সুখপাখির খোঁজে পর্ব ৫

#সুখপাখির_খোঁজে 💔
#লেখনিতে_সুমাইয়া_ইসলাম_মিম
#পর্ব_৫
.
নাদিরা প্রচন্ড রকমের অবাক হয়ে গেছে ইয়াসিনের কথা শুনে। সে কি ঠিক আছে? ইয়াসিন রেগে বলে,

-“কিসের মুক্তি দিতে চাও? আমি চেয়েছি মুক্তি? মুক্তি দিচ্ছো না শাস্তি?”

নাদিরা অবাক হয়ে বলে,

-“আমি আপনাকে শাস্তি দিচ্ছি? কিভাবে একটু বলবেন প্লিজ? না আমি আপনার সাতে থাকি আর না পাঁচে! আমি কি করে আপনাকে শাস্তি দিচ্ছি? আমি তো আপনাকে মুক্তিই দিতে চাইছি! যাতে…আপ..নি উপমাকে নিয়ে ভা…লো..থাকেন!”

ইয়াসিন কিছু না বলে নাদিরাকে আরেকটু জোরে চেপে ধরলো। না চাইতেও নাদিরার চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ছে। যা দেখে ইয়াসিনের আরও বেশি রাগ লাগছে। কেন নাদিরা এতো কান্না করে? তার কি কোন অধিকারবোধ নেই? কেন সবকিছুকে এতো সহজেই ছাড় দেয় কেন? হঠাৎ মনে হলো যে কি করছে? আচ্ছা সে তো উপমাকে ভালোবাসে। তাহলে হঠাৎ করে কেন নাদিরাকে নিয়ে ভাবতে বসেছে? কেন? আর নাদিরার মুক্তি দেওয়ার কথা শুনেই কেন এতো রাগ লাগলো? এই কেন এর কোন উত্তর তার কাছে নেই। নাদিরাকে আস্তে করে ছেড়ে দিলো। কিন্তু যাওয়ার আগে এক অভিশপ্ত কথা বলে গেলো।

-“তোমার কাছ থেকে আমাকে যতই মুক্তি দিতে চাও না কেন! আমি তোমাকে মুক্তি দিচ্ছি না। এর কোন কারণ নেই। তোমাকে এভাবেই থাকতে হবে।”

নাদিরা ধপ করে নিচে বসে পড়লো। সে আর পারবে না এই মরণযন্ত্রনা সহ্য করতে! তার পক্ষে আর সম্ভব নয় ইয়াসিন কে উপমার সাথে দেখা। ইয়াসিনের প্রতি প্রচন্ড রকমের আসক্তি আছে। এ এমন আসক্তি, যা সে না পারে সহ্য করতে আর না পারে এটাকে আপন করতে। তার ধৈর্যের বাধ কবেই ভেঙে গেছে। কবেই তার অনুভূতিরা মরে গেছে। রয়ে গেছে এক বিশাল ভঙ্গ হৃদয়। সারারাত নাদিরা ভাবলো। চোখে এক ফোঁটা ঘুমও ধরা দেয় নি। ইয়াসিন কি চায়? সে যাই চাক না কেন, নাদিরা এভাবে আর বাঁচতে পারবে না। প্রকৃতিই তাকে বাঁচতে দিবে না।

.
সকালে ইয়াসিন উঠে নাদিরাকে রুমে খুঁজে পায় না। বেশ কয়েকবার নাদিরাকে ডাকলো। কিন্তু কোন সাড়া নেই। রুমের দরজা ভেতর থেকে লাগানো তার মানে নাদিরা রুমেই আছে। কিন্তু কোথায়? ওয়াশরুমের দরজাও বাইরে থেকে লাগানো। তাও নিশ্চিত হতে ইয়াসিন দরজা খুলে ভিতরে নজর দিলো। হতাশ হয়ে বারান্দায় যেতেই নাদিরা বলে চিৎকার করে ওঠে ইয়াসিন।

মাটিতে বসে নাদিরাকে নিজের কোলে উঠাতেই ইয়াসিন ভয় পেয়ে গেলো। নাদিরার সম্পূর্ণ শরীর ঠান্ডা হয়ে আছে। বারবার ইয়াসিন নাদিরা বলে ডাকছে। ইয়াসিনের মন বারবার কু গাইছে। কি হলো নাদিরার। তার মানে নাদিরা সারারাত বাইরে ছিলো?

ইয়াসিন নাদিরাকে কোলে তুলে বিছানায় শুইয়ে দিলো। তার বেশ ভয় লাগছে। মনে ভয় নিয়ে নাদিরার নাকের কাছে আঙুল দিলো। নাহ! বেঁচে আছে, কিন্তু খুব খারাপ অবস্থা! ইয়াসিন নাদিরার হাত, পা ঘষে দিচ্ছে, যেন কিছুটা তাপ পায়! নাদিরার অবস্থার উন্নতি না দেখে ইয়াসিন সিদ্ধান্ত নিলো হসপিটালে নিয়ে যাবে। এর মধ্যে বাসার সবাইই মোটামুটি ব্যাপারটা জেনেছে। ইয়াসিন বারবার হসপিটালে ফোন দিয়ে খবর নিচ্ছে। তারপর নাদিরাকে কোলে নিয়ে নিজের গাড়ি করে বেরিয়ে পড়লো হসপিটালের উদ্দেশ্যে।

বেশি দূর যেতে হয় নি। তাদের বাসা থেকে ২০ মিনিটের পথ যেতেই হসপিটাল। সেখানেই নিয়ে গেছে ইয়াসিন। ইয়াসিন নাদিরাকে নিয়ে ভিতরে যেতেই একজন ডক্টর এগিয়ে আসে। তাকেই ফোন করে রেখেছিলো ইয়াসিন। নাদিরাকে ডক্টর বেডে শিফট করিয়ে ইয়াসিনকে ফর্ম পূরণ করতে বলে। ইয়াসিন ফর্ম পূরণ করে কেবিনে যায়। ডক্টরের সাথে কথা বলতে থাকে। নাদিরাকে আপাতত সেলাইন দেওয়া হয়েছে। হঠাৎ একটা নার্স এসে ডক্টরকে বলে তার সাথে দেখা করার জন্য এক ডক্টর এসেছে। ড. আবদুল্লাহ মনে করে বলেন তাকে ভিতরে আসতে। সে ভুলে গিয়েছিলো আজ তার একটা ফাইল নিয়ে ডক্টর ইরামের সাথে মিটিং ছিলো। ডক্টর ইরাম তার কেবিনে অনুমতি নিয়ে প্রবেশ করে। ড. আবদুল্লাহ ড. ইরামকে দেখে ইয়াসিনকে বলে,

-“মিস্টার ইয়াসিন আমি আপনার ওয়াইফের বিষয়ে আপনার সাথে পরে কথা বলছি!”

ইয়াসিন “ইটস ওকে” বলে বেরিয়ে যেতে নেয়। কিন্তু হঠাৎ থেমে যায় নাদিরার নাম শুনে। ডক্টর ইরাম বলে,

-” আমার এক পেশেন্ট আছে, নাম নাদিরা তাবাসসুম।”

ডক্টর ইরামের কথা শুনে ডক্টর আবদুল্লাহ বেশ চমকে বললেন,

-“এই মাত্র একটা পেশেন্ট ভর্তি হলো তার নামও নাদিরা তাবাসসুম। মিস্টার ইয়াসিন তারই হাসবেন্ড!”

ডক্টর ইরাম বললেন,

-” আমার পেশেন্ট কাল চেকআপের জন্য এসেছিলো! সেই সম্পর্কেই কিছু কথা বলবো।”

ইয়াসিন কেবিন থেকে বেরিয়ে আসে। নাদিরার রুম নাম্বার ২০৬। সেখানে গিয়ে নাদিরাকে এক পলক দেখে। ফোনের শব্দে তাকিয়ে দেখে উপমা নামটা ভেসে আসছে। ফোন কানে তুলে কথা বলতে থাকে সে। উপমা তার সাথে দেখা করতে চায়, এক্ষুনি! কিন্তু নাদিরাকে এভাবে একা ফেলে যাওয়ায় ইয়াসিনের মন সায় দিচ্ছে না।

-“দেখো উপমা! এখন আমার পক্ষে আসা সম্ভব হচ্ছে না। নাদিরা হসপিটালে এডমিট। ওকে এভাবে ছেড়ে কি করে আসি?”

উপমা জেদ ধরে বলল,

-“তুমি আসবে মানে, এক্ষুনি আসবে। আমি অপেক্ষা করছি জান!”

ইয়াসিন উপমাকে কথার পিঠে আর না করতে পারে নি। সে চলে গেলো উপমার সাথে দেখা করতে। আর নাদিরা পড়ে রইলো সাদা বিছানায়। তার চোখের কোনা বেয়ে অবিরাম ধারায় জল গড়িয়ে পড়ছে।

.
দুই ডক্টর কেবিনে বসে কথা বলছে হঠাৎ একজন নার্স এসে ডক্টর আবদুল্লাহ কে বললেন,

-“ডক্টর! ২০৬ নাম্বার কেবিনের পেশেন্ট অনেক হাইপার হয়ে যাচ্ছেন, তার শরীর প্রচন্ড কাঁপছে, আপনি একটু আসুন!”

ডক্টর আব্দুল্লাহ “ওহ গড” বলে কেবিনের দিকে রওনা হলেন। ডক্টর ইরামও তার পিছু নিলেন। তিনি পেশায় একজন ডক্টর। চাইলেও এখানে বসে থাকা তার পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না, তার বুকে অজানা ব্যাথা হচ্ছে। যত সে ২০৬ নাম্বার কেবিনের দিকে যাচ্ছে তার অস্থিরতা তত বাড়ছে।

ডক্টর আবদুল্লাহ তাড়াতাড়ি কেবিনে গিয়ে প্রথমে নাদিরার প্রেশার চেক করলেন। লো প্রেশার। এর জন্যই হাত পা এতো ঠান্ডা হয়ে আসছে। তাড়াতাড়ি ইনজেকশন দিয়ে দিলো। ডক্টর ইরাম সাদা বেডে নাদিরাকে দেখে চমকে গেলো। আশেপাশে নাদিরার হাসবেন্ডকে না দেখে আরো বেশি চমকালো। নাদিরাকে দেখে দায়িত্বপ্রাপ্ত নার্স কে বলে যেন ইয়াসিন কেবিনে আসলে ডক্টর আব্দুল্লাহর কেবিনে যায়।

.
প্রায় ঘন্টা দুই পরে ইয়াসিন হসপিটালে আসে। নাদিরার কেবিনে নার্সকে নাদিরার কথা জিজ্ঞাসা করায় তাকে ডক্টরের কেবিনে যেতে বলে। ইয়াসিন নার্স এর কথা মতো ডক্টরের কেবিনে গিয়ে নক করে। ইয়াসিনকে ভিতরে যাওয়ার অনুমতি দিতেই সে ভিতরে প্রবেশ করে। ডক্টর আব্দুল্লাহর সাথে সেই ডক্টর কে দেখে ইয়াসিন বলে,

-“আমি কি পরে আসবো ডক্টর?”

ডক্টর ইরাম ইয়াসিনকে মানা করে বলে,

-“না না তার প্রয়োজন হবে না। আপনি বসুন। আমার আপনার সাথে কিছু কথা বলার আছে।”

ইয়াসিন ভ্রু কুঁচকালো। একজন অচেনা ব্যক্তির তার সাথে কি কথা? ইয়াসিন সম্মতি দিয়ে বসলো। ডক্টর ইরাম কোন সংকোচ ছাড়াই ইয়াসিনকে জিজ্ঞাসা করলো,

-“মিসেস নাদিরাকে যেই টেস্ট গুলো দিয়েছিলাম সেগুলো কি কম্পলিট হয়েছে? আর রাতে কি উনি প্রেসক্রাইব করা ঔষধ গুলো নেয় নি? তা না হলে তো এভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ার কথা না!”

ইয়াসিন আরেকদফা অবাক হলো। কিসের টেস্ট, কিসের ঔষধ?

,
,
,
চলবে…………….❣️

(কেন যেন মনে হচ্ছে গুছিয়ে লিখতে পারি নি। পার্টটা কেমন হলো অবশ্যই জানাবেন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here