#গুমোট_অনুভুতি
#লিখাঃ Liza Bhuiyan
#পর্ব_২
বিশাল বড় বিল্ডিং এর দশতলায় হেড বসের অফিস, সেই অফিসের দরজার সামনে দুজন বডিগার্ড মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে, বসের এসিসট্যন্ট নিশ্চুপ ভাবে দাঁড়িয়ে বসের মতিগতি বুঝার চেষ্টা করছে কিন্তু ঠিক ধরতে পারছে না। প্রায় এক ঘন্টা যাবৎ তার সামনে থাকা ব্যাক্তিটি চেয়ারে মাথা এলিয়ে একদৃষ্টিতে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে, সাহস করে যেই কয়বার তাকিয়েছে সেই কয়বারের একবারো তাকে চোখের ফলক ফেলতে দেখেনি।
আজ প্রায় একমাস ধরে নিজের বসকে অবসার্ভ করছে সাহিল, এর পুর্বে এতোটা শান্ত কখনো দেখেনি তাকে। যদিও তিনি খুব একটা কথা বলেন না কিন্তু তার মুখে একটা মিষ্টি হাসি থাকতো যা এই এক মাসে চোখে পড়েনি! সারাক্ষণ মনে হয় বস কোন একটা বিষয় নিয়ে খুব চিন্তিত, কিছু একটা তাকে ভেতরে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে। সাহিলের খুব ইচ্ছে করে কারণ জানতে কিন্তু সাহসে কুলায় না, কিছুক্ষণ বাদেই দরজায় নক পড়ে যার দিকে তার বস আগ্রহ নিয়ে তাকায় এবং সাহিলকে ইশারা করে নিয়ে আসতে। সাহিল হাতে একটা ফাইল নিয়ে ঢুকে আর তা নিজের বসের হাতে দেয়।
সাহিলের সামনে থাকা ব্যাক্তিটি সেই ফাইলটি হাতে নেয় আর ভ্রু কুচকে তাকিয়ে থাকে সামনে থাকা ছবিটির দিকে। এই চেহারা সে চাইলেও ভুলতে পারবে না! পাশে বড় বড় অক্ষরে লিখা
“রুশানি আনাম”, বয়স:১৯ বছর, অনার্স ফার্স্ট ইয়ার, আরো অনেক ইনফরমেশন। ছোট থেকে এখন পর্যন্ত সকল তথ্য এতে দেয়া এমনকি দত্তক নেয়ার কথাও উল্লেখ আছে।
ব্যাক্তিটির কপাল কিছুটা কুচকে গেলো তারপর ফাইল বন্ধ করে মুখ শক্ত করে বসে রইলো। তারপর সাহিলের দিকে তাকিয়ে কিছু একটা বললো যাতে সাহিল বেশ অবাক হলো। কিছুটা ইতস্ততভাবে বলে উঠলো
“বস আপনি সত্যিই এমনটা করবেন? আই মিন যদি মেডাম…”
“তোমাকে যা বলা হয়েছে তাই করো সাহিল! আর হ্যা এই খবর তুমি আমি ছাড়া তৃতীয় ব্যাক্তি যেনো না জানে”
সাহিল মাথা নাড়ালো তারপর বসের কথামতো বেরিয়ে গেলো,এই প্রথমবার মনে হলো ওর বস যা করছে তা ঠিক করছে তো! যদি এটা করতে গিয়ে হিতে বিপরীত হয়ে যায়?
_____________________
আজ সকাল থেকে রুশির শরীরটা ভালো যাচ্ছেনা, সকাল থেকে বেশি কিছু পেটে কিছু পড়েনি, ধরতে গেলে কিছুই মুখে দিতে পারেনি কেমন গন্ধ গন্ধ লাগে সবকিছু। ঘরের সব কাজ সেরে রেডি হয়ে বেরিয়ে পড়লো টিউশনির জন্য, যদিও শরীরে কুলাচ্ছিলো না কিন্তু কালকে টিউশনির নাম করে ডাক্তারের কাছে গিয়েছিলো তাই আজ গ্যাপ দেয়া সম্ভব নয়। তিন নাম্বার টিউশনি শেষ করে বাসার দিকে এগুচ্ছে, এখন প্রায় বিকাল, সুর্য পশ্চিম আকাশে হেলে পড়েছে, কিছুটা শীতল আবহাওয়া তাই হাটতে ভালো লাগছে।
ওদের বাড়িটা কিছুটা গ্রামের মতো, এখানে ঘরগুলো ইটের তৈরি হলেও মানসম্মত নয়। রুশির পালক বাবা দুবছর আগে এই জীর্ণশীর্ণ বাড়িটা কিনেছেন মোটামুটি ভালো দামেই। দেখতে যেমনি হোক ঢাকা শহরের বাড়ি মানে আগুনের মতো দাম!রুশি কাঁধের ব্যাগটা শক্ত করে চেপে ধরলো, পা এগুতে না চাইলেও আরেকটু হাটতে হবে। সামনের গলি পার হলেই ওদের ছোট্ট বাড়ি ঠিক ওর না ওর পালক বাবার বাড়ি। রুশি ধীর পায়ে সেদিকেই এগুচ্ছে কিন্তু হঠাৎ সামনে কালো কিছু দেখে দাঁড়িয়ে গেলো। মাথা তুলে একজন কালো পোশাকধারী লোক দেখতে পেলো। ঠিক একজন না বরং বেশ কয়েকজন, তবে সামনে থাকা লোকটির হাতে সাদা কিছু একটা। লোকটি ওর দিকে চেয়ে আছে মনে হচ্ছে কিছু মেলানোর চেষ্টা করছে। রুশির বাড়তি ঝামেলা মনে হলো তাই পাশ কাটিয়ে যেতে নিলেই লোকটি আবার ওর সামনে দাঁড়ালো আর মাথা নিচু করে বললো
“মিস রুশানি, প্লিজ আপনি আমাদের সাথে আসুন”
“আপনাদের সাথে যাবো মানে?কে আপনারা? আমার রাস্তা ব্লক করছেন কেনো?”
“দেখুন আমরা কারা তা আপনি গেলেই বুঝতে পারবেন। এটা আমাদের বসের অর্ডার আপনাকে সাথে নিয়ে যেতে হবে”
“আপনাদের বসকে আমি চিনিনা, অযথা বিরক্ত করবেন না আমায় নাহয় চেঁচিয়ে রাস্তায় মানুষ জড়ো করবো”
রুশির চড়া কন্ঠ কিছুটা কাজে দিয়েছে বলে মনে হয়েছে, সেই লোকটি কিছুটা দমে গিয়েছে আর ফোন বের করে কিছু একটা করছে। কিন্তু তা দেখার সময় ওর নেই, দ্রুত পায়ে হাটা শুরু করলো। কিছুদূর যেতেই মুখের উপর কাপড় জাতীয় কিছু টের পেলো, মনে হচ্ছে মাথা ঝিমঝিম করছে। ওকে কেউ উঠিয়ে নিয়ে যাচ্ছে এতোটুকু টের পেলেও আর কিছুই মনে নেই।
চোখখুলে নিজেকে একটা রুমে আবিষ্কার করলো, রুমটা ঠিক বেডরুম নয় কিছুটা অন্যরকম। ভালো করে খেয়াল করে বুঝতে পারলো এটা একটা অফিস আর ও এই অফিসে থাকা সোফায় শুয়ে আছে। ঝটপট উঠে বসলো রুশি, মাথা এখনো ঝিমঝিম করছে কিছুটা। যদি সঠিক ভাবে এনালাইসিস করস হয় তাহলে ওকে দিনের আলোতে কিডন্যাপ করা হয়েছে কিন্তু কিডন্যাপ করলেতো কোন অন্ধকার কালো জায়াগায় নিজেকে আবিষ্কার করার কথা, হয়তো চেয়ার টেয়ারে বেধে রাখবে তা না করে এতো সুন্দর জায়াগায়!
আর তাছাড়া ওকে কিডন্যাপ করে লাভই বা কি?নাকি ওকে বড়োলোকের মেয়ে ভেবে ভুলে কিডন্যাপ করে নিয়ে এসেছে?এসব সাত পাঁচ ভাবছিলো রুশি ঠিক তখনি একটা শব্দ কানে এলো
“মিস রুশানি রাইট?”
রুশি পাশে তাকিয়ে একজন সুদর্শন পুরুষকে দেখতে পেলো, কম্পলিট ব্লাক স্যুট পড়া, গালে খোঁচাখোঁচা দাড়ি তবে বিশেষত্ব হচ্ছে বাদামি চোখদুটো যাতে হাজারো মায়ার ভীড়!কিছুক্ষনের জন্য রুশির মনে হলো কোন দক্ষ কারিগরের হাতে আঁকা দামি পেইন্টিং দেখছে। এতো সুদর্শন ছেলে দেখেছে বলে ওর হয় না, আর কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলে নির্ঘাত ক্রাশ খাবে হয়তো কিন্তু নিজেকে দমিয়ে নিলো। কিছুক্ষণ একটা ছেলের দিকে হা করে তাকিয়ে থাকার জন্য নিজেই যেনো লজ্জা পেলো। এতো বেহায়া কবে থেকে হয়ে গেলো ও!
কিন্তু কিছু একটা ভেবে আবারো তাকালো সেদিকে, এই চেহারা খুব চেনা চেনা লাগছে। রুশির চোখে মুখে বিস্ময়ের ছাপ যেনো অপ্রত্যাশিত কিছু দেখে ফেলেছে। মুখ থেকে অস্ফুট স্বরে বললো
“সায়ান জামিল খান!”
তারপর নিজের তর্জনী আংগুল ছেলেটির দিকে এক প্রকার ছুড়ে বলে উঠলো
“আপনি সায়ান জামিল খান তাইনা?খান গ্রুপ অব ইন্ড্রাস্ট্রিস এর মালিক?”
এই লোকটিকে কেনো চিনবে না রুশি?রুশি যে ভার্সিটিতে পড়াশোনা করে সেখানেই এই লোকটিও পড়াশোনা করেছে। যেহেতু ইয়াং তারউপর সাকসেসফুল তাই প্রায়ই সায়ানকে নিয়ে আলোচনা এমনকি শিক্ষকরাও সবাইকে তার মতো সফল হতে অনুপ্রেরণা দেয়। খান গ্রুপ ইন্ডাস্ট্রি যখন দেউলিয়া হয়ে যাবে তার ঠিক পুর্ব মুহুর্তে সায়ান জামিল খান এটার হাল ধরেন আর গত পাঁচ বছরে এটি দেশের নাম্বার ওয়ান ইন্ডাস্ট্রি। কিভাবে এটা সম্ভব হয়েছে কেউ জানেনা কিন্তু গত বছর সায়ান জামিল খান বেস্ট ইন্ডাস্ট্রিয়ালিস্ট হিসেবে “ইউথ আইকন” এওয়ার্ড পেয়েছে আর দেশের হাজার মেয়ের ক্রাশ। সবার মুখে প্রশংসা শুনে রুশির ইচ্ছে ছিলো তার সাথে দেখা করার কিন্তু সেটা এতো তাড়াতাড়ি পুরণ হবে ভাবতেই পারেনি।ওয়েট এতোবড় একজন ব্যাক্তি ওকে কিডন্যাপ করেছে ওকে?কি চায় সে?
রুশির ছোট্ট মাথা একসাথে এতো কিছু নিতে পারছে না, যেনো হ্যাং হয়ে গেছে। রুশি মাথা চেপে ধরে বিড়বিড় করছে
“এটা স্বপ্ন, এই সব স্বপ্ন। বাস্তবতার সাথে কোন মিল নেই”
#চলবে
(আস্তে আস্তে সব বলা হবে তাই আশাকরি একটু ধৈর্য সহকারে পড়বেন)