমকা স্নেহা ওকে দাঁড়াতে বলাতে আদ্র হা হয়ে যায়।

“হোয়াট, আর ইউ ম্যাড।
আমি দাঁড়াবো কেন?”

“আরে দাঁড়ান না একটু আপনি না দাঁড়ালে তো আমার কাজ শেষ হবে না।”

“আমার দাড়ানোর সাথে তোমার কাজের কী সম্পর্ক? যাও নিজের কাজ করো নাকি আমাকে দিয়ে আবার কিছু করাতে চাইছে। ভুলেও সেসব ভেবে না। আমি তোমাকে বিন্দুমাত্র হেল্প করব না।”

“অফ এত কথা বলেন কেন আপনি আসলে একটা বাঁচাল!আমি কি আপনাকে একবারও বলেছি আপনি আমাকে হেল্প করুন। সেটা তো বলি নাই তাহলে অযথা এত কথা বলছেন কেন? যা বলছি তাই একটু করেন না। একটু দাঁড়ালে তো আপনার পা ক্ষয় পড়ে যাবে না।”

উত্তেজনা স্নেহা কি বলছে নিজেও জানেনা।নিজের মত কথা বলে যাচ্ছে এদিকে আদ্র স্নেহার কথা শুনে রাগে ফায়ার হয়ে গেছে। রাগে ওর চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে রক্ত লাল চোখ দিয়ে স্নেহার কথাগুলো গিলছে দাঁতে দাঁত চেপে। আর মন চাইছে এখন স্নেহাকে এক আছাড় দিতে।

“তুমি আমাকে বাঁচাল বললে, তোমার সাহস দেখে অবাক হচ্ছি। এত সাহস তুমি…

কথা শেষ করতে পারল না স্নেহা বলে ওঠে,

“পরে আমাকে ব‌ইকেন। কিন্তু এখন আমার কাজ শেষ করতে দেন। আর যদি বেশি বাড়াবাড়ি করেন না তাহলে কিন্তু কাজ না করে চলে যাব।”

স্নেহার কথায় শকের উপর শক খাচ্ছে আদ্র কিছুক্ষণ আগেও তো ভয়ে কাপা কাপি করছিল হঠাৎ এত সাহস বেড়ে গেল কিভাবে। আদ্র রেগে গিয়ে দাঁড়িয়ে যায় স্নেহাকে কিছু বলার জন্য…

এদিকে স্নেহা আদ্রকে চেয়ার ছেড়ে উঠে দেখেই খুশি হয়ে যায়। আদ্র ওঠে কয় পা এগোতে স্নেহা দৌড়ে চেয়ার নিয়ে হাটা শুরু করে। আর পিছন দিকে একজন হা করে ওর জাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। কি হলো সবার মাথার উপর দিয়ে গেল?

আদ্র স্নেহার যাওয়ার পানে তাকিয়ে আছে।স্নেহা সোজা স্টেজের উপরে উঠে চেয়ার নিয়ে রেখে। চেয়ারে উঠে পরে তারপর কাজ করতে লাগে।আদ্র সে দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। এতক্ষণে বুঝলো স্নেহা কেন দাঁড়াতে বলেছিল।

কিছু বলার জন্য এগিয়ে যেতে চাইছিল কিন্তু কেন জানি যেতে পারল না। দাড়িয়ে দাড়িয়ে স্নেহার কাজ দেখতে লাগলো…

স্নেহা নিজের শান্তি মত কাজ করছে।কাজ শেষ করে এখন কিনারে পর্দাগুলো আর ফুল দিয়ে মালার মত কেটে কেটে লাগানো হয়েছে তার মাঝে ফুল দেওয়া হয়েছে। সেগুলো নামাতে হবে।
স্নেহা চেয়ার নিয়ে স্টেজের কিনারে নিয়ে রাখে।
তারপর আস্তে আস্তে সেটার উপরে উঠে দাঁড়ায় হাত দিয়ে উপরের ধরে পর্দা খুলতে লাগে।
সেখান থেকে একটা সূর্যমুখী ফুল পায় হলুদ সূর্যমুখী ফুল দিয়ে সাজিয়েছে। কিন্তু আগে যে গানটা ফুল গোলাপ বেশি ছিল সূর্যমুখী ফুল ছিল না এইটা কোথায় থেকে আসলো। যেখান থেকে আসুক ফুলটা একদম তাজা রয়েছে।
খুলতে গিয়ে সব ফুল ছিঁড়ে ফেলেছে কিন্তু এই ফুলটা ছিরলো না খুব সাবধানে খুলতে লাগলো।
অবশেষে সাবধানে খুলতে পারল। ফুলটা খুলতে পেরে একটা বিশ্ব জয়ের হাসি দিল স্নেহা।

নিজের ড্রেসের সাথে ফুলটা মিলে গেছে। স্নেহা আজকে হলুদ রঙের ড্রেস পরেছে।

ফুলটা নিচে ছুড়ে মারল স্টেজ এর মাঝে পড়ল ফুলটা। এই সবে কাজ শেষ করে নেমে ঐটা নিয়া যাবে।তারপর কাজ করতে লাগল পর্দা খুলতে গিয়ে পড়ল বিপদে গিট্টু পড়েছে কঠিনভাবে খোলাই যাচ্ছে না। এদিকে স্নেহা খুলতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে। আর নড়ছে এমনিতেই একদম কর্নারে চেয়ার রেখে দাঁড়িয়ে কাজ করছিল সে চেয়ারটা আস্তে আস্তে নিচে পড়ে যেতে নেই। পরে যদি নিলে স্নেহার নড়ে ওঠে ভয়ে আর আত্মা কেঁপে ওঠে।
যে পাশে হাত দিয়ে পর্দা খুলে সেই বাঁশ দিয়ে শক্ত করে আঁকড়ে ধরে। নিচে চেয়ারটা এক পা দিয়ে ঠিক করার চেষ্টা করছে। কিন্তু চেয়ার পড়ে যাবে যাবে। পড়ে গেলে আমি নিচে নামাবো কিভাবে?
অজানা ভয়ে স্নেহা কাঁপতে থাকে।

দুই হাত ব্যথা হয়ে গেছে শক্ত করে ধরে রাখতে রাখতে এদিকে চেয়ারটাও পড়ে গেছে। নিচে তাকিয়ে ভয়ে আঁতকে ওঠে,,,

কাঁদো কাঁদো মুখ করে তাকিয়ে আছে অসহায় ভাবে আবার চোখ বন্ধ করে নিয়েছে ভয়ে।

আদ্র স্নেহার এই অবস্থা দেখে ও নিজেও ভয় পেয়ে যায়। কি করবে বুঝতে পারছে না হা করে তাকিয়ে আছে। হঠাৎ করেই ছুটতে লাগে ছুটে সিড়ি বেয়ে স্টেজে উঠে দাঁড়ায়।স্নেহার দিকে এগিয়ে গিয়ে ওকে ধরবে । তার আগে কেউ একজন চেয়ার নিচে থেকে ওঠিয়ে ধরে।

স্নেহা ভয়ে চোখ বন্ধ করে আছে হঠাৎ কারও কথায় চোখ মেলে তাকায়,

“স্নেহা তাড়াতাড়ি চেয়ারে পা রাখো।”

কথাটা শুনে স্নেহা নিচে দেখে রাহাত। তাকে দেখে স্নেহা একটু ভয় মুক্তা হয়। রাহাত চেয়ার ধরে দাঁড়িয়ে আছে। স্নেহাকে চেয়ারে পা দিয়ে নামতে বলছে।
স্নেহা নিজেকে স্বাভাবিক করতে থাকে ভয়ে চেয়ারে পা দিতে পারছে না।

“কি হলো তাড়াতাড়ি কর?”

“আমার ভয় করছে খুব।”

“মনে হচ্ছে পড়ে যাব নিচে।”

“পড়বে না। আমি তোমার চেয়ার ধরে রেখেছি। তুমি চেয়ারে পা দিয়ে নিচে আস।”

“আচ্ছা চোখ বন্ধ করে নিচে আসো। আমিও উপরে আসছি তোমাকে ধরে নামাই।”

স্নেহ ওইভাবেই ঝুলে থাকে সাথে চোখ বন্ধ করে সত্যি ওর খুব ভয় করছে।

রাহাত চেয়ার ওইখানে রেখে উপরে আসতে নেয়।

আদ্র ওদের কথোপকথন সবি শুনেছে। ও কি যেন ভেবে স্নেহার কাছে যায়। স্নেহা চোখ বন্ধ করে আছে। কিছু না ভেবেই স্নেহা কোমর ধরে ওকে নিচে নামায়। স্নেহা তখনও চোখ করেই ছিলো। স্নেহা হঠাৎ কোমরে কারো ছোঁয়া পেয়ে অবাক এর চরম সীমায় পৌছে যায়।
এ ভাবে ওকে নামাবে ও কল্পনা করে নাই। নিচে পা রাখতেই ভয় কমে আসে।
আস্তে আস্তে চোখ মেলে তাকায় স্নেহা।

রাহাত তাড়াতাড়ি করে উপরে এসে দেখে স্নেহা নিচে দাঁড়িয়ে আছে। চোখ এখনো বন্ধ ও স্নেহার কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করবেও নামলো কিভাবে?

এগিয়ে আসতেই স্নেহা চোখ মেলে তাকায়।

“থ্যাংক ইউ সো মাচ ভাইয়া। আপনি আমাকে এত বড় বিপদের হাত থেকে বাঁচালেন। আপনি না থাকলে আমার কি হত?”

“আমি কখন তোমাকে বাঁচালাম তুমি তো নিজেই নেমে এলে।”

“আমি নেমে এলাম মানে আপনি তো আমাকে নামালেন।”

“আমি কিন্তু কখন আমি তো এইমাত্র উপরে উঠে দেখলাম তুমি নেমে গেছো।”

“আপনি আমাকে না আমার নাই।”

“না তো আমি নামালে কি আমি তোমায় বলতাম তুমি একাই নামছো।”

“তাহলে আমাকে নামালো কে?”

বিরবির করে কথাটা বলল…

এখানে তো আর কেউ নাই। মাঠে দিকে তাকাল আদ্র সেই আগের জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে। হাতে ফোন কানে ইয়ারফোন। সে তো আর আমাকে নামাবে না তাহলে কে আমাকে হেল্প করলো।

.

প্রথম ক্লাস করে অন্তরা স্নেহার খোঁজে ক্লাস থেকে বের হয়। ক্লাসের জন্য বেরোতে পারেনি তখন। ক্লাস থেকে বের হয়ে সিঁড়ি দিয়ে নামতে থাকে।

হঠাৎ সামনে অসভ্য হৃদয়ের সাথে দেখা হয়ে যায় অন্তরার। সে অন্তরাকে দেখেই সামনে এসে দাঁড়ায়। তারপর একটা পর একটা হাসির দেয়।

“আরে আপনি যে। সকাল থেকে আপনাকে খুঁজছি জানেন। অবশেষে পেয়ে গেলাম।তা কেমন আছেন ম্যাডাম”

“আপনি এখানে? আর আমাকে খুঁজছেন‌ই বা কেন?”

“সেতো অনেক কারণ এই খুঁজছি। তা বললে না তো কেমন আছো?”

“আপনি আমাকে তুমি করে বলছেন কেন?”

“আসলে আপনিটা না কেমন জানি পরপর লাগে তাই ভাবলাম এখন থেকে তোমাকে তুমি করে বলবো।”

“পরপর আপন কি সব বলছেন? দেখুন আপনি আমাকে আর একটু ডিস্টার্ব করবেন না আর আজকে না শুধু কোনদিন করবে না। কালকে অনেক জ্বালিয়েছেন আমাকে।”

“কি বললে আমি তোমাকে জালিয়েছি কত সুন্দর একটা সময় গেল কাল। আর তুমি বলছ আমি তোমাকে জালিয়েছি।”

বলে মুখ কালো কারলো,
আমি তার কথা বলার ধরণ দেখে হতবাক এমনভাবে বলছে যেন আমরা কত জনমের পরিচিত।

“অসভ্যের মত কথা বলবেন না। আপনাকে আমার কি করতে মন চাইছে জানেন।”

“না তো কি করতে মন চাইছে?”

“আপনাকে আমার…

কথার মাঝে একটা মাঝে থামিয়ে দেয় হৃদয়।

“ওয়েট তোমার আবার ওই সব কিছু করতে মন চাইতেছে না তো। আমার কিন্তু লজ্জা লাগছে।”

বলেই লজ্জা পাওয়ার ভান করল।

“মানে কি সব করতে মন চাইবো। লজ্জায় বা কেন পাবেন? বুঝতে পারছি সবার সামনে একটা মেয়ের কাছে থেকে…..

“বলোনা তো আমার লজ্জা করে। তুমি সবার সামনে কেন আড়ালেও তো তো করতে পারো। সবার সামনে চুমু খাবে‌।”

চুমু খাওয়ার কথা শুনে অন্তরার চোখ মার্বেলের মতো বড় বড় হয়ে গেছে। কত বড় লুচ্চা হলে এই কথাটা বলতে পারে।

আরে এদিকে হৃদয় লাজুক মুখ করে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।
“লুইচ্চা ছেলে একটা। তুই জীবনে আমার সামনে আসবে না। আসিস তো তোর গাল লাল করে দেব থাপড়াইয়া শয়তান একটা।”

বলে রাগে গজগজ করতে করতে হৃদয় কে ধাক্কা মেরে সরিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নেমে যায়।

অন্তরা বিড়বিড় করে হৃদয়কে বকতে বকতে স্নেহাকে খুঁজতে লাগে। হাঁটতে হাঁটতে কারো সাথে ধাক্কা খায়। এমনিতে রেগেছিল তারপর ধাক্কা খেয়ে আরো রেগে যায়।

“অসভ্য ইতর হনুমান বাঁদর ছেলে দেখে চলতে পারিস না। মেয়েদের দেখলেই ধাক্কা দিতে মন চায় তাই না। লুচ্চা ছেলে একটা।”

একদোমেই কথাগুলো বলে অন্তরা ভয় পেয়ে যায়। কারণ ওর দিকে আগুন চোখে তাকিয়ে আছে আশিক। চোখ দিয়ে মনে হয় ভষ্স করে দেবে।

অন্তরা তাকে দেখে একটা বড় ঢোক গিলে।

একটা শুকনা হাসি এনে মুখে। দ্রুত পায়ে চলে যায় সেখান থেকে। আশিক অর দিকে রেগে তাকিয়ে আছে। অন্তরা আশিক কে খুব ভয় পায় সেই দিন এই আশিক শয়তান তাকে দিয়ে রেগিং করা ছিল। সেই থেকে মনে মনে ভেবে রেখেছে এইটা কে কখনো সুযোগ পেলে ইচ্ছামত প্রতিশোধ নেবে।

চলবে♥️
চলবে♥️

ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
❤️মিষ্টি ❤️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here